সুপ্রিতা কথা বল, আমি থাকতে তোমার কিছু হতে দেবো না।
: আমি আপনার কাছে থেকে মরতে পেরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবতী মনে করবো। ( কাঁদো কাঁদো কন্ঠে এসব বলেই সে অজ্ঞান হয়ে পড়লো)
:এসব কথা বলো না সুপ্রিতা,,,,আমি তোমাকে আর হারাতে চাই না।
,
কেউ কি আছেন,,, আমাদের একটু সাহায্য করুন,,,,( রাস্তার আশপাশের কয়েকজন মানুষ আমাদের পাশের হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিলো)
,
আমি এখন রোগির বেডে শুয়ে আছি,,,আর ভাবছি পুরোনো দিনের কথা।
,
আমার নাম রাকিব,,,আমি তখন বুয়েট এ পড়তাম,,,আমি আর অহনা, আমরা দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসতাম, সেই কলেজ লাইফ থেকেই,,,অহনা আমার দুই বছরের জুনিয়র,,,অহনা ছিলো খুব বড়লোকের মেয়ে,,,আমি সবসময় ভাবতাম পড়ালেখার পর ভালো একটা চাকরি করে অহনা কে বিয়ে করবো,,,যেই ভাবা সেই কাজ,,,,আমি বুয়েট শেষ করেই ১ টা ভালো চাকরি পেয়ে গেলাম।
,
চাকরির ১ বছর পর,,,আমি আমার ফ্যামিলি কে ওদের বাসাই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে পাঠালাম।
,
: আমার ছেলে রাকিব আর আপনার মেয়ে অহনা দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসে,,,,তাই আমি আপনার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছি। (আমার বাবা বলতে লাগলো)
: এসেছেন ভালো কথা, বসুন,,,,দেখুন আমি আমার মেয়ে কে স্বাধিনভাবে চলতে দিয়েছি,,,, তাই বলে এই নয় যে ওর কথামত ওকে বিয়ে দিতে হবে,,,,আমি ওর জন্য ভালো ১ জন পাত্র দেখেছি,,,সে খুব বড়লোক,,, তাদের কোটি কোটি টাকার ব্যবসা,,,, সেখানে থাকলে আমার মেয়ে শুখেই থাকবে।
,
মোট কথা বলতে গেলে আমরা বড়লোক নয় দেখে আমার বাবা মা কে অনেক কথা বলেছে,,,,আমার বাবা মাও সব শুনেও কিছু বললো না,,,,কারণ আমরা গরিব বলে।
,
বাবা এসে আমাকে সব খুলে বললেন,,,,আর বললেন অহনা কে ভুলে যেতে,,,,আমার আর অহনার কলেজ লাইফ থেকে সম্পর্ক,,,, এত সহজে কি ভুলা যায়,,,,তাই আমি অহনা কে ফোন করে বললাম দেখা করার জন্য।
,
: দেখ অহনা আমরা গরিব বলে,,,তোমার বাবা আমাদের এভাবে অপমান করবে আমি ভাবতেও পারিনি।
: রাকিব আমি না তোমাকে ছাড়া বাচবো না,,,,তাই চল আমরা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলি,,,বাবা কি ভাবলো তাতে আমার কোন যাই আসে না।
: না, অহনা তা হয় না,,,,তুমি স্বাধিনভাবে বড় হয়েছো তুমি কষ্ট কি তা বুজবে না,,,আমি জানি আমার ফ্যামিলি আমাকে কত কষ্ট করে পড়ালেখা শিখিয়েছে,,,আমি যদি পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করি,,,,,তাহলে আমি আমার মা বাবার কাছে থাকতে পারবো না,,,,তার চেয়ে ভালো হয় যদি তুমি আমাকে ৪ বছর সময় দাও।
: ৪ বছর সময় দিয়ে কি হবে???
: আমি তোমার বাবার লেভেলে এসে,, দেখিয়ে দিতে চাই,,,,তুমি পারবে আমাকে ৪ বছর সময় দিতে।
,
(অহনা আমাকে জরিয়ে ধরে বলতে লাগলো)
,
: হ্যা, পারবো,,,,আমি তোমার জন্য সব করতে পারবো।
: তোমার বাবা যদি তোমাকে বিয়ে দিতে চায়???
: আমি বাবা কে বলবো,,,, আমি আরো পড়তে চায়,,,,পড়ালেখার শেষে বিয়ে করতে চায়।
: যদি তারপরেও বিয়ের জন্য চাপ দেই,,,তখন কি করবে???
: তখন আমি তোমার কাছে পালিয়ে চলে আসবো।
: পাগলি কোথাকার।
: হুম আমি পাগলি, তোমার পাগলি।
,
পরের দিন সকাল,,,,আমি আমার অফিসে চলে আসলাম,,,,,এসেই ভাবতে লাগলাম কিভাবে অল্প সময়ে অনেক টাকা ইনকাম করা যায়,,,,তাও আবার সৎ পথে,,,,হটাৎ আমার মাথায় একটা বুদ্ধি চলে আসলো,,,,যেই ভাবা সেই কাজ।
,
আমি অনলাইনে খুজতে লাগলাম,,,বিদেশে কোথাও ভালো জব পাওয়া যাই কিনা,,,, খুজতে খুজতে ভালো ১ টা জবও পেয়ে গেলাম আমেরিকায়,,,, খুব ভালো বেতন বাংলাদেশে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা।
,
,
সবার কাজ থেকে বিদায় নিয়ে নিলাম,,, এয়ারপোর্ট এ অহনার আশার কথা,,,,তাই দেরি না করে তাড়াতাড়ি এয়ারপোর্ট এ চলে আসলাম,,,,এসেই দেখি অহনা দাঁড়িয়ে আছে,,,,আমাকে দেখেই সে দৌড়ে চলে আসলো,,,,আমাকে জোড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো আর বলতে লাগলো।
,
: আমি তোমাকে ছাড়া কিভাবে থাকবো রাকিব।
: কেনো, তোমাকে তো বলেছিই মাত্র ৪ বছর আমাকে সময় দিতে,,,,যদি তোমার বাবার লেভেলে পৌছাতে না পারি তারপর না হয় পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করবো।
: সুখে থাকতে হলে তো, একটু তো কষ্ট করে হবে নাকি।
: হুম,,,তাই বলে ৪ বছর তুমি আমার থেকে দুড়ে থাকবে??
: দেখ অহনা আমার কিছু করার নেই।
,
,
অহনার থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম, আমেরিকায়,,,,প্র
তিদিন রাতে মোবাইলে মা বাবা আমার ছোট ভাই আর অহনার সাথে কথা বলতাম,,,,একদিন অহনা আমাকে ফোন করে বলতে লাগলো।
,
: রাকিব আমি যে তোমার সাথে প্রতিদিন ফোনে কথা বলি, তাতে তোমার কাজের অসুবিধা হয় না??
: হোক তাতে কি সমস্যা??
: না, আমি চাই না যে তোমার কাজের কোন অসুবিধা হোক,,,আমি কাল থেকে তোমাকে আর কল করবো না,,,,আর আমার মোবাইল বন্ধ থাকবে,,,আমি চাই না যে আমার জন্য তোমার কাজের অসুবিধা হোক তাই তুমি আমাকে আর কল কর না।
: এসব তুম কি বলছো???
: আমি ঠিকি বলছি,,, আশা করি তুমি মনোযোগ দিয়ে কাজ করবে
,
ফোনে কথা বলেই সে ফোন বন্ধ করে দিলো,,,,আমার কয়েকদিন অহনার জন্য মন খারাপ লাগলো,,,,অহনার কথা আমি আমার ফ্যামিলির কাউকেই বলিনি।
,
কয়েক মাস কাজ করার পর আমি আমার বাবা কে বললাম।
,
,
: বাবা তুমি ব্যাংক থেকে কিছু টাকা লোন নিতে পারবে।
: কেনো রাকিব টাকা দিয়ে কি করবি??
: বাবা আমি টাকা দিয়ে কিছু করবো না,,,তুমি আর রাইহান(রাইহান আমার ছোট ভাই) মিলে ১ টা ব্যবসা করবে।
: ঠিক আছে আমি দেখছি।
,
বাবা ব্যাংক থেকে টাকা লোন নিয়ে ১ টা ছোট কাটো গার্মেন্টস খুললো,,,, তারপর ব্যাংকের টাকা শোধ করে আমার টাকা দিয়ে আবার ব্যাংক থেকে টাকা লোন নিয়ে ব্যবসা টাকে আরো বড় করা হলো,,,,তারপর আবার ব্যাংকের টাকা শোধ করে আরো ১ টা গার্মেন্টস খুলার কথা বললাম,,,,এভাবেই আমার বাবা আর আমার ভাই রাইহান মিলে ১ টার পর ১ টা ব্যবসা বাড়াতে লাগলো।
,
,
আজ ৪ বছর হতে ৬ দিন বাকি,,,,এখন আমার ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা,,,,আমাদের ৭ টা গার্মেন্টস আরো দুই টা ইন্ডাস্ট্রি আছে,,,,তাছাড়াও দুইটা ১০ তলা বাড়ি আর ২ তা গাড়ি আছে,,,, আমি বাবা মাকে ফোন কিরে বললাম।
,
: বাবা আমি ৬ দিন পর বাড়িতে আসছি।
: হ্যা বাবা তুই তাড়াতাড়ি বাড়িতে আয়,,,তোর মা তোর জন্য খুব চিন্তা করছে।
: হ্যা বাবা আমি তাড়াতাড়ি বাড়িতে আসছি,,,,বাবা ১ টা কাজ করতে পারবে???
: কি বাবা??
: অহনা কে বলতে পারবে এয়ারপোর্ট এ থাকার জন্য।
: ঠিক আছে বাবা, আমি বলবো।
,
আমি এখন এয়ারপোর্ট চলে আসলাম। দূরেই দেখতে পাচ্ছি বাবা মা আর আমার ছোট ভাই রাইহান দাঁড়িয়ে আছে।
,
: বাবা অহনা আসেনি??
: না বাবা অহনা একটু অসুস্থ তাই আসতে পারেনি।
(তখন আমার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো, ৪ বছর পর দেশে আসলাম অথচ অহনা আসলো না)
: ওওওওও
: তুই আগে বাসায় চল,,তারপর অহনার সাথে দেখা করিস।
,
,
বাসায় এসে জানতে পারলাম অহনার বিয়ে হয়ে গেছে,,,,যখন জানতে পারলাম অহনার বিয়ে হয়ে গেছে তখন খুব কান্না পাচ্ছিলো,,,,তাই ওয়াশরুমে গিয়ে অনেকক্ষণ কান্না করলাম,,,,আমি পুরোই ভেংয়ে পরেছিলাম,,,,ঠিকমত খাওয়াদাওয়া করছিলাম না,,,,এভাবে আমার শরিল আসতে আসতে অসুস্থ হতে শুরু করলো,,,,,তা দেখে আমার মা বাবা আমাকে বিয়ে দিতো চাইলো,,,আমি বিয়ে করতে চাচ্ছিলাম না,,,,কিন্তু মা আমাকে কসম কাটলো তুই যদি বিয়ে না করিস তাহলে আমি কিছুই খাবো না,,,তোর মতই না খেয়ে মরে যাবো,,,,তাই বাধ্য হয়ে বিয়ে করলাম।
,
আজ আমার বিয়ে হলো ১ সপ্তাহ,,, আমার বৌয়ের সাথে এখনো কোন কথা হয়নি,,,শুধু মার কাছ থেকে জানতে পারলাম মেয়েটার নাম সুপ্রিতা,,,, আমি প্রতিদিন দেখি সুপ্রিতা ৫ ওয়াক্ত নামাজ পরে আমার জন্য কাঁদতে কাঁদতে দোয়া করে,,,,আমি দেখেও না দেখার ভান করি,,,,আমি ঠিকভাবে খায় না দেখে সেও না খেয়ে থাকে,,,,, মেয়েটার জন্য খুব মায়া হয়,,,,কেনই বা দরকার ছিলো ওর জীবন টা নষ্ট করার,,,,এভাবে কেটে গেলো ১ টা মাস।
,
,
আমি অহনার কথা ভাবছিলাম,,,,ঠিক এই সময়ে সুপ্রিতা আমার কাছে খাবার নিয়ে এসে বলতে লাগলো।
: আপনি ডিনার করবেন না???
,
আমার মাথা হয়ে গেলো গরম,,,,আমি সুপ্রিতা ১ টা থাপ্পড় নিয়ে বললাম।
: আমাকে নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না,,,,তোমাকে কে বলেছে আমার জিবনে আসতে,,,,আমি তো তোমাকে চাই না,,,,শুধু মা বাবার কথা ভেবে তোমাকে বিয়ে করেছি,,,,তুমি আমার সামনে আর কখনোই আসবে না।
,
সুপ্রিতা কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো,,,,,আমার খুব কষ্ট লাগলো,,,,অহনার জন্য আমি সুপ্রিতা কে কেনো মারতে গেলাম,,,,কেনোই বা এতগুলো কথা শোনাতে গেলাম,,,,যেমন ছিলো তেমনিই তো অনেক ভালোছিলো,,,,আমি নিজেকে খুব অপরাধী ভাবতে লাগলাম।
,
পরেরদিন সকালে জানতে পারলাম সুপ্রিতা রাগ করে বাপের বাড়ি চলে গেছে।
,
সুপ্রিতা চলে গেলো আজ ১ সপ্তাহ হচ্ছে,,,,,আমি সুপ্রিতা কে খুব মিস করছি,,,,যেই মেয়েটা ৫ ওয়াক্ত নামাজ পরে আমার জন্য কেঁদে কেঁদে দোয়া করতে,,,,আমি না খেলে সেও কিছু খেত না,,,,সে আজ আমাকে ছাড়া না জানি কিভাবে আছে।
,
,
আমি ভাবতে লাগলাম অহনা যদি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখে থাকতে পারে তাহলে আমি কেনো পারবো না,,,তাই ভাবলাম সুপ্রিতা কে নিয়ে আসবো,,,,কে জানে মেয়েটা আমার জন্য কত কষ্ট পাচ্ছে।
,
,
যেই ভাবা সেই কাজ,,,,আমি মা কে বলে গাড়ি নিয়ে সুপ্রিতাদের বাসার উদ্দেেশ্য রওনা হলাম।
,
কলিংবেল বাজাতেই সুপ্রিতার মা দরজা খুললো।
: মা, সুপ্রিতা বাসায় আছে??
: হ্যা বাবা সুপ্রিতা বাসায় আছে,,,,যেদিন থেকে এসেছে সেদিন থেকে পানি ছাড়া কিছুই খায় নি,,,,তুমি একটু দেখ না ওকে কিছু খাওয়াতে পারকিনা?
: সুপ্রিতা কোথায়, মা?
: ও ওর রুমেই আছে।
: মা, আপনি সুপ্রিতার জন্য খাবার ব্যবস্থা কিরুন।
: ঠিক আছে বাবা।
,
আমি সুপ্রিতার ঘরে ডুকতেই,,,, সুপ্রিতা আমার পা ছুয়ে সালাম করলো।
,
: সুপ্রিতা তুমি আমাকে না বলে চলে আসলে কেনো?
: আমাকে দেখলে আপনার কষ্ট হয় রাগ হয় তাই আমি চলে এসেছি,,,,আমি আপনার কস্ট দেখতে পারবো না বলে।
: তুমি চলে আসার পর তো আমি আরো বেশি কস্ট পেয়েছি।
: আসলে আমি জানতাম না, আপনি আমার জন্য কস্ট পাবেন,,,,,তাহলে কখনই আসতাম না।
,
আমি সুপ্রিতা কে বুকে জোড়িয়ে ধরে বলতে লাগলাম
: আর কখনই আমাকে ফেলে আসবেনা বল??
: হুম আর কখনই আপনাকে ছেড়ে আসবো না।
,
কিছুক্ষণ পরে সুপ্রিতার মা খাবার নিয়ে আসলো,,,,আমি সুপ্রিতা কে নিজ হাতে খায়িয়ে দিলাম,,,,তখন সুপ্রিতার মুখের দিকে তাকাতেই দেখলাম,,,,এত সুন্দর মায়াবী চেহারা এর আগে আমি কখনই দেখিনি,,,,,অনেক্ষণ সুপ্রিতার মুখের দিকে তাকিয়ে রোয়লাম,,,,,সুপ্রিতার মুখ তো লজ্জায় লাল হয়ে গেলো,,,,সে খুব লজ্জা পাচ্ছে,,,,তখন সুপ্রিতা কে আরো সুন্দর লাগছে।
,
: সুপ্রিতা তুমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে না,,,,মা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
: আপনি একটু রেস্ট করবেন না??
: না আমি আমাদের বাসায় গিয়ে রেস্ট করবো।
: ঠিক আছে তাহলে তো তাড়াতাড়ি রেডি হতে হয়।
: হুম তাই কর।
,
শ্বাশুরি মার থেকে বিদায় নিয়ে রওনা হলাম,,, আমরা এখন গাড়িতে,,,আমি গাড়ি চালাচ্ছি আর সুপ্রিতার দিকে তাকাচ্ছি,,,,এত মায়াবি চেহারা আমি আগে কখনই দেখিনি,,,,হটাৎ কোথা থেকে যেন ১ টা ট্রাক এসে আমাদের গারিতে পেছন থেকে ধাক্কা দিলো,,,, আমি আর সুপ্রিতা গাড়ি থেকে ছিটকে পরে গেলাম,,,,তারপরেই সব কিছু যেন উল্টাপাল্টা হতে লাগলো,,,,সুপ্রিতা মাথায় একটু বেশিই আঘাত পেয়েছে,,,,সুপ্রিতা মনে করেছিলো ও আর বাচবে না।
,
,
হতাৎ ডাক্তার এসে বলতে লাগলো,,,, আপনার এখন কেমন লাগছে,,,,আমি এতক্ষণ কল্পনার জগতে ছিলাম,,,,হটাৎ ডাক্তারের কথা শুনে আমি বাস্তব জগতে ফিরে আসলাম।
,
: হ্যা ডাক্তার আমি ভালো আছি,,,ডাক্তার আমার ওয়াইফ কেমন আছে??
: চিন্তার কোন কারণ নেই,,,,আপনার ওয়াইফ এখন অনেক সুস্থ আছে,,,দুদিন পর আপনি আর আপনার ওয়াইফ বাসায় যেতে পারবেন।
,
এতক্ষণ পর একটু সস্থি পেলাম,,,,,পাশেই দেখি আমার আর সুপ্রিতার ফ্যামিলির সবাই দাঁড়িয়ে আছে,,,,আমি সুপ্রিতার কথা ডাক্তার কে জিজ্ঞাস করেছি দেখে মা বাবা এত খুশি হয়েছে যে আমি এরকম খুশি মনে হয় কখনই দেখিনি।
,
১৫ দিন পর
: সুপ্রিতা আমার টাই টা একটু এনে দিতে পারবে।
: হ্যা আনছি,,,এই নিন।
: কোথায় যাচ্ছ,,,পড়িয়ে দাও?
: আপনি কি ছোট বাচ্চা যে আপনাকে পড়িয়ে দিতে হবে।
: ও পড়িয়ে দেবে নাতো! ঠিক আছে লাগবে না
(এই কথাটা বলতে দেড়ি,,,, সুপ্রিতার কাঁদতে দেরি হলো না) এই কাঁদছ কেনো???
: আমি কি আপনার সাথে একটু দুস্টুমিও করতে পারবোনা,,,,, আমি শুধু শুধু রাগ করে বসে আছেন (কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলো।
: আরে বাবা দেখ মেয়ের কান্ড,,, আমিও তো দুস্টুমিই করছিলাম।
,
আমার কথা কথা শুনেই হেসে দিলো,,,,,তারপর আমাকে পা ধরে সালাম সালাম করে আমার টাই টা পরিয়ে দিলো,,,,,এভাবেই চলতে লাগলো আমাদের দিনকাল।
,
তবে এখন আর আমাদের কেউ ছোটলোক বলতে পারে না,,,,,আমার বাবা কে রাস্তাই দেখলেই সবাই সালাম দেই,,,,,যেকোন বড় অনুষ্ঠানে আমার বাবা কে প্রধান অতিথি হিসাবে দাওয়াত দেই।
,
,
এই সব কিছু হয়েছে ১ মাত্র অহনার জন্য,,,,, সে যদি আমার সাথে ফোনে যোগাযোগ বন্ধ না করতো,,,,তাহলে হয়তো আমি অহনা কে পেতাম,,,, কিন্তু আমার বাবা মা এত সম্মান পেতো না,,,,অহনা যদি ফোনে যোগাযোগ বন্ধ না করতো,,,,,তাহলে আমি এত ভালো,দুস্টু,মিষ্টি কাউকে লাইফ পার্টনার হিসাবে পেতাম না,,,যে শুধু আমাকেই চাই,,,,,আমি অহনার কাছে খুব ঋণি,,,, সে যদি আমাকে সাহস না জোগাত তাহলে আমি এতদুরে কখনই আস্তে পারতাম না,,,,, এক কথায় বলতে গেলে
,
তোর জন্যই আজ আমি এত শুখি
,
আমি আর সুপ্রিতা এখন দুজনে মিলেই ১ সাথে খায়, সে আমাকে খাইয়ে দেই আর আমি সুপ্রিতা কে খাইয়ে দিইই,,,,,আমরা দুজনেই এখন ৫ ওয়াক্ত নামাজ পরি,,,,এখন আমরা খুব সুখেই আছি।
,
হ্যা আপনাদের মনে নিশ্চয় প্রশ্ন জাগছে যে অহনা কে কেন আমি খুজলাম না,,,,,হ্যা অহনা আমি খুজিনি তবে অহনা কে আমি দূর থেকে দেখছি,,,,শুনেছি ওর ১ টা ছোট মেয়েও আছে,,,,,অহনার স্বামী আর অহনা ও তার মেয়ে মিলে শপিং এ এসেছিলো,,,, অহনার স্বামী আমাদের ১ টা গার্মেন্টস এর ম্যানেজার,,,,আম
ি দূর থেকে দেখেই চলে আসলাম,,,,আমি তখন ম্যানেজার কে কিছু বললাম না।
,
পরেরদিন অফিসে
,
: মিঃ জামশেদ আপনাকে কাল শপিং করতে দেখলাম,,,আপনার পাশে যাকে দেখলাম,,, উনি কি আপনার ওয়াইফ??
: জ্বী স্যার,,, আমার ওয়াইফের নাম অহনা,,,আমার ১ টা মেয়েও আছে নাম রাকিবা।
: বাহ আমার নামের সাথে মিল আছে মনে হচ্ছে,,,,এসব বাদ দেন যেই জন্য আপনাকে ডাকলাম,,,আপনার কাজে আমরা সন্তুষ্ট তাই আরো ২ টা গার্মেন্টস এর দায়িত্ব আপনার,,,,আপনি পারবেন তো।
: জ্বী স্যার,,,এটা তো আমার সৌভাগ্য।
: আপনার বেতিনও ৩ গুন বাড়িয়ে দিলাম।
: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ স্যার
: এবার আপনি আসতে পারেন।
,
ভাবলাম যার জন্যই এত কিছু পেলাম,,,,তাকে কাছ থেকে কিছু দিতে পারি আর না পারি দূর থেকেই দিই
,
: আমি আপনার কাছে থেকে মরতে পেরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবতী মনে করবো। ( কাঁদো কাঁদো কন্ঠে এসব বলেই সে অজ্ঞান হয়ে পড়লো)
:এসব কথা বলো না সুপ্রিতা,,,,আমি তোমাকে আর হারাতে চাই না।
,
কেউ কি আছেন,,, আমাদের একটু সাহায্য করুন,,,,( রাস্তার আশপাশের কয়েকজন মানুষ আমাদের পাশের হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিলো)
,
আমি এখন রোগির বেডে শুয়ে আছি,,,আর ভাবছি পুরোনো দিনের কথা।
,
আমার নাম রাকিব,,,আমি তখন বুয়েট এ পড়তাম,,,আমি আর অহনা, আমরা দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসতাম, সেই কলেজ লাইফ থেকেই,,,অহনা আমার দুই বছরের জুনিয়র,,,অহনা ছিলো খুব বড়লোকের মেয়ে,,,আমি সবসময় ভাবতাম পড়ালেখার পর ভালো একটা চাকরি করে অহনা কে বিয়ে করবো,,,যেই ভাবা সেই কাজ,,,,আমি বুয়েট শেষ করেই ১ টা ভালো চাকরি পেয়ে গেলাম।
,
চাকরির ১ বছর পর,,,আমি আমার ফ্যামিলি কে ওদের বাসাই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে পাঠালাম।
,
: আমার ছেলে রাকিব আর আপনার মেয়ে অহনা দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসে,,,,তাই আমি আপনার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছি। (আমার বাবা বলতে লাগলো)
: এসেছেন ভালো কথা, বসুন,,,,দেখুন আমি আমার মেয়ে কে স্বাধিনভাবে চলতে দিয়েছি,,,, তাই বলে এই নয় যে ওর কথামত ওকে বিয়ে দিতে হবে,,,,আমি ওর জন্য ভালো ১ জন পাত্র দেখেছি,,,সে খুব বড়লোক,,, তাদের কোটি কোটি টাকার ব্যবসা,,,, সেখানে থাকলে আমার মেয়ে শুখেই থাকবে।
,
মোট কথা বলতে গেলে আমরা বড়লোক নয় দেখে আমার বাবা মা কে অনেক কথা বলেছে,,,,আমার বাবা মাও সব শুনেও কিছু বললো না,,,,কারণ আমরা গরিব বলে।
,
বাবা এসে আমাকে সব খুলে বললেন,,,,আর বললেন অহনা কে ভুলে যেতে,,,,আমার আর অহনার কলেজ লাইফ থেকে সম্পর্ক,,,, এত সহজে কি ভুলা যায়,,,,তাই আমি অহনা কে ফোন করে বললাম দেখা করার জন্য।
,
: দেখ অহনা আমরা গরিব বলে,,,তোমার বাবা আমাদের এভাবে অপমান করবে আমি ভাবতেও পারিনি।
: রাকিব আমি না তোমাকে ছাড়া বাচবো না,,,,তাই চল আমরা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলি,,,বাবা কি ভাবলো তাতে আমার কোন যাই আসে না।
: না, অহনা তা হয় না,,,,তুমি স্বাধিনভাবে বড় হয়েছো তুমি কষ্ট কি তা বুজবে না,,,আমি জানি আমার ফ্যামিলি আমাকে কত কষ্ট করে পড়ালেখা শিখিয়েছে,,,আমি যদি পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করি,,,,,তাহলে আমি আমার মা বাবার কাছে থাকতে পারবো না,,,,তার চেয়ে ভালো হয় যদি তুমি আমাকে ৪ বছর সময় দাও।
: ৪ বছর সময় দিয়ে কি হবে???
: আমি তোমার বাবার লেভেলে এসে,, দেখিয়ে দিতে চাই,,,,তুমি পারবে আমাকে ৪ বছর সময় দিতে।
,
(অহনা আমাকে জরিয়ে ধরে বলতে লাগলো)
,
: হ্যা, পারবো,,,,আমি তোমার জন্য সব করতে পারবো।
: তোমার বাবা যদি তোমাকে বিয়ে দিতে চায়???
: আমি বাবা কে বলবো,,,, আমি আরো পড়তে চায়,,,,পড়ালেখার শেষে বিয়ে করতে চায়।
: যদি তারপরেও বিয়ের জন্য চাপ দেই,,,তখন কি করবে???
: তখন আমি তোমার কাছে পালিয়ে চলে আসবো।
: পাগলি কোথাকার।
: হুম আমি পাগলি, তোমার পাগলি।
,
পরের দিন সকাল,,,,আমি আমার অফিসে চলে আসলাম,,,,,এসেই ভাবতে লাগলাম কিভাবে অল্প সময়ে অনেক টাকা ইনকাম করা যায়,,,,তাও আবার সৎ পথে,,,,হটাৎ আমার মাথায় একটা বুদ্ধি চলে আসলো,,,,যেই ভাবা সেই কাজ।
,
আমি অনলাইনে খুজতে লাগলাম,,,বিদেশে কোথাও ভালো জব পাওয়া যাই কিনা,,,, খুজতে খুজতে ভালো ১ টা জবও পেয়ে গেলাম আমেরিকায়,,,, খুব ভালো বেতন বাংলাদেশে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা।
,
,
সবার কাজ থেকে বিদায় নিয়ে নিলাম,,, এয়ারপোর্ট এ অহনার আশার কথা,,,,তাই দেরি না করে তাড়াতাড়ি এয়ারপোর্ট এ চলে আসলাম,,,,এসেই দেখি অহনা দাঁড়িয়ে আছে,,,,আমাকে দেখেই সে দৌড়ে চলে আসলো,,,,আমাকে জোড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো আর বলতে লাগলো।
,
: আমি তোমাকে ছাড়া কিভাবে থাকবো রাকিব।
: কেনো, তোমাকে তো বলেছিই মাত্র ৪ বছর আমাকে সময় দিতে,,,,যদি তোমার বাবার লেভেলে পৌছাতে না পারি তারপর না হয় পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করবো।
: সুখে থাকতে হলে তো, একটু তো কষ্ট করে হবে নাকি।
: হুম,,,তাই বলে ৪ বছর তুমি আমার থেকে দুড়ে থাকবে??
: দেখ অহনা আমার কিছু করার নেই।
,
,
অহনার থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম, আমেরিকায়,,,,প্র
তিদিন রাতে মোবাইলে মা বাবা আমার ছোট ভাই আর অহনার সাথে কথা বলতাম,,,,একদিন অহনা আমাকে ফোন করে বলতে লাগলো।
,
: রাকিব আমি যে তোমার সাথে প্রতিদিন ফোনে কথা বলি, তাতে তোমার কাজের অসুবিধা হয় না??
: হোক তাতে কি সমস্যা??
: না, আমি চাই না যে তোমার কাজের কোন অসুবিধা হোক,,,আমি কাল থেকে তোমাকে আর কল করবো না,,,,আর আমার মোবাইল বন্ধ থাকবে,,,আমি চাই না যে আমার জন্য তোমার কাজের অসুবিধা হোক তাই তুমি আমাকে আর কল কর না।
: এসব তুম কি বলছো???
: আমি ঠিকি বলছি,,, আশা করি তুমি মনোযোগ দিয়ে কাজ করবে
,
ফোনে কথা বলেই সে ফোন বন্ধ করে দিলো,,,,আমার কয়েকদিন অহনার জন্য মন খারাপ লাগলো,,,,অহনার কথা আমি আমার ফ্যামিলির কাউকেই বলিনি।
,
কয়েক মাস কাজ করার পর আমি আমার বাবা কে বললাম।
,
,
: বাবা তুমি ব্যাংক থেকে কিছু টাকা লোন নিতে পারবে।
: কেনো রাকিব টাকা দিয়ে কি করবি??
: বাবা আমি টাকা দিয়ে কিছু করবো না,,,তুমি আর রাইহান(রাইহান আমার ছোট ভাই) মিলে ১ টা ব্যবসা করবে।
: ঠিক আছে আমি দেখছি।
,
বাবা ব্যাংক থেকে টাকা লোন নিয়ে ১ টা ছোট কাটো গার্মেন্টস খুললো,,,, তারপর ব্যাংকের টাকা শোধ করে আমার টাকা দিয়ে আবার ব্যাংক থেকে টাকা লোন নিয়ে ব্যবসা টাকে আরো বড় করা হলো,,,,তারপর আবার ব্যাংকের টাকা শোধ করে আরো ১ টা গার্মেন্টস খুলার কথা বললাম,,,,এভাবেই আমার বাবা আর আমার ভাই রাইহান মিলে ১ টার পর ১ টা ব্যবসা বাড়াতে লাগলো।
,
,
আজ ৪ বছর হতে ৬ দিন বাকি,,,,এখন আমার ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা,,,,আমাদের ৭ টা গার্মেন্টস আরো দুই টা ইন্ডাস্ট্রি আছে,,,,তাছাড়াও দুইটা ১০ তলা বাড়ি আর ২ তা গাড়ি আছে,,,, আমি বাবা মাকে ফোন কিরে বললাম।
,
: বাবা আমি ৬ দিন পর বাড়িতে আসছি।
: হ্যা বাবা তুই তাড়াতাড়ি বাড়িতে আয়,,,তোর মা তোর জন্য খুব চিন্তা করছে।
: হ্যা বাবা আমি তাড়াতাড়ি বাড়িতে আসছি,,,,বাবা ১ টা কাজ করতে পারবে???
: কি বাবা??
: অহনা কে বলতে পারবে এয়ারপোর্ট এ থাকার জন্য।
: ঠিক আছে বাবা, আমি বলবো।
,
আমি এখন এয়ারপোর্ট চলে আসলাম। দূরেই দেখতে পাচ্ছি বাবা মা আর আমার ছোট ভাই রাইহান দাঁড়িয়ে আছে।
,
: বাবা অহনা আসেনি??
: না বাবা অহনা একটু অসুস্থ তাই আসতে পারেনি।
(তখন আমার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো, ৪ বছর পর দেশে আসলাম অথচ অহনা আসলো না)
: ওওওওও
: তুই আগে বাসায় চল,,তারপর অহনার সাথে দেখা করিস।
,
,
বাসায় এসে জানতে পারলাম অহনার বিয়ে হয়ে গেছে,,,,যখন জানতে পারলাম অহনার বিয়ে হয়ে গেছে তখন খুব কান্না পাচ্ছিলো,,,,তাই ওয়াশরুমে গিয়ে অনেকক্ষণ কান্না করলাম,,,,আমি পুরোই ভেংয়ে পরেছিলাম,,,,ঠিকমত খাওয়াদাওয়া করছিলাম না,,,,এভাবে আমার শরিল আসতে আসতে অসুস্থ হতে শুরু করলো,,,,,তা দেখে আমার মা বাবা আমাকে বিয়ে দিতো চাইলো,,,আমি বিয়ে করতে চাচ্ছিলাম না,,,,কিন্তু মা আমাকে কসম কাটলো তুই যদি বিয়ে না করিস তাহলে আমি কিছুই খাবো না,,,তোর মতই না খেয়ে মরে যাবো,,,,তাই বাধ্য হয়ে বিয়ে করলাম।
,
আজ আমার বিয়ে হলো ১ সপ্তাহ,,, আমার বৌয়ের সাথে এখনো কোন কথা হয়নি,,,শুধু মার কাছ থেকে জানতে পারলাম মেয়েটার নাম সুপ্রিতা,,,, আমি প্রতিদিন দেখি সুপ্রিতা ৫ ওয়াক্ত নামাজ পরে আমার জন্য কাঁদতে কাঁদতে দোয়া করে,,,,আমি দেখেও না দেখার ভান করি,,,,আমি ঠিকভাবে খায় না দেখে সেও না খেয়ে থাকে,,,,, মেয়েটার জন্য খুব মায়া হয়,,,,কেনই বা দরকার ছিলো ওর জীবন টা নষ্ট করার,,,,এভাবে কেটে গেলো ১ টা মাস।
,
,
আমি অহনার কথা ভাবছিলাম,,,,ঠিক এই সময়ে সুপ্রিতা আমার কাছে খাবার নিয়ে এসে বলতে লাগলো।
: আপনি ডিনার করবেন না???
,
আমার মাথা হয়ে গেলো গরম,,,,আমি সুপ্রিতা ১ টা থাপ্পড় নিয়ে বললাম।
: আমাকে নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না,,,,তোমাকে কে বলেছে আমার জিবনে আসতে,,,,আমি তো তোমাকে চাই না,,,,শুধু মা বাবার কথা ভেবে তোমাকে বিয়ে করেছি,,,,তুমি আমার সামনে আর কখনোই আসবে না।
,
সুপ্রিতা কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো,,,,,আমার খুব কষ্ট লাগলো,,,,অহনার জন্য আমি সুপ্রিতা কে কেনো মারতে গেলাম,,,,কেনোই বা এতগুলো কথা শোনাতে গেলাম,,,,যেমন ছিলো তেমনিই তো অনেক ভালোছিলো,,,,আমি নিজেকে খুব অপরাধী ভাবতে লাগলাম।
,
পরেরদিন সকালে জানতে পারলাম সুপ্রিতা রাগ করে বাপের বাড়ি চলে গেছে।
,
সুপ্রিতা চলে গেলো আজ ১ সপ্তাহ হচ্ছে,,,,,আমি সুপ্রিতা কে খুব মিস করছি,,,,যেই মেয়েটা ৫ ওয়াক্ত নামাজ পরে আমার জন্য কেঁদে কেঁদে দোয়া করতে,,,,আমি না খেলে সেও কিছু খেত না,,,,সে আজ আমাকে ছাড়া না জানি কিভাবে আছে।
,
,
আমি ভাবতে লাগলাম অহনা যদি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখে থাকতে পারে তাহলে আমি কেনো পারবো না,,,তাই ভাবলাম সুপ্রিতা কে নিয়ে আসবো,,,,কে জানে মেয়েটা আমার জন্য কত কষ্ট পাচ্ছে।
,
,
যেই ভাবা সেই কাজ,,,,আমি মা কে বলে গাড়ি নিয়ে সুপ্রিতাদের বাসার উদ্দেেশ্য রওনা হলাম।
,
কলিংবেল বাজাতেই সুপ্রিতার মা দরজা খুললো।
: মা, সুপ্রিতা বাসায় আছে??
: হ্যা বাবা সুপ্রিতা বাসায় আছে,,,,যেদিন থেকে এসেছে সেদিন থেকে পানি ছাড়া কিছুই খায় নি,,,,তুমি একটু দেখ না ওকে কিছু খাওয়াতে পারকিনা?
: সুপ্রিতা কোথায়, মা?
: ও ওর রুমেই আছে।
: মা, আপনি সুপ্রিতার জন্য খাবার ব্যবস্থা কিরুন।
: ঠিক আছে বাবা।
,
আমি সুপ্রিতার ঘরে ডুকতেই,,,, সুপ্রিতা আমার পা ছুয়ে সালাম করলো।
,
: সুপ্রিতা তুমি আমাকে না বলে চলে আসলে কেনো?
: আমাকে দেখলে আপনার কষ্ট হয় রাগ হয় তাই আমি চলে এসেছি,,,,আমি আপনার কস্ট দেখতে পারবো না বলে।
: তুমি চলে আসার পর তো আমি আরো বেশি কস্ট পেয়েছি।
: আসলে আমি জানতাম না, আপনি আমার জন্য কস্ট পাবেন,,,,,তাহলে কখনই আসতাম না।
,
আমি সুপ্রিতা কে বুকে জোড়িয়ে ধরে বলতে লাগলাম
: আর কখনই আমাকে ফেলে আসবেনা বল??
: হুম আর কখনই আপনাকে ছেড়ে আসবো না।
,
কিছুক্ষণ পরে সুপ্রিতার মা খাবার নিয়ে আসলো,,,,আমি সুপ্রিতা কে নিজ হাতে খায়িয়ে দিলাম,,,,তখন সুপ্রিতার মুখের দিকে তাকাতেই দেখলাম,,,,এত সুন্দর মায়াবী চেহারা এর আগে আমি কখনই দেখিনি,,,,,অনেক্ষণ সুপ্রিতার মুখের দিকে তাকিয়ে রোয়লাম,,,,,সুপ্রিতার মুখ তো লজ্জায় লাল হয়ে গেলো,,,,সে খুব লজ্জা পাচ্ছে,,,,তখন সুপ্রিতা কে আরো সুন্দর লাগছে।
,
: সুপ্রিতা তুমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে না,,,,মা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
: আপনি একটু রেস্ট করবেন না??
: না আমি আমাদের বাসায় গিয়ে রেস্ট করবো।
: ঠিক আছে তাহলে তো তাড়াতাড়ি রেডি হতে হয়।
: হুম তাই কর।
,
শ্বাশুরি মার থেকে বিদায় নিয়ে রওনা হলাম,,, আমরা এখন গাড়িতে,,,আমি গাড়ি চালাচ্ছি আর সুপ্রিতার দিকে তাকাচ্ছি,,,,এত মায়াবি চেহারা আমি আগে কখনই দেখিনি,,,,হটাৎ কোথা থেকে যেন ১ টা ট্রাক এসে আমাদের গারিতে পেছন থেকে ধাক্কা দিলো,,,, আমি আর সুপ্রিতা গাড়ি থেকে ছিটকে পরে গেলাম,,,,তারপরেই সব কিছু যেন উল্টাপাল্টা হতে লাগলো,,,,সুপ্রিতা মাথায় একটু বেশিই আঘাত পেয়েছে,,,,সুপ্রিতা মনে করেছিলো ও আর বাচবে না।
,
,
হতাৎ ডাক্তার এসে বলতে লাগলো,,,, আপনার এখন কেমন লাগছে,,,,আমি এতক্ষণ কল্পনার জগতে ছিলাম,,,,হটাৎ ডাক্তারের কথা শুনে আমি বাস্তব জগতে ফিরে আসলাম।
,
: হ্যা ডাক্তার আমি ভালো আছি,,,ডাক্তার আমার ওয়াইফ কেমন আছে??
: চিন্তার কোন কারণ নেই,,,,আপনার ওয়াইফ এখন অনেক সুস্থ আছে,,,দুদিন পর আপনি আর আপনার ওয়াইফ বাসায় যেতে পারবেন।
,
এতক্ষণ পর একটু সস্থি পেলাম,,,,,পাশেই দেখি আমার আর সুপ্রিতার ফ্যামিলির সবাই দাঁড়িয়ে আছে,,,,আমি সুপ্রিতার কথা ডাক্তার কে জিজ্ঞাস করেছি দেখে মা বাবা এত খুশি হয়েছে যে আমি এরকম খুশি মনে হয় কখনই দেখিনি।
,
১৫ দিন পর
: সুপ্রিতা আমার টাই টা একটু এনে দিতে পারবে।
: হ্যা আনছি,,,এই নিন।
: কোথায় যাচ্ছ,,,পড়িয়ে দাও?
: আপনি কি ছোট বাচ্চা যে আপনাকে পড়িয়ে দিতে হবে।
: ও পড়িয়ে দেবে নাতো! ঠিক আছে লাগবে না
(এই কথাটা বলতে দেড়ি,,,, সুপ্রিতার কাঁদতে দেরি হলো না) এই কাঁদছ কেনো???
: আমি কি আপনার সাথে একটু দুস্টুমিও করতে পারবোনা,,,,, আমি শুধু শুধু রাগ করে বসে আছেন (কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলো।
: আরে বাবা দেখ মেয়ের কান্ড,,, আমিও তো দুস্টুমিই করছিলাম।
,
আমার কথা কথা শুনেই হেসে দিলো,,,,,তারপর আমাকে পা ধরে সালাম সালাম করে আমার টাই টা পরিয়ে দিলো,,,,,এভাবেই চলতে লাগলো আমাদের দিনকাল।
,
তবে এখন আর আমাদের কেউ ছোটলোক বলতে পারে না,,,,,আমার বাবা কে রাস্তাই দেখলেই সবাই সালাম দেই,,,,,যেকোন বড় অনুষ্ঠানে আমার বাবা কে প্রধান অতিথি হিসাবে দাওয়াত দেই।
,
,
এই সব কিছু হয়েছে ১ মাত্র অহনার জন্য,,,,, সে যদি আমার সাথে ফোনে যোগাযোগ বন্ধ না করতো,,,,তাহলে হয়তো আমি অহনা কে পেতাম,,,, কিন্তু আমার বাবা মা এত সম্মান পেতো না,,,,অহনা যদি ফোনে যোগাযোগ বন্ধ না করতো,,,,,তাহলে আমি এত ভালো,দুস্টু,মিষ্টি কাউকে লাইফ পার্টনার হিসাবে পেতাম না,,,যে শুধু আমাকেই চাই,,,,,আমি অহনার কাছে খুব ঋণি,,,, সে যদি আমাকে সাহস না জোগাত তাহলে আমি এতদুরে কখনই আস্তে পারতাম না,,,,, এক কথায় বলতে গেলে
,
তোর জন্যই আজ আমি এত শুখি
,
আমি আর সুপ্রিতা এখন দুজনে মিলেই ১ সাথে খায়, সে আমাকে খাইয়ে দেই আর আমি সুপ্রিতা কে খাইয়ে দিইই,,,,,আমরা দুজনেই এখন ৫ ওয়াক্ত নামাজ পরি,,,,এখন আমরা খুব সুখেই আছি।
,
হ্যা আপনাদের মনে নিশ্চয় প্রশ্ন জাগছে যে অহনা কে কেন আমি খুজলাম না,,,,,হ্যা অহনা আমি খুজিনি তবে অহনা কে আমি দূর থেকে দেখছি,,,,শুনেছি ওর ১ টা ছোট মেয়েও আছে,,,,,অহনার স্বামী আর অহনা ও তার মেয়ে মিলে শপিং এ এসেছিলো,,,, অহনার স্বামী আমাদের ১ টা গার্মেন্টস এর ম্যানেজার,,,,আম
ি দূর থেকে দেখেই চলে আসলাম,,,,আমি তখন ম্যানেজার কে কিছু বললাম না।
,
পরেরদিন অফিসে
,
: মিঃ জামশেদ আপনাকে কাল শপিং করতে দেখলাম,,,আপনার পাশে যাকে দেখলাম,,, উনি কি আপনার ওয়াইফ??
: জ্বী স্যার,,, আমার ওয়াইফের নাম অহনা,,,আমার ১ টা মেয়েও আছে নাম রাকিবা।
: বাহ আমার নামের সাথে মিল আছে মনে হচ্ছে,,,,এসব বাদ দেন যেই জন্য আপনাকে ডাকলাম,,,আপনার কাজে আমরা সন্তুষ্ট তাই আরো ২ টা গার্মেন্টস এর দায়িত্ব আপনার,,,,আপনি পারবেন তো।
: জ্বী স্যার,,,এটা তো আমার সৌভাগ্য।
: আপনার বেতিনও ৩ গুন বাড়িয়ে দিলাম।
: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ স্যার
: এবার আপনি আসতে পারেন।
,
ভাবলাম যার জন্যই এত কিছু পেলাম,,,,তাকে কাছ থেকে কিছু দিতে পারি আর না পারি দূর থেকেই দিই
,
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন