চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় যাওয়ার
উদ্দেশে বাসে উঠলাম। একটা
ইন্টারভিউ আছে। উঠে দেখলাম
পাশের সিটে একটা ছেলে বসে
আছে। আমাকে দেখতেই সে উঠে
জানালার পাশের সিটে বসার জন্য
জায়গা করে দিল। কিছুটা অবাক হলাম।
সাধারণত এমনটা খুব কম হয়। জানালার
সিট পাওয়ার জন্য লড়াই করতে হয়।
ধন্যবাদ দিয়ে বসে পড়লাম।
.
জার্নিতে কানে হেডফোন দিয়ে
গান শুনা আমার স্বভাব। বাস ছাড়লো।
আমি কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনে
যাচ্ছি। কিছুক্ষণ পর আব্বুর কল এলো।
> আসসালামু আলাইকুম। বল আব্বু।
- আমি তোকে শেষবারের মত
জিজ্ঞেস করছি তুই কি কাউকে
ভালবাসিস?
> না না না। (কিছুটা চিতকার দিয়ে)
.
বাবা ফোন কেটে দিল। এই "না" শব্দটা
গত এক মাস ধরে বলে আসছি। তবুও
বাবার প্রশ্ন পরিবর্তন হয় না। আরে
বুঝলাম বর্তমান যুগে প্রেম ভালবাসা
কমন ব্যাপার। তাই বলে যে সবার
বয়ফ্রেন্ড / গার্লফ্রেন্ড থাকবেই এটা
তো কোথাও লিখা নাই। তবুও বাবা
এক প্রশ্ন বারবার করে। কিছুক্ষণ পর
বাবার মেসেজ আসল। "ফেসবুকে আয়।"
.
অতঃপর ডাটা অন করে ফেবুতে এলাম।
দেখলাম বাবা একটা ছবি
পাঠিয়েছে। আর লিখেছে "এই
ছেলের সাথে তোর বিয়ের কথা
পাকাপাকি করেছি। তুই এলেই
দিনকাল ঠিক করব।" আমি কোনো উত্তর
দিলাম না। কারণ আমার প্ল্যান
অন্যরকম। চাকরিটা হয়ে গেলেই আপুর
বাসায় উঠে যাব। ৫/৬
বছরেও.চট্টগ্রামে আসব না। হঠাৎ আমার
চোখ ছবিটার উপর পড়ল। একি এতো
আমার পাশের ছেলেটা। আমি
বাবাকে মেসেজ দিয়ে আবার শিউর
হলাম।
.
মনে মনে ভাবতে লাগলাম এটা কি
ভাগ্যের চক্র নাকি বাবারর চক্র?
ছেলেটা নিশ্চয়ই আমাকে চিনে। তাই
তো কিছু না বলতেই সিট খালি করে
দিয়েছে। কিন্তু বাবাকে জিজ্ঞেস
করে জানতে পারলাম ছেলে এখনো
আমাকে দেখেনি। অতঃপর চুপচাপ
বসে রইলাম। আর ভাবতে লাগলাম কি
করব! কিছুক্ষণ পর সিদ্ধান্ত নিলাম
ছেলেটাকে যাচাই করে দেখি
কেমন ছেলে।
.
নিজ থেকে কথা বললাম
> আসলে জার্নিতে চুপচাপ থাকতে
আমার বোরিং লাগে।
- আমারও। কিন্তু আপনি মেয়ে বিধায়
আগে কথা বলতে সাহস পাইনি।
> তো আপনার নাম?
- আকাশ খান। আপনার?
> নিশি চৌধুরী।
.
টুকিটাকি কথা বলে জানতে পারলাম
সেও ঢাকায় যাচ্ছে চাকরির
ইন্টারভিউ দিতে। পরিবারে সেও
আমার মত একাই। আরেকটু কথা বলার পর
জানতে পারলাম তার কোনো
গার্লফ্রেন্ড নেই। সম্পূর্ণ মনোযোগ
পড়ালেখায় দিয়েছে। দুচারটা
অফারও পেয়েছিল। কিন্তু একসেপ্ট
করেনি। এই কথাটা আমি বিশ্বাস
করিনি। যদিও ভার্সিটি লাইফে
আমি কোনো প্রোপোজাল পাইনি।
কিন্তু ভাব রাখার জন্য বলেছি
অনেকগুলো পেয়েছি।
.
কিছুক্ষণ পর লান্সের জন্য বাস একটা
রেষ্টুরেন্টে থামল। এক টেবিলেই
লান্স করলাম। বাট অবাক হলাম এটা
দেখে যে ও শুধুমাত্র নিজের বিলটাও
দিয়েছে। আমার বিলের কথা একবার
জিজ্ঞেসও করেনি। ওয়েটারও আমার
দিকে অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে
ছিল। যাইহোক বিল দিয়ে বাসে চলে
এলাম। চেহারা দেখে যে কেউই
বলতে পারবে রেগে আছি। কিন্তু বেশ
কিছু সময় কেটে যাওয়ার পরেও সে
কিছু বলল না।
.
সাধারণত একা জার্নি করলে আমি
ঘুমাই না। তাই ফেবুতে ঢুকে সময়
কাটাতে লাগলাম।
- কিছু মনে না করলে আপনার ফেসবুক
আইডি দেয়া যাবে?
> আমি ফ্যামিলি মেম্বার ছাড়া
কাউকে লিস্টে রাখি না।
- ইটস ওকে। এটা খুবই ভাল আইডিয়া।
.
সে গান শুনতে লাগল। আমি মনে মনে
আফসোস করতে লাগলাম। ইসস নিজ
থেকে আইডি চাইল বাট দিলাম না।
> তবে আমি অপরিচিতদেরকেও রিকু
দেই।
- বুঝলাম না।
> আপনার আইডি নাম বলেন।
.
অতঃপর রিকু আদানপ্রদান হল। ইঙ্গিত
দিয়ে স্ট্যাটাস দিলাম। "কি বোকা!
একটা মেয়ের সাথে একই টেবিলে
বসে লান্স করল, কিন্তু বিলটা দেয়ার
নামও নিল না। এইজন্যই তার
গার্লফ্রেন্ড নেই।"
.
স্ট্যাটাসটা দেয়ার কিছুক্ষণ পর পর তার
টাইমলাইনে ঘুরতে লাগলাম। আরে
হ্যাঁ সে কিছুটা চালাক আছে। ইঙ্গিত
বুঝেছে। পাল্টা ইঙ্গিত দিয়েছে।
তার স্ট্যাটাস, "আমি মেয়ে পটাতে
পারি না। তাই এসব জানা নেই যে কখন
কি করলে মেয়েরা ইমপ্রেস হবে।
বোকা মানুষ তো তাই।"
.
তার স্ট্যাটাস দেখে চুপ হয়ে গেলাম।
উত্তর দেয়ার মত কিছু পেলাম না। তাই
অফলাইন হয়ে মোবাইল ব্যাগে
রাখলাম। সেও তার মোবাইল ব্যাগে
রেখে দিল। ট্যাব রাখার ব্যাগে।
কিছুক্ষণ পর সে ফেবুতে ঢুকলো। তা
দেখে আমিও ঢুকলাম। তার স্ট্যাটাস
দেখলাম। "বাতাসে যখন তার চুলগুলো
দোলা খায়। তখন চোখ দুটো থমকে
যায়।" স্ট্যাটাসটা দেখে আমি মুচকি
হাসি দিয়ে আমিও পাল্টা স্ট্যাটাস
দিলাম। "চোখ দুটা বন্ধ করে রাখ।" তার
পাল্টা স্ট্যাটাস, "সুন্দর জিনিস
দেখার জন্যই তো আল্লাহ চোখ
দিয়েছে।" আমি দিলাম, "তাহলে
দেখতে থাক।"
.
ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে রইল।
আমি লজ্জা পেয়ে বাইরে
তাকালাম। কিছুক্ষণ পর আড় চোখ
তাকিয়ে দেখলাম এখনো তাকিয়ে
আছে। আমি তার দিকে ফিরলাম না।
কিছুক্ষণ পর দেখলাম সে আবার কিছু
লিখতেছে। তাই আবার ফেবু গেলাম।
তার স্ট্যাটাস, "প্রেমে পড়ে যাচ্ছি
নাকি?" আমি কোনো পাল্টা
স্ট্যাটাস দিলাম না। তার অন্যান্য
স্ট্যাটাসের তুলনায় এই স্ট্যাটাসে
অধিক কমেন্ট পড়েছে। তাই আগ্রহ
নিয়ে কমেন্ট দেখতে গেলাম। সব
মেয়েদের কমেন্ট। "তুই এটা ঠিক করলি
না।" "তোকে আমি দেখে নিব।"
"তোকে আমি ছাড়ব না।" "চট্টগ্রামে
মেয়ের অভাব পড়ছে?" "হাতের কাছে
পাইলে সব প্রেম ছুটিয়ে দিব।"
.
কমেন্ট গুলো দেখে হাসতে হাসতে
আমি বেহুঁশ। তাই স্ট্যাটাস দিলাম,
"বাপরে কমেন্ট দেখে তো আমি
হাসতে হাসতে শেষ।" তার পাল্টা
স্ট্যাটাস, "এক চিলতি হাসিও তো
দেখলাম না।"
.
চার্জ প্রায় শেষের দিকে তাই
বেরিয়ে পড়লাম। কেন যেন তার
দিকে তাকাতে লজ্জা লাগছে।
ভালবেসে ফেললাম নাকি? ছেলে
মন্দ না। তাছাড়া বিয়ে তো
পাকাপাকি হয়েই গেছে। হয়তো সেও
জানে। জেনেশুনেই দুষ্টামি করছে। ওর
মোবাইলে কল এলো। কিছুক্ষণ কথা
বলার পর রেখে দিল। তারপর থেকেই
ওর মনটা খারাপ দেখাচ্ছে। বারবার
আমার দিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু কিছু
বলছে না। হঠাৎ দেখলাম সে চোখের
পানি মুছল। তাই জিজ্ঞেস করেই
বসলাম "কি হইছে কাদতেছেন কেন?
- আরে না। চোখে কিছু একটা গেছে।
বুঝলাম বলতে চাচ্ছে না। তাই এড়িয়ে
গেল।
.
সে আবার ফেবুতে ঢুকলো। আমিও
ঢুকলাম। তার স্ট্যাটাস, "পরীটাকে
হারিয়ে ফেললাম।" স্ট্যাটাস দেখে
আশ্চর্য হলাম। কি এমন হয়েছে যে
হারানোর কথা বলল। মাথা ঘুরতেছে।
হঠাৎ আরেকটা স্ট্যাটাস দেখলাম,
"বিয়ের আগে ছেলে মেয়ে উভয়েরই
মতামত নেয়া উচিত।" এবার বুঝলাম।
হয়তো তার বাবা/মা ফোন করে
বিয়ের কথাটা জানিয়ে দিয়েছে।
তাই সে মন খারাপ করে আছে। হয়তো
জানে না আমিই সে মেয়ে।
ব্যাপারটা আমার কাছে খুব
ইন্টারেস্টিং লাগল। আমি কোনো
স্ট্যাটাস দিলাম না। ফোন ব্যাগে
রাখলাম। সে আমার দিকে একটু হতাশ
ভাবে তাকালো। আমি মনে মনে
হাসলাম।
.
অতঃপর গন্তব্যে চলে এলাম। তাকে
বাই বলে বাস থেকে নেমে পড়লাম।
দুলাভাই এসেছে রিসিভ করতে। বাস
থেকে নেমেই আগে বাবাকে ফোন
করে জানতে পারলাম ছেলের বাবা
মা আমাকে সরাসরি দেখেছে। বাট
ছেলে দেখে নায়। ছবি পাঠাবে।
আমি বাবাকে মানা করে দিলাম
যাতে ছবি না পাঠায়।
.
দুলাভাইয়ের সাথে টেক্সি করে
বাসায় যাচ্ছি। ভাবলাম একটু ফেবু
থেকে ঘুরে আসি। তার স্ট্যাটাস
দেখলাম, "লাইফের ফার্স্ট প্রেমটাই
অসম্পূর্ণ থেকে গেল।" আমি যাস্ট
হাসলাম।
.
অতঃপর ইন্টারভিউ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে
পড়লাম। ইন্টারভিউ দিলাম। বাট জব হল
না। ওদিকে তার সাথে চ্যাটিং
হয়নি। স্ট্যাটাসও তেমন দেয় না।
আগামীকাল চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে
রওনা দিব। স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়ে
দিলাম। কিন্তু তার পাল্টা কোনো
স্ট্যাটাস পেলাম না। পরেরদিন বাস
স্ট্যান্ড, বাস নাম্বার, সিট নাম্বার সবই
স্ট্যাটাসের মাধ্যমে জানিয়ে
দিলাম। তবে তার কোনো স্ট্যাটাস
দেখলাম না। মনটা একটু খারাপ হল। বাস
ছেড়ে দিচ্ছে। আপু ও দুলাভাইকে বাই
বলে বাসে উঠে পড়লাম।
.
আরে আমার পাশের সিটে সে!!!
আমার মুখে এক রাশ হাসি ফুটলো। বাট
সে এবার আমাকে জানালার পাশে
বসার জন্য উঠলো না।
> এইযে উঠেন।
সে মোবাইলে বের করল। উকি দিয়ে
দেখলাম ফেবুতে ঢুকেছে। আমি বসে
পড়লাম। তারপর ফেবুতে ঢুকলাম। তার
স্ট্যাটাস দেখলাম। "জানালার পাশে
মেয়েদেরকেই বসতে হবে। এটা কোন
আইনে লিখা আছে?"
.
আমি সরাসরি বললাম,
> জানালার পাশে বসা আমার ছোট
বেলার অভ্যাস।
সে কিছু না বলে টাইপিং করতে
লাগল। বুঝতে বাকি রইলো না সেও সব
জানে। তাই তো এমন করছে। আমি
মোবাইলটা হাত থেকে নিয়ে
নিলাম।
- মোবাইল দেন।
> সিট দেন।
- দিব না।
> আমিও দিব না।
- অসুবিধা নাই। হবু শ্বশুর থেকে যৌতুক
হিসেবে ডজনখানেক মোবাইল নিব।
> ছিঃ যৌতুক নিতে লজ্জা করবে না?
- আমার লজ্জা কম। বাট আমার হবু বউয়ের
লজ্জা ও বুদ্ধি অনেক।
.
আমি লজ্জা পেয়ে কিছু বললাম না।
একটু পর সে উঠে গেল। আমি জানালার
পাশে যেয়ে বসলাম।
> তো আপনার হবু বউকে দেখেছেন?
- তুমি এত নাটক পার? অভিনেত্রী
নাকি?
> কিভাবে দেখলে? আমি তো
বাবাকে ছবি দিতে নিষেধ
করেছিলাম।
- ছবি দিতে নিষেধ করেছিলে বাট
ফেসবুক আইডি দিতে নিষেধ করনি।
উনি তোমার ফেসবুক আইডি
দিয়েছেন।
.
আমি চুপ হয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ পর ঘুম
দিলাম। আমি কিন্তু একা জার্নিতে
ঘুমাই না। বাট এখন ঘুমাচ্ছি। কারণ আমি
এখন একা নই।
.
কিছুক্ষণ পর যখন উঠলাম দেখলাম আমি
তার কাধে মাথা রেখে
ঘুমাচ্ছিলাম। বাতাসের কারণে চুল
গুলো তার মুখে পড়ছিল। আর সে আমার
দিকে তাকিয়ে ছিল। চোখাচোখি
হতেই সে আরও গভীর ভাবে
তাকালো। আমি লজ্জা পেয়ে
বাইরে তাকালাম। আবার একটু ঘুম
দিলাম। কারণ কথা বলতে লজ্জা
লাগছে। এই জার্নি তার কাধে মাথা
রেখে ঘুমে ঘুমেই কাটাব। এমন জার্নি
সবার কপালে জুটে না।।।।'
উদ্দেশে বাসে উঠলাম। একটা
ইন্টারভিউ আছে। উঠে দেখলাম
পাশের সিটে একটা ছেলে বসে
আছে। আমাকে দেখতেই সে উঠে
জানালার পাশের সিটে বসার জন্য
জায়গা করে দিল। কিছুটা অবাক হলাম।
সাধারণত এমনটা খুব কম হয়। জানালার
সিট পাওয়ার জন্য লড়াই করতে হয়।
ধন্যবাদ দিয়ে বসে পড়লাম।
.
জার্নিতে কানে হেডফোন দিয়ে
গান শুনা আমার স্বভাব। বাস ছাড়লো।
আমি কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনে
যাচ্ছি। কিছুক্ষণ পর আব্বুর কল এলো।
> আসসালামু আলাইকুম। বল আব্বু।
- আমি তোকে শেষবারের মত
জিজ্ঞেস করছি তুই কি কাউকে
ভালবাসিস?
> না না না। (কিছুটা চিতকার দিয়ে)
.
বাবা ফোন কেটে দিল। এই "না" শব্দটা
গত এক মাস ধরে বলে আসছি। তবুও
বাবার প্রশ্ন পরিবর্তন হয় না। আরে
বুঝলাম বর্তমান যুগে প্রেম ভালবাসা
কমন ব্যাপার। তাই বলে যে সবার
বয়ফ্রেন্ড / গার্লফ্রেন্ড থাকবেই এটা
তো কোথাও লিখা নাই। তবুও বাবা
এক প্রশ্ন বারবার করে। কিছুক্ষণ পর
বাবার মেসেজ আসল। "ফেসবুকে আয়।"
.
অতঃপর ডাটা অন করে ফেবুতে এলাম।
দেখলাম বাবা একটা ছবি
পাঠিয়েছে। আর লিখেছে "এই
ছেলের সাথে তোর বিয়ের কথা
পাকাপাকি করেছি। তুই এলেই
দিনকাল ঠিক করব।" আমি কোনো উত্তর
দিলাম না। কারণ আমার প্ল্যান
অন্যরকম। চাকরিটা হয়ে গেলেই আপুর
বাসায় উঠে যাব। ৫/৬
বছরেও.চট্টগ্রামে আসব না। হঠাৎ আমার
চোখ ছবিটার উপর পড়ল। একি এতো
আমার পাশের ছেলেটা। আমি
বাবাকে মেসেজ দিয়ে আবার শিউর
হলাম।
.
মনে মনে ভাবতে লাগলাম এটা কি
ভাগ্যের চক্র নাকি বাবারর চক্র?
ছেলেটা নিশ্চয়ই আমাকে চিনে। তাই
তো কিছু না বলতেই সিট খালি করে
দিয়েছে। কিন্তু বাবাকে জিজ্ঞেস
করে জানতে পারলাম ছেলে এখনো
আমাকে দেখেনি। অতঃপর চুপচাপ
বসে রইলাম। আর ভাবতে লাগলাম কি
করব! কিছুক্ষণ পর সিদ্ধান্ত নিলাম
ছেলেটাকে যাচাই করে দেখি
কেমন ছেলে।
.
নিজ থেকে কথা বললাম
> আসলে জার্নিতে চুপচাপ থাকতে
আমার বোরিং লাগে।
- আমারও। কিন্তু আপনি মেয়ে বিধায়
আগে কথা বলতে সাহস পাইনি।
> তো আপনার নাম?
- আকাশ খান। আপনার?
> নিশি চৌধুরী।
.
টুকিটাকি কথা বলে জানতে পারলাম
সেও ঢাকায় যাচ্ছে চাকরির
ইন্টারভিউ দিতে। পরিবারে সেও
আমার মত একাই। আরেকটু কথা বলার পর
জানতে পারলাম তার কোনো
গার্লফ্রেন্ড নেই। সম্পূর্ণ মনোযোগ
পড়ালেখায় দিয়েছে। দুচারটা
অফারও পেয়েছিল। কিন্তু একসেপ্ট
করেনি। এই কথাটা আমি বিশ্বাস
করিনি। যদিও ভার্সিটি লাইফে
আমি কোনো প্রোপোজাল পাইনি।
কিন্তু ভাব রাখার জন্য বলেছি
অনেকগুলো পেয়েছি।
.
কিছুক্ষণ পর লান্সের জন্য বাস একটা
রেষ্টুরেন্টে থামল। এক টেবিলেই
লান্স করলাম। বাট অবাক হলাম এটা
দেখে যে ও শুধুমাত্র নিজের বিলটাও
দিয়েছে। আমার বিলের কথা একবার
জিজ্ঞেসও করেনি। ওয়েটারও আমার
দিকে অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে
ছিল। যাইহোক বিল দিয়ে বাসে চলে
এলাম। চেহারা দেখে যে কেউই
বলতে পারবে রেগে আছি। কিন্তু বেশ
কিছু সময় কেটে যাওয়ার পরেও সে
কিছু বলল না।
.
সাধারণত একা জার্নি করলে আমি
ঘুমাই না। তাই ফেবুতে ঢুকে সময়
কাটাতে লাগলাম।
- কিছু মনে না করলে আপনার ফেসবুক
আইডি দেয়া যাবে?
> আমি ফ্যামিলি মেম্বার ছাড়া
কাউকে লিস্টে রাখি না।
- ইটস ওকে। এটা খুবই ভাল আইডিয়া।
.
সে গান শুনতে লাগল। আমি মনে মনে
আফসোস করতে লাগলাম। ইসস নিজ
থেকে আইডি চাইল বাট দিলাম না।
> তবে আমি অপরিচিতদেরকেও রিকু
দেই।
- বুঝলাম না।
> আপনার আইডি নাম বলেন।
.
অতঃপর রিকু আদানপ্রদান হল। ইঙ্গিত
দিয়ে স্ট্যাটাস দিলাম। "কি বোকা!
একটা মেয়ের সাথে একই টেবিলে
বসে লান্স করল, কিন্তু বিলটা দেয়ার
নামও নিল না। এইজন্যই তার
গার্লফ্রেন্ড নেই।"
.
স্ট্যাটাসটা দেয়ার কিছুক্ষণ পর পর তার
টাইমলাইনে ঘুরতে লাগলাম। আরে
হ্যাঁ সে কিছুটা চালাক আছে। ইঙ্গিত
বুঝেছে। পাল্টা ইঙ্গিত দিয়েছে।
তার স্ট্যাটাস, "আমি মেয়ে পটাতে
পারি না। তাই এসব জানা নেই যে কখন
কি করলে মেয়েরা ইমপ্রেস হবে।
বোকা মানুষ তো তাই।"
.
তার স্ট্যাটাস দেখে চুপ হয়ে গেলাম।
উত্তর দেয়ার মত কিছু পেলাম না। তাই
অফলাইন হয়ে মোবাইল ব্যাগে
রাখলাম। সেও তার মোবাইল ব্যাগে
রেখে দিল। ট্যাব রাখার ব্যাগে।
কিছুক্ষণ পর সে ফেবুতে ঢুকলো। তা
দেখে আমিও ঢুকলাম। তার স্ট্যাটাস
দেখলাম। "বাতাসে যখন তার চুলগুলো
দোলা খায়। তখন চোখ দুটো থমকে
যায়।" স্ট্যাটাসটা দেখে আমি মুচকি
হাসি দিয়ে আমিও পাল্টা স্ট্যাটাস
দিলাম। "চোখ দুটা বন্ধ করে রাখ।" তার
পাল্টা স্ট্যাটাস, "সুন্দর জিনিস
দেখার জন্যই তো আল্লাহ চোখ
দিয়েছে।" আমি দিলাম, "তাহলে
দেখতে থাক।"
.
ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে রইল।
আমি লজ্জা পেয়ে বাইরে
তাকালাম। কিছুক্ষণ পর আড় চোখ
তাকিয়ে দেখলাম এখনো তাকিয়ে
আছে। আমি তার দিকে ফিরলাম না।
কিছুক্ষণ পর দেখলাম সে আবার কিছু
লিখতেছে। তাই আবার ফেবু গেলাম।
তার স্ট্যাটাস, "প্রেমে পড়ে যাচ্ছি
নাকি?" আমি কোনো পাল্টা
স্ট্যাটাস দিলাম না। তার অন্যান্য
স্ট্যাটাসের তুলনায় এই স্ট্যাটাসে
অধিক কমেন্ট পড়েছে। তাই আগ্রহ
নিয়ে কমেন্ট দেখতে গেলাম। সব
মেয়েদের কমেন্ট। "তুই এটা ঠিক করলি
না।" "তোকে আমি দেখে নিব।"
"তোকে আমি ছাড়ব না।" "চট্টগ্রামে
মেয়ের অভাব পড়ছে?" "হাতের কাছে
পাইলে সব প্রেম ছুটিয়ে দিব।"
.
কমেন্ট গুলো দেখে হাসতে হাসতে
আমি বেহুঁশ। তাই স্ট্যাটাস দিলাম,
"বাপরে কমেন্ট দেখে তো আমি
হাসতে হাসতে শেষ।" তার পাল্টা
স্ট্যাটাস, "এক চিলতি হাসিও তো
দেখলাম না।"
.
চার্জ প্রায় শেষের দিকে তাই
বেরিয়ে পড়লাম। কেন যেন তার
দিকে তাকাতে লজ্জা লাগছে।
ভালবেসে ফেললাম নাকি? ছেলে
মন্দ না। তাছাড়া বিয়ে তো
পাকাপাকি হয়েই গেছে। হয়তো সেও
জানে। জেনেশুনেই দুষ্টামি করছে। ওর
মোবাইলে কল এলো। কিছুক্ষণ কথা
বলার পর রেখে দিল। তারপর থেকেই
ওর মনটা খারাপ দেখাচ্ছে। বারবার
আমার দিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু কিছু
বলছে না। হঠাৎ দেখলাম সে চোখের
পানি মুছল। তাই জিজ্ঞেস করেই
বসলাম "কি হইছে কাদতেছেন কেন?
- আরে না। চোখে কিছু একটা গেছে।
বুঝলাম বলতে চাচ্ছে না। তাই এড়িয়ে
গেল।
.
সে আবার ফেবুতে ঢুকলো। আমিও
ঢুকলাম। তার স্ট্যাটাস, "পরীটাকে
হারিয়ে ফেললাম।" স্ট্যাটাস দেখে
আশ্চর্য হলাম। কি এমন হয়েছে যে
হারানোর কথা বলল। মাথা ঘুরতেছে।
হঠাৎ আরেকটা স্ট্যাটাস দেখলাম,
"বিয়ের আগে ছেলে মেয়ে উভয়েরই
মতামত নেয়া উচিত।" এবার বুঝলাম।
হয়তো তার বাবা/মা ফোন করে
বিয়ের কথাটা জানিয়ে দিয়েছে।
তাই সে মন খারাপ করে আছে। হয়তো
জানে না আমিই সে মেয়ে।
ব্যাপারটা আমার কাছে খুব
ইন্টারেস্টিং লাগল। আমি কোনো
স্ট্যাটাস দিলাম না। ফোন ব্যাগে
রাখলাম। সে আমার দিকে একটু হতাশ
ভাবে তাকালো। আমি মনে মনে
হাসলাম।
.
অতঃপর গন্তব্যে চলে এলাম। তাকে
বাই বলে বাস থেকে নেমে পড়লাম।
দুলাভাই এসেছে রিসিভ করতে। বাস
থেকে নেমেই আগে বাবাকে ফোন
করে জানতে পারলাম ছেলের বাবা
মা আমাকে সরাসরি দেখেছে। বাট
ছেলে দেখে নায়। ছবি পাঠাবে।
আমি বাবাকে মানা করে দিলাম
যাতে ছবি না পাঠায়।
.
দুলাভাইয়ের সাথে টেক্সি করে
বাসায় যাচ্ছি। ভাবলাম একটু ফেবু
থেকে ঘুরে আসি। তার স্ট্যাটাস
দেখলাম, "লাইফের ফার্স্ট প্রেমটাই
অসম্পূর্ণ থেকে গেল।" আমি যাস্ট
হাসলাম।
.
অতঃপর ইন্টারভিউ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে
পড়লাম। ইন্টারভিউ দিলাম। বাট জব হল
না। ওদিকে তার সাথে চ্যাটিং
হয়নি। স্ট্যাটাসও তেমন দেয় না।
আগামীকাল চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে
রওনা দিব। স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়ে
দিলাম। কিন্তু তার পাল্টা কোনো
স্ট্যাটাস পেলাম না। পরেরদিন বাস
স্ট্যান্ড, বাস নাম্বার, সিট নাম্বার সবই
স্ট্যাটাসের মাধ্যমে জানিয়ে
দিলাম। তবে তার কোনো স্ট্যাটাস
দেখলাম না। মনটা একটু খারাপ হল। বাস
ছেড়ে দিচ্ছে। আপু ও দুলাভাইকে বাই
বলে বাসে উঠে পড়লাম।
.
আরে আমার পাশের সিটে সে!!!
আমার মুখে এক রাশ হাসি ফুটলো। বাট
সে এবার আমাকে জানালার পাশে
বসার জন্য উঠলো না।
> এইযে উঠেন।
সে মোবাইলে বের করল। উকি দিয়ে
দেখলাম ফেবুতে ঢুকেছে। আমি বসে
পড়লাম। তারপর ফেবুতে ঢুকলাম। তার
স্ট্যাটাস দেখলাম। "জানালার পাশে
মেয়েদেরকেই বসতে হবে। এটা কোন
আইনে লিখা আছে?"
.
আমি সরাসরি বললাম,
> জানালার পাশে বসা আমার ছোট
বেলার অভ্যাস।
সে কিছু না বলে টাইপিং করতে
লাগল। বুঝতে বাকি রইলো না সেও সব
জানে। তাই তো এমন করছে। আমি
মোবাইলটা হাত থেকে নিয়ে
নিলাম।
- মোবাইল দেন।
> সিট দেন।
- দিব না।
> আমিও দিব না।
- অসুবিধা নাই। হবু শ্বশুর থেকে যৌতুক
হিসেবে ডজনখানেক মোবাইল নিব।
> ছিঃ যৌতুক নিতে লজ্জা করবে না?
- আমার লজ্জা কম। বাট আমার হবু বউয়ের
লজ্জা ও বুদ্ধি অনেক।
.
আমি লজ্জা পেয়ে কিছু বললাম না।
একটু পর সে উঠে গেল। আমি জানালার
পাশে যেয়ে বসলাম।
> তো আপনার হবু বউকে দেখেছেন?
- তুমি এত নাটক পার? অভিনেত্রী
নাকি?
> কিভাবে দেখলে? আমি তো
বাবাকে ছবি দিতে নিষেধ
করেছিলাম।
- ছবি দিতে নিষেধ করেছিলে বাট
ফেসবুক আইডি দিতে নিষেধ করনি।
উনি তোমার ফেসবুক আইডি
দিয়েছেন।
.
আমি চুপ হয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ পর ঘুম
দিলাম। আমি কিন্তু একা জার্নিতে
ঘুমাই না। বাট এখন ঘুমাচ্ছি। কারণ আমি
এখন একা নই।
.
কিছুক্ষণ পর যখন উঠলাম দেখলাম আমি
তার কাধে মাথা রেখে
ঘুমাচ্ছিলাম। বাতাসের কারণে চুল
গুলো তার মুখে পড়ছিল। আর সে আমার
দিকে তাকিয়ে ছিল। চোখাচোখি
হতেই সে আরও গভীর ভাবে
তাকালো। আমি লজ্জা পেয়ে
বাইরে তাকালাম। আবার একটু ঘুম
দিলাম। কারণ কথা বলতে লজ্জা
লাগছে। এই জার্নি তার কাধে মাথা
রেখে ঘুমে ঘুমেই কাটাব। এমন জার্নি
সবার কপালে জুটে না।।।।'
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন