বারান্দায় অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে অথৈই। মনটা কেমন যেন অস্থির লাগছে।
ঘড়িটা রাত ১১টা বাজার সংকেত দিল। নীল এখনও বাসায় ফিরেনি। আজ বলেছিল
তাড়াতাড়ি ফিরবে আর সেই নীলের এখনও আসার নাম নেই। বের হবার সময় অথৈইয়ের হাত
থেকে গ্লাস পরে গিয়েছিল। ও নীলকে বলেছিল আজ বের না হতে তবে নীল তা হেঁসেই
উড়িয়ে দিয়েছিল। অথৈইয়ের খুব খিদে পেয়েছে তবে নিজের খিদের
চেয়েও ওর বেশি চিন্তা হচ্ছে নীলের জন্য। নীল দুপুরে খেয়েছেতো...!! হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার ,,,ঠক,,,ঠক,,,ঠক,,, শব্দ পেলো।
অথৈই দৌড়ে গেল,,,
..
--- সারাদিন কোথায় ছিলে? তোমার
না তাড়াতাড়ি আসার কথা। (অথৈই)
--- আরে আর বলনা, এক ফ্রেন্ড বলেছিল ও নাকি কি কাজ দিবে সেখানে যেয়েইতো দেরি হয়ে গেল। (নীল)
--- কাজ পেলে? (অথৈই)
--- নাহ পাইনি। চিন্তা করনা পেয়ে যাবো। এই নাও তোমার জন্য রুটি আর ভাজি এনেছি। (নীল)
--- তুমি খেয়েছো? (অথৈই)
--- আমার খাওয়া নিয়ে চিন্তা করনা। তোমার এখন বেশি খাওয়া দরকার।
আমাদের নতুন অতিথির জন্য। (নীল)
--- তুমি না খেলে আমিও খাবোনা। (অথৈই)
--- আচ্ছা তুমি বসো, আমি আসছি। (নীল)
..
অথৈই নীলকে খাইয়ে দিচ্ছে। সারাদিন না খেয়ে চাকরি খুঁজে চেহারা মলিন হয়ে গেছে। অথৈই নীলের দিকে তাকিয়ে আছে। তাকানো অবস্থায় অথৈইয়ের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে। সারাদিন ও কত কষ্ট করে। ঠিকমতো খায় ও না।
..
--- কি ব্যাপার অথৈই তুমি কাঁদছো কেন? (নীল)
--- কই নাতো। চোখে কি যেন
পরেছে। (অথৈই)
..
নীল অথৈইয়ের চোখের পানি মুছিয়ে
দিয়ে বলে,,,
..
--- মেয়ে শুনো তুমি আর কোনদিন
আমার সামনে কাঁদবে না। তোমার
কান্না আমার সহ্য হয় না। (নীল)
--- নীল আমি তোমাকে অনেক সমস্যায় ফেলে দিয়েছি তাইনা? আমার জন্য তোমার বাবা / মা তোমাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। আমি তোমার জীবনে না আসলেই মনে হয় ভাল হতো। (অথৈই)
--- অথৈই এসব আর বলবেনা। আমি
তোমাকে ভালবেসে বিয়ে করেছি। মরলেও তোমার সাথেই মরবো। খেয়ে শুয়ে পরো। বেশি রাত জাগলে আমার বাবুটার কষ্ট হবে। (নীল)
..
চাঁদের আলো এসে পরছে নীলের মুখে। ও ঘুমাচ্ছে... অথৈই ওর মুখের
দিকে তাকিয়ে আছে। ও ভাবছে ছেলেটা সারাদিন কত কষ্ট করে। শুধু
আমার জন্যই ছেলেটার আজ এই
অবস্থা। মুখে সোনার চামচ নিয়ে জন্ম নেওয়া ছেলেটা আজ ওর জন্য রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে চাকরির জন্য, কোনদিন দুপুরে খায় , কোনদিন খায়না। অথৈইয়ের চোখে পানি চলে আসে। ও উঠে বারান্দায় যেয়ে দাড়ায়। ও ফিরে যায় ২ বছর আগে,,,
..
বাবা/মা মরা মেয়ে অথৈই থাকে মামার বাসায়। মামা ওকে অনেক আদর করে তবে প্রতিদিন মামির খোঁটা , মামাতো ভাই বোনের অবহেলা নিয়েই কেটে যায় ওর দিন। ও শত চেষ্টা করেও মামি , মামাতো ভাই, বোনের মন পায়নি। ওর কাজ ছিল ওর মামাতো বোনকে কলেজ এ নিয়ে যাওয়া। যেতে যেতেই প্রায়ই দেখা হয় অথৈইয়ের সাথে নীলের। ফর্সা মুখ, হালকা গড়নের অথৈইকে দেখেই ভাল লেগে যায় নীলের। ও বাসায় এসে বলে অথৈইয়ের কথা। ওর মা-বাবা রাজি হয় না। তাদের কথা হচ্ছে একটা মা/ বাবা মরা মেয়েকে কেন বিয়ে করতে যাবে ও!! নীল সাফ জানিয়ে দেয় বিয়ে করলে ও অথৈইকেই করবে। ছেলের জ্বিদের কাছে মা-বাবা হার মানে। অনেক বড় অনুষ্ঠান করে অথৈইয়ের সাথে নীলের বিয়ে হয়। বিয়ের পরদিন থেকেই শুরু হয় অথৈইয়ের কষ্টকর জীবন। ওর
শাশুড়ি ওকে উঠতে বসতে কথা শুনায়। অথৈই কিছুই বলে না। সব
সহ্য করে যায়। একদিন ও সব বলে নীলকে। নীল ওর মায়ের সাথে এসব নিয়ে ঝগড়া করে ঘর থেকে বের হয়ে যায় অথৈইকে নিয়ে। সেই থেকে ওরা এই বাসায় আছে। এক রুমের বাসা। মেঝেতে বিছানা পাতা। নীল শত চেষ্টা করেও কোন কাজ জোগাড় করতে পারছেনা। এসব ভাবতে ভাবতেই পিছনে হাতের স্পর্শ পায় অথৈই,,,
..
--- তুমি এখনও ঘুমাওনি? (নীল)
--- ঘুম আসছেনা। কেমন যেন ভয়
লাগছে। (অথৈই)
--- ভয় কিসের!! আমি আছিতো। (নীল)
--- আচ্ছা ডাক্তার বলছিলো কাল পরশু একবার তার কাছে যেতে। তুমি কি আমার সাথে যেতে পারবে? (অথৈই)
--- অথৈই তুমিতো জানই আমি কতো
বিজি থাকি। সারাদিন কাজের জন্য ঘুরে বেড়াই। আমি পরিচিত সব জায়গায় গিয়েছি। মা সবাইকে বলে দিয়েছে আমাকে যেন কেউ কোন কাজ না দেয়। (নীল)
--- আচ্ছা আমি একাই যাবো। (অথৈই)
--- রাগ করেনা অথৈই সোনা। আমিতো সব তুমি আর আমাদের বাবুর জন্য করছি তাই না..!!! (নীল)
--- আমি রাগ করিনিতো। চল ঘুমাবে। (অথৈই)
..
দুজন বিছানায় এসে শুয়ে পরে। নীল
অথৈয়ের কপালে চুমু এঁকে দেয়। দুজন
ঘুমিয়ে পরে। ঘরে শোনা যাচ্ছে নিঃশ্বাসের শব্দ আর তার সাথে ভেসে বেড়াচ্ছে দুজনের স্বপ্নগুলো.....
..
আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে দেখতে আমি পাইনি তোমায়,
দেখতে আমি পাইনি অথৈই বসে আছে আয়নার সামনে আর গুনগুন করে গান গাইছে... ওর মনটা আজ বেশ ভালো। ও ওর চুলগুলো দেখছে। বেশ বড়। ও মনে মনে বলে "নাহ, আমি
দেখতে খারাপ না"। বলে আনমনে
হেঁসে উঠে... ও তাকায় নীলের দিকে নীল ঘুমিয়ে আছে। দেখতে বেশ আদর আদর লাগছে।
,,,,,,হঠাৎ,,,,,,
নীল চোখ মেলে তাকায়। অথৈই লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নেয়।
..
--- এই কি দেখছো? (অথৈই)
--- দেখছি আমার লক্ষি বউকে। (নীল)
--- ওঠো ওঠো। ৯ টা বাজে। আমি এখুনি বের হবো। (অথৈই)
--- কই যাবা..!!! (নীল)
--- কেন তোমার মনে নেই? আজ
ডাক্তার যেতে বলেছে। তুমিও চল... (অথৈই)
--- নাহ্ আমি যেতে পারবো না। আমার তো একটা কাজে যেতে হবে। (নীল)
..
অথৈই মন খারাপ করে ফেলে। নীল
সেটা দেখে বিছানা ছেড়ে ওঠে আসে এবং বলে,,,
..
--- বউ রাগ করেছ? (নীল)
--- আমার রাগে কার কি আসে যায়!! (অথৈই)
--- এই যে ময়নাপাখি রাগ করেনা।
আমি কাজ না পেলে তোমাকে খাওয়াবো কি আর আমাদের বাবুর
কি হবে!! ওকে আমি ডাক্তার বানাবো। এখন একটু হাঁসো। (নীল)
..
অথৈই হেঁসে নীলের বুকে মাথা রাখে। নীলল শক্ত করে অথৈইকে জড়িয়ে ধরে......
অথৈই বসে আছে ডাক্তারের চেম্বারে। ওর শরীর অনেক খারাপ লাগছে। মনে হচ্ছে ও মাথা ঘুরিয়ে পরে যাবে। ও অনুভব করছে ওর শরীরের ভিতর ছোট্ট একটা মাংসপিণ্ড ক্ষণে ক্ষণে দিক পাল্টিয়ে এদিক-সেদিক যাচ্ছে। বেশিদূর যেতে পারছে না। একটি নির্দিষ্ট গন্ডির ভেতর তাকে খাবি খেতে হচ্ছে। অথৈই ওর পেটে হাত রাখে। কেমন যেন শান্তি শান্তি ভাব আসে ওর মনে।
..
--- কেমন আছেন আপুমনি? (মহিন)
..
কথাটা শুনে অথৈই তাকিয়ে দেখে ওর সামনে নীলের বাসার কাজের লোক দাঁড়িয়ে আছে।
..
--- এইতো ভালো। আপনি কেমন আছেন মহিন চাঁচা? (অথৈই)
--- আছি কোনরকম। (মহিন)
--- আপনি এখানে কেন, কিছু হইছে? (অথৈই)
--- নারে আপুমনি। আমার এক আত্মীয়র বাচ্চা হবে তাই এইখানে। আপুমনি বাসায় যান না কেন? আপনি চলে আসার পড় থেকে আর ভালো লাগেনা। (মহিন)
--- চাঁচা আম্মাতো আমাকে আর নীলকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। জানেন নীল সারাদিন কাজের জন্য ঘুরে রাস্তায় রাস্তায় কি খায় না খায় কে জানে। আমার অনেক কষ্ট লাগে ওর জন্য। মাঝে মাঝে আম্মাকে অনেক দেখতে ইচ্ছা করে আমার। (অথৈই)
--- নীল ভাইয়াতো যায় প্রতিদিন। (মহিন)
--- কখন যায়? (অথৈই)
--- এইতো সকালে যায়। দুপুরেতো
ওখানেই খায়। আবার রাতে খেয়ে
বাসা থেকে বের হয়। বলে আপনি
নাকি মামার বাসায় থাকেন। আপনার কাছে যাচ্ছে..... (মহিন)
--- প্রতিদিন যায়? (অথৈই)
--- হ্যাঁ প্রতিদিনই যায়। মা তো বলছে ওনাকে সামনের মাস থেকে অফিস
এ বসাবে। (মহিন)
..
মহিন চাঁচার কথা শুনে অথৈই অবাক
হয়ে যায়। ওর চোখ থেকে পানি বের হয়ে আসে। ও চোখ মুছে বলে,,,
..
--- চাঁচা আমাকে ডাক্তার ডাকছে। আমি গেলাম। (অথৈই)
--- আচ্ছা মা যাও। বাসায় আইসো।
আবার কবে দেখা হবে কে জানে!!
ভাল থাইকো। (মহিন)
..
অথৈই হাঁটছে রাস্তা দিয়ে। বিকেল হয়ে এসেছে। সূর্য ডুবতে বসেছে। পশ্চিমের কোলে সূর্য ঢলে পড়েছে বিষন্নতায়। রেখে গেছে মিষ্টি আলোর আভা। দিন বিদায়ের কমলা আভা ছড়িয়ে পড়েছে অথৈয়ের হৃদয়ের আকাশে। অথৈইয়ের চোখে পানি। ওর গালে পড়া পানি সূর্যের আলোতে সোনালি রঙ ধারণ
করেছে। ও ভাবছে নীলের কথা।
নীল এতো বড় মিথ্যা কথা ওর সাথে
কিভাবে বলল!! ও বাসা থেকে বের
হয় কাজ খুঁজার নাম করে আর মায়ের
বাসায় যেয়ে সারাদিন থাকে। রাতে আসে ক্লান্ত একটা ভাব নিয়ে হাতে রুটি আর ভাজি নিয়ে যেন ও সারাদিন কতো কাজ খুঁজেছে। প্রতিদিন রাতে ও
নীলের জন্য বসে থাকে অপেক্ষা করে। অথৈই ভাবে নীল ওকে বললেইতো ও বাসা থেকে বের হয়ে যেত। তবুও নীল কেন এমন করল!! অথৈইয়ের অনেক কান্না পায়, চোখ ঝাপসা হয়ে আসে তার কিন্তু অজস্র কান্নার অশ্রুও তাকে এ মুহূর্তে শান্তি এনে দিতে পারে না। তার পা সামনে একধাপও এগুতে চায় না যেন পঞ্চাশ কেজি ওজনের কিছু বেঁধে দেওয়া হয়েছে তার পায়ের সাথে। অথৈই হাঁটতে হাঁটতে বাসার গেটের
সামনে এসে দাড়ায়। ওর ভিতরে ঢুকতে ইচ্ছে করছে না মোটেও... অথৈই পা বাড়ায়.....
,,,ঠক,,,ঠক,,,ঠক,,,
দরজা খুলে দেয় নীল। নীল আজ এতো তারাতারি বাসায়, এই দেখে অথৈই ভ্যাবাচ্যাকা খায়। অথৈইয়ের দিকে তাকিয়েই নীল বুঝতে পারে অথৈইয়ের মন খারাপ।
..
--- আমার লক্ষি বউয়ের কি হইছে? (নীল)
--- কই কিছু হয়নাই তো!! (অথৈই)
--- বউ কি আমার উপর রাগ করছো যাইনি বলে তোমার সাথে? পরে আবার সুজনের কাছে গেছিলাম কাজের জন্য। ও বলেছে কাল আবার যেতে। বউ দেখো আজ তোমার জন্য কি এনেছি... অনেকদিন হল তোমাকে ভালো খাওয়াতে পারি না। আজ খিচুরি এনেছি। আমি আজ তোমাকে
খাইয়ে দিব। (নীল)
--- আর কতো মিথ্যা কথা বলবে নীল
আমার সাথে? (অথৈই)
--- মানে? (নীল)
--- নীল বুঝতেছনা আমি কি বলছি? (অথৈই)
--- বুঝছি আমার বউয়ের রাগ এখনও
ভাঙ্গেনি। আচ্ছা তুমি হাত মুখ ধুয়ে
আসো আমি তোমাকে খাইয়ে দিব আজ নিজের হাতে। (নীল)
--- নীল তোমার সাথে আমার কথা আছে। (অথৈই)
--- আচ্ছা হাত মুখ ধুয়ে আসো খেতে
খেতে তোমার কথা শুনবো। (নীল)
--- কেন আজ তুমি খেয়ে আসনি? (অথৈই)
--- নাহ্, তুমিতো জানই আমি আমার
লক্ষি বউকে ছাড়া খেতে পারিনা। (নীল)
--- তাই নাকি নীল!! তবে সত্যি হলে আরো খুশি হতাম। (অথৈই)
--- বউ সত্যি হলে মানে? (নীল)
--- নীল আর কতটা বোকা বানাবে
আমায় তুমি? তুমি অস্বীকার করতে
পারো তুমি বাসা থেকে খেয়ে আসনি, অস্বীকার করতে পারো তুমি গত ২ মাস কাজ খুঁজার নাম করে মায়ের
কাছে গিয়ে থাকনি? (অথৈই)
--- এসব কি বলছো অথৈই, আর কে তোমাকে এসব বলেছে ? (নীল)
--- নীল কে বলেছে সেটা বড় কথা না, তুমি বল এসব সত্যি কিনা ? (অথৈই)
--- নাহ্ সত্যি না !! (নীল)
--- তুমি আবারো মিথ্যা বলছো? তুমি
তোমার মায়ের কসম কেটে বল এসব
মিথ্যা..... (অথৈই)
..
নীল কথাটা শুনে অথৈইয়ের গালে
একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয় আর চিৎকার করে বলে,,,
..
--- হ্যাঁ তুই যা শুনেছিস তা সব সত্যি। (নীল)
..
অথৈই থাপ্পড় খেয়ে আর ভাষা পরিবর্তন দেখে অবাক হয়ে নীলের দিকে তাকিয়ে থাকে... আজ এ কোন নীলকে দেখছে ও যে নীলকে ও এত ভালবাসে সেই আজ ওর গায়ে হাত তুলল!!!!
..
--- নীল তুমি আমার গায়ে হাত তুললে? (অথৈই)
--- হ্যাঁ তুললাম আর শুন আমি আর
তকে ভালোবাসি না। তকে বিয়ে করা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। আসলে আমি বুঝিনি আবেগ দিয়ে জীবন চলেনা। জীবনে চলতে হলে টাকা লাগে। যেটা তর সাথে
থাকলে আমার কোনদিনও হবেনা। (নীল)
--- তবে কেন এতদিন আমার সাথে এরকম করলে ? তুমি আমাকে আগে বলে দিলেই পারতে!! (অথৈই)
--- বলতে চেয়েছিলাম তকে বারবার, তবে পারিনি কেমন যেন করুণা আর তর ওই দেহের নেশায় বলতে পারিনি। (নীল)
--- করুণা, দেহের নেশা? (অথৈই)
--- হ্যাঁ সেটাই। ভালোবাসা নাই আর তর জন্য। (নীল)
--- নীল ছোট বেলায় বাবা মাকে হারিয়েছি, বড় হয়েছি মামার কাছে, ছোট বেলা থেকে কষ্ট নিয়েই আমার জীবন। যেদিকে তাকাতাম সেদিকেই আর্তনাদ, হাহাকার। তোমাকে পেয়ে
ভেবেছিলাম হয়তো তোমার কাছে
ভালোবাসা পাবো, আমার দুঃখের
দিনগুলি শেষ হলো, সেই তুমিও আমার সাথে এমন করতে পারলে!!! নীল আমি চলে যাচ্ছি... ভয় নেই কোনদিন বউয়ের অধিকার নিয়ে তোমার সামনে আসবো না। (অথৈই)
--- তর ইচ্ছে হলে থাকতে পারিস তবে আর ভালবাসতে বলিসনা, আর বউয়ের অধিকার ফলাতে আসিস না। তর করুণ কান্নার স্বর আর আমায় তর কাছে টানবে না। মাসে মাসে টাকা দিয়ে যাবো। (নীল)
--- কি তোমার রক্ষিতা হয়ে থাকবো!! (অথৈই)
--- ,,,হাঁ,,,হাঁ,,,হাঁ,,, সেরকমই ভালতো।
খেতে দিবো, যা লাগবে তাই দিবো। থেকে যেতে পারিস। (নীল)
--- ছিঃ নীল ছিঃ আমি কোনদিন ভাবিনি , তুমি এতো নিচ , এতো ছোট
মনের মানুষ। (অথৈই)
..
বলেই অথৈই এক দৌড়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসে... পিছন থেকে শুনতে
পায় নীলের অট্টহাঁসি ,,,হাঁ,,,হাঁ,,,হাঁ,,,
..
নদীতে একটা লাশ ভাসছে। অথৈইয়ের
লাশ। দিঘল মাথার চুল ভাসছে,পড়নে
স্যালোয়ার কামিজ। অনেকেই পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। কিন্তু কেউ চিনতে পারছে না কার লাশ হতে পারে..!! পাড়ের লোকগুলো দাঁড়িয়ে নানারকম কথা বলছে ... কেউ বলছে কি আকাম করে এসে আত্মহত্যা করেছে কে জানে , কেউ বা বলছে আল্লাহ জানে কোন
মায়ের বুক খালি হল , কেউ বা আবার
ওর জন্য সহানুভতি দেখাল এই বলে যে না জানি কতো কষ্ট ছিলো মেয়েটির
মনে। তবে কেউ কি কোনদিন জানতে পারবে অথৈই কেন আত্মহত্যা করল , কি দোষ ছিল ওর পেটের বাচ্চাটির যে কিনা পৃথিবীতে আসার আগেই চলে গেল ওর মায়ের সাথে, দেখতে পারল না এই সুন্দর পৃথিবীর আলো ... কেউ জানবে না , কেউ না...
চেয়েও ওর বেশি চিন্তা হচ্ছে নীলের জন্য। নীল দুপুরে খেয়েছেতো...!! হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার ,,,ঠক,,,ঠক,,,ঠক,,, শব্দ পেলো।
অথৈই দৌড়ে গেল,,,
..
--- সারাদিন কোথায় ছিলে? তোমার
না তাড়াতাড়ি আসার কথা। (অথৈই)
--- আরে আর বলনা, এক ফ্রেন্ড বলেছিল ও নাকি কি কাজ দিবে সেখানে যেয়েইতো দেরি হয়ে গেল। (নীল)
--- কাজ পেলে? (অথৈই)
--- নাহ পাইনি। চিন্তা করনা পেয়ে যাবো। এই নাও তোমার জন্য রুটি আর ভাজি এনেছি। (নীল)
--- তুমি খেয়েছো? (অথৈই)
--- আমার খাওয়া নিয়ে চিন্তা করনা। তোমার এখন বেশি খাওয়া দরকার।
আমাদের নতুন অতিথির জন্য। (নীল)
--- তুমি না খেলে আমিও খাবোনা। (অথৈই)
--- আচ্ছা তুমি বসো, আমি আসছি। (নীল)
..
অথৈই নীলকে খাইয়ে দিচ্ছে। সারাদিন না খেয়ে চাকরি খুঁজে চেহারা মলিন হয়ে গেছে। অথৈই নীলের দিকে তাকিয়ে আছে। তাকানো অবস্থায় অথৈইয়ের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে। সারাদিন ও কত কষ্ট করে। ঠিকমতো খায় ও না।
..
--- কি ব্যাপার অথৈই তুমি কাঁদছো কেন? (নীল)
--- কই নাতো। চোখে কি যেন
পরেছে। (অথৈই)
..
নীল অথৈইয়ের চোখের পানি মুছিয়ে
দিয়ে বলে,,,
..
--- মেয়ে শুনো তুমি আর কোনদিন
আমার সামনে কাঁদবে না। তোমার
কান্না আমার সহ্য হয় না। (নীল)
--- নীল আমি তোমাকে অনেক সমস্যায় ফেলে দিয়েছি তাইনা? আমার জন্য তোমার বাবা / মা তোমাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। আমি তোমার জীবনে না আসলেই মনে হয় ভাল হতো। (অথৈই)
--- অথৈই এসব আর বলবেনা। আমি
তোমাকে ভালবেসে বিয়ে করেছি। মরলেও তোমার সাথেই মরবো। খেয়ে শুয়ে পরো। বেশি রাত জাগলে আমার বাবুটার কষ্ট হবে। (নীল)
..
চাঁদের আলো এসে পরছে নীলের মুখে। ও ঘুমাচ্ছে... অথৈই ওর মুখের
দিকে তাকিয়ে আছে। ও ভাবছে ছেলেটা সারাদিন কত কষ্ট করে। শুধু
আমার জন্যই ছেলেটার আজ এই
অবস্থা। মুখে সোনার চামচ নিয়ে জন্ম নেওয়া ছেলেটা আজ ওর জন্য রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে চাকরির জন্য, কোনদিন দুপুরে খায় , কোনদিন খায়না। অথৈইয়ের চোখে পানি চলে আসে। ও উঠে বারান্দায় যেয়ে দাড়ায়। ও ফিরে যায় ২ বছর আগে,,,
..
বাবা/মা মরা মেয়ে অথৈই থাকে মামার বাসায়। মামা ওকে অনেক আদর করে তবে প্রতিদিন মামির খোঁটা , মামাতো ভাই বোনের অবহেলা নিয়েই কেটে যায় ওর দিন। ও শত চেষ্টা করেও মামি , মামাতো ভাই, বোনের মন পায়নি। ওর কাজ ছিল ওর মামাতো বোনকে কলেজ এ নিয়ে যাওয়া। যেতে যেতেই প্রায়ই দেখা হয় অথৈইয়ের সাথে নীলের। ফর্সা মুখ, হালকা গড়নের অথৈইকে দেখেই ভাল লেগে যায় নীলের। ও বাসায় এসে বলে অথৈইয়ের কথা। ওর মা-বাবা রাজি হয় না। তাদের কথা হচ্ছে একটা মা/ বাবা মরা মেয়েকে কেন বিয়ে করতে যাবে ও!! নীল সাফ জানিয়ে দেয় বিয়ে করলে ও অথৈইকেই করবে। ছেলের জ্বিদের কাছে মা-বাবা হার মানে। অনেক বড় অনুষ্ঠান করে অথৈইয়ের সাথে নীলের বিয়ে হয়। বিয়ের পরদিন থেকেই শুরু হয় অথৈইয়ের কষ্টকর জীবন। ওর
শাশুড়ি ওকে উঠতে বসতে কথা শুনায়। অথৈই কিছুই বলে না। সব
সহ্য করে যায়। একদিন ও সব বলে নীলকে। নীল ওর মায়ের সাথে এসব নিয়ে ঝগড়া করে ঘর থেকে বের হয়ে যায় অথৈইকে নিয়ে। সেই থেকে ওরা এই বাসায় আছে। এক রুমের বাসা। মেঝেতে বিছানা পাতা। নীল শত চেষ্টা করেও কোন কাজ জোগাড় করতে পারছেনা। এসব ভাবতে ভাবতেই পিছনে হাতের স্পর্শ পায় অথৈই,,,
..
--- তুমি এখনও ঘুমাওনি? (নীল)
--- ঘুম আসছেনা। কেমন যেন ভয়
লাগছে। (অথৈই)
--- ভয় কিসের!! আমি আছিতো। (নীল)
--- আচ্ছা ডাক্তার বলছিলো কাল পরশু একবার তার কাছে যেতে। তুমি কি আমার সাথে যেতে পারবে? (অথৈই)
--- অথৈই তুমিতো জানই আমি কতো
বিজি থাকি। সারাদিন কাজের জন্য ঘুরে বেড়াই। আমি পরিচিত সব জায়গায় গিয়েছি। মা সবাইকে বলে দিয়েছে আমাকে যেন কেউ কোন কাজ না দেয়। (নীল)
--- আচ্ছা আমি একাই যাবো। (অথৈই)
--- রাগ করেনা অথৈই সোনা। আমিতো সব তুমি আর আমাদের বাবুর জন্য করছি তাই না..!!! (নীল)
--- আমি রাগ করিনিতো। চল ঘুমাবে। (অথৈই)
..
দুজন বিছানায় এসে শুয়ে পরে। নীল
অথৈয়ের কপালে চুমু এঁকে দেয়। দুজন
ঘুমিয়ে পরে। ঘরে শোনা যাচ্ছে নিঃশ্বাসের শব্দ আর তার সাথে ভেসে বেড়াচ্ছে দুজনের স্বপ্নগুলো.....
..
আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে দেখতে আমি পাইনি তোমায়,
দেখতে আমি পাইনি অথৈই বসে আছে আয়নার সামনে আর গুনগুন করে গান গাইছে... ওর মনটা আজ বেশ ভালো। ও ওর চুলগুলো দেখছে। বেশ বড়। ও মনে মনে বলে "নাহ, আমি
দেখতে খারাপ না"। বলে আনমনে
হেঁসে উঠে... ও তাকায় নীলের দিকে নীল ঘুমিয়ে আছে। দেখতে বেশ আদর আদর লাগছে।
,,,,,,হঠাৎ,,,,,,
নীল চোখ মেলে তাকায়। অথৈই লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নেয়।
..
--- এই কি দেখছো? (অথৈই)
--- দেখছি আমার লক্ষি বউকে। (নীল)
--- ওঠো ওঠো। ৯ টা বাজে। আমি এখুনি বের হবো। (অথৈই)
--- কই যাবা..!!! (নীল)
--- কেন তোমার মনে নেই? আজ
ডাক্তার যেতে বলেছে। তুমিও চল... (অথৈই)
--- নাহ্ আমি যেতে পারবো না। আমার তো একটা কাজে যেতে হবে। (নীল)
..
অথৈই মন খারাপ করে ফেলে। নীল
সেটা দেখে বিছানা ছেড়ে ওঠে আসে এবং বলে,,,
..
--- বউ রাগ করেছ? (নীল)
--- আমার রাগে কার কি আসে যায়!! (অথৈই)
--- এই যে ময়নাপাখি রাগ করেনা।
আমি কাজ না পেলে তোমাকে খাওয়াবো কি আর আমাদের বাবুর
কি হবে!! ওকে আমি ডাক্তার বানাবো। এখন একটু হাঁসো। (নীল)
..
অথৈই হেঁসে নীলের বুকে মাথা রাখে। নীলল শক্ত করে অথৈইকে জড়িয়ে ধরে......
অথৈই বসে আছে ডাক্তারের চেম্বারে। ওর শরীর অনেক খারাপ লাগছে। মনে হচ্ছে ও মাথা ঘুরিয়ে পরে যাবে। ও অনুভব করছে ওর শরীরের ভিতর ছোট্ট একটা মাংসপিণ্ড ক্ষণে ক্ষণে দিক পাল্টিয়ে এদিক-সেদিক যাচ্ছে। বেশিদূর যেতে পারছে না। একটি নির্দিষ্ট গন্ডির ভেতর তাকে খাবি খেতে হচ্ছে। অথৈই ওর পেটে হাত রাখে। কেমন যেন শান্তি শান্তি ভাব আসে ওর মনে।
..
--- কেমন আছেন আপুমনি? (মহিন)
..
কথাটা শুনে অথৈই তাকিয়ে দেখে ওর সামনে নীলের বাসার কাজের লোক দাঁড়িয়ে আছে।
..
--- এইতো ভালো। আপনি কেমন আছেন মহিন চাঁচা? (অথৈই)
--- আছি কোনরকম। (মহিন)
--- আপনি এখানে কেন, কিছু হইছে? (অথৈই)
--- নারে আপুমনি। আমার এক আত্মীয়র বাচ্চা হবে তাই এইখানে। আপুমনি বাসায় যান না কেন? আপনি চলে আসার পড় থেকে আর ভালো লাগেনা। (মহিন)
--- চাঁচা আম্মাতো আমাকে আর নীলকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। জানেন নীল সারাদিন কাজের জন্য ঘুরে রাস্তায় রাস্তায় কি খায় না খায় কে জানে। আমার অনেক কষ্ট লাগে ওর জন্য। মাঝে মাঝে আম্মাকে অনেক দেখতে ইচ্ছা করে আমার। (অথৈই)
--- নীল ভাইয়াতো যায় প্রতিদিন। (মহিন)
--- কখন যায়? (অথৈই)
--- এইতো সকালে যায়। দুপুরেতো
ওখানেই খায়। আবার রাতে খেয়ে
বাসা থেকে বের হয়। বলে আপনি
নাকি মামার বাসায় থাকেন। আপনার কাছে যাচ্ছে..... (মহিন)
--- প্রতিদিন যায়? (অথৈই)
--- হ্যাঁ প্রতিদিনই যায়। মা তো বলছে ওনাকে সামনের মাস থেকে অফিস
এ বসাবে। (মহিন)
..
মহিন চাঁচার কথা শুনে অথৈই অবাক
হয়ে যায়। ওর চোখ থেকে পানি বের হয়ে আসে। ও চোখ মুছে বলে,,,
..
--- চাঁচা আমাকে ডাক্তার ডাকছে। আমি গেলাম। (অথৈই)
--- আচ্ছা মা যাও। বাসায় আইসো।
আবার কবে দেখা হবে কে জানে!!
ভাল থাইকো। (মহিন)
..
অথৈই হাঁটছে রাস্তা দিয়ে। বিকেল হয়ে এসেছে। সূর্য ডুবতে বসেছে। পশ্চিমের কোলে সূর্য ঢলে পড়েছে বিষন্নতায়। রেখে গেছে মিষ্টি আলোর আভা। দিন বিদায়ের কমলা আভা ছড়িয়ে পড়েছে অথৈয়ের হৃদয়ের আকাশে। অথৈইয়ের চোখে পানি। ওর গালে পড়া পানি সূর্যের আলোতে সোনালি রঙ ধারণ
করেছে। ও ভাবছে নীলের কথা।
নীল এতো বড় মিথ্যা কথা ওর সাথে
কিভাবে বলল!! ও বাসা থেকে বের
হয় কাজ খুঁজার নাম করে আর মায়ের
বাসায় যেয়ে সারাদিন থাকে। রাতে আসে ক্লান্ত একটা ভাব নিয়ে হাতে রুটি আর ভাজি নিয়ে যেন ও সারাদিন কতো কাজ খুঁজেছে। প্রতিদিন রাতে ও
নীলের জন্য বসে থাকে অপেক্ষা করে। অথৈই ভাবে নীল ওকে বললেইতো ও বাসা থেকে বের হয়ে যেত। তবুও নীল কেন এমন করল!! অথৈইয়ের অনেক কান্না পায়, চোখ ঝাপসা হয়ে আসে তার কিন্তু অজস্র কান্নার অশ্রুও তাকে এ মুহূর্তে শান্তি এনে দিতে পারে না। তার পা সামনে একধাপও এগুতে চায় না যেন পঞ্চাশ কেজি ওজনের কিছু বেঁধে দেওয়া হয়েছে তার পায়ের সাথে। অথৈই হাঁটতে হাঁটতে বাসার গেটের
সামনে এসে দাড়ায়। ওর ভিতরে ঢুকতে ইচ্ছে করছে না মোটেও... অথৈই পা বাড়ায়.....
,,,ঠক,,,ঠক,,,ঠক,,,
দরজা খুলে দেয় নীল। নীল আজ এতো তারাতারি বাসায়, এই দেখে অথৈই ভ্যাবাচ্যাকা খায়। অথৈইয়ের দিকে তাকিয়েই নীল বুঝতে পারে অথৈইয়ের মন খারাপ।
..
--- আমার লক্ষি বউয়ের কি হইছে? (নীল)
--- কই কিছু হয়নাই তো!! (অথৈই)
--- বউ কি আমার উপর রাগ করছো যাইনি বলে তোমার সাথে? পরে আবার সুজনের কাছে গেছিলাম কাজের জন্য। ও বলেছে কাল আবার যেতে। বউ দেখো আজ তোমার জন্য কি এনেছি... অনেকদিন হল তোমাকে ভালো খাওয়াতে পারি না। আজ খিচুরি এনেছি। আমি আজ তোমাকে
খাইয়ে দিব। (নীল)
--- আর কতো মিথ্যা কথা বলবে নীল
আমার সাথে? (অথৈই)
--- মানে? (নীল)
--- নীল বুঝতেছনা আমি কি বলছি? (অথৈই)
--- বুঝছি আমার বউয়ের রাগ এখনও
ভাঙ্গেনি। আচ্ছা তুমি হাত মুখ ধুয়ে
আসো আমি তোমাকে খাইয়ে দিব আজ নিজের হাতে। (নীল)
--- নীল তোমার সাথে আমার কথা আছে। (অথৈই)
--- আচ্ছা হাত মুখ ধুয়ে আসো খেতে
খেতে তোমার কথা শুনবো। (নীল)
--- কেন আজ তুমি খেয়ে আসনি? (অথৈই)
--- নাহ্, তুমিতো জানই আমি আমার
লক্ষি বউকে ছাড়া খেতে পারিনা। (নীল)
--- তাই নাকি নীল!! তবে সত্যি হলে আরো খুশি হতাম। (অথৈই)
--- বউ সত্যি হলে মানে? (নীল)
--- নীল আর কতটা বোকা বানাবে
আমায় তুমি? তুমি অস্বীকার করতে
পারো তুমি বাসা থেকে খেয়ে আসনি, অস্বীকার করতে পারো তুমি গত ২ মাস কাজ খুঁজার নাম করে মায়ের
কাছে গিয়ে থাকনি? (অথৈই)
--- এসব কি বলছো অথৈই, আর কে তোমাকে এসব বলেছে ? (নীল)
--- নীল কে বলেছে সেটা বড় কথা না, তুমি বল এসব সত্যি কিনা ? (অথৈই)
--- নাহ্ সত্যি না !! (নীল)
--- তুমি আবারো মিথ্যা বলছো? তুমি
তোমার মায়ের কসম কেটে বল এসব
মিথ্যা..... (অথৈই)
..
নীল কথাটা শুনে অথৈইয়ের গালে
একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয় আর চিৎকার করে বলে,,,
..
--- হ্যাঁ তুই যা শুনেছিস তা সব সত্যি। (নীল)
..
অথৈই থাপ্পড় খেয়ে আর ভাষা পরিবর্তন দেখে অবাক হয়ে নীলের দিকে তাকিয়ে থাকে... আজ এ কোন নীলকে দেখছে ও যে নীলকে ও এত ভালবাসে সেই আজ ওর গায়ে হাত তুলল!!!!
..
--- নীল তুমি আমার গায়ে হাত তুললে? (অথৈই)
--- হ্যাঁ তুললাম আর শুন আমি আর
তকে ভালোবাসি না। তকে বিয়ে করা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। আসলে আমি বুঝিনি আবেগ দিয়ে জীবন চলেনা। জীবনে চলতে হলে টাকা লাগে। যেটা তর সাথে
থাকলে আমার কোনদিনও হবেনা। (নীল)
--- তবে কেন এতদিন আমার সাথে এরকম করলে ? তুমি আমাকে আগে বলে দিলেই পারতে!! (অথৈই)
--- বলতে চেয়েছিলাম তকে বারবার, তবে পারিনি কেমন যেন করুণা আর তর ওই দেহের নেশায় বলতে পারিনি। (নীল)
--- করুণা, দেহের নেশা? (অথৈই)
--- হ্যাঁ সেটাই। ভালোবাসা নাই আর তর জন্য। (নীল)
--- নীল ছোট বেলায় বাবা মাকে হারিয়েছি, বড় হয়েছি মামার কাছে, ছোট বেলা থেকে কষ্ট নিয়েই আমার জীবন। যেদিকে তাকাতাম সেদিকেই আর্তনাদ, হাহাকার। তোমাকে পেয়ে
ভেবেছিলাম হয়তো তোমার কাছে
ভালোবাসা পাবো, আমার দুঃখের
দিনগুলি শেষ হলো, সেই তুমিও আমার সাথে এমন করতে পারলে!!! নীল আমি চলে যাচ্ছি... ভয় নেই কোনদিন বউয়ের অধিকার নিয়ে তোমার সামনে আসবো না। (অথৈই)
--- তর ইচ্ছে হলে থাকতে পারিস তবে আর ভালবাসতে বলিসনা, আর বউয়ের অধিকার ফলাতে আসিস না। তর করুণ কান্নার স্বর আর আমায় তর কাছে টানবে না। মাসে মাসে টাকা দিয়ে যাবো। (নীল)
--- কি তোমার রক্ষিতা হয়ে থাকবো!! (অথৈই)
--- ,,,হাঁ,,,হাঁ,,,হাঁ,,, সেরকমই ভালতো।
খেতে দিবো, যা লাগবে তাই দিবো। থেকে যেতে পারিস। (নীল)
--- ছিঃ নীল ছিঃ আমি কোনদিন ভাবিনি , তুমি এতো নিচ , এতো ছোট
মনের মানুষ। (অথৈই)
..
বলেই অথৈই এক দৌড়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসে... পিছন থেকে শুনতে
পায় নীলের অট্টহাঁসি ,,,হাঁ,,,হাঁ,,,হাঁ,,,
..
নদীতে একটা লাশ ভাসছে। অথৈইয়ের
লাশ। দিঘল মাথার চুল ভাসছে,পড়নে
স্যালোয়ার কামিজ। অনেকেই পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। কিন্তু কেউ চিনতে পারছে না কার লাশ হতে পারে..!! পাড়ের লোকগুলো দাঁড়িয়ে নানারকম কথা বলছে ... কেউ বলছে কি আকাম করে এসে আত্মহত্যা করেছে কে জানে , কেউ বা বলছে আল্লাহ জানে কোন
মায়ের বুক খালি হল , কেউ বা আবার
ওর জন্য সহানুভতি দেখাল এই বলে যে না জানি কতো কষ্ট ছিলো মেয়েটির
মনে। তবে কেউ কি কোনদিন জানতে পারবে অথৈই কেন আত্মহত্যা করল , কি দোষ ছিল ওর পেটের বাচ্চাটির যে কিনা পৃথিবীতে আসার আগেই চলে গেল ওর মায়ের সাথে, দেখতে পারল না এই সুন্দর পৃথিবীর আলো ... কেউ জানবে না , কেউ না...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন