বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৭

* পারবোনা আমি ছাড়তে তোমাকে *

হেডিং টা দেখলেই আমাদের মনে প্রেমিকের জন্য প্রেমিকার বা প্রেমিকার জন্য প্রেমিকের এক ডায়লগ এর কথা ভেসে আসে।
নাহ আমি এই কথাটা কে কখনোই প্রেমিক প্রেমিকার ক্ষেত্রে নিচ্ছিনা। আমি তার জন্য প্রযোজ্য মনে করি যিনি এই কথাটার পরিপুর্ণ অধিকারী। তিনি হলেন আমাদের গর্ভধারিণী মা। আমরা কখনোই তাকে ছাড়তে পারবোনা।
গল্প টা মাকে নিয়েই।
-
মুন্নার মোবাইলটা বেজেই যাচ্ছে।
রিসিভ করতে পারছেনা।সে তার মাকে ঔষধ
খাওয়ানোর জন্য মায়ের কাছে
ছিলো। তার পরিবারে সে আর তার মা ছাড়া আর
কেউ নেই। মা বেশ অসুস্থ। চলাফেরা করতে
পারেননা বেশ।
নিজের জীবনে অধিক পরিশ্রম করেছেন।মুন্না কে কষ্ট করে লেখা পড়া করিয়েছেন। মুন্না এই বছর স্টাডি শেষ করে একটা ভালো চাকরি করতেছে।
কলটা দিয়েছিলো ফারিহা।ফারিহা মুন্না কে ভালোবাসে। আর মুন্না ও
ফারিহাকে অনেক ভালোবাসে। সেই কলেজ লাইফ থেকে। ফারিহার আর মাত্র এক বছর বাকি স্টাডি শেষ হওয়ার।
মুন্না ফ্রি হয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে ১২ টা কল। বুজে গেছে ফারিহা
রেগে অলরেডি আগুন হয়ে গেছে।
কিছুটা চিন্তা করে কল ব্যাক করল।
ফারিহাঃহ্যালো........
মুন্নাঃ হ্যালো...সরি।
ফারিহাঃ কে বলতেছেন।
মুন্নাঃ বললামতো সরি।
ফারিহাঃ হুম,কিসের সরি, এতো কল দিলাম একটা ও ধরলেনা।
আর প্রায় ২০ মিনিট পর এখন কল ব্যাক করছো।
মুন্নাঃ এই মাকে নিয়ে বিজি ছিলাম। তাই,,প্লিজ রাগ করেনা রাগকুমারি।
ফারিহাঃ তুমিতো সকল সময়ই বিজি।আমার জন্য কি আর তোমার টাইম আছে। (অভিমানি সুরে)
মুন্নাঃ প্লিজ বোঝার চেষ্টা কর। ওকে কান ধরতেছি নেক্সট টাইম
মোবাইল সাথে রাখবো।
ফারিহাঃ হইছে হইছে।আর ডং করতে হবেনা। এখন শুনো যে জন্য কল
দিলাম।
মুন্নাঃ কি জন্য বল।
ফারিহাঃ কাল তো আমার বার্থডে জানই।
কাল কিন্তু তুমি না আসার আগ পর্যন্ত আমি কেক কাটবোনা।
মুন্নাঃ ওকে না কাটলে তো ভালো।
তোমার বাবার কেকের দাম টা বেচে যাবে। (ফান করে)
ফারিহাঃ কি.........(রাগতো ভাব নিয়ে)
মুন্নাঃ নাহ ঠিক আছে আসবই। আমার একমাত্র দাদার নাতির বউয়ের বার্থডে আর আমি আসবনা!
ফারিহাঃ হেহ...বড় বড় কথা,সময় হলেতো ভুলে যাবে।
মনে থাকে যেনো। নইলে.....
মুন্নাঃ হুম...মনে থাকবে,তা পার্টিটা স্টার্ট কবে।
ফারিহাঃ সন্ধ্যা ৮ টায়।
মুন্নাঃ ওকে আসবো।এখন রাখি,বাই।
ফারিহাঃ ওকে বাই।
...
পরদিন বিকাল বেলা মুন্না শপে গিয়ে লাভ ডোমেন করা একটা তাজমহল
কিনলো।
ফারিহার বার্থডে গিফট দেওয়ার জন্য।
সন্ধ্যা ৭.৩০ হয়ে গেছে। -----------
এদিকে মুন্না আসার কোনো নামই নেই।
সকল অতিথি এসে উপস্থিত।
ফারিহা না আসতে দেখে ফোন দিলো।
কিন্তু ফোন রিসিভ করতেছেনা।
প্রায় ২০ টা কল দিলো। নাহ রিসিভি হচ্ছেনা।
ফারিহা রেগে আগুন হয়েগেছে।
ফারিহার মা তার রুমে এসে বললেন যে কেক কাটার সময় হয়ে গেছে।চলে
আসতে।
কিন্তু ফারিহা মুন্নার জন্য অপেক্ষা করতেছে।
প্রায় ৮ টা ১৫,,, মুন্না আসেই নাই।
শেষমেষ মায়ের কথায় ফারিহা কেক কাটতে গেলো।
কেক কাটা,,পার্টি,,শেষ।
মুন্না আসে নাই।
ফারিহা মনে মনে খুব কষ্ট পায়।
রুমে গিয়ে কাঁদতে থাকে।
...
এদিকে....
সন্ধ্যা ৭ টায় হটাৎ মুন্নার মায়ের হার্টে প্রচণ্ড ব্যাথা শুরু হয়।
মুন্না তড়িঘড়ি করে মাকে হসপিটাল নিয়ে যায়।
আর তাড়াহুড়াতে মোবাইলটা ঘরে ফেলে গেছে।
এবং তার মায়ের ছুট্ট একটা অপারেশন করাতে হয়।
প্রায় ১০ টায় অপারেশন শেষ হয়। পরদিন সকালে মাকে নিয়ে বাসায় ফিরে।
বাসায় এসে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে ফারিহার অনেক ফোন আর
একটা মেসেজ।
মেসেজে লিখা; কাল দেখা করবে।
মুন্না বুজতে পারে ফারিহা খুব রেগে আছে।
তারপর মাকে রেখে ফারিহাকে কল দিয়ে দেখা করতে যায়। গিয়ে দেখে ফারিহা আগে থেকেই এসে বসে আছে।
মুন্না ভয়ে ভয়ে গিয়ে বসে বলে...
- আসলে ফারিহা কাল মায়ের.......এইটুকু
বলার পরই ফারিহা থামিয়ে দেয়।
ফারিহাঃ আমি তোমাকে কারণদর্শাতে বলিনি।
কি আর বলবে তোমার ব্যাস্ততার কথা এইতো।
তোমার মায়ের এই হয়েছিলো সেই হয়েছিলো তাইতো। (খুব রেগে গিয়ে)
মুন্নাঃ আসলে আমার কথা টা শুনো।
ফারিহাঃ স্টপ! কি শুনবো,হুম।
আমার জন্যতো তোমার কোনো ভালোবাসাই নেই।
কি আর এমন হয়ে যেতো একদিন মাকে ছেড়ে আসলে। আর তুমি ছাড়া
কি আর কেউ নেই। কাল আমি আমার ফ্রেন্ডদের কাছি অপমানিত হয়েছি শুধু তোমার
জন্য।
ব্যাস.... আজ থেকে তোমার আমার কোনো সম্পর্ক নেই।আজ
এখানেই খতম। তুমি তোমার মাকে নিয়েই থাকো।
এই বলেই ফারিহা উঠে চলে গেলো।
মুন্না চলে আসে বাসায়। এসে শুধু একটা মেসেজ দেয়। মেসেজি লিখেছিলোঃ
না শুনেইতো চলে
গেলে, ওকে যাও ভালো থেকো।
তবে মনে রেখো আমি সব ছাড়তে পারলে ও আমার মাকে ছাড়তে
পারবনা।
পারবোনা আমি ছাড়তে আমার পৃথিবী কে।
কিছু না জেনেই একা বক বক করে চলে গেলে। কাল আমার মায়ের অপারেশন করানো প্রয়োজন হয়। রাতে মায়ের
বুকে ব্যাথা উঠায় আমি পাগলের মত হয়ে যাই।
তাড়াহুড়ায় মোবাইল টা ও ফেলে চলে আসি।
আমি ছাড়া মায়ের দেখার কেউ নেই।
তুমি তো কাল তোমার পার্টি নিয়ে ছিলে।
আর এদিকে আমার উপড় দিয়ে ঝর গেছে।কিন্তু তুমি সেটা বুজতে চেষ্টা করনি।
আজ আমি যদি তোমায় বলি যে তুমি তোমার মাকে একেবারে ছেড়ে
দিতে,,
তার সাথে কোনো যোগাযোগ রাখতে পারবেনা।
তখন তোমার অবস্থা কেমন হবে?
নাহ তুমি সেটা চিন্তা না করেই চলে গেছো। ওকে ভালো থেকো। আর অন্যের ক্ষেত্রে অন্তত নিজের মায়ের কথা
চিন্তা করো॥
মেসেজ টা পাওয়া মাত্রই ফারিহা বুজতে পারে যে সে কতো বড় ভুল
করেছে।
নিজের ভুল বুজতে পেরে হাওমাউ করে কেঁদে উঠে।
আর পরেই মুন্না কে কল দেয়।
মুন্নাঃ হ্যলো। কি?
ফারিহাঃ প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। (কেঁদে কেঁদে)
মুন্নাঃ তুমি তো কোনো অপরাধ করনি যে ক্ষমা করব।
ফারিহাঃ মুন্না প্লিজ। আমি আমার ভুল বুজতে পেরেছি।
মুন্নাঃ ওকে।
ফারিহাঃ আর তুমি কি নিজেকে কি হিরো মনে কর। যে সব কাজ নিজেই করবে।
মায়ের সেবা কি তুমিই করতে জানো।
কাল আমি আমার বাবা মাকে তোমাদের বাড়িতে পাঠাবো।
তোমার মাকে তুমিই রাজি করাবে কিন্তু।
আর আজ থেকেও আমি ও তোমার মায়ের সঙ্গি হবো। তোমার
মায়ের সব দ্বায়িত্ব আমার। মনে থাকে যেনো। সব যেনো ঠিক ঠাক হয়ে যায়। নইলে..............
(আনন্দ রাগে)
এন্ড আগামি সাপ্তাহে যেনো বিয়েটা হয়ে যায়। মনে থাকে যেনো।
মুন্নাঃ আরে কি বল। আর তোমার পড়া লেখা?
আর আমকেও তো একটু ভাবার সময় দাও।
ফারিহাঃ পড়ালেখা বিয়ের পর ও করা যাবে।নো টাইম। মনে থাকে যেনো।
মুন্নাঃ একটা আনন্দের হাসি দিয়ে যো হুকুম মহারাগি সাহেবা।
ফারিহাঃ কি?????????
মুন্নাঃ নাহ কিছুনা। ওকে।
তারপর পারিবারিক ভাবেই মুন্না আর ফারিহার বিয়ে হয়।
ফারিহা নিজের মায়ের মতই তার শাশুড়ি কে স্নেহো করে। সব সময় কেয়ার করে।
মুন্নার থেকেও বেশি।
--------------------------
শেষ কথাঃ
যদি আমরা সবাই মনে মনে চিন্তা করি যে আমারো তো মা আছেন।
আমারোতো বাবা আছেন। আমার বাবা মা যেভাবে আমাকে কুলেপিঠে মানুষ করেছেন।।স্নেহো
করেছেন।
অন্যের বাবা মা ও ঠিক সেইভাবে নিজের সন্তানকে মানুষ করেছেন।
আজ আমি কিভাবে তাকে বলি যে নিজের বাবা মাকে ফেলে দিতে।
আমরা সকল ছেলেরা এই কথা কেনো ভাবতে পারিনা যখন ছেলে বাড়ি
থেকে রাগ করে না খেয়েই চলে যায় তখন অধিক রাতে মা ই খাবার হাতে নিয়ে ছেলের জন্য অপেক্ষা করে।গার্লফ্রেন্ড বা বউ নয়।
আমরা শাশুড়িরা যদি এই কথা ভাবি যে আমার যেভাবে মেয়ে আছে তেমনি
ভাবে আমার ছেলের বউ ই একজন মায়ের মেয়ে...
বউয়েরা যদি এই কথাটা একবার ভাবি আমার যেমনি মা আছেন আমার
শাশুড়ি ও আমার স্বামীর মা।
আমার মা আমার কাছে যেমন ঠিক তেমনি আমার শাশুরিও তার ছেলের কাছে তেমন।
আমরা যদি এই কথা গুলি একবারে জন্য চিন্তাকরি তাহলে এই দেশে
কখানই বৃদ্বাশ্রমের প্রয়োজন হবেনা।
কখনো সংসার যুদ্ধ হবেনা।
কখনো বউ শাশুড়ির যুদ্ধ দেখা লাগবেনা---।।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন