সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০১৭

""অভিমানী ভালোবাসা""

""
তাড়াতাড়ি করে বাসায় চলে
আসলাম, বাংলাদেশের ১ম ওডি আই একটা ম্যাচ দেখবো
বলে। আমি আবার খেলা ছারা খুব
একটা টিভি দেখি না। রুমে ডুকে
মেজাজা খারাপ হয়ে গেল, -
শিউলী
আর মাসুদা বসে বসে
টিভিতে স্টার জলসা নামের
প্যারা দেখতাছে। শুধু মাসুদা
হলে কানের নিচে দুইটা দিয়ে
রিমুট,টা নিয়েনিতাম (মাসুদা
আমার ছোট বোন) কিন্তু -শিউলী
নামের বদ মেয়েটাও যে সাথে
আছে।
এই বদ মেয়েটা আমার হৃদয়ের
সমস্ত জায়গাটা জুড়ে দখল
করে আছে। কিন্তু তার হৃদয়ে
আমার জন্য তিল পরিমাণ
ভালবাসা
আছে কি না সন্দেহ আছে। শুনেছি
মেয়েদের নাকি ৩য়
চোখ বলে একটা জিনিস থাকে,
সেই চোখদিয়ে নাকি তারা
খুব সহজেই বুঝতে পারে কে তাকে
ভালবাসে। আমার
মনে হয় -শিউলীর সেই চোখটা
নাই, নয়তো আমি যে তাকে
এতটা ভালবাসি সে বুঝেনা কেন।
হয়তো বা -শিউলী আমাকে ভালই
বাসে না, বুঝেও না বুঝার ভান
করে থাকে। এমন না যে আমি
তাকে প্রোপোজ করি নাই,
করেছিলাম একবার।
প্রোপোজ করার পর আমার গালের
উপর মনেহয় মশা
বসেছিল সেই মশা মেরে
চলেগেছে। যাওয়ার আগে
টিপস্ দিয়ে গেছে আগামিতে যেন
গালের উপর মশা না
বসে। আশাকরি পাঠক বুঝতে
পারছেন ঘটনাটা কি ঘটেছিল।
সেই থেকে আর প্রোপোজ করি
নাই। তবে অনেক
ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেছি
ভালবাসি। যেদিন চেষ্টা'টা একটু
বেশিহয়ে যেত, রক্ত চক্ষু নিয়ে
এমন ভাবে আমার
দিকে তাকাতো, আমি শিউলীর
তাকানো দেখে গাল থেকে মশা
তাড়ানো নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে
যেতাম। বলাতো যায়না আবার
যদি
মশা মেরে বসে। তবে মাসুদার
সামনে কখনো ঝাড়ি দেয়না
ভদ্র ভাবেই কথাবলে, হয়তো
মাসুদা ছোট বলে। আমি রুমে
ডুকার সাথে সাথে মাসুদার হাত
থেকে রিমোট'টা শিউলী
নিয়ে নিল,
বদ মেয়েটা হয়তো বুঝতে পারছে
আমি খেলা দেখব।
.মাসুদা তোর আপুকে বল রিমোট
দিতে, আমি খেলা
দেখব।
-- মাসুদা তোর ভাইয়াকে বল,
খেলা দেখতে ইচ্ছে হলে
যেন মাঠে গিয়ে খেলা দেখে,
ঘরের ভীতর খেলা
দেখা লাগবে না।
-- দেখো শিউলী আজ একটা
গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ আছে, এই ম্যাছ
আমাকে দেখতেই হবে।
-- আপনি অন্ধ নাকি, দেখেন না
আজ আমাদের মহা এপিসোড
চলতেছে।
-- তোমাদের এই মহা এপিসোড
তোমাদের বাসায় গিয়ে
দেখতে পার না? এখানেই কেন
দেখা লাগবে। মাসুদাকে
নিয়ে উপরে যাও, তারপর বসে বসে
তোমাদের এই
প্যারাময় মহা এপিসোড
দেখোগা।
-- এই আপনাকে কি বলতে হবে
আমি কোথাই দেখব না
দেখব। আপনি যান এখান থেকে,
বিরক্ত করবেন না
বলেদিলাম। এই ফাজিল মেয়েটা
আমার হৃদয়ের সাথে সাথে
বাসাটাও দখল করে নিছে। এমন
ভাবে বলছে যেন আমি এই
বাড়ির ছেলে না ঘর জামাই।
আমার বউ আমাকে ঝাড়ি দিচ্ছে
আর
আমি অসহায়ের মতো শুনে যাচ্ছি,
কোন প্রতিবাদ করতে
পারছি না। এই বদ মেয়ের সাথে
তর্ক করে কোন লাভনেই
আমাকে খেলা দেখতে দিবে না,
তাই চলে আসলাম। আমার
চলে আসা দেখে দুইটায় মিলে
খিল খিল করে হাসতেছে,
আর আমার মেজাজ চরমে উঠে
যাচ্ছে। কি আর করার বাসার
পাশের দোকান ছারা খেলা
দেখার আর কোন উপাই নাই।
.
রুমে বসে গান শুনতেছিলাম তখন
আনটি এসে বললো। শিউলী
নাকি ওর কোন বান্ধবীর গায়ে
হলুদে গেছে আমাকে
আনতে যেতে হবে। শিউলীর দেয়া
ঠিকানা অনুযায়ী বাসার সামনে
এসে দাঁড়িয়ে আছি। একটু পর এক
পিচ্চি এসে
আমাকে ছাদে নিয়ে গেল। ছাদে
উঠে শিউলীকে দেখে
আমি চোখের পলক ফেলতে ভুলে
গেলাম, আমার হৃদেয়
ঝড় উঠে গেল। ইস্ এই মেয়েটা এতো
সুন্দর কেন?।
গায়ে হলুদের শাড়িতে যে
শিউলীকে কতটা সুন্দর লাগছে তা
বলে বুঝাতে পারব না। আমি আগে
কখোনো শিউলিকে শাড়ি
পরতে দেখিনি। শাড়িতে
শিউলিকে
এতটা কিউট লাগে
জানতাম
না। আমার এমন অভাক হয়ে
তাকিয়ে থাকা দেখে শিউলী
মুচকি মুচকি
হাসছে, তবে খুব সাবধানে যেন
আমি না দেখি, কিন্তু আমি দেখে
ফেলেছি। শিউলী গায়ে হলুদের
স্টেজে বসে ওর
এক বান্ধবীর হাতে মেহেদি
লাগিয়ে দিচ্ছে। আর ওর
বান্ধবীরা আমার দিকে তাকিয়ে
হাসছে। ওর বান্ধবীদের এভাবে
তাকিয়ে হাসা দেখে আমার
কেমন যেন লজ্জা
লেগে গেল।
.
-- শিউলী যাবে না?
-- হ্যাঁ যাব আপনি একটু বসেন, এই
মেহেদিটা লাগানো শেষ
হলেই যাব।
আমি একটু দূরে এসে একটা চেয়ারে
বসে বাচ্চাদের লুঙ্গি ড্যান্স
দেখতে লাগলাম। একটু পর পর
শিউলী আড় চোখে
আমার দিকে তাকাচ্ছে, আর ওর
বান্ধবীদের কি যেন
বলছে এবং মুচকি মুচকি হাসচ্ছে।
হঠাৎ করে এক মেয়ে
আমার পাশের চেয়ারে বসে
আমাকে বললো। "ভাইয়া আপনি
মেয়ের কি হন?। আমি মেয়েটার
কথা শুনে হেসে দিলাম। মেয়েটা
মনেহয় ছেলে পক্ষের কেউ হবে।
"আপু আমি
মেয়ের কিছু হইনা, আমি মেয়ের
বান্ধবীর বন্ধু। মেয়েটা আরো কিছু
বলার আগেই ঝড়ের বেগে শিউলী
এসে হাজির শিউলীর অগনি দৃষ্টি
দেখে আমার সাথে সাথে
মেয়েটাও
ঘাবড়ে গেল। আমি কিছু বালার
আগেই শিউলী মেয়েটাকে
বলে উঠল "এই মেয়ে তোমার
সমস্যা কি হুম কি চাও তুমি? "না
আপু আমি শুধু জিজ্ঞাসা করেছি
ভাইয়া মেয়ের কি হয়। "তোমার
জানা লাগবে কেন কি হয়?, যাও
এখান থেকে। মেয়েটা ভয়
পেয়ে চলে যায়, শিউলী আমাকে
ঝাড়ি দিয়ে বলে
-- এই চলেন বাসায় যাব। -
-- শিউলী মেহেদিটা শেষ করে
যাও।
-- শেষ করা লাগবে না, আসেন
আমার সাথে। শিউলী এক প্রকার
আমার হাত ধরে টেনেই ছাদ থেকে
নামিয়ে নিয়ে আসল।
শিউলীর এমন আচরণ দেখে অভাক
না হয়ে পারলাম না। এই মেয়েটার
আবার কি হল, হঠাৎ করে এমন করছে
কেন?।
.
রিক্সাতে বসে শিউলী ন সাপের
মত ফোঁস্ ফোঁস্ করতেছে, রাগে
শিউলীর চেহারা লাল হয়ে গেছে।
এমন লাল চেহারা
দেখে খুব ইচ্ছে করছে র গালটা একটু
ছুঁয়ে দিতে। কিন্তু বদ মেয়েটা যে
রাগি কখন আবার কি করে বসে
ঠিক
নাই, তাই ইচ্ছেটাকে দমন করে
রাখলাম।
.
-- কি ব্যাপার শিউলী কি হয়েছে
তোমার, এমন করছ কেন?
-- এই আপনি আমার সাথে কথা
বলবেন না।
-- আমি আবার কি করলাম।
-- আপনি ঐ মেয়ের সাথে কথা
বললেন কেন?
-- আমি কোথায় কথা বললাম, ঐ
মেয়েটাই তো এসে আমার
সাথে কথা বললো।
-- ঐ মেয়ে আপনার সাথে কথা
বলতে চাইলেই আপনার কথা
বলতে হবে কেন শুনি। তাও আবার
মিষ্টি করে হেসে
হেসে।
-- কেউ যদি আমাকে এসে কিছু
জিজ্ঞাসা করে আমি কি তার
উত্তর দিব না।
-- আমি উত্তর দিতে মানা করি
নাই, কিন্তু আপনি ঐ মেয়ের সাথে
হেসে হেসে কথা বললেন কেন?।
-- ঐ মেয়ের কথা শুনে আমার
হাসি চলে আসলে আমি কি
করব।
-- ও আচ্ছা আপনি ঐ মেয়ের সাথে
মিষ্টি করে হেসে
হেসে কথা বলবেন, তারপর ফোন
নাম্বার আদান প্রদান করবেন।
সারা রাত কথা বলবেন ডেটে
যাবেন, আমি আপনার
মতলব বুঝি না।
-- শিউলী তুমি কিসের ভীতর কি
শুরু করলা। আমি ঐ মেয়ের
ফোন নাম্বার নিতে যাব কেন?।
আর আমি যদি ঐ মেয়ের
ফোন নাম্বার নিয়ে কথাও বলি
তাতে তোমার কি?। তুমি তো
আর আমাকে ভালবাস না তাইনা,
তো তোমার এত কষ্ট লাগে
কেন?। আমার কথা শুনে শিউলী চুপ
হয়ে গেল, আমার
কাছথেকে মুখ ঘুরিয়ে
বিপরীত দিকে তাকাল। আমি
মনেহয় একটু বেশিই বলে ফেলেছি,
তবে এটা বলার ধরকার ছিল।
লুকোচুরি আর
ভাললাগে না, শিউলী যদি
আমাকে ভালবাসে তবে বলতে
সমস্যা কোথায়। আর কত লুকোচুরি
খেলবে আমার সাথে। আমার
ঝাড়ি শুনে মেয়েটি ফুঁপিয়ে
কেঁদে উঠলো। কলিজাটা
মোচড় দিয়ে উঠলো আমার। আমি
শিউলীর হাতটা আলতো ভাবে
স্পর্শ করলাম। আমার হাতের
স্পর্শে শিউলী কিছুটা কেপে
উঠলো এবং ঝাড়া দিয়ে হাতটা
সরিয়ে নিল। আমি আবার হাতটা
ধরলাম কিন্তু এবার তেমন একটা
জোর খাটালো না হাতটা
ছারিয়ে নিবার।
আমি হাত ধরাতে শিউলী আমার
দিকে ফিরে তাকাল। চোখের
কাজল লেপটে একাকার হয়ে গেছে
মেয়েটার।
লেপটে জাওয়া কাজলে শিউলীকে
ভীষন মায়াবী লাগছে।
এমন মায়বী চেহারা দেখে
নিজেকে আর কনট্রোল
করতে পারলাম না। শিউলী কিছু
বুঝে উঠার আগেই শিউলীর ঠোঁটে
ভালবাসার চিহ্ন একে দিলাম।
আর মনে মনে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম
চর খাওার জন্য, কিন্তু শিউলী
আমাকে অভাক করেদিয়ে
অভিমানী
কণ্ঠে বললো।
.
-- এই আপনি আমার হাত ধরেছেন
কেন?
-- শুধু কি হাত ধরেছি, আরো একটা
কিছু করেছি তো। শিউলী
আমার কথা শুনে লজ্জা পেয়ে
যায়। লজ্জায় কান্নায় আর
অভিমানে শিউলী কে দেখা
আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ দৃশ্য। আমি
যতই শিউলীke দেখছি ততই মুগ্ধ
হচ্ছি, এই মেয়েটার মাঝে এতো
মায়া কেন।
-- আমার হাত ছরেন।
-- না ছারব না, এই হাত ছারার
জন্য ধরিনাই।
-- তো কিসের জন্য ধরেছেন শুনি?।
শিউলী যতই হাত ছারানোর
কথা বলছে। কিন্তু সে নিজ থেকে
একটুও চেষ্টা করছে না
হাতটা ছারিয়ে নিবার।
-- কিসের জন্য ধরেছি সেটা তুমি
ভালকরেই জানো।
-- তাহলে আপনি ঐ মেয়ের সাথে
কথা বললেন কেন?
-- শিউলী প্লিজ ঐ মেয়েটাকে
আর আমাদের মাঝে এনো না।
-- কেন আনব না। আপনি জানেন,
আপনি অন্য মেয়েদের
সাথে কথা বললে আমার কতোটা
কষ্ট হয়। মনেহয় যেন
আপনি আমার কাছ থেকে হারিয়ে
যাচ্ছেন।
-- আচ্ছা বাবা স্যরি, আর হবে না।
-- না শুধু স্যরিতে কাজ হবে না,
কান ধরেন
-- ওকে, এইজে কান ধরলাম।
-- আমার কান ধরতে বলছি গাধা,
তোমার কান ধরো।।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন