শনিবার, ৬ মে, ২০১৭

ভালবাসার অন্য রকম প্রতিদান

১/সরকারি কোয়াটার ময়ূর ভবন এর সামনে অয়নের
নিথর দেহটি পড়ে আছে, কাল রাতে সে বিষ
খেয়ে সুইসাইড করেছে। আশেপাশের ভবনে থাকা
পরিচিত মানুষ গুলো নিষ্পলক ভাবে দূর থেকে
তাকিয়ে আছে, সবাই নিজেদের চোখ কে
বিশ্বাস করতে পারছেনা অয়ন এর মত একটা ভাল
ছেলে এভাবে সুইসাইড করবে।
অয়নের খাটিয়ার পাশে বসে তার বৃদ্ধ বাবা
অঝোরে কাঁদছে, যেখানে তার ছেলের তার এই
বৃদ্ধ বাবার লাশ বহন করার কথা সেখানে আজ এই
বৃদ্ধ বাবার তার ছেলের লাশ কাধে বহন করতে
হবে, একটা বাবার কাছে এর থেকে যন্ত্রনা আর
কস্ট কি হতে পারে।অয়নের মা দুই তালা ঘরের এক
কোনে বসে আছেন, কোন কথাই সে বলতে
পারছেনা, একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে সে শোকে
স্তব্ধ হয়ে গেছেন।
তিনি কালকে তার হাত দিয়েই তার এই ছেলেকে
ইচ্ছে মত চর ঘুষি মেরেছেন। আর মারবেই না বা
কেন, যেই ছেলেকে নিয়ে সে সবার কাছে গর্ব
করত আর স্বপ্ন দেখত সেই ছেলের জন্য যে তাদের
এত অপমানিত হতে হবে তা তারা কখনো ই
ভাবেন পারেন নি,তাদের ছেলে অয়ন দিনের পর
দিন শিমা নামের একটি মেয়েকে অপমান করেছে
খারাপ কথা বলেছে, আর তাকে অসম্মান করেছে
যার জন্য তাদের কে কলেজ এ যেতে হয়েছে,
কলেজ এর শিক্ষকদের সামনে তাদের ছোট আর
অপমানিত হতে হয়েছে এর থেকে লজ্জা আর
অপমান কি হতে পারে একটা বাবা মায়ের
কাছে।
অয়নের বন্ধু আকিব,সাকের,বাবু ও নিচে দাঁড়িয়ে
অনেক কান্না করছে, অয়ন এদের সব থেকে ভাল
বন্ধু।
কাল কে রাতেই অয়ন আকিব কে ডেকে খাম বদ্ধ
এক চিঠি হাতে ধরিয়ে দিয়ে বল্ল,তুই সকালে এই
চিঠি শিমাকে দিয়ে আসবি, আর এই চিঠির কথা
কখনো কেও যেন না জানে ।আকিব চিঠিটা
নিয়েই চলে আসে।রাতের ভিতর যেই অয়ন বিষ
খেয়ে এভাবে নিজেকে শেষ করবে আকিব তা
ঘুর্নিক্ষরেও ভাবতে পারেনি।আকিব খুব সকালেই
অয়ন এর দেওয়া চিঠি শিমাকে দিয়ে আসে,
বাসায় এসেই সে খবর পায় তাদের বন্ধু অয়ন আর
নেই।
সে সুইসাইড করেছে।
২/
আকিব এর দেওয়া অয়নের চিঠি নেওয়ার ইচ্ছা না
থাকা সত্তেও মায়া ভদ্রতার খাতিরে চিঠিটা
নেয়, এরপর সে অনিচ্ছা সত্ত্বেও পড়তে থাকে।।।
প্রিয় শিমা,
জানি আমার এই প্রিয় সম্বোধন টা তোমার একদম
ভাল লাগেনি, কিন্তু কি করবো বলো, আমি যাকে
দিনের পর দিন ভালবেসে এসেছি বিশ্বাস করে
এসেছি তাকে ত আমি একদিনের ঘটনার জন্য
অপ্রিয় করে দিতে পারিনা, তুমি এভাবে
আমাকে আর আমার পরিবার কে সবার সামনে
ছোট করবে আমি কখনোই ভাবতে পারিনি।একটা
সময় ছিল তোমার সাথে আমার ঘন্টার পর ঘন্টা
কথা হয়েছে, তুমি কত স্বপ্ন দেখিয়েছিলে আমায়,
জানি তুমি ভুলে গেছ সে সব দিনের কথা,এখন
বলবে আমার হাত থেকে বাঁচার জন্য তুমি তখন
মিথ্যা অভিনয় করেছিলে।কান্না করেও যে কেউ
অভিনয় করে আমি তোমায় না দেখলে বুঝতে
পারতাম না এরপর ও আমি তোমায় ভালবাসি,
আর ভালবেসে যাব যতক্ষন না আমার নিঃশ্বাস
থাকবে।
রাগ আর অভিমান করে তোমায় আমি কস্ট
দিয়েছি খারাপ কথা বলেছি, সেই কথা গুলো
তুমি রেকর্ড করে সবাই কে শুনিয়ে দিয়েছ আর
বলেছ আমার মত একটা ছেলের দেওয়া যন্ত্রনা এর
জন্য তুমি জীবনে বেঁচে থাকার কোন মানে
পাওনা,তোমার আর তোমার পরিবার এর সবার
জীবন আমার জন্য অতিষ্ঠ। তাই তুমি নালিশ
দিতে বাধ্য হয়েছ সব প্রমান সমেত,আমি তোমায়
রাগ করে বকা দিছি খারাপ কথা বলেছি তুমি শুধু
উপরের টাই দেখলে, ভিতর এর টা ত দেখলে না
এগুলো বলে আমি কতটা কস্ট পেয়েছি আর নিরবে
কেঁদেছি।আমি ত তোমায় অনেক ভালবাসি।সবার
সামনে তাই তুমি আমায় খারাপ আর অপরাধি ই
প্রমান করলে। একবার ও ত বললে না তুমি, এই
ছেলের সাথে আমি দিনের পর দিন ঘন্টার পর
ঘন্টা কথা বলেছি আর বিয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছি,
জানি তুমি এসব বলবে না আর আমি ত বলব ই না,
কারন আমি ত তোমার মত এসব কথা রেকর্ড করে
রাখিনি, আর রাখলেও আমি তা করতে পারব না
কারন আমি ত তোমায় ভালবাসি, আমি ত
অভিনয় করিনি।আমি তোমায় কারো সামনে ছোট
করতে পারতাম না আর পারবো ও না।প্রথম এ
শুনেছিলাম তুমি নাকি একটা ছেলেকে ভালবাস।
ফ্রেন্ড রা সবাই এটা বলত কিন্তু তুমি না
বলেছিলে দেখে আমি কারো কথা বিশ্বাস
করিনি , এখন আমি বুঝে গেছি তোমার জীবনে
অন্য কেও আছে,যার ভালবাসার কাছে আমার
ভালাবাসা কিছুই না,তাই ত আমার ভালবাসা
তোমার হ্রদয় কে কখনো স্পর্শ ই করেনি,দোয়া
করি তুমি তাকে নিয়ে অনেক ভাল থেক।আমার এই
মুখ তোমার কখনো আর দেখতে হবে না,আমি চলে
যাচ্ছি অনেক দূরে, যেখান থেকে আর কখনো কেও
ফিরে আসেনা,যেখানে গেলে তোমায় আমার
ঘৃনা আর অবিশ্বাস করে বেঁচে থাকতে হবে না,
ভাল থেক তুমি।
ইতি
অপছন্দ এর একজন।
মায়ার লাইফ থেকে তার অভিশপ্ত মানুষ অয়ন
চলে যাবে এটা দেখে মায়ার অনেক ভাল লাগছে,
সে ভাবছে এবার হয়ত অয়ন ভাল হয়ে যাবে।
৩/
পুলিশ এসে গেছে বাসার সামনে, অয়নের নিথর
দেহটি তারা নিয়ে যাচ্ছে মর্গে। ময়না তদন্ত
শেষ করার পরে ই পুতে দেওয়া হবে তার লাশ,
অয়ন সুইসাইড করেছে তাই ইসলামিক নিয়মে তার
জানাজা গোসল কিছুই হবেনা,তাই তাকে পুতে
দেওয়া হবে । আর সাথে সাথে শেষ হয়ে যাবে
অয়ন নামের অস্তিত্ব ।
৪/
শিমা যখন শুনবে অয়ন আর বেঁচে নেই, এক দুইদিন
খারাপ লাগতে পারে আবার নাও লাগতে পারে।
শিমা এরপর তার মত করে তার ভালবাসার মানুষ
এর সাথে জীবন টা আনন্দময় করে সুখ শান্তিতে
থাকবে।
আর অয়নের বৃদ্ধ বাবা আর মা মৃত্যুর আগ অব্দি
তাদের ছেলের কথা ভেবে এক বুক কষ্ট আর
যন্ত্রনা পেতে থাকবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন