মঙ্গলবার, ৯ মে, ২০১৭

★ মায়ার আর্তনাদ ★

রাত ২টা বেজে ২৬ মিনিট। এতো রাতে মায়া অনলাইনে কি করছে?
 এক্টিভ ফ্রেন্ড লিষ্টে ওর নামটার পাশে সবুজ বাতিটা নিরবে জ্বলে যাচ্ছে । কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা নয়।
.
ও হ্যা..... মায়ার পরিচয়ই তো দেওয়া হয় নি। মায়া আমার খুব কাছের একজন বন্ধু। আমার সম্পর্কটা বন্ধুত্বের। সব সময়ই দুজন দুজনের বিপদে আপদে পাশে থেকেছি। একে অপরকে যতোটা পেরেছি সাহায্য করেছি।
মায়া অত্যন্ত ভালো মেয়ে। রাত ১১টার পর ওকে আজ পর্যন্ত ফেসবুকে থাকতে দেখি নি। বরং আমি যদি বেশি রাত করে ফেসবুকে থাকতাম, ও আমায় শাসন করত, অনেক বকাবকিও করত। ওর অনুরোধ আর শাসনের ফলে আমিও অনলাইনে বেশি সময় ধরে থাকি না।
.
ভুলেই তো গিয়েছিলাম, আমার পরিচয়টা দেওয়া হয় নি। আমি তানভীর। প্রবাসে থাকি। অবশ্য কাল আমার ফ্লাইট। দীর্ঘ দুই বছর পর দেশে ফিরছি । দেশে ফিরব, এই কথাটা ভেবে এক অসাধারন অনুভুতি ফিল করছি। মনের মাঝে আনন্দের অজস্র ঝর্না বয়ে যাচ্ছে। এজন্য অনলাইনে আছি গভীর রাত করে। দেশে ফিরব ভেবে দু-চোখে ঘুম আসছে না।
.
ভাবছি মায়াকে একটা টেক্স্ট করব। কিন্তু অবাক হলাম। মায়ায় আমাকে টেক্স্ট করলো।
.
__ Hi, তানভীর। কেমন আছিস?
__ এই তো তোদের দোয়ায় আর আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো।
__আমার কথা শুনবি না?
__ না রে শুনব না। তোকে এমনটা একটা নিউজ দিবো যে তুই শুনলে তোর মনটা খারাপ থাকলেও ভালো হয়ে যাবে।
__ তো কি নিউজ দিবি বল ?
__কাল রাতের ফ্লাইটে আমি দেশে আসছি।
__হুম অনেক বড় খুশির সংবাদ । আচ্ছা খুব সাবধানে আসিস। আমার জন্য কি আনবি...?
__ তোর জন্য ছোট্ট একটা উপহার । তবে বলব না। বললে তো তোকে আর সারাপ্রাইজড দিতে পারব না।
__ ঠিক আছে। তবে তুই অনেক বেশি সারপ্রাইজড হবি এটা শিউর বলতে পারি।
__ কেন...? আমি সারাপ্রাইজড হবো কেন?
__ এটা তো বলা যাবে না । তাহলে তো তুই সারাপ্রাইজড হবি না।
__ ও বুঝেছি। আমার কথা আমাকেই ফেরত দেওয়া হচ্ছে। তোর এই বদঅভ্যাসটা যাবে না কোনদিন।
__ বদঅভ্যাস নয় দোস্ত। সত্যি বলছি, তুই অনেক, অনেক, অনেক সারাপ্রাইজড হবি। কল্পনাও করতে পারবি না তুই। তুই বলবি.... কিভাবে সম্ভব...?? হা হা হা হা।
__ হাসি থামা ফহিন্নি মায়া মাছ। দেখা যাক কি সারাপ্রাইজড দিস তুই?
__ঐ একদম মায়া মাছ বলবি না বলে দিলাম । নয় তো.....?
__ নয় তো কি করবি.....?
__ না কিছু না। আচ্ছা দোস্ত, এখন Bye...আমার প্রচন্ড ঘুম আসছে
 ___ ঐ দাড়া..... দাড়া..... একটা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যা।
___হুম, তাড়াতাড়ি বল। আমার ঘুম পাচ্ছে।
___ তুই এতো রাতে অনলাইনে কেন আসছিস?
__দোস্ত , হটাৎ ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিলো। ঘুম আসছিলো না এজন্য অনলাইনে আসলাম। এখন আবার ঘুম আসছে। Bye.... ভালো থাকিস। আর হ্যা......সাবধানে আসিস।
.
মায়া অনলাইন থেকে চলে গেল। আমারও আর মন চাচ্ছে না থাকতে। কাল ফ্লাইট। এখন একটু ঘুমাতে হবে। নয়তো অসুবিধা হবে। তাছাড়া সারাদিন অনেক গোছ-গাছ করতে হবে। মনে হচ্ছে ঘুম বাবু ধীরে ধীরে আমার চোখের পাতাকে তার নিজের দিকে আসক্ত করছে। হয় তো আমিও ধীরে ধীরে ঘুম বাবুর সাথে ঘুমের দেশে পাড়ি জমাচ্ছি।
.
আর অল্পকিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের বিমান ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হবে। এর মাঝেই বিমানবন্দরের বড় ঘড়িটার এলার্ম বেজে উঠল । ঢাকার যাত্রীদের যার যার সীটে গিয়ে বেল্ট বাধতে বলা হয়েছে। এখুনি আমাদের বিমান ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হবে ।
বিমান স্টার্ট হয়েছে। ধীরে ধীরে সাদা মেঘের মধ্যে দিয়ে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের, ঢাকার উদ্দেশ্য। দীর্ঘ ১৮ ঘন্টা জার্নি করার পর পৌছালাম স্বদেশ ভূমিতে। দুচোখ ভরে দেখে নিচ্ছি প্রানপ্রীয় এই শহরটাকে।
.
ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দরে আমাকে নিতে আমার ছোট ভাই তাহসিন আর ছোট বোন তাসনিয়া এসেছে সাথে বড় কাকুও এসেছে। অবশেষে ঢাকা থেকে রওনা হলাম বাসার উদ্দেশ্য। রাত পনে ৮টার দিকে বাসায় এলাম। সবায় আজ অনেক খুশি। সব থেকে বেশি খুশি দেখলাম আম্মাকে। বাড়ি আসতেই আম্মু আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে । এ কান্না কষ্টের নয়, বরং সুখের। দীর্ঘদিন পর তার কলিজার টুকরা ছেলেকে দেখতে পেয়েছে। আব্বুকে যেয়ে সালাম করলাম। ছোট ভাই এবং বোনটার সাথে অনেক দুষ্টামী করে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি। হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেস হয়ে লম্বা একটা ঘুম দিলাম। কারন আমি ক্লান্ত ছিলাম।
.
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে মায়াকে ফোন দিলাম। কিন্তু মায়ার নাম্বারটা বন্ধ পাচ্ছি। মেজাজটায় খারাপ হয়ে গেল। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম , মায়াদের বাসায় চলে যাবো। আংকেল আন্টিও হয় তো আমায় দেখে খুশি হবেন।
.
যেই ভাবা সেই কাজ। চলে গেলাম মায়াদের বাসায়। কিন্তু বাসার কাছে আসতেই কিছুটা বিব্রতবোধ বোধ করছি। কারন মায়াদের বাসায় অনেক লোকের আনাগোনা। বাতাশের সাথে সাথে মৃদু থেকে জোরালো আকারে কান্নার শব্দ ভেসে আসছে। কান্নার শব্দ কানে পৌছাতেই বুকের বাম পাশটাতে কেমন যেন ব্যাথা অনুভব করছি। কোন এক অজানা কষ্টে দৌড়ে ছুটে গেলাম মায়াদের বাসার প্রাঙ্গনে। ভিড় ঠেলে ভেতরে ঢুকলাম। দেখলাম উঠানে কাফনের কাপড়ে মোড়ানো কারো মৃত দেহ। কিন্তু কোথাও মায়াকে দেখা যাচ্ছে না।
কাফনে মোড়ানো মৃত দেহটার পাশে বসে গলা কাটা মুরগির মতো ছটফট করছে আর চিৎকার দিয়ে কান্না করছে মায়ার আম্মু।
আমার বুকের মাঝের ব্যাথাটা কেমন যেন ক্রমশ বাড়তেই থাকল।
অনিচ্ছা সত্বেও কাফনের কাপড়টা আলগা করে মৃত দেহটার মুখের দিকে তাকানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু মনটা বার বার বাধা দিচ্ছে.... ব্যাথাটাও বেড়ে যাচ্ছে। হয় তো আমায় বলতে চাচ্ছে....তানভীর প্লীজ দেখিস না।
.
মনের প্রচন্ড বাধা সত্বেও চোখটা মৃত দেহের মুখের দিকে পড়তেই প্রচন্ড একটা আঘাত পেলাম। এক ঝটকা দিয়ে পড়ে গেলাম মাটিতে। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। না... এ হতে পারে না। এটা মায়া হতে পারে না। কোনভাবেই না। মায়া তো আমাকে ছেড়ে যেতে পারে না। ও তো বলেছিলো ও আমাকে অনেক বড় একটা সারাপ্রাইজড দিবে। তাহলে কি এটাই ওর সব থেকে বড় সারাপ্রাইজড.....??
প্রতিক্ষনে মনে পড়ল.... মায়া বলেছিলো... " দোস্ত, তুই সারাপ্রাইজড হয়ে বলবি, এটা কি করে সম্ভব...??
.
সত্যি রে দোস্ত। আজ আমি সত্যই অনেক বড় সারাপ্রাইজড পেলাম। তুই বিশ্বাস কর, আমি ভাবতেও পারছি না এটা কি করে সম্ভব....?? কিন্তু আমি তো এতো বড় সারাপ্রাইজড তোর থেকে আশা করি নি। তাহলে কেন.....?? কিসের জন্য তুই আমাকে একা করে চলে গেলি......??
.
মায়ার মৃত দেহটাকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো কাঁদছি । বার বার একটা কথায় বলছি..... কেন মায়া...?? কেন.... তুই এমনটা করলি ...??
চোখের পানি মুখ গড়িয়ে সাদা কাফনের কাপড়ের উপর পড়ছে আর ভিজে যাচ্ছিলো। আশেপাশের লোকজন আমায় মায়ার থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য প্রানপন চেষ্টা করছিলো কিন্তু আমি মায়ার মৃত শরীরটাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলাম। ছাড়দে চায়ছিলাম না। এক পর্যায়ে ওরা আমায় ছাড়িয়ে নিলো।
 .
আমি ধীরে ধীরে শান্ত হলাম। স্থীর নয়নে মায়ার দিকে তাকিয়ে দেখছিলাম আর বলছিলাম.... মায়া আজ তোকে মোটেও মায়াবী লাগছে না। তোকে হাসি-খুশিতেই মায়াবী লাগত। এভাবে নিশ্চুপ মেরে শুয়ে থাকলে তোকে ফহিন্নির মতো লাগে। কথাগুলা মনের অভ্যন্তরেই বাজতে লাগল। আর এর বহিঃপ্রকাশ চোখের পানির মাধ্যমেই প্রমান দিলো।
.
মনে একটা কৌতুহল জাগল, মায়া তো এমন নয়। তাহলে কেন মায়া আত্মহত্যার পথ বেছে নিলো। মায়ার বাবার দিকে তাকালাম। দেখলাম, গাছের সাথে হ্যালান দিয়ে নিশ্চুপে বসে বসে চোখের পানি ঝরাচ্ছে।। ছুটে গেলাম মায়ার বাবার কাছে, জানতে চায়লাম মায়ার আত্মহত্যার কারন। কিন্তু কেও কিছু বলতে চায়লো না।
.
আমার যে করেই হোক মায়ার মৃত্যুর কারন জানতেই হবে। চলে গেলাম মায়ার রুমে। যেখানে ও ফ্যানের সাথে ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। আমি জানি আমার মায়াকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে। মায়ার বইখাতা উল্টায়তে লাগলাম কিন্তু কিছুই পেলাম না। অবশেষে বিছানা উল্টিয়ে একটা ডায়েরী পেলাম। ডায়েরীর অল্প কয়েকটা পৃষ্টা। বাকিগুলা ছিড়ে ফেলানো হয়েছে।
.
অনেক উৎসাহের সাথে পড়তে থাকলাম।
.
.
আজ ডায়েরীর অনেক পাতা ছিড়ে ফেললাম। আমি পরাজিত। আমি হেরে গিয়েছি। আমার ভালোবাসা আমায় ঠকিয়েছে। ছেড়া পাতাগুলায় আদনানের আর আমার ভালোবাসার প্রতিটা দিনের সাক্ষর ছিলো । কিন্তু আজ আমার ভালোবাসা নেই ডায়েরীর পাতাগুলা রেখে কি হবে। ছিড়ে ফেলে দিলাম।
.
আদনান আমায় এভাবে ছুড়ে ফেলে দিবে এটা আমি কখনও কল্পনাও করতে পারি নি।
আমি ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা । কিন্তু আদনান আমায় মেনে নেয় নি। কিন্তু এসব করার আগে ও তো আমায় বিয়ে করবে বলে কসম কেটেছিলো। কিন্তু কেন ও আমার এতো বড় সর্বনাশ করল?
ওর সবটায় ছিলো অভিনয়। যখন আদনান আমায় প্রপোজ করেছিলো আমি ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। কারন আমার রিলেশন পছন্দ ছিলো না। আমি বিশ্বাস করতাম না। তাছাড়া আমার সাথে আমার প্রানপ্রীয় বন্ধু তানভীর ছিলো। ওর সাথে হাসি-খুশি, দুষ্টামী, ফাজলামী, ঝগড়া, অভিমান সব কিছুর মধ্যে দিয়েই আমার দিনগুলি অনেক ভালো কাটত। আমার রিলেশনের দরকারই পড়ে নি।
.
কিন্তু তানভীর Law পড়তে জাপান চলে গেলো। আর আমিও একা হয়ে গেলাম। এদিকে আদনান আমায় নানানভাবে ইম্রেছ করার চেষ্টা করতে লাগল। এক পর্যায়ে আমিও আর না করতে পারলাম না। কারন তানভীরকে ছাড়া একাকীত্ব খুব খারাপ লাগত।
.
আজ আদনান আমায় ভয় দেখিয়েছে। বেশি বাড়াবাড়ি করলে ও নাকি ভিডিও সবাইকে দেখাবে। হ্যা.... ও আমাদের সম্পর্কটাকে নষ্টের নিষ্টুরতায় ভিডিও করে রেখেছিলো। কিন্তু যে আমার দেহের ভেতরে তিল তিল করে বড় হচ্ছে তার তো একটা পিতৃ পরিচয় দরকার। আর সেটা হচ্ছে আদনান। আমি বার বার চাপ দেওয়ায় আদনান ভিডিওটা ওর কয়েকজন দুঃশচরিত্র বন্ধুদের কাছে দিয়ে দেয়।
.
সেই থেকে সবার কাছে জানাজানি হয়ে যায়। লোকসমাজে মুখ দেখাতে পারি না। খুব কাছের বন্ধুরাও বলে.... দোস্ত, কতক্ষন করেছিলি? কতোবার করেছিলি...?? কেমন লাগে রে...??
আরও নোংরা নোংরা কথা শুনতে হচ্ছিলো।
এক পর্যায়ে বাসা থেকেও যেনে যায়।
 বাবা..... আমায় দেখলে থুথু ছিটাই। কথা পর্যন্ত বলে না আমার সাথে।
আর আম্মু বার বার বলতে থাকে..... " তোর মতো মেয়ে মরে যাওয়ায় ভালো। বিষ খেয়ে মরতে পারিস না। মরলেও তো শান্তি পায়তাম "
.
প্রতিদিন সবার মুখে নোংরা নোংরা কথা শুনতে শুনতে আমার নিজের প্রতি ঘৃনা ধরে গেছে। যেখানে আমার নিজের বাবা-মা আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে সেখানে আমার আর কি করার আছে? ভেবে পাচ্ছি না। খুব কষ্ট হচ্ছে। এদিকে দেহের মাঝের নতুন প্রানটা বার বার নড়ে চড়ে ওঠে। বার বার বলতে থাকে, " আম্মু আমি তোমায় দেখব "। কিন্তু আমি ওকে কোন মুখ নিয়ে এই পৃথিবীর আলো দেখাবো ।
আমি তানভীরকেও কিছু জানায়নি। কারন তানভীর জানলে ও নিশ্চিৎ চলে আসবে আর ওর লেখাপড়ার ক্ষতি হবে। ওর স্বপ্ন পূরন হবে না।
.
.
আজ জিবনের সব থেকে কঠিন সিদ্ধান্তটায় নিতে যাচ্ছি। কিন্তু বার বার আমার তানভীরের কথা মনে পড়ছে। আমি জানি ও খুব কষ্ট পাবে। হয় তো পাগলের কাঁদবে। কিন্তু আমার এছাড়া কিছু করার নেই।
ফেসবুকে এলাম। দেখি তানভীর এক্টিভ আছে। ওর সাথে কিছুক্ষণ মেসেজে ভালো মন্দ জানলাম। ও আজ আমায় একটা খুশির সংবাদ দিয়েছে। ও কাল বাড়ি আসছে। সত্যি সংবাদটা আমার জন্য অনেক অনেক খুশির। কিন্তু আমি কেন জানি খুশি হতে পারছি না।
ও আমাকে অনেক সারাপ্রাইজড দিবে। কিন্তু আমি জানি ওর সারাপ্রাইজডটা কি...?? ওটা হলো একজোড়া নুপুর । আমি বলেছিলাম.... " দোস্ত জাপানীরা একধরনের নূপুর পরে তুই ঐটা আমার জন্য এনে দিবি...?? " আমি জানি, ও এটায় আনবে।
.
আমিও ওকে সারাপ্রাইজড দিতে চেয়েছি। কিন্তু জানি না ও সারাপ্রাইজটা নিতে পারবে কি না? কিন্তু আমার আজ এছাড়া কিছু করার নেই। যদি পারিস, তানভীর আমায় মাফ করে দিস দোস্ত। সত্যি আজ খু্ব ইচ্ছা করছে... তোর চুল ধরে টানতে ....।। বিশ্বাস কর আমি আর কোনদিন তোর চুল ধরে টানবো না। তোকে আর ব্যাথা দিবো না।
 ভালো থাকিস বন্ধু।
.
ওড়নাটাকে আগে থেকেই ফ্যানের সাথে টাঙ্গিয়ে রেখেছিলাম। নিচে একটু টুল এনে রেখেছি। কিন্তু বার বার বাবুটা বলছে.....
" আম্মু আমি তোমায় দেখব। আমার আব্বুকে দেখব। প্লীজ আম্মু এমনটা করো না। আমি পৃথিবীর আলো দেখতে চায় "
.
আমায় মাফ করো বাবু, তোমার আর আমার জন্য এই পৃথিবীর আলো দেখাটা হারাম হয়ে গিয়েছে। এই পৃথিবীর মানুষেরা, এই সমাজের মানুষেরা তোমাকে জারোজ বলবে। তোমার আম্মুকে বেশ্যা বলবে। আরও অনেক নোংরা নোংরা কথা বলবে আমি সহ্য করতে পারব না বাবু। চলো আমরা অন্য কোন দুনিয়ায় যায়, যেখানে একবার গেলে আর ফিরে আসা যায় না। সেখানে কেও কিছুই বলবে না।
.
ভালোবাসা সত্যিই পাপ। বিশ্বাস করা তার থেকে বড় পাপ। আজ আমি আর আমার বাবু চললাম এই পাপের ক্ষেত্র ছেড়ে।
.
.
দুচোখের পানি ঝরছে। জানি আজ এ পানিকে আটকানোর সাধ্য আমার নেয়। পানির প্রতিটা ফোটায় ডায়েরীর প্রতিটা পৃষ্টা ভিজে একাকার হয়ে যাচ্ছিলো। আমি নিরবে ডায়েরীটা বুকের মাঝে রেখে নিয়ে চলে এলাম।
.
কয়েকদিন পর।
.
পত্রিকা পড়ছিলাম । হটাৎ একটা খবরের হেডলাইন চোখে পড়ল। এ কেমন নির্মম হত্যা....??
পড়তে লাগলাম।......
.
ঢাকা ভার্সিটির ফাইনাল ইয়ারের মেধাবী ছাত্র আদনান সাইবকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে। শরীর থেকে মাথাটা আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। চোখ দুইটা তুলে ফালা হয়েছে এবং চোখে মরিচের গুড়া দেওয়া হয়েছিলো। দুই হাতের শিরা কেটে নেওয়া হয়েছে। বুকের মাঝ বরাবর ধারালো অস্ত্র দিয়ে ফেড়ে ফেলা হয়েছে। দুই পায়ের গোড়ালি থেকে আঙ্গুলগুলা আলাদা করে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
লাশের পাশে থাকা মানিব্যাগ থেকে জানা গিয়েছে লাশটা আদনান সাইবের।
.
পুলিশ তদন্ত করছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোন রিপোর্ট পেশ করতর পারে নি। কে বা কারা এই নির্মম খুনের সাথে জড়িত তা এখনও কেও সঠিকভাবে বলতে পারছে না।
.
পড়তেছিলাম আর একধরনের পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছিলাম। অবশ্য মুচকি মুচকি হাসতেও ছিলাম। আর ভাবতেছি.... পুলিশ কেন পুলিশের চৌদ্দগুষ্টিও জানতে পারবে না কিভাবে এবং কে খুন করেছে।
.
.
চলে আসলাম মায়ার কবরের কাছে। পকেট থেকে নুপুরজোড়া বের করলাম। মায়ার কবেরের পাশে পুতে রেখে দিলাম। আজ খুব বলতে ইচ্ছা করছে...... " দোস্ত আমি তোকে আরও একটা সারাপ্রাইজড দিলাম "
সারাপ্রাইজটা কেমন হলো বলবি না......??
ও হ্যা.... এই দেখ এই ছুরিটা । আজ থেকে এটা তোর কাছে রেখে দে।
সত্যি আমার আজ মনে অল্প হলেও প্রশান্তির বাতাস বয়ছে।
--
--

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন