বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

পাগলী

- শিয়াম।
- কী।
- শিয়াম।
- আরে হ্যাঁ।
- শিয়াম।
- বয়ড়া নাকি? কথা বলতেছি শুনেন না?
- এই যে শিয়াম।
- ধুর।
- এই শিয়াম।
- কী?
- শিয়াম হিহি।
- এত্ত মজা লাগে ক্যান আমাকে শিয়াম ডাকতে? সিয়াম বললে মুখে ব্যাথা লাগে?
- হ্যাঁ শিয়াম।
- প্লীজ আন্টি মাফ চাই শিয়াম বইলেন না মাথা গরম হয়ে যায়।
- তাই শিয়াম?
- ঐ ছেড়ি কইতেছি না শিয়াম না ডাকতে?
- শিয়াম শিয়াম। 
- বইন রে কী জন্য আইছস কইয়া চইলা যা প্লীজ আমারে রাগাইস না রাগাইলে আমি উল্টাপাল্টা কিছু করে ফেলতে পারি।
- কচু। শিয়াম।
- আম্মুউঁ! এইটা আপনি কী করলেন?
- তোমার ঠোঁটটা চেক করে দেখলাম তুমার ঠোঁটে বিষাক্ত কিছু আছে কী না। এখন ডাকো শিয়াম।
- আমি এক্ষণি আম্মুকে গিয়ে বলে দিবো।
- প্লীজ দেরি করিস না তাড়াতাড়ি গিয়ে বল তোর সাথে আমার বিয়েটা যেন জলদি হয়ে যায়।
- পাগল নাকি? আপনাকে বিয়ে করতে যাবো কোন দুঃখে? 
- তোমার আম্মুকে বললেই আমাদের বিয়ে হয়ে যাবে।
- আমি বলবই না।
- তুই বলবি তোর বাপ বলবে।
- কচু। বলবই না।
- সত্যি?
- হ্যাঁ। 
- তাইলে এবার যা।
বালিকা হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। হাহা আমার সাথে মজা নিতে আসে। এক মিনিট আপনারা আবার অন্য কিছু ভাবিয়েন না। আমি বালিকাকে চুমু দেইনি বালিকার ঠোঁটে অনেক জোরে একটা চিমটি দিছি।
শিয়াম ডাকার সময় ঠোঁট দিয়ে ভেঙচি মারে তো সেজন্য। শুধু সমস্যা একটাই দাঁত দিয়ে চিমটি দিছি! আল্লাহ জানে বালিকা সত্যিই সত্যিই আন্টিকে গিয়ে বলে দেয় কী না! 
বড় আপুর ননদ। দুলাভাইয়ের অফিসে যাওয়ার সুবিধার্থে আমাদের বাসার পাশের বাসাতেই তাঁরা থাকে। বাসা চেঞ্জ করে। আর সেজন্যই আমার এই প্যারাকে সহ্য করতে হয়।
অহ নো বলতে না বলতে আবার বালিকার আগমন! এসেই জোর গলায় বললঃ-
- শিয়াম।
- কামর খাইতে আসছেন আবার?
- না আমি প্রতিশোধ নিতে আসছি।
- তাহলে ঠিকাছে আমার ঠোঁটে কামর দিয়ে প্রতিশোধ নিয়ে নেন।
- পাগলের শখ কত! আমি আপনাকে মারবো এখন।
- তা দা-ছুরি কিছু আনছো সাথে?
- হুম্ম আপনি চোখ বন্ধ করেন। 
- কেনো ঠোঁটে কামর দিবা নাকি?
- বদমাইশ। 
আবার রাগ করে চলে গেলো। বোকা মেয়ে উস্তাদকে কে রাস্তা চেনায়! নিশ্চিত এখন গিয়ে বাচ্চাদের মতো ওয়াঁ ওয়াঁ করে কাঁদছে নিজের রুমে বসে। 
আজকে একটু বেশিই রাগিয়ে দিলাম কারণ আর তাঁকে এভাবে রাগানোর সুযোগ পাবো না। চাকরীটা অবশেষে হয়েই গেলো! মা বাবার বোঝা কমলো। 
ঢাকা ছেড়ে একেবারে ফেনি! কপাল সবই আমার কপাল। কালকেই আবার ট্রেন ধরতে হবে। আবার বালিকার আগমন! সময় অসময় বুঝে না।
এবার চোখমুখ দেখি শান্ত! এই মেয়ের মুখ এরকম থমকে যাওয়া সপ্তম আশ্চর্য! সবসময় মুখে একটা হাসি লেগেই থাকে। বুঝলাম বেশি করে ফেলেছি।
ফলমূল কাটার ছুড়ি একটা আমার বিছানার নিচে থাকে ওটা নিয়ে কানা তুক্কু কণার হাতে দিয়ে বললামঃ- 
- নাও প্রতিশোধ। 
- সিনেমার ডায়লগ বন্ধ করেন।
- যাহ বাবা তুমি প্রতিশোধ নিবা না?
- আপনার মা দেখলাম আপনার সব কাপড়চোপড় গোছাচ্ছে। কোথাও যাবেন নাকি?
- ওহ নো! তুমি আমার চাকরীর মিষ্টি পাওনি? তাহলে তোমার সাথে বেঈমানি করা হইছে।
- আমি তো ভেবেছিলাম এমনিই ফান করে হয়তো ভাবী বলেছে আপনার চাকরী হয়ে গেছে।
- গরীবের সুখ কারো সহ্য হয় না। আমার চাকরী হয়েছে বলে আপনি যে খুশি না সেটা আমি বুঝেছি।
- শিয়াম।
- বলেন ম্যাম।
- শিয়াম বললাম রাগ করবেন না?
- না।
- কেনো? 
- আজকের দিনটাই তো আছে যত ইচ্ছা ডাকো তারপরে তো আর সুযোগ পাবে না। শুনেছি ফেনির মেয়েরা নাকি অনেক কিউট হয়। ঈদের সময় একেবারে একটা ফেনির কিউট বালিকা বিয়ে করে নিয়ে চলে আসবো। 
- ফেনি গিয়ে চাকরী না করলে হয় না?
- আপনার বাবা আমাকে খাওয়াবে তাহলে? বড় হইছি না? তাছাড়া তোমার যন্ত্রণার থেকে কমপক্ষে বাঁচলাম।
ওমা বালিকা দেখি আবেগ ধরে রাখতে পারলো না। সোজা আমার বুকে! এই সিন বালিকার মা দেখলে সত্যি সত্যিই আমাদের বিয়ে দিবে। বাচ্চাদের মতো কাঁদছে। আমিও শান্তনা দিচ্ছি না। 
ভালই তো লাগে মেয়েরা বুকে থাকলে। তার উপর জড়িয়ে রাখলে তো আর কথাই নাই। কাঁদুক আমি চুপ করে থাকি। বালিকা কাঁদ কাঁদ স্বরে বললঃ- 
- আমি আর কখনো আপনার অবাধ্য হবো না। 
- মনে হচ্ছে আপনি আমার বিয়ে করা বৌ! প্রেমিকাও তো না। হুদাই আপনারে আমি বাধ্য হতে বলবই বা কেনো? 
অহ নো বালিকা আমার গেঞ্জি ভিজায় দিচ্ছে। কাঁদতেও পারে না। হুদাই চোখ দিয়া পানি বের হয়। 
আমার শরীরে যেন কারেন্ট লাগছে! বালিকা চুপ করে আছে বলে আমিই বললামঃ-
- এখন না ছাড়লে কিন্তু কামড় দিবো।
কিছুতেই কিছু হচ্ছেনা দেখে আবার বললামঃ-
- লজ্জা করেনা একটা হ্যান্ডসাম ছেলেকে এভাবে জড়িয়ে ধরতে? খুব মজা না?
কোনোভাবেই তাঁর নাক তুক্কু চোখ থেকে পানি বন্ধ হচ্ছে না। শেষমেশ বললামঃ-
- আই লাভ ইউ।
বালিকা অনেক্ষণ নীরব থাকার পর বললঃ-
- কচু।
- হ।
- সত্যিই কচু?
- হ।
- ফেনির মেয়েরা অনেক সুন্দর না? আর আমি সুন্দর না? 
- আই লাভ ইউ।
- কচু।
- হ।
- উফফ।
- কবুল বল।
- আপনি যে কখন কী বলেন আমার মাথায় ধরে না।
- হ। তুই কিন্তু আমাকে আর ছাড়িস না। একটা সেল্ফি তুলে রাখি তোর আম্মারে দেখাব তাহলে বিয়ের টিকিট কনফার্ম।
- কথার কোনো তারছির নাই। একবার আপনি একবার তুমি আরেকবার তুই। আপনারে বিয়া করার ঠেকা পরছে তো আমার।
- বাঁচাইলেন বইন। একটু আগে যে বলছিলেন আপনি আমার কথার অবাধ্য হবেন না কখনো। আমি ভাবছিলাম সেটা সত্য। তওবা তওবা তওবা আমি আর ভুলেও আপনাকে বিয়ের কথা বলবো না।
কাহিনী পুরো উল্টে গেলো! ভাবছিলাম কানা তুক্কু কণা আমাকে ভালবাসে এখন সেই ভাবা ফিফটি ফিফটি হয়ে গেলো! বালিকাও চলে গেলো!
বাহ আবার স্বাভাবিক ভাবে এসে কথা বলছে। এই জন্যই কবী বলেছেন মেয়েদেরকে কখনো ওয়েট করাইতে নাই। তাঁদের মন যে কখন পাল্টে যায় সেটা তাঁরা নিজেরাই জানে না।
এক রাশ মন খারাপ। কিভাবে যে মেয়েটার মায়ায় পরে গেলাম। এখন তো তাঁর দাম আকাশে উঠে গেছে। ধুর রবীন্দ্রসঙ্গীত ছেড়ে আবারো ঘুমানো যাক।
ধুর ঘুমাতেও পারলাম না। আবার বালিকা হাজির। 
- শিয়াম।
- ঘুমাব প্লীজ মাফ চাই। যান এখান থেকে।
- শিয়াম।
- এবার কামর দিলে হাসপাতালে যাওয়া লাগবে কিন্তু।
- শিয়াম শিয়াম হিহি। 
ধুর যত ইচ্ছা ডাকুক আমি না সারা দিলেই হয়।
- এই শিয়াম।
- একটা দিনই তো আন্টি প্লীজ শান্তিতে থাকতে দেন।
- এইযে শিয়াম। আমি কামড়ের প্রতিশোধ নিবো।
- প্লীজ নিয়া চইলা যান।
- এখন না আরো তিন বছর পরে নিবো।
- অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
- আমার কিন্তু আপনার মতই একটা বাবু চাই। একেবারে ঠিক আপনার মতো হতে হবে। ওর নাম রাখবো সায়েম আর আমি শায়েম বলে রাগাবো। আমাকে আম্মু আম্মু ডাকবে। ইশ কত ভালো লাগবে আমার তখন। কী এই শাস্তি টা গ্রহণ করবেন না?
- হ্যাঁ অব্যশই। আমারও একটা মেয়ে বাবু চাই তোমার মতো। নাম রাখবো এনি। আমি কানী বলে রাগাবো। আর আমাকে আব্বু আব্বু ডাকবে। ইশ কত ভাল লাগবে আমার তখন। কী আমাকে এমন একটা মেয়ে দিবা না?
- হুঁহ শখ কত.....! 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন