শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৫

প্রেমপত্র


খুব মনোযোগ সহকারে স্যারের লেকচার শুনছি। এমন সময় কোথা থেকে একটা কাগজের ঢিল গায়ে এসে লাগলো। কোনো বন্ধু হয়তো দুষ্টামি করছে এই ভেবে পুনরায় লেকচারে মনোযোগ দিলাম। কিছুক্ষণ পর আবার একটা কাগজের ঢিল উড়ে এসে আমার গায়ে লাগলো। কাগজের ঢিলটা হাতে নিয়ে আশেপাশের বন্ধুদের দিকে দেখছি যে ঢিলটা কে ছুড়তে পারে!
.
হটাৎ কেন জানি মনে হলো কাগজটায় কিছু লিখা থাকতে পারে। সাথে সাথে খুলে দেখলাম। কাগজে লিখা- "আগের কাগজটা ব্রেঞ্চ এর নিচ থেকে তুলে পড়ো"
.
ব্রেঞ্চ এর নিচে খুজে দেখছি কিন্তু কাগজের ঢিলটা খুজেই পাচ্ছিনা। স্যারের লেকচার চলছে তাই ভালভাবে খুজতেও পারছিনা। স্যার যাতে বুঝতে না পারে এমনভাবে আগের কাগজটা খুজছি এমন সময় আরেকটা কাগজের ঢিল গায়ে এসে পড়লো। সাথে সাথেই এদিক ওদিক তাকালাম, সবাই লেকচার শোনায় ব্যস্ত, সম্ভাব্য ঢিল ছুড়নে ওয়ালা কে হতে পারে তা আমি বুঝতেই পারলাম না।
.
এবারের কাগজটা খুলে দেখলাম, লিখা- "হাদারাম, তোমার সামনের ছেলেটার পায়ের কাছে দেখো কাগজটা"।
.
আমি অবাক হবো না হতবাক হবো, কিছুই বুঝতে পারছিনা। ওই কাগজটায় এমন কি রাজ অন্তর্নিহিত আছে যে পর পর দুইবার ঢিল ছুড়ে কেবল ওই কাগজেটাই পড়ার জন্য নির্দেশ করছে। তবে একটা ব্যাপারে খটকা লেগেই রইলো যে, আমাকে 'হাদারাম' বলে সম্বোধন করতে পারে কোন মহান ব্যক্তি!
.
অতঃপর নির্দেশিত কাগজের ঢিলটা খুজে পেলাম। কাগজটা খুলে দেখলাম, দেখি যে ডাবল বাউন্ডারি দিয়ে সুন্দর করে বিশাল একটা লাভ আঁকা যাকে আমরা হৃদয় বা ভালবাসার প্রতীক হিসেবেই জানি। এই লাভ দেখেই যেমন কাগজ তেমন করে পকেটে রেখে দিলাম। ভেতরে কিছু লিখা ছিলো কিন্তু ক্লাসের মধ্যে লাভ লেটার পড়াটা ভদ্রতার মধ্যে পড়েনা তাই পরে সুন্দর পরিবেশে ফিলিংস নিয়ে পড়ার জন্য যত্ন করে পকেটে রেখে দিলাম। এই প্রথম প্রেমপত্র পেয়ে আমিতো খুশিতে দিশাহারা। তবে এড় প্রেরকটা কে হতে পারে তা নিয়ে একটা বড় রকমের দ্বিধা দ্বন্দ্বে পরে গেলাম।
.
আমি প্রথম বারের মত প্রেমপত্র পেয়েছি এই ভেবে গর্বে আমার বুক ফুলে উঠছে। মনে মনে ভাবতে লাগলাম সালার বন্ধুদের এবার দেখিয়ে দিবো প্রেম কি জিনিস! যারা আমায় বলতো 'তোর জীবনে কোনোদিন গার্লফ্রেন্ড হবেনা' তাদের সামনে এখন আমি ওপেন রোমান্স করবো। দেখি কে ঠেকায়।
.
ক্লাসের একটা মেয়েকে অল্প অল্প পছন্দ করতাম যার নাম ঈশিতা। বন্ধু বান্ধবীদের মধ্যে অনেকেই এটা জানতো। কিন্তু সাহস করে কোনোদিন ঈশিতাকে মনের কথা বলা হয়নি। ইস! ঈশিতাই যদি এই প্রেমপত্র দিয়ে থাকে তাহলে তো আমি আনন্দে হার্ট ফেইল করে ফেলবো।
.
.
পর পর আরো দুটো ক্লাস করে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরলাম। বাসায় এসে আম্মু বলা শুরু করলো,
- এই অমি, পরনের জিন্সটা সহ আর কি ধোয়া লাগবে নিয়ে আয়।
.
আসলেই জিন্সটা ময়লা হয়েছে। জিন্সটা চ্যাঞ্জ করে আম্মুকে দিয়ে আসলাম। কিছুক্ষণ পর আবার আম্মুর ডাক,
- এই অমি, অমি... তোর পকেটে এটা কিসের কাগজ, আরেকটু হলে তো ধুয়ে দিতাম। দেখতো কোনো দরকারি কাগজ কিনা?
.
হার্টবিট বেড়ে গেলো। দৌড়ে গিয়ে দেখি আমার প্রেমপত্র এখনও অক্ষত আছে। হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। কাগজটা যদি ভিজে যেতো তাহলে তো বড় রকমের একটা বিপদ হয়ে যেতো। এমনিতেই চিঠিটা কে দিয়েছে এখনও তার নামই জানিনা।
.
ঘরের দরজা বন্ধ করে কাগজটা খুললাম। ভাজ সোজা করে লিখার শেষের দিকে আগে আমার হবু প্রেমিকার নাম খুজতে লাগলাম। কিন্তু কি আশ্চর্য্য লিখার শেষে কোনো নামও দেখলাম না। বাধ্য হয়ে প্রথম থেকে পড়া শুরু করলাম।
.
অমি,
আমি ঈশিতা বলছি,..
..............................
..............................
..............................
ক্লাস শেষে প্লিজ লাইব্রেরিতে দেখা করো।
.
চিঠির মাঝখানে অনেক কিছু লিখা। প্রেম শুরু না করতেই এত প্রেম আর আবেগ দিয়ে চিঠিটা লিখার কোনো মানেই ছিলোনা। কলেজ থেকে বাসায় এসেছি আধঘন্টা হলো তার মানে ঈশিতা আমার জন্য আধঘন্টা ধরে অপেক্ষা করছে। বিদ্যুৎ গতিতে রওনা দিলাম, অটোতে যেতে প্রায় পনেরো মিনিট লাগবে। এতক্ষন ঈশিতা থাকবে কিনা চলে যাবে এটা ভাবতেই নিজের মাথার চুল একটা একটা করে ছিড়তে ইচ্ছে হচ্ছে। কেনো যে কাগজের লিখাটা তখনই পড়লাম নাহ!
.
.
লাইব্রেরিতে না ঢুকতেই দেখি ঈশিতা বের হচ্ছে। এক প্রকার দৌড়ে গিয়ে তার সামনে দাড়ালাম।
.
- ঈশিতা, আমি এত্তগুলা সরি।
- কিসের আবার সরি! পথ ছাড়ো।
- আচ্ছা, আমি আরো অনেক অনেক সরি।
- আমি এখন বাসায় যাবো, পথ ছাড়ো
- আচ্ছা তোমার চোখ লাল দেখাচ্ছে ক্যান?
- কই? কোথায়? কিছু পড়ছে মনে হয়!
- আচ্ছা, একটু শান্ত হয়ে আমার কথাটা শোনো
.
সবকিছু খুলে বললাম, ঈশিতার রাগী আর গোমরা মুখটা ধীরে ধীরে সুশ্রী আর মিষ্টি হতে লাগলো।
.
- তুমি তো তখন কাগজটা খুলে দেখলা,
- খুলছি কিন্তু পড়িনি তো
- কেনো পড়োনি শুনি?
- ক্লাসরুম এর পরিবেশ যে প্রেমপত্র পড়ার জন্য উপযোগী নয় তাই।
- হয়েছে থাক, আচ্ছা আন্টি আবার কাগজটা খুলে দেখেনি তো?
- আরে নাহ, আম্মু তো দরকারি কাগজ মনে করে রেখে দিয়েছিলো, দেখেনি
- ভাগ্যিস আন্টি দেখেনি!!
- আর দেখলেও তেমন একটা সমস্যা হতোনা, আম্মু তোমার কথা জানে
- আমার কথা জানে মানে?
.
এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো, দেখি যে আম্মু ফোন দিয়েছে,
- হ্যা আম্মু বলো
- দেখা হয়েছে তো?
- হ্যা হয়েছে!!! আম্মু কার সাথে দেখা হওয়ার কথা বলছো?
- কার সাথে আবার ঈশিতার সাথে
- আ!!! আম্মু তুমি কি তাহলে...
- হ্যা, তোর প্রেম পত্র আমি পড়ে ফেলেছি। ঈশিতাকে একটু ফোনটা দে তো
.
ঈশিতাকে ফোনটা দিলাম। ঈশিতা আমার কাছ থেকে একটু দূরে গিয়ে কথা বলে আসলো।
.
- কি বললো আম্মু?
- তোমাকে তো বলা যাবেনা বাব্বুউউ..
- উহু বলোনা
- উহু বলবনা
.
প্রিয় সম্পর্কগুলো তো এমনই, যেমন মধুর তেমন সুখময়। যে সম্পর্কগুলোর জন্য অনেকদিন বাঁচতে ইচ্ছে করে, ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করেনা কোনোদিন।
.

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন