শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

^^ স্মৃতির পাতায় ^^

> অর্পিতা : তুই কি ফোনটা সাইলেন্ট মুডে রাখছিস?
< মেহাল : কই না তো! কি হয়েছে?
> অর্পিতা : তুই আমার সাথে কথায় বলবি নাহ!
< মেহাল : আরে বাবুনি, কি হয়েছে বলবে তো?
( আর তুই করেও বলছো মনে মনে বললাম)
> অর্পিতা : কান্না কন্ঠে তোকে কতবার কল করেছি একবারও কি দেখেছিস?
< মেহাল : কি রে বাবা, কিছুই তো বুঝতে পারছিনা! দেখি তো ফোনে কথা বলতে বলতে ফোনটা চেক করলাম।
সত্যিই তো অনেক বার কল দিয়েছে! ও মোর আললাহ! পাজি বজ্জাত ভাইপো টা আমার মোবাইল নিয়ে গেম খেলছিলো হালার পো কখন মোবাইলটা সাইলেন্ট করে আমার পাশে রেখে গেছে জানিই নাহ! বজ্জাত সোহানটা আমার এইভাবে গেম বাজায় লো? সোহান পাজি চাচ্চুর এই ভাবে গেম বাজাইলি? ইসস আমার বাবুনি টা কাদলো!
এখন কি যে বলি!
লক্ষী সোনা বাবুনি আমার এই বারের মত ক্ষমা করে দাও, এই দেখো কান ধরছি!
> অর্পিতা : হা হা হা শয়তান বদমায়েশ, আমি কি দেখতে পারছি কান ধরেছো?
< মেহাল : লক্ষীটি আজ আমায় কথা দাও তুমি এভাবেই হাসবে সর্বদাই আমাকে যত খুশি বকা দাও তবুও হাসবে আর কখনও তুমি ঐ সুন্দর আখিঁ থেকে অশ্রু ঝরাবে না বুঝলে তুমি?
এতোক্ষণ যাদের কথা বলছিলাম এরা হলো - অর্পিতা আর মেহাল খুনসুটিতে ভরা বন্ধু নামের আত্মার ভালোবাসা একই কলেজের ক্লাসমেট জুটি "
এদের খুনসুটিতে ভরা ভালোবাসা কলেজের সবার কাছেই অটুট বন্ধন জানা ছিলো সকলেরই।
একদিন কলেজে নতুন একজনের আগমন ঘটলো মেহাল প্রতিদিন অর্পিতার পাশে বসতো আজ হঠাৎ মেহালের কি হলো অর্পিতাকে ছেড়ে আজ মেহাল ঐ মেয়েটির দিকেই বারবার তাকাচ্ছে এই সময় অর্পিতা বিষয়টা খেয়াল করলো অর্পিতা মেহালকে বললো - এই চল ফুচকা খাবো কিন্তুু মেহাল ওর কথায় কোনো সাড়া দিলো না।
অর্পিতার বেশ রাগ হলো ও মেহালের পাশ থেকে উঠে গিয়ে একাই আজ প্রথম ফুচকা খেতে গেলো।
ও ফুচকা ওয়ালাকে বললো খুব বেশি ফুচকাতে ঝাল দিতে। ফুচকা ওয়ালা বললো দিদিমণি - আপনি তো ঝাল একটুও খেতে পারেন না তবুও ঝাল দেবো?
দিতে বলছি দাও রাগে রাগে অনেক বেশি ঝালের ফুচকা খেলো অর্পিতা চোখ দিয়ে জল পড়ছে ওর আজ ভীষণ কষ্ট হচ্ছে মেহাল কিনা অন্য একটি মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে? যে মেহাল অর্পিতা অন্ত প্রান তার আজ এতোটা পরিবর্তন নাহ ও আর সজহো করতে পারছেনা একদিকে মনের কষ্ট আর অন্য দিকে ঝাল খেয়েছে হঠাৎ মাথা ঘুরে অর্পিতা পড়ে গেলো মাটিতে!
সবাই অর্পিতাকে ওভাবে দেখে অবাক হলো দৌড়ে এলো কলেজের সব বন্ধুরা কারণ অর্পিতা সকলের নয়নের মনি বন্ধু।
< মেহাল : কি হয়েছে অর্পি তোর চোখ খোল নারে এই কথা বল অর্পি?
> নিলা : তুই কেন এসেছিস যা না ওই মেয়েটিকে দেখ? তোর জন্যই আমার বান্ধবীর আজ এই অবস্থা! অর্পিতা এই চোখ খোল কি হলো রে তোর?
সবাই মিলে অর্পিতাকে নিয়ে কলেজেই মাথাই মুখে পানি দিলো তবুও অর্পিতা চোখ মেললো না! নিলা আর কয়জন বান্ধবী মিলে অর্পিতাকে বাসায় নিয়ে গেলো অর্পিতা সুস্থ হয়ে যাবে যন্ত্রনাটা কমলে কিন্তুু অর্পিতার মনের যন্ত্রনা কি কমবে?
মেহাল : সত্যিই আজ অনেকটা অন্যায় করে ফেলেছে অর্পিতার সাথে মনে মনে ভাবছে আসলেই তো কি আছে ওই মেয়ের মাঝে আজ আমি মনের অজান্তেই তো অর্পিতার প্রতি অনেকটা অবিচার করে ফেলেছি কিভাবে পারলাম আমি যে অর্পিতাকে ছাড়া আমার পৃথিবী অন্ধকার আমি তাকেই অজান্তে কষ্ট দিলাম রাগে কষ্টে নিজেকে আজ শাস্তি দিতে মন চাইছে আমার।
জোরে একটা ঘুসি দিলাম আমার রুমের দেওয়ালে হাতটা ফেটে রক্ত ঝরছে ঝরুক রক্ত তবুও যদি অর্পিতাকে দেওয়া কষ্টটার অনুশোচনাটা কম হয়!
হাতটা একটা রুমালে বেধেঁ পরদিন কলেজে গেলাম (মেহাল)
নাহ কোথাও অর্পিতাকে দেখতে পারছিনা ও কি তাহলে এখনও সুস্থ হয়নি? ও কি তবে আজ কলেজে আসেনি দেখিতো একটু খোঁজ নিয়ে।
ওই তো নিলা ওর বান্ধবী দেখি ওর কাছে শুনে?!
এই নিলা শোন?
> নিলা : আমাকে বলছিস? কি বলবি বল আমার তাড়া আছে!
< মেহাল : প্লিজ নিলা এমন করিস না! বলনা অর্পিতা কোথায় ও কি আসেনি আমি অনুশোচনার আগুনে জ্বলেছি আমি ওকে ফোন দিতে পারিনি বলনা রে?
আমার মনে হয় ও আজ কলেজে আসেনি ওকে কোথাও দেখছি না আমি অর্পি ঠিক আছে তো বলনা নিলা?
> নিলা : হা অর্পিতা অসুস্থ ও মনে হয় তোকে নিয়ে ভেবে অনেক কেঁদেছে তাই আজ কলেজে আসেনি। আর আসবেই কি করতে তোদের চোখাচোখি দেখতে?
< মেহাল : বিশ্বাস কর আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারছিনা, কিভাবে ওর সামনে যাবো বুঝতে পারছিনা তুই একটু হেল্প কর নারে প্লিজ নিলা?
> নিলা : আচ্ছা আমি দেখছি কি করা যায়? তুই টেনশন করিস নাহ কেমন!
< মেহাল: ধন্যবাদ নিলা আমায় ফোন দিয়ে জানাস কিন্তুু!
> নিলা : আচ্ছা ফোন দেবো আমার কিন্তুু ট্রিট চাই ওকে গেলাম টা টা!
নিলা অর্পিতার বাসায় গেলো - অর্পিতাকে মেহালের কথা বুঝিয়ে বললো অর্পিতা কষ্ট পেলেও ওতো মেহালকে খুবই ভালোবাসে তাই মেহালের উপর আর রাগ করে থাকতে পারলো না।
নিলা ওদের দুজনকে বাইরে নিয়ে যাবার আইডিয়া বের করলো কারণ ও জানতো ওরা দুজন আসলেই দুজনকে খুব ভালোবাসে নিলা অর্পিতাকে বললো চলনা আমরা মানে , মেহালকে নিয়ে কোথাও বেড়াতে যানারে একটু অন্য ভাবে।
~
~
> অর্পিতা : অন্য ভাবে বলতে কি বলতে চাইছিস নিলা?
< নিলা : আমি বলতে চাইছি তোকে তো মেহাল সব সময় থ্রীপিচ পরাতেই দেখে আজ একটু অন্য লুকে যানারে আজ বিকালে তুই মেহালের সাথে শাড়ি পরে দেখা করতে যা অর্পি কেমন।
আর মেহালেরও এটা ভালো লাগবে!
> অর্পিতা : নিলা তুই যে কি বলিস নাহ, তবে কথাটা তুই ঠিকই বলেছিস আইডিয়া খারাপ নাহ বন্ধু।
আচ্ছা যাবো শাড়ি পরেই আমার প্রানের বান্ধবীর আবদার বলে কথা! যাবোরে তবে তোকে কিন্তুু আমায় হেল্প করতে হবে বুঝলি তো?
< নিলা : অলওয়েজ ডিয়ার বান্দা সর্বদা হাজির হে তোমাদের সেবাই ওকে সুইট অর্পি।
দাড়া সু সংবাদটা মেহালকে ফোন করে দেয়!
বেচারা তোর টেনশনে পাগল প্রায় "
যেই কথা সেই কাজ সবকিছুই কথা অনুযায়ী ঠিক হলো।
অর্পিতাকে নিলা খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিলো একটা নীল শাড়ি পড়লো অর্পিতা আজ কি সুন্দরই নাহ লাগছে ওকে নীল শাড়িতে।
খোঁপায় রজনীগন্ধা আর গোলাপ ফুলের সমারোহে সজ্জিত কি দারুণ লাগছে ওকে যেন ঠিক নব বধূর সাজে সজ্জিত হয়েছে আজ অর্পিতা।
নীলা কয়েকটা ছবি নিলো মোবাইলে অর্পিতার মুহুরতো টাকে ধরে রাখতে।
আয়নায় নিজেকে দেখলো অর্পিতা নিজেকে মনে মনে ভাবলো মেহালের বধূ রূপে নিজের এক সুখের সর্গে হারালো নিজেকে।
নিলার ধাক্কায় বাস্তবে ফিরলো অর্পিতা, চল বেচারা পথ চেয়ে বসে আছে যে আজকের নববধূটিকে দেখবে বলে!
সত্যিই তো মেহাল পথ চেয়ে বসে আছে এটাতো এক মুহুরতে ভুলেই গিয়েছিলো অর্পিতা নিজেকে আয়নায় অন্যভাবে দেখে।
নিলাকে নামিয়ে দিলো অনেক রিকোয়েস্ট এ নিলা অর্পিতার সাথে গেলো না আজ তাদের সুন্দর মুহুরতে কাবাবে হাড্ডি হতে চায়নি তাই নিলার বাসায় নেমে গেলো অর্পিতার প্রাইভেট কার থেকে।
আজ একাই ড্রাইভ করছে অর্পিতা নিজের প্রাইভেট কারটা ওর শাড়ি পড়াতে একটু বিব্রত লাগছিলো তাই আজ আর তার ড্রাইভারকে সাথে নিলো না।
অর্পিতা মেহালকে খুব মিস করছে আজ অন্য ভাবে তাই ড্রাইভ করার সময় মেহালকে মোবাইলটা নিয়ে রিং দিলো একদিকে মেহাল তার মটরবাইক টা নিয়ে বের হয়েছে ওদের আজ দেখা হবে একটা রেস্টুরেন্টে এটাই ঠিক হয়েছিলো আগেই।
মোবাইলের রিংটোন টা বাজতেই মেহাল বাইকটা থামিয়ে ফোনটা রিসিভ করলো মেহাল আজ কত দুষ্টামি নিয়ে কথা বলছে অর্পিতাকে, অর্পিতা মেহালের কথাই নিজেকে হারিয়ে ফেলছে আর ড্রাইভ করছে হঠাৎ বিপরীত দিক থেকে এতটা প্রাইভেট কার আসতেই অর্পিতা খেয়াল করলো তার সামনেই আর একটি প্রাইভেট আসছে কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুখোমুখি সংঘর্ষ হলো প্রাইভেট দুটির বিকট একটা আওয়াজ হলো হা অর্পিতার গুরুতর দূর্ঘটনা হয়েছে মেহাল ফোনেই আওয়াজটা শুনতে পেয়েছিলো ওর বুঝতে বাকি রইলো না অর্পিতার কিছু একটা হয়েছে।
ও অর্পিতাকে বারবার ফোন দিলো ফোনটা সুইচঅফ বলছে অর্পিতার ফোনটা ছিটকে পড়ে গিয়েছিলো তাই আর রিংটোন টা বাজলো না।
অর্পিতাকে সবাই নিকটবর্তী হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিলো ওর রক্তাত শরীরে ভেজা ছিলো হয়তো এটাই ওর শেষ যাত্রা ছিলো মেহালের জন্য।
মেহাল বাইকটা চালিয়ে এসে গন্তব্যের নিকট জানলো অর্পিতার দূর্ঘটনার কথা।
মেহালের পৃথিবী আজ অন্ধকার হয়ে আসছে অর্পিতাকে দেখার জন্য হসপিটালে আসলো তখন অর্পিতার শেষ নিঃশ্বাসটুকু চলছে শুধুমাত্র মেহালের অপেক্ষায় "
মেহাল অর্পিতার কেবিনে এসে নিথর অর্পিতাকে দেখলো রক্তাত নীল শাড়িতে যেটা কখনও কাম্য হবার কথা ছিলো না আজ কত স্বপন আশা ছিলো তাদের দুচোখে দুজনাকে ঘিরে!
অর্পিতা মেহালের হাত দুটি ধরে বসে আছে অর্পিতা একটি বার চোখ মেলে শেষ বার মেহালকে দেখলো আর বললো আমি তোমায় মাঝেই রয়ে যেতে চাই আজীবন ভালোবাসি ভীষণ তোমায় মেহাল অর্পিতার চোখ দিলে জল গড়িয়ে পড়লো শেষ নিঃশ্বাসটা চলে গেলো না ফেরার দেশে "
মেহাল অর্পিতাকে হারিয়ে ফেলছে এটা মানতে পারলো না তাই নিরব হয়ে গেলো তার সব কথাই আজ স্মৃতির পাতায় রয়ে গেলো মেহালের জীবনে অর্পিতা।
মেহালের স্মৃতির পাতায় অর্পিতার খুনসুটি গুলো রয়ে যাবে আজীবন, বেচে থাক আজীবন তাদের ভালোবাসা স্মৃতির পাতায়,,,,"

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন