বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০১৭

ভালোবাসার শেষ পরিণতি

এক গ্রামে এক মোড়ল ছিল, 
গ্রামের সব মানুষ তাকে শ্রোদ্ধা ভক্তি করতো।
সবাই তাকে পীর, গুরুজন মানতো।
গ্রামের মানুষের কাছে মোড়ল ছিল মাটির মানুষ।
.
মানুষের বিপদে আপদে মোড়ল সব সময় পাশে থাকতেন।
গ্রামে যত অন্যায় অত্তাচার হতো মোড়ল বিচার শালিস করতেন।
সবাই তার বিচার মেনে নিতো।
.
মোড়লের ধন-সম্পদ, টাকার কোন কমতি ছিলনা।
শুধু সন্তানের অভাব ছিল।
অনেক ফকির দরবেশ বাড়িতে আনলেন।
আকুতি মিনতি করলেন কোন কাজ হলোনা।
মাজারে মাজারে ঘুরলেন, শেষ পর্যন্ত মোড়লের কোন সন্তান হলোনা।
.
অবশেষে মা মরা গরীব কৃষকের মেয়ে নিয়ে আসলেন।
জন্মের ১ দিন পরে তার মা মারা যায়।
মোড়ল তার নাম রাখলেন (সাদিয়া)
.
আজকে মোড়লের বাড়ি আলোকিত হলো।
পূর্ণতা পেল। সবাই হাসি খুশিতে মাতামাতি।
মোড়ল গ্রামের মানুষদের, আত্মীয় স্বজন দের দাওয়াত দিলেন।
সব কিছু ধুমধাম করে আয়োজন করা হলো। মনে হচ্ছে এ যেন বিয়ে বাড়ি।
.
অন্যদিকে সাদিয়া ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলো। মোড়ল কখনো বুঝতে দিতনা যে সাদিয়া তাদের পালিত মেয়ে।
 সাদিয়া কোন কিছুর কমতি পেতনা, চাওয়া মাত্র পেয়ে যেত।
সাদিয়া পড়াশুনায় অনেক ভাল ছিল।
.
স্কুল জীবন পেরিয়ে কলেজ জীবনে পা রেখেছে।
সাদিয়া নিয়মিত কলেজে যেত।
কলেজে রনি নামের একটি ছেলের সাথে সাদিয়ার পরিচয় হয়।
রনি দেখতে খুব স্মাট, হিরোদের মতো চেহারা ছিল।
যেন কোন মেয়ে রনি কে দেখে ক্রাশ খেত।
.
সাদিয়া আর রনির বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে অনেক গভীরে চলে যায়।
কেউ কাউকে ছাড়া এক মহুত্ব থাকতে পারতোনা।
মনে মনে তারা দুজন দুজনকে পছন্দ করতো, কিন্তু কেউ কাউকে বলতো না।
.
ফেব্রুয়ারি মাস, কিছুদিন পড়ে ভ্যালেনটাইন ডে, ভালোবাসা দিবস।
ভালোবাসা দিবসে, সাদিয়া রনি কলেজ মাঠে দেখা করে। সাদিয়া রনিকে প্রপোজ করে।
সেই থেকে তাদের ভালবাসা শুরু।
সাদিয়া রনি মাঝে মাঝে পার্কে, সিনেমা হলে, হোটেলে যেত।
.
যত টাকা লাগতো সব সাদিয়া ই দিতো।
 রনি প্রায় সাদিয়ার কাছে থেকে টাকা নিতো। সাদিয়া কোন কিছু না বলে ই টাকা দিয়ে দিতো।
এ রকম চলতে চলতে সাদিয়া রনির এইচএসসি ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হলো।
সাদিয়া রনির পরিবার তাদের প্রেমের কথা জেনে গেল।
সাদিয়ার বাড়ি থেকে বাহিরে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল।
.
রনি যে নেশা করতো সাদিয়া তা জানতো না।
রনি পেনসিডিল, ইয়াবা, হিরোইন সহ সব ধরনের নেশা করতো।
আর এই জন্য সাদিয়ার কাছে থেকে রনি মাঝে মাঝে ই টাকা নিতো।
.
বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে সাদিয়া রনি পালিয়ে বিয়ে করে।
সাদিয়া কিছু গহনা আর পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসে। বিয়ের এক মাস তাদের সংসার ভালই চলছিল।
.
রনি এখন মাঝে মাঝে অনেক রাত করে বাসাই ফেরে। মদ খেত, নেশা করতো, মাতাল হয়ে আসতো।
সাদিয়া অনেক বার বাড়ন করতো কিন্তু কোন কাজ হতোনা।
.
এই দিকে সব টাকা শেষের পথে।
রনি টাকার জন্য সাদিয়ার উপরে অত্তাচার শুরু করলো।
সাদিয়া অত্তাচার সহ্য করে থাকতে লাগলো।
.
একদিন গভীর রাতে রক্ত মাখা শরীরে রনি বাসাই ফিরলো।
পরে জানতে পারা গেল এক লাখ টাকার বিনিময়ে রনি মানুষ খুন করে।
গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রনি কে পুলিশ গ্রেফতার করে।
এক বছর পরে রনির জাবতজীবন কারাদন্ড হয়ে যায়।
শেষ হয়ে যায় সাদিয়ার নিষ্পাপ ভালবাসা।
.
গল্পটি কাল্পনিক হলে ও আমাদের সমাজে হাজার হাজার সাদিয়া রনির জীবন ভিন্য দিক থেকে মিল পাওয়া যায়। শুধু চেহারা স্মাট থাকলে হয়না।
সাদিয়ার মতো মেয়েদের একবার প্রেমে পড়ার আগে ভাবা উচিত, সেই ছেলে/মেয়েটি কেমন, তার আচার ব্যবহার কেমন, তাদের বংসো মর্যাদা কেমন।
সব কিছু ভেবে তাদের প্রেমে পড়া উচিত।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন