শিহাব, বয়স ২৩ এর মতন। ইন্টারমিডিয়েট ফেল করার পর আর পড়াশুনা করে নি। কাজ সারাদিন ঘুরে বেড়ানো আর বাজারের ক্লাব ঘরে আড্ডা দেওয়া। সব সময় নেতা নেতা ভাব নিয়ে ঘুরে , সাথে থাকে কিছু সুসময়ের বন্ধু।
আজ ক্লাব ঘরে ক্যারাম খেলছে এমন সময় ভীতরে ঢুকল রুপু। শিহাব কেন জানি এই ছেলেটাকে দেখতে পারে না। রুপু বেশ সোজা শান্ত। সবাই বলে রুপুর মত ভাল ছেলে হয় না। কিন্ত কেন জানি শিহাবের ধারনা সবই ওর লোক দেখানো।
রুপু ক্যারাম বোর্ডের কাছে আসতেই শিহাব বলে উঠল
- এইতো আমাদের মহারাজ হাজির, এই এই তোরা সবাই তাকে স্বাগতম জানারে।
তারপর রুপুর দিকে তাকিয়ে বিগলিত গলায় বলল- বলুন বলুন হুজুর কি খেদমত করতে পারি আপনার?
সবাই হেসে উঠতেই রুপু আগুন মাখা চোখে সবাইকে একবার দেখে ঘরের অন্যদিকে সরে গেল।কাসেম, নাজমুল, বাবুল মিলে লুডু খেলছিল ওখানে গিয়ে বসল। এখনো শিহাব কি কি যেন বলছে আর সবাই তাতে হেসে কুটিকুটি হচ্ছে। রুপু কান দিলো না। নাজমুল ওকে বসতে দেখেই জিজ্ঞাস করল ' কিরে খেলবি নাকি? '
- না তোরা খেল।
রুপুর মন একটু একটু করে খারাপ হয়ে যাচ্ছে। শিহাব ভাইয়ের সমস্যাটা কি সে আজো ধরতে পারল না। সব সময় উল্টা পাল্টা কথা বলে তাকে। বয়সে বড় হওয়ায় কিছু বলতেও পারেনা তাই এড়িয়ে চলে। কিন্তু শিহাবের কাজই যেন রুপুর পিছু লাগা। রুপু শিহাবের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,"আর কত দিন জ্বালাবি? বিদেশ যাওয়ার পর দেখব আর কাকে জ্বালাস।
রুপু বের হয়ে এল ক্লাব ঘর থেকে। মিয়া বাড়ির পুকুর পাড়ে এসে বকুল তলায় বসল। এইটা তার খুব প্রিয় একটা জায়গা। নিরিবিলি পরিবেশ প্রিয় হওয়ার আরেকটা কারনও অবশ্য আছে। পুকুরের আরেক পাড়ে ইলাদের বাড়ি, এখানে বসলে মাঝে মাঝে ওকে দেখা যায়। ইলাকে রুপু ভালবাসে কিনা নিজেই বুঝে না, তবে ওকে দেখলে খুব ভাল লাগে। বিদেশ চলে গেলে ইলাকে আর দেখতে পাবেনা বিষয় টা রুপুকে কষ্ট দেয় কিন্তু আর কিছু করার নেই। বাবা অনেক কষ্টে তার বিদেশ যাবার টাকা যোগাড় করেছে, তাকে যেতেই হবে।
//
আসরের নামাজ পড়ে নাজমুল, বাবুল আর রুপু হাটতে বের হয়েছে। ওদের গ্রামের পশ্চিমে কোন বাড়িঘর নেই,যতদূর চোখ যায় ধানের খেত। মাঝখান দিয়ে একটা মেঠো পথ গেছে দুপাশেই বড় বড় গাছ।পথের আরেক প্রান্ত মিশেছে বকশি গ্রামের সাথে। ওরা এই পথেই হাটছে।
- তুই চলে গেলে দোস্ত ভাল লাগব না রে। বলে নাজমুল রুপুর কাধে হাত রাখল।
- কি করার আছে আর ? রুপু তাকাল নাজমুলের দিকে।
ওমনি বাবুল চিল্লাল - এই তুই যাওয়ার পর আমারেও নিস, আমার আর দোকান করতে ভাল্লাগেনা, আব্বা আমারে একটা পয়সাও হাতে দেয় না।
বাবুলের কথার ভঙ্গি শুনে দুইজনেই হেসে উঠল।
- হাসিস না তোরা। ওই জানিস বকশি আর আমাদের গ্রাম মিলে ফুটবল খেলার আয়োজন করব।
- তুই কই শুনলি?
- শিহাব ভাই বলল। সবাইরে চাদা ধরছে ২০০ করে।
-তার মত সবার বাপ ভাই বিদেশ করে না যে দুই দিন পর পর এত চাদা দিবো ।
-তোরা কেউ নাম দিবি খেলায় ? আব্বা তো আমারে দোকান বাদ দিয়া উঠতেই দিব না।
- না, রুপু উত্তর দিল।
- আমি নাম দিতে পারি। নাজমুল উত্তর দিল।
মাগরিবের আজান দিতেই ওরা দ্রুত পা চালিয়ে গ্রামের মসজিদের দিকে চলল।
//
গ্রামের মাঠে প্রতিদিন ফূটবল খেলার প্রাকটিস চলে। ফাইনাল খেলা হবে সামনের মাসের ১ তারিখে। নাজমুল খেলায় নাম দিয়েছে। রুপু বসে বসে ওদের খেলা দেখছে। হঠাৎ শিহাব খেলা ছেড়ে রুপুর পাশে এসে সটান শুয়ে পড়ে হাপাতে লাগল। রুপু ভাবছে উঠে যাবে কিনা তখনি শিহাব রুপুর দিকে তাকিয়ে বলল -" তুই নাকি যেকোনো দিন ফুস ??? " বলে বিমান উড়ার অনুকরণ করল।
রুপু কথা না বলে চুপ করে রইল। শিহাব উঠে বসে রুপুর পিঠে ঠ্যালা দিয়ে বলল - ওই কথা কস না যে???
রুপুর মুখটা কঠিন করে কিছু বলবে এমন সময় নাজমুল ল্যাংড়াতে ল্যাংড়াতে হাজির, - রুপুউউউ আমারে বাড়ি নিয়া চল তো, ব্যথা পাইইইছি।
//
১ তারিখ, আজ ফাইনাল খেলা। যাব না যাব না ভেবেও রুপু বেরিয়ে পড়ল।অলস পায়ে বড় মাঠের দিকে কিছুদূর এগুতেই দেখে ওদের গ্রামের কিছু লোক দ্রুত হেটে এদিকে আসছে। রুপুর সামনে আসতে বলল-"ওদিকে যাস না, খেলায় ঝামেলা হয়ছে। "
ঝামেলার কথা শুনেই ও বড় মাঠের দিকে দৌড় দিল, ওখানে নাজমুল আছে।
মাঠে দুই জার্সি পড়া দলে মারামারি হচ্ছে।নাজমুল কে কোথাও দেখা যাচ্ছেনা। ধর ধর বলে দুইজন নাজমুলদের দলের কাকে যেন ধরেই মারতে শুরু করেছে । রুপু দৌড়ে গেল, না নাজমুল না, শিহাব ভাই। যা মার দিচ্ছে তার তিন গুন বেশি খাচ্ছে। ধা করে রুপুর মাথায় রক্ত চড়ে গেল, ওদের এলাকার ছেলেকে মারছে!!! একজনকে ঝাপটে ধরে আচ্ছামত কিল, ঘুষি দিতে লাগল। নাজমুল, বাবুলও কোথা থেকে এসে আরেকজন কে ধরল। কেউ টেনে সরাতেই রুপুর হুশ হল, ততক্ষনে ও সামনের জনের নাক মুখ সমান করে দিছে ।
" শালা খুন করলে মাডার কেস খাবি, ভাগ। " ধমকে উঠে শিহাব রুপুকে টেনে দৌড় দিল গ্রামের দিকে।
//
বেশ কিছুদিন ধরে দুই গ্রামেই থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। আরো দুই একবার ছোটখাটো মারামারিও হয়ে গেছে । তবুও দুই গ্রামের মাতাব্বর, মেম্বার, চেয়ারম্যান মিলে পুলিশি ঝামেলা এড়াতে শালিসের মাধ্যমে সব মিটমাটের চেষ্টা করল। কতদূর মিটমাট হল বুঝা গেল না,তবে অপরাধী সাব্যস্ত সবাই নিজেদের মধ্যে কোলাকুলি করে মাফ চাইল। রুপুর সাথে যখন মিঠু কোলাকুলি করছিল তখন ওর কানে ফিসফিস করে বলল
-" তৈরি থাকিস, ওইদিনের কথা ভুলি নাই। " কিন্তু সবাইকে শুনিয়ে মাফ চাইল,মাফ করল।
ঝামেলা শেষ হওয়ায় অনেকদিন পর নাজমুল, রুপু, বাবুল সেই পশিমের রাস্তায় আজ বেড়াতে এসেছে। সেটাই কাল হল ওদের জন্য। সন্ধ্যায় ফিরে আসছে এমন সময় হঠাৎ ধানক্ষেত থেকে ৬-৭ জন রাস্তায় উঠেই হাতের লাঠি দিয়ে ওদের এলোপাথাড়ি মারতে লাগল। কিছু বুঝার আগেই বাবুল আর রুপু মার খেয়ে পড়ে গেল। নাজমুল কোন রকমে ছুটে গিয়ে রাস্তা ধরে ছুটল প্রানপণে, ক্লাবঘরে পৌছাতেই হবে। শিহাবসহ অনেকেই ছিল ওখানে। নাজমুল হড়বড় করে বলল কি ঘটেছে।শিহাব হুংকার দিয়ে ছুটল। মনে হচ্ছে কে যেন ওর হৃৎপিন্ডে হাত দিয়েছে। বাকি সবাইও হাতের কাছে যা পেল নিয়ে ছুটল।
শিহাবই সবার আগে পৌছাল, ততক্ষনে ওরা চলে গেছে। রুপু আর বাবুল ভাঙ্গাচোরা পুতুলের মত পড়ে আছে।ওদের দিকে তাকানো যাচ্ছে না।
শিহাবের কলিজাটা মোচড়ে উঠল। হাটুগেড়ে বসে রুপুর হাত টা চেপে ধরল," রুপু ভাই আমার.... বলতে বলতেই গলার স্বর ভেঙ্গে গেল। বুঝতে পারছে এত দিনের যত রাগ, ঘৃণা, বিদ্বেষ সব ছিল বাইরের আবরণ মাত্র। ও মন থেকে কখনোই রুপুর খারাপ চায় নি। -" ভাই মরিস না, বেচে থাক, আল্লাহর দোহাই লাগে বেচে থাক। "
কিন্তু আল্লাহর দোহাই রুপুর কানে পৌঁছায়নি। একটু দেরি হয়ে গেছে।
আজ ক্লাব ঘরে ক্যারাম খেলছে এমন সময় ভীতরে ঢুকল রুপু। শিহাব কেন জানি এই ছেলেটাকে দেখতে পারে না। রুপু বেশ সোজা শান্ত। সবাই বলে রুপুর মত ভাল ছেলে হয় না। কিন্ত কেন জানি শিহাবের ধারনা সবই ওর লোক দেখানো।
রুপু ক্যারাম বোর্ডের কাছে আসতেই শিহাব বলে উঠল
- এইতো আমাদের মহারাজ হাজির, এই এই তোরা সবাই তাকে স্বাগতম জানারে।
তারপর রুপুর দিকে তাকিয়ে বিগলিত গলায় বলল- বলুন বলুন হুজুর কি খেদমত করতে পারি আপনার?
সবাই হেসে উঠতেই রুপু আগুন মাখা চোখে সবাইকে একবার দেখে ঘরের অন্যদিকে সরে গেল।কাসেম, নাজমুল, বাবুল মিলে লুডু খেলছিল ওখানে গিয়ে বসল। এখনো শিহাব কি কি যেন বলছে আর সবাই তাতে হেসে কুটিকুটি হচ্ছে। রুপু কান দিলো না। নাজমুল ওকে বসতে দেখেই জিজ্ঞাস করল ' কিরে খেলবি নাকি? '
- না তোরা খেল।
রুপুর মন একটু একটু করে খারাপ হয়ে যাচ্ছে। শিহাব ভাইয়ের সমস্যাটা কি সে আজো ধরতে পারল না। সব সময় উল্টা পাল্টা কথা বলে তাকে। বয়সে বড় হওয়ায় কিছু বলতেও পারেনা তাই এড়িয়ে চলে। কিন্তু শিহাবের কাজই যেন রুপুর পিছু লাগা। রুপু শিহাবের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,"আর কত দিন জ্বালাবি? বিদেশ যাওয়ার পর দেখব আর কাকে জ্বালাস।
রুপু বের হয়ে এল ক্লাব ঘর থেকে। মিয়া বাড়ির পুকুর পাড়ে এসে বকুল তলায় বসল। এইটা তার খুব প্রিয় একটা জায়গা। নিরিবিলি পরিবেশ প্রিয় হওয়ার আরেকটা কারনও অবশ্য আছে। পুকুরের আরেক পাড়ে ইলাদের বাড়ি, এখানে বসলে মাঝে মাঝে ওকে দেখা যায়। ইলাকে রুপু ভালবাসে কিনা নিজেই বুঝে না, তবে ওকে দেখলে খুব ভাল লাগে। বিদেশ চলে গেলে ইলাকে আর দেখতে পাবেনা বিষয় টা রুপুকে কষ্ট দেয় কিন্তু আর কিছু করার নেই। বাবা অনেক কষ্টে তার বিদেশ যাবার টাকা যোগাড় করেছে, তাকে যেতেই হবে।
//
আসরের নামাজ পড়ে নাজমুল, বাবুল আর রুপু হাটতে বের হয়েছে। ওদের গ্রামের পশ্চিমে কোন বাড়িঘর নেই,যতদূর চোখ যায় ধানের খেত। মাঝখান দিয়ে একটা মেঠো পথ গেছে দুপাশেই বড় বড় গাছ।পথের আরেক প্রান্ত মিশেছে বকশি গ্রামের সাথে। ওরা এই পথেই হাটছে।
- তুই চলে গেলে দোস্ত ভাল লাগব না রে। বলে নাজমুল রুপুর কাধে হাত রাখল।
- কি করার আছে আর ? রুপু তাকাল নাজমুলের দিকে।
ওমনি বাবুল চিল্লাল - এই তুই যাওয়ার পর আমারেও নিস, আমার আর দোকান করতে ভাল্লাগেনা, আব্বা আমারে একটা পয়সাও হাতে দেয় না।
বাবুলের কথার ভঙ্গি শুনে দুইজনেই হেসে উঠল।
- হাসিস না তোরা। ওই জানিস বকশি আর আমাদের গ্রাম মিলে ফুটবল খেলার আয়োজন করব।
- তুই কই শুনলি?
- শিহাব ভাই বলল। সবাইরে চাদা ধরছে ২০০ করে।
-তার মত সবার বাপ ভাই বিদেশ করে না যে দুই দিন পর পর এত চাদা দিবো ।
-তোরা কেউ নাম দিবি খেলায় ? আব্বা তো আমারে দোকান বাদ দিয়া উঠতেই দিব না।
- না, রুপু উত্তর দিল।
- আমি নাম দিতে পারি। নাজমুল উত্তর দিল।
মাগরিবের আজান দিতেই ওরা দ্রুত পা চালিয়ে গ্রামের মসজিদের দিকে চলল।
//
গ্রামের মাঠে প্রতিদিন ফূটবল খেলার প্রাকটিস চলে। ফাইনাল খেলা হবে সামনের মাসের ১ তারিখে। নাজমুল খেলায় নাম দিয়েছে। রুপু বসে বসে ওদের খেলা দেখছে। হঠাৎ শিহাব খেলা ছেড়ে রুপুর পাশে এসে সটান শুয়ে পড়ে হাপাতে লাগল। রুপু ভাবছে উঠে যাবে কিনা তখনি শিহাব রুপুর দিকে তাকিয়ে বলল -" তুই নাকি যেকোনো দিন ফুস ??? " বলে বিমান উড়ার অনুকরণ করল।
রুপু কথা না বলে চুপ করে রইল। শিহাব উঠে বসে রুপুর পিঠে ঠ্যালা দিয়ে বলল - ওই কথা কস না যে???
রুপুর মুখটা কঠিন করে কিছু বলবে এমন সময় নাজমুল ল্যাংড়াতে ল্যাংড়াতে হাজির, - রুপুউউউ আমারে বাড়ি নিয়া চল তো, ব্যথা পাইইইছি।
//
১ তারিখ, আজ ফাইনাল খেলা। যাব না যাব না ভেবেও রুপু বেরিয়ে পড়ল।অলস পায়ে বড় মাঠের দিকে কিছুদূর এগুতেই দেখে ওদের গ্রামের কিছু লোক দ্রুত হেটে এদিকে আসছে। রুপুর সামনে আসতে বলল-"ওদিকে যাস না, খেলায় ঝামেলা হয়ছে। "
ঝামেলার কথা শুনেই ও বড় মাঠের দিকে দৌড় দিল, ওখানে নাজমুল আছে।
মাঠে দুই জার্সি পড়া দলে মারামারি হচ্ছে।নাজমুল কে কোথাও দেখা যাচ্ছেনা। ধর ধর বলে দুইজন নাজমুলদের দলের কাকে যেন ধরেই মারতে শুরু করেছে । রুপু দৌড়ে গেল, না নাজমুল না, শিহাব ভাই। যা মার দিচ্ছে তার তিন গুন বেশি খাচ্ছে। ধা করে রুপুর মাথায় রক্ত চড়ে গেল, ওদের এলাকার ছেলেকে মারছে!!! একজনকে ঝাপটে ধরে আচ্ছামত কিল, ঘুষি দিতে লাগল। নাজমুল, বাবুলও কোথা থেকে এসে আরেকজন কে ধরল। কেউ টেনে সরাতেই রুপুর হুশ হল, ততক্ষনে ও সামনের জনের নাক মুখ সমান করে দিছে ।
" শালা খুন করলে মাডার কেস খাবি, ভাগ। " ধমকে উঠে শিহাব রুপুকে টেনে দৌড় দিল গ্রামের দিকে।
//
বেশ কিছুদিন ধরে দুই গ্রামেই থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। আরো দুই একবার ছোটখাটো মারামারিও হয়ে গেছে । তবুও দুই গ্রামের মাতাব্বর, মেম্বার, চেয়ারম্যান মিলে পুলিশি ঝামেলা এড়াতে শালিসের মাধ্যমে সব মিটমাটের চেষ্টা করল। কতদূর মিটমাট হল বুঝা গেল না,তবে অপরাধী সাব্যস্ত সবাই নিজেদের মধ্যে কোলাকুলি করে মাফ চাইল। রুপুর সাথে যখন মিঠু কোলাকুলি করছিল তখন ওর কানে ফিসফিস করে বলল
-" তৈরি থাকিস, ওইদিনের কথা ভুলি নাই। " কিন্তু সবাইকে শুনিয়ে মাফ চাইল,মাফ করল।
ঝামেলা শেষ হওয়ায় অনেকদিন পর নাজমুল, রুপু, বাবুল সেই পশিমের রাস্তায় আজ বেড়াতে এসেছে। সেটাই কাল হল ওদের জন্য। সন্ধ্যায় ফিরে আসছে এমন সময় হঠাৎ ধানক্ষেত থেকে ৬-৭ জন রাস্তায় উঠেই হাতের লাঠি দিয়ে ওদের এলোপাথাড়ি মারতে লাগল। কিছু বুঝার আগেই বাবুল আর রুপু মার খেয়ে পড়ে গেল। নাজমুল কোন রকমে ছুটে গিয়ে রাস্তা ধরে ছুটল প্রানপণে, ক্লাবঘরে পৌছাতেই হবে। শিহাবসহ অনেকেই ছিল ওখানে। নাজমুল হড়বড় করে বলল কি ঘটেছে।শিহাব হুংকার দিয়ে ছুটল। মনে হচ্ছে কে যেন ওর হৃৎপিন্ডে হাত দিয়েছে। বাকি সবাইও হাতের কাছে যা পেল নিয়ে ছুটল।
শিহাবই সবার আগে পৌছাল, ততক্ষনে ওরা চলে গেছে। রুপু আর বাবুল ভাঙ্গাচোরা পুতুলের মত পড়ে আছে।ওদের দিকে তাকানো যাচ্ছে না।
শিহাবের কলিজাটা মোচড়ে উঠল। হাটুগেড়ে বসে রুপুর হাত টা চেপে ধরল," রুপু ভাই আমার.... বলতে বলতেই গলার স্বর ভেঙ্গে গেল। বুঝতে পারছে এত দিনের যত রাগ, ঘৃণা, বিদ্বেষ সব ছিল বাইরের আবরণ মাত্র। ও মন থেকে কখনোই রুপুর খারাপ চায় নি। -" ভাই মরিস না, বেচে থাক, আল্লাহর দোহাই লাগে বেচে থাক। "
কিন্তু আল্লাহর দোহাই রুপুর কানে পৌঁছায়নি। একটু দেরি হয়ে গেছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন