বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০১৭

ভালোবাসার হারিয়ে যাওয়া

২০০৭ ঈদের দিন
সোহাগ আজ ঘুরতে বেরিয়েছে। প্রতিবছরের মত বন্ধু বান্ধবের সাথে দেখা করছে।
বিকেলে ঘুরতে ঘুরতে বেরিয়ে একটি মেয়েকে দেখে সোহাগ। মেয়েটি সুশ্রী, হালকা গড়ন, সাদা বর্ণের, লম্বা মানবী।প্রথম দেখাতেই মেয়েটাকে ভালো লেগে যায় সোহাগের, কিন্তু মেয়েটার কাছে যেতে পারে নি সোহাগ।
প্রতিদিন মেয়েটার কথা মনে পড়ে সোহাগের। সোহাগ আবার ঐ এলাকায় গেল। অনেক খোঁজ করে এবার এক বারান্দায় মেয়েটিকে দেখতে পেল, তবে আজও মেয়েটার কাছে যেতে পারল না।
কয়েকদিন ঘুরাঘুরি করে মেয়েটার নাম জানতে পারল সোহাগ। মেয়েটির নাম সোহাগী। সোহাগ মেয়েটাকে ভালোবেসে ফেলেছে। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও মেয়েটার সামনে যেতে পারে নি, বলতে পারে নি ভালোবাসি।
.
২০০৮ ঈদের দিন
আজ প্রায় এক বছর হল সোহাগ সোহাগীকে ভালোবেসে এসেছে, কিন্তু সোহাগ তার কথা জানাতে পারে নি।। আজ সোহাগ ঠিক করল তার ভালোবাসার কথা আজ সোহাগীকে বলে দিবে। সোহাগীকে অনেকদিন ধরে একটা ছেলে তার পিছে ঘুরঘুর করে, এতে সোহাগীর বান্ধবীরা ইশফিস শুরু করেছে। সোহাগীরও ছেলেটাকে ভালো লাগে।
.
বিকেল
সোহাগ রাস্তায় দাড়িয়ে রয়েছে, সোহাগী এ রাস্তা ধরে আসছে। আজ সোহাগ তার ভালোবাসার কথা বলবে………………………………………….—
সোহাগঃ এই যে দাঁড়ান………………
সোহাগীঃ আমাকে বলছেন………………………….
সোহাগঃ হ্যাঁ, আপনার সঙ্গে কিছু কথা বলার ছিল
সোহাগী: বলেন…………………
সোহাগঃ আসলে কিভাবে বলব বুজতে পারছি না…………..
সোহাগী: কি বলছেন আপনি যেটা বলবেন সেটা মুখ দিয়ে বলবেন আর ফাজলামির জন্য দাড় করালে রাস্তা ছাড়ুন…………………………
সোহাগ: না না আপনাকে কিছু কথার বলার ছিল……………….
সোহাগী: তাহলে বলুন……………………..
সোহাগঃ আমি আপনাকে ভালোবাসি
সোহাগীঃ কি বলছেন…………………..আমি আসি রাস্তা ছাড়ুন
সোহাগ সোহাগীর চলে যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে রয়েছে…………….
.
কিছু দিন পর
সোহাগী প্রতিদিনই দেখে সোহাগ এখনও তার পিছনে পিছনে ঘুরে। সোহাগী বুজতে পারে তারা ভালোলাগা আস্তে আস্তে ভালোবাসায় রূপ নিচ্ছে। সোহাগী এখন প্রতিদিন আড়চোখে সোহাগকে খুজে রাস্তায়। সোহাগী ঠিক করেছে সোহাগের প্রস্তাবে সায় দিবে।
সোহাগী: এই যে দাঁড়ান
সোহাগঃ জ্বি..
সোহাগী: তুমি আমাকে প্রতিদিন ফলো করে কেন….
সোহাগ: আমি তো বলছিই আমি আপনাকে ভালোবাসি
সোহাগী; তুমি সত্যি সত্যি আমাকে ভালোবাসে
সোহাগঃ হ্যাঁ
সোহাগী: ঠিক আছে কাল কলেজ শেষে দেখা করো ঘুরতে যাবো……..
সোহাগঃ তুমি আমাকে ভালোবাসো………………
সোহাগী চলে যাচ্ছে। সোহাগের প্রশ্নের কোনো উত্তর দিল না, শুধু পিছন দিকে তাকিয়ে চোখ নাড়ল। আর এ চোখ নাড়ানোতেই যেন সোহাগ সব কিছু পেয়ে গেছে। সে বুজতে পারে নি অনেকক্ষণ থেকে যে সোহাগী তাকে তুমি করে বলছে।
.
২বছর পর
আজ সোহাগীর বিয়ে তবে সোহাগের সাথে নয়। সোহাগের সাথে গত দুইবছর ভালোই গেছে সোহাগীর। কোনো সমস্যা ছিল না তাদের , হাসি আনন্দ ভালোবাসা অভিমান ভরা এ দুইবছর ছিল। হঠাৎ করে তাদের মিষ্টি ভালোবাসার চিত্ত বদলে গেল। সোহাগীর পরিবার জেনে গেল তাদের ভালোবাসার কথা। #বাংলাদেশের পরিবারগুলোর মত সোহাগীর পরিবারও সোহাগীর বিয়ে ঠিক করে ফেলল। সোহাগের কিছু করার নেই কারন সে যে এখনও পড়াও শেষ করতে পারেনি আর বাংলাদেশের সোনার হরিণ চাকুরিতো অনেক দূরে।
.
বিয়ের পর
সোহাগীর বিয়ে হয়ে গেছে কিছু দিন হল। বিয়ের দিন মেয়েটার অনেকবার জ্ঞান হারাল। সোহাগ ভাবতে পারে না এখন কি করবে। জীবনের কঠিন বাস্তবতার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। আত্মহত্যা করবে ভেবেছে, কিন্তু সে মৃত্যুকে ভয় পাই।
গতকাল সোহাগীর সাথে কথা হয়েছে সোহাগের। সোহাগী সিদ্ধান্ত নিয়েছে সোহাগের সাথে পালিয়ে যাবে, সংসার করবে না। কিন্তু সোহাগের পালিয়ে যাওয়ার পথ বন্ধ।সোহাগের পালিয়ে যাওয়ার সাথে তার বড় বোনের জীবনের সর্ম্পক। সোহাগী এখন তার বোনের ননদ। সোহাগের দুলাভাই তাদের সর্ম্পের কথা জানে আর দুলাভাইও এক সংবিধান ঘোষনা করেছে তার জন্য সোহাগীকে নিয়ে পালিয়ে গেলে সোহাগের বোনের যে জীবন ধ্বংস হয়ে যাবে।
.
কিছু বছর পর
সোহাগী এখন দুই সন্তানের মা। সোহাগ এখন ভারতে তার ভাগ্য অন্মষণের পথে। সোহাগ এখন রাত দিন পরিশ্রম করে তার ভাগ্য ফেরানোর জন্য। তাকে এখন বড় হতে হবে, তার দুলাভাইয়ের চেয়ে বেশি অর্থ অর্জন করতে হবে। সোহাগী এখন ঘর সংসার নিয়ে ব্যস্ত। বিয়ে হয়ে গেলেও আগে সোহাগের খবর নিত, এখন আর নেয় না। এভাবে হারিয়ে যায় সোহাগ সোহাগীর ভালোবাসার কথা।
.
শেষ কথাঃ গল্পটি জীবন থেকে নেওয়া। চেষ্টা করেছি গল্পটি কথা আকারে লিখতে। আমারা প্রেম করি ভালোবাসি, কিন্তু আমাদের এ প্রেম ভালোবাসা তৈরি হইতে অনেক সময় লাগে, হারাতে অনেক কম সময় লাগে। বিয়েগুলো তৈরি হয় খুব কম সময়ে ভাঙতে অনেক সময় লাগে। জানি না লেখাটা দ্বারা কি বুজাতে চাই। তবে এ গল্পের মত আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড ৫ জনের জীবন, যাদের জীবন থেকে হারিয়ে গেছে তাদের ভালোবাসা। জানি না ভালোবাসাগুলো কেন হারিয়ে যায়ম তবে হারিয়ে যাওয়া কাহিনীগুলো শুনতে খুব কষ্ট লাগে।
.
সব শেষে একটা কথা সবার ভালোবাসার যেন শেষ পরিণিতি যেন বিয়ে হই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন