হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ শার্টের বুক পকেটে কিছু একটার উপস্থিতি টের পেয়ে দেখি একটা চিঠি; হ্যা' মারিয়ার উদ্দেশ্য লিখা আমার একটা চিঠি। এই চিঠির উপস্থিতি জানান দিচ্ছে, সেদিন মারিয়ার জন্য লিখা চিঠিটা এখন অবধি তাকে আমার দেওয়া হয়নি। যদি প্রশ্ন করা হয়, কেন? তাহলে উত্তরটা হয়তো এমন হতে পারে, "তাকে ঘিরে প্রথমে যে ইচ্ছেটা আমার মধ্যে কাজ করছিল পরবর্তীতে আর সেই ইচ্ছা বা প্রয়োজন বোধ কোনোটাই আমার মধ্যে জাগেনি।" বুঝতে পারলাম তাকে নিয়ে আমার ভাবান্তর ঘটেছে। তবে আজ হঠাৎ আবিষ্কার করলাম, বুক পকেটে থেকে থেকে পছন্দের শব্দগুচ্ছ দিয়ে সাঁজনো চিঠিটা অনেক আগেই তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য হারিয়েছে! এখন কেমন যেন মৃত মৃত হয়ে আছে। এ কথা ভেবেই মায়া হল, চিঠিটা তার গন্তব্যে পৌঁছায়নি!
আমি চিঠিটা আবারো তার যথাযথ স্থান বুক পকেটে রেখে দিয়ে হাঁটা শুরু কলাম। উদ্দেশ্য... মারিয়ার সাথে দেখা করা।
.
আর কিচ্ছুক্ষণ পরেই সূর্য ডুবে গিয়ে পৃথিবীর বুক বেয়ে সন্ধ্যা নামবে। ঘড়িতে সময় আনুমানিক কয়টা হবে তা আমার জানা নেই। তবে আমার পাশে বসা উনিশ অতিক্রম করা মারিয়া নামের তরুণী মেয়েটা খুব কৌতূহল নিয়ে সামনের পুকুটায় হাসের সাঁতার কাটা দেখছে, আর আমি তাকে। সে কিছু একটা ভাবছে! পড়নে তার সফেদ ফুলহাতা ব্লাউজের সাথে 'টিয়াসবুজ' রঙের কালো ডোরাকাটা বেনারসি। কোমর অতিক্রান্ত খোলা চুলে বাতাস খেলে গিয়ে যেন তার শ্যামলবর্ণকে আমার কাছে প্রতিনিয়ত আকর্ষণীয় করে তুলছে। তার এমন রুপে আমি মুগ্ধ; সত্যিই আমি মুগ্ধ। কবি জীবনান্দ তার বনলতার প্রতি হয়তো ঠিক এমনিভাবে মুগ্ধ হয়েছিলেন।
.
অনেকক্ষণ পর মারিয়া পুকুর থেকে দৃষ্টি সড়িয়ে এবার আমার দিকে তাকালো। আর তার এ তাকানো-তে আমি পূর্বের মত কোনো ধরনের কৌতূহল দেখতে পেলাম না! যেটা ছিল সেটা নিরীহভাব, অপ্রাপ্তি আর আমার প্রতি তার অঢেল অভিযোগ। সে আবার মুখ পুকুরের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে নিচু কন্ঠে বলে উঠলো,
- আচ্ছা রানা! আমরা কি চাইলেও হাঁসের মত হতে পারিনা?
তার এমন প্রশ্নে আমি বেশ খানিক আশ্চর্য হলাম! আমার বোধগম্য হয়নি আসলে সে কি বুঝাতে চাচ্ছে। আমি তার কথাটা বুঝতে পারিনি; সে হয়তো সেটা অনুধাবন করতে পেরেছিল বিধায় আবারো বলে উঠলো,
- দেখ, হাঁসেরা সাঁতার শেষে শরীরের পানি খুব স্বাভাবিক ভাবে ঝাড়িয়ে নিচ্ছে। আমরাও কি ঠিক তেমনিভাবে কারো উপর জমে থাকা মায়া ঝাড়তে পারি না?"
.
জবাবে আমি মারিয়াকে বললাম,
- কঠিন প্রশ্ন ছুড়ে দিলি। তারপরও শোন! ওরা হাঁস আর আমরা মানুষ; মনের অধিকারী মানুষ। মনের জন্যই হয়তো মায়া ঝেড়ে ফেলা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়না মারিয়া।
- হুম! হয়তো সত্য বলেছিস। না হলে দেখ, নেশাখোরেরা নেশা উপেক্ষা করতে পারলেও মায়াটান থেকে তারা পিছুপা হতে পারে না। তোর মায়ায় আবদ্ধ হয়ে আমার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না।
- আমার প্রতি তোর এটা মায়া না, এটা ভুল। আর জগতে এমন কিছু মানুষ আছে যারা কাদা ভেবে নীলকান্তমণি এড়িয়ে যায়। আমার উপর থেকে মায়া তুলে নে! হীত হবে।
- তুই হয়তো জানিস না, সম্ভব হলে আমি তোর উপর জন্ম নেয়া আমার সমস্ত মায়া আজ নিমিষেই ঝেড়ে নিতাম; ঐ হাঁসগুলার মত। বুঝলি কষ্ট হয়, আর এই কষ্টের মাত্রা আমি বৈ কেউ উপলব্ধি করতে পারবে না।
.
মারিয়ার এমন কথায় আমার গলা ধরে আসলো। অনেক কিছু বলছে ইচ্ছে হলেও কন্ঠস্বর তা স্বায় দিচ্ছে না। আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে; ভীষণ কষ্ট। আচ্ছা আমি কি শ্যামবর্ণের মেয়েটার হাতে আমার ভাজ পরে নষ্ট হয়ে যাওয়া চিঠিটা দিয়ে বলবো," আমি কি বলবো, শোন মারিয়া! আমার প্রতি তোর মায়ার মাত্রাটা আমি বুঝি। আর পৃথিবীটা বড্ডঃ মায়াকাতর! এখানে কেউ কখনো প্রিয় কারো মায়া উপেক্ষা করতে পারেনি; আমার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না।"
না থাক সেকথা! বলার দরকার নেই। মানুষ বড্ডঃ ব্যতিক্রমধর্মী প্রাণী; এরা চাওয়া জিনিসটা একসময় পেলে অবহেলা শুরু করে দেয়, না পেলে সেটা পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। আর তাছাড়া পৃথিবীর সমস্ত ভালোবাসা প্রকাশিত হতে হবে এমন তো না! আমার ভালোবাসাটা না হয় এই মারিয়া নামের মায়াবতী মেয়েটার অন্তড়ালেই থাকুক।
.
মারিয়া যাবার জন্য উঠে দাঁড়ালো। আমি মেয়েটার দিকে একবার তাকালাম! চেহারা জুড়ে তার বিষন্নতার প্রলেপ, সুযোগ পেলে হয়তো কাঁদবে। আজকের আকাশে মেঘ জমে আছে; মনে হচ্ছে কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি নামবে। যেতে যেতে মেয়েটা হয়তো সে বৃষ্টিতে গা ভাসিয়ে দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাসটা প্রাণভরে নিতে চাইবে ! আবার হয়তোবা বৃষ্টির সাথে ভাসিয়ে দিতে চাইবে আমার প্রতি জন্ম নেয়া তার সমস্ত মায়া। অথচ সে জানে সেটা কখনোই সম্ভব হবে না!
আচ্ছা এই বৃষ্টিতে কি মারিয়া কাঁদবে?
আমি চিঠিটা আবারো তার যথাযথ স্থান বুক পকেটে রেখে দিয়ে হাঁটা শুরু কলাম। উদ্দেশ্য... মারিয়ার সাথে দেখা করা।
.
আর কিচ্ছুক্ষণ পরেই সূর্য ডুবে গিয়ে পৃথিবীর বুক বেয়ে সন্ধ্যা নামবে। ঘড়িতে সময় আনুমানিক কয়টা হবে তা আমার জানা নেই। তবে আমার পাশে বসা উনিশ অতিক্রম করা মারিয়া নামের তরুণী মেয়েটা খুব কৌতূহল নিয়ে সামনের পুকুটায় হাসের সাঁতার কাটা দেখছে, আর আমি তাকে। সে কিছু একটা ভাবছে! পড়নে তার সফেদ ফুলহাতা ব্লাউজের সাথে 'টিয়াসবুজ' রঙের কালো ডোরাকাটা বেনারসি। কোমর অতিক্রান্ত খোলা চুলে বাতাস খেলে গিয়ে যেন তার শ্যামলবর্ণকে আমার কাছে প্রতিনিয়ত আকর্ষণীয় করে তুলছে। তার এমন রুপে আমি মুগ্ধ; সত্যিই আমি মুগ্ধ। কবি জীবনান্দ তার বনলতার প্রতি হয়তো ঠিক এমনিভাবে মুগ্ধ হয়েছিলেন।
.
অনেকক্ষণ পর মারিয়া পুকুর থেকে দৃষ্টি সড়িয়ে এবার আমার দিকে তাকালো। আর তার এ তাকানো-তে আমি পূর্বের মত কোনো ধরনের কৌতূহল দেখতে পেলাম না! যেটা ছিল সেটা নিরীহভাব, অপ্রাপ্তি আর আমার প্রতি তার অঢেল অভিযোগ। সে আবার মুখ পুকুরের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে নিচু কন্ঠে বলে উঠলো,
- আচ্ছা রানা! আমরা কি চাইলেও হাঁসের মত হতে পারিনা?
তার এমন প্রশ্নে আমি বেশ খানিক আশ্চর্য হলাম! আমার বোধগম্য হয়নি আসলে সে কি বুঝাতে চাচ্ছে। আমি তার কথাটা বুঝতে পারিনি; সে হয়তো সেটা অনুধাবন করতে পেরেছিল বিধায় আবারো বলে উঠলো,
- দেখ, হাঁসেরা সাঁতার শেষে শরীরের পানি খুব স্বাভাবিক ভাবে ঝাড়িয়ে নিচ্ছে। আমরাও কি ঠিক তেমনিভাবে কারো উপর জমে থাকা মায়া ঝাড়তে পারি না?"
.
জবাবে আমি মারিয়াকে বললাম,
- কঠিন প্রশ্ন ছুড়ে দিলি। তারপরও শোন! ওরা হাঁস আর আমরা মানুষ; মনের অধিকারী মানুষ। মনের জন্যই হয়তো মায়া ঝেড়ে ফেলা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়না মারিয়া।
- হুম! হয়তো সত্য বলেছিস। না হলে দেখ, নেশাখোরেরা নেশা উপেক্ষা করতে পারলেও মায়াটান থেকে তারা পিছুপা হতে পারে না। তোর মায়ায় আবদ্ধ হয়ে আমার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না।
- আমার প্রতি তোর এটা মায়া না, এটা ভুল। আর জগতে এমন কিছু মানুষ আছে যারা কাদা ভেবে নীলকান্তমণি এড়িয়ে যায়। আমার উপর থেকে মায়া তুলে নে! হীত হবে।
- তুই হয়তো জানিস না, সম্ভব হলে আমি তোর উপর জন্ম নেয়া আমার সমস্ত মায়া আজ নিমিষেই ঝেড়ে নিতাম; ঐ হাঁসগুলার মত। বুঝলি কষ্ট হয়, আর এই কষ্টের মাত্রা আমি বৈ কেউ উপলব্ধি করতে পারবে না।
.
মারিয়ার এমন কথায় আমার গলা ধরে আসলো। অনেক কিছু বলছে ইচ্ছে হলেও কন্ঠস্বর তা স্বায় দিচ্ছে না। আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে; ভীষণ কষ্ট। আচ্ছা আমি কি শ্যামবর্ণের মেয়েটার হাতে আমার ভাজ পরে নষ্ট হয়ে যাওয়া চিঠিটা দিয়ে বলবো," আমি কি বলবো, শোন মারিয়া! আমার প্রতি তোর মায়ার মাত্রাটা আমি বুঝি। আর পৃথিবীটা বড্ডঃ মায়াকাতর! এখানে কেউ কখনো প্রিয় কারো মায়া উপেক্ষা করতে পারেনি; আমার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না।"
না থাক সেকথা! বলার দরকার নেই। মানুষ বড্ডঃ ব্যতিক্রমধর্মী প্রাণী; এরা চাওয়া জিনিসটা একসময় পেলে অবহেলা শুরু করে দেয়, না পেলে সেটা পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। আর তাছাড়া পৃথিবীর সমস্ত ভালোবাসা প্রকাশিত হতে হবে এমন তো না! আমার ভালোবাসাটা না হয় এই মারিয়া নামের মায়াবতী মেয়েটার অন্তড়ালেই থাকুক।
.
মারিয়া যাবার জন্য উঠে দাঁড়ালো। আমি মেয়েটার দিকে একবার তাকালাম! চেহারা জুড়ে তার বিষন্নতার প্রলেপ, সুযোগ পেলে হয়তো কাঁদবে। আজকের আকাশে মেঘ জমে আছে; মনে হচ্ছে কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি নামবে। যেতে যেতে মেয়েটা হয়তো সে বৃষ্টিতে গা ভাসিয়ে দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাসটা প্রাণভরে নিতে চাইবে ! আবার হয়তোবা বৃষ্টির সাথে ভাসিয়ে দিতে চাইবে আমার প্রতি জন্ম নেয়া তার সমস্ত মায়া। অথচ সে জানে সেটা কখনোই সম্ভব হবে না!
আচ্ছা এই বৃষ্টিতে কি মারিয়া কাঁদবে?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন