শুক্রবার, ১ জানুয়ারী, ২০১৬

অভিন্ন ভালোবাসা

সাধারণ একজন মানুষ হিসেবে
পরিচিত পরিচয় বলতে কিছু নেই হ্যাঁ
পরিচয়হীনও বলা যায়, তখন ঠিক
ক্লাস সেভেনে পড়ি মা মারা
যায় বাবাও মা মারা যাওয়ার পর
বিয়ে করেন, সৎ মাকে যেদিন ঘরে
তুলেন বাবা রুমের ভিতরে দরজা
বন্ধ করে কাঁদতে থাকি, দ্বিতীয়
বিয়ে করবে বাবা গ্রামের
মানুষের মাথা ব্যথা আমাকে
নিয়ে, কিরে তোর তো ভাগ্য খুব
ভালো বাপের বিয়ে খাবি
শান্তনা পাইনি কারো থেকে যে
মা মরা ছেলেটির কি হবে, সে
চিন্তাটা কারো আসেনি আসবেই
বা কেন সমাজের চোখে উচিৎ
কথা বলা মানুষ গুলো শত্রু হয়ে যায়
আমার মায়ের বেলায়ও ঠিক তাই
হয়েছে, সব সময় উচিৎ কথা বলতো
তাই বলে সমাজের মানুষ গুলো
মায়ের পিছনে নিন্দা করতো আর
আমি দেখতাম মা নামাজের
মসলায় বসে বসে কাঁন্না করতো, যা
হউক সেভেনের বছরের প্রথম দিকে
মা মারা যায় রোলনং ০৩ ছিলো
সেভেনে, সেভেনের বার্ষিক
পরিক্ষায় ২সাব্জেক্ট খারাপ করি,
হেডস্যার (প্রধান শিক্ষক) বাবাকে
ডাকিয়ে পরিক্ষার খাতা
দেখালেন অংকে ২২ আর
ইংরেজীতে ১৫ পাই, স্যার
বাবাকে অনেক কিছু বলছেন যা
বাবা সহ্য করেনি স্যারের সামনে
লাথি যেটা মেরেছেন বাড়ি
পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারিনি, পরে
রিক্সা নিয়েছেন রিক্সায় করে
বাড়িতে আসছি ওঠানের পাশে
একটি আম গাছ ছিলো ও হ্যাঁ সৎ মা
বসে বসে খাওয়াতেন না গরু
পালতাম তিনটা গাভী ছিলো গরুর
জন্য দিনে তিন জুরি ঘাস কাঁটতে
হতো তাই তিনবেলা খাওয়ার
জুটতো আবার যদি দুই জুরি ঘাস
কাঁটতাম তাহলে দুইবেলা খাওয়ার
আর সাথে জারি এবং দশবারি বেত
আঘাত কপালে জুটতো, তো গরুর রশি
দিয়ে আম গাছের সাথে পিছন
থেকে বাঁধানো হইছে চোখ বাঁধ
ছিলো গায়ের শার্ট খুলে বাবা
যে ৫টি বেত কিনে এনেছিলো
ওইগুলাকে মা সরিষার তৈল দিয়ে
আগেই রোদে শুকিয়ে রাখছিলেন,
একটা আগে মেরে ভেঙ্গে
ফেলছিলো আর চারটাকে একসাথ
করে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত মেরে
চলছেন কান্না করিনি কিন্তু চোখ
দিয়ে পানি পড়তেছে চারটি বেত
ভেঙ্গে বাবা ক্লান্ত পরে মা
এসে আমার মৃত মাকে নিয়ে খুব
বাজে একটি গালি দিছেন শরীর
থেকে রক্ত ঝরছিলো কোন আঘাত
লাগেনি কিন্তু আমার মৃত মাকে
নিয়ে কিছু বলছে সেটা সহ্য হয়নি
মনের চাপ এবং দেহের ব্যথা নিয়ে
আস্তে আস্তে মাথাটা মাটির
দিকে লুটে পড়তেছে ঠিক ওতটুকু
মনে ছিলো ।
-
রাত দশটা শরীরের জ্বর আর ব্যথা
অনুভব করছি এর আগে হয়তো মৃত
ছিলাম সবাই ঘুমিয়ে গেছে আর
আমার সেই লুকানো মাটির ব্যাংক
আর মায়ের হাতে একজোড়া চুড়ি
নিয়ে বাহির হয়ে পড়ি এই শরীর
নিয়ে স্টেশনের উদ্দেশ্যে হেঁটে
চলছি আর এমনিতেই চোখ দিয়ে
পানি ঝরছে।
-
স্টেশনে এই টাইমের কোন লোকাল
ট্রেন নাই যা আছে ঢাকা থেকে
চট্টগ্রাম, আশার সময় অবশ্যই মায়ের
কবরে মাকে নালিশ আর জেয়ারত
করছি তাই ভাগ্যটা ভালো ছিলো,
৬০-৬৫ বছরের একলোক আমার চোখের
পানি আর স্টেশনে বসে থাকা
নিয়ে জিগ্যাসা করছেন সব কিছু
খুলে বলতে বলতে রাত প্রায় বারটা
ওনি হলেন মাল গাড়ির ড্রাইভার
স্টেশনে দাড় করানো মাল
গাড়িটা চট্টগ্রামের উদ্দেশ্য রওনা
দিবেন ভদ্রলোকটির নাম হলো
সাধন আলী লোকে তাকে সাধু
বলেই ডাকেন ওনার সাথে উঠলাম
মাল গাড়ীতে কিছুক্ষণ পর ওনার
সাথে কথা বলতে বলতে আবার
ঘুমিয়ে পড়লাম ওনি জেগে আছে
মাঝেমধ্যে কারও হাতের স্পর্শ
মাথায় অনুভব করলাম ভোর পাঁচটা
চট্টগ্রাম পৌঁছে গেছি ওনি দুইজন
আনসার দিয়ে আমাকে ধরে ধরে
ওনার বিশ্রামাগারে নিয়ে
ঘুমিয়ে দিছেন সকাল ৯টা বাজে
ডাক্তার এসে আমাকে ঘুম থেকে
জাগালেন এবং সাধু আঙ্কেল
ডাক্তার নিয়ে আসার সময় হোটেল
থেকে রুটি আর বাজি নিয়ে
এসেছেন মুখ দুইয়ে দিয়ে সাধু
আঙ্কেল বল্লেন বাবা এইগুলা
খেয়েনে তখন সবাইকে অবাক করে
দিয়ে চিৎকার করে বলে ওঠলাম
খবরদার আঙ্কেল আমার সামনে
বাবা নামটি উচ্চারণ করববেনা!!
তখন আঙ্কেল মায়ার সরে বল্লেন
ওকে আঙ্কেল আর করবো না,
ডাক্তার এসে হাতে স্যালাইন
দিয়েছে আর কিছু ওষুধ লিখে
দিয়েছেন।
-
হাতে স্যালাইন চলছে সাধু আঙ্কেল
ডাক্তারের সাথে ওষুধ আনতে
যাওয়ার সময় আন্সারকে বলে
গেছেন ওনি আশা পর্যন্ত এক পা
এদিক সেদিক না নড়ে, আন্সার
আমার পাশে বসে আছেন এর কিছুক্ষণ
পর আন্সারের স্ত্রী ফোন করছে
বউয়ের সাথে কথা শেষ করে বলছেন
আমার বাবাকে ফোন দাও..
হ্যাঁলো বাবা কি করো, কিছু
খেয়েছো, বাবা তোমার জন্য
মেলা থেকে পুতুল কিনেছি আর
হ্যাঁ দুষ্টামি করোনা তোমার জন্য
বাবা আসার সময় চিপস নিবো
চকলেট নিবো দুষ্টামি করলে কিন্তু
দিবোনা আর তোমার মা যদি
তোমাকে বকা দেয় বাবা আসলে
বলিও তোমার মাকে বাবা এত্তো
গুলা বকা দিবো.. এসব কথা শুনতে
শুনতে কেন জানি বাবাকে খুব মনে
পড়ছে আর চোখ দিয়ে পানি ঝরছে
ছোটবেলার কথা খুব মনে পরছে
বাবা তো আগে এমন ছিলো না
হঠাৎ সৎ মা ঘরে আসার পর এতটাই
বদলে গেল কেন, আর বাবারই বা কি
দোষ সারাদিন যদি মা নালিশ
দেয় দশটা কথা থেকে একটা হলেও
তো কানে নিবে এটাই
স্বাভাবিক। এসব ভাবতে ভাবতে
সাধু আঙ্কেল ওষুধ নিয়ে আসছেন
এসে বলছেন আঙ্কেল ডাক্তার বলছে
খুব তাড়াতাড়ি সব ঠিক হয়ে যাবে
চিন্তার কিছু নেই এসব বলতে বলতে
সাধু আঙ্কেল ওষুধ খাইয়ে দিচ্ছেন
ওষুধ খাইয়ে দিয়ে বলছেন তোমার
আন্টি আসবে একটু পর ও পাহাড়তলী
থাকে আমার কোয়ার্টার বাসা
আছে তবে দুঃখের বিষয় বাবা
হতে পারলাম না তোমার আন্টির
সমস্যা এই নিয়ে কত ডাক্তারের
কাছে গিয়েছি তার হিসাব নেই,
তুমি থাকার চিন্তা করতে হবেনা
আজ থেকে আমিই তোমার
গার্জিয়ান আর দেখোনা তোমার
আন্টি আসলে তোমাকে দেখে
কতটা খুশী হন আমি ফোন করে শুধু একটু
করে বলছি এরপর আরকি ফোন রেখে
দেওয়ার সময় বলছে আমি যেন
তোমার সেবা করতে একটুওও
বরখেলাপি না করি..আমি নিশ্চুপ
হয়ে গেছি হয়তো অনেক দিন পর এমন
ভালোবাসা পেয়ে দিশেহারা
হয়ে গেছি আর মনে মনে বলছি
এতোদিন এর একশত ভাগের একঅংশ
করে ভালোবাসা ফেলে কি এমন
ক্ষতি হতো হ্যাঁ আন্টি এসেছে
রুমটা আন্টির আগেরই চেনা এসে
আমার পাশে বসলো মনে হচ্ছে
আন্টির পেটের সন্তান আমি
কিংবা আমার হারিয়ে যাওয়া
মা কপালে চুমু দিলেন পাতলা
মালশিটাকে আরেকটু মুখের সামনে
এগিয়ে দিতে দিতে কাঁন্না করে
দিলেন আমার মুখের অবস্থা দেখে
ওইযে মারার সময় হয়তো কয়েক
বারি কপালে কিংবা মুখে পরছেন
আর হয়তো আমার মুখটা একটা মোটা
হয়ে গেছে, আশার সময় আন্টি কমলা
নিয়ে আসছে কমলা খাইয়ে দিতে
দিতে আমার সকল কাহিনী সাধু
আঙ্কেল থেকে শুনিতেছে আমি
নিশ্চিত শুধু আঙ্কেল ক্লাসের
সবচেয়ে ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট
ছিলেন না হয় কি এতোগুলো কথা
আমার মুখ থেকে একবার শুনে কপি
করতে পারতেন?..
-
খুব সুন্দর করে আন্টিকে সব কথা পেষ্ট
করলেন আর শেষে দিয়ে বলে
দিলেন আমাকে যেন বাবা বলে
না ডাকে আমি এটা সহ্য করতে
পারিনি তখন আমি সাধু আঙ্কেলের
মুখের দিকে তাকিয়ে আছি হয়তো
মন থেকে সকল ক্ষোভ মুচে গেছে
এখন আর ওনাদের মুখ থেকে বাবা
ডাকটি শুনলে আর রাগ হবেনা
আরো শুনতে ইচ্ছে হবে।
-
হাতের স্যালাইন শেষ সাধু
আঙ্কেলর ফোন আসছে গাড়ি নিয়ে
আবার ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা
দিতে হবে তখন আঙ্কেল তার
সহকর্মী ড্রাইভারকে বলছে খুব জরুরী
কাজে আটকা পরছেন তাই ওনি
দুইদিনের জন্য ছুটি কাঁটাতে
চাচ্ছেন সহকর্মীও তাতে আপত্তি
করেননি..
-
এখন উদ্দেশ্যে হলো সাধু
আঙ্কেলের বাসায় যাবো, যাবো
না ওনাদের বাসায় নিয়ে যাবেন
আন্টি কপালে আরকি চুমু খেয়ে
জিগ্যাসা করলেন এখন কেমন
লাগছে বাবা? এই কথা শুনা মাত্র
সাধু আঙ্কেল জিহ্বায় কামড় বসিয়ে
দিলেন, আমি বলে ওঠছি আগের
চেয়ে অনেক ভালো মা, তখন আন্টি
খুশিতে কান্না করিয়ে দিলেন
হয়তো জীবনে প্রথম মা ডাক শুনে
আর বুকে জড়িয়ে নিলেন সাধু
আঙ্কেলেরও চোখ দিয়ে পানি
ঝরছে হয়তো বউয়ের খুশি দেখে,
আমি তখন সাধু আঙ্কেলকে
উদ্দেশ্যে করে বলছি বাবা.. সাধু
আঙ্কেল তখন দাড়ানো থেকে এসে
বুকে জড়িয়ে একবার কপালে একবার
মুখে পাগলের মতো চুমু দিতে
লাগলেন,আর ওনাদের ভালোবাসা
পেয়ে আমারও খুশিতে দুই ফোঁটা
চোখের পানি গড়িয়ে পড়লো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন