সোমবার, ৮ মে, ২০১৭

নষ্ট

পিয়াল বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।হাতে মোবাইলটা।মোবাইলটা ভাইব্রেট করে উঠলো,পিয়াল মোবাইলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে লাল বাটুনটায় চাপ প্রয়োগ করলো। পরক্ষনেই হারিয়ে যায় স্ক্রিনে ভেসে ওঠা তমা নামটা।অতঃপর একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বারান্দা ত্যাগ করে পিয়াল।
তমা,তমা পিয়ালের হবু বউ ছিলো কোনো একসময়।হাহা! ভাবতেই কেমন লাগে কোনো একসময় ছিলো এখন আর নেই।হয়তো তমাই তার বউ হতো যদি তমা পিয়ালের ভালোবাসাটা বুঝতে পারতো।
২০১৬ সালের নবেম্বর এর মাঝামাঝি কোনো একটা তারিখে তমার সাথে পরিচয় হয় পিয়ালের।তমা পিয়ালের স্কুল ফ্রেন্ড আরিসার বন্ধু ছিলো,তমা পিয়ালের সমবয়সী ছিলো।
প্রথম দেখাতেই পিয়াল একটু হলেও তার প্রেমে পরে যায়।আসলে ১৭-২২ বছরের মানুষদের একটাই সমস্যা, এরা যাকে দেখে তার প্রেমেই পরে। সময় লাগে না বেশি।পিয়ালেরও একই অবস্থা।
পিয়ালের সাথে তমার কথা হতো শুধুই ফেইসবুকে। তমার অনেক ফেবু ফ্রেন্ড আর ফলোয়ারস, তার প্রত্যেকটা স্টাটাস,আর পিকের লাইক কমেন্ট তার প্রমান।কেউ কেউ তার স্টাটাস বা পিকেই তাকে,তাদের ভালোবাসার কথা জানাচ্ছেন। কেউ কবিতা লিখে,তো কেউ আবার বাংলা রচনা লিখে।পিয়াল শুধু ভাবতো সে লাইনের কত নাম্বারে কে জানে?
রাত ১১.৩৫,
পিয়াল আজকে তার ভালোবাসার কথা তমাকে জানাবেই।তাতে যা হওয়ার হবে।পিয়াল সাহস নিয়ে তমাকে মেসেজ দিলো-
পিয়াল-হাই,
তমা- হুম্ম,বলো।
-একটা কথা বলার ছিলো।
-হুম্ম বলো।
-আচ্ছা তোমার কি বয়ফ্রেন্ড আছে?
-না নেই,কেনো বলোতো?
-না,না!এমনি আর কি।
-ওহ!
-আমি তোমাকে ভালোবাসি,বিয়ে করবা আমাকে?
-কি?
-হুম্ম, বিয়ে করবা আমাকে?
-দেখো মজা করবা না।
-মজা করতেছি না।আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি আর বিয়েও করতে চাই।
-দেখো পিয়াল, আমরা সমবয়সী,আর সমবয়সীতে কখনোই এইসব হয় না।
-কে বললো তোমাকে? আমরা আর ফ্যামিলি মানলেই তো হইলো, তাই না?
-তোমার ফ্যামিলি মানবে না।
-মানবে। আমি তোমার কথা আম্মুর কাছে বলছি।তোমার সাথে কথা বলবে আম্মু। (মিথ্যা)
-কি?কি কিরছো এইটা তুমি?আমি পারবো না।
-কেনো? দেখো আমার ফ্যামিলি তোমাকে মেনে নিতে পারছে তুমি কেনো পারবা না।
-আমার ভয় করতেছে।
-কিসের ভয়?আম্মু অনেক ভালো, সে আমার সব থেকে কাছের বন্ধু। তুমি একবার তার সাথে কথা বলে দেখো।তাহলেই বুঝতে পারবা।
-আচ্ছা! কখন বলতে হবে?
-বিকালে আম্মু ফ্রী থাকবেন, তখন।
-আচ্ছা নাম্বার দিবো?
-নাহ!আমাকে দেয়ার দরকার নেই। আমার আম্মুর নাম্বার ০১******** এইটা। তাকে বিকাল ৪টায় মিস দিয়ো সে কল ব্যাক করবে।
-আচ্ছা ঠিক আছে।আমার খুব ভয় করছে।আন্টি যদি বকা দেয় তাহলে তো আমি শেষ।
-আরে নাহ!আম্মু আনেক ভালো, তা কথা বললেই বুঝবা।
পিয়াল ওর আম্মুকে এই বিষয় কিচ্ছুই বলে নি। পরের দিন সকালে উঠে পিয়াল তার আম্মুকে কথা গুলো জানায়।ওর আম্মুও কথা গুলো শুনে সম্মতি দিলো এবং বললো সে বিকালে কথা বলবেন।
সারাটা দিন তমার টেনশনে কেটে যায়।
বিকালে তমা কল দেয় পিয়ালের আম্মুকে। তখন পিয়াল পাশেই ছিলো।পিয়ালের আম্মু, তমার সাথে স্বাভাবিক ভাবেই কথা বললো।তমার ভয়টা কেটে গেলো।
পিয়ালের আম্মুর সাথে কথা বলার পরে, তমা পিয়ালের সাথে কথা বলে।তমার পিয়ালের আম্মুকে অনেক ভালো লেগেছে।
এভাবে তাদের সম্পর্কটা এগোতে থাকলো।কিন্তু কিছুদিন পর তমা তাকে হঠাৎ কল দিয়ে বললো-
তমা-আমি রিলেশন রাখতে পারবো না।
পিয়াল-কেনো?
-আমার ফ্যামিলি তেমন উন্নত না।তোমাদের মত সচ্ছল না।
-তো কি? তোমার ফ্যামিলি দিয়ে আমার কি?আমি তো ভালোবাসি তোমাকে।
-তারপরও, তোমার ফ্যামিলি আমার ফ্যামিলিকে মানবে না।
-কি বলছো?আমাদ ফ্যামিলি মোটেও অইরকম না তারা মেনে নিবে।
-আমি বিশ্বাস করি না।আর আমি চাই না আমার ফ্যামিলির কোনো মানহানি হোক?
-মানহানি হবে মানে?
-জানি না! আমি এই রিলেশন রাখতে পারতেছি না।
-তুমি আমার ফ্যামিলির সাথে কথা বলো আবার তাহলেই বুঝবা।
পিয়ালের আম্মুর সাথে কথা বলে আবারো তমা।পিয়ালের আম্মু তমাকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, তিনি তার এবং তার ফ্যামিলিকে সম্পূর্ণভাবে মেনে নিয়েছেন।
আবারও ভালোমতই সব চলছিলো।পিয়াল তাকে ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করে নি এক মুহূর্তের জন্য।তমার থেকে পিয়ালই ভালোবাসতো তমাকে। কিন্তু তমা যখন বুঝতে পারলো পিয়ালের দূর্বল স্থান সে নিজেই।তখন সে অবহেলা করা শুরু করে।অযথা রাগ দেখানো,অযথা দোষারোপ করা ইত্যাদি। পিয়াল কষ্ট পেতো কিন্তু কিছু বলতো না।পিয়াল তমাকে কল না দিলে তমা ভুলেও কথা বলতো না পিয়ালের সাথে সারাক্ষন অনলাইনে থাকলেও একটা মেসেজ পিয়ালকে দেয়া হয় না।
এভাবে দেখতে দেখতে ৩ সপ্তাহ চলে যায়। পিয়াল নিজেকে অনেকটাই গুছিয়ে ছিয়েছে। পিয়ালের কাছে সত্য ভালোবাসা বলতে কিছু নেই।সবই মিথ্যা মনে হয় তার,তার কাছে পৃথিবীর সব মেয়েরাই খারাপ এখন।
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি ২ তারিখ,
পিয়ালের আজ ৪-৫টা গার্লফ্রেন্ড, সেও ঠিক তেমনি অন্যের ইমোশন নিয়ে খেলে।যেমনটা তমা খেলছিলো।
বিকাল ৪টা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে পিয়াল,হঠাৎ ফোন বেজে ওঠে। ফোনটা হাতে নিতেই তমার নামে সেইভ করা নাম্বারটা ভেসে ওঠে স্ক্রিনে।ঠোঁটের কোনায় হাসি ফুটে ওঠে পিয়ালের। ফোনটা কেটে দেয়।সে জানে এখন তমার ফোন ধরলে তমা বলবে -"তার ভূল হয়ে গেছে, আর জীবনেও হবে না।আর ক্ষমা চাইবে।" কিন্তু এই ক্ষমাটা চাওয়ার সুযোগ দিতে চায় না পিয়াল।
:
-আমরা অনেকেই বলি ছেলেটা খারাপ,বাজে,অনেক মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে।কিন্তু ছেলেটাও কাউকে ভালোবেসে ছিলো।এবং তার সেই ভালোবাসাই তাকে এই স্থান উপহার দিয়েছে।একটা মেয়ের জন্য আমরা সব মেয়েকে খারাপ বানাই।যাই হোক উপরের গল্পটা একটা বাস্তবিক কাহিনী,কিন্তু চরিত্র ভিন্ন।আসল চরিত্র তুলে ধরায় বারণ আছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন