পড়ন্ত দুপুর গড়িয়ে বিকেলের শুরু,হালকা তেজ দিচ্ছে
এখনো সূর্যটা,আজ দুমাস পর তাসফিন এই তপ্ত নগরে
পা রেখেছে,অতীতের কথা মনে পরতেই প্রিয় সেই
সাইকেলটা নিয়ে বেরিড়ে পরল চিরচেনা সেই
প্রিয় জায়গাটির উদ্দেশ্য,
পাথরের উচু ছোট পাহাড়ের মত স্তুপ,পাশে বালুর
স্তুপ,নিচে সবুজ ঘাস,সামনের দিকে একটা বয়ে
যাওয়া হালকা স্রোতের ছোট্ট একটা নদী আর উপরে
খোলা আকাশ,চারপাশটা গাছ দিয়ে ঘেরা,এই
জায়গাটা তাসফিনের সবথেকে প্রিয়
জায়গা,আসলে এই জায়গাটার সাথে মিশে আছে শত
সৃত্মি,একটা মিলনের গল্প,শত দুষ্টামি,মধুর
মুহুর্ত,অভিমানের ক্ষনিকা আর একটা "বাধভাঙ্গার
নির্মম আওয়াজ"।
কালো পিচঢালা নতুন রাস্তাটা ধরে হালকা গতিতে
সাইকেল চালাচ্ছিল,হঠাৎ চোখ পরে পাশে ছোট্ট
নির্জন গলিটার দিকে,আরে এতো খালিদ
ভাইয়া,তাসফিনের চাচাতো ভাই!
-ভাইয়া
-আরে তাসফিন কেমন আছিস
-হু ভাইয়া ভা...
এ পর্যন্ত বলতেই মুখটা বাকরুদ্ধ হয়ে গেল ওর,কারণ
তখনি চোখ পরছিল খালিদের পাশে থাকা মেয়েটার
দিকে,ও বাকরুদ্ধ হয়ে যায়,মেয়েটা ওর দিকে
তাকাতেই ছোট্ট একটা রহস্যময় হাসি
দিয়ে,একফোটা অশ্রুর বিসর্জন দেয়
মনের ভিতরটা কেপে উঠে,একটু অবাক হতে চায়
কিন্তু না খালিদ ভাইয়াকে কিছু বুঝতে দেয়া
যাবেনা,তাই মুখটা স্বাভাবিক রেখেই কিছু না বলে
সাইকেলটা পাশে নিয়ে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে
চলে!
খালিদ কয়েকবার ওরে ডাক দেয়,শুনেও ফিরে
তাকালো না,খালিদ একটু অবাক হয় ওর এরকম
অদ্ভুতুড়ে আচরন দেখে।
এদিকে খালিদের পাশা থাকা মেয়েটি অর্থাৎ ইশা
তাসফিনকে দেখেই দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে
মিশে যায়,হাত কাপছে,পা দুটো নড়বড়ে,হার্টবিট
বেড়ে যাচ্ছে,কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে,খালিদ
ফিরে তাকাতেই ইশাকে এ অবস্থায় দেখে চমকে
উঠে
-আরে ইশা কি হয়েছে তোমার?
-(ইশা নিশ্চুপ)
আবারো খালিদ বলল
-তুমি কি অসুস্থ? কি হয়েছে এমন কাপঁছো কেন?
-তাতাতাতাসফিন
-হ্যা ও তাসফিন,আমার চাচাতো ভাই
-ওওও এএএখানে এল কি করে? ওর তো এএএখানে
থাথাকার কথা না!
-তুমি চিনো ওকে? আর এমন তোতলাচ্ছো কেন?
ইশা আর কিছু বলতে পারলো না,হুহু করে কেদে
যাচ্ছে,খালিদ কিছুই বুঝতে পারছেনা,হঠাৎ করেই
ইশা তাসফিইইইন বলে চিৎকার দিয়ে,হাটতে শুরু করল।
নাহ,ইশা তাসফিনকে দেখতে পাচ্ছেনা
রাস্থাতে,তার মানে ও চলে গিয়েছে,
খালিদ দৌড়ে আসলো
-ইশা! কি হচ্ছে এসব? আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা
হ্যা,খালিদের না বুঝতে পারারই কথা কারণ খালিদ
জানেনা একটা নির্মম অতীতের কথা একটা
বাধভাঙ্গার কড়াল শব্দের কথা,যেটা ঘটে ছিল ইশা
আর তাসফিনের সাথে।
=>দেড় বছর আগে.....
একটা বৃষ্টির দুপুর,ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে আজ,ইশা স্কুল
থেকে ফিরছে,ছাতাটা ধরে,বৃষ্টির পানিতে চকচক
করা কালো পিচ ঢালা পথে জুতা খুলে খালি পায়ে
হাটছে,বৃষ্টির দুপুর এমন ঠান্ডা রাস্থাতে খালি
পায়ে হাটাটা ইশার একটা নেশা বলা যেতে পারে।
এদিকে তাসফিন একটা দেয়ালের আড়ালে দাড়িয়ে
আছে কোনরকম বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা
পেতে,হঠাৎ ওর চোখ পরে ইশার দিকে..
-এই যে আপু!
ইশা এদিকে ওদিক তাকালো,কাউকে দেখতে
পাচ্ছেনা!
তাসফিন দেয়ালের আড়াল থেকে বের হয়ে দৌড়ে
ইশার ছাতার নিচে গিয়ে দাড়ালো!
-আরে আরে,কে আপনি?আমার ছাতার নিচে
দাড়িয়েছেন কেন হা?
-উহু,এত প্রশ্ন করেন কেন? ছাতাতে আমাকে দিন
আমি বাসায় যাবো!
-এটা কেমন আবদার! আপনাকে চিনি না আপনাকে
ছাতা দিব কেন? আর আমি বাসায় যাবো কি করে?
-ওত চেনা লাগবেনা,কালকে ঠিক এই সময়ে এখানে
আসবেন ছাতা নিতে
এই বলে তাসফিন ছাতাটা ইশার হাত থেকে কেড়ে
নিয়ে,দিল এক দৌড়,ইশা একদম কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে
গেল!
আরে ছেলেটা কি পাগল নাকি আমার ছাতাটা
নিয়ে পালালো,কি রকম অদ্ভুত ছেলে! আচ্ছা ও
আমার ছাতাটা চুরি করেনি তো! নাহ দেখে তো তা
মনে হচ্ছে না,যাক কাল এখানে আসলেই ব্যপারটা
বুঝা যাবে
ইশা বিড়বিড় করে কথাগুলো বলল!ওর সবথেকে অবাক
লাগছে ছেলেটার অদ্ভুদ কান্ডের কথা ভেবে,ইশা
হাসবে নাকি কান্না করবে বুঝতে পারছেনা।
=>পরেরদিন দুপুরে....
অনেক্ষন ধরে ইশা দাড়িয়ে আছে ছেলেটার আসার
অপেক্ষায়,আর ছাতাটা ফিরে পাবার
আশায়,আজকের দুপুরটা হালকা তপ্ত,হালকা শীতল।
ইশা বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিল! এবার ইশা ভেবে নিল,ওর
ছাতাটা সত্যিই আর পাবেনা,ছেলেটাকে মনে মনে
প্রচন্ড বকা দিয়ে ফিরে যাচ্ছিল,এমন সময় পিছন
থেকে তাসফিন ডাক দিল
-এই যে আপু! যাচ্ছেন কোথায়? ছাতাটা নিয়ে যান
ইশা পিছনে ফিরে তাকাতেই ছেলেটাকে দেখতে
পেল!ছেলেটাকে দেখে প্রচন্ড রাগ হল,ইচ্ছে করছিল
দুটো মারতে,কিন্তু সাহস পায়নি বলে ওর দিকে
তাকিয়ে বলল
-ওহহ আপনি এসেছেন,দিন দিন আমার ছাতা ফেরত
দিন,বাব্বাহ আপনার মত পাগল আমি জীবনেও
দেখিনি।
-জীবনটা তো কেবল শুরু,তাতেই একদম জীবনেও বলে
ফেললেন!
-আপনার দার্শনিকতা থামান,নাম কি আপনার হা?
-মুড নেই আজ,পরে একদিন বলবো টা টা
-আরে দাড়ান!
এইটুকু বলার আগেই তাসফিন উদাও
আরে ছেলেটা কেমন অদ্ভুত! নিজের নাম বলতেও
আবার কারো মুড লাগে নাকি! উফফ কেমন অসহ্য
একটা ছেলে।
ইশা একটুকু ভেবেই প্রাইভেটের দিকে পা
বাড়ালো,বারবার ছেলের কান্ডগুলো ওর মনে পরছে
আর হাসি পাচ্ছে,অনেকবার চেষ্টা করা সত্ত্বেও
ওর ঘটনাগুলো মাথা থেকে সড়াতে পারছিল না ইশা!
পড়া থেকে বের হবার পর ওর বান্ধবীদের সাথে
একসাথে যাচ্ছিল ইশা,মধ্যপথে হঠাৎ করে দেখতে
পায়,সেই ছেলেটা একটা পাঞ্জাবী পরে রাস্থায়
কি যেন তাকিয়ে দেখছে আর হাটছে,ও ছেলেটাকে
ডাক দিল
-এই যে পাঞ্জাবী!
তাসফিন ঘুরে ফিরে তাকালো,দেখন এখানে তো আর
কেউ পাঞ্জাবী পরা নেই,তার মানে ওকেই ডাক
হচ্ছে! সামনে তাকাতেই ইশাকে দেখতে পেল সাথে
আরো ১০-১২ টা মেয়ে! তাসফিন ভাবল,মেয়েটা কি
ওকে মারতে এল নাকি দলবল সহ,কালকের ঘটনার
প্রতিশোধ নিতে,ও একটু থমকে গেল,আবার ভাবল যাক
মেয়েদের মার খাওয়া এটাও একটা অভিঞ্জতা যা
সবার জীবনে আসেনা.নরম হাতের কিল,ঘুসি থাপ্পর
আহা কত্ত ফিলিংস!
-এই যে মিস্টার পাঞ্জাবী,এত কি ভাবছেন? এখন কি
নাম বলার মুড আছে?
-ও হ্যা হ্যা,মুড তো আসতেই হবে যেভাবে দলবল
নিয়ে আসছেন,মুড না এসে পারে কি করে
-এত বেশি বকবক না করে,নামটা বলুন তো।
-আমি তাসফিন!
-আমি ইশা,সেদিন আমার ছাতা নিলেন কেন?
-আমি বৃষ্টিতে ভিজতে পারিনা,ভিজলেই ঠান্ডা
লাগে,জ্বর আসে
-তাই বলে,অচেনা অজানা একটা মেয়ের ছাতা
নিবেন? তাও কিছু না বলে হাত থেকে কেড়ে নিয়ে
দৌড়াবেন?
-কেড়ে না নিলে কি আপনি দিতেন? আর আপনাকে
আগে কয়েকবার দেখছি এই পথে তাই আমার অচেনা
লাগেনি!
-আচ্ছা আপনি কি পাগল নাকি? এমন অদ্ভুত অদ্ভুত
কাজ করেন!আমি সেদিন ভিজে গিয়েছিলাম,তা
জানেন আপনি?
-আপনার তো বৃষ্টিতে ভিজতে আনন্দ লাগে,আপনি
তো বৃষ্টিবিলাসী তাই আমি ছাতা নেওয়াতে
আপনার তো আনন্দ লেগেছিল
ইশা আবারো অবাক হয়ে গেল,ছেলেটা কি করে
জানলো ওর বৃষ্টিতে ভিজতে আনন্দ লাগে,ও কি
করে জানলো সেদিন ওর কিছুটা আনন্দও
হয়েছিল,ইশা তাসফিন কে বলল
-আপনি জানলেন কি করে? আমার বৃষ্টিতে ভিজতে
ভাল লাগে
-সেদিন আপনাকে খালি পায়ে হাটতে
দেখছিলাম,ছাতার বাহিরে হাত দিয়ে পানি স্পর্শ
করতে দেখেই বুঝছি!
-ওহহও,নাহ পাগল হলেও একটু আধটু বুদ্ধিও আছে
-হ্যা তা তো আছেই
এইটুকু বলেই তাসফিন আবার হাটা শুরু করল,ইশা
ডাকলো ও কর্নপাত করলো না,আপনমনে হেটে
চলছে,ইশা অদ্ভুদ পাগল এই ছেলেটার সন্ধানী চোখে
হাটার দৃশ্য দেখছে,কেমন একটা ভাল লাগা তৈরি
হয়েছে ইশার,তাসফিনের প্রতি,সেটা কিসের ভাল
লাগা তা বুঝতে পারছেনা,তবে ভাল লাগে সেটা
বুঝতে পারছে
বান্ধবীদের ডাকে ইশা সম্বিত ফিরে পেল,ওদের
সাথে তাসফিনকে নিয়ে হাসাহাসি করে বাসায়
ফিরল,আজ কেন জানি কিছুতেই পড়াতে মত বসছে না
বারবার তাসফিনের ঘটনাগুলো মনে পরছে,ইশা বুঝতে
পারলো ওর সাদা কালো জীবনে তাসফিন
রঙ্গিনত্বের একটা ছাপঁ একে দিয়েছে,এরপর থেকে
ইশার প্রায় প্রত্যেকদিনই তাসফিনের সাথে দেখা
হত,ইশা তাসফিনকে ডেকে কথা বলতো,তাসফিন
অল্টাইম রহস্যময়,ইশা এই রহস্য ভেদ করতে বারবার
তাসফিনের মাঝে ডুবতো,
"মেয়েদের অদ্ভুত গম্ভীর রহস্যময় ছেলেদের প্রতি
একটা গভীর আকর্ষন থাকে,রহস্যভেদ করতে গিয়েই
এসব ছেলে মাঝে ডুবে আর ভাল লাগে থেকে
অজান্তেই প্রেমে পরে যায়" যেমনটা ইশার সাথেও
হয়েছিল,তাসফিন সবসময় অদ্ভুত কাজ করতো কখনো
হঠাৎ হাটা থামিয়ে দাড়িয়ে যেত,কখনো সন্ধানী
চোখে তাকাতো,কখনো ইশার অর্ধেক খাওয়া
আইচক্রীম ওর হাত থেকে নিয়ে খেতে শুরু করে
দিত,কখনো খুব চুপ হয়ে যেত!
এগুলো ইশাকে খুব আকর্ষন করতো...
-আচ্ছা,তাস্ফি তোমার প্রিয় কোন জায়গা আছে?
-হ্যা আছে তো,আমার অনেক প্রিয় একটা জায়গা
আছে
-আমাকে নিয়ে যাবে একদিন?
-হ্যা কোন এক পড়ন্ত বিকেলে নিয়ে যাবো
-কোন এক লাগবে না কালকেই নিয়ে যাবে
-হু নিব আনে
-এইত্ত গুড বয়
-আমি তো বরাবরই গুড বয়
নিজের ঢোল নিজে বাজিও না
-নিজের ঢোল নিজে বাজানোও ভাল,অন্য কাউকে
দিলে যদি ফাটিয়ে ফেলে!
-তোর সাথে যুক্তিতে কে পারবে
-তাহলে আবার লাগতে আসো কেন
-হয়েছে থামো,এবার আমি বাসায় যাবো,কাল
আমাকে নিয়ে যেতেই হবে
-আচ্ছা যাও,টা টা
পরের দিন বিকালে তাসফিন ওর প্রিয় সেই
জায়গাটিতে নিয়ে গেল,ইশা দেখে একদম মুগ্ধ হয়ে
গেল! শহরের ভিতরেও এমন নিবিড় প্রাকৃতিক
সৌন্দর্য আর এমন একটা জায়গা থাকতে পারে ও
ভাবতেই পারছেনা,আসলে এমন জায়গা তাসফিনের
মত অদ্ভুত ছেলেই খুজে বের করতে পারে,
-তাস্ফি!
-হু বল
-তুই এমন জায়গা খুজে পাও কি করে?
-জানিনা,জায়গা গুলো নিজেরাই এসে আমাকে ধরা
দেয়
-তা তো দিবেই,তাস্ফি বলে কথা
-হ্যা চল,ওই পাথরের উপরে উঠি
-আমি ওত উপরে উঠতে পারবোনা বাব্বাহ
-আরে চল,আমি হেল্প করবোনে
তাসফিন ইশার হাত ধরে আস্তে আস্তে একে নিয়ে
পাথরের উপরে উঠছিল,ইশা আরে শক্ত করে তাস্ফির
হাতটা ধরছে,ইশার ইচ্ছে করছে সারাটি জীবন
এভাবে হাত ধরে পাথরের স্তুপ পারি দিতে,কতক্ষন
পরই ওরা উপরে পৌছে গেল,উপরে উঠে বসতে ইশা
আরো অবাক হল খোলা আকাশ,হিমেল
বাতাস,চারদিকের সবুজতা,নদীর পানির চলতার শব্দ
শুনে,তাসফিনের পাশে ইশা বসা ইশা এখনো
তাসফিনের হাতটা ছাড়েনি,শক্ত করেই ধরে আছে
-এই যে ইশাপু,এবার তো হাতটা ছাড়েন!
ইশা একটু লজ্জা পেল তাস্ফির কথাতে,তবুও হাত
ধরেই আছে,ইশা বলল
-হাত নিয়ে এত ভাব দেখান লাগেনা,আরেকটু ধরলে
কি হবে হু? আমার ছাড়বো না
-আরে এটা কি মামা বাড়ির আবদার নাকি?
-না এটা তাস্ফির পাথুরে বাড়ির আবদার
-যত্তসব
-তাস্ফি একটা কথা
-হু বল
-ভয় করে খুব
-আরে ভয় কিসের বলে ফেল
ইশা কাপঁকাপাঁ কন্ঠে বলল
-আমাকে এভাবে তোমার হাতটা ধরে থাকবে দিবে?
একদম সারাটি জীবন
তাস্ফি যেন কেপেঁ উঠলো,তবুও ও ইশাকে বলল
-হ্যা,তোর বিয়ের পূর্ব পর্যন্ত এভাবে ধরিস,বিয়ের
পর বরের হাত ধরবি
-তুমি কি বর হতে পারো না আমার?
-ইশা আমি তোর তাস্ফি,তোর বেস্ট ফ্রেইন্ড,আমি
এমনটা কখনো ভাবিনি
-কিন্তু আমি তো ভেবেছি তাস্ফি
-এমনটা করিসনা তুই
আগে বল আমাকে কি ভালবাসিস না?
-জানি না,তবে বন্ধু যেহেতু তাই প্রচন্ড ভালবাসি
-কথাটা ঘুরাবিনা একদম,যেটা বলতে বলছি সেটা
বল!কি হল বল,
এই বল ইশা তাস্ফিকে ধরে আস্তে করে নাড়া দিল
তাস্ফি কতক্ষন চুপ থেকে বলল
-হু,একটু
ইশার মুখটা উজ্জল হয়ে উঠলো,ও একদম থমকে গেল
তাস্ফির সাড়া পেয়ে,আবার বলতে শুরু করল
-সেই একটু কতটুকু?
-জানিনা,তবে জানি সেই একটু এই পাথরগুলোর
থেকেও বেশি
-ও তাস্ফি
-জ্বি ইশু
-ভালবাসি
-ভালবাসি ইশু
শুরু হল নতুন একটা মিলনের গল্প,নতুন একটা সপ্ন,নতুন
কতগুলো আকাঙ্খা...
এরপর প্রতিদিন ইশা আর তাসফিন ওই জায়গাটায়
যেত,তাসফিনের অদ্ভুত কর্মকান্ড যায়নি কিন্তু ইশার
কাছে এখন আর রহস্য লাগেনা তাস্ফিকে নিজেরই
মনে হয়,এভাবে ওদের সম্পর্কটা চলতে
থাকে,প্রতিদিন এই জায়গাটায় আসতো,তাস্ফির হাত
ধরে ইশা পাথরের উপরে উঠতো,একদিন হঠাৎ করে
তাসফিনের খোজ পাওয়া যাচ্ছিল না,তাসফিন একা
একা একটা দুরে জঙ্গলে চলে গিয়েছিল,কিন্তু কেন
গিয়েছিল সেটা ও নিজেও বুঝতে পারেনি,তাসফিন
যাওয়ার পর প্রতিদিন ইশা অপেক্ষা করতে একা
একাই পাথরের উপর উঠতো,সৃত্মিগুলো ভেবে
কাদতো,এভাবে পাচটি মাস কেটে গেল তাসফিন
ফিরলো না,ইশা প্রায় পাগলের মত তখনি খালিদের
আগমন ওর জীবনে,ইশার এই দুর্বল মূহুর্তে,এই
শূণ্যতায়,পাশে একজনে প্রয়োজন,তাই খালিদকে
অনিচ্ছা সত্ত্বেও মনকে জোড় করে ভাল লাগাতে
শুরু করে।
আজ তাসফিন একবছর পর আবার ফিরছে,ইশার থেকে
খালিদ পুরো ঘটনা শুনো নির্বাক হয়ে গেল,খালিদ
ইশাকে প্রচন্ড ভালবাসে আর ইশা আজ আবার
তাসফিনকে দেখে ভেঙ্গে পরছে,ইশা খালিদকে
নিয়ে দৌড়ে দৌড়ে সেই জায়গাতে ছুটে
চলে,তাসফিন পাথরের উপরে শুয়ে সাদা মেঘ
দেখছে আর চোখ দিয়ে বৃষ্টি জরাচ্ছে
ভাবছে একটা পাগলামির কারণে জীবনের কত কিছু
হারালো! ইশু কি আর ফিরে আসবেনা? আচ্ছা
খালিদ ভাইয়া কে কি সত্যিই ও ভালবাসে? কিন্তু
ইশু তো এমনটা করতে পারেনা! আচ্ছা কার হাত ধরে
আমি এই পাথরের উপরে উঠবো? কে ক্লান্ত শরীর
আমার উপরে ছেড়ে দিবে? কার অর্ধেক খাওয়া
আইচক্রীম নিয়ে খাবো? এসব ভাবছিল তাসফিন এর
মধ্যে ইশা পাথরের উপরে উঠে তাসফিনকে ডাক
দিল
-তাস্ফিইই
তাসফিন ফিরে তাকাতেই ইশা তাসফিনকে ধরে বলল
-কোথায় ছিলে তুমি এতদন?হঠাৎ কোথা হতে আসলে?
তুমি এমন করে না বলে কেন চলে গিয়েছিলে
-তাসফিন নিশ্চুপ ওর বলার কোন ভাষা নেই
-জানো,কত অপেক্ষা করছি তোমার জন্য,আমার কথা
কি মনে পরে নাই তোমার? আমি আজ খালিদকে
কেন জানি ভালবেসে ফেলেছি,কিন্তু আমি
তোমাকে ভুলবো কি করে?
তাসফিন এবার মুখ খুললো
-ইশু,খালিদ ভাইয়াকেই গ্রহন কর,আমি তো এমনিতেই
তোমার কাছে নিখোজ ছিলাম,ভুলে যাও আমাকে
-কিন্তু তাস্ফি তুমি তো ফিরে এসেছো
-ইশু আমি একটা পাগল,আমার জীবনে এসে তুমি সুখ
করতে পারবেনা
-আমার সুখ চাইনা তোমাকে চাই
কিন্তু খালিদ ভাইয়া?
-তাতাতাকেও ভালবাসি,কি করব আমি বুঝতে
পারছিনা
-খালিদ ভাইয়া!
-হ্যা তাস্ফিন {খালিদ}
খালিদ আসতেই তাসফিন ইশার হাত ধরে খালিদের
হাতের মধ্যে দিয়ে,ইশাকে বলল
-শক্ত করে খালিদ ভাইয়ার হাত ধরো
ইশা চেষ্টা করল কিন্তু ইশা পারলো না,তাসফিন
আবারো একটি রহস্যময় হাসি দিয়ে দুফোটা অশ্রু
ফেলে বলল "ইশু ভালবাসি"
এটা বলার পরই পাখর গুলো যেন তাসফিনকে টেনে
নিল,ইশা খালিদ তাসফিন বলে চিৎকার দিল,কিন্তু
তাসফিন তো হারিয়ে গেছে পাথরের গহব্বরে,শুধু
পাথরের মাঝে ভেসে উঠে ওর রহস্যময় হাসিটা,ইশা
খালিদের বুকে মাথাটা রেখে চোখের জলের স্রোত
বহাচ্ছে।
তাসফিনের সাইকেলটা পরে আছে পাশেই,
নাহহ ছেলেটা রহস্যই রয়ে গেল...
ইশার দুচোখে তাসফিনের রহস্যময় হাসি আর চিত্তে
খালিদ।
হঠাৎ শক্ত করেই খালিদের হাতটা চেপে ধরলো ইশা।
এখনো সূর্যটা,আজ দুমাস পর তাসফিন এই তপ্ত নগরে
পা রেখেছে,অতীতের কথা মনে পরতেই প্রিয় সেই
সাইকেলটা নিয়ে বেরিড়ে পরল চিরচেনা সেই
প্রিয় জায়গাটির উদ্দেশ্য,
পাথরের উচু ছোট পাহাড়ের মত স্তুপ,পাশে বালুর
স্তুপ,নিচে সবুজ ঘাস,সামনের দিকে একটা বয়ে
যাওয়া হালকা স্রোতের ছোট্ট একটা নদী আর উপরে
খোলা আকাশ,চারপাশটা গাছ দিয়ে ঘেরা,এই
জায়গাটা তাসফিনের সবথেকে প্রিয়
জায়গা,আসলে এই জায়গাটার সাথে মিশে আছে শত
সৃত্মি,একটা মিলনের গল্প,শত দুষ্টামি,মধুর
মুহুর্ত,অভিমানের ক্ষনিকা আর একটা "বাধভাঙ্গার
নির্মম আওয়াজ"।
কালো পিচঢালা নতুন রাস্তাটা ধরে হালকা গতিতে
সাইকেল চালাচ্ছিল,হঠাৎ চোখ পরে পাশে ছোট্ট
নির্জন গলিটার দিকে,আরে এতো খালিদ
ভাইয়া,তাসফিনের চাচাতো ভাই!
-ভাইয়া
-আরে তাসফিন কেমন আছিস
-হু ভাইয়া ভা...
এ পর্যন্ত বলতেই মুখটা বাকরুদ্ধ হয়ে গেল ওর,কারণ
তখনি চোখ পরছিল খালিদের পাশে থাকা মেয়েটার
দিকে,ও বাকরুদ্ধ হয়ে যায়,মেয়েটা ওর দিকে
তাকাতেই ছোট্ট একটা রহস্যময় হাসি
দিয়ে,একফোটা অশ্রুর বিসর্জন দেয়
মনের ভিতরটা কেপে উঠে,একটু অবাক হতে চায়
কিন্তু না খালিদ ভাইয়াকে কিছু বুঝতে দেয়া
যাবেনা,তাই মুখটা স্বাভাবিক রেখেই কিছু না বলে
সাইকেলটা পাশে নিয়ে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে
চলে!
খালিদ কয়েকবার ওরে ডাক দেয়,শুনেও ফিরে
তাকালো না,খালিদ একটু অবাক হয় ওর এরকম
অদ্ভুতুড়ে আচরন দেখে।
এদিকে খালিদের পাশা থাকা মেয়েটি অর্থাৎ ইশা
তাসফিনকে দেখেই দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে
মিশে যায়,হাত কাপছে,পা দুটো নড়বড়ে,হার্টবিট
বেড়ে যাচ্ছে,কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে,খালিদ
ফিরে তাকাতেই ইশাকে এ অবস্থায় দেখে চমকে
উঠে
-আরে ইশা কি হয়েছে তোমার?
-(ইশা নিশ্চুপ)
আবারো খালিদ বলল
-তুমি কি অসুস্থ? কি হয়েছে এমন কাপঁছো কেন?
-তাতাতাতাসফিন
-হ্যা ও তাসফিন,আমার চাচাতো ভাই
-ওওও এএএখানে এল কি করে? ওর তো এএএখানে
থাথাকার কথা না!
-তুমি চিনো ওকে? আর এমন তোতলাচ্ছো কেন?
ইশা আর কিছু বলতে পারলো না,হুহু করে কেদে
যাচ্ছে,খালিদ কিছুই বুঝতে পারছেনা,হঠাৎ করেই
ইশা তাসফিইইইন বলে চিৎকার দিয়ে,হাটতে শুরু করল।
নাহ,ইশা তাসফিনকে দেখতে পাচ্ছেনা
রাস্থাতে,তার মানে ও চলে গিয়েছে,
খালিদ দৌড়ে আসলো
-ইশা! কি হচ্ছে এসব? আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা
হ্যা,খালিদের না বুঝতে পারারই কথা কারণ খালিদ
জানেনা একটা নির্মম অতীতের কথা একটা
বাধভাঙ্গার কড়াল শব্দের কথা,যেটা ঘটে ছিল ইশা
আর তাসফিনের সাথে।
=>দেড় বছর আগে.....
একটা বৃষ্টির দুপুর,ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে আজ,ইশা স্কুল
থেকে ফিরছে,ছাতাটা ধরে,বৃষ্টির পানিতে চকচক
করা কালো পিচ ঢালা পথে জুতা খুলে খালি পায়ে
হাটছে,বৃষ্টির দুপুর এমন ঠান্ডা রাস্থাতে খালি
পায়ে হাটাটা ইশার একটা নেশা বলা যেতে পারে।
এদিকে তাসফিন একটা দেয়ালের আড়ালে দাড়িয়ে
আছে কোনরকম বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা
পেতে,হঠাৎ ওর চোখ পরে ইশার দিকে..
-এই যে আপু!
ইশা এদিকে ওদিক তাকালো,কাউকে দেখতে
পাচ্ছেনা!
তাসফিন দেয়ালের আড়াল থেকে বের হয়ে দৌড়ে
ইশার ছাতার নিচে গিয়ে দাড়ালো!
-আরে আরে,কে আপনি?আমার ছাতার নিচে
দাড়িয়েছেন কেন হা?
-উহু,এত প্রশ্ন করেন কেন? ছাতাতে আমাকে দিন
আমি বাসায় যাবো!
-এটা কেমন আবদার! আপনাকে চিনি না আপনাকে
ছাতা দিব কেন? আর আমি বাসায় যাবো কি করে?
-ওত চেনা লাগবেনা,কালকে ঠিক এই সময়ে এখানে
আসবেন ছাতা নিতে
এই বলে তাসফিন ছাতাটা ইশার হাত থেকে কেড়ে
নিয়ে,দিল এক দৌড়,ইশা একদম কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে
গেল!
আরে ছেলেটা কি পাগল নাকি আমার ছাতাটা
নিয়ে পালালো,কি রকম অদ্ভুত ছেলে! আচ্ছা ও
আমার ছাতাটা চুরি করেনি তো! নাহ দেখে তো তা
মনে হচ্ছে না,যাক কাল এখানে আসলেই ব্যপারটা
বুঝা যাবে
ইশা বিড়বিড় করে কথাগুলো বলল!ওর সবথেকে অবাক
লাগছে ছেলেটার অদ্ভুদ কান্ডের কথা ভেবে,ইশা
হাসবে নাকি কান্না করবে বুঝতে পারছেনা।
=>পরেরদিন দুপুরে....
অনেক্ষন ধরে ইশা দাড়িয়ে আছে ছেলেটার আসার
অপেক্ষায়,আর ছাতাটা ফিরে পাবার
আশায়,আজকের দুপুরটা হালকা তপ্ত,হালকা শীতল।
ইশা বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিল! এবার ইশা ভেবে নিল,ওর
ছাতাটা সত্যিই আর পাবেনা,ছেলেটাকে মনে মনে
প্রচন্ড বকা দিয়ে ফিরে যাচ্ছিল,এমন সময় পিছন
থেকে তাসফিন ডাক দিল
-এই যে আপু! যাচ্ছেন কোথায়? ছাতাটা নিয়ে যান
ইশা পিছনে ফিরে তাকাতেই ছেলেটাকে দেখতে
পেল!ছেলেটাকে দেখে প্রচন্ড রাগ হল,ইচ্ছে করছিল
দুটো মারতে,কিন্তু সাহস পায়নি বলে ওর দিকে
তাকিয়ে বলল
-ওহহ আপনি এসেছেন,দিন দিন আমার ছাতা ফেরত
দিন,বাব্বাহ আপনার মত পাগল আমি জীবনেও
দেখিনি।
-জীবনটা তো কেবল শুরু,তাতেই একদম জীবনেও বলে
ফেললেন!
-আপনার দার্শনিকতা থামান,নাম কি আপনার হা?
-মুড নেই আজ,পরে একদিন বলবো টা টা
-আরে দাড়ান!
এইটুকু বলার আগেই তাসফিন উদাও
আরে ছেলেটা কেমন অদ্ভুত! নিজের নাম বলতেও
আবার কারো মুড লাগে নাকি! উফফ কেমন অসহ্য
একটা ছেলে।
ইশা একটুকু ভেবেই প্রাইভেটের দিকে পা
বাড়ালো,বারবার ছেলের কান্ডগুলো ওর মনে পরছে
আর হাসি পাচ্ছে,অনেকবার চেষ্টা করা সত্ত্বেও
ওর ঘটনাগুলো মাথা থেকে সড়াতে পারছিল না ইশা!
পড়া থেকে বের হবার পর ওর বান্ধবীদের সাথে
একসাথে যাচ্ছিল ইশা,মধ্যপথে হঠাৎ করে দেখতে
পায়,সেই ছেলেটা একটা পাঞ্জাবী পরে রাস্থায়
কি যেন তাকিয়ে দেখছে আর হাটছে,ও ছেলেটাকে
ডাক দিল
-এই যে পাঞ্জাবী!
তাসফিন ঘুরে ফিরে তাকালো,দেখন এখানে তো আর
কেউ পাঞ্জাবী পরা নেই,তার মানে ওকেই ডাক
হচ্ছে! সামনে তাকাতেই ইশাকে দেখতে পেল সাথে
আরো ১০-১২ টা মেয়ে! তাসফিন ভাবল,মেয়েটা কি
ওকে মারতে এল নাকি দলবল সহ,কালকের ঘটনার
প্রতিশোধ নিতে,ও একটু থমকে গেল,আবার ভাবল যাক
মেয়েদের মার খাওয়া এটাও একটা অভিঞ্জতা যা
সবার জীবনে আসেনা.নরম হাতের কিল,ঘুসি থাপ্পর
আহা কত্ত ফিলিংস!
-এই যে মিস্টার পাঞ্জাবী,এত কি ভাবছেন? এখন কি
নাম বলার মুড আছে?
-ও হ্যা হ্যা,মুড তো আসতেই হবে যেভাবে দলবল
নিয়ে আসছেন,মুড না এসে পারে কি করে
-এত বেশি বকবক না করে,নামটা বলুন তো।
-আমি তাসফিন!
-আমি ইশা,সেদিন আমার ছাতা নিলেন কেন?
-আমি বৃষ্টিতে ভিজতে পারিনা,ভিজলেই ঠান্ডা
লাগে,জ্বর আসে
-তাই বলে,অচেনা অজানা একটা মেয়ের ছাতা
নিবেন? তাও কিছু না বলে হাত থেকে কেড়ে নিয়ে
দৌড়াবেন?
-কেড়ে না নিলে কি আপনি দিতেন? আর আপনাকে
আগে কয়েকবার দেখছি এই পথে তাই আমার অচেনা
লাগেনি!
-আচ্ছা আপনি কি পাগল নাকি? এমন অদ্ভুত অদ্ভুত
কাজ করেন!আমি সেদিন ভিজে গিয়েছিলাম,তা
জানেন আপনি?
-আপনার তো বৃষ্টিতে ভিজতে আনন্দ লাগে,আপনি
তো বৃষ্টিবিলাসী তাই আমি ছাতা নেওয়াতে
আপনার তো আনন্দ লেগেছিল
ইশা আবারো অবাক হয়ে গেল,ছেলেটা কি করে
জানলো ওর বৃষ্টিতে ভিজতে আনন্দ লাগে,ও কি
করে জানলো সেদিন ওর কিছুটা আনন্দও
হয়েছিল,ইশা তাসফিন কে বলল
-আপনি জানলেন কি করে? আমার বৃষ্টিতে ভিজতে
ভাল লাগে
-সেদিন আপনাকে খালি পায়ে হাটতে
দেখছিলাম,ছাতার বাহিরে হাত দিয়ে পানি স্পর্শ
করতে দেখেই বুঝছি!
-ওহহও,নাহ পাগল হলেও একটু আধটু বুদ্ধিও আছে
-হ্যা তা তো আছেই
এইটুকু বলেই তাসফিন আবার হাটা শুরু করল,ইশা
ডাকলো ও কর্নপাত করলো না,আপনমনে হেটে
চলছে,ইশা অদ্ভুদ পাগল এই ছেলেটার সন্ধানী চোখে
হাটার দৃশ্য দেখছে,কেমন একটা ভাল লাগা তৈরি
হয়েছে ইশার,তাসফিনের প্রতি,সেটা কিসের ভাল
লাগা তা বুঝতে পারছেনা,তবে ভাল লাগে সেটা
বুঝতে পারছে
বান্ধবীদের ডাকে ইশা সম্বিত ফিরে পেল,ওদের
সাথে তাসফিনকে নিয়ে হাসাহাসি করে বাসায়
ফিরল,আজ কেন জানি কিছুতেই পড়াতে মত বসছে না
বারবার তাসফিনের ঘটনাগুলো মনে পরছে,ইশা বুঝতে
পারলো ওর সাদা কালো জীবনে তাসফিন
রঙ্গিনত্বের একটা ছাপঁ একে দিয়েছে,এরপর থেকে
ইশার প্রায় প্রত্যেকদিনই তাসফিনের সাথে দেখা
হত,ইশা তাসফিনকে ডেকে কথা বলতো,তাসফিন
অল্টাইম রহস্যময়,ইশা এই রহস্য ভেদ করতে বারবার
তাসফিনের মাঝে ডুবতো,
"মেয়েদের অদ্ভুত গম্ভীর রহস্যময় ছেলেদের প্রতি
একটা গভীর আকর্ষন থাকে,রহস্যভেদ করতে গিয়েই
এসব ছেলে মাঝে ডুবে আর ভাল লাগে থেকে
অজান্তেই প্রেমে পরে যায়" যেমনটা ইশার সাথেও
হয়েছিল,তাসফিন সবসময় অদ্ভুত কাজ করতো কখনো
হঠাৎ হাটা থামিয়ে দাড়িয়ে যেত,কখনো সন্ধানী
চোখে তাকাতো,কখনো ইশার অর্ধেক খাওয়া
আইচক্রীম ওর হাত থেকে নিয়ে খেতে শুরু করে
দিত,কখনো খুব চুপ হয়ে যেত!
এগুলো ইশাকে খুব আকর্ষন করতো...
-আচ্ছা,তাস্ফি তোমার প্রিয় কোন জায়গা আছে?
-হ্যা আছে তো,আমার অনেক প্রিয় একটা জায়গা
আছে
-আমাকে নিয়ে যাবে একদিন?
-হ্যা কোন এক পড়ন্ত বিকেলে নিয়ে যাবো
-কোন এক লাগবে না কালকেই নিয়ে যাবে
-হু নিব আনে
-এইত্ত গুড বয়
-আমি তো বরাবরই গুড বয়
নিজের ঢোল নিজে বাজিও না
-নিজের ঢোল নিজে বাজানোও ভাল,অন্য কাউকে
দিলে যদি ফাটিয়ে ফেলে!
-তোর সাথে যুক্তিতে কে পারবে
-তাহলে আবার লাগতে আসো কেন
-হয়েছে থামো,এবার আমি বাসায় যাবো,কাল
আমাকে নিয়ে যেতেই হবে
-আচ্ছা যাও,টা টা
পরের দিন বিকালে তাসফিন ওর প্রিয় সেই
জায়গাটিতে নিয়ে গেল,ইশা দেখে একদম মুগ্ধ হয়ে
গেল! শহরের ভিতরেও এমন নিবিড় প্রাকৃতিক
সৌন্দর্য আর এমন একটা জায়গা থাকতে পারে ও
ভাবতেই পারছেনা,আসলে এমন জায়গা তাসফিনের
মত অদ্ভুত ছেলেই খুজে বের করতে পারে,
-তাস্ফি!
-হু বল
-তুই এমন জায়গা খুজে পাও কি করে?
-জানিনা,জায়গা গুলো নিজেরাই এসে আমাকে ধরা
দেয়
-তা তো দিবেই,তাস্ফি বলে কথা
-হ্যা চল,ওই পাথরের উপরে উঠি
-আমি ওত উপরে উঠতে পারবোনা বাব্বাহ
-আরে চল,আমি হেল্প করবোনে
তাসফিন ইশার হাত ধরে আস্তে আস্তে একে নিয়ে
পাথরের উপরে উঠছিল,ইশা আরে শক্ত করে তাস্ফির
হাতটা ধরছে,ইশার ইচ্ছে করছে সারাটি জীবন
এভাবে হাত ধরে পাথরের স্তুপ পারি দিতে,কতক্ষন
পরই ওরা উপরে পৌছে গেল,উপরে উঠে বসতে ইশা
আরো অবাক হল খোলা আকাশ,হিমেল
বাতাস,চারদিকের সবুজতা,নদীর পানির চলতার শব্দ
শুনে,তাসফিনের পাশে ইশা বসা ইশা এখনো
তাসফিনের হাতটা ছাড়েনি,শক্ত করেই ধরে আছে
-এই যে ইশাপু,এবার তো হাতটা ছাড়েন!
ইশা একটু লজ্জা পেল তাস্ফির কথাতে,তবুও হাত
ধরেই আছে,ইশা বলল
-হাত নিয়ে এত ভাব দেখান লাগেনা,আরেকটু ধরলে
কি হবে হু? আমার ছাড়বো না
-আরে এটা কি মামা বাড়ির আবদার নাকি?
-না এটা তাস্ফির পাথুরে বাড়ির আবদার
-যত্তসব
-তাস্ফি একটা কথা
-হু বল
-ভয় করে খুব
-আরে ভয় কিসের বলে ফেল
ইশা কাপঁকাপাঁ কন্ঠে বলল
-আমাকে এভাবে তোমার হাতটা ধরে থাকবে দিবে?
একদম সারাটি জীবন
তাস্ফি যেন কেপেঁ উঠলো,তবুও ও ইশাকে বলল
-হ্যা,তোর বিয়ের পূর্ব পর্যন্ত এভাবে ধরিস,বিয়ের
পর বরের হাত ধরবি
-তুমি কি বর হতে পারো না আমার?
-ইশা আমি তোর তাস্ফি,তোর বেস্ট ফ্রেইন্ড,আমি
এমনটা কখনো ভাবিনি
-কিন্তু আমি তো ভেবেছি তাস্ফি
-এমনটা করিসনা তুই
আগে বল আমাকে কি ভালবাসিস না?
-জানি না,তবে বন্ধু যেহেতু তাই প্রচন্ড ভালবাসি
-কথাটা ঘুরাবিনা একদম,যেটা বলতে বলছি সেটা
বল!কি হল বল,
এই বল ইশা তাস্ফিকে ধরে আস্তে করে নাড়া দিল
তাস্ফি কতক্ষন চুপ থেকে বলল
-হু,একটু
ইশার মুখটা উজ্জল হয়ে উঠলো,ও একদম থমকে গেল
তাস্ফির সাড়া পেয়ে,আবার বলতে শুরু করল
-সেই একটু কতটুকু?
-জানিনা,তবে জানি সেই একটু এই পাথরগুলোর
থেকেও বেশি
-ও তাস্ফি
-জ্বি ইশু
-ভালবাসি
-ভালবাসি ইশু
শুরু হল নতুন একটা মিলনের গল্প,নতুন একটা সপ্ন,নতুন
কতগুলো আকাঙ্খা...
এরপর প্রতিদিন ইশা আর তাসফিন ওই জায়গাটায়
যেত,তাসফিনের অদ্ভুত কর্মকান্ড যায়নি কিন্তু ইশার
কাছে এখন আর রহস্য লাগেনা তাস্ফিকে নিজেরই
মনে হয়,এভাবে ওদের সম্পর্কটা চলতে
থাকে,প্রতিদিন এই জায়গাটায় আসতো,তাস্ফির হাত
ধরে ইশা পাথরের উপরে উঠতো,একদিন হঠাৎ করে
তাসফিনের খোজ পাওয়া যাচ্ছিল না,তাসফিন একা
একা একটা দুরে জঙ্গলে চলে গিয়েছিল,কিন্তু কেন
গিয়েছিল সেটা ও নিজেও বুঝতে পারেনি,তাসফিন
যাওয়ার পর প্রতিদিন ইশা অপেক্ষা করতে একা
একাই পাথরের উপর উঠতো,সৃত্মিগুলো ভেবে
কাদতো,এভাবে পাচটি মাস কেটে গেল তাসফিন
ফিরলো না,ইশা প্রায় পাগলের মত তখনি খালিদের
আগমন ওর জীবনে,ইশার এই দুর্বল মূহুর্তে,এই
শূণ্যতায়,পাশে একজনে প্রয়োজন,তাই খালিদকে
অনিচ্ছা সত্ত্বেও মনকে জোড় করে ভাল লাগাতে
শুরু করে।
আজ তাসফিন একবছর পর আবার ফিরছে,ইশার থেকে
খালিদ পুরো ঘটনা শুনো নির্বাক হয়ে গেল,খালিদ
ইশাকে প্রচন্ড ভালবাসে আর ইশা আজ আবার
তাসফিনকে দেখে ভেঙ্গে পরছে,ইশা খালিদকে
নিয়ে দৌড়ে দৌড়ে সেই জায়গাতে ছুটে
চলে,তাসফিন পাথরের উপরে শুয়ে সাদা মেঘ
দেখছে আর চোখ দিয়ে বৃষ্টি জরাচ্ছে
ভাবছে একটা পাগলামির কারণে জীবনের কত কিছু
হারালো! ইশু কি আর ফিরে আসবেনা? আচ্ছা
খালিদ ভাইয়া কে কি সত্যিই ও ভালবাসে? কিন্তু
ইশু তো এমনটা করতে পারেনা! আচ্ছা কার হাত ধরে
আমি এই পাথরের উপরে উঠবো? কে ক্লান্ত শরীর
আমার উপরে ছেড়ে দিবে? কার অর্ধেক খাওয়া
আইচক্রীম নিয়ে খাবো? এসব ভাবছিল তাসফিন এর
মধ্যে ইশা পাথরের উপরে উঠে তাসফিনকে ডাক
দিল
-তাস্ফিইই
তাসফিন ফিরে তাকাতেই ইশা তাসফিনকে ধরে বলল
-কোথায় ছিলে তুমি এতদন?হঠাৎ কোথা হতে আসলে?
তুমি এমন করে না বলে কেন চলে গিয়েছিলে
-তাসফিন নিশ্চুপ ওর বলার কোন ভাষা নেই
-জানো,কত অপেক্ষা করছি তোমার জন্য,আমার কথা
কি মনে পরে নাই তোমার? আমি আজ খালিদকে
কেন জানি ভালবেসে ফেলেছি,কিন্তু আমি
তোমাকে ভুলবো কি করে?
তাসফিন এবার মুখ খুললো
-ইশু,খালিদ ভাইয়াকেই গ্রহন কর,আমি তো এমনিতেই
তোমার কাছে নিখোজ ছিলাম,ভুলে যাও আমাকে
-কিন্তু তাস্ফি তুমি তো ফিরে এসেছো
-ইশু আমি একটা পাগল,আমার জীবনে এসে তুমি সুখ
করতে পারবেনা
-আমার সুখ চাইনা তোমাকে চাই
কিন্তু খালিদ ভাইয়া?
-তাতাতাকেও ভালবাসি,কি করব আমি বুঝতে
পারছিনা
-খালিদ ভাইয়া!
-হ্যা তাস্ফিন {খালিদ}
খালিদ আসতেই তাসফিন ইশার হাত ধরে খালিদের
হাতের মধ্যে দিয়ে,ইশাকে বলল
-শক্ত করে খালিদ ভাইয়ার হাত ধরো
ইশা চেষ্টা করল কিন্তু ইশা পারলো না,তাসফিন
আবারো একটি রহস্যময় হাসি দিয়ে দুফোটা অশ্রু
ফেলে বলল "ইশু ভালবাসি"
এটা বলার পরই পাখর গুলো যেন তাসফিনকে টেনে
নিল,ইশা খালিদ তাসফিন বলে চিৎকার দিল,কিন্তু
তাসফিন তো হারিয়ে গেছে পাথরের গহব্বরে,শুধু
পাথরের মাঝে ভেসে উঠে ওর রহস্যময় হাসিটা,ইশা
খালিদের বুকে মাথাটা রেখে চোখের জলের স্রোত
বহাচ্ছে।
তাসফিনের সাইকেলটা পরে আছে পাশেই,
নাহহ ছেলেটা রহস্যই রয়ে গেল...
ইশার দুচোখে তাসফিনের রহস্যময় হাসি আর চিত্তে
খালিদ।
হঠাৎ শক্ত করেই খালিদের হাতটা চেপে ধরলো ইশা।
ভালো লাগলো
উত্তরমুছুন