সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

তিনদিনের ভালবাসা ও বউ

এখন রাত অনেক। ঘরে ঢোকার জন্য দরজায় টোকা
দিচ্ছি। কিন্তু খোলার নাম নাই। দরজা টান দিয়ে
দেখলাম ভেতর থেকে লক করা। একোন মসিবতে
পড়লাম আল্লাহই ভাল জানে। আজ থেকে নাকি
আমার ঘরের সমস্ত জিনিসের ভাগ অন্যজনে নেবে।
আমার খাট, আলমারি, টেবিল, ফ্রিজ, টিভি এমনকি
আমার সাধের ডেস্কটপটাও। সব কিছুতেই সে হাত
বসাবে। এমনিতেই আমি একটু বেশিই স্বার্থপর
টাইপের। আমার কোন জিনিসে কাউকে ভাগ বসাতে
দেই না। আমার ছোট ভাইকেও এই অপরাধে ঘর থেকে
বের করে অন্যঘরে পাচার করে দিয়েছি। আমার
সাথে খাট শেয়ার করত। এইটুকুও আমার সয় নি। তাই
তারে আমার টাকায় কেনা একটা খাট দিয়ে তাকে
আলাদা করে দিয়েছি। শুধু খাটই না। সবকিছুই
দিয়েছি যাতে আমার জিনিসে ভাগ না বসায়। আর
আজ কি না আমার যাকিছু আছে সবকিছুতেই সে ভাগ
বসাবে। এমনকি আমার মাটির গড়া শরীর ও নরম
মনটাও নাকি তার। হায় আল্লাহ! তাহলে আমার রইল
কি? একোন মসিবতে আমাকে ফেললা?
যে আমার সবকিছুতে ভাগ বসাবে সে আর কেউ নয়
একটা মেয়ে, আমার বউ। আরেকটু গভীর ভাবে বললে
আমার বেস্ট ফ্রেন্ড, মামাতো বোন।
সদ্য বিয়ে করা স্বামী স্ত্রী আমরা। একদম নতুন।
কিছুক্ষণ আগে বিয়ে করে বউরে বাসায় নিয়ে
আসলাম। বউ ভিতরে আছে আর আমি বাইরে। মানে
বন্ধু বান্ধবদের বিদায় জানাতে একটু দেরী হয়ে
গেছে। এসে দরজার জিঞ্জীর ধরে নাড়া দিলাম।
দরজায় টোকা দিলাম। কিছুই টের পাচ্ছি না।
নিশ্চয়ই বউ ঘুমিয়ে গেছে। নাহলে এত্তক্ষণ ধরে
ডাকতেছি। দরজা খোলছেই না। এখন উপায় কি হবে
আমার? সারারাত কি এভাবেই দাড়িয়ে থাকব? খুব
ক্লান্ত হয়ে গেছি ঘুমাতে হবে। ঢুকতেই পারছি না
ঘুমাব কেমনে?
লাষ্ট চেষ্টা করে দেখলে মন্দ হয় না। আবারো
দরজায় নক করলাম। তবে এবার বেশ জোরে। খট করে
দরজা খুলার শব্দ হল। কিন্তু খুলল না।
:- এই হয়েছেটা কি? এভাবে দরজায় নক করছেন কেন?
:- ঢুকব তাই।
:- ঢোকা নিষেধ।
:- আমার ঘরে আমি ঢুকব। নিষেধ করার আপনি কে?
:- আমি কে? তাতো আপনার অজানা না।
:- ভিতরে ঢুকতে দেন।
:- না দেব না। আগে আমার কথার কিছু জবার দিতে
হবে।
:- আমি বাধ্য নই।
:- তাহলে ঘরে ঢুকতে দিতে পারলাম না। থাকেন
বাইরে।
মুখের উপরে দরজা লাগিয়ে চলে গেল। দরজা মারাই
ছিল তবে খিল দেওয়া ছিল না। আর তখন এসে খিল
খুলেছিল। দরজার পাট্টা খুলে নি।
আমি কি করব? নিরুপায় হয়ে বারান্দায় রাখা
বেঞ্চে বসে পড়লাম। হেলান দিয়ে বসাতে একটু
তন্দ্রা চলে আসল। চোখ বুজে পড়ে রইলাম। হায়রে
কেমন কপাল আমার! মানুষে বিয়ে করে বিড়াল
মারে আর আমি বাইরে বসে মশা মারি। কতক্ষণ
এভাবে শুয়ে ছিলাম জানি না। আযানের শব্দে ঘুম
চলে গেল। অনেকদিন হয় আযানের সময় সজাগ পাই
না। আজ পেলাম। এখনো বিয়ের পোশাক চেঞ্জ করি
নি। রশিতে থাকা একটা লুঙ্গী আর পাশের রুমে
থাকা ছোট ভাইয়ের পাঞ্জাবী নিয়ে বাথরুমে
গেলাম। ফ্রেশ হয়ে পাঞ্জাবী পড়ে মসজিদে চলে
গেলাম। টুপি পাই নি। তাতে কি! মসজিদে পাব
নিশ্চয়ই। নামায পড়ে ফিরে এলাম। মনটা বেশ
ফুরফুরে লাগছে। সকালের পরিবেশ দেখে মনে
হচ্ছে
কিছুদিনের মাঝেই শীত চলে আসবে। সকালটা
শীতের সকালের মতই মনে হচ্ছে। এসে দেখি
রুমের
দরজা খোলা। ভিতরে গিয়ে দেখলাম বউ বাথরুমে
ঢুকেছে। আমিও পাঞ্জাবী ছেড়ে বিছানায় বসলাম।
কিছুক্ষণ পর ও বের হল। ভাবলাম আমাকে কিছু বলবে
কিন্তু কিছুই বলল না। আমি একটু অবাকও হলাম বটে।
যেই বউ রাতে ঘরে ঢুকতে দিল না। সেই বউ এখন কিছুই
বলছে না। স্ট্রেঞ্জ! এত তাড়াতাড়ি পরিবর্তন? হাউ
ইজ ইট পসিবল?
যাহোক। আমি পা সোজা করে টানটান হয়ে শুয়ে
পড়লাম।
.
বাথরুম থেকে গোসল করে একটা কালো কাপড়
পড়েছে। কাপড়টি চিনতে আমার ভুল হয় নি। কাপড়টি
আমার
ওয়্যারড্রোবে ছিল একটা প্যাকেটে। সেখানে ওই
কাপড়
ছাড়া যা ছিল সবই আমার পরিধেয়। মানে সবই
জেন্টস
পোশাক আর ঐ একটা মাত্র কাপড়ই লেডিস পোশাক।
কয়েকদিন আগে কিনে এনে রেখে দিয়েছি। কি
মনে
করে যেন শুয়া থেকে উঠে গিয়ে ওয়্যারড্রোবের
কাছে গেলাম। ওখানে দেখলাম আরো কিছু লেডিস
পোশাক। তার মানে অন্যকেউ এসে বাকী গুলো
দিয়ে
গেছে। যেহেতু আমি বাড়ি ছিলাম না সেহেতু দেখি
নি
কে দিয়ে গেছে। যাকগে, যার মন চাইছে সে দিয়ে
গেছে।
৬৭, ৬৮, ৬৯, ৭০................ । কি ভাই অবাক হলেন?
হইয়েন
না। সব বলতেছি।
মেয়েটা ড্রেসিংটেবিল এর সামনে একটা টোলে
বসেছিল সাজুগুজু করার জন্য। তার দীর্ঘ কৃষ্ণকায় ও
দীঘল
কালো চুলগুলো পিঠের উপরে কাপড়ের উপর দিয়ে
ছেড়ে দিয়েছে। সেই চুলগুলো কয়েক ইঞ্চির
ব্যাবধানে মাটি স্পর্শ করতে পারে নি। এই প্রথম এত
লম্বা
চুল দেখলাম কোন মেয়ের। চুলগুলো ভিজা ছিল।
একত্র
করে মুঠো করলেও। মুঠখানি চুলে ভরে যাবে। সেই
ভেজা চুল বেয়ে বেয়ে পানি নিচে টুপটুপ করে
পড়ছিল।
আর এভাবে এক থেকে শুরু করে সত্তর বার পর্যন্ত
পানির
ফোটা গুনতে ছিলাম। এখনো টুপটুপ করে পড়তেই
আছে। সব দোষ আপনাদের। গল্প শুনাতে গিয়ে আর
গুনতে পারলাম না। এতক্ষণে মনে হয় একশো ছাড়িয়ে
গেছে। আবার শুরু করি ১০১, ১০২, ১০৩, ১০৪........... । এর
পরে আর বেশী গুনতে পারি নি। ১১০ পর্যন্ত
পারছিলাম।
তখন দেখি হাতে একটা তোয়ালে নিয়ে মাথা মুছতে
লাগল।
এটা আমার মোটেই ভাল লাগল না। টুপটুপ করে পানি
পড়াটাই
ভাল লাগছিল। সে হয়তো খেয়াল করে নি যে আমি
এই
দৃশ্য দেখতেছি। আমার খারাপ লাগছিল তাই পাশ
ফিরে শুয়ে
পড়লাম। পাশ ফেরার সময় ড্রেসিং টেবিলের
আয়নায় ওর
চোখে আমার চোখ পড়ে। চেহারা দেখেই বুঝে যায়
আমার মনটা খারাপ।
একটা বিষয় হচ্ছে গিয়ে এখনো পর্যন্ত কেউ কারো
সাথে কথা বলি নি। সেই লাষ্টবার কথা বলেছি
রাতে। এত্তক্ষণ
হয়ে গেল কথা বলি নি।
আমি তার নাড়াচাড়ার শব্দ শুনে স্পষ্ট বুঝতে
পারছিলাম। এদিকে
ঘুরার ইঙ্গিত দিচ্ছে। আমিও টার্ন অন হয়ে এদিক
ফিরে শুইলাম।
ফিরে দেখলাম। চুলে কয়েকটা ক্লিপ ও কাকড়া
আটকিয়েছে। চুলগুলো লম্বা করে ছেড়ে দিয়েছে।
খুব সুন্দর লাগছিল চুলগুলো। লম্বা চুল বলতেই আমি
পাগল।
সে একটু আড় হয়ে বসল। যাতে কাঁচে আমাকে দেখা
যায়
বা আমি ওর চেহারা স্পষ্ট দেখতে পারি। বসে বসে
সাজতেছিল আমি হা করে চেয়ে চেয়ে দেখতেছি।
যেগুলো ইউজ করলে বাজে দেখায় তখন আমার খুব
খারাপ
লাগে। সে আমার চেহারা দেখেই বুঝে যায়। খারাপ
লাগে
তাই সেটা আর ইউজ করে না। এইভাবে অনেকক্ষণ
ধরে
চললসাজুগুজুর ব্যাপার। এইবার যা করল তা আমাকে
কাছে টানার
স্পষ্ট ইঙ্গিত। শাড়ির কুচি কিছুতেই ঠিক করতে
পারছে না।
বেশ কয়েকবার ট্রাই করছে কিন্তু পারছে না। মনে
মনে
হয়তো ভাবছে আমি এগিয়ে যাব ওর শাড়ি ঠিক
করতে। কিন্তু
আমি তা করিনাই। খাট থেকে উঠে অন্যরুমে গিয়ে
পায়জামা
আর পাঞ্জাবী পড়ে নিলাম।
.
সবে মাত্র কাল আমাদের বিয়ে হয়েছে। আজকে
অনেকেই আসবে আমার বউ দেখতে। তাই দুজনেই
রেডি হলাম।
বিভিন্নরকম ব্যাস্ততা নিয়ে সারাদিন কেমনে পার
হল কিছুই
বুঝলাম না। রাতে শুয়ে আছি। পাশ থেকে বউ বলল।
:- কিরে এভাবেই চুপচাপ থাকবি নাকি কিছু বলবি?
:- কি শুনতে চাও?
আমার তুমি করে বলা দেখে ও হয়তো বুঝে গেল। এখন
আর বেস্ট ফ্রেন্ডের সম্পর্ক নাই। এখন বরং স্বামী
স্ত্রীর সম্পর্ক। এই সম্পর্কে তুই করে বলা মানায় না।
তাই
সে পরবর্তীতে তুমি করেই রিপ্লাই দিল।
:- কাল রাতে কই ছিলা?
:- সেটা জানার কি খুব দরকার?
:- আমি তোমার বউ। সব জানার অধিকার আমার
আছে।
:- বাইরে ছিলাম।
:- ঘর রেখে বাইরে কেন?
:- তাতো তুমি ভাল করেই জান।
:- ওহ। ঢুকতে দেই নি বলে? তা আজকে কি আমাকে
বের করে দিতে খুব ইচ্ছা করছে?
:- মোটেই না। প্রয়োজন হলে আমি চলে যাব।
:- এত গোস্যা কেন তোমার?
:- ছোট বেলা থেকেই আমি এমন। তা তুমি আগে
থেকেই জান।
:- একবারো কি জিজ্ঞেস করবার ইচ্ছা করল না। কেন
ঢুকতে দেই নি।
:- কেন?
:- তোমার লুচ্চামি স্বভাবের জন্য। আচ্ছা বিয়ের
আসরে
বসে ঐ সুন্দরীদের দিকে ড্যাব ড্যাব করে
তাকিয়েছিলে কেন?
:- তাকাব না কেন? প্রতিদিন ই কি এক সঙ্গে এত
সুন্দরী
দেখতে পারব?
:- এই জন্যই তোমারে লুচ্চা বলি। আমার দিকে
তাকাইলে কি
হইত? আমি কি চোখ উপরে নিতাম।
:- তোমাকে তো প্রত্যেকদিন দেখতে পারব। ওদের
তো একদিন দেখতে পারব। তাছাড়া সুযোগ টা কি
মিস করা
যায়?
: এই জন্যই বিয়ের প্রথম রাতই বাইরে কাটাতে
হয়েছে।
:- কোন সমস্যা নাই। আমি রাজি।
:- এই তোমার মাথা ঠিক আছে? কিসব উল্টাপাল্টা
কথা
বলতেছে।
:- হুম ঠিকই আছে। চলে যাব বাইরে?
:- ও আল্লাহ! কেমন জামাই আমার কপালে জুটাইলা।
বউ কি
জিনিস? বউয়ের আবদার কি জিনিস সেটাই বুঝে না।
আমি এর
সাথে কেমনে সংসার করমু?
:- সব সহ্য কর। পাবা।
:- ধুররররর। কিছুই ভাল্লাগেনা।
এই কথা বলেই সে উল্টোপাশ ফিরে শুয়ে পড়ল।
আমিতো মনে মনে লুঙ্গী ড্যান্স দিবার চাইতাছি।
কেননা
প্রথম রাতেই বউয়ের অন্যায় প্রশ্রয় দেইনাই। সেই
সাজা
সারাদিন পাইছে, এখনো পাচ্ছে। প্রথম রাতে এমন
টাইট না
দিয়ে যদি যা বলার রুমে নিয়ে বলত। তাহলে আজকে
এই
কাহিনী হয় না। আজকে অন্যকাহিনী হতে পারত।
হয়তোবা
রুমান্টিক কিছু হইত। আমি তো লুচ্চামি করার জন্য ঐ
মেয়েদের দিকে তাকাই নি। বউয়ের মন মানষিকতা
বুঝার
জন্য তাকাইছি। ঐ তাকানো আর আজকের কাহিনী
দিয়েই
বুঝে গেছি। আমার বউটা কোন মানষিকতার। এখন
ভবিষ্যতের
পথ চলতে আমার জন্য সহজ হবে। মেয়েদের দিকে
তাকানো যদি আমার অন্যায় হত তাহলে আমি
শাস্তি পেতাম।
কিন্তু আমি পাই নি। আমাকে শাস্তি দিতে গিয়ে
সেই
পেয়েছে। সে আমাকে ভুল বুঝেছিল তাই। এখানে
আমার করার কিছুই নাই।
মেয়েদের দিকে তাকানোটা ছিল ওকে সঠিকভাবে
চেনার একটা চাল মাত্র। এক চালেই আমি সফল।
.
এইবার চলেন একটু পরিচয় করায়ে দেই। আমি তো
আমিই। আর আমার মামাতো বোন থুক্কু বউয়ের নাম
কল্পনা। গত পরশু আমাদের শাদি মোবারক অনুষ্ঠিত
হইছে। আমার দিক থেকে আমি মধ্যবিত্ত বাবা
মায়ের বড় সন্তান। আমি নির্দিষ্ট কোন কিছু করি
না। তবে যাই কিছু করি না কেন আমার পরিবারের
পেট ভাত চলে। দিন এনে দিন খেলেও খুব সুন্দর
ভাবে সংসার চলে। কারো কোন অভিযোগ নাই।
আর কল্পনার দিক থেকে ওরা তিন বোন। ওই বড়। তার
মানে আমার শালি দুই খান। অবশ্য বড় শালিটা বেশী
একটা সুবিধার না। আমার ভাইটাও বেশী সুবিধার
না। খালি বেয়াইনদের সাথে ফিল্ডিং ( পিরীত )
মারবার চায়। কিন্তু পেরে উঠতে পারে না। না
পারার প্রধান কারণ হল। আমার বড় শালি আমার
ভাইয়ের থেকে বড়। আর ছোট শালি আমার ভাইয়ের
থেকে অনেক ছোট। যার ফলে কোনটার সাথে
বেশী
সুবিধা করে উঠতে পারে না। যদি কোনটার সাথে
বয়সে মিল থাকত তাহলে কিছুদিন পরে দেখা যেত।
আমার ভাই আর ভাই নাই। হয়ে যেত ভায়রা ভাই।
যাইহোক কপাল ভাল। ভাই আমার ভাইই থাকব। এমনে
বিয়াই বিয়াইন ফাইজলামি করতেই পারে। কারো
কিছু বলার নাই।
.
কল্পনার সাথে কথা বলতে বলতে ঘুমাইয়া
পড়েছিলাম। আমি একটু বেশী ঘুম কাতুরে। শুইতে
দেরী মাগার ঘুমাইতে দেরী নাই।
.
সকালে দরজার ধাক্কায় ঘুম ভেঙে গেল। কে জানি
খুব জোরে ধাক্কা দিতাছে। টিনের দরজা বাতাসেই
যে শব্দ করে আর কেউ ধাক্কাইলে কেমন শব্দ হইব।
নিজেরাই বুঝে নিন। আমি উচু গলায় বললাম -
:- ওই কেডারে?
:- ভাইয়া আমি।
:- কি কস?
:- উঠবা না।
:- হ উঠমু।
:- ভাবিরে লইয়া তাড়াতাড়ি আস। সবাই অপেক্ষা
করতেছে।
:- আচ্ছা যা। আসতাছি।
.
পাশে তাকায়া দেখি কল্পনা ভেবোর ঘুম ঘুমাচ্ছে।
মনে করছিলাম আমিই বেশী ঘুমাই। কিন্তু এখন দেখি
সেও অনেক ঘুমায়। এই সকাল বেলায়ও দেখি নাক
ডেকে ঘুমায়। মাথায় দুষ্টুমি বুদ্ধির আবির্ভাব হল।
হঠাৎ করেই শুধু নাক চেপে ধরলাম। ত্রিশ সেকেন্ডের
মধ্যেই ধরফরিয়ে উঠে বসল। আর বলল,
:- এই ডাকাত। তুমি আমার নাক চেপে ধরছিলা কেন?
:- দুইটা কারণে।
:- কি?
:- এক, যেইভাবে নাক ডাকতাছিলা যদি বাইরের
কেউ শুনে তবে মান ইজ্জত যা আছে সব চলে যাবে।
দুই, তোমারে ডেকে তুললাম।
:- তা প্রথম কারণটা যুক্তিযুক্ত। কিন্তু দ্বিতীয়
কারণটা নিতান্তই অযৌক্তিক। নাক চেপে ধরেই
ডাকতে হবে? গায়ে ধাক্কা দিয়ে ডাকলেই তো
পারতে। না চেপে ধরার কারণে যদি মারা যেতাম?
:- না। মরতা না।
:- কেমনে?
:- তোমার মুখ তো চেপে ধরিনাই।
:- শয়তান ছেলে। সরো সাইড দাও। নামবো।
:- তুমি কি হাতি নাকি?
:- হাতি হতে যাব কেন? আমি তো দিব্বি একটা
মেয়ে মানুষ। আর তোমার বউ।
:- তাতো দেখতেই পাচ্ছি। তবে এদিকে যে পরিমান
জায়গা আছে সেই পরিমান জায়গা দিয়ে তুমি
অনায়াসেই খাট থেকে নামতে পারবে।
:- হু। পারব।
:- আমি কি অপেক্ষা করব?
:- কিসের?
:- খাওয়ার জন্য ডেকেছে। একাই যাব কিনা তাই
ভাবতেছি।
:- যাও একাই যাও। সবাই খারাপ বলবে।
:- কি জন্য?
:- সবাই বলবে নতুন বউ রেখে একাই খেতে চলে
এসেছে।
:- তুমি যে নতুন না সবাই জানে। আর আমি গেলাম
তুমি চলে এস।
:- হুম্ম যাও। স্বার্থপর একটা।
.
এই বলেই আমি দরজার দিকে পা বাড়ালাম আর ও
ফ্রেশ হবার জন্য গেল। কি মনে করে যেন আবার রুমে
ফিরে এলাম। পাঁচ মিনিট পরে বেরিয়ে আসল।
:- কি ব্যাপার তুমি যাও নি?
:- না।
:- তুমি না বললে চলে যাবে?
:- ঐ কথা বলেছিলাম কারণ তুমি যাতে বেশী দেরী
না করে তাড়াতাড়ি চলে আস।
:- তুমি আসলেই একটা ফাজিল।
:- তাহলে তো তুমি পেত্নী।
:- মশাই। ঘাড় মটকাব?
:- এই না না চল। খুব ক্ষুধা লাগছে।
:- এইতো আমার লক্ষ্মী জামাই।
:- ফেটে যাব আর পাম দিওনা গো।
.
কল্পনাকে নিয়ে খেতে আসলাম। চেয়ার টেনে
সামনা সামনি বসলাম। আমার প্রিয় কিছু রান্না
হয়েছে। ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে ঝোল। আর কুমড়ো
পাতা দিয়ে ইলিশ মাছের বড়া। আহ! কি স্বাদ। আর
কল্পনার পছন্দ হল কলিজা বোনা আর ছোট মাছের
চচ্চরি। কাউকে ঠকানো হয় নি। সবারটাই রান্না করা
হয়েছে। সবাই খুব আয়েশ করে ভাত খেলাম। তৃপ্তির
ঢেকুর তুলতে তুলতে রুমে আসলাম। কিছুক্ষণ পরে
সেও
আসল।
.
নতুন বিয়ে করেছি। বউ ছাড়া থাকতে মন চায় না।
বাইরে কিছুক্ষণের জন্য গেলেও মন টেকে না। খালি
বউয়ের কথা মনে পড়ে। বলতে পারেন আমি একটা বউ
পাগল। জাহিদ হাসানের বউ পাগল নাটকের মত আমি
কিন্তু বউ পাগল না। জাহিদ হাসান এর পুরোটা জুড়েই
শুধু তার বউ। বউ ছাড়া সে কিছুই বুঝে না। বউ ছাড়া
আমাকে অন্যকিছু বুঝতে হয়।
.
:- দুলাভাই। ও দুলাভাই।
:- কি হইছে শালীরা?
:- আপনাদের গ্রাম ঘুরে দেখব।
:- চল নিয়ে যাই।
:- না দুলাভাই। আপনি নতুন বিয়া করছেন না? আমরা
বরং বেয়াইরে লইয়া যাই।
:- তোমরা রেডি হও। আমি বান্দরটারে ফোন দেই।
:- ফোন দেন।
দিলাম ফোন। আকাম কুকামে একটু বিজি থাকে তো
তাই দ্বিতীয় বার রিসিভ করল।
:- কই তুই?
:- এইতো ভাইয়া।
কথাটা বলেই রুমে উকি দিল। কিন্তু লাইন তখনো
কাটে নাই।
:- হারামজাদা! দরজার পাশে থেকে ফোন রিসিভ
করস। আমার দুইটা টাকাই নষ্ট হইল।
:- দুইটাকার জন্য আমারে বকা দিলা?
:- টাকার জন্য দেই নাই। তোর বুদ্ধি দিন দিন লুপ
পাইতেছে সেই জন্য দিছি।
:- কি জন্য ডাকছ ভাইয়া?
:- তাগোরে লইয়া ঘুরতে যা। ওরা গ্রাম ঘুইরা দেখব।
:- এই তোমরা চল। ভাইয়া অনুমুতি দিয়ে দিছে।
:- এই খাড়া।
:- আবার কি হইল ভাইয়া?
:- আমি অনুমুতি দিছি মানে?
:- তোমার কাছে আসার আগে আমার কাছে গিয়ে
গ্রাম ঘুরে দেখার বায়না ধরল। আমি বললাম, ভাইয়া
আমারে বকা দিব। তোমরা যদি অনুমুতি লইতে পার
তাহলে আমার কোন সমস্যা নাই।
:- ওরে পাজিরে! তুই তাহলে নাটের গুরু?
:- হ।
.
আমি বিছানা থেকে নামতে নামতেই ও দৌড়ে
পালাল। আর আমাদের দুইভাইয়ের কীর্তি দেখে বউ
তো হাসতে হাসতে মাটিতে লুটিয়ে পড়তেছে।
:- এই তুমি আবার হাসতাছ কেন?
:- তোমাদের কান্ড দেইখ্যা।
:- তাহলে তো তুমি মইরা যাবা।
:- কেন?
:- এই কাহিনী কিছুই না। আরো কাহিনী দেখলে
হাসতে হাসতে দম আটকে মারা যাবা।
:- থাক। তাহলে আর ঐরকম কাহিনী করো না। পরে
যদি মারা যাই।
:- অবশ্য হাসলে মানুষ। সুস্থই থাকে।
.
কালকে আমাদের জামাই বউরে শ্বশুড়বাড়ি থেকে
নিতে আসবে। গ্রাম্যভাষায় যাকে বলে ফিরাফিরি।
তিনদিন পরে কল্পনার বাবার বাড়ি বা আমার
শ্বশুড়বাড়ি যাচ্ছি। বিয়ের পর প্রথম শ্বশুড়বাড়ি
যাওয়া। অন্যরকম একটা আমেজই থাকে। অবশ্য
বিয়ের আগে বহুবার গিয়েছি। তখন যেতাম মামার
বাড়ি আর এখন শ্বশুড় বাড়ি। নিশ্চয়ই আগের থেকে
এখন যত্ন অনেক বেশী করবে। যেহেতু মেয়ের
জামাই।
সকাল থেকে উঠেই আরম্ভ হল বউয়ের প্যারা।
বাপেরবাড়ি যাবার জন্য একেবারে উতলা হয়ে
গেছে। যেন তর সইছেই না। জিজ্ঞেস করতে খুব
ইচ্ছে
করছে। বাপের বাড়ি যাবার জন্য এতটান তাহলে
বিয়ে বসতে বলছে কে? কি দরকার ছিল বিয়ে বসার?
.
এই ফোন করে দেখনা রওনা দিয়েছে কি না? পথে
আসতে কোন অসুবিধা হল না তো? এইসব প্যাচাল
পারতে পারতে কান ঝালাপালা করে দিল।
আবার কিছুক্ষণ পরে এসে বলল। কোন শাড়ি পড়ব?
কোন গহনা গুলো পড়ব? কপালে কি টিপ দিব? দিলে,
কোন রঙের দেব? চোখে কি গাঢ় করে কাজল দিব
নাকি হালকা করে দেব? এইসব প্রশ্ন করছিল। আমি
খুব বিরক্ত বোধ করছিলাম কল্পনার এহেন প্রশ্ন করা
শুনে। কিন্তু মুখে বিরক্ত ফুটিয়ে তোলা যাবে না।
যতই বিরক্ত হই বুঝতে দেওয়া যাবে না। তাই এক
কথায়ই উত্তর দিলাম।
কল্পনা, তুমি এমনিই এক রমনী। যা পড়বে তাতেই খুব
সুন্দর মানাবে। তোমার যেটা খুশী পড়ে নাও।
খুশী মনে কল্পনা চলে গেল। ড্রেসিংটেবিলের
সামনে টোলে বসে সাঁজতে ছিল। আমি দেখছিলাম।
আর ও সেখানে বসেই আমাকে তাগিদ দিচ্ছিল যেন
আমিও তাড়াতাড়ি রেডি হই।
.
কিন্তু হচ্ছি না। মনটা খুব খারাপ। সবকিছু এলোমেলো
লাগছে। আমি খুব করে চাইছি যেন শ্বশুড়বাড়ি থেকে
লোকজন দেরী করে আসে। যদি শুনতাম আজ আর
আসবে না। কালকে বা অন্যদিন আসবে। তাহলে
সবচেয়ে বেশী খুশী হতাম।
.
ঐ ভাবে তাকায়ে আছেন কেন? আবার অবাক হয়ে
গেলেন? নাহ! আপনাদের নিয়ে পারি না। আচ্ছা
আপনারা গল্প শুনতে আসেন নাকি অবাক হতে
আসেন?
নিশ্চয়ই মনে মনে ভাবছেন। সবাই খুশী হয় আর আমি
শালা সেই দেবদাস যে কষ্ট পাচ্ছি। আরে ভাই কিছু
জানেন না। তাই হয়তো আমাকে দেবদাস ভাবছেন।
আগে জেনে নিন তারপর যা বলার বইলেন।
.
আসেন তাহলে এক সপ্তাহ পিছনে যাই। কি হয়েছিল
একসপ্তাহ আগে?
.
আমি আর কল্পনা মামাতো ফুফাত ভাই বোন। কবলে
পড়ে এখন স্বামী স্ত্রী।
.
কল্পনা ওর ভার্সিটির এক সিনিয়র ছেলেকে
ভালবাসত। একই ভার্সিটিতে মাষ্টার্সে পড়ত। আর
কল্পনা অনার্সে পড়ত।
আমার মামা ছিল একগুয়েমি টাইপের। নিজে যা
ভাল বুঝত তাই। মামি তো দূরের কথা কোন কোন
ক্ষেত্রে নানা নানির কথাও মানত না। এই যেমন
বিয়ের ক্ষেত্রেও মানে নি। মামা কোন এক মাধ্যমে
জানতে পেরেছিল কল্পনা প্রেম, ভালবাসায়
জড়িয়ে পড়েছে। তখনি তার মাথা নষ্ট। যেকরেই
হোক বিয়ে দিয়ে দেবে। দরকার হলে বিয়ের পরে
অনার্স শেষ করবে। তবুও প্রেমের বিয়ে মেনে
নিবে
না।
.
পজেটিভ দিক হল। মামা আমাকে খুব পছন্দ করত ছোট
বেলা থেকেই। উনিই একমাত্র মামা যিনি আমাকে
কাধ থেকে ফেলে দিয়ে ব্যথা দিয়েছিলেন। আমি
যখন ব্যথা পেয়ে কাদতে ছিলাম তখন তিনি আমার
চেয়ে বেশী কেঁদেছিলেন। যেন আমি নয় উনিই
কষ্ট
পাইছে। লজ্জার কথা কি বলব? যখন মুসলমানি
করানোর জন্য কেউ রাজি করাতে পারছিল না। তখন
মামাই আমাকে রাজি করেছিল। এবং উনিই হাত
দিয়ে চোখ ধরেছিল। দেখে যেন চিৎকার,
চেঁচামেচি না করি। বড্ড ভালবাসত আমায়। মামা
যতটা না আমায় ভালবাসত উনার মেয়ে মানে
কল্পনা দ্বিগুণ হারে ঘৃণা করত।
মামা আরেকটা কারণে আমাকে খুব ভালবাসত।
কারণ আমি প্রেম করতাম না। একবার
জড়িয়েছিলাম। মামার সিদ্ধান্তেই তাকে ছেড়ে
চলে আসি। খুব কথা মানতাম তার জন্য আমাকে পছন্দ
করত। আমাকে পছন্দ করার অনেক কারণ আছে।
.
এদিকে অন্যসবাই সেই ছেলের সাথে বিয়ে দিতে
রাজি। মামা কেবল একাই আমার সাথে বিয়ে দিতে
রাজি। যখন মামা, নানা নানি ও অন্যান্য মামারা
তর্কাতর্কি করছিল তখন আমি নীরব দর্শক। অনেক
কথা কাটাকাটির পর মামাই জয়ী হল। আরো
কিছুক্ষণ হত। কিন্তু মামা যখন বলল, আমার পছন্দের
পাত্র হল ও ( আমাকে দেখিয়ে ) । তখন সবাই নিশ্চুপ।
উনারা মনে করেছিল বাইরের কেউ। যখন বুঝল মামা
আমাকে ইঙ্গিত করে কথা বলতেছে। তখন সবাই
রাজি। বেকে বসেছিল কেবল কল্পনা। একা বেকে
বসে কি করবে? শেষে রাজিই হইল।
.
বিয়ের আগের দিন রাত্রে । কল্পনা আমাকে
জাম্বুরা গাছের নিচে শান বাধানো পুকুর ঘাটে
ডাকল।
:- তুই কি এই বিয়েতে রাজি?
:- হ্যা। মামার অবাধ্য হতে পারব না।
:- তোকে বিয়ে করলে আমি যে শেষ হয়ে যাব।
:-............... ( নিশ্চুপ )
:- কি হল কথা বল?
:- তাহলে তোর প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে যা।
:- না। তাও পারব না। বাবা ঠিকই খুজে বের করে
ফেলবে।
:- তাহলে কি করবি?
:- তুই ভাব। আমিও ভাবি কি করা যায়?
:- ওকে।
.
কিছুক্ষণ পর।
:- কল্পনা?
:- হুম্ম।
:- কিছু পেলি?
:- না। তুই?
:- হুম্ম।
:- কি পেলি?
:- এই বিয়েতে রাজি হয়ে যা।
:- এই বেক্কল। এটা কোন আইডিয়া হল?
:- হুম্ম।
:- এক থাপ্পড় দিয়ে চাপার দাঁত ফেলে দেব।
:- এই চুপ কর। আমি যা বলি তা মনোযোগ দিয়ে শোন।
:- হুম্ম। বল।
.
তারপর আমার প্ল্যানিং কল্পনাকে জানালাম। সে
তো খুশী হয়ে ফুটবলের মত লাফ দিতে চাইছে। বড়
মেয়ে বিধায় পারতেছে না।
.
আমাদের বাড়ি বেশী দূর ছিল না। তাই রাতেই চলে
আসি। সব প্ল্যান মোতাবেক গড়গর করে এগুচ্ছে।
বিয়ের সব কাজ একে একে শেষ করে বাসায়
আসলাম। কল্পনা এখন তিন কবুলের মাধ্যমে বানানো
স্ত্রী। পরে কি হইল তাতো জানেনই।
ওহ হ্যা। আরেকটু অজানা রয়ে গেছে।
একটা জিনিস তো জানেন। বিয়ের প্রথম রাতেই
হোক বা যেকোন রাতেই হোক। স্ত্রীর মোহরানা
আদায় না করে স্ত্রীকে স্পর্শ করা সম্পূর্ণ হারাম।
তিন কবুলের মাধ্যমে স্ত্রী হয় সত্য কিন্তু দৈহিক
সম্পর্ক হালাল করতে হলে মোহরানা অবশ্যই আদায়
করতে হবে। আমি কবুল বলেছিলাম ঠিকই। কিন্তু
স্ত্রীর মোহরানা আদায় করি নি। এক সাথে, এক
খাটে থেকেছি কিন্তু তাকে সেইভাবে স্পর্শ করি
নি। এই স্পর্শ কিন্তু সাধামাটা স্পর্শ না। যেহেতু
বিয়ে করা বউ সেহেতু আমি তার রুপ লাবণ্য দেখতেই
পারি। সেই সার্টিফিকেট আমার আছে।
এটাই ছিল আমাদের প্ল্যান। আমরা স্বামী স্ত্রী হব
ঠিকই কিন্তু আসল নয়। তিনদিনের ফিরাফিরির সময়
তার প্রেমিকের হাতে তুলে দিয়ে আমি চলে আসব।
এটা ছিল দীর্ঘ এক সপ্তাহের কাহিনী। শ্বশুড়বাড়ি
থেকে লোকজন আসল। অতিথি আপ্যায়ন করে আমি
চললাম শ্বশুড়বাড়ি। বউতো খুশিতে আত্মহারা।
তিনদিন পর তার প্রেমিককে দেখতে পাবে।
আমিতো ভিতরে ভিতরে খুব কষ্ট পাচ্ছি। কিন্তু
উপরে হাসি খুশী থাকতে হচ্ছে। মেকি অভিনয় করতে
হচ্ছে। কিছু সময়ের জন্য নিজেকে পাক্কা
অভিনেতা মনে হল।
.
আমি বুঝতে পারছি ওর হাতেও তেমন সময় নেই।
মামা যদি একবার টের পেয়ে যায় তাহলে আবার
হূলস্থুল কান্ড ঘটিয়ে ফেলবে। তখন সামলানো দায়
হয়ে পড়বে।
.
বাড়ি গিয়ে পৌছেছি সন্ধ্যা নাগাদ। রাতে সবাই
ঘুমিয়ে পড়লে আমাকে ডেকে তুলল।
:- তোমার ফোনটা কই?
:- এতরাতে ফোন দিয়ে কি করবা?
:- বাহ রে! তুমি জান না বুঝি।
:- ওহ। এই নাও।
.
নাম্বার ডায়াল করে বাইরে বারান্দায় চলে গেল।
কি কথা হল জানি না। জানতেও চাই না। ফোনে
অটো রেকর্ডিং চালু ছিল। আমি ইচ্ছা করলেই সব
কিছু শুনতে পেতাম। কিন্তু মানুষটাই থাকছে না।
তাহলে ওর কথা শুনে আমি কি করব? তাই কথা বলা
শেষে ফোন হাতে পাবার পর। তার সামনেই
রেকর্ডিং গুলো ডিলেট করে দিয়েছি। হয়তো অবাক
হয়েছিল নয়তো না।
.
:- কল্পনা?
:- হুম্ম। বল।
:- কি বলল ও?
:- কালকে পালাব।
.
বুকটা ছ্যাত করে উঠল। অন্ধকার ঘর তাই হয়তো বুঝতে
পারে নি। আমার মুখটা কতটুকু নিকষ কালো হয়েছিল।
বুকে হাত দিলেও বুঝতে পারত কত দ্রুত হার্ট পাম্প
করছে। হাতে ধরলেও বুঝত।
.
:- কখন পালাবা?
:- বিকালে।
:- আচ্ছা। আমি কাল সকালেই চা খাওয়ার উদ্দেশ্যে
বের হয়ে বাড়ি চলে যাব।
:- না।
:- কেন?
:- কাল তোমাকে নিজ হাতে রান্না করে খাওয়াব।
:- আমাদের বাড়িতেও তো রান্না করেছ।
:- থাক। তবুও।
কিছু বলতে পারছি না। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার।
তিনদিনেই খুব ভালবেসে ফেলেছি। উহু তিনদিন নয়।
আগেও তাকে পছন্দ করতাম কিন্তু নিয়তি আমাদের
মেনে নেবে না তাই মনের কথা ওকে জানাই নি।
কল্পনাও আমাকে খুব ভালবেসে ফেলেছে। আমি
বুঝতে পারি। মেয়েটা বুঝতেছে না। ওই ছেলেটা নয়,
আমিই ওর ভালবাসা। কল্পনা হয়তো ভাবছে
কৃতজ্ঞতার জন্য এসব করছে। কিন্তু কোনটা কৃতজ্ঞতা
আর কোনটা ভালবাসা প্রকাশ করে সেটা বুঝার মত
জ্ঞান শক্তি আমার আছে। এখন বললেও কোন লাভ
নেই। আরো কৌতুক করবে আমাকে নিয়ে। কি দরকার
আছে নিজেকে জোকার বানিয়ে?
আমি কল্পনাকে ঘুমিয়ে পড়তে বললাম। প্রতিদিনের
মত আজ চতুর্থতম রাতেও আমাদের মাঝখানে
কোলবালিশ রয়েছে। সকাল হল। রাতে যেন কিছুই হয়
নি এমন স্বাভাবিক আচরণ দুজনেই করছিলাম।
কাউকে বুঝতে দিচ্ছি না। খুব নিখুত ভাবে চেষ্টা
করছি। তারপরেও যদি কেউ বুঝে যায়। তাহলে বলব
মানুষ চেনায় সে খুবই নিখুত। অন্তত তার চোখ কে
ফাঁকি দেওয়া অসম্ভব।
.
কিভাবে পালাবে সেই সুযোগ সে খুঁজছে। কিছুতেই
কিছু হচ্ছে না। কারো না কারো নজরে আছিই। এক
পলকের জন্য আড়াল হতে পারছি না। মামা মনে হয়
সবাইকে বলে দিছে। সবাই যেন আমাদের উপর কড়া
নজর রাখে।
.
খুব হতাশ হচ্ছিল কল্পনা। হবারই কথা। প্রেমিককে
অপেক্ষা করিয়ে রেখেছে। এমন সময় একটা মোক্ষম
সময় আসল। আমরা কারো বাড়িতে বেড়াতে যাব।
কাছেই তাই আমাদের দুজনকেই পাঠাবে।
দেখতে দেখতে সময় হল। বেড়ানোর উদ্দেশ্যে
বেরিয়ে পড়লাম। যদি ব্যাগ নিয়ে বের হই তবে সবাই
সন্দেহ করবে। তাই আমার আর ওর দুজনের কাপড়
চোপড়ই বাড়িতে রেখে আসছি।
.
ওর প্রেমিককে খুজে পেতে বেশী সময় লাগল না।
স্টেশনেই অপেক্ষা করতেছিল। ওকে দেখা মাত্রই
আমার হাত এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিয়ে দিল দৌড়।
আমি খুব ভাল করেই বুঝতে পারছি। কল্পনা ওর
প্রেমিকের বুকে ঝাপায়ে পড়বে। সেই দৃশ্যটা
আমাকে দেখতে হবে। পারব না সহ্য করতে। ওর সাথে
দেখা না করেই চলে আসি। বাসে উঠে পড়ি আমি।
ঘন্টা দুয়েক পরে বাড়ি ফিরে আসি। আমি ফোন
সুইচড অফ করে ফেলেছি। যাতে কেউ না পায়
আমাকে। এতক্ষণে মামা নিশ্চিত খবর পেয়ে গেছে।
যেখানে বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল সেখানে
ফোন করে হয়তো জেনেও গেছে আমরা
ঠিকমতো
পৌছেছি কি না?
.
বাড়িতে আসলে অনেকেই অনেক প্রশ্ন করেছে।
কিন্তু কারো প্রশ্নের উত্তর দেই নি। দুইদিন কেটে
গেল। কেউই কোন কথা বের করতে পারে নি।
.
একটু বাইরে গিয়েছিলাম। বাইরে থেকে ফিরে এসে
দেখি মামা এসেছে। ভিতরে গিয়ে বুঝতে পারলাম।
আরো কেউ এসেছে। কিন্তু কে এসেছে তা জানি
না।
মামা আমার দিকে যে দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেই
দৃষ্টির সাথে আমি পরিচিত নই।
.
আমি আচমকা কল্পনাকে দেখে চমকে গেলাম। তার
চোখে অনুসূচনা আছে। তা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।
:- তুমি?
:- হ্যা।
:- এখানে কেন?
:- কোথায় থাকব?
:- যেখানে থাকার কথা।
:- সেখানেই তো আছি ।
:- ফাইজলামি কর। এক থাপ্পড়ে সব দাঁত ফেলে দেব।
:- তাই দাও। তবুও তাড়িয়ে দিও না। আমি বড্ড ভুল
করে ফেলেছি। প্লীজ ক্ষমা করে দাও।
:- কিসব বাজে বকতেছ?
:- ঠিকই বলছি।
:- ও ( প্রেমিক ) কোথায়?
কিছু না বলে একটা রেকর্ড শুনাল।
যার মূল বিষয় হল। ওর প্রেমিক ওকে খুব বাজে
ভাষায় কথা বলেছে। আর এও বলেছে। তুমি যে
এখনো ভার্জিন আছ সেটা মরে গেলেও বিশ্বাস করব
না। আমার তো ঐ লুইচ্চার কথা শুনে কান গরম হয়ে
গেল। সবাইকে এক ভাবে। রাগে মাথা গরম হয়ে
গেল। তাই উল্টাপাল্টা করে দুই গালে দুটি বসিয়ে
দিলাম।
:- কেমন ছেলেকে ভালবেসে ছিলি তুই? যে কিনা
তোর ভার্জিনিটি নিয়ে সন্দেহ করে।
:- আমার ভুল হয়ে গেছে। মাফ করে দাও। আমি মানুষ
চিনতে ভুল করেছিলাম। তাই তোমাকে অনেক কষ্ট
দিয়েছি। স্বামী হবার পরেও তোমাকে অধিকার
আমি দেই নি। সেই হিসেবে ক্ষমা পাবার যোগ্যতা
আমার নাই। তবুও যদি ক্ষমা করে দাও খুব খুশী হব।
:- তুমি যে পাপ করেছ তার শাস্তি তোমাকে পেতেই
হবে। আর আমি ওই ছেলেটির মত নই যে তোমাকে
ফিরিয়ে দেব।
.
কল্পনা আমাকে ঝাপটে ধরল। যত দ্রুত ঝাপটে ধরল
তত দ্রুতই তাকে ছাড়িয়ে দিলাম। আর বললাম।
এভাবে হবে না। আগে সবার মন জয় কর। বিশেষ করে
আমার। তারপরেই তোমাকে পরিপূর্ণ স্ত্রীর মর্যাদা
দেব। এর আগে স্ত্রীর মর্যাদা পেতে চাইলে
মর্যাদা তো পাবেই না বরং ডিভোর্স পেপারে
সাইন করা লাগতে পারে। তুমি যে সবার মনে এত
কঠিন একটা দাগা দিয়েছ তা সহজে যাবার মত না।
আর এই দাগাটাই যত সহজে দূর করতে পারবে তত
তাড়াতাড়িই স্ত্রীর অধিকার পাবে।
:- এত কঠিন শর্ত আমার মেয়েকে দিওনা বাবা।
পারবে না ও।
:- আপনি চুপ করুন। যা বলেছি তাই। ছয় মাসের মধ্যে
পারলে আপনার মেয়ে আমার স্ত্রী হবে নয়তো
ডিভোর্স নিতে হবে। এই কলঙ্কিনী মেয়ে নিয়ে
বসে থাকলে আমার হবে না।
:- কলঙ্কিনী বললে আমায়? একথা বলতে পারলে
তুমি?
:- যে স্বামী রেখে প্রেমিকের হাত ধরার মত নিকৃষ্ট
চিন্তা করতে পারে সেতো কলঙ্কিনীই বটে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন