সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০১৭

অনেক বেশি ভালবাসি

রিকশায় উঠে চলে যাচ্ছিলো সে।
ফোনের দিকে তাকালাম।
নিয়ম হয়ে গেছে যে যাওয়ার সময় ফোন দেবেই সে।
সামনে বসে যত ঘন্টাই কথা হোক না কেন রিকশা উঠে ওর মনে পড়েই যাবে কি কি বাকি রয়ে গেছে।
তাই ফোন দিয়ে সেগুলো বলে যাবে অনর্গল।
ফোন বাজছে কিন্তু ধরলাম না।
চলে যেতে থাকা রিকশার দিকে তাকিয়ে আছি।
হুডের পেছন দিকে সামান্য ফাঁক থাকে রিকশায়।
ওদিক দিয়েই পেছন ফিরে তাকালো।
চোখে প্রশ্ন কেন ধরছি না ফোন। উত্তর দিলাম আর অপেক্ষা নয়।
ধরলাম কল।
কি ব্যাপার কল ধরো না কেন?
তোমাকে আর একটু দেখতে ইচ্ছে হলো তাই।
মানে?
আবার কিভাবে দেখবা?
এই যে পেছন ফিরে তাকালে?
তা তো তুমি ফোন ধরছো না দেখে তাই।
জানতাম তো।
না ধরলেই তাকাবে। তখন একটু দেখবো।
ইস! কি ফাজিল!
এতো দেখেও মন ভরে না।
আসলেই ওকে বারবার দেখতে ইচ্ছে করে।
আমার কি দোষ! আগে তো কখনো এমন হয় নি।
ইদানিং হচ্ছে আর খুব বেশি হচ্ছে।
আমার জেদ আকাশ ছোঁয়া।
যা ভাববো তাই করবো।
যা চাইবো তা নিয়েই ছাড়বো।
আমি যখন ভাবি যে কোনো মানুষের সাথে আর কথা বলবো না।
আর সত্যি বলি না।
যখন কাউকে ভুলে যেতে চাই সত্যি ভুলে যাই।
ছাপ পড়ে না তাদের থাকা না থাকাতে।
ছোট ছোট অনেক ঝগড়ায় অনেককে দূরে সরিয়ে দিয়েছি।
ওর সাথে বোধহয় এই জীবনে সবচেয়ে বেশী ঝগড়া করছি।
বারবার ভেবেছি আর কথা বলবো না ওর সাথে।
এবার সত্যি ব্রেক আপ।
এবং সেই রকম ব্রেক আপ যে আর কোনোদিন চেহারা দেখবো না ওর।
সামনে যাবো না।
এমন কি ভাববো না পর্যন্ত।
ধরা যাক বিকেলে ঝগড়া হলো।
আগে দেখা যেত পরেরদিন বা আরো একদিন পরে আমার জেদ ভেঙ্গে যেত।
আমি কথা বলতে শুরু করতাম।
দেখা করার জন্য পাগল হতাম।
নিজেকে নিজে ধিক্কার দিতাম।
এই আমার জেদ! এত্তোটুকু শুধু!
মনে হতো ওর কাছে হেরে গেলাম আমি। রাগ লাগতো খুব।
আমি কেন হারবো?
পরে অবশ্য সব ভুলে যেতাম।
রাগ-জেদ আর ঝগড়া যে হয়েছে সেটাও।
এবারও তাই হলো। ভুলে গিয়ে দেখা করলাম। তারপর মিটমাট সব।
দেখতে ইচ্ছে করছে বলে ফোনটা ধরলাম না।
তাকালো আমার দিকে পেছন ফিরে। তারপর আমিও রিকশা নিয়ে নিজের পথে।
রাতে সে খোঁটা দিলো এই বলে যে আমি না কি তাকে ছেড়ে থাকতে চাই তাই ওমন করি।
ওকে কাঁদাই ইচ্ছে করে। রাগ লাগলো ভীষণ।
কখন এমন ভাবলাম আমি! কথায় কথায় আবার ঝগড়া।
ইচ্ছে হচ্ছে ফোনটা আছড়ে ভাঙ্গি। তাহলেই আর কথা বলতে পারবে না আমার সাথে।
না ভাঙ্গবো কেন?
অফ করে রাখলাম।
পাঁচটা মিনিট যেতে না যেতে থাকতে না পেরে অন করলাম।
প্রতিবার এমন ঝগড়া হলে সে মেসেজ দেয়।
সর্যি লিখবে না কখনো কিন্তু যা লেখে তাতেই শান্তি লাগে।
অন্তত দূরে তো যায় নি!
কিন্তু এবার কোনো সাড়া নেই। না পেরে আমিই মেসেজ দিলাম।
তার উত্তরে জানাল এবার সে আমাকে আর কল দেবে না, মেসেজও না।
আমি জানি ও এটা পারবেনা।
আমাকে ছেড়ে থাকবে ও? অসম্ভব।
কিন্তু তাই করলো এবার।
রাত গভীর হতে লাগলো কিন্তু ওর কোনো খবর নেই।
এমনকি আজ ফেসবুকেও আসছে না।
জেদ ধরে থাকলাম কল দেবো না আমিও।
কিন্তু যতই আমি নিজের জেদের কথা ভাবি ততই তা দুর্বল হয়।
এমন ফ্যাসাদেও মানুষ পড়ে? এদিকে ওর সাথে কথা না বলে থাকতে পারছি না।
ওদিকে সেও কল দিচ্ছে না।
হ্যাঁ আমাকে ভুলে যেতে চায়। এই জন্যই এমন করে।
বুঝেছি আমি।
তবুও কল দিলাম আমি।
ধরলো না প্রথমে।
পরের বার ধরলো, তাও চুপ।
ওই তুমি ফোন দাও না কেন?
আমি তো বললাম আমি আর তোমাকে কল দেবো না।
ওহ আচ্ছা।
এইটুকু বলে কল কাটলাম।
ঝগড়া করতে ইচ্ছে হচ্ছিলো করলাম না।
গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।
শুধু বলতে ইচ্ছে করছে ভালবাসি।
অন্য কথাগুলো গলায় আটকে যাচ্ছে।
কিন্তু আমি তো ভালবাসি বলতে পারবো না।
আমার ইগোতে লাগে।
আমি কেন আগে বলবো? ও আগে বলুক তারপর।
কিন্তু ও তো আর বলে না!
এদিকে রাত বেড়েই চলে।
সঙ্গে অস্থিরতা কি থেমে থাকে নিজের জায়গাতে?
আবার কল দিলাম।
আমি একটা গল্প লিখছি শুনবা?
(ও আমার গল্প বলা খুব পছন্দ করে।
জানি যে না বলবে না।
ইগো আর জেদ তখন অস্থিরতার কাছে বিশ্রীভাবে হেরে বসেছে।
কথা না বললে বাঁচবো না এমন লাগছে ভেতরে।)
খানিক চুপ থেকে বললো, শুনবো।
আমি শুরু করলাম গল্প বলা।
আসলে কোনো গল্প লিখি নি। যা মনে আসে তা বলতে থাকলাম।
কি যে বললাম কে জানে তবে এক সময় তা শেষ হলো।
ও পুরো সময়টা একদম চুপ রইলো।
গল্পটা খুব সম্ভবত ভালবেসে কাছে আসা আবার দূরে চলে যাওয়া নিয়ে।
কয়েকটা চরিত্রের একটায় সে শুনতে শুনতে নিজেকে কল্পনা করলো।
তারপর গল্পটা বলা শেষ হতেই বললো ওই চরিত্রটা আমাকে ভেবে তাই না?
আমি বললাম, না।
ও তো কোনো চরিত্র নয়, ও আমার বাস্তব।
বলতে হলো না মুখে।
মনের কথা মুখে ফোটার আগেই বুঝে নিলো সে। বললো, অনেক বেশি ভালবাসো আমাকে তাই না?
আমি আসলে অনেক বেশি ভালবাসি না ওকে।
অনেক কাকে বলে আমি জানি।
অনেক ভালবাসা হয় যখন দুজন সবচেয়ে দূরে যায়।
আমি ওকে ছেড়ে দূরে থাকতে পারি না।
অল্প দূরে গেলেই মনে হতে থেকে আর পারবো না দূরে থাকতে।
তবুও কখনো কখনো মিথ্যে চলে আসে মুখে।
তখন সত্যকে চাইলেই স্বীকার করা যায় না।
তাই ওকে বলতেই হলো, হ্যাঁ অনেক বেশি ভালবাসি।
সত্যটা সে রাতে বলতে পারি নি। আজ বলছি।
তোমাকে বলা মিথ্যেটা আমাকে জ্বালায়, পোড়ায়।
তোমার আমার মাঝে কোনো মিথ্যের জায়গা থাকতে পারে না।
আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালবাসি না ঐশী।
তবে যতটুকু ভালবাসি তা সত্য, সৎ।
আমি যতটা দূরে থাকতে পারি ভালবাসার টান এড়িয়ে, ততটুকুর পুরোটা ভালবাসি। আর যে দূরে যেতে পারি না সোনা।
অনেক বেশি ভালবাসতে পারি না তবে অনেক খানিই ভালবাসি...সত্যি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন