বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

"জোৎস্না বিলাসী"

মেয়েটির নাম রুপা ।
আমাদের ফ্ল্যাটে নতুন এসেছে।প্রথম যেদিন 
দেখেছিলাম সেদিনই ভালো
লেগে যায়,কিন্তু কখনো কথা বলার সুযোগ
পাইনি।মাঝে মাঝে 
তাদের রুম থেকে
চিল্লাচিল্লির 
আওয়াজ ভেসে আসত।আমার রুমটা তাদের রুমের
পাশাপাশি হওয়ায় 
আমি কান পেতে শুনতাম যে,তার মা তাকে
গালিগালাজ করছে।তখন
রুপার জন্য খুব 
মায়া লাগত।ভাবতাম,এ কেমন মা?
যে তার মেয়েকে সব সময় বকাঝকা করে।
পরে জানতে পারি উনি রুপার 
সৎমা,তাই তাকে এত 
বকাঝকা করে।আচ্ছা, সৎ মায়েরা 
এমন হয় কেন?আমারো সৎ মা আছে আমাকেও খুব বকে।
তবে আমি ওসবে 
একদম কান দেয়না।
.একদিন রাতে বাসায় ফিরে এসে শুনলাম,রুপাকে আজ তার মা মেরেছে।একথা শুনে আমি অনেক কষ্ট 
পেলাম কিন্তু আমার তো 
আর কিছু করার ছিল না।সেদিন রাত্রে না খেয়েই শুয়ে পড়লাম কিন্তু কিছুতেই ঘুমোতে পারছিলাম না।বারবার শুধু রুপার কথায় মনে পড়ছিল
তাই ভাবলাম ছাদ থেকে একটু ঘুরে আসি।ছাদে গিয়ে 
দেখি রুপা ছাদের রেলিং ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে কাদছে।আমি পেছন থেকে গিয়ে 
ছোট্ট করে একটা ডাক দিলাম 
"রুপা"।আমার ডাক
শুনে সে ভূত দেখার মত চমকে উঠল।পরে স্বাভাবিক হয়ে বলল;
.
-আপনি(রুপা)
-হুম(আমি)
-(নিশ্চুপ)
-কাদছিলে বুঝি?
-এছাড়া তো আর কিছু করার নেই
-আমরা কি বসে কথা বলতে পারি?
-কেন?
-তোমার কি সমস্যা হবে?
-না
-তাহলে?
-আচ্ছ­া চলুন(এরপর দুজনে বসে পড়লাম)
-আজ তোমার গায়ে হাত তুলেছিল বুঝি?
-নিশ্চুপ
-দেখো,,­,আমারও সৎমা আছে,আমাকেও বকাঝকা করে কিন্তু আমি ওসবে কানই দেয় না।যতক্ষণ পারে বকে পরে এমনিতেই আবার থেমে যায়.
তুমিও ওসবে কান দিওনা কেমন?
-নিশ্চুপ
-কি ব্যাপার কথা বলছো না যে?
-নিশ্চুপ
-কি হলো?চুপ কেন?
-আমাকে কেউ ভালোবাসে না,সবাই আমাকে অবহেলা করে।মনে হয় তাদের 
অবহেলার কারণেই একদিন আমি মরে যাব
-আমি তোমার পাশে আছি নিজেকে একা ভেবো না।
-যার পাশে নিজের বাবা মা নেই,তার পাশে আপনি কেন থাকবেন?
-দেখো রুপা,মানুষত্য বলে একটা কিছু আছে
-এখানে আপনি মানুষত্য দেখাতে এসেছেন বুঝি?
-নাহ
-তবে
-একটা অনুভুতি কাজ করে,,,আমরা কি বন্ধু হতে পারি
-বন্ধু হতে চান?
-হুম বন্ধু হতে চাই
-আচ্ছা,ঠিক আছে(অনিচ্ছা থাকা স্বত্তেও বলল)
-এখন যাও ঘুমিয়ে পড়ো,রাত অনেক হয়েছে
-হুম
-গুড নাইট
-গুড নাইট.এরপর থেকে প্রতিরাতে রুপার সাথে ছাদে বসে বসে চাঁদ দেখতাম।
আর সে গল্প-কবিতা শুনতে ভালোবাসতো তাই প্রতিদিন কবিতা শুনার বায়না ধরতা।তাই তার জন্য প্রতিদিন একটা করে হলেও কবিতা লিখে শুনাতাম।গল্প বেশি শুনাতে পারতাম না,কারণ গল্প বিষয়টা আমার মাথায় কম আসে।এভাবেই আমাদের
দিনগুলো অতিবাহিত হচ্ছিল।একবার এক মামাতো 
বোনের বিয়ে উপলক্ষ্যে এক সপ্তাহের জন্য গ্রামের বাড়ি গেলাম।বিয়ে বাড়ির ব্যস্ততায় তাকে ফোনে বেশি
সময় দিতে পারিনি।এক সপ্তাহ গ্রামে কাটিয়ে 
ফিরে এলাম ঢাকায়।তো সেদিন রাতে 
ছাদে গিয়ে দেখি,রুপা 
চাঁদের দিকে তাকিয়ে গুন
গুন করে গান গাইছে,তাই তাকে 
সারপ্রাইজ দেবার 
জন্য চুপি চুপি পেছন থেকে গিয়ে তার চোখ চেপে ধরলাম।
.
-কে আপনি(এক ঝটকায় চোখ থেকে হাত ছাড়িয়ে নিল)
-দেখ কে আমি?
-এখানে কেন এসেছেন?গ্রামেই থেকে যেতেন(অভিমান করলে আপনি করেই বলে)
-সরি,আজ তোমাকে এত্তগুলা কবিতা শুনাব
-না শুনব না।আপনি এখান থেকে যান
-গল্প শুনবে,বিয়ে বাড়ির গল্প
-না
-আরে শুনেই দেখ।মেয়েদের সাথে খুব মজা করেছি বিয়ে বাড়িতে
-ঐ তুই কি বললি?মেয়েদের সাথে,,,,,,,,(শার্টের­­ কলার চেপে ধরে)
-তাতে তোমার কি?
-আমার কি মানে?তোর জন্য মেয়েদের দিকে তাকানোও হারাম
-কেন?তুমি আমাকে ভালোবাসো নাকি?
-আমার ঠেকা পড়েছে যে,তোর মত একটা ফালতু ছেলেকে ভালোবাসতে যাবো?
-কিহ?আমি ফালতু ছেলে!
-হুম,তুমি একটা ফালতু ছেলে
-যাই তাহলে(উঠে আসতে লাগলাম)
-আরে কয় যাও(পেছন থেকে টেনে হাত ধরে)
-আর,ওসব বলবা না,ওকে
-হুম,ওকে,এবার কবিতা শুনাও.রুপাকে কবিতা শুনাচ্ছিলাম আর সে
আমার পিঠে পিঠ রেখে নিরবে কবিতা শুনছিল,কবিতা বলা শেষ হলে গল্প বলতে
শুরু করলাম।গল্পটা 
এত বড় ছিল যে,সে শুনতে শুনতেই কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল 
বুঝতে পারিনি।গল্প বলা শেষ করে তাকে ডাক দিলাম।.
-রুপা,,,,
-নিশ্চুপ
-আরে উঠো
-হুম
-উঠো
-উফ এতরাত হয়েছে,কয়টা বাজে
-বারোটা(মোবাইলে সময় দেখে বললাম)
-সর্বনাশ,বাসায­় গেলে যে কি করবে আল্লাই ভালো জানে,আচ্ছা আসি,গুড নাইট
-গুড নাইট
.পরদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গল রুপার বাসার চিল্লাচিল্লি শুনে।তার মা আজ তাকে
অনেক বকছে।তাকে নিয়ে বিভিন্ন কথা বলছে।যা শুনে আমার খুব কষ্ট লাগল 
তাই আমি বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলাম।দুপুরে বাইরে থেকে বাসায় ফিরে এসে দেখি রুপা আমার রুমে বসে আছে।
-রুপা?
-আজ তোমার সাথে কিছু কথা আছে নীল
-বলো
-আমি তোমাকে ভালোবাসি
-জানি,আর আমিও তোমাকে ভালোবাসি
-আমাকে বিয়ে করতে পারবে?
-বিয়ে তো তোমাকেই করব
-আজ এখন করতে পারবে?
-এখনই কেমনে করব?
-আমার আর এত কষ্ট সহ্য হয়না নীল।আম্মু আমাকে
আজ খুব বাজে বকেছে
-কয়েকটা দিন অপেক্ষা কর।এখন তোমাকে নিয়ে 
কোথায় যাব বলো?
-প্লিজ,নীল,তুমি না করো না।আমি যে আর এত কষ্ট 
সহ্য করতে পারছিনা(আমার হাত ধরে কাদতে কাদতে বলল)
.
.
.
কি আর করব?সেদিনই তাকে নিয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করলাম।এরপর এক
বন্ধুর বাসায় গেলাম।বাসর রাতে ঘরে ঢুকার পর সে আমাকে
সালাম জানাল।এরপর চাঁদ দেখার বায়না ধরল.
..-চল ছাদে যাই
-আজ কেন ছাদে যাবে?
-চাঁদ দেখব
-আজ তো আমাদের বাসর রাত
-বাসর রাত টা না হয় চাঁদ দেখেই কাটিয়ে দেব
-এ কেমন কথা
-হুম,আজ পূর্ণিমা,আজ সারারাত তোমার কাধে মাথা রেখে কবিতা শুনব।
-নাহ,আজ না যাওয়াটাই ভালো হবে-উফ,চল প্লিজ
-আমি যাবো না।(কঠিন হয়ে বললাম)
-কি বললি যাবি না?(পাঞ্জাবীর কলার চেপে ধরে)
-ওরে বাবা,এ কেমন দস্যি মেয়ে?চলো তাহল
-এভাবে হবে না
-তাহলে
-আমাকে কোলে করে নিয়ে যেতে হবে?
-ধুরর,,,পারব না।
-কিহ পারবিনা?(রাগানিত্ব হয়ে)
-আচ্ছা(ভয়ে ভয়ে).
এরপর তাকে কোলে করে নিয়ে ছাদে গেলাম,আর তাকে 
কবিতা শোনাচ্ছিলাম।এভাবে জোৎস্না স্নান করতে 
করতে রাত ১২টা বেজে গেল।আর ততক্ষণে সে আমার 
কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেছে আর সমস্ত চাঁদের জোৎস্না যেন আজ তার মুখে এসে 
পড়েছে।তাই তার চাঁদ বদনে আলতো করে একটা চুমু একে দিয়ে তাকে না জাগিয়ে কোলে করে নিয়ে 
এসে শুয়ে পড়লাম।এরপর বাকিটুকু আপনাদের না জানাই ভালো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন