আকাশে ভারী ভারী মেঘ ভাসছে, অচিরেই বৃষ্টি নামবে। আর অপেক্ষা করা ঠিক হবে না। কিন্তু বাপ্পির সাথে দেখা করাটা জরুরী ছিল। কারণ রোদেলা আজ রাতের ট্রেনেই সিলেট চলে যাচ্ছে। সিলেট তার পৈত্রিক নিবাস, সেখানেই সে বড় হয়েছে। তারপর পড়াশুনার তাগিদে ঢাকায় আসা, মামার বাড়িতে আশ্রয় নেয়া। ইউনীভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া এবং সেই সাথে বাপ্পির সাথে পরিচয়। তারপর ভালবাসা। সত্যি, এই শহরে এসে জীবনের কতগুলো মোড় তার ঘুরে গেল। রোদেলা মুঠোফোনে সময় দেখল, পাঁচটা বেজে গেছে। এখনই ওঠা দরকার, নয়তো আর ট্যাক্সি পাওয়া যাবে না।
.
রোদেলা পার্কের বেঞ্চ ছেড়ে উঠবার মুখে একটা তরুণীর হাসির শব্দ শুনতে পেল। সে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখে একটা ছেলে আরেকটা মেয়ে অদূরে দাঁড়িয়ে গল্প করছে। চোখে লাগার মত একটা ব্যাপার হচ্ছে তরুণ-তরুণী দুজনের পোশাকের রঙই সাদা। এরা কি কালার ম্যাচ করে পোশাক পরেছে না আপনা থেকেই মিলে গেছে? সে আর বাপ্পি এরকম কালার ম্যাচ করে পোশাক পরে দেখা করতো। আজ তাদের প্রেমের বয়স চারবছর, এখন এসব শুধুই স্মৃতি হয়ে মনের করিডোরে জমা হয়ে আছে। রোদেলা সপ্তমবারের মত বাপ্পিকে ফোন দিলো, বরাবরের মত এবারও ধরলো না সে ফোন। কী হয়েছে আজ তার? রোদেলা বিষন্নমুখে উঠে পড়ল। রাস্তায় এসেই ট্যাক্সি পাওয়া গেল।
"আফা, কই যাইবেন?"
ট্যাক্সিতে বসতেই ড্রাইভারের প্রশ্ন।
"আদাবরের দিকে চলুন।"
ট্যাক্সি কিছুদূর যাবার পরই ঝুম বৃষ্টি নামলো। রোদেলা বৃষ্টি দেখতে লাগলো আর স্মৃতি রোমন্থনে ফিরে গেল।
"আমায় ভালবাসো?"
একদিন অনেক সংকোচ ভুলেই সে প্রশ্নটা করেছিল বাপ্পিকে।
"না তো।"
"তাহলে আমাকে এত টেক কেয়ার করো যে? সকাল, দুপুর, রাতে এমনকি মাঝে মাঝে মাঝরাতেও ফোন দাও। ঘন ঘন দেখা করতে চাও এসব তাহলে কী?"
"আমরা তো শুধুই বেস্ট ফ্রেন্ড, তাই বন্ধুত্বের অধিকার নিয়ে এসব করি।"
"ইডিয়ট!"
এটা বলেই রোদেলা সেদিন উঠে চলে গিয়েছিল। সাথে ছিল চোখভর্তি জল। অভিমানে মনটা ভিজে গিয়েছিল তার। আশ্চর্যের ব্যাপার, বাপ্পি তাকে সেদিন আটকায়নি। কিন্তু সন্ধ্যায় ঠিকই তাকে টেক্সট করে বলেছিল, সরি।
.
রোদেলার অভিমানী মনটা তখনই ভাল হয়ে গিয়েছিল। ইনবক্সে একটামাত্র শব্দ---সরি। অথচ এই শব্দটার কত না ক্ষমতা! নিমিষেই মনটা ভাল করে দিলো। আসলে কখন কীভাবে যে মানুষের মন বদলায় তা কেউ বলতে পারে না। রোদেলা টাইপ করে পাঠালো, ভালবাসো?
"বাসি তো, ভালবাসি।"
"কতটা?"
"এক ইঞ্চি।"
"এত কম?"
"আধ ইঞ্চি বললে খুশি হতে?"
"মারব তোমায়।"
"হা-হা-হা!"
.
এই ছিল বাপ্পির স্বভাব। তার গর্ব তার পার্সোনালিটি। যার জন্য রোদেলা নিজেকে তার সামনে উপস্থাপনের সুযোগ পায় না। বাপ্পি শুধু নিজের ব্যক্তিত্বটাই দেখে, তারটা কেয়ারই করে না। কিন্তু রোদেলা কী করে তাকে বোঝায় রঙের সাথে রঙ মিলিয়ে পোশাক পরা গেলেও রঙের সাথে রঙ মিলিয়ে জীবন কাটানো অসম্ভব ব্যাপার।
.
"আফা নামেন, আইসা পড়ছি।"
রোদেলা ট্যাক্সি থেকে নামলো। তখন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। আকাশ মেঘে মেঘে আরও অন্ধকার। সে আদাবরের গলিতে ঢুকে গেল। এইখানে তার এক বান্ধবীর বাসা। বান্ধবীর থেকে বিদায় নেবে বলে সে এখানে এসেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল বান্ধবীর বাসায় এসে সে দরজায় বিরাট তালা ঝুলতে দেখলো। রোদেলার কান্না পাবার উপক্রম হল। আজ তার জীবনে এমন সব দুঃখজনক ব্যাপার ঘটছে কেন? রোদেলা এবার স্টেশনের দিকে রওনা দেবে বলে ঠিক করলো। যদিও রাত হতে এখনও বেশ দেরী। ট্রেনের সময় দশটার দিকে। তবুও রোদেলা রওনা হল। স্টেশনে পৌঁছে সে প্ল্যাটফরমে বসে রইলো একাকী। চারিদিকে অনেক মানুষের আনাগোনা। ভীড়ের মধ্যে বসে থাকতে তার ভালোই লাগছে। কিন্তু বাপ্পি হলে বিরক্ত হতো। ভীড় তার পছন্দ নয়। পানির পিপাসা পেয়েছে। সামনেই দোকান। কিন্তু পানি কিনতে যাওয়াটা বোকামী হবে, তার সীট অন্য কেউ দখল করে নেবে।
.
এরমধ্যে হঠাৎ একটা বাচ্চা ছেলে এসে হাজীর বাদাম বেচার জন্য।
"আফা, একটু বাদাম নিবেন?"
পানির তেষ্টা থাকা সত্ত্বেও সে বাদাম কিনে বিশ টাকার নোট বাড়িয়ে দিলো। ছেলেটি দশ টাকার নোট ফেরত দিতে চাইলে রোদেলা রেখে দিতে বলে। ছেলেটি মিষ্টি করে হেসে টাকা নিয়ে ছুটে যায়। বড় ভাল লাগে রোদেলার।
.
রাত হয়ে গেছে, দশটা বাজতে চলেছে। আকাশে এখন আর মেঘ নেই। কৃষ্ণপক্ষের মরা চাঁদ উঠেছে আকাশে। রোদেলার অপেক্ষা এখন ট্রেনের জন্য। বাপ্পিকে বিদায় না দিয়ে যেতে তার কষ্ট হচ্ছে। এরপর হয়তো আর তার সাথে দেখা হবে না। বাবা-মা তার জন্য পাত্র ঠিক করেছে। এটা যদি সে বাপ্পিকে বলতে পারতো তবুও একটা শান্তি ছিল। সে নিশ্চিত একটা ব্যবস্থা করতে পারতো---এই বিশ্বাসটুকু রোদেলার আছে। ট্রেনের হুইসেল বাজতে শুরু করেছে, অদূর থেকে আধার ভেদ করে আসছে ট্রেন। রোদেলা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ট্রেনের দিকে এগিয়ে গেল।
.
পরিশিষ্টঃ
বাপ্পির যখন জ্ঞান ফিরলো তখন সে হাসপাতালে। তার বাবা-মা আর কিছু চেনা মুখ ঝুঁকে আছে তার মুখের ওপর। সবাই ক্রন্দনরত। সে সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে ক্লান্তস্বরে বলে, রোদেলা আসেনি?
মা বলে, রোদেলা কে?
বাপ্পি কিছু না বলে চোখ বুজে ফেলে। সেই চোখ সে আর খোলে না। সবাই তাকে নিয়ে আহাজারি শুরু করে দেয়।
.
রোদেলার সাথে সে যখন দেখা করতে যায় তখন রাস্তায় বিপরীত দিক থেকে একটি গাড়ি এসে তাকে ধাক্কা দিয়ে যায়। তারপর হাসপাতালে আনা হয় তাকে। অতঃপর মৃত্যুমুখে পতিত হয় সে। হয়তো অভিমানী রোদেলা এ খবর কখনোই জানবে না।
.
রোদেলা পার্কের বেঞ্চ ছেড়ে উঠবার মুখে একটা তরুণীর হাসির শব্দ শুনতে পেল। সে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখে একটা ছেলে আরেকটা মেয়ে অদূরে দাঁড়িয়ে গল্প করছে। চোখে লাগার মত একটা ব্যাপার হচ্ছে তরুণ-তরুণী দুজনের পোশাকের রঙই সাদা। এরা কি কালার ম্যাচ করে পোশাক পরেছে না আপনা থেকেই মিলে গেছে? সে আর বাপ্পি এরকম কালার ম্যাচ করে পোশাক পরে দেখা করতো। আজ তাদের প্রেমের বয়স চারবছর, এখন এসব শুধুই স্মৃতি হয়ে মনের করিডোরে জমা হয়ে আছে। রোদেলা সপ্তমবারের মত বাপ্পিকে ফোন দিলো, বরাবরের মত এবারও ধরলো না সে ফোন। কী হয়েছে আজ তার? রোদেলা বিষন্নমুখে উঠে পড়ল। রাস্তায় এসেই ট্যাক্সি পাওয়া গেল।
"আফা, কই যাইবেন?"
ট্যাক্সিতে বসতেই ড্রাইভারের প্রশ্ন।
"আদাবরের দিকে চলুন।"
ট্যাক্সি কিছুদূর যাবার পরই ঝুম বৃষ্টি নামলো। রোদেলা বৃষ্টি দেখতে লাগলো আর স্মৃতি রোমন্থনে ফিরে গেল।
"আমায় ভালবাসো?"
একদিন অনেক সংকোচ ভুলেই সে প্রশ্নটা করেছিল বাপ্পিকে।
"না তো।"
"তাহলে আমাকে এত টেক কেয়ার করো যে? সকাল, দুপুর, রাতে এমনকি মাঝে মাঝে মাঝরাতেও ফোন দাও। ঘন ঘন দেখা করতে চাও এসব তাহলে কী?"
"আমরা তো শুধুই বেস্ট ফ্রেন্ড, তাই বন্ধুত্বের অধিকার নিয়ে এসব করি।"
"ইডিয়ট!"
এটা বলেই রোদেলা সেদিন উঠে চলে গিয়েছিল। সাথে ছিল চোখভর্তি জল। অভিমানে মনটা ভিজে গিয়েছিল তার। আশ্চর্যের ব্যাপার, বাপ্পি তাকে সেদিন আটকায়নি। কিন্তু সন্ধ্যায় ঠিকই তাকে টেক্সট করে বলেছিল, সরি।
.
রোদেলার অভিমানী মনটা তখনই ভাল হয়ে গিয়েছিল। ইনবক্সে একটামাত্র শব্দ---সরি। অথচ এই শব্দটার কত না ক্ষমতা! নিমিষেই মনটা ভাল করে দিলো। আসলে কখন কীভাবে যে মানুষের মন বদলায় তা কেউ বলতে পারে না। রোদেলা টাইপ করে পাঠালো, ভালবাসো?
"বাসি তো, ভালবাসি।"
"কতটা?"
"এক ইঞ্চি।"
"এত কম?"
"আধ ইঞ্চি বললে খুশি হতে?"
"মারব তোমায়।"
"হা-হা-হা!"
.
এই ছিল বাপ্পির স্বভাব। তার গর্ব তার পার্সোনালিটি। যার জন্য রোদেলা নিজেকে তার সামনে উপস্থাপনের সুযোগ পায় না। বাপ্পি শুধু নিজের ব্যক্তিত্বটাই দেখে, তারটা কেয়ারই করে না। কিন্তু রোদেলা কী করে তাকে বোঝায় রঙের সাথে রঙ মিলিয়ে পোশাক পরা গেলেও রঙের সাথে রঙ মিলিয়ে জীবন কাটানো অসম্ভব ব্যাপার।
.
"আফা নামেন, আইসা পড়ছি।"
রোদেলা ট্যাক্সি থেকে নামলো। তখন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। আকাশ মেঘে মেঘে আরও অন্ধকার। সে আদাবরের গলিতে ঢুকে গেল। এইখানে তার এক বান্ধবীর বাসা। বান্ধবীর থেকে বিদায় নেবে বলে সে এখানে এসেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল বান্ধবীর বাসায় এসে সে দরজায় বিরাট তালা ঝুলতে দেখলো। রোদেলার কান্না পাবার উপক্রম হল। আজ তার জীবনে এমন সব দুঃখজনক ব্যাপার ঘটছে কেন? রোদেলা এবার স্টেশনের দিকে রওনা দেবে বলে ঠিক করলো। যদিও রাত হতে এখনও বেশ দেরী। ট্রেনের সময় দশটার দিকে। তবুও রোদেলা রওনা হল। স্টেশনে পৌঁছে সে প্ল্যাটফরমে বসে রইলো একাকী। চারিদিকে অনেক মানুষের আনাগোনা। ভীড়ের মধ্যে বসে থাকতে তার ভালোই লাগছে। কিন্তু বাপ্পি হলে বিরক্ত হতো। ভীড় তার পছন্দ নয়। পানির পিপাসা পেয়েছে। সামনেই দোকান। কিন্তু পানি কিনতে যাওয়াটা বোকামী হবে, তার সীট অন্য কেউ দখল করে নেবে।
.
এরমধ্যে হঠাৎ একটা বাচ্চা ছেলে এসে হাজীর বাদাম বেচার জন্য।
"আফা, একটু বাদাম নিবেন?"
পানির তেষ্টা থাকা সত্ত্বেও সে বাদাম কিনে বিশ টাকার নোট বাড়িয়ে দিলো। ছেলেটি দশ টাকার নোট ফেরত দিতে চাইলে রোদেলা রেখে দিতে বলে। ছেলেটি মিষ্টি করে হেসে টাকা নিয়ে ছুটে যায়। বড় ভাল লাগে রোদেলার।
.
রাত হয়ে গেছে, দশটা বাজতে চলেছে। আকাশে এখন আর মেঘ নেই। কৃষ্ণপক্ষের মরা চাঁদ উঠেছে আকাশে। রোদেলার অপেক্ষা এখন ট্রেনের জন্য। বাপ্পিকে বিদায় না দিয়ে যেতে তার কষ্ট হচ্ছে। এরপর হয়তো আর তার সাথে দেখা হবে না। বাবা-মা তার জন্য পাত্র ঠিক করেছে। এটা যদি সে বাপ্পিকে বলতে পারতো তবুও একটা শান্তি ছিল। সে নিশ্চিত একটা ব্যবস্থা করতে পারতো---এই বিশ্বাসটুকু রোদেলার আছে। ট্রেনের হুইসেল বাজতে শুরু করেছে, অদূর থেকে আধার ভেদ করে আসছে ট্রেন। রোদেলা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ট্রেনের দিকে এগিয়ে গেল।
.
পরিশিষ্টঃ
বাপ্পির যখন জ্ঞান ফিরলো তখন সে হাসপাতালে। তার বাবা-মা আর কিছু চেনা মুখ ঝুঁকে আছে তার মুখের ওপর। সবাই ক্রন্দনরত। সে সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে ক্লান্তস্বরে বলে, রোদেলা আসেনি?
মা বলে, রোদেলা কে?
বাপ্পি কিছু না বলে চোখ বুজে ফেলে। সেই চোখ সে আর খোলে না। সবাই তাকে নিয়ে আহাজারি শুরু করে দেয়।
.
রোদেলার সাথে সে যখন দেখা করতে যায় তখন রাস্তায় বিপরীত দিক থেকে একটি গাড়ি এসে তাকে ধাক্কা দিয়ে যায়। তারপর হাসপাতালে আনা হয় তাকে। অতঃপর মৃত্যুমুখে পতিত হয় সে। হয়তো অভিমানী রোদেলা এ খবর কখনোই জানবে না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন