বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ, ২০১৭

চুল এবং ভালোবাসা

"চুল গুলো একদমই ছোট করে দাও পিন্টুদা, যেনো হাত দিয়ে ধরা না যায়।" সজীবের এমন কথায় অবাক হয়ে যায় নাপিত পিন্টু। কারন, সজীব সবসময়ই পিন্টুর সেলুনেই চুল কাটে এবং সেভ হয়। সে থেকেই পিন্টু জানে সজীব তার চুলের প্রতি খুব বেশি যত্নশীল এবং সজীবের প্রধান সৌন্দর্য্য তার চুল। কিন্তু হঠাত করেই এইভাবে চুল কাটতে বলায় খুব চমকে যায় পিন্টু।
.
কিছুক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে সজীবের চুলগুলো নাড়াচাড়া করছে পিন্টু, কিন্তু কাটার সাহসই পাচ্ছেনা। কারন, একদিন সজীবের চুল একটু বেশি কেটে ফেলেছিলো বলে খুব ঝাড়ি খেয়েছিলো এই পিন্টুই। পিন্টু আর সজীবের সম্পর্কটা বেশ ভালোই, তাই পিন্টু সজীবকে জিজ্ঞেস করলো.....
--কি হইছে সজীব ভাই, হঠাত চুল ছোট করতে বলছেন কেনো?
--কিছুনা। তোমাকে যা বলছি, তাই করো।
--না মানে, একদিন আপনার চুল একটু বেশি ছোট করে ফেলেছিলাম বলে খুব ঝাড়ি দিছিলেন। তাই এখন কাটতে ভয় করছে।
--তোমাকে চুল কাটতে বলছি, কাটো। কেউ যেনো ধরতে না পারে এবং বলতে না পারে আমার চুল সুন্দর।
.
সজীবের এমন অদ্ভুত আচরনের হিসেবটা মিলাতে একটু কষ্ট হচ্ছিলো, তবে সজীবের চোখে পানি জমতে দেখে সমীকরণটা সহজ হয়ে গেছে পিন্টুর। হয়তো প্রেম-ভালোবাসাকে ঘিরেই এমন অবস্থা সজীবের, তাই এইবার খুব দৃঢ়ভাবেই জিজ্ঞেস করলো পিন্টু......
--সজীব ভাই, বলেন না কি হইছে? আমি বুঝতে পারতেছি আপনি কষ্টে আছেন, তবে একটু শেয়ার করলে হালকা লাগবে।
--তোমাকে বলেছিনা কিছু হয়নি, বেশি বুঝো ক্যান? চুল কাটতে বলছি কাটো।
ঝাড়ি খেয়ে চুপ হয়ে গেলো পিন্টু।
.
পিন্টুদা সজীবের চুলের এক গোছা করে কাটছে আর অন্যদিকে সজীবের চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে সমানতালে। কষ্টের সাথে সন্ধি করার কারণগুলো ভাবছিলো অশ্রুসিক্ত সজীব, ভাবছিলো রিয়া নামের মেয়েটার কথা।
রিয়ার সাথে সজীবের পরিচয়টা হয়েছিলো ফেসবুকের নীল সাদা জগতে। সজীবই রিয়াকে প্রথম বন্ধুত্বের অফার করেছিলো এবং বন্ধুত্বের পর রিয়ার সাথে প্রথম দেখাও হয়েছিলো সজীবের উদ্যোগে।
.
বন্ধু হিসেবেই বেশ কয়েকবার দেখা করা হয়ে গেছে দুজনের, তবে প্রতিবারই সজীবের চুল গুলোর ভূয়সী প্রশংসা করতো রিয়া, মাঝে মাঝে হাত দিয়ে স্পর্শও করতো আলতো করে। রিয়ার এমন আচরণে সজীব অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ভালবেসে ফেলে রিয়াকে। রিয়াকে সজীব তার মনের কথাগুলো জানালে সম্মানের খাতিরে রিয়ার উত্তরটা না বোধকই হয়, তবে ভালোবাসার মায়াজালটা তাকেও প্যাঁচিয়ে ছিলো বলেই উত্তরটা হা বোধক করে ফেলতে বাধ্য হয় রিয়া। অতঃপর দুজনের সম্পর্কটা মিষ্টি ভালবাসায় রূপ নেয় এবং একে অন্যের প্রেমে প্রেমমুগ্ধ হয়ে পড়ে।
.
দুজনের প্রায়ই দেখা হয় পার্কে কিংবা বিভিন্ন প্রকৃতি সুন্দরীর ছায়াতলে। প্রতিবারই দেখা হওয়ার পর রিয়া সজীবের চুল গুলো আলতো করে স্পর্শ করতো এবং রেগে গেলে সজীবের চুল ধরে টেনে দিতো। সজীবের চুল টানলে সে খুব রেগে যেতো, তবে রিয়ার উপর রাগ হলে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতো। কারন, রাগ উঠলে সবাই নিজের অস্তিত্বকে ভুলে যায়, এমনকি বড় কোন ক্ষতি করে ফেলতে পারে নিজেরই। তবে সজীবের সর্বোচ্চ রাগও রিয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরার মাধ্যমে হাওয়া হয়ে যেতো বলেই কোন ক্ষতি করে ফেলার ভয়ে রিয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতো সজীব। রিয়া প্রায়ই বলতো সজীবকে "তোমার চুলগুলো যতদিন থাকবে, আমিও তোমার হয়ে ততদিন তোমার থাকবো।"
.
রিয়ার সাথে সজীবের একবছরের সম্পর্কে চুল টানা, রাগ করা, জড়িয়ে ধরার কাহিনীটা শতবার অতিক্রম করে গেছে। রিয়ার পরিবার থেকে বিয়ের জন্য চাপ আসছিলো আগে থেকেই, তবে নতুন একটা বিয়ের প্রস্তাবের পর হঠাত করেই পরিবর্তন দেখা দিলো রিয়ার মাঝে। রিয়া কয়েকদিন ধরে এড়িয়ে যাচ্ছিলো সজীবকে, কারণ জানতে চাইলেও বলেনি কিছুই। রিয়া হঠাত করেই যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় সজীবের সাথে, পরিবর্তন করে ফেলে পুরনো সবকিছু। অনেক চেষ্টার পরও সজীব পারলোনা রিয়ার সাথে যোগাযোগ করতে, তবে রিয়ার এক বান্ধবীকে ফেসবুকে নক করে রেখেছিলো।
.
পরেরদিন সকালে রিয়ার বান্ধবীর রিপ্লাইয়ে আকাশ ভেঙ্গে পড়লো সজীবের মাথায়, কারণ আজই রিয়ার বিয়ে। পরিবারের সম্মানার্থে সজীবের উজাড় করা ভালোবাসাকে জলাঞ্জলি দিয়েই নিষ্ঠুর মেয়ে সেজেছে সে। তবে এখানে তার কিছু স্বার্থ তো ছিলোই, নয়তো বেশ কয়েকদিন ধরে বিয়ের কথা চলার পরও সজীবকে কিছুই জানালোনা কেনো?
এই প্রশ্নটারই উত্তরটা অনেক খুঁজেও পায়নি সজীব। এটাকে কেন্দ্র করেই দুঃখের জ্বালাটা বৃদ্ধি পাচ্ছিলো সজীবের।
.
সজীব রিয়াকে খুব বেশি ভালোবাসতো, তার প্রমাণ আগেও দিয়েছে বহুবার। তবে রিয়ার অনুপস্থিতিতেও তাকে ভালোবাসার প্রমাণস্বরূপ তার কথাটা রেখেছে সজীব। রিয়া সজীবকে বলেছিলো "চুল যতদিন থাকবে, সেও ততদিন থাকবে।"
কিন্তু আজ রিয়া অন্য কারো, তাই চুল কেটে রিয়ার কথাটার সম্মান দিলো সজীব। তাছাড়া রিয়া রাগ করে সজীবের চুল ধরতো এবং সজীবও রেগে গিয়ে জড়িয়ে ধরতো রিয়াকে, এমন কাহিনীর পুনরাবৃত্তি হবেনা বলেই চুল আর রিয়াকে স্মৃতির পাতায় রাখার সিদ্ধান্তে চোখের জলে ধুয়ে নিলো নিজেকে। কেউ যেনো চুল না ধরতে পারে কিংবা বলতে না পারে সজীবের চুল অনেক সুন্দর, সেইজন্যই চুল কেটে ফেলতেছে সজীব। কারন, কেউ চুল ধরলে কিংবা সুন্দর বললেই হয়তো রিয়ার অধিকারটা অন্য কেউ ব্যবহার করে ফেলবে এবং নষ্ট হয়ে যাবে রিয়ার স্মৃতি। এমন অদ্ভুত ভাবনায় এতো সুন্দর চুলো ভালোবাসার নামে উৎসর্গ করলো সজীব.......

২টি মন্তব্য: