শনিবার, ১১ মার্চ, ২০১৭

এমন স্ত্রী সবার কপালে জুটেনা.

আফনান, রিয়াজ ও সিয়াম তিন বন্ধু। কলেজ পাশ করে ওরা সবাই আলাদা হয়ে যায়। 
আফনান ভার্সিটিতে ভর্তি হয়। পড়াশোনা শেষ করে ভাল বেতনের একটা চাকরি পায়। তারপর ভালবেসে সুন্দরী এক মেয়েকে বিয়ে করে।
রিয়াজ কলেজ পাশ করে আর পড়াশুনা করেনি। বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়েকে বিয়ে করে এখন ঘরজামাই থাকে। 
আর সিয়াম বিকম পাশ করার পর ছোট একটা চাকরি পায় তারপর মা বাবার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করে।
.
প্রায় বারো বছর পর একদিন সেই তিন বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে যায়। এতকাল পর দেখা, তাই তিনবন্ধু মিলে সুখ দুঃখের আলাপ করতে লাগলো..! যেহেতু তিনজনেই এখন বিবাহিত। তাই গল্প করতে করতে একটা পর্যায়ে ওরা নিজেদের বৌ নিয়ে কথা তুললো। কার বৌ কেমন..!? কার বৌ কতটুকু ভালবাসে তার হাজব্যান্ডকে...!?
.
তো প্রথমে আফনান বলতে লাগলো...
"তোদের ভাবী তো যথেষ্ঠ সুন্দরী। ভালবেসে বিয়ে করেছি আমরা। একেবারে আধুনিক একটা মেয়ে। জাষ্ট অসাম। আমি যখন তোদের ভাবীকে নিয়ে বাইরে বের হই, ওকে দেখে সবাই প্রশংসা করে। তোদের ভাবী আমাকে এতটা ভালবাসে যে, বলে শেষ করা যাবেনা। এই যেমন, আজ সকালে যখন ঘুম থেকে উঠতে গেলাম, ও আমাকে ঘুম থেকে উঠতেই দিলোনা। বললো... সারাদিন কত কষ্ট করো, আরো একটু ঘুমাও। এত তাড়াতাড়ি উঠতে হবেনা। ও এত রোমান্টিক যে, প্রায়ই ওকে নিয়ে সিনেমা হলে গিয়ে রোমান্টিক মুভি দেখতে হয়। ভালবাসায় ভরপুুর আমাদের সংসার।"
.
তারপর রিয়াজ বলতে লাগলো...
"তোদের ভাবী একজন শিক্ষিতা মেয়ে। দেখতেও অনেক সুন্দরী। বাবার একমাত্র আদরের মেয়ে। সে একটা কোম্পানিতে জবও করে। তোদের ভাবী আমাকে এত ভালবাসে যে, ওর বাবার বাড়িটা আমার নামে লিখে দিয়েছে। ঐ বাড়িতেই আছি এখন। আমাকে ও চাকরিও করতে দেয়নি। ও বলে, তুমি শুধু ঘরের কাজ করবা আর বাচ্চা কাচ্চা দেখাশোনা করবা। আমি বাসার কাজবাজ করি, খাই আর ঘুরে বেড়াই। হাহাহাহাহা..!"
.
সবশেষে সিয়াম বলতে লাগলো...
"আমার স্ত্রী তোদের স্ত্রীর মতো আধুনিকও না, স্মার্টও না। আমার স্ত্রীর সৌন্দর্য্যের প্রশংসা শুধু আমাকেই করতে হয়। কারন আমাকে ছাড়া তার সৌন্দর্য্য আর কাউকে দেখাতে সে নারাজ। তাই সে পর্দা ছাড়া ঘর থেকে বাহির হয়না। আমার প্রতি আমার স্ত্রীর ভালবাসা তোদের স্ত্রীদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। আমার প্রতি আমার স্ত্রীর ভালবাসা শুধু এই পৃথিবীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ও কি বলে জানিস..!? ও বলে... 'তোমাকে আমি এতোটাই ভালবাসি যে, পরকালেও আমি তোমাকে চাই। দুনিয়াটা তো দুইদিনের, এই দুইদিনের দুনিয়ায় তোমাকে ভালবেসে কি মন ভরে বলো..!? তাই যে জীবনের শুরু আছে কিন্তু শেষ নাই সে জীবনে আমি তোমাকে পেলে, আমার চাওয়ার আর কিছুই থাকবেনা।'
আমি ফজর নামাজের সময় নামাজ পড়তে যখন অলসতা করি, ঘুম থেকে উঠতে চাইনা, ও আমাকে ঘুমাতে দেয়না। ও আমাকে জোর করে ঘুম থেকে উঠিয়ে দেয়, তারপর নামাজ পড়তে বলে। মোটকথা ও আমাকে এক ওয়াক্ত নামাজ কাজা করতে দেয়না। ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে দুহাত তুলে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে আমার মঙ্গল কামনা করে। ও আল্লাহর কাছে একটা জিনিসই চায়। আর তা হলো.... 'হে আল্লাহ, আমি যেন আমার স্বামীকে সঙ্গে করে বেহেস্তে যেতে পারি। আর কিছুই চাইনা আমি তোমার কাছে।' 
আমি শুকরিয়া আদায় করি আল্লাহর দরবারে। এমন একজন স্ত্রী পেয়েছি আমি..!"
.
সিয়ামে মুখে কথাগুলো শুনে আফনান ও রিয়াজ যেন স্তব্ধ হয়ে গেল..! ওরা কোনো কথাই বলতে পারলোনা। যার স্ত্রী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে স্বামীর জন্য দোয়া করে, তার মতো ভাগ্যবান আর কেউ হতে পারেনা। আফনান ও রিয়াজ বুঝতে পেরেছে যে, ওদের স্ত্রীর সাথে সিয়ামের স্ত্রীর কোনো তুলনাই চলেনা।
আসলেই বর্তমান সময়ে সিয়ামের স্ত্রীর মত একজন পরহেজগার স্ত্রী সব পুরুষের কপালে জুটেনা..!?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন