দুপুর সাড়ে তিনটা।ময়মনসিংহ স্টেশনে দাড়িয়ে আছি।গন্তব্য প্রাণের গফরগাঁও।ট্রেনের দেরী এখনো প্রায় একঘন্টা।প্রচন্ড গরম লাগতেছে।স্টেশনের ওয়েটিং চেয়ার-বেঞ্চি গুলো রিজার্ভ। একটা সিটও খালি নেই।ভাবলাম স্টেশনের উত্তর পাশের প্লাটফর্ম মসজিদটাতেই গিয়ে বসি।গরমে মাথা থেকে পাগড়ীটা খুলে হাতে নিয়ে মসজিদটার দিকে এগুচ্ছি।হঠাৎ চোখে পড়লো এক মাঝবয়সী পর্দাশীল মহিলা।সাথে বাইন্ডিং করা কওমী মাদ্রাসার কয়েকটা কিতাব।
প্লাটফর্মের যে স্থানটা ছাওনীর বাইরে সেখানে একটা বেঞ্চিতে একা বসে আছেন।প্রচন্ড রোদের মধ্যে। পড়নে পাঁচপাট্টা হিজাব তো আছেই;সেই সাথে হাত-পায়ে মোজা পড়া।মহিলাটাকে দেখে দীলের মধ্যে অন্যরকম একটা অনুভূতির সৃষ্টি হলো।আল্লাহর কথা স্মরণ হলো।চলতে চলতে ভাবতে লাগলাম এই গরমে তিনি এত্তগুলা পড়ে কেমনে বসে আছেন?তাও আবার প্রখর রৌদ্রে।একমাত্র আল্লাহর ভয় ছাড়া ওটা সম্ভব নয়।ভাবলাম ওনি মহিলা হয়ে আল্লাহর ভয়ে এত গরম সহ্য করতে পারলে,আমি পুরুষ হয়ে গরমের কারণে নবীর সুন্নাত টা মাথা থেকে হাতে নিলাম কেন???
পাগড়ীটা মাথায় পড়ে নিলাম।ওনার সামনে দিয়েই চলে গেলাম মসজিদে।গিয়ে দেখি মসজিদ তালা দেওয়া।ভিতরে গিয়ে বসার কোন ব্যবস্থা নেই।মনটা খারাপ হয়ে গেল,এই একটা ঘন্টা সময় তাহলে দাড়িয়েই থাকতে হবে।তো চলে আসছিলাম।দেখলাম মহিলাটা যে বেঞ্চিতে বসে আছে,ওটার একপাশে তিনি বসেছেন,মাঝে কিতাবের বাইন্ডটা রাখা অন্য পাশটা খালি।আরো তিনজন বসা যাবে।তো ভাবলাম মাঝবয়সীই তো হবেন; পাশে গিয়ে বসা যায়।
নয়ছয় আর কিছু চিন্তা না করে ব্যাগটা কাধঁ থেকে নামিয়ে ওনার কিতাবের পাশে রেখেই বসে পড়লাম।মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলাম আম্মুর মিসড্।ব্যাক করলাম।
:আসসালামু আলাইকুম,
-ওয়ালাইকুম সালাম;বাবা তুই এখন কোথায়?
:স্টেশনে বসে আছি আম্মু।
-ট্রেন কয়টায় আসবে?
:ট্রেন দেরী আছে আম্মু।গফরগাঁও পৌঁছতে পৌঁছতে সাড়ে পাঁচটা বেজে যাবে।
-আচ্ছা!ভালকরে আসিস বাবা।আর শুন, কিছু খেয়ে নিস কিন্তু।
:ওকে আম্মু।(টুট টুট টুট)
আম্মুর তাগিদে ক্ষুধার কথা মনে হয়ে গেল।ব্যাগটা হাতে নিয়ে উঠতে যাবো,ঠিক তখনি পাশে বসা মহিলাটা আমাকে সালাম দিলেন।আমি থ হয়ে গেলাম।কারণ,এমন সুন্দর আওয়াজের সালাম আমি পূর্বে কখনো শুনিনাই।
"মাঝবয়সী মহিলা"আমার এ ধারণাটা ভেস্তে গেল। বয়স ১৫/১৬-র বেশী জীবনেও হবেনা।আমি কি সালামের জওয়াব দেব,লজ্জা লাগছিলো আমার।যে এতক্ষণ এরকম একটা অল্পবয়সী বালিকার পাশে বসে ছিলাম।আমাকে চুপ থাকতে দেখে বালিকাটি বলে উঠলো,
>আপনাকে সালাম দিয়েছিলাম।
:হুহুহুম....ওয়ালাইকুম সালাম!
>আপনি কি গফরগাঁও যাবেন?
:জ্যীঁ।
>কিছু মনে না করলে আমাকে একটু নুছরত করতে পারবেন?(নুছরত(হেল্প)!আরবীটা শুনে মনে হলো মাদানী নিসাবের ছাত্রী হবে আরকি। )
:জ্যীঁ!বলেন।
>হি হি হি!
:হাসলেন যে?
>না কিছুনা, আর নুছরতটা হচ্ছে আমাকে একটা টিকিট এনে দিবেন।
বলে মেয়েটা টাকা বাড়ালো।কালো মোজায় আবৃত হাত থেকে সাবধানে একশো টাকার নোটটা নিলাম।আগে কাউন্টার থেকে দুটো টিকিট নিলাম।একটাতে সীট ছিলো,আরেকটা স্ট্যান্ডিং। তারপর স্টেশানের ক্যান্টিন থেকে একটা মুগলাই খেয়ে কি জানি কি ভেবে দুটো আইসক্রীম নিলাম।একটা আমার জন্য আরেকটা মেয়েটার জন্য।তারপর ওখানে গিয়ে টিকিট, বাকী টাকা আর আইসক্রীমটা ওর হাতে দিতে চাইলে টিকিটটা নিলো,টাকা আর আইসক্রীমটা নিতে চাইলো না।
:আপনি যদি আমার আইসক্রীম না নেন,তাহলে আমি আপনার টাকা নেব কেন?
বলে টাকাটা ওনার পাশে রেখে দিলাম।পরে টাকাটা নিলেও আইসক্রীমটা নিলনা নিলইনা। কি জানি কি ভেবেছে জানি। আর মেয়েদেরকে এরুপ একটু কেয়ার্ফুল থাকতেই হয়। তো আলহামদুলিল্লাহ্, যাই হোক একাই খেলাম দুটো আইসক্রীম।
ওনাকে ওখানে রেখেই চলে এলাম।
ট্রেন আসলো.....
মোটামুটি ফাঁকা।হাতে গুণা কয়েকজন আমার মতন স্ট্যান্ডিং সীটে দাড়িয়ে আছে।
ট্রেন ছাড়লো.....
ঝকঝক শব্দে প্লাটফর্ম ত্যাগ করলো।হ্যান্ডেল ধরে দরজার সামনে দাড়িয়ে পেছনের দিকে ছুটে চলা প্রকৃতি দেখছিলাম
"ঝকঝক ঝকঝক ট্রেন চলেছে;
ট্রেনের বাড়ি কই??"
ছন্দটা মনে করে সেই ছোটবেলার স্মৃতিপটে হারিয়ে গেলাম।কয়েক মিনিটপর পিছন থেকে কারও সালামের আওয়াজ!তাকিয়ে দেখি টিকিট করে দেয়া সেই মেয়েটা।
:আপনি!!!দাড়িয়ে আছেন কেন?আপনার টিকিটে তো সীট নাম্বার আছে।
>জীঁ, বসেই ছিলাম;দেখলাম আপনি দাড়িয়ে আছেন। তাই জিজ্ঞেস করতে এলাম আপনি সীট পান নাই নাকি।
:আরে আমার সীট লাগেনা। আপনি গিয়ে বসেন, যান।
>আচ্ছা,আপনার ফোনটা একটু দিবেন? বাসায় ফোন দিয়ে জানাবো যে আমি ভালোমতে উঠতে পেরেছি।
:অবশ্যই!
(ফোনটা দিলাম,কথা বলে শেষ করে পাশেই দাড়িয়ে ছিলো)
:কি ব্যাপার?দাড়িয়ে আছেন কেন? বসুননা গিয়ে!
>উহু... আমাকে সীটওয়ালা টিকিটটা দিয়ে আপনি নিজে দাড়িয়ে থাকবেন,আর আমি বসে থাকবো এটা কি করে হয়?
:আরে না না,এটা কোন ফ্যাক্ট না।
>তবুও আমি বসতে পারবোনা।কারণ আমার শিক্ষা এটা সমর্থন করেনা।
:তাই নাকি!!আপনি কিসে পড়েন?
>আমি ১০শ্রেণীতে পড়ি।
:কোন স্কুল?
>মুসলিম গার্লস।
(তার মানে "মাদ্রাসার ছাত্রী" ধারণাটা ভুল ছিলো।অবাক হলাম।জেনারেল শিক্ষায় শিক্ষিত একটা মেয়ে কেমনে এমন পর্দানশীল-ভদ্র হয়!)ভাবছিলাম..... ভাবতে ভাবতে জিজ্ঞেস করেই ফেল্লাম,
:তাহলে আপনার কাছে যে কিতাবগুলো দেখলাম ওগুলো কার জন্য?
>আমার ছোট ভাই মাদ্রাসায় পড়ে তো!ওর জন্য কিনে নিচ্ছি।
:তাই নাকি!আলহামদুলিল্লাহ্। তো পরিবারে আর কে কে আছেন?
>আম্মু,আমি আর আমার ভাইটা।
:বাবা??
>মারা গেছেন দুবছর আগে। তাইতো কিতাবগুলো আমাকে কিনে নিতে হচ্ছে।(কথাটা শুনে হাজার গ্রীডের একটা শক খেলাম।চোখে জল এসে গেল আমার!)
:একটা কথা জিজ্ঞেস করবো কি?
>জীঁ...
:জেনারেলের মেয়ে হয়েও কিভাবে আপনার এমন পরিবর্তন?
>আসলে আমি খুওওওব স্মার্ট ছিলাম।বেপর্দা চলাফেরা করতাম।গান,মুভি ইত্যাদি ছিলো আমার নিত্যসঙ্গী। বাবা যখন মারা গিয়েছিলেন তখন আমার হাতটা ধরে বলেছিলেন, "তাসনিম" আমি তো চলে যাচ্ছি।দুনিয়াতে এমন কোন কিছু রেখে যেতে পারিনি যাদ্দ্বারা আমার সওয়াব জারী থাকবে।এমনকি তোমাদেরকেও আমি এমন কোন শিক্ষা দিয়ে যেতে পারলাম না,যা কবরে আমার নাজাত-শান্তির উসিলা হবে।
আমার শান্তি না হোক মা,লক্ষ্য রেখো তোমাদের আমলের কারণে যেন আমার কোন কস্ট না হয়। সুতরাং তোমরা এমন কিছু করবানা যাদ্দ্বারা আমার কবর,আমার আখেরাত কস্টময় হয়।(কান্নার স্বরে কথাগুলো বলছিলো মেয়েটি)
আমার আবার এসব সেড স্টোরি শুনতে ভাল্লাগেনা।কান্না এসে যায়।তাই কান খোলা রেখেছিলাম।তবে মাইন্ডে নিচ্ছিলাম না কথাগুলো! এমন সময় কমলাওয়ালা আসলো,একটা কমলা কিনে টাকা দিতে যাচ্ছিলাম.....
মেয়েটা বলে উঠলো-
>আরেকটা নিবেন না?
:আপনি তো আমার দেয়া জিনিস আবার খাবেননা।তাই একটাই নিলাম!
>কে বল্লো খাবোনা?
:আইসক্রীমের কথা মনে নেই?
(শুনেই হেসে দিলো মেয়েটি।পরে আরো তিনটা কমলা নিলাম।দুটি করে খেলাম দুজন।তারপর খুওওব করে বলে মেয়েটাকে তার সীটে পাঠিয়ে দিলাম।মনের মধ্যে হালকা ফিল হচ্ছে মেয়েটাকে।নাম্বারটা কিভাবে নেয়া যায়? ভাবতেই মনে পড়ে গেল একটু আগেই তো সে আমার ফোন থেকে মাকে কল করেছিল।তাই মেবাইলটা হাতে নিলাম নাম্বারটা সেভ করা জন্য।
ওমা...নাম্বারটা দেখি নাই।ডিলেটেড।কলটা করেই নাম্বারটা ডিলিট করে দিয়েছে।আসলে মেয়েরা এরকমই হয়।বিশ্বাস করেনা কাউকে।এতক্ষণে যতটা ভালবাসা জন্মেছিল মেয়েটার প্রতি,কাহিনীটা দেখে পুরোটা ধ্বংস হয়ে গেল।তাকিয়ে দেখি মেয়েটা এদিকেই তাকিয়ে আছে।প্রচন্ডভাবে রাগ উঠতে শুরু করলো আমার।রাগে বগিটা ছেড়ে অন্য বগিতে চলে গেলাম।
পরে আর দেখা হয়নি।
বাসায় এসে ফোনটা বিছানায় ছুড়ে দিলাম।রাগ এখনো কমছেই না।ফ্রেশ হয়ে খানাদানা সেরে ফোনটা হাতে নিয়ে তো আমি অবাক..........
.
"আসসালামু আলাইকুম!
আমি তাসনিম,
এত রাগ ভালোনা মশাই।বাসায় ফোন দেয়ার কোনই দরকার ছিলোনা আমার।একমাত্র আপনার নাম্বারটা নেয়ার জন্য ফোনটা দিয়েছিলাম।আর নাম্বারটা ডিলিট করেরেছিলাম সারপ্রাইজ দেব বলে।
একদম উল্টাপাল্টা কিছু মনে করবেন না কিন্তু।
"আই লাভ ইউ ___________"
(আপনার নামটা আমার জানা নেই তো।গ্যাপটা পূরণ করে নিয়েন)
মেসেজটা পড়ে অজান্তেই একটা মুচকি হাসি এসে গেল।আর তা আম্মু দেখে ফেল্লেন!!
.
সেই থেকেই গল্পটার শুরু......
প্লাটফর্মের যে স্থানটা ছাওনীর বাইরে সেখানে একটা বেঞ্চিতে একা বসে আছেন।প্রচন্ড রোদের মধ্যে। পড়নে পাঁচপাট্টা হিজাব তো আছেই;সেই সাথে হাত-পায়ে মোজা পড়া।মহিলাটাকে দেখে দীলের মধ্যে অন্যরকম একটা অনুভূতির সৃষ্টি হলো।আল্লাহর কথা স্মরণ হলো।চলতে চলতে ভাবতে লাগলাম এই গরমে তিনি এত্তগুলা পড়ে কেমনে বসে আছেন?তাও আবার প্রখর রৌদ্রে।একমাত্র আল্লাহর ভয় ছাড়া ওটা সম্ভব নয়।ভাবলাম ওনি মহিলা হয়ে আল্লাহর ভয়ে এত গরম সহ্য করতে পারলে,আমি পুরুষ হয়ে গরমের কারণে নবীর সুন্নাত টা মাথা থেকে হাতে নিলাম কেন???
পাগড়ীটা মাথায় পড়ে নিলাম।ওনার সামনে দিয়েই চলে গেলাম মসজিদে।গিয়ে দেখি মসজিদ তালা দেওয়া।ভিতরে গিয়ে বসার কোন ব্যবস্থা নেই।মনটা খারাপ হয়ে গেল,এই একটা ঘন্টা সময় তাহলে দাড়িয়েই থাকতে হবে।তো চলে আসছিলাম।দেখলাম মহিলাটা যে বেঞ্চিতে বসে আছে,ওটার একপাশে তিনি বসেছেন,মাঝে কিতাবের বাইন্ডটা রাখা অন্য পাশটা খালি।আরো তিনজন বসা যাবে।তো ভাবলাম মাঝবয়সীই তো হবেন; পাশে গিয়ে বসা যায়।
নয়ছয় আর কিছু চিন্তা না করে ব্যাগটা কাধঁ থেকে নামিয়ে ওনার কিতাবের পাশে রেখেই বসে পড়লাম।মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলাম আম্মুর মিসড্।ব্যাক করলাম।
:আসসালামু আলাইকুম,
-ওয়ালাইকুম সালাম;বাবা তুই এখন কোথায়?
:স্টেশনে বসে আছি আম্মু।
-ট্রেন কয়টায় আসবে?
:ট্রেন দেরী আছে আম্মু।গফরগাঁও পৌঁছতে পৌঁছতে সাড়ে পাঁচটা বেজে যাবে।
-আচ্ছা!ভালকরে আসিস বাবা।আর শুন, কিছু খেয়ে নিস কিন্তু।
:ওকে আম্মু।(টুট টুট টুট)
আম্মুর তাগিদে ক্ষুধার কথা মনে হয়ে গেল।ব্যাগটা হাতে নিয়ে উঠতে যাবো,ঠিক তখনি পাশে বসা মহিলাটা আমাকে সালাম দিলেন।আমি থ হয়ে গেলাম।কারণ,এমন সুন্দর আওয়াজের সালাম আমি পূর্বে কখনো শুনিনাই।
"মাঝবয়সী মহিলা"আমার এ ধারণাটা ভেস্তে গেল। বয়স ১৫/১৬-র বেশী জীবনেও হবেনা।আমি কি সালামের জওয়াব দেব,লজ্জা লাগছিলো আমার।যে এতক্ষণ এরকম একটা অল্পবয়সী বালিকার পাশে বসে ছিলাম।আমাকে চুপ থাকতে দেখে বালিকাটি বলে উঠলো,
>আপনাকে সালাম দিয়েছিলাম।
:হুহুহুম....ওয়ালাইকুম সালাম!
>আপনি কি গফরগাঁও যাবেন?
:জ্যীঁ।
>কিছু মনে না করলে আমাকে একটু নুছরত করতে পারবেন?(নুছরত(হেল্প)!আরবীটা শুনে মনে হলো মাদানী নিসাবের ছাত্রী হবে আরকি। )
:জ্যীঁ!বলেন।
>হি হি হি!
:হাসলেন যে?
>না কিছুনা, আর নুছরতটা হচ্ছে আমাকে একটা টিকিট এনে দিবেন।
বলে মেয়েটা টাকা বাড়ালো।কালো মোজায় আবৃত হাত থেকে সাবধানে একশো টাকার নোটটা নিলাম।আগে কাউন্টার থেকে দুটো টিকিট নিলাম।একটাতে সীট ছিলো,আরেকটা স্ট্যান্ডিং। তারপর স্টেশানের ক্যান্টিন থেকে একটা মুগলাই খেয়ে কি জানি কি ভেবে দুটো আইসক্রীম নিলাম।একটা আমার জন্য আরেকটা মেয়েটার জন্য।তারপর ওখানে গিয়ে টিকিট, বাকী টাকা আর আইসক্রীমটা ওর হাতে দিতে চাইলে টিকিটটা নিলো,টাকা আর আইসক্রীমটা নিতে চাইলো না।
:আপনি যদি আমার আইসক্রীম না নেন,তাহলে আমি আপনার টাকা নেব কেন?
বলে টাকাটা ওনার পাশে রেখে দিলাম।পরে টাকাটা নিলেও আইসক্রীমটা নিলনা নিলইনা। কি জানি কি ভেবেছে জানি। আর মেয়েদেরকে এরুপ একটু কেয়ার্ফুল থাকতেই হয়। তো আলহামদুলিল্লাহ্, যাই হোক একাই খেলাম দুটো আইসক্রীম।
ওনাকে ওখানে রেখেই চলে এলাম।
ট্রেন আসলো.....
মোটামুটি ফাঁকা।হাতে গুণা কয়েকজন আমার মতন স্ট্যান্ডিং সীটে দাড়িয়ে আছে।
ট্রেন ছাড়লো.....
ঝকঝক শব্দে প্লাটফর্ম ত্যাগ করলো।হ্যান্ডেল ধরে দরজার সামনে দাড়িয়ে পেছনের দিকে ছুটে চলা প্রকৃতি দেখছিলাম
"ঝকঝক ঝকঝক ট্রেন চলেছে;
ট্রেনের বাড়ি কই??"
ছন্দটা মনে করে সেই ছোটবেলার স্মৃতিপটে হারিয়ে গেলাম।কয়েক মিনিটপর পিছন থেকে কারও সালামের আওয়াজ!তাকিয়ে দেখি টিকিট করে দেয়া সেই মেয়েটা।
:আপনি!!!দাড়িয়ে আছেন কেন?আপনার টিকিটে তো সীট নাম্বার আছে।
>জীঁ, বসেই ছিলাম;দেখলাম আপনি দাড়িয়ে আছেন। তাই জিজ্ঞেস করতে এলাম আপনি সীট পান নাই নাকি।
:আরে আমার সীট লাগেনা। আপনি গিয়ে বসেন, যান।
>আচ্ছা,আপনার ফোনটা একটু দিবেন? বাসায় ফোন দিয়ে জানাবো যে আমি ভালোমতে উঠতে পেরেছি।
:অবশ্যই!
(ফোনটা দিলাম,কথা বলে শেষ করে পাশেই দাড়িয়ে ছিলো)
:কি ব্যাপার?দাড়িয়ে আছেন কেন? বসুননা গিয়ে!
>উহু... আমাকে সীটওয়ালা টিকিটটা দিয়ে আপনি নিজে দাড়িয়ে থাকবেন,আর আমি বসে থাকবো এটা কি করে হয়?
:আরে না না,এটা কোন ফ্যাক্ট না।
>তবুও আমি বসতে পারবোনা।কারণ আমার শিক্ষা এটা সমর্থন করেনা।
:তাই নাকি!!আপনি কিসে পড়েন?
>আমি ১০শ্রেণীতে পড়ি।
:কোন স্কুল?
>মুসলিম গার্লস।
(তার মানে "মাদ্রাসার ছাত্রী" ধারণাটা ভুল ছিলো।অবাক হলাম।জেনারেল শিক্ষায় শিক্ষিত একটা মেয়ে কেমনে এমন পর্দানশীল-ভদ্র হয়!)ভাবছিলাম..... ভাবতে ভাবতে জিজ্ঞেস করেই ফেল্লাম,
:তাহলে আপনার কাছে যে কিতাবগুলো দেখলাম ওগুলো কার জন্য?
>আমার ছোট ভাই মাদ্রাসায় পড়ে তো!ওর জন্য কিনে নিচ্ছি।
:তাই নাকি!আলহামদুলিল্লাহ্। তো পরিবারে আর কে কে আছেন?
>আম্মু,আমি আর আমার ভাইটা।
:বাবা??
>মারা গেছেন দুবছর আগে। তাইতো কিতাবগুলো আমাকে কিনে নিতে হচ্ছে।(কথাটা শুনে হাজার গ্রীডের একটা শক খেলাম।চোখে জল এসে গেল আমার!)
:একটা কথা জিজ্ঞেস করবো কি?
>জীঁ...
:জেনারেলের মেয়ে হয়েও কিভাবে আপনার এমন পরিবর্তন?
>আসলে আমি খুওওওব স্মার্ট ছিলাম।বেপর্দা চলাফেরা করতাম।গান,মুভি ইত্যাদি ছিলো আমার নিত্যসঙ্গী। বাবা যখন মারা গিয়েছিলেন তখন আমার হাতটা ধরে বলেছিলেন, "তাসনিম" আমি তো চলে যাচ্ছি।দুনিয়াতে এমন কোন কিছু রেখে যেতে পারিনি যাদ্দ্বারা আমার সওয়াব জারী থাকবে।এমনকি তোমাদেরকেও আমি এমন কোন শিক্ষা দিয়ে যেতে পারলাম না,যা কবরে আমার নাজাত-শান্তির উসিলা হবে।
আমার শান্তি না হোক মা,লক্ষ্য রেখো তোমাদের আমলের কারণে যেন আমার কোন কস্ট না হয়। সুতরাং তোমরা এমন কিছু করবানা যাদ্দ্বারা আমার কবর,আমার আখেরাত কস্টময় হয়।(কান্নার স্বরে কথাগুলো বলছিলো মেয়েটি)
আমার আবার এসব সেড স্টোরি শুনতে ভাল্লাগেনা।কান্না এসে যায়।তাই কান খোলা রেখেছিলাম।তবে মাইন্ডে নিচ্ছিলাম না কথাগুলো! এমন সময় কমলাওয়ালা আসলো,একটা কমলা কিনে টাকা দিতে যাচ্ছিলাম.....
মেয়েটা বলে উঠলো-
>আরেকটা নিবেন না?
:আপনি তো আমার দেয়া জিনিস আবার খাবেননা।তাই একটাই নিলাম!
>কে বল্লো খাবোনা?
:আইসক্রীমের কথা মনে নেই?
(শুনেই হেসে দিলো মেয়েটি।পরে আরো তিনটা কমলা নিলাম।দুটি করে খেলাম দুজন।তারপর খুওওব করে বলে মেয়েটাকে তার সীটে পাঠিয়ে দিলাম।মনের মধ্যে হালকা ফিল হচ্ছে মেয়েটাকে।নাম্বারটা কিভাবে নেয়া যায়? ভাবতেই মনে পড়ে গেল একটু আগেই তো সে আমার ফোন থেকে মাকে কল করেছিল।তাই মেবাইলটা হাতে নিলাম নাম্বারটা সেভ করা জন্য।
ওমা...নাম্বারটা দেখি নাই।ডিলেটেড।কলটা করেই নাম্বারটা ডিলিট করে দিয়েছে।আসলে মেয়েরা এরকমই হয়।বিশ্বাস করেনা কাউকে।এতক্ষণে যতটা ভালবাসা জন্মেছিল মেয়েটার প্রতি,কাহিনীটা দেখে পুরোটা ধ্বংস হয়ে গেল।তাকিয়ে দেখি মেয়েটা এদিকেই তাকিয়ে আছে।প্রচন্ডভাবে রাগ উঠতে শুরু করলো আমার।রাগে বগিটা ছেড়ে অন্য বগিতে চলে গেলাম।
পরে আর দেখা হয়নি।
বাসায় এসে ফোনটা বিছানায় ছুড়ে দিলাম।রাগ এখনো কমছেই না।ফ্রেশ হয়ে খানাদানা সেরে ফোনটা হাতে নিয়ে তো আমি অবাক..........
.
"আসসালামু আলাইকুম!
আমি তাসনিম,
এত রাগ ভালোনা মশাই।বাসায় ফোন দেয়ার কোনই দরকার ছিলোনা আমার।একমাত্র আপনার নাম্বারটা নেয়ার জন্য ফোনটা দিয়েছিলাম।আর নাম্বারটা ডিলিট করেরেছিলাম সারপ্রাইজ দেব বলে।
একদম উল্টাপাল্টা কিছু মনে করবেন না কিন্তু।
"আই লাভ ইউ ___________"
(আপনার নামটা আমার জানা নেই তো।গ্যাপটা পূরণ করে নিয়েন)
মেসেজটা পড়ে অজান্তেই একটা মুচকি হাসি এসে গেল।আর তা আম্মু দেখে ফেল্লেন!!
.
সেই থেকেই গল্পটার শুরু......
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন