বাসার ছাদে দাড়িয়ে আনমনে ছাদের এক ধারে বসে রবীন্দ্রনাথের একটা কবিতার বই পড়ছিলাম। বইয়ের দিকে মুখ গুজে ছিলাম। কিন্তু বই থেকে মাথাটা উচুঁ করতেই দেখি পাশের বাসার সেই পিচ্চি মেয়েটা আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
.
হুম, মেয়েটার নাম হলো নীলা। এবার বোধ হয় ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পরে। আর আমি হলাম আকাশ, একটা সরকারি জব করি। এই ছাদে থেকে প্রায় নীলার বাসার সব দেখা যায়। যখন ওর বাসার দরজা জানালা খোলা থাকে। ওর হয়তো মা বাবা সহ পরিবারের সবাই আছে।
.
কিন্তু আমি একা। পৃথিবীতে আমার নিজের বলতে কেউ নেই। একজন ছিলো কিন্তু এখন নেই।
( পরে বুঝতে পারবেন সব)
আমি আকাশ। আকাশ যখন একা একা কাদে তখন ওর কান্না গুলো বৃষ্টি হয়ে ঝরে পরে কিন্তু আমি যখন একা বসে কাদি তখন আমার কান্না গুলো কষ্ট হয়ে চোখ বেয়ে নামে। উপরের ঐ আকাশ যেমন একলা ওর কোনো সঙ্গী নেই তেমনি আমিও একলা আমার কেউ নেই।
.
হুর, বাদ দেই এসব। ওই ছাদের ওপাশের মেয়েটার কথায় আসি। আমি যখন প্রতিদিন অফিস থেকে আসি, এসে খাওয়া দাওয়া সেড়ে ছাদে পা রাখি তখনই ঠিক ঐ সময় মতো ঐ নীলা নামের মেয়েটা আসে।
.
আমার একলা জীবনে কোনো কিছুর অভাব নেই, নিজে আয় করি নিজে খাই গল্প শেষ।
.
তো আমি বই থেকে মাথা উঠালাম। দেখি পাজি মেয়েটা তবুও আমার দিকে পুতুলের মতো তাকিয়ে আছে। লজ্জা সরম বলতে কিছু নেই নাকি মেয়েটার।
.
এরকম পরিস্থিতি দেখে আমি বই নিয়ে ঘরে চলে আসলাম। আমার বাড়ি অবশ্য অন্য জায়গায়, চাকরির তাগিদে বাসায় থাকি।
রুমে এসে দিলাম এক ঘুম। এক ঘুমেই রাত কাবার করে দিছি।
.
পরের দিন আবার চললাম অফিসে। সারাদিন ভালভাবে কাটলো, নানান ব্যস্ততার মাঝে। বিকেলে বাসায় আসলাম, ফ্রেস হয়ে খাওয়া শেষ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। কিন্তু না ভালো লাগছে না তাই ছাদের দিকে পা বাড়ালাম।
.
আজ ছাদে গিয়ে দেখি ওই পাজি মেয়েটা আগে থেকেই ওদের ছাদে এসে দাড়িয়ে আছে। তাই আমার একটু রাগ হলো, আমি যখন ছাদে আসব ও তখন কেন আসব আর এসেই আমার দিকে কেন তাকিয়ে থাকব???
.
তাই ভাবলাম নিচে চলে যাই একটা ঘুম দেই।
ছাদ থেকে আসার জন্য পিছনে অগ্রসর হলাম। ওমনি """"
- এইযে মিস্টার আকাশ, কই যাও?
- ( পাজি মেয়ে আমার নাম ধরে ডাকে তবুও আবার তুমি করে) যেখানে খুশি।
- এখানে চুপ করে বসে থাকো!
- কেন?
- আমি তোমাকে এখন দেখবো।
- হোয়াট??????
- হুহ।
- ওই মেয়ে তুই কিন্তু লিমিট ছাড়িয়ে যাচ্ছো আর তুমি ভুলে যাচ্ছো আমি কিন্তু তোমার বড়।
- হিহিহি তাতে কি হইছে? নিজের হবু বরের সাথে আমি যা ইচ্ছা করতে পারি।
- ( আমি শকড, এই মেয়ে বলে কি রে) ধুরর তুমি পাগল! আমাকে চিনো তুমি?
- নিজের হবু বরকে কে না চিনে?
- এবার কিন্তু খুব খারাপ হবে। আর শুনো পিচ্চি মেয়ে আমাকে আপনি করে বলবা।
- কিইইইই? আমি পারব না, আমি তোমাকে তুমি করেই বলব।
- থাপ্পড় চিনো! তুমি কই আমি কই, কোথাকার কোন বাচ্চা মেয়ে আমি আর তুমি কি সমান নাকি??
- ওই তুমি কিন্তু এবার লিমিট ছাড়ছো, আমি একদম বাচ্চা নই হুহ, আমি এবার ইন্টার ফাইনালের ছাত্রী।
- তো আমি কি করব?
- আমাকে বিয়ে করবা। আর আমি তোমাকে ভালবাসি?
- ওহ্ গড, এই তুমি আমার নাম জানো কিভাবে আর আমাকে ভালবাসো মানে কবে থেকে।
- তোমার নাম জানা খুব সহজ, তোমার ফেসবুক আইডি আমার কাছে আছে হিহিহি, Nil Akash এটা তো তোমারি আইডি আর আমি তোমার ছবি দেখে চিনেছি। যেদিন তুমি এ বাসায় আসছো সেদিন থেকে তোমাকে ভালবাসি।
- হুরর পাজি মেয়ে একটা।
.
রাগে চোখ লাল করে ছাদ থেকে চলে আসলাম।
এসেই বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে পরলাম। কি মেয়েরে বাবা, গুন্ডী টাইপের মেয়ে। এর আগে কখনও কথা হয় নাই শুধু একটা মায়া লুক নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকত আর আজ বেহায়ার মতো বলে আমি তোমাকে ভালবাসি।
দেখছেন পাজি মেয়েটার সাহস কতবড়।
.
ধুরর এসব বাচ্চা মেয়ের চিন্তা মাথা থেকে ফেলে দিয়ে রিমোট হাতে নিয়ে টিভি দেখতে লাগলাম।
কিন্তু একটা প্রশ্ন মাথায় আসছে, পাজি মেয়ে আমার আইডি পেল কই। ওর ওই নামে তো আমার লিস্টে কেউ নেই। আবার মেয়েটা আমাকে ফলো করতে পারে। মাথায় যে প্যাচানো বুদ্ধি।
.
পরের দিন শুক্রবার আজ অফিস বন্ধ। তাই ভাবলাম রুমটা একটু পরিষ্কার করি। অনেক ময়লা জমে গেছে। ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করতে করতে হটাৎ আলমারীর উপর থেকে ঝাড়ু লেগে আমার 4 বছরের পুরনো ডাইরিটা পরে গেল।
.
তাই পরিষ্কার করা বাদ দিয়ে ডাইরিটা তোয়ালে দিয়ে মুছতে লাগলাম। অনেক ধুলো পরছে। ধুলো আবার আমার পাগলীটা একদম সয্য করতে পারত না। কিন্তু আমি তো আমার পাগলীর ডাইরিটা ঠিকমতো পরিষ্কার করে রাখতে পারলাম না। এখন কি হবে?? রাতে আমার সপ্নে এসে যদি পাগলীটা আমাকে বকা দেয় তখন কি হবে !
.
আমি তো ওর জিনিস যত্ন করে রাখি নাই নিশ্চিত আমাকে আজ অনেক বকবে। হুম, বকুক, তবুও ওর মিষ্টি কন্ঠটা আজ শুনতে পারব।
এখন পরিষ্কার করা বাদ দিয়ে ডাইরিটা পড়তে লাগলাম আবার। এটা আমার পাগলী নিজের হাতে লিখেছিল, আমার আর পাগলীর সব কাহিনী আছে এই ডাইরিতে।
.
.
পড়া কতদূর পড়ে আবার রুমটা পরিষ্কার করে গোসল সেড়ে একটু বাইরে বের হলাম ঘুরতে। রুমে ভালো লাগছে না তাই বাসার পাশে ছোট্ট আম বাগানে গেলাম একটু শান্তির হাওয়া খেতে।
.
বাগানে একটা ছোট্ট গাছের কাটা গুড়ির উপর বসে আছি। হটাৎ কাদে কার জন্য শীতল স্পর্শ পেলাম।
পেছনে তাকিয়ে দেখি পাশের বাসার সেই কিউট পাজি মেয়েটা। আমার সামনে তবুও আমাকে ছুয়ে আছে। সাহস কতবড়???
.
- ওই তোমার সমস্যা টা কি?
- আমার আবার কিসের সমস্যা?
- তাহলে আমার পিছনে পরে আছো কেন? সেই অনেক দিন ধরে দেখছি ছাদে গিয়ে সবসময় আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকো, এসব কেন?
- হুম, বুঝলাম। আমি কি দেখতে খারাপ??
- একথা আসছে কেন??
- আমার উওর চাই??
- না। একদম পরীর মতো হইছে এবার।
- ( খুশিতে চোখ জ্বলে উঠলো) তাহলে আমাকে ভালবাসতে তোমার সমস্যা কই?
- আমি কাউকে ভালবাসতে পারব না। যাও এখান থেকে।
- আমি তো এতো সহজে যাব না আমি আমার ভালবাসা আদায় করেই নিব।
- কোনো দিনও পারবে না?
- কেন?
- তোমার জানা লাগব না।
.
এই বলে পাজি মেয়েটাকে ওখানে রেখে দৌড়ে চলে এলাম
উফফফ, কি মেয়ের পাল্লায় পরলাম রে, ও একটা নিজে মেয়ে হয়ে ওর থেকে বড় একজন কে বলে ভালবাসি। আর ভালো না বাসলে ভালবাসা নাকি আদায় করে নিব, ভালবাসা এত সস্তা নাকি? হুহ।
.
এরপর দুদিন কেটে গেল। এই দুদিনে পাজি মেয়েটা একবারও ছাদে আসে নাই। এই দুদিন ছাদে গেছিলাম কিন্তু ওরে দেখতে পাই নাই। এখন নিজের উপরই রাগ হচ্ছে। সেদিন ওভাবে না বললেও পারতাম।
.
তিন দিনের দিন ছাদে গিয়ে তো আমার চক্ষু চড়কগাছ। সেই পাজি নীলা নামের মেয়েটা আজ আমার জন্য ১৮ টা গোলাপ ফুল হাতে আমাদের ছাদে দাড়িয়ে আছে।
.
- এই মেয়ে তুমি আমাদের ছাদে কি করো আর কিভাবে আসলা,?
- সেটা বড় কথা না যেভাবে পারছি আসছি বড় কথা হলো তুমি এই ১৮ টা ফুল নাও আর আমাকে এখন এগুলো দিয়ে প্রপোজ করো আর জুরে বলবা, নীলা আমি তোমাকে ভালবাসি।
- ( কথাটা শুনেই মাথা আবার গরম হয়ে গেল। তাই ঠাস করে একটা জোরে থাপ্পড় দিলাম) এই মেয়ে তুমি এগুলো কি পাইছো, তোমার খেয়ে কাজ নাই, কেন আমার পিছনে পরে আছো।
- ( থাপ্পড় দেওয়ার পর কান্না করতেছে) শুধু ভালবাসি একবার বলো না প্লিজ তাহলে আর তোমাকে বিরক্ত করব না, ( কাদতেঁ কাদতেঁ বলল)
- আমি না তোমাকে কতবার বলছি আমি তোমাকে ভালবাসি না আর ভালবাসতে পারব না।
- কেন ভালবাসতে পারবা না??
- কারণ আমি একজন কে ভালবাসি।
- ( কান্নার শব্দ বেড়ে গেল) কাকে ভালবাসো তুমি??
- জুঁইকে।
- জুই.!!!!! সেটা আবার কে?
- ও আমার স্ত্রী।
- মানে !!!!
- আমি বিবাহিত। আর জুই হলো আমার একমাত্র স্ত্রী।
- তাহলে সে কই?
- নেই। হারিয়ে গেছে।
- কই গেছে।
- আমাকে রেখে ঐ তারার দেশে চলে গেছে।
- ওহ্, তাহলে তো আপু আর নেই, আমাকে ভালবাসতে তোমার কি সমস্যা?
- ও নেই, এই কথা আরেকবার বলবা না নয়তো খুব খারাপ হবে। আমি শুধু ওকেই ভালবাসি আর কাউকে না। ওর জায়গা আমি আর কাউকে দিতে পারব না।
- আচ্ছা আমি ওনার জায়গা চাইবো না। কিন্তু কিভাবে কি হয়েছিল একটু বলবা প্লিজ।
- আচ্ছা শুন -
.
.
আমার আর জুঁইয়ের প্রথম দেখা হয়েছিল এক বাস স্টান্ডে। জুই ওর পার্স টা হারিয়ে ফেলেছিল। ওখানে ওর টাকা আর বাসের টিকিট টা ছিলো। এখন সব কিছু হারিয়ে একটা ব্রেঞ্চে চুপচাপ বসে ছিলো। যেভাবে বসে ছিলো তাতে কেউ বুঝতে পারতো না মেয়েটার কিছু হারিয়েছে।
.
আমিও তখন ওখানে ছিলাম, দূর থেকেই দেখে ভালো লেগে যায় ওই জুই নামের মেয়েটিকে। তাই কাছে গিয়ে জানতে পারলাম ওর পার্স হারিয়েছে। তারপর বললাম কই যাবেন, ও বলল মিরপুর।
ওখানে কি?
আমার বাসা ওখানে।
বাহ্, ভালই তো হলো আমার বাসা ওখানেই আমি ঢাকা থেকে পড়াশোনা করি চলুন একসাথে যাই।
কি করে যাব আমার কাছে তো টিকিট টাকা কিচ্ছু নেই।
ধুরর, তাই জন্য কি এখানে বসে থাকবেন নাকি? চলুন, আমি আছি না।
.
তারপর ও যেতে চাইলো না অচেনা কারও সাথে। আমি অনেক রিকুয়েস্ট করার পর রাজি হলো। সারারাত বাসে ভ্রমণ করার পর বাড়ি আসলাম। জুঁইয়ের সব খরচ আমিই দিছিলাম। আসার সময় যখন দুজনে ভাগ হবো তখন ওর ফেসবুক আইডি আর ফোন নাম্বার নিয়ে এলাম।
.
আমি তখন অনার্সের ছাত্র আর জুই তখন কেবল ইন্টার পাশ করল।
দুজনে এরপর থেকে অনেক রাত পর্যন্ত ফেসবুকে চাটিং আর ফোনালাপ করতাম। এখান থেকেই শুরু হয় ভালবাসার ফাস্ট সাইট।
ফোনে কথা বলতে বলতে আমরা কখন যে একে অপরকে ভালবাসি কেউ জানে না।
.
অবশ্য আমি ওকে আগে থেকেই ভালবাসতাম। আর যেদিন ও আমাকে বলল জুইও আমাকে ভালবাসে তখন আমি খুশিতে খাট থাকে নিচে পরে গেছিলাম। বাড়িতে বক্স ছিলো, দরজা বন্ধ করে সেদিন ফুল সাউন্ড দিয়ে ঘরের ভেতর কতখন নাচানাচি করছি জানি না।
.
তারপর থেকে চলতে থাকে আমাদের ক্লোজ ভালবাসা। আমরা তখন একে অপরকে অনেক ভালবাসি। চলে গেল কয়েক টা বছর।
আমার অনার্সের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল।
কিন্তু এর মাঝে আরেক ব্যপার ঝামেলা বাঁধালো।
আমাদের দু পরিবারই জেনে গেছে আমাদের রিলেশনের কথা।
.
ভাবছিলাম সবাই আমাদের মেনে নিবে। কিন্তু এটার বিপরীতে হলো। আমার পরিবার ওর পরিবারের থেকে অনেক ধনী ছিলো তাই তারা মেনে নেয় নি। আর ওদের সমস্যা হলো, ধনী ছেলেরা নাকি খুব খারাপ নির্লজ্জ টাইপের হয়।
.
পরিবারে জানার পর আমি খুব চিন্তায় পরে গেলাম, জুঁইকে কি আমি পাব না?? তাই স্বিদ্ধান্ত নিলাম দরকার হয় বাড়ি ছাড়ব তবুও আমি জুঁইকে কোনো ভাবে হারাতে পারব না। ও আমার কলিজা ওকে ছাড়া আমি বাচবো না।
.
তাই আমি জুঁইকে পালানোর কথা বললাম। জুই রাজি হলো। তারপর বাড়ি থেকে দুজনে যত পারি টাকা পয়সা নিয়ে চলে এলাম অজানা এক এলাকায়। যেখানে আমাদের কেউ চিনে না আমরা কাউকে চিনি না।
.
হাতে অনেক টাকা থাকার জন্য অল্প কয়েক দিনেই এক চাকরি জোগাড় করে ফেললাম।
এখন আমাদের দুই টুনাটুনির সংসার। খুব ভালো চলছিল।
সারাদিন অফিস থেকে কাজ করে বিকেলে বাসায় এসে বৌয়ের ভালবাসা পেতাম।
.
কখনো কখনো একটু দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়া করতাম। খুব তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যেত। ও যদি রাগ করতো তাহলে ওর রাগ ভাঙাতে গিয়ে আমার দাত ভেঙে
যেত।
যখন আমি ওর কোলে মাথা রেখে ঘুমাতাম আর জুই আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিত বা চুল বিলি কেটে দিত তখন আমি ভাবতাম এর চেয়ে সুখের মুহূর্ত আর কি আছে আর কিচ্ছু চাই না আমার।
.
কিন্তু আমাদের ভালবাসার সংসারে এক বছরের মাথায় আমি আর জুই একদিন শপিং করতে যায়। শপিং রুম থেকে বেরিয়ে যখন রাস্তায় আসি তখন ভুল বশতঃ একটা ব্যাগ রাস্তার মাঝে পরে যায়। জুই রাস্তার কিনারে ছিলো তাই আমিই ব্যাগ টা আনতে যাই।
.
তখন ব্যাগটা তুলতেই একটা ট্রাক পুরো গতিতে ছুটে আসে আমার দিকে, আমি খেয়াল করে উঠার আগেই জুই দৌড়ে এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।
.
আর ও নিজে _________, তারপর সব ইতিহাস।
আমার জীবন টা ও রক্ষা করে ঠিকই কিন্তু ও নিজের জীবন টা বিসর্জন দিয়ে আমাকে ওর জীবন টা উপহার হিসেবে দিয়ে যায়।
.
সেদিনের ঘটনার পর জুই আরও দুদিন বেচে আছিলো। কিন্তু সেটা হাসপাতালে এক মুমূর্ষু রোগীর মতন। সেই দুটি দিন আমি ১ সেকেন্ডের জন্যও ওর কাছ থেকে দূরে যাই নাই।
.
যেদিন পাগলীটা আমাকে ছেড়ে চলে গেল সেদিন আমার হাত ওর নরম তুলোর মতো হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে রেখেছিল। আমি তখন ওর পাশে বসে কাঁদছিলাম। ও তখন আস্তে আস্তে বলছিল,
- এই পাগল কাঁদছো কেন?
- এটা কেন করলে তুমি?
- আমি আবার কি করলাম?
- কেন শুধু শুধু আমাকে বাচিয়ে নিজের জীবনটা এভাবে ছেড়ে দিলে?
- হিহিহি ধুরর পাগল, তাতে কি হইছে? আমি তো শুধু আমার পাগলটার ভালবাসার জন্য এটা করছি।
- আমার চাই না এ জীবন তুমি ঠিক হয়ে যাও প্লিজ।
- একটা থাপ্পড় দিমু এমন কথা আর বলবা না। আমি চলে যাচ্ছি তাতে কি হইছে। দেখবে আমার মতো আরও অনেক পাগলী তোমাকে ভালবাসার জন্য অপেক্ষা করব।
- আমার অন্য পাগলী চাই না আমার শুধু তোমাকে চাই। প্লিজ আমাকে একা রেখে যেও না।
- একদিন তো যেতে হবেই আমি নাহয় আমার পাগলটাকে ভালবেসে কয়েক দিন আগেই যাব।
আর শুন আমার জন্য কাঁদবে না কিন্তু। আর আমাকে প্রমিজ করো ওই সিগারেট জাতীয় কিছু খাইবা না, নিজের খেয়াল রাখবা।
- আমি প্রমিজ করছি রে তোকে ছুয়ে আমি এসব কিচ্ছু করব না। তুই প্লিজ আগের মতো হয়ে যা।
.
.
জুই এই জুই কি হলো পাগলী কথা বলছিস না কেন? আমি প্রমিজ করছি তো। এই পাগলী কিছু বলনা প্লিজ। রাগ করিস না প্লিজ। আমি তোর সব কথা রাখবো। একবার বল না ভালবাসি প্লিজ বল।
.
.
.
.
.
.
.
এই ভাবে শেষ হয়ে গেল সব। আমি কোনো দিন ভাবি নাই আমার ভালবাসা আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। সেদিন ও চলে যাওয়ার পর আমি একদম একা হয়ে পড়ি। কেউ ছিলো না আমার পাশে। পরিবার তো অনেক আগেই ছেড়ে দিছি।
এখন বেচে আছি শুধু পাগলীটার প্রমিজ রাখার জন্য। ওর কাছে যদি প্রমিজ না করতাম তাহলে ওর সাথেই হয়তো দুজনে হাত ধরে চলে যেতাম ঐ তারার দেশে।
.
সেখানে গিয়ে দুজনে আবার নতুন করে সংসার বাধতাম।
হয়তো একদিন আমিও চলে যাব। রয়ে যাবে শুধু আমার পাগলীটার পুরনো ডাইরির সৃতি গুলো।
.
.
.
ব্যস এটাই হলো আমার ভালবাসা। আমি আর আমার পাগলী।
আর কি শুনতে চাও তুমি?
- আমার আর কিছু শোনার দরকার নাই আমি তবুও বলব আমি তোমাকে ভালবাসি।
.
এই বলে নীলা কাদতেঁ কাদতেঁ দৌড়ে চলে গেল সেখান থেকে।
.
পাগলী মেয়ে একটা, হুহ।
.
.
পৃথিবীতে সব ভালবাসা একরকম হয় না। কিছু ভালবাসা আছে সুখের কিছু আছে কষ্টের আর কিছু আছে প্রয়োজন মেটানোর। আমি বোধ হয় কষ্টের লাইনে আছি।
ভালবাসা জীবনে একবারই আসে। আর সেটা যেকোন একজনের জন্য। সবার জন ভেতর থেকে ভালবাসা আসে না। যে ভালবাসতে পারে একমাত্র সেই পারে নিজের ভালবাসার কথা রাখতে।
.
হুম, মেয়েটার নাম হলো নীলা। এবার বোধ হয় ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পরে। আর আমি হলাম আকাশ, একটা সরকারি জব করি। এই ছাদে থেকে প্রায় নীলার বাসার সব দেখা যায়। যখন ওর বাসার দরজা জানালা খোলা থাকে। ওর হয়তো মা বাবা সহ পরিবারের সবাই আছে।
.
কিন্তু আমি একা। পৃথিবীতে আমার নিজের বলতে কেউ নেই। একজন ছিলো কিন্তু এখন নেই।
( পরে বুঝতে পারবেন সব)
আমি আকাশ। আকাশ যখন একা একা কাদে তখন ওর কান্না গুলো বৃষ্টি হয়ে ঝরে পরে কিন্তু আমি যখন একা বসে কাদি তখন আমার কান্না গুলো কষ্ট হয়ে চোখ বেয়ে নামে। উপরের ঐ আকাশ যেমন একলা ওর কোনো সঙ্গী নেই তেমনি আমিও একলা আমার কেউ নেই।
.
হুর, বাদ দেই এসব। ওই ছাদের ওপাশের মেয়েটার কথায় আসি। আমি যখন প্রতিদিন অফিস থেকে আসি, এসে খাওয়া দাওয়া সেড়ে ছাদে পা রাখি তখনই ঠিক ঐ সময় মতো ঐ নীলা নামের মেয়েটা আসে।
.
আমার একলা জীবনে কোনো কিছুর অভাব নেই, নিজে আয় করি নিজে খাই গল্প শেষ।
.
তো আমি বই থেকে মাথা উঠালাম। দেখি পাজি মেয়েটা তবুও আমার দিকে পুতুলের মতো তাকিয়ে আছে। লজ্জা সরম বলতে কিছু নেই নাকি মেয়েটার।
.
এরকম পরিস্থিতি দেখে আমি বই নিয়ে ঘরে চলে আসলাম। আমার বাড়ি অবশ্য অন্য জায়গায়, চাকরির তাগিদে বাসায় থাকি।
রুমে এসে দিলাম এক ঘুম। এক ঘুমেই রাত কাবার করে দিছি।
.
পরের দিন আবার চললাম অফিসে। সারাদিন ভালভাবে কাটলো, নানান ব্যস্ততার মাঝে। বিকেলে বাসায় আসলাম, ফ্রেস হয়ে খাওয়া শেষ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। কিন্তু না ভালো লাগছে না তাই ছাদের দিকে পা বাড়ালাম।
.
আজ ছাদে গিয়ে দেখি ওই পাজি মেয়েটা আগে থেকেই ওদের ছাদে এসে দাড়িয়ে আছে। তাই আমার একটু রাগ হলো, আমি যখন ছাদে আসব ও তখন কেন আসব আর এসেই আমার দিকে কেন তাকিয়ে থাকব???
.
তাই ভাবলাম নিচে চলে যাই একটা ঘুম দেই।
ছাদ থেকে আসার জন্য পিছনে অগ্রসর হলাম। ওমনি """"
- এইযে মিস্টার আকাশ, কই যাও?
- ( পাজি মেয়ে আমার নাম ধরে ডাকে তবুও আবার তুমি করে) যেখানে খুশি।
- এখানে চুপ করে বসে থাকো!
- কেন?
- আমি তোমাকে এখন দেখবো।
- হোয়াট??????
- হুহ।
- ওই মেয়ে তুই কিন্তু লিমিট ছাড়িয়ে যাচ্ছো আর তুমি ভুলে যাচ্ছো আমি কিন্তু তোমার বড়।
- হিহিহি তাতে কি হইছে? নিজের হবু বরের সাথে আমি যা ইচ্ছা করতে পারি।
- ( আমি শকড, এই মেয়ে বলে কি রে) ধুরর তুমি পাগল! আমাকে চিনো তুমি?
- নিজের হবু বরকে কে না চিনে?
- এবার কিন্তু খুব খারাপ হবে। আর শুনো পিচ্চি মেয়ে আমাকে আপনি করে বলবা।
- কিইইইই? আমি পারব না, আমি তোমাকে তুমি করেই বলব।
- থাপ্পড় চিনো! তুমি কই আমি কই, কোথাকার কোন বাচ্চা মেয়ে আমি আর তুমি কি সমান নাকি??
- ওই তুমি কিন্তু এবার লিমিট ছাড়ছো, আমি একদম বাচ্চা নই হুহ, আমি এবার ইন্টার ফাইনালের ছাত্রী।
- তো আমি কি করব?
- আমাকে বিয়ে করবা। আর আমি তোমাকে ভালবাসি?
- ওহ্ গড, এই তুমি আমার নাম জানো কিভাবে আর আমাকে ভালবাসো মানে কবে থেকে।
- তোমার নাম জানা খুব সহজ, তোমার ফেসবুক আইডি আমার কাছে আছে হিহিহি, Nil Akash এটা তো তোমারি আইডি আর আমি তোমার ছবি দেখে চিনেছি। যেদিন তুমি এ বাসায় আসছো সেদিন থেকে তোমাকে ভালবাসি।
- হুরর পাজি মেয়ে একটা।
.
রাগে চোখ লাল করে ছাদ থেকে চলে আসলাম।
এসেই বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে পরলাম। কি মেয়েরে বাবা, গুন্ডী টাইপের মেয়ে। এর আগে কখনও কথা হয় নাই শুধু একটা মায়া লুক নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকত আর আজ বেহায়ার মতো বলে আমি তোমাকে ভালবাসি।
দেখছেন পাজি মেয়েটার সাহস কতবড়।
.
ধুরর এসব বাচ্চা মেয়ের চিন্তা মাথা থেকে ফেলে দিয়ে রিমোট হাতে নিয়ে টিভি দেখতে লাগলাম।
কিন্তু একটা প্রশ্ন মাথায় আসছে, পাজি মেয়ে আমার আইডি পেল কই। ওর ওই নামে তো আমার লিস্টে কেউ নেই। আবার মেয়েটা আমাকে ফলো করতে পারে। মাথায় যে প্যাচানো বুদ্ধি।
.
পরের দিন শুক্রবার আজ অফিস বন্ধ। তাই ভাবলাম রুমটা একটু পরিষ্কার করি। অনেক ময়লা জমে গেছে। ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করতে করতে হটাৎ আলমারীর উপর থেকে ঝাড়ু লেগে আমার 4 বছরের পুরনো ডাইরিটা পরে গেল।
.
তাই পরিষ্কার করা বাদ দিয়ে ডাইরিটা তোয়ালে দিয়ে মুছতে লাগলাম। অনেক ধুলো পরছে। ধুলো আবার আমার পাগলীটা একদম সয্য করতে পারত না। কিন্তু আমি তো আমার পাগলীর ডাইরিটা ঠিকমতো পরিষ্কার করে রাখতে পারলাম না। এখন কি হবে?? রাতে আমার সপ্নে এসে যদি পাগলীটা আমাকে বকা দেয় তখন কি হবে !
.
আমি তো ওর জিনিস যত্ন করে রাখি নাই নিশ্চিত আমাকে আজ অনেক বকবে। হুম, বকুক, তবুও ওর মিষ্টি কন্ঠটা আজ শুনতে পারব।
এখন পরিষ্কার করা বাদ দিয়ে ডাইরিটা পড়তে লাগলাম আবার। এটা আমার পাগলী নিজের হাতে লিখেছিল, আমার আর পাগলীর সব কাহিনী আছে এই ডাইরিতে।
.
.
পড়া কতদূর পড়ে আবার রুমটা পরিষ্কার করে গোসল সেড়ে একটু বাইরে বের হলাম ঘুরতে। রুমে ভালো লাগছে না তাই বাসার পাশে ছোট্ট আম বাগানে গেলাম একটু শান্তির হাওয়া খেতে।
.
বাগানে একটা ছোট্ট গাছের কাটা গুড়ির উপর বসে আছি। হটাৎ কাদে কার জন্য শীতল স্পর্শ পেলাম।
পেছনে তাকিয়ে দেখি পাশের বাসার সেই কিউট পাজি মেয়েটা। আমার সামনে তবুও আমাকে ছুয়ে আছে। সাহস কতবড়???
.
- ওই তোমার সমস্যা টা কি?
- আমার আবার কিসের সমস্যা?
- তাহলে আমার পিছনে পরে আছো কেন? সেই অনেক দিন ধরে দেখছি ছাদে গিয়ে সবসময় আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকো, এসব কেন?
- হুম, বুঝলাম। আমি কি দেখতে খারাপ??
- একথা আসছে কেন??
- আমার উওর চাই??
- না। একদম পরীর মতো হইছে এবার।
- ( খুশিতে চোখ জ্বলে উঠলো) তাহলে আমাকে ভালবাসতে তোমার সমস্যা কই?
- আমি কাউকে ভালবাসতে পারব না। যাও এখান থেকে।
- আমি তো এতো সহজে যাব না আমি আমার ভালবাসা আদায় করেই নিব।
- কোনো দিনও পারবে না?
- কেন?
- তোমার জানা লাগব না।
.
এই বলে পাজি মেয়েটাকে ওখানে রেখে দৌড়ে চলে এলাম
উফফফ, কি মেয়ের পাল্লায় পরলাম রে, ও একটা নিজে মেয়ে হয়ে ওর থেকে বড় একজন কে বলে ভালবাসি। আর ভালো না বাসলে ভালবাসা নাকি আদায় করে নিব, ভালবাসা এত সস্তা নাকি? হুহ।
.
এরপর দুদিন কেটে গেল। এই দুদিনে পাজি মেয়েটা একবারও ছাদে আসে নাই। এই দুদিন ছাদে গেছিলাম কিন্তু ওরে দেখতে পাই নাই। এখন নিজের উপরই রাগ হচ্ছে। সেদিন ওভাবে না বললেও পারতাম।
.
তিন দিনের দিন ছাদে গিয়ে তো আমার চক্ষু চড়কগাছ। সেই পাজি নীলা নামের মেয়েটা আজ আমার জন্য ১৮ টা গোলাপ ফুল হাতে আমাদের ছাদে দাড়িয়ে আছে।
.
- এই মেয়ে তুমি আমাদের ছাদে কি করো আর কিভাবে আসলা,?
- সেটা বড় কথা না যেভাবে পারছি আসছি বড় কথা হলো তুমি এই ১৮ টা ফুল নাও আর আমাকে এখন এগুলো দিয়ে প্রপোজ করো আর জুরে বলবা, নীলা আমি তোমাকে ভালবাসি।
- ( কথাটা শুনেই মাথা আবার গরম হয়ে গেল। তাই ঠাস করে একটা জোরে থাপ্পড় দিলাম) এই মেয়ে তুমি এগুলো কি পাইছো, তোমার খেয়ে কাজ নাই, কেন আমার পিছনে পরে আছো।
- ( থাপ্পড় দেওয়ার পর কান্না করতেছে) শুধু ভালবাসি একবার বলো না প্লিজ তাহলে আর তোমাকে বিরক্ত করব না, ( কাদতেঁ কাদতেঁ বলল)
- আমি না তোমাকে কতবার বলছি আমি তোমাকে ভালবাসি না আর ভালবাসতে পারব না।
- কেন ভালবাসতে পারবা না??
- কারণ আমি একজন কে ভালবাসি।
- ( কান্নার শব্দ বেড়ে গেল) কাকে ভালবাসো তুমি??
- জুঁইকে।
- জুই.!!!!! সেটা আবার কে?
- ও আমার স্ত্রী।
- মানে !!!!
- আমি বিবাহিত। আর জুই হলো আমার একমাত্র স্ত্রী।
- তাহলে সে কই?
- নেই। হারিয়ে গেছে।
- কই গেছে।
- আমাকে রেখে ঐ তারার দেশে চলে গেছে।
- ওহ্, তাহলে তো আপু আর নেই, আমাকে ভালবাসতে তোমার কি সমস্যা?
- ও নেই, এই কথা আরেকবার বলবা না নয়তো খুব খারাপ হবে। আমি শুধু ওকেই ভালবাসি আর কাউকে না। ওর জায়গা আমি আর কাউকে দিতে পারব না।
- আচ্ছা আমি ওনার জায়গা চাইবো না। কিন্তু কিভাবে কি হয়েছিল একটু বলবা প্লিজ।
- আচ্ছা শুন -
.
.
আমার আর জুঁইয়ের প্রথম দেখা হয়েছিল এক বাস স্টান্ডে। জুই ওর পার্স টা হারিয়ে ফেলেছিল। ওখানে ওর টাকা আর বাসের টিকিট টা ছিলো। এখন সব কিছু হারিয়ে একটা ব্রেঞ্চে চুপচাপ বসে ছিলো। যেভাবে বসে ছিলো তাতে কেউ বুঝতে পারতো না মেয়েটার কিছু হারিয়েছে।
.
আমিও তখন ওখানে ছিলাম, দূর থেকেই দেখে ভালো লেগে যায় ওই জুই নামের মেয়েটিকে। তাই কাছে গিয়ে জানতে পারলাম ওর পার্স হারিয়েছে। তারপর বললাম কই যাবেন, ও বলল মিরপুর।
ওখানে কি?
আমার বাসা ওখানে।
বাহ্, ভালই তো হলো আমার বাসা ওখানেই আমি ঢাকা থেকে পড়াশোনা করি চলুন একসাথে যাই।
কি করে যাব আমার কাছে তো টিকিট টাকা কিচ্ছু নেই।
ধুরর, তাই জন্য কি এখানে বসে থাকবেন নাকি? চলুন, আমি আছি না।
.
তারপর ও যেতে চাইলো না অচেনা কারও সাথে। আমি অনেক রিকুয়েস্ট করার পর রাজি হলো। সারারাত বাসে ভ্রমণ করার পর বাড়ি আসলাম। জুঁইয়ের সব খরচ আমিই দিছিলাম। আসার সময় যখন দুজনে ভাগ হবো তখন ওর ফেসবুক আইডি আর ফোন নাম্বার নিয়ে এলাম।
.
আমি তখন অনার্সের ছাত্র আর জুই তখন কেবল ইন্টার পাশ করল।
দুজনে এরপর থেকে অনেক রাত পর্যন্ত ফেসবুকে চাটিং আর ফোনালাপ করতাম। এখান থেকেই শুরু হয় ভালবাসার ফাস্ট সাইট।
ফোনে কথা বলতে বলতে আমরা কখন যে একে অপরকে ভালবাসি কেউ জানে না।
.
অবশ্য আমি ওকে আগে থেকেই ভালবাসতাম। আর যেদিন ও আমাকে বলল জুইও আমাকে ভালবাসে তখন আমি খুশিতে খাট থাকে নিচে পরে গেছিলাম। বাড়িতে বক্স ছিলো, দরজা বন্ধ করে সেদিন ফুল সাউন্ড দিয়ে ঘরের ভেতর কতখন নাচানাচি করছি জানি না।
.
তারপর থেকে চলতে থাকে আমাদের ক্লোজ ভালবাসা। আমরা তখন একে অপরকে অনেক ভালবাসি। চলে গেল কয়েক টা বছর।
আমার অনার্সের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল।
কিন্তু এর মাঝে আরেক ব্যপার ঝামেলা বাঁধালো।
আমাদের দু পরিবারই জেনে গেছে আমাদের রিলেশনের কথা।
.
ভাবছিলাম সবাই আমাদের মেনে নিবে। কিন্তু এটার বিপরীতে হলো। আমার পরিবার ওর পরিবারের থেকে অনেক ধনী ছিলো তাই তারা মেনে নেয় নি। আর ওদের সমস্যা হলো, ধনী ছেলেরা নাকি খুব খারাপ নির্লজ্জ টাইপের হয়।
.
পরিবারে জানার পর আমি খুব চিন্তায় পরে গেলাম, জুঁইকে কি আমি পাব না?? তাই স্বিদ্ধান্ত নিলাম দরকার হয় বাড়ি ছাড়ব তবুও আমি জুঁইকে কোনো ভাবে হারাতে পারব না। ও আমার কলিজা ওকে ছাড়া আমি বাচবো না।
.
তাই আমি জুঁইকে পালানোর কথা বললাম। জুই রাজি হলো। তারপর বাড়ি থেকে দুজনে যত পারি টাকা পয়সা নিয়ে চলে এলাম অজানা এক এলাকায়। যেখানে আমাদের কেউ চিনে না আমরা কাউকে চিনি না।
.
হাতে অনেক টাকা থাকার জন্য অল্প কয়েক দিনেই এক চাকরি জোগাড় করে ফেললাম।
এখন আমাদের দুই টুনাটুনির সংসার। খুব ভালো চলছিল।
সারাদিন অফিস থেকে কাজ করে বিকেলে বাসায় এসে বৌয়ের ভালবাসা পেতাম।
.
কখনো কখনো একটু দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়া করতাম। খুব তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যেত। ও যদি রাগ করতো তাহলে ওর রাগ ভাঙাতে গিয়ে আমার দাত ভেঙে
যেত।
যখন আমি ওর কোলে মাথা রেখে ঘুমাতাম আর জুই আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিত বা চুল বিলি কেটে দিত তখন আমি ভাবতাম এর চেয়ে সুখের মুহূর্ত আর কি আছে আর কিচ্ছু চাই না আমার।
.
কিন্তু আমাদের ভালবাসার সংসারে এক বছরের মাথায় আমি আর জুই একদিন শপিং করতে যায়। শপিং রুম থেকে বেরিয়ে যখন রাস্তায় আসি তখন ভুল বশতঃ একটা ব্যাগ রাস্তার মাঝে পরে যায়। জুই রাস্তার কিনারে ছিলো তাই আমিই ব্যাগ টা আনতে যাই।
.
তখন ব্যাগটা তুলতেই একটা ট্রাক পুরো গতিতে ছুটে আসে আমার দিকে, আমি খেয়াল করে উঠার আগেই জুই দৌড়ে এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।
.
আর ও নিজে _________, তারপর সব ইতিহাস।
আমার জীবন টা ও রক্ষা করে ঠিকই কিন্তু ও নিজের জীবন টা বিসর্জন দিয়ে আমাকে ওর জীবন টা উপহার হিসেবে দিয়ে যায়।
.
সেদিনের ঘটনার পর জুই আরও দুদিন বেচে আছিলো। কিন্তু সেটা হাসপাতালে এক মুমূর্ষু রোগীর মতন। সেই দুটি দিন আমি ১ সেকেন্ডের জন্যও ওর কাছ থেকে দূরে যাই নাই।
.
যেদিন পাগলীটা আমাকে ছেড়ে চলে গেল সেদিন আমার হাত ওর নরম তুলোর মতো হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে রেখেছিল। আমি তখন ওর পাশে বসে কাঁদছিলাম। ও তখন আস্তে আস্তে বলছিল,
- এই পাগল কাঁদছো কেন?
- এটা কেন করলে তুমি?
- আমি আবার কি করলাম?
- কেন শুধু শুধু আমাকে বাচিয়ে নিজের জীবনটা এভাবে ছেড়ে দিলে?
- হিহিহি ধুরর পাগল, তাতে কি হইছে? আমি তো শুধু আমার পাগলটার ভালবাসার জন্য এটা করছি।
- আমার চাই না এ জীবন তুমি ঠিক হয়ে যাও প্লিজ।
- একটা থাপ্পড় দিমু এমন কথা আর বলবা না। আমি চলে যাচ্ছি তাতে কি হইছে। দেখবে আমার মতো আরও অনেক পাগলী তোমাকে ভালবাসার জন্য অপেক্ষা করব।
- আমার অন্য পাগলী চাই না আমার শুধু তোমাকে চাই। প্লিজ আমাকে একা রেখে যেও না।
- একদিন তো যেতে হবেই আমি নাহয় আমার পাগলটাকে ভালবেসে কয়েক দিন আগেই যাব।
আর শুন আমার জন্য কাঁদবে না কিন্তু। আর আমাকে প্রমিজ করো ওই সিগারেট জাতীয় কিছু খাইবা না, নিজের খেয়াল রাখবা।
- আমি প্রমিজ করছি রে তোকে ছুয়ে আমি এসব কিচ্ছু করব না। তুই প্লিজ আগের মতো হয়ে যা।
.
.
জুই এই জুই কি হলো পাগলী কথা বলছিস না কেন? আমি প্রমিজ করছি তো। এই পাগলী কিছু বলনা প্লিজ। রাগ করিস না প্লিজ। আমি তোর সব কথা রাখবো। একবার বল না ভালবাসি প্লিজ বল।
.
.
.
.
.
.
.
এই ভাবে শেষ হয়ে গেল সব। আমি কোনো দিন ভাবি নাই আমার ভালবাসা আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। সেদিন ও চলে যাওয়ার পর আমি একদম একা হয়ে পড়ি। কেউ ছিলো না আমার পাশে। পরিবার তো অনেক আগেই ছেড়ে দিছি।
এখন বেচে আছি শুধু পাগলীটার প্রমিজ রাখার জন্য। ওর কাছে যদি প্রমিজ না করতাম তাহলে ওর সাথেই হয়তো দুজনে হাত ধরে চলে যেতাম ঐ তারার দেশে।
.
সেখানে গিয়ে দুজনে আবার নতুন করে সংসার বাধতাম।
হয়তো একদিন আমিও চলে যাব। রয়ে যাবে শুধু আমার পাগলীটার পুরনো ডাইরির সৃতি গুলো।
.
.
.
ব্যস এটাই হলো আমার ভালবাসা। আমি আর আমার পাগলী।
আর কি শুনতে চাও তুমি?
- আমার আর কিছু শোনার দরকার নাই আমি তবুও বলব আমি তোমাকে ভালবাসি।
.
এই বলে নীলা কাদতেঁ কাদতেঁ দৌড়ে চলে গেল সেখান থেকে।
.
পাগলী মেয়ে একটা, হুহ।
.
.
পৃথিবীতে সব ভালবাসা একরকম হয় না। কিছু ভালবাসা আছে সুখের কিছু আছে কষ্টের আর কিছু আছে প্রয়োজন মেটানোর। আমি বোধ হয় কষ্টের লাইনে আছি।
ভালবাসা জীবনে একবারই আসে। আর সেটা যেকোন একজনের জন্য। সবার জন ভেতর থেকে ভালবাসা আসে না। যে ভালবাসতে পারে একমাত্র সেই পারে নিজের ভালবাসার কথা রাখতে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন