তেহাড়ীর পাতিল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে লোকেরা। বেশ হই হুল্লোর চলছে। ঢাক-ঢোল পেটানো। একজন কম পেলেই সব উল্টিয়ে ফেলবে! যে যার যার হাতে হাতে নিয়ে খেয়ে ফেলছে তাদের রাতের খাবার। মনে হয়, ভালো স্বাদের হয়েছে! দু'জনকে দেখলাম ২ প্লেট করে তেহারী পুড়ে নিয়েছে!
আমি ক্যানন ৬০-ডি এর ফ্রেম এ একটা জুম লেন্স লাগানো অবস্থায় তাকিয়ে আছি। এপারচার টেস্ট করছি। মনে হয় লেন্স ঠিক মতো মোছা হয়নি। সামনে এক বিশাল স্টেইজ। ৩টা সোফা। ২টা ছোট। ১ টা বড়! ফ্রেম মাঝের সোফাটায় তাক করে রেখেছি।
মেয়েটার চেহারার গ্লো টা অনেক সুন্দর লাগছে। ক্যামেরায় খুব ভালো লাগছে। খাওয়ার সময় হয়েছে বলে সবাই ব্যস্ত খাবার নিয়ে। বউ যে একা বসে আছে তার কোন বিকার নেই। সামনে
একখানা টেবিল ভরপুর আঙ্গুর, সেমাই, কাবাব, মিষ্টি আর তুথপিক এ।
একখানা টেবিল ভরপুর আঙ্গুর, সেমাই, কাবাব, মিষ্টি আর তুথপিক এ।
পাশে আবার মৌচাক মার্কেট এর পেছনে আনারকলি মার্কেট থেকে কেনা সিল্ভার রঙ করা ৩টা বাটি। একটাতে হলুদ, বাঁটা হলুদ, আরেকটাতে মেহেদি। অন্যটাতে একটা নেভা প্রদীপ। হলুদের বাটিটা অগোছালো। এব্রো-থেব্রো। অনেকে হাত দিয়েছে যে।
ওহ আচ্ছা আমার অবস্থা। ক্যামেরা তাক করে বসে আছি। ২-৩টা ক্লিক করলাম। ফ্রেম এর ডান পাশে রেখে ছবি তুলতে আমি বেশি পছন্দ করি। আজকে আসার পর ৫৬৮তম ছবিটা তুললাম। মজার বিষয় ২০৩ খানা ছবি শুধুই মাঝের সোফায় বসে থাকা মেয়েটার। আসলে আমি এখানে ছবি তুলতে এসেছি। মেয়েটা আমার বান্ধবী। পুরানো বান্ধবী। হয়তো আরেকটু
এই হাসি দেখে জীবনে অনেকবার পড়েছি! এই হাসি দেখে দেখে অনেক রাত কাটিয়েছি। ফোনের ওয়ালপেপার ছিল প্রায় ৬ বছর। অনেক ভালো ছিল দিনগুলো। আর তার কণ্ঠের যাদু ছিল অলৌকিক। সত্যি অলৌকিক। আর কিছু করা লাগতো না। শুধু তার কথা শুনেই আমার দিন-রাত পূরণ হয়ে যেত।
সম্পর্কটা ভেঙ্গেছিলামও আমি। কেন ভেঙ্গেছিলাম। কি উদ্দেশ্য ছিল? তা আমি জানি না। সম্পর্ক ভাঙলেও কখনো ভুলতে পারিনি এই নারীকে। পড়ে ও অন্য ছেলের মনে জায়গা করে নিয়েছিল। মানব-মন তো। কনফিউশন এ ভরপুর। কনফিউশনে ও সবসময় ছিল। এই কনফিউশনও ওর মনে ছিল যে আমি ? নাকি ঐ আরিফ। যাই হোক সে আরেকদিন বলবো।
যখন আজ প্রথম দেখলাম ওকে। ২ বছর পর দেখা হয়েছে আমাদের। আমার
বয়স ২৬। প্রেমটা হয়েছিল ১৬ বছর বয়সে থাকতে। ১০ বছর। গত ৩ বছরে ও আমাকে দেখেনি। আমি দেখেছি বহুবার। কখনো স্বপ্নে কখনো বাস্তবজীবনে। মানে মাঝে মাঝে ভার্সিটি থেকে আসার সময় ক্লাস কম থাকলে ওর বাসার ওদিক থেকে ঘুরে আসতাম। মাঝে মাঝে দেখতাম। আমাকে দেখেনি ঐ ভাবে কখনো। দেখতে চায়নি হয়তো। ভুলে গিয়েছিল আমাকে।
আজ দেখে অবাক দৃষ্টিতে প্রায় ৪.৬৯৮৭ সেকেন্ড ধরে তাকিয়ে ছিল। জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেমন আছো? জবাব দিয়েছিল অবাকভাবেই। ভালো আছে। আমাকে ও অনেক ভালোবাসতো। আমার থেকে অনেক বেশি। অনেক অনেক বেশি। তার হাতে হাত রেখে অনেক অনেক দিন হেটেছি ফুটপাথ ধরে। সময়ের টের পাইনি। অদ্ভুত ছিল ঐ দিনগুলো। অদভুত। জিজ্ঞেস করেছিল আরো, বাসার সবাই কেমন আছে? রায়হান
কেমন আছে? বললাম ভালো আছে। রায়হান আমার ছোট ভাই।
এখনো ক্যামেরার ফ্রেমেই তাকিয়ে আছি। পেছন থেকে একটা হাত রাখলো কেউ কাঁধের ওপর।
এক বন্ধু। খাওয়ার জন্য ডাকছে। বললাম, এখন খাবো না। ইচ্ছে করছে না। আজ আমি এখানে বসে দেখবো। শুধু দেখবো। আজই শেষ। আর কোনদিন তাকে দেখতে পারবোনা তাকে। এতক্ষণ ধরে। এত সময় নিয়ে। এত ভালোভাবে। এত কাছ থেকে। আজ সত্যি সত্যি চলে যাবে ও। আর কোনদিন ওর কণ্ঠ আমার কানে বাজবে না। কোনদিন আর ওর ১ মিটারেও আসতে পারবোনা।
কথা বলতে বলতে ভোর হয়ে যাওয়া দিনগুলি কখনো ফিরে পাবোনা। চিরতরে হারিয়ে ফেলেছি। আর, তার চোখগুলো দেখে নিঃশ্বাস আটকে যাবে না এক্সাইট্মেন্ট এ!
থাকুক। হয়তো আরিফ ওকে অনেক সুখে রাখবে। সবচেয়ে সুখি রাখে যেন ওকে আরিফ সেই প্রার্থণা করি।
খাওয়া-দাওয়া শেষ। হলুদ লাগানোর দ্বিতীয় রাউন্ড শুরু হচ্ছে। ছবি তুলতে হবে। ওর অনেক কাজিন। ২৬টা কাজিন ওর! গায়ে হলুদ এ কি রমরমা অবস্থা বুঝতেই পারছেন।
একের পর এক শাটার পরলো। ছবির পরিমান ১২৫২ তে গিয়ে পৌছুলো। ছবি তোলা শেষ! রাত ১১ টা বাজে।
এবার নাচ গান আর ফুর্তির পালা শুরু। এগুলোতে আমি সবসময় মেতে থাকি কিন্তু আজ আমার দ্বারা এগুলো হবেনা। গান বাঝছে। বুক কাপানো গান। চলছে লাইটিং এর খেলা। ও বসে আছে। কাছে গেলাম। শেষ কিছু কথা বলে নেই।
কেন যেন অতো হাসি-খুশি না। বললো, "হয়তো। কিন্তু তুমি কি আমাকে এখনো ভালোবাসো ? আগের মতো?" । মুচকি হেসে উঠলাম আনমনে। বললাম,"জানি না। ভালোবাসা দেখতে কেমন আমি জানিনা। তোমাকে ভালোবাসিকিনা তাও জানিনা। কনফিউসড। মনে হয় বাসি।" ও আমার চোখের দিকে তাকিয়েছিল। একটু হালকা হাসলো। আর বললো, "আমি তো তোমাকে চিনি। আমি জানি তুমি আমাকে এখনো আগের মতোই মনে রেখেছ।" আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, "তবে কেন আবার শুরু করোনি কেন? আমরা তো আরেকবার চেষ্টা করতে পারতাম।" "হয়না। আর হয়না। আরিফকে আমি ভালোবেসেছিলাম। নতুন করে। তোমাকে ভুলতে আমার ২ বছর লেগেছে। তাও পারিনি। দেখেছি তোমাকে অনেকবার বাসার আশেপাশে। ইচ্ছে করতো কখনো গিয়ে জিজ্ঞেস করি তোমার অবস্থা। কিন্তু হয়নি। আরিফকে দিয়ে দিয়েছি আমি
কেন যেন অতো হাসি-খুশি না। বললো, "হয়তো। কিন্তু তুমি কি আমাকে এখনো ভালোবাসো ? আগের মতো?" । মুচকি হেসে উঠলাম আনমনে। বললাম,"জানি না। ভালোবাসা দেখতে কেমন আমি জানিনা। তোমাকে ভালোবাসিকিনা তাও জানিনা। কনফিউসড। মনে হয় বাসি।" ও আমার চোখের দিকে তাকিয়েছিল। একটু হালকা হাসলো। আর বললো, "আমি তো তোমাকে চিনি। আমি জানি তুমি আমাকে এখনো আগের মতোই মনে রেখেছ।" আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, "তবে কেন আবার শুরু করোনি কেন? আমরা তো আরেকবার চেষ্টা করতে পারতাম।" "হয়না। আর হয়না। আরিফকে আমি ভালোবেসেছিলাম। নতুন করে। তোমাকে ভুলতে আমার ২ বছর লেগেছে। তাও পারিনি। দেখেছি তোমাকে অনেকবার বাসার আশেপাশে। ইচ্ছে করতো কখনো গিয়ে জিজ্ঞেস করি তোমার অবস্থা। কিন্তু হয়নি। আরিফকে দিয়ে দিয়েছি আমি
সব। আরিফই এখন আমার একমাত্র মানুষ। আগে বলতাম না? একজন আসল পুরুষ পেলে বিয়ে করবো? এই আরিফই আসল পুরুষ! ও-ই পারবে আমাক স্বপ্ন পূরণ করতে। সুখে রাখতে।" আমার চোখ জ্বলছিল। অদ্ভুত এক অনুভূতির মাঝে হারিয়ে যাচ্ছিলাম ওখানে দাঁড়িয়ে। বললাম, "ওহ তাহলে আমাকে ভুলে যাওনি? কিন্তু তুমি এরকম মন খারাপ করে বসে আছো কেন? আজ তো তোমার সবচেয়ে খুশির দিন! কাল তুমি নতুন জীবন শুরু করবে। অনেক সুন্দর করে। অনেক অনেক সুন্দর করে!" "জানি না। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, আমি কিছু একটা ভুল করছি। আর তোমাকে দেখার পর থেকে কেন জানি আগের কথা অনেক মনে পড়ছে। অনেক! আমাকে কেন এভাবে ভালোবাসতে?" বললাম, "ওসব ভুলে যাও। ওসব ইতিহাসেও আর নেই। সময়কালে অনেক কিছু হয়। ভুলে যাও তুমি। আমিও তোমাকে ভুলে যাওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। ভালো থেকো।" দেখলাম ওর চোখ কোন এক কারণে ছলছল করছে।
উঠে ক্যামেরার ব্যাগটা গুছিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিলাম। সবকিছু কেমন যেন আজব লাগছিল। বাস্তবতার কাছে বারবার হেড়ে যাই। আর দেখবো না তাকে! এটা ভাবলেই সব গুলিয়ে আসে! ক্যামেরা থেকে মেমোরি কার্ডটা বের করে ছুড়ে ফেলে দিলাম।
ওহ পরিচয় দেইনি আমার। আমার নাম নাফিস। আর ঐ মেয়েটার নাম, সুইটি
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন