সোমবার, ১১ জানুয়ারী, ২০১৬

"কোন এক অবেলায় "

ইরার কথন:-
হঠাৎ রিংটোনের শদ্বে ঘোর
কাটলো। কিন্তু এই টোনটা আমার
চেনা। এটা শুধু বিশেষ একজনের
জন্য সেইভ করা। এখন আমার
কাজ হচ্ছে দরজা খোলা। কারন
দরজার ওপাশে শাকিল ভাই দারিয়ে
আছে।
.
কিরে সং সেজে দারিয়ে আছিস কেন?
আমার কাছে কোন টাকা নেই। সর
সামনে থেকে ভিতরে ঢুক্তে দে।
তিনি তার মতো করে ঢুকে গেলো।
আমি তার কান্ড দেখে অবাক।
সে মাঝেমাঝেই এইরকম উদ্ভট কাজ
কর্মের জন্য খুবি বিখ্যাত। কিন্তু
এইবার যা করছে তা আরো
বিরক্তিকর। আপনার মাথার চুল
গুলা কই। বুঝলি ইরা ইদানিং খুব
গরম পরছে। ভাবলাম মাথার চুল
গুলা ফালিয়ে দেই। একটা সন্ন্যাসী
সন্ন্যাসী ভাব এসেছে। ভালো লাগছে
না এখন আমাকে। কচু চিনেন
সেই কচুর মতো লাগছে। আমারতো
মনেহয় আপনি নিশ্চই কোন
মেয়ের পিছে লাইন মারছিলেন
তাই সেই মেয়ের বরো ভাই
আপনাকে ধরে টাক করে দিছে।
সেইটা লজ্জায় এখন বলতে
পারছেন না। তুই সারাদিন নাটক
দেখিস মনেহয়। দিন দিন তোর
মাথায় সব কুটনুতিক বুদ্ধি যায়গা
করে নিচ্ছে। এই স্টার জলসা
আসলেই তোর মাথাটা খেলো।
আপনাকে বলছে? মাই ডিয়ার
ইরা আমাকে কে কি বলবে? এইযে
আমার এখন খুব ইচ্ছা করছে আপনার
ওই টাক মাথায় আমি আলকাতরা
মেখে দেই। ইরা তোর মেজাজ
সবসময় এইরকম চরায় কেন
উঠে থাকে আমাকে বলবি?
আপনার ওই হনুমান মাকরা মুখ
দেকলেই আমার মেজাজ গরম
হয় বুঝলেন! আচ্ছা খাল্লামা কি
তোর জন্মের সময় ভুল করে মধুর
বদলে করলার রস খাইয়ে দিছিলেন।
তা আমি কি যানি সেটা আপনার
খাল্লামাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন।
.
মাই ডিয়ার ইরা এখন ঝটপট
এক গ্লাস সরবত বানিয়ে নিয়ে
আস।
.
আমাকে কি কোন এংগেলে কাজের
বিটি রহিমা মনেহয়। না আমার
কপালে কিছু লেখা আছে।
.
বুঝলি ইরা আমার খানিক
সন্দেহ হয় তুই সত্যি আসাদের
বোন তো। তোর ভাই এতো
ভালো আর তুই হুবাহু রিনা খান।
.
আপনার টাক মাথা আমি ফাটিয়ে
ফেলবো। এখনি সরবত খেয়ে
বিদায় হন।
.
শাকিল ভাই আমার বরো ভাইর
বন্ধু। আসাদ ভাইয়া এইতো
মাত্র দুই বছর হলো পাশ করে
চাকরি নিয়েছে। আর শাকিল
ভাই এখনো বেকার। তার নাকি
চাকরি ভালো লাগে না। তার
নাকি চাকরি বন্দী আসামির মতো
মনেহয়। তাই প্রত্যেক বার
যখন তার কোন চাকরির ইন্টার্ভিউ
থাকে ঠিক দুই দিন আগে সে
বাড়ি ছারা হয়ে যায়। কিনা কোন
দূরে কোথাও থেকে ঘুরে আসে।
ইন্টার্ভিউর পরের দিন এসে
বলবে। বুঝলি ইরা ওনেক ভাবলাম
আসলে চাকরির ইন্টার্ভিউর
সাথে আমার কোয়ালিটি যায় না।
এই দেশে ওনেক হতো দরিদ্র
আছে যারা চাকরি পায় না। এখন
তুই ভাব আমি যদি চাকরি নেই
ওই একটা ছিট ভরে যাবে আর
একটা দরিদ্র চাকরি থেকে
বঞ্চিত হলো। আমাদের দেশের
মানুষ গুলো খুব ভালো এদের
দিকটাও তো আমার ভাবা উচিৎ।
তাই একাকি এইসব ভাবার জন্য
সিলেট গিয়েছিলাম। অনেক
সুন্দর যায়গা। না গেলে জীবন
বৃথা। কেমন উদাস উদাস হয়ে
এই কথা গুলো বলে আমার শুধু
তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করে।
ইন্টার্ভিউর পর কিছুদিন সে
এখানেই থাকে কারন তার বাবা
খুব রাগী আর তার বাবার একটা
লাইসেন্স করা গুলি আছে যেটা
নয়ে সে বসে থাকে তার জন্য।
শাকিল ভাই যে কয়দিন আমাদের
বাসায় থাকে সে কয়দিন আমি
কলেজে যাই না। সারাদিন আমি
তার সাথে গল্প করি হাসা হাসি
করি। মাঝেমাঝে চোখে পানি
এসে পরে এতো আনন্দ সত্যি কি
আমি পাবো এইভেবে। আর তিনি
বোকার মতো আমার দিক ফ্যালফ্যাল
করে তাকিয়ে থাকে আর বলে
বুঝলি ইরা মেয়েরা হচ্ছে গিরগিটির
মতো খালি রং বদলায়। আর
এই ক্ষেত্রে পৃথিবীর সমস্ত ছেলেরা
হচ্ছে কালার ব্লাইন্ড। যখন সে
চলে যায় তখন কেন যানি সব
খালি খালি লাগে।
.
একদিন সে এসে বলে মাই
ডিয়ার ইরা মাঝেমাঝে জীবন টা
কেন যানি খালি খালি লাগে।
যেদিকে তাকাই শুধু কাপেল আর
কাপেল। আমারো ইচ্ছা হয় পাশে
কাউকে নিয়া তার হাত ধরে ঘুরে
বেরাতে। আমি মুখ ঝামটা দিয়ে
বলতাম উম বুরা বয়সে ভিমরতি।
.
সেদিন হঠাৎ করেই তাকে ফেইসবুক
থেকে ব্লক করলাম। কারন
সে একটা মেয়ের ছবিতে কমেন্টে
করছে "তোমাকে দেকতে ওনেক
কিউট লাগছে " আর প্রতিদিন
হোম পেইজে দেখি ৪ বা ৫ টা
মেয়ে তার ফ্রেন্ড তাই রাগে তাকে
ব্লক করলাম । উনি কি বুঝতে
পারে না আমি তাকে কতো
ভালবাসি।
__
শাকিলের কথন :-
ইরা হচ্ছে আমার বন্ধুর ছোট বোন।
সেই কবে থেকে ওদের বাসায়
আমার যাওয়া আসা। খাল্লামা
আমাকে তার ছেলের মতোই যানে।
কিন্তু ওই পিচ্চি আমাকে দেকলেই
তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে। কিন্তু
একটা জিনিস ভেবে খুব শান্তি
পাই যে মেয়েরা যাকে বেশি ভালবাসে
তার সাথেই বেশি রাগারাগি করে।
আমার মতে ইরাও আমাকে
ভালবাসে। সেদিন ওনেক কষ্ট
করে জীবনের প্রথম একটা কবিতা
লিখেছিলাম ওর জন্য। তারপর
ফেইসবুকে মেসেজ দিয়ে ছিলাম।
.
"মাই ডিয়ার ইরা
তোমায় দেকলে আমার
বুকে জাগে প্রেমের পিড়া
আমায় দেবে নাকি একটু ক্ষীরা "
.
পরে অনুধাবন করেছিলাম এইসব
কবিতা লিখতে মনের মাধুর্য লাগে
আর গুরু গম্ভীর শদ্ব ব্যাবহার করা
লাগে। আর কবিতায় ছন্দ থাকা
জরুরি। কিন্তু আমার কবিতায়
এসব কিছুই নেই। তাই চেষ্টা
করছি। আমার ইচ্ছা কোন
এক বর্ষায় ঝুম বৃষ্টির মধ্যে কয়েক
গুচ্ছ কদম ফুল নিয়ে ওর সামনে
গিয়ে বলবো "বুঝলি ইরা আমার
মনেহয় আমি তোকে ভালবাসি "।
.
কিন্তু ওর মাথা অলটাইম গরম
লাভার মতো গরম থাকে। একটু
সুন্দর চেহারা নিয়া কতোই না
বরাই দেখায়। আমি ওর একটা
নাম দিছি বুচি ইরা। চিন্তা করছি
বিয়ের পর এই নামটা ধরে ডাকবো।
.
এইতো সেদিন গরমের ভিতর
দারিয়ে ছিলো আমি দেখে তারাতারি
ওর জন্য আইস্ক্রিম নিয়ে আসলাম।
কিন্তু বদ মেয়েটা আমার হাত থেকে
আইস্ক্রিম টা নিয়ে সোজা হাটা দিলো।
একটা ধন্যবাদ পর্যন্ত দিলো না।
যানি এটা আমার দায়িত্ব। সেদিন
রাতে ফোন দিয়ে বললাম তুই কি
আমার উপর রেগে আছিস। ও
বলে "আপনি আমার বরো ভাইর
বন্ধু আপনার উপর কেন রাগ করবো"
আমার কথা শুনে নিজের মাথার
চুল ছিরে ফেলতে ইচ্ছা করছিলো
তাই তো চুল ফেলে দিলাম।
.
ইরার কথন:-
ওনেক দিন থেকে তাকে ফোন
দিচ্ছি কিন্তু শাকিল ভাই ফোন
ধরছে না। যানি তিনি আর কোনদিন
এসে বলবেনা দরজার সামনে
সং সেজে দারিয়ে আছিস কেন?
ইরা এক গ্লাস ঠান্ডা সরবত নিয়ে
আয়তো। মানুষটা সবসময়
তারা হুরায় থাকে। এইতো দিন
৩০ আগে রাস্তা পারের সময়
হঠাৎ ট্রাকের সাথে ধাক্কা খায়
আর পরে যায়। তার মা সেদিন
পঈ হাসপাতাল থেকে ফোন করে
ওনেক কেঁদেছিলেন। তিনি নাকি
আর স্ক্রাস ছারা হাটতে পারবে না।
তাকে ওনেক ফোন দেই কিন্তু
তিনি একবারো ফোন রিসিভ করে
না। মাঝেমাঝে একটা দু স্বপ্ন দেখি।
দেখি তিনি এক বরো রাস্তার
মাঝখানে একা দাড়িয়ে আছে
স্ক্রাস নিয়ে। আর আমার দিক
শিশুশুলভ লুক নিয়া বলে বুঝলি
ইরা রাস্তাটা ওনেক বরো। কিভাবে পার
হবো বল তো। আমি ফ্যাল ফ্যাল
করে তার দিক তাকিয়ে থাকি।
ওনেক ফোন করার পর তিনি
কল ধরছেন আর বলেছেন।
কাল দেখা করবে।
.
শাকিলের কথন:-
মেয়েটা বড্ড বোকা। আগে যদি
এরকম করতো তা নহয় একটা কথা
ছিলো। কিন্তু এখন এই অনিশ্চিত
জীবনের সাথে ওকে কোন
ভাবেই মিলানো সম্ভব না। তাই
ওকে দেখা করতে বলেছি।
পার্কে। কালকেই সব শেষ করে
দিতে হবে।.
আজ আকাশটা কালো হয়ে
র্যেছে মনেহয় কিছুক্ষনের
মধ্যেই বৃষ্টি পরবে। হঠাৎ ঝুম
বৃষ্টি পরা আরম্ভ করলো।
আমি স্ক্রাসটা নিয়ে দাড়ালাম।
দূরে দেখি সাদা সেলোয়ায় পরে
ইরা আসতেছে হাতে সাদা চুড়ি
হাতে মেহেদি। এসেই বলে দেখেন
তো মেহেদি মুছে গেছে কিনা।
আমি বলি না ঠিকি আছে।
বুঝলি ইরা জীবটা সিনেমা
না তুই যা ভাবছিস সেটা কোন
দিন সম্ভব না। আপনাকে বলছে।
তুই চলে যা। আপনি চুপ করে আমার
হাত ধরুন আর এটা ফেলে দিন।
এটা কোনদিন সম্ভব নয় ইরা।
আপনি আমার কথা না শুনলে
রাস্তায় গিয়ে আমিও গাড়ির
নিচে লাফ দিবো। তখন বুঝবেন।
আপনি তো যানের আমি কি
করতে পারি। এই মেয়ে দেখি
কাদতেছে। কিন্তু পানি বুঝা
যায় না। ঠোটতা মৃদু কাপছে।
আমি ওর হাত ধরে দাড়ালাম।
ওকে উপেক্ষা করা সম্ভব না।
চিন্তা করছি কদম ফুল কই পাই।
ইরা বললো আপনি যানেন আপনি
আমার স্বপ্নে জিজ্ঞাস করতেন
"বুঝলি ইরা রাস্তাটা ওনেক বরো
কিভাবে পার হবো বলতো "
তুই তখন কি বলতি? এই যে
এখন যেভাবে আপনাকে ধরে হাটছি
এই বলে হাসি দিলো। আমিও
একটা হাসি দিলাম। হাটতে হাটতে
চিন্তা করছি জীবনা সিনেমা হলে
খারাপ হতো না।

মঙ্গলবার, ৫ জানুয়ারী, ২০১৬

স্বামী স্ত্রীর খুনসুটি

নতুন বিয়ে করেছি মনের সুখে সকাল
বেলা ঘুমিয়ে আছি---
:
আফিয়া>>এই যে সাহেব ঘুম থেকে ওঠার
বুঝি সময় হয় নাই আপনার? ওঠেন বলছি। ,
আমি>> হায় হায়!! বলে কি? এই শীতের
সকালে কেউ ঘুম থেকে
ওঠে,!
,
আফিয়া >> শুধু ঘুম থেকে ওঠা না গোসল ও
করতে হবে তোমাকে,
,
আমি>> গোসল!! এই শীতের সকালে গোসল
আমার দ্বারা সম্ভব না,(কাপতেঁ কাপতেঁ) ,
আফিয়া>> কাঁপা কাঁপি করে লাভ নাই
গোসল করতেই হবে,
,
আমি>> দোস্ত একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দাও
না!
,
আফিয়া>> কিসের দোস্ত ??? আমি এখন
তোমার বিবাহ করা স্ত্রী,মানে বউ। দোস্ত
মোস্ত বলে পাম দিয়ে কাজ হবে না,দোস্ত
আগে ছিলাম এখন না।
,
আমি>>ওহ পুরানো অভ্যাস তো তাই মুখ
ফস্কে বের হয়ে গেছে,তবে দোস্ত ডাকার
মাঝে একটা ভালবাসা আছে,
,
আফিয়া >> হুম,,এই এখন ওঠো,অনেক বাজে
চেম্বারে যেতে হবে না? গোসল করে ফ্রেশ
হয়ে নাও
,
আমি>> একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দাও না
সোনা বউ আমার,
,
আফিয়া >> ন্যাকামি বাদ দিয়ে
ওঠো,গোসল করে,ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে
আসো খাবার রেডি করছি আমি,
:
(এই বলে ৩২ খানা দাঁত বের করে রুম থেকে
চলে গেলো।
আমি অবুঝ বালকের ন্যায় চিতফাটাং হয়ে
শুয়ে আছি।
কিছুক্ষন পর পাগলি টা আবার রুমে প্রবেশ
করলো )
,
আফিয়া>> এই যে জাহাপানা আপনার
উঠতে হবে না?
,
আমি>> না ওঠবো না,তাহলে একটু আদর করে
দাও,সুন্দর করে মাথায় হাত বুলিয়ে দাও!! ,
আফিয়া>>পাগলা টাকে নিয়ে আর পারি
না,সেই প্রথম পরিচয় হতে পাগলামি করেই
যাচ্ছে পাগলামী তো ছাড়ছেই না,বরং
দিন দিন পাগল আরো বেশি হচ্ছে। ,
আমি>> আমি আর আজ ওঠবো না,সারা দিন
ঘুমিয়েই থাকবো,
,
আফিয়া>> আমার পুসকু বাবু একটা,এই তো
তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি,অনেক
আদর করে দিচ্ছি,এই বার ওঠো উঠে গোসল
করে, ফ্রেশ হয়ে নাও কেমন,
:
:
--------ওঠে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে
চেম্বারে চলে গেলাম,আজ রোগী দের
ভীষন ভিড় চেম্বারে,কাজ করে বাসায় চলে
গেলাম,রাত তখন ১ টা ২৭,পাগলী টা বলে
ছিল ১২ টার আগেই বাসা তে
ফিরবা,পাগলী টা চেম্বারে থাকা কালীন
বার বার ফোন দিয়েছে আজ,নামাজ পড়েছি
কি না? সময় মত খেয়েছি কিনা? সব খেয়াল
ই নেয়,মাঝে মাঝে বিরক্ত লাগলেও,ভালো
লাগার পরিমান টাই বেশি-------
"
যাই হোক কাজ ছেড়ে মাঝ রাতে বাড়ীতে
গেলাম,যাবার সময় রাস্তার পাশে সালাম
মামার দোকান থেকে ১০ টাকার ঝাল মুড়ি
নিলাম,কারন ঝাল মুড়ি পাগলি টার খুব
পছন্দের এটা দিয়েই রাগ টাকে ম্যানেজ
করবো আজ,
"
কলিং বেলের কিরিং কিরিং
,
আফিয়া>>কি এখন আসার সময় হলো বুঝি
আপনার?ভিতরেই ডুকতে দেবো না আজ যাও
বাহিরেই থাকো,(অভিমানী কন্ঠে) ,
আমি>>দেখো বাবু তোমার জন্য আমি কি
নিয়ে এসেছি,সোনা দানা,হীরা মানিক
কিছুই না এই সামান্য ঝাল মুড়ি!!
(রোমান্টিক ভাবে পেশ করলাম) আফিয়া>>
হি হি হি তারছেড়াঁ একটা,যাও এবার রের
মত মাফ করলাম,তো এত দেরি হল কেন আজ?
,
আমি>> না মানে ইয়ে আজ রোগীর খুব ভীড়
ছিল,শীতকাল তো তাই
,
আফিয়া>> থাক আর বলতে হবে না,কি
আমার জনদরদী!! নিজের বউ এর প্রতি তো
কোন খেয়াল ই নেই,না খেয়ে সারা রাত
তোমার জন্য বসে আছি,
,
আমি>> পাগলী আমার একটা, চলো আজ
তোমাকে খাইয়ে দেবো,
:
------পাগলী টাকে খাওয়া য় দিলাম আর
নিজেও খেয়ে নিলাম, সারা টা দিন খুব
পরিশ্রম করেছি শরীর টা খুব ক্লান্ত
লাগছে,বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম ,
আফিয়া>> তামিম ওঠো না,চলো ছাদে
যাই,আমার ছাদে যেতে ইচ্ছে করছে,ছাদ
আমার খুব ভালো লাগে,ওঠো না
,
আমি>>কি?? এই শীতের মধ্যে ছাদে!! আর
আমি খুব ক্লান্ত ভালো লাগছে না আমার,
চুপ করে ঘুমিয়ে পড়ো,
,
আফিয়া>> এই তামিম ওঠ না প্লিজ,চলো
ছাদে যাই,বিয়ের আগে তো খুব বলতে ? দুই
জনে ছাদে বসে গল্প করবো,তুমি আমার
কাধে মাথা রাখবে আর আমি মাথায়
আলতো করে হাত বুলিয়ে দেবে, এই সব কি
ভুলে গেছো?? ভুলে তো যাবেই তুমি
আমাকে ভাল ই বাসো না,
,
আমি>>ন্যাকামি ভালো লাগছে না বললাম
না যাবো না (ধমক দিয়ে)
,
--------পাগলী টা কান্না করতে করতে চলে
গেলো,
একটু পর মনের ভিতর নাড়া দিয়ে ওঠলো
পাগলী টাকে মনে হয় শুধু কষ্ট দিলাম,আমার
জন্য না খেয়ে বসে ছিল কত ক্ষন আর আমি
ধমক দিলাম,,
:
আফিয়া কে খুজতে খুজতে ছাদে চলে
গেলাম,
আফিয়া ছাদের এক কোনে ফুলের টপের
কাছে বসে আসে আর কান্না করছে,
আমাকে দেখেই মুখটা ঘুড়িয়ে নিল,উনি যে
খুব অভিমান করছে তা আর জানতে বাকী
নেই,
আমি>> এই বাবু কান্না করে না এই তো
আমি ছাদে এসেছি,
আফিয়া>> তুমি কেন ছাদে এসেছো যাও
চলে যাও,লাগবে না আর আমাকে তুমি
তোমার চেম্বার নিয়েই থাকো,তুমি
আমাকে একটু ভালোবাসো না (এক
নিঃশ্বাস এ)
,
আমি>> কে বলেছে আমি তোমাকে
ভালবাসি না!! এত্ত এত্ত ভালবাসি
তোমাকে,
আফিয়া>> তাহলে কান ধরো,আর বলো আর
কখনো আমাকে ধমক দিবা না।
,
আফিয়া>> কান ! থাক না কান ধরা,এবারের
মত মাফ করে দাও,
,
আফিয়া>> কোন মাফ হবে না,
,
আমি>> কান ধরলাম (ভ্যাগিস আশে পাশে
কেউ নেই)
,
আফিয়া>>এখানে আসো পাশে বসো,
তোমার কাধে মাথা রাখবো এখন, আমি আর
তুমি গল্প বলবে,আর আলতো করে মাথায়
হাত বুলিয়ে দিবে,
------পাগলী টা কাধে মাথা রেখে--- ,
আফিয়া>> তামিম আমি তোমার কাধে
আজীবন ই মাথা রাখতে চাই এই ভাবেই
পার করে দিতে চাই আজীবন,আমায় ছেড়ে
কোথাও যাবা না তো?(চোখে পানি) ,
আমি>>আরে পাগলী কান্না করে না,দুর
পাগলী একটা,তোমায় ছেড়ে কোথায় যাবো
আমি?এখন তো আমরা স্বামী স্ত্রী আর
হারানোর ভয় নাই।
,
আফিয়া>> কান্না করি না তো,জানো
তামিম তোমার কাধে মাথা রেখে যে সুখ
টা পাই তা আর কোথাও পাই না,সুখে ও
অনেক সময় চোখে পানি আসে,
:
কাধে মাথা রেখেই কথাথা বলতে বলতে
ঘুমিয়ে পড়েছে পাগলী টা,অপলক দৃষ্টি তে
তাকিয়ে আছি পাগলী টার দিকে,কুয়াশা
ভেজা রাতে,এক দম পরীর ন্যায় লাগছে
আফিয়া কে,তারপর কোলে করে রুমে নিয়ে
গিয়ে পাগলী টাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে
আমি ঘুমিয়ে গেলাম
:
:
স্বামী স্ত্রীর এই রকম মান অভিমান,ছোট্ট
ছোট্ট খুনসুটি খারাপ না ভালোই
লাগে,প্রতিটি দম্পত্তির মাঝেই থাকুক
মান অভিমান আর টুকরো টুকরো দুষ্ট মিষ্টি
ঝগড়া আর ছোট্ট বাবু দের মত পাগলামি
করা কিছু আবদার আর খুনসুটি। ,
জয় হোক পৃথীবির সকল ভালবাসার

শুক্রবার, ১ জানুয়ারী, ২০১৬

ভালবাসার অপমৃত্যু

শ্রাবনী,, শ্রাবনী দাড়াও প্লিজ
-না,
-প্লিজ একবার দড়াও না
-বললাম তো তোমার সাথে আমার কোন কথা নাই
-কিন্তু আমার দোষটা কি?
-বুঝোনা তোমার দোষ কি :/)
-না...প্লিজজ বল।
-তোমার বেকারত্ব।
-এতে আমার দোষ কোথায়?
-একজন বেকার হয়েও বলছো তোমার দোষ কোথায়?
-হ্যা বলছি।
-তোমার লজ্জা করে না এখনো আমার সামনে দাড়িয়ে আছো।
-লজ্জার কি আছে আমি তো চেষ্টা করছি কিন্তু টাকার জন্যই তো হচ্ছে না।
-কোন কথা নাই বাসা থেকে আমার বিয়ে ঠিক করেছে।
-কিন্তু....
-কোন কিন্তু নাই।ছেলে খুব ভাল স্মার্ট। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার মাসিক বেতন ৫০০০০+ টাকা।তার সাথে নিজেকে অন্তত তুলনা কর না।
-কিন্তু।আচ্ছা যাইহোক তুমি কি করবে?
-সেই ছেলেটাকে বিয়ে করবো।
-এতে তুমি খুশী? ভাল থাকবে?
-হ্যা খুব।
-তাহলে তোমাকে আমি আর আটকাবো না।
-ওকে বায়।জীবনে আমার সামনে এসো না।
-ঠিক আছে তোমার সুখের জন্য আমি সব করতে পারি..
-হুম বায়।
-বায়।
★শ্রাবনী ও শামিমের সাথে কথা হচ্ছিল এতক্ষণ।
শামিম ও শ্রাবনীর ভালবাসাটা ৪ বছরের কিন্তু আজ সেটা ভেঙে গেল শুধু টাকার জন্য।
কি দোষ ছিল শামিমের? সে তো অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু কেন এমন হল কেন?
-কিরে শামিম কি মন খারাপ কেন
-কেন কই নাতো।
-দেখ আমি কিছু তো বুঝতে পারছিরে।
-মা,, মা,, [বলেই কান্ন করে দেয় শামিম]
-কি হয়েছেরে।
-মা, শ্রাবনী,, শ্রাবনী আমাকে রেখে চলে গেছে।
-কি বলছিস
-হ্যা মা আজ আমার এই বেকারত্বের জন্য আমার ভালবাসা আমাকে ছেড়ে গেল
-এতে তোর কোন দোষ নেইই বাবা
-মা আমি কি করবো বল ওরাই তো আমার কাছে টাকা চেয়েছে চাকরীর জন্য।
-আচ্ছা বাবা তুই নিজেকে ঠিক কর। তুই তার থেকেও অনেক ভাল চাকরি করবি।
-কিন্তু মা টাকা ছাড়া এই দুনিয়া কিছুই বুঝেনা
-আমার সব গহনা বেচে দে।
-না মা এ হয় না।
-তোকে বড় হতেই হবে আমি কোনোদিন তোর হার দেখিনি আজ তুই হেড়ে যাবি?
-কিন্তু মা,,
-কোন কিন্তু না তুই বড় হবি সবাইকে দেখিয়ে দিবি টাকা না ভালবাসাই সর্বোচ্চ।
-দোয়া কর মা তোমার ছেলে যেন তোমার আশার প্রদীপ জ্বালাতে পারে।
-হ্যা বাবা।
★আজ শামীম অনেক বড় হয়েছে টাকার কোন অভাব নেই। দেশের সব থেকে ধনী ব্যাক্তিদের মাঝে একজন।সব আছে কিন্তু নেই সে ভালবাসাটা আর নেই সেই ভালবাসার মানুষটা।
★হটাত একদিন★
মুখটা খুব চেনা লাগছে হ্যা এ সেই ভালবাসাটা
ভালবাসার শ্রাবনী কিন্তু সে এখানে কি করছে
দেখা করবে তখনই মনে।পরে সেদিনের সেই কথা গুলো বুকের ভিতর টা ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়।
ফিরে যাবে নাকি না এই অবস্থার কারন কি জানতেই হবে।
-Excuse me.....
-জ্বী.....[বলেই থেমে যায় শ্রাবনী]
-কি অবস্থা? কেমন আছো?
-কিছু বলে না শ্রাবনী
-এই যে
-কিছু না বলেই কেদে দেয় শ্রাবনী
-এভাবে কান্নার মানে কি? [শামীমের বুঝতে বাকি নেই যে শ্রাবনী কেমন আছে]
-শামিম প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও
-কেন তোমার ইঞ্জিনিয়ার স্বামী কোথায়?
-তোমাকে ছেড়ে আমি খুব বড় ভুল করেছিলাম
-তাইইইইইইই??
-হ্যা।, আজ টাকা আছে কিন্তু নেই সেই তুমি, নেই ভালবাসা।প্লিজ আমাকে মাফ করে দিও
-কেন কি হয়েছে
-সজীব প্রতিদিন বাহির থেকে আসে খুব রাতে নেশা করে কিছু জিজ্ঞেস করলেই মারধর করে।
আমার জন্য কোন সময় নেই তার।প্লিজ আমাকে এই অন্ধকার জীবন থেকে মুক্তি দাও
-আমার কিছু করার নাই। তুমি টাকার জন্য তাকে বিয়ে করেছো।
-প্লিজ।আমি তোমাকে কত খুঁজেছি তুমি জানো না।
-সরি।তুমি তোমার বাব্র পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করেছো।আর আমি এখন আমার মায়ের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করবো তোমার দাওয়াত রইল...
-কিন্তু শোন প্লিজ।
-বায়।
★কোন কথা না বলেই চলে যায় শামীম একবুক কষ্ট নিয়ে।তার থেকেও বেশী কষ্ট হচ্ছে শ্রাবনীর অনস্থা দেখে।খুব কষ্ট হচ্ছে শামীমের কিন্তু কিছুই করার নাই কান্নায় জড়িত চোখ নিয়ে ফিরে যায়।
এভাবেই একটি ভালবাসার অপমৃত্যু ঘটে।

হৃদয়ের আর্তনাদ

আমি যখন ছোট ছিলাম,মানে হাইস্কুল টাইমে সবসময় হাফপ্যান্ট পড়তাম।
ফুলপ্যান্ট খুব একটা পছন্দ ছিল না আমার।
বেশিরভাগ সময়ই থ্রি কোয়ার্টার কিংবা হাফ প্যান্ট পড়ে থাকতাম।
আমি যখন ক্লাস সেভেন কি এইটে পড়ি তখন আমাদের পাশের বাসায় একটা মেয়েকে দেখতে পাই।
নতুন ভাড়া এসেছিল,প্রথম বারেই মেয়েকে দেখে যা বুঝেছিলাম,,তা এই যুগের ক্রাশ......
আমি প্রতিদিন ফুটবল প্র্যাকটিসে যাওয়ার সময় মেয়েটাকে দেখতে পেতাম।
মেয়েটাকে দেখেও আমি না দেখার ভান করে চলে যেতাম,কারণ,,যদি দেখে আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি তাহলে কি না কি ভাববে........
তাই আমি প্রতিদিন আড়চোখে দেখতাম মেয়েটাকে।
তবে মেয়েটিকে এতদিন লক্ষ্য করে বুঝেছিলাম যে মেয়েটা একটু চঞ্চল প্রকৃতির তবে কেউ সহজে ব্যাপারটা বুঝতে পারবে না।
.
একদিন ফুটবল প্র্যাকটিস শেষ করে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে দেখি মেয়েটা আমাদের বাসায়।
আমি অন্য কোনো দিকে খেয়াল না দিয়ে চুপচাপ বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আম্মুর কাছে গেলাম।
আম্মুকে আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস করলাম,
:এই মেয়ে আমাদের বাসায় কেনো???
:মেয়ে মেয়ে করিস না তো।ওর নাম রাহি,আর ও তোর ক্লাসেই পড়ে (আম্মু)
:আমার ক্লাসে পড়ে ভালো কথা,কিন্তু আমাদের বাসায় ক্যান??
:ওর আব্বু এখানে বদলি হয়েছে,আর ও এখনো কোনো স্কুলএ ভর্তি হয় নি,আর ওর বইগুলোও আনে নি।
:তাই আমি কি করবো???
:তোর কিছু বই ওকে দে,,পড়ে আবার দিয়ে যাবে।
:কিন্তু...........
:কোনো কিন্তু না(একটু রাগী সুরেই বলল আম্মু)
.
তাই আমিও কথা বাড়ালাম না।চুপচাপ রুমে গিয়ে বুকসেল্ফ থেকে অন্য একসেট বই বের করলাম।
কারণ,সবসময় আমার আব্বু এক্সট্রা বই এনে রাখে আমার জন্য।সেইগুলো যখন মেয়েকে মানে রাহি কে দিতে গেলাম,তখনই মেয়েটা বলে উঠলো,
:এই যে মিস্টার হাফপ্যান্ট,কেমন আছেন???(রাহি)
:কি!!!!কি বললেন??(আমি)
:কেনো??কানে কি কম শুনেন নাকি??(রাহি)
:আপনি আমাকে হাফপ্যান্ট বললেন ক্যান??(আমি)
:আসলে,প্রতিদিন হাফপ্যান্ট পড়া দেখি তো,, তাই.....(রাহি)
:হইছে,হইছে এখন বইগুলো নিন আর ভাগেন(আমি)
:আচ্ছা,মিস্টার হাফপ্যান্ট আপনি কখনও ফুল প্যান্ট পড়েন না??(রাহি)
:আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে যে আমি স্কুলেও হাফপ্যান্ট পড়ে যাই!!!আর কিসের মিস্টার হাফপ্যান্ট লাগাইছেন???আমার একটা নাম আছে,বুঝতে পারছেন??(একটু রাগী ভাব নিয়েই বললাম)
:তো আপনার নাম টা কি জানতে পারি???(রাহি)
:আমার নাম ফাহিম,আর আপনি এখন আসতে পারেন(আমি)
:এতো রাগ করেন ক্যান??যাইতেছি,
,,,হুহ।
বলেই সেদিন চলে গেল মেয়েটা।
.
তারপর প্রতিদিন বিকেল বেলাতেই দেখতে পেতাম রাহিকে।
রাহির সাথে কথাও হত,তবে খুব কম।
কথা না হলেও আমি আড়চোখে ওকে দেখাটা মিস করতাম না।
অস্বাভাবিক মাধুর্যতা ছিল মেয়েটারয মধ্যে।আর এক ধরনের চঞ্চলতা,যা আমার ভীষণ ভালো লাগতো।
আসলে সেটা শুধু ভালো লাগা ছিলো নাকি অন্য কিছু বুঝি নি।
.
প্রায় দু বছর পর,,,
তখন আমি ক্লাস নাইন কি টেনএ পড়ি।
আগের মতোই ফুটবল প্র্যাকটিসে যেতাম।কিন্তু,,,
হঠাৎ করে লক্ষ্য করলাম রাহিকে আর দেখা যায় না।পরপর তিনদিন দেখতে না পাওয়ার পর আমি আম্মুকে জিজ্ঞেস করে যা শুনলাম,,তা শোনার ইচ্ছে ছিলো না আমার।
রাহির আব্বুর নাকি অন্য জায়গায় পোস্টিং হয়েছে,তাই সবাই চলে গেছে।।
তবে ওদের পরিবারের সাথে আমার পরিবারের ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে আম্মু নাকি ওদের ফোন নাম্বার রেখে দিয়েছে।
.
আজ প্রায় ছয় বছর পর আমি আর আমার পরিবারের সবাই রাহিদের বাড়িতে।
কারণ,সামনের সপ্তাহে রাহির বিয়ে।
বিগত সাত বছর নিয়মিতই রাহির পরিবারের সাথে আমার পরিবারের যোগাযোগ হতো।
বিয়ের এক সপ্তাহ আগেই আমি আর আমার পরিবার বিয়ে বাড়িতে।
আর আমি রাহির ঠিক সামনে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে এতক্ষণ এইসব ভাবছি।
আমার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে রাহি বলে উঠলো,
:এই যে মিস্টার হাফ প্যান্ট,,কেমন আছেন???দারুণ স্মার্ট হয়েছেন দেখছি....হুমমম???(রাহি)
:আমি ভালোই আছি।তবে ভাবিনি যে তখনকার সেই কিউট মেয়েটা আরও কিউট হবে।তবে চঞ্চলতা সেই আগের মতোই আছে(আমি)
:হয়েছে,,,আমাকে আর পাম মারতে হবে না।।সামনে আমার বিয়ে,,বুঝেছেন???কয়টা গার্লফ্রেন্ড জুটিয়েছেন,,,হুমমম???(রাহি)
:দুঃখিত,,আমার কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই।তবে বাল্যকালে একজনকে খুব ভালো লাগতো।কিন্তু তাকে বলবো বলবো বলে কিছু বলার আগেই তাকে হারিয়ে ফেলেছি।
(এইটুকু বলেই সেখান থেকে চলে আসলাম)
.
মাকে গিয়ে মিথ্যে বললাম যে আমার বন্ধুর বাবা অসুস্থ।
মিথ্যে বলে চলে আসলাম রাহিদের বাড়ি থেকে।
হয়তো ওখানে কিছুদিন থাকলে কোনো অঘটন ঘটে যেতে পারতো।কারণ,আমি চলে আসার সময় দেখেছি রাহির চোখের জল,যেটা সবার চোখের কাছ থেকে আড়াল হলেও আমার চোখের আড়াল হয় নি।
আর কিছু দিন থাকলে হয়তো আমি আমার মনের কথা সবার সামনেই বলে দিতাম,কিন্তু এতে রাহির পরিবারের মানসম্মানের ক্ষয় হতো,,সেই সাথে আমার পরিবারেরও।
.
আমার হৃদয়ের আর্তনাদ আমি ছাড়া কেউ শুনছে না।আমার বাল্যকালের প্রেম যে আজ এতদিন পর আমাকে এতটা কষ্ট দেবে,তা আমি কখনো ভাবি নি।
হৃদয়ের আর্তনাদের কাছে হার মানলে আমার চলবে না।সবসময় ভালোবাসলেই কাছে পেতে হয় না।
ভালো থাকুক রাহি,আশা করি সুখী হোক ওর নতুন জীবন নিয়ে।

ঝগড়া অতঃপর প্রেম

নীলক্ষেতের মোরে রিক্সা থেকে
নামতেই ভিজে চুপসে গেলাম, মাথা
ও শরীরে আকাশ হতে নিক্ষিপ্ত বরফের
অত্যাচার। এ তো ভয়ংকর বৃষ্টিরে
বাবা। মোবাইলটা কোনও মতে
পকেটে চালান দিয়ে ভোঁ দৌড়
মারলাম, গন্তব্য সামনের দোকান
গুলোর কোনও চিপা, যার উপর দিয়ে ওই
মেঘঘন আকাশটা দেখা যায় না।
দৌড়াচ্ছি আর আশেপাশের
চিপাগুলো দেখছি, মানুষে টাঁসা,
শালা এই দেশের জনসংখ্যা এতো
বেশি কেন, ছোটবেলায়
পড়েছিলাম... বিনোদনের যথেষ্ট
উপকরন না থাকায় যৌনতাই
বিনোদনের উপলক্ষ, কিন্তু এখনতো
বিনোদনের অভাব নাই, তাও
জনসংখ্যা এতো বেশি কেন? ব্লগে এর
উপর ব্যাপক একটা লেখা লিখতে হবে,
তার আগে নিজেরে বাচাইতে হবে।
একটা দোকানে কিছুটা হালকা
অবস্থা মনে হচ্ছে, ওই দিকেই যাই...
বাকিটা উপরয়ালার কৃপা।
- এই সরে দাঁড়ান,...... স্টুপিড।
ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকালাম,
মোটা কাল ফ্রেমের চশমার ভিতর
দিয়ে একজোড়া সরল চোখ, ঠোঁট গুলো
রাগে কাঁপছে, গালে হালকা
টমেটো মার্কা লালচে চোপ।
- অ্যান্টি কোনও সমস্যা??
- এই ফাজিল ছেলে, আমি দেখতে
তোর অ্যান্টির মতো?
- হুম, কি সমস্যা অ্যান্টি?
- আরে বেয়াদপ তো, অ্যান্টি
অ্যান্টি করছিস কেন? ভিজা শরীরটা
সরা নইলে থাপ্পড় খাবি।
একি মেয়েরে বাবা, সরাসরি তুই তুই
করছে। মেজাজটা আরও খিঁচরা হয়ে
গেল।
- ওই বেটি, আমি তোর ড্রাইভার
লাগিযে তুই তুই করছিস?
“আপু কোনও সমস্যা” বলে একজন
নারীবাদী এগিয়ে আসলো।
তাকাইয়া দেখি বেটা একটা
পালোয়ান। সিচুয়েসন প্রতিকূলে।
- আরে দেখুন না, বেয়াদপটা গায়ে
পড়ে অভদ্রতা করছে। বললাম, সরে
দাঁড়ান... উল্টা আমার সাথে
ফাইজলামি করছে। স্টুপিড একটা।
- এই যে ভাই, মেয়ে মানুষ দেখলে
মাথা ঠিক থাহে না? দেইখা তো ভদ্র
ঘরের পোলা মনে হইতাছে। সইরা
দাঁড়ান এহনি, নাইলে সমস্যা আছে।
আইজকালকার পোলাপাইন গুলা যে
কি পরিমান ফাজিল হইয়া গেছে।
- আপনি নিজের চরকায় তেল দেন, আমি
ঢুকতে পারলাম না, শরীর ভিজে
গেছে তো দেখতেই পাচ্ছেন, আর একটু
পানির ছিটা লাগছে, এতেই উনার
আমাকে স্টুপিড বলতে হবে?
যথাসম্ভব কঠিন আর ভারিক্কি একটা লুক
নেবার চেষ্টা করলাম। লাভ হইছে বলে
মনে হল না। মেয়ে মানুষ দেখলে যে
কেউ হিরো সাজবার চেষ্টা করে, আর
এতো একটা পালোয়ান... আমার তিনগুন।
তাই সরে দাঁড়ালাম আস্তে করে, একটু
অনিচ্ছার ভাব নিয়ে। মেয়েটার
দিকেও একটা কঠিন লুক চালান দিয়ে
দিলাম, ওইখানেও খুব একটা লাভ হইল
না। মাছি মারার ভংগিতে আমারে
নদীর ওপারে উড়াইয়া দিল। অগত্যা
ভিজা শরীর নিয়া হাদারামের মতো
ওইখানে অস্বস্তিকর টাইম পাস করতে
লাগলাম। হালকা ঠাণ্ডা লাগছে।
শরীরটা একটু কাঁপছেও মনে হয়।
বেশ কিছুক্ষণ পরে বৃষ্টি হালকা হয়ে
আসলো। বের হয়ে যাবো কিনা
ভাবছি, তখন আবার ওই বেটি খেকিয়ে
উঠল- “সরে দাঁড়ান, বের হবো।” যাই
হোক, তুই থেকে সরাসরি আপনিতে
উন্নীত হইছি। মেয়েটা খারাপ না,
মেজাজটা একটু গরম মনে হয়। বাপ মনে
হয় গ্রাম্য চেয়ারম্যান... এই ধরনের
বাপের বেটিরা একটু এই টাইপ হয়। সরে
দাঁড়ালাম।
সামনে দিয়া যখন বের হয়ে গেল,
নাকে সেই মানের একটা সুবাস
পেলাম। আহা, রাগ ধুয়ে মুছে মিঠা
পানি হয়ে গেল। ভালো করে একটু
দেখলাম, শ্যামল দেশের সাদা
মেয়ে... সুন্দরী তো সেটা পাগলেও
বলবে।
ঘুরে জায়গা নিয়ে দাড়াতে যাবো,
একসাথে অনেক গুলা হাসির শব্দে
পেছনে ফিরে তাকালাম...
চেয়ারম্যানের বেটি রাস্তায় ময়লা
আবর্জনার মাঝে গড়া-গড়ি খাচ্ছে,
একটি কলার খোসা পায়ের চাপে
ভর্তা হয়ে ঈদের চাঁদের আকার ধারন
করে উনার পতনের ইতিহাসের সাক্ষী
হয়ে আছে। অনেকের সাথে আমিও
চেয়ারম্যানের বেটিকে হেল্প করতে
এগিয়ে গেলাম। মেয়ে মানুষ, তাই
কেউ হাত দিয়ে তুলতে ইতস্তত করছে...
আর বেটির চশমা চোখে নাই, সেও
বোধ করি কিছুই দেখতে পারতেছে
না। অদ্ভুত সিচুয়েসন।
“দেখি, সরেন তো ভাই, সরেন... ওর
চশমাটা দেখুন তো কই”... বলে আমি
এগিয়ে গেলাম। মায়া লাগলো
দেখে, চশমা ছাড়া মনে হয় কিছুই
দেখতে পারছে না, আর সাড়া শরীর
তো কাঁদায় যাচ্ছে তাই অবস্থা। মানুষ
গোল হয়ে নাটক দেখছে... কেউ কেউ
তো শরীর দেখার এতো মজার সুযোগ
হাতছাড়া করতে চাচ্ছে না। আমি
হাতটা হালকা করে ধরে, মুখটা
কানের কাছে নিয়ে বললাম...
- অ্যান্টি... আমি, আপনার স্টুপিড...
টেনশন করবেন না, কোথাও লেগেছে?
- নাহ, আমার চশমাটা দেখুন না
কোথায় প্লিজ... (কাঁদো কাঁদো কণ্ঠ)
একজন চশমাটা এগিয়ে দিল আমার
হাতে, একদিকের ফ্রেম ভেঙ্গে
গেছে। চশমাটা ওর হাতে দিয়ে
একজনকে একটা রিকশা ডেকে দিতে
বললাম। ওর দিকে তাকিয়ে দেখি
চশমাটা কোনও রকমে পড়ে বোকা
বোকা দৃষ্টিতে চারদিকে
তাকাচ্ছে... আমার দিকে তাকিয়ে
এমন একটা লুক দিল, ওই দৃষ্টিতে এতো
মায়া, আমি কয়েকটা পালস মিস
করলাম। আস্তে করে হাতটা ধরে ওকে
দাড় করালাম।
- আঘাত পেয়েছেন কোথাও?
- কি জানি, আমার কান্না পাচ্ছে...
- রিকশায় করে বাসায় চলে যান,
ড্রেসের বাজে অবস্থা...
- আপনি যাবেন আমার সাথে একটু,
প্লিজ...
আমি এমনিতেই যেতে চাচ্ছিলাম
মনে মনে, বলাতে মনটা লাফিয়ে
উঠল... একসাথে রিক্সায় উঠলাম।
মানুষজন আমার আর ওর দিকে অদ্ভুত
দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। কেন জানি বুকের
কোথাও নতুন কিছু সুর বিভিন্ন তাল আর
লয় নিয়ে বাজতে শুরু করল। রিক্সার
হুডটা তুলে দিলাম, পলিথিনের
কাগজটা দিয়ে বাহিরের জগত থেকে
আমরা আলাদা হয়ে গেলাম। সমস্যা
একটাই, কাদা-ময়লার অতি মিষ্ট
সুবাসে আমি আপ্লুত হয়ে রইলাম।
“ভাইজান যামু কোন জাইগায়?”...
রিক্সাওয়ালার কোশ্চেনে আবেগের
সুরেলা সঙ্গীতে কিছু বেসুরা টান
অনুভব করলাম। আমি কাদাকুমারীর
দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে
দেখি উনার কাজল কাল চোখে
মেঘের ঘনঘটা, বর্ষণ এই হল বলে, শুধু
একটা দমকা হাওয়ার ধাক্কার
অপেক্ষা।
- দেখতাসস না তোর ভাবির বেহাল
অবস্থা?... চলতে থাক, উনি এখন কোন
জাইগায় যাবে তার মুডে নাই, আগে
মুড ঠিক হউক...
- আপনি সবসময় এমন ফাইজলামি করেন
কেন?... স্টুপিড।
- যাক, কথা বলছেন তাহলে... খোঁচা
কামে লাগছে... এখন কই যাবো,
ঠিকানা বলে ফেলেন... চোখে তো
মেঘের ঘনঘটা দেখতে পারছি... বর্ষণ
শুরু হলে আর বলতে পারবেন না।
- আপনি না যাচ্ছে তাই... এই মামা
ইস্কাটনের দিকে চলো।
রিক্সা চলছে মামার ইচ্ছের গতিতে,
পলিথিনের চিপায় আমরা দুটি নর-
নারী নিশ্চুপ বসে আছি। বিশাল
কাহিনীর পর একটা সিগারেট ধরাতে
মন চাচ্ছে... কিন্তু বুঝতে পারছি না...
পাশে বসা কাদাকুমারী আবার
খেকিয়ে উঠবে না তো!! ধুর... “ওই
মামা... ওই সিগারেটের দোকানের
পাশে একটু রাখেন তো”... চাইলাম না
কাদাকুমারীর দিকে... ভয়ে নাকি
কেন, জানি না।
- মামা, কোথাও দাঁড়াবেন না,
সোজা চলেন... (আমার দিকে
তাকিয়ে)... আপনি তো অদ্ভুত লোক...
নাম কি আপনার?... কি করেন??
- অদ্ভুত লোকটার নাম আকাশ... কি
করি??... ওই ঘুরাঘুরি আর কি...
- হুম... বেকার?
- বেকার বলে লজ্জা দিবেন না...
আমরাও মানুষ।
ও হেসে ফেলল। এতো মিষ্টি কাদাময়
হাসি। মনটা পুরাই বরফের মতো গলে
গেল।
- আপনার নামটা কি জানতে পারি?
- নাম দিয়ে কি করবেন?
- ওমা!!... আপনি জানলেন... আমি জানব
না??
- নিশি...
আমি তাকালাম ওর দিকে... নিশি !!!...
নিশ্চুপ হয়ে গেলাম আমি। প্রেম আমার
চোখে মুখে টলটল করছে। এই আমার
সমস্যা... সুন্দরী দেখলেই আমার প্রেম
হয়ে যায়। আকাশ গার্ল হওয়ার যে
কয়েকজন বিরল দুর্ভাগ্যের অধিকারী
হতে পেরেছিল তাদের তালিকায়
কাদাকুমারী নিশি কে দেখতে
পারলাম না। সেই আশা করেও লাভ
নেই।
কখন যে ওর বাসার সামনে চলে আসছি
টেরই পাইনি। রিক্সা থেকে নামলাম,
ভাড়া দিলাম। তাকালাম ওর দিকে,
ক্ষণিকের পরিচয় অথচ কতো চেনা মনে
হচ্ছে। আমি একটা উত্তম কুমার টাইপ
হাসি দিলাম।
- যান তাহলে, বডি গার্ডের কাজ তো
শেষ।
- আপনি কি সব সময় এমন ফান করেন?
বাসায় চলুন... মার সাথে কথা বলে
পরে যাবেন।
- মার সাথে?... কেন, কি করছি আমি?...
দেখুন আমি কিন্তু আপনারে ধাক্কা
দিয়ে ফেলেনি...
- আপনার ফাইজলামি শেষ হইছে??.....
উপরে তাকিয়ে দেখুন বারান্দা
থেকে মা আমাদের দেখছেন। তাই,
আপনাকে এখন যেতে হবে এবং সুন্দর
করে ঘটনাটা বলতে হবে... এবং অবশ্যই...
আপনি যে আমার কেউ না... সেটাও
সুন্দর করে বলবেন।
আমি উপরে তাকানোর সাহস না করেই
ওর পেছন পেছন গেইট দিয়ে বাসায়
ঢুকলাম। দারওয়ান চোখ গোল করে
সালাম দিল... আমারে না
কাদাকুমারীরে আল্লাহ জানে।
পেটের ভিতর শিরা-উপশিরা গুলো
কানামাছি ভোঁ ভোঁ খেলা শুরু করে
দিছে... আজকে কার মুখ দেখে যে
উঠছিলাম... মনে হয় রহিমা বুয়া।
ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে বসে আমের
জুস খাচ্ছি আর ইন্টারভিউ পর্ব মনে মনে
সাজাচ্ছি। “নাম কি তোমার?”... মাথা
তুলে প্রশ্নকারীর দিকে তাকিয়ে
দেখি মধ্যবয়সী একজন মহিলা।
দেখেতে তো সহজ সরল মমতাময়ীই মনে
হচ্ছে। দাঁড়িয়ে সালাম দিলাম।
- জী, আকাশ।
- বসো... ভালো নাম কি?
- সাইফুল আমিন আকাশ।
- বাসা কোথায় তোমাদের?
- জী,সিরাজগঞ্জ ।
- হুম... বাবা কি করেন?
- হাই স্কুলের হেডটিচার।
- মা?
- মেডিকেলে চাকরী করেন।
- কয় ভাইবোন?
মহিলার সমস্যা কি??... পুরা
বায়োডাটা জিজ্ঞেস করতেসে...
আসল কোশ্চেন কখন শুরু হবে সেই
অপেক্ষায় আছি...
- জী, দুই ভাই, এক বোন। আমি সবার বড়,
তারপর বোন, তারপর আবার ভাই।
- আচ্ছা, কি করো?
- জী, আমি একজন ইঞ্জিনিয়ার...
“ইঞ্জিনিয়ার??... ” বা দিকে
তাকিয়ে দেখি নিশি... নতুন চশমার
ভিতর দিয়ে চোখ গুলো যেন বের হয়ে
আসছে... ফ্রেশ হয়ে একটা সাদা ড্রেস
পড়ছে... পরীর মতো লাগছে...
- নিশি তুই কথা বলবি না, কোথা
থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং করেছো?
- বুয়েট থেকে।
- অনেক ভালো, আচ্ছা, বসো... তোমরা
কোথা বল... দুপুরে খেয়ে যাবে
এখানে।
- জী... না... আমি বাইরে খেয়ে নিতে
পারবো।
- খেয়ে যাবে... বললাম না। বসো...
নিশির দিকে তাকালাম... মুখে
দুষ্টামি হাসি। পুরাই অস্বস্তিকর
সিচুয়েশনে পড়লাম...
- আপনি না বেকার?
- আমি তো বলি নাই, আপনিই তো
বললেন... আমি শুধু বলছি... বেকার বলে
লজ্জা দিবেন না... আমরাও মানুষ।
- হুম... আপনি ফাইজলামির ওস্তাদ... বুঝা
উচিত ছিল।
অনেক কথা হয়। আমি আপনি থেকে
তুমিতে নেমে গেলাম... নিশি আমার
থেকে চার বছরের ছোট... ঢাকা
ইউনিভার্সিটিতে মার্কেটিং এ
পড়ছে... থার্ড ইয়ার। হাসা-হাসি,
ফাইজলামি চলতে লাগলো আমার...
ভালই হইছে... বাইরে আবার যে বৃষ্টি শুরু
হইছে... সময়টা খারাপ কাটছে না। দুই
দিনের ছুটির প্রথম দিনটা ভালই
কাটছে। নিশির মার রান্নার হাত চরম।
এই বাসায় ঘর জামাই হইতে পারলে
ভালো হইত।
বিদায় বেলা আসন্ন। অ্যান্টিকে
খাওয়ানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ
দিলাম। নিশির দিকে তাকিয়ে একটু
হাসলাম।
- যাই তাহলে... অনেক ভালো একটা
দিন কাটল আমার... মনে হয় লাইফের
বেস্ট। যে কারনে বাসায় ঢুকলাম, সেই
বিষয়ে অ্যান্টি কোনও কোশ্চেনই
জিজ্ঞেস করে নাই। ভালই হইছে...
আমি যে তোমার কেউ না... সেটা
অ্যান্টি দেখেই বুঝচ্ছে... তাই
জিজ্ঞেস করেন নাই।
- তাই??...... আপনার তাই মনে হইছে...
আপনাকে ভালো লাগছে... তাই কিছু
বলে নাই... মার তো ধারনা আপনার
সাথে আমি চুটিয়ে প্রেম করছি...
আমাকে বলছে... এতো ভালো ছেলের
সাথে তোর পরিচয়... বলিসনি কেন?...
হৃদয়ে বিজলিপাত হল একটা... প্রচণ্ড
ভোল্টেজে আমি স্থির হয়ে
তাকিয়ে থাকলাম নিশির দিকে। ওই
দৃষ্টিতে কি ছিল জানি না... নিশি
চোখ নামিয়ে নিল... হাতের নখ খুঁটতে
লাগলো। আমি বুঝতেসি কিছু বলতে
চাইলে এটাই সময়... কিন্তু কিছুই মাথায়
আসতেছে না। কিছুক্ষণ আমতা আমতা
করে বললাম...
- একটা ছাতা দিবা, মনে হয় বৃষ্টি
হবে... পরে আবার দিয়ে যাবো...
নিশি মুখ তুলে তাকালো... খিল খিল
করে হাসি দিল... আমি গলে গেলাম...
গলা শুখিয়ে কাঠ হয়ে গেলো...
আমি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছি...
নিশি ভিতরে গেছে ছাতা আনতে...
অনন্তকালের অপেক্ষার পর আবার
নিশির মূর্তি দেখা গেলো... হাতে
একটা গোলাপি ছাতা...
- এটা আমার ছাতা... অনেক পছন্দের...
আপনাকে দিচ্ছি... কিন্তু আপনি যে
ধরনের মানুষ... এর যত্ন নিতে পারবেন
না, আপনার মোবাইলটা দেখি...
আমি মোবাইলটা ওর হাতে দিলাম...
কি যেন করল... তারপর ফিরিয়ে দিয়ে
বলল...
- ছাতার মালিকের নম্বর আছে
ওখানে... ইচ্ছে থাকলে আপনি তাঁকে
কল করতে পারেন।
আমি রাস্তা ধরে হাঁটছি... ঝিরি
ঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে... হাতে একটি
গোলাপি ছাতা... .......

"প্রেম-ভালবাসা"

রিন্তির সাথে ফোনে কথা বলছি,
.
"এই রিন্তি শোনো।"
"হুম, বলো শুনছি।"
"চলোনা আজকে দেখা করি?"
"তোমার মাথা খারাপ হইছে অমি?"
"মোটেও না, আই এম ওকে।"
"আজকে নির্বাচনের দিন পুরো শহর ভোট-
টোট নিয়ে ব্যস্ত থাকবে, কত জায়গায়
গণ্ডগোল বাঁধবে, আর তুমি আজকে দেখা
করতে চাচ্ছো?"
"আমি কিছু বুঝিনা, তোমাকে খুব দেখতে
ইচ্ছে করছে।"
"ফোনের গ্যালারী তে গিয়ে আমার
ছবিগুলো দেখো।"
"দেখছি কিন্তু মন ভরেনাই।"
"উফ! এক কাজ করো, চোখ দুটো বন্ধ করে আমার
কথা ভাবো আমাকে কল্পনা করো, তাহলেই
তো আমাকে দেখতে পাবে"
"আচ্ছা করলাম, এই রিন্তি, রিন্তি।"
"কি হলো?"
"তোমাকে এত কালো দেখতে পাচ্ছি
কেনো?"
"আমি কালোই, কোনো সমস্যা।"
"হ্যা, অনেক সমস্যা, আমি কালো মেয়ে
বিয়ে করবো নাতো।"
"ক্যান?"
"ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যে তখন আফ্রিকারজাতি হয়ে
যাবে।"
"উফ, ঢং ছাড়ো তো, আচ্ছা অমি, আমি যদি
এখন কালো হয়েই যাই কোনোভাবে, আমায়
বিয়ে করবেনা?"
"মোটেও না, দেশে সুন্দরী মেয়ের অভাব
পরেছে নাকি।"
.
টুট টুট করে ফোনটা কেটে গেলো। বুঝলাম
রিন্তি রাগ করেছে আমার মৃদু দুষ্টামিতে। ছয়
মাসের রিলেশনে অনেক রোমান্টিক কথা
বলেছি আর কত বলবো! আর কতইবা রোমান্টিক
কথা মানুষের পেটে থাকে! তবুও নিত্যনতুন কত
কথা রিন্তিকে বলতে হয়। রিন্তি যে কম কথা
বলে তা না, সে গল্প শুরু করলে শেষই হয়না,
আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবীর হাজারো
জাতের গল্প। ছোটছোট কাহিনী গুলোকে
রংচং করে এত্ত বড় গল্প বানিয়ে ফেলে
সে। শুধু যে রিন্তি এমনটি করে তা না, প্রায়
সকল মেয়েই ছোট গল্পকে রাবারের মত
টেনে বড় গল্পে পরিণত করতে পারে। আর
আমরা ছেলেরা এক মিনিটেই এক দুই ঘন্টার
ছবির কাহিনী বলে শেষ করতে পারি।
.
প্রেম সঙ্গাহীন তবে অনেক প্রকারের। যেমন
দুটি মনের মানুষের মধ্যকার প্রেম, শরীরের
আকর্ষনজনিত প্রেম, বাবা-মা-ভাই-বোন-
আত্মীয় স্বজনের প্রেম, অন্যান্য জীবের প্রতি
প্রেম। আবার মোবাইলের প্রতি প্রেম।
.
রিন্তি আর আমার মধ্যে রয়েছে দুটি মনের
মধ্যকার প্রেম। আর এরই জন্য আমরা কেউই
কাউকে ছাড়া কোনো কিছু কল্পনা করতে
পারিনা। তবে হ্যা আমার দুজনের মধ্যেও
শারীরিক প্রেমটাও খুব অল্প পরিমাণে
আছে।
.
ব্যাপারটাকে খারাপ কিংবা
জটিলভাবে নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
ব্যাপারটা পানির মত সোজা। শারীরিক
সৌন্দর্য্য দেখেই তো আমরা একটা মেয়ের
প্রেমে পড়ি, আমিও রিন্তির প্রেমে
একইভাবে পড়েছি। প্রেমে পড়ার পর হয়তো
নানান স্টেজ পার হয়ে আজ দুজন দুজনার মনের
বন্ধন ঘটাতে পেরেছি। এটাই শেষ নয়, দুজন
যদি খুব কাছাকাছি থাকি তাহলে একে
অপরকে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে, জড়িয়ে ধরতে
ইচ্ছে করে আবার গভীর চুম্বনেরও ইচ্ছে
জাগে।
.
তাই বলাই যায় যে প্রেম শুধু মন দিয়ে হয়না।
সৌন্দর্য্য, ব্যবহার এবং নানাবিধ গুন হলো
প্রেমের কাঁচামাল।
.
নাহ, লিখাটা রোমান্টিক না হয়ে প্রবন্ধ
হয়ে যাচ্ছে। একটু রোমান্টিক না করলে সবাই
বিরক্ত হবে, বেশি রোমান্টিক করলে আবার
সমালোচনাও হবে। এসব ভাবতে ভাবতে
রিন্তিকে আর কল ব্যাক করাই হয়নি।
.
চার ঘন্টা পর রিন্তির ফোন,
.
"তুমি ফোন দাওনি কেনো?"
"ফোনে ব্যালেন্স ছিলোনা।"
"ফেসবুকেও তো মেসেজ করতে পারতা।"
"আচ্ছা স্যরি, আগে বলো কি হইছে তোমার।"
"কিছুনা, ইদানিং তুমি আমায় এভয়েড করছো
বুঝতে পারছি।"
"আরে পাগলী ব্যাপারটা তা না।"
"তাহলে ব্যাপারটা কি শুনি?"
.
অতঃপর ব্যাপারটা বুঝালাম। বিয়ের আগে
এত প্রেম-ভালবাসা খরচ করে কি কোনও লাভ
আছে? কোনই লাভ নেই, কেননা কতজনের কত
ভারী ভারী প্রেম ভেস্তে গেছে। এখুনি
যদি এত প্রেম খরচ করি তাহলে বিয়ের পর শুধু
ঝগড়া লাগবে, আর সংসারে অশান্তি
লাগবে।
.
আমরা শক্তির নিত্যতা সূত্র পড়েছি যে,
মহাবিশ্বের মোট শক্তির পরিমাণ নির্দিষ্ট,
শক্তির কোনো সৃষ্টি বা ধ্বংস নেই, শক্তি
কেবল এক রূপ থেকে অন্য রুপে রূপান্তরিত হয়
মাত্র। তেমনি প্রেম ভালবাসাটাও, ঠিক
শক্তির মত,পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দেওয়া।
আগে বেশি করে খরচ করলে পরে অভাব
দেখা দিবে আর আগে কম করে খরচ করলে পরে
সুন্দরভাবে পরিস্থিতিগুলোকে সেটিসফাই
করা যাবে।
.
এতসব কথায় রিন্তি যে কি বুঝলো আর না
বুঝলো তা জানিনা, কিন্তু এসব কথা শুনে
বেশকয়েকবার বললো যে, "অমি আমি
তোমাকে অনেক ভালবাসি, কিছুতেই
হারাতে চাইনা তোমায়।"
.
ভালবাসার মানুষটিকে কেউই হারাতে
চায়না, দুষ্ট লোক বাদে সবাই ভালবাসার
মানুষটিকে নিজের করে নিতে নানান
রকমের পরিস্থিতির সাথে যুদ্ধ করে। যারা
যুদ্ধে জয়ী হয় তারাই সফলকাম পুরষ্কার স্বরুপ
দুটি মনের আমরণ মিলন। কিন্তু কত প্রেম
ভালবাসা যে এত কঠোর কঠোর রোমান্টিক
প্রতিজ্ঞা থেকে বিচ্যুত হয়েছে তার
হিসেব নেই।
.
তবে প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তি দুটোকেই মেনে
নিতে হয়, মেনে নেওয়া ছাড়া উপায়ই
থাকেনা। তবুও প্রেম ভালবাসা অমূল্য রতন,
তাই অপাত্রে এই প্রেম ভালবাসা যাতে
দিতে না হয় সেদিকে সবার খেয়াল রাখা
অবশ্যই কর্তব্য।
.
আবার রিন্তির ফোন,
.
"অমি, কি করো?"
"এইতো ভাবছিলাম।"
"কি ভাবছিলে বলোনা?"
"আমার লক্ষি রিন্তির কথাই ভাবছিলাম।"
"সত্যি।"
"হুম সত্যি।"
"লাভ ইউ সো মাচ।"
.
আমি মোটেও রিন্তির কথা ভাবছিলাম না।
আমি ভাবছিলাম দুইদিন পর আমার ফর্ম ফিল
আপ বাট এখনও টাকা জোগাড় করতে
পারিনি সেই কথা। একটা মিষ্টি মিথ্যে
কথায় ভালবাসার মানুষটাতো খুশি হয়েছে
এইবা কম কিসের।
.
আর হ্যা, আমি খুব কমই রিন্তিকে ফোন দেই।
কেননা আমি এখনও উপার্জন করিনা টিউশনি
করে এক আধটু নিজের খরচ চালাই কোনওমতে।
আর বাবার টাকায় আমার প্রেম করার বিন্দু
মাত্র ইচ্ছে নেই।
.
অনেকেই ভাবতে পারে যে রিন্তি বুঝি
বড়লোকের মেয়ে। মোটেও না, আমার মতই
রিন্তিরও ফ্যামিলি, মধ্যবিত্ত, যেখানে সুখ
দুঃখ ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। তবে মেয়েটা
বাবার টাকা দিয়েই আমার সাথে প্রেম
করে। বারণ করেছিলাম কিন্তু সে বারণ
মানেনা। দিনে কতবার যে ফোন দেয় তার
হিসেব নেই। ভালই আছি আমরা এভাবে, অল্প
অল্প করে সব কিছু, অল্প অল্প করে সুখ, দুঃখ,
হাসি, কান্না, অভিমান, রাগ, প্রেম,
ভালবাসা সবকিছুই রয়েছে আমাদের মাঝে।
.
আর জীবন চলতে তো এইসব জিনিস অল্প অল্ল
করেই থাকলেই অনেক সুখে থাকা যায়। এসব
কিছু বেশি বেশি করে থাকলে অনেক
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যাবে, যা সইতে
পারবেনা অনেকে।

কাছে আসার গল্প

ঘড়িতে রাত ১টা বেজে ৩০ মিনিট।হঠাৎ
করে মোবাইলটা বেজে উঠল।এত রাতে
আবার কে ফোন দিল।মোবাইল হাতে নিয়ে
দেখি রিধীতার ফোন। এত রাতে আবার কি
মনে করে ফোন দিল মেয়েটা। কি জানি
কি ঝামেলা পাকিয়ে বসে আছে। যাহোক
সংকোচ নিয়ে ফোন উঠাতেই...
.
রিধীতা - হ্যাল সামি।
- হুম বল। কি হয়েছে । এত রাতে ফোন। কোন
সমস্যা হয়েছে?
- না সমস্যা হবে কেন।তোমার সাথে কিছু
কথা ছিল।
- কি কথা বল।
- মোবাইলে বলা যাবে না।সরাসরি বলতে
হবে।
- কি এমন কথা মোবাইলে বলা যাবে না,
সরাসরি বলতে হবে। আর এত রাতেই বা
কিভাবে দেখা করব।
- এখন দেখা করতে হবে না।সকাল ১০টা
বাজে পার্কে থাকবা। ঐইখানে তোমাকে
সব খুলে বলব।
- ফোনেই বলে ফেল না। আর সকালে বের
হওয়ার কি দরকার।
- আহা বেশি কথা বল না তো। সকালে
আসতে বলেছি আসবা।
এখন কথা বাড়িয়ে লাভ নেই।ঘুমিয়ে পড়।
সকালে দেখা হবে। গুড নাইট।
একটা হাসি দিয়ে ফোনটা রেখে দিল
রিধীতা। আমাকে কিছু বলারই সুযোগ দিল
না।
কাথাঁ মুড়ি দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা। ঘুমই
আসছে না। আসবেই বা কি করে। মনে
সংকোচ নিয়ে কি ঘুমানো যায়।পুরু
ব্যাপারটা না জানা পর্যন্ত ঘুমই আসবে
না। ফোনে বলে দিলে কি এমন হত। কি আর
করার ওর কথার উপর কেউ কথা বলা একদম
পছন্দ করে না ও।ও যেটা বলবে সেটাই।
অবশ্য ওর এই অভ্যাসটা আমার কাছে ভালই
লাগে। তবে আজ একটু রাগই হচ্ছে ওর উপর।
.
রিলেশনের পর থেকে আজ পর্যন্ত ওর কথা
মতই চলতে হয়েছে।
তবে আমাদের রিলেশনটা একটু অন্য রকম
ভাবেই হয়েছিল।
একই কলেজের ইয়ারমিট ছিলাম আমরা।
প্রতিদিনই দেখা হত।কিন্তু কথা বলা তো
দূরের কথা ওর চোখের উপর চোখ পড়তেই
চোখ নামিয়ে অন্য মনষ্কের ভাব ধরতাম
আমি। খুব ভীতু সভাবের ছিলাম।আস্তে
আস্তে ওর উপর ভালবাসা জমে গিয়েছিল।
তবে বলার সাহস হত না।
.
একদিন সাহস করে বলে ফেললাম। তাও
আবার মুখে না। চিঠি লিখে দিয়েছিলাম।
ওর হাতে চিঠি দিয়েই দৌড়। খুবই লজ্জা
পেয়েছিলাম ঐই সময়টাতে।
তবে ওকে রাজি করাতে বেশি একটা কষ্টও
করতে হয় নি। তারপর থেকেই রাত জেগে
ফোনে কথা বলা,হাতে হাত রেখে পার্কে
ঘুরা , কফি হাউজে বসে আড্ডা দেওয়া
এভাবেই দিনকাল দিব্বি চলে যাচ্ছিল।
.
.
মার ডাকে ঘুম ভাঙ্গল সকালে।
( এসব ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পরেছি
কে যানে)
বালিশের পাশ থেকে ফোনটা বাজছে।
রিধীতার ফোন। এই সারছে ওর সাথে না
দেখা করার কথা। ঘড়ির দিকে তাকাতেই
দেখি ৯ টা ৫০ বাজে। ফোন উঠাতেই
রিধীতা - সামি তুমি কোথায়, আমি বের
হয়ে গেছি।
- এইতো আমিও বের হচ্ছি।
- তারাতারি কর।
হুরহুর করে বিছানা থেকে উঠে, ফ্রেশ হয়ে
পার্কের উদ্যেশে রওনা দিলাম। নাস্তা
করার সময় নেই। ও এসে বসে থাকবে। যা
রাগি মেয়ে রে বাবা।
আমাদের বাসা থেকে পার্কে হেটে যেতে
প্রায় দশ মিনিট লাগে। খুব মনরম জায়গা।
চারদিকে খোলা মাঠ আর মাঝখানে
সাপের মত আকাঁবাকাঁ পথ।পথের দুই পাশেই
সারিসারি গাছ পালা। খুবই সুন্দর একটি
পরিবেশ।
পোলের উপর কাউকে দাড়িয়ে থাকতে
দেখা যচ্ছে।কাছে যেতেই বুঝলাম
রিধীতা।
আমি- কখন আসলা?
- এইতো এখনি।
- আসার পথে কোন সমস্যা হয় নি তো?
- (গম্ভীর কন্ঠে) না।
(মেয়েটা রাতে হাসি মুখে কথা বলল, আর
এখন এভাবে কথা বলছে কেন। এই
মেয়েগুলোর সভবটাই যেন কি রকম )
- তো ম্যডাম কি এমন জরুরি কথা আপনার।
তো এখন কি বলা যায়। যদি দয়া করে
বলতেন।
- দেখ সামি ফাজলামু করবা না কিন্তু।
দরকারি কথা ছিল বলেই তো ডেকেছি।
- তো বলে ফেল।
- জান, বাবা না আমার জন্য ছেলে দেখা
শুরু করেছে। বলছে যত তারাতারি সম্ভব
বিয়ে দিয়ে দিবে। আমার কিছুই ভাল
লাগছে না।আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে
পারব না।
এটা বলেই ফুফিঁয়ে কেদেঁ উঠল রিধীতা।
.
- তাই বলে এভাবে কাদঁতে হয়।
কান্নাঁ বন্ধ কর বলছি। কাদঁলে কি সব
সমাধান হয়ে যাবে।
- কাদঁব না তো কি করব। সেই কলেজ লাইফ
থেকে আমাদের রিলেশন। আজ পাচঁ বছর
হয়ে গেল।আর আজ বাবার একটা
সিদ্ধান্তেই সব শেষ হয়ে যাবে।আমি
তোমাকে ছাড়া কিছুতেই থাকতে পারব
না।
তুমি কিছু একটা কর সামি ।
- কি করব কিছুই তো মাথায় আসছে না।
- বাবার সাথে একবার কথা বলতে পার।
ওনাকে বুঝিয়ে বললে হয়ত ওনি রাজি হতে
পারে।
- যদি রাজি না হয়।
- বলেই দেখ না এছাড়া তো আর কোন উপায়
দেখছি না।
- আচ্ছা ঠিক আছে তাই করা যাক।
.
এই মূহুর্তে আমার অবস্থান রিধীতার বাবার
অফিসের সামনে। দারোয়ানকে বলায়
আংকেলের রুমটা দেখিয়ে দিল।ভেতরে
ঢুকতেই ঠান্ডা অনুভুতি করতে লাগলাম।
এসি করা রুম।
আমাকে দেখেই আংকেল...
- তাহলে তোমার নাম সামি?
- জী আংকেল। (অদ্ভুত তো আংকেল আমার
নাম জানল কি করে)
- কি ভাবছ তোমার নাম জানলাম কিভাবে

- শুধু তোমার নাম না তোমার ব্যাপারে সব
কিছুই আমি জানি।রিধীতা আমাকে সব
বলেছে।
(আমি তো পুরাই আকাশ থেকে পরলাম। সব
বলছে মানে।তাহলে এগুলো সব ও আগে
থেকেই প্রেন করে রেখে ছিল।আর সকালে
যে ও কাদঁল ওই টাও অভিনয় ছিল)
.
- বাবা কি করেন তোমার?
- জী আংকেল, ব্যবসা করেন।
- তো তোমারকি তাই করার ইচ্ছা?
- বাবা বলছে ওনার বয়স হয়েছে তাই এখন
থেকে আমি যেন ওনার ব্যবসা দেখাশুনা
করি। তবে আমার এটা ভাল লাগে না।
নিজের যোগ্যতায় কিছু করার ইচ্ছা আছে।
- বাহ! ভাল। এইরকম ছেলেই আমার পছন্দ।
- আচ্ছা তোমার বাবার ফোন নাম্বারটা
দাও। ওনার সাথে আমি কথা বলব।
.
বাবার ফোন নাম্বার দিয়ে বাইরে
বেড়িয়েই এক পেকেট টিসু শেষ করলাম ঘাম
মুছতে মুছতে। যদিও ভেতরে এসি ছিল।শ্বশুর
মসাই যে এত ভাল মনের একজন মানুষ হবে
ভাবতেই পারি নি।
.
রিধীতাকে ফোন দিতেই ও মিট মিট করে
হাসছে।
- কি হাসছ কেন?
- হাসব না !
তোমাকে বোকা বানিয়ে যে কি আনন্দ
হচ্ছে আমার।
- আমাকে বোকা বানানো হয়েছে না,
দাড়াও দেখাচ্ছি মজা। আগে বিয়েটা হয়ে
নিতে দাও। তারপর বুঝবে।
কথাটা বলেই দুইজন একসাথে লজ্জা পেয়ে
গেলাম। রিধীতা হয়ত একটু বেশিই লজ্জা
পেয়েছে।
.
যাহোক, পরের দিন ঘুম থেকে উঠেই দেখি
রিধীতার বাবা, বাবা মার সাথে কথা
বলছে। ওনাদের সবার মুখে কি মিষ্টি
হাসি।বুঝতে আর বাকি রইল না। ওনাদের
সবারি ছেলেমেয়ে পছন্দ হয়েছে। যত
তারাতারি সম্ভব বিয়েটা দিয়ে দিতে
চাইছে তারা।
ভেবেছিলাম আগে একটা চাকরি নিয়ে
বিয়ের পিড়িতে বসব। তবে মা,বাবার কথা
আর অমান্য করতে পারলাম না।অবশেষে
বিয়ের দিনখন ঠিক করা হল।
.
আজ সেই বিয়ের দিন। বিরাট আয়জন করেছে
বাবা। এক ছেলে বলে কথা। ধুম ধাম করে
বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। রিধীতার
মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না, লজ্জায়
ওর তুলতুলে গাল দুটি লাল হয়ে গেছে। অন্য
রকম এক অনুভূতি লাগছে।নিজের বিয়ে বলে
কথা।
.
পুরু বাড়ি নির্জন হয়ে গেছে। সারাদিন
সবার উপর দিয়ে খুব দগল গেছে। এখন সবাই
বিশ্রাম নিচ্ছে ।
.
রিধী ফুলে সজ্জিত খাটের মাঝখানে
গুটিসুটি মেরে বসে আছে। আমাকে দেখেই
উঠে এসে সালাম করতে চাইল।
আমি ওকে ধরে বুকে নিয়ে বললাম, আজ
থেকে তোমার জায়গা আমার এই বুকের
মাঝে।
ওকে আরও একটু কাছে টেনে ওর কপালে
আলত করে একটা চুমু খেলাম। আমাকে খুব
শক্ত করে ধরে আছে ও। রাত বাড়ছে হাজার
বছরের সেই পুরোনো রাত। এই রাত যেন
কখনও শেষ না হয়।

অথৈই জলে ভাসা কষ্টগুলো

বারান্দায় অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে অথৈই। মনটা কেমন যেন অস্থির লাগছে। ঘড়িটা রাত ১১টা বাজার সংকেত দিল। নীল এখনও বাসায় ফিরেনি। আজ বলেছিল তাড়াতাড়ি ফিরবে আর সেই নীলের এখনও আসার নাম নেই। বের হবার সময় অথৈইয়ের হাত থেকে গ্লাস পরে গিয়েছিল। ও নীলকে বলেছিল আজ বের না হতে তবে নীল তা হেঁসেই উড়িয়ে দিয়েছিল। অথৈইয়ের খুব খিদে পেয়েছে তবে নিজের খিদের
চেয়েও ওর বেশি চিন্তা হচ্ছে নীলের জন্য। নীল দুপুরে খেয়েছেতো...!! হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার ,,,ঠক,,,ঠক,,,ঠক,,, শব্দ পেলো।
অথৈই দৌড়ে গেল,,,
..
--- সারাদিন কোথায় ছিলে? তোমার
না তাড়াতাড়ি আসার কথা। (অথৈই)
--- আরে আর বলনা, এক ফ্রেন্ড বলেছিল ও নাকি কি কাজ দিবে সেখানে যেয়েইতো দেরি হয়ে গেল। (নীল)
--- কাজ পেলে? (অথৈই)
--- নাহ পাইনি। চিন্তা করনা পেয়ে যাবো। এই নাও তোমার জন্য রুটি আর ভাজি এনেছি। (নীল)
--- তুমি খেয়েছো? (অথৈই)
--- আমার খাওয়া নিয়ে চিন্তা করনা। তোমার এখন বেশি খাওয়া দরকার।
আমাদের নতুন অতিথির জন্য। (নীল)
--- তুমি না খেলে আমিও খাবোনা। (অথৈই)
--- আচ্ছা তুমি বসো, আমি আসছি। (নীল)
..
অথৈই নীলকে খাইয়ে দিচ্ছে। সারাদিন না খেয়ে চাকরি খুঁজে চেহারা মলিন হয়ে গেছে। অথৈই নীলের দিকে তাকিয়ে আছে। তাকানো অবস্থায় অথৈইয়ের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে। সারাদিন ও কত কষ্ট করে। ঠিকমতো খায় ও না।
..
--- কি ব্যাপার অথৈই তুমি কাঁদছো কেন? (নীল)
--- কই নাতো। চোখে কি যেন
পরেছে। (অথৈই)
..
নীল অথৈইয়ের চোখের পানি মুছিয়ে
দিয়ে বলে,,,
..
--- মেয়ে শুনো তুমি আর কোনদিন
আমার সামনে কাঁদবে না। তোমার
কান্না আমার সহ্য হয় না। (নীল)
--- নীল আমি তোমাকে অনেক সমস্যায় ফেলে দিয়েছি তাইনা? আমার জন্য তোমার বাবা / মা তোমাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। আমি তোমার জীবনে না আসলেই মনে হয় ভাল হতো। (অথৈই)
--- অথৈই এসব আর বলবেনা। আমি
তোমাকে ভালবেসে বিয়ে করেছি। মরলেও তোমার সাথেই মরবো। খেয়ে শুয়ে পরো। বেশি রাত জাগলে আমার বাবুটার কষ্ট হবে। (নীল)
..
চাঁদের আলো এসে পরছে নীলের মুখে। ও ঘুমাচ্ছে... অথৈই ওর মুখের
দিকে তাকিয়ে আছে। ও ভাবছে ছেলেটা সারাদিন কত কষ্ট করে। শুধু
আমার জন্যই ছেলেটার আজ এই
অবস্থা। মুখে সোনার চামচ নিয়ে জন্ম নেওয়া ছেলেটা আজ ওর জন্য রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে চাকরির জন্য, কোনদিন দুপুরে খায় , কোনদিন খায়না। অথৈইয়ের চোখে পানি চলে আসে। ও উঠে বারান্দায় যেয়ে দাড়ায়। ও ফিরে যায় ২ বছর আগে,,,
..
বাবা/মা মরা মেয়ে অথৈই থাকে মামার বাসায়। মামা ওকে অনেক আদর করে তবে প্রতিদিন মামির খোঁটা , মামাতো ভাই বোনের অবহেলা নিয়েই কেটে যায় ওর দিন। ও শত চেষ্টা করেও মামি , মামাতো ভাই, বোনের মন পায়নি। ওর কাজ ছিল ওর মামাতো বোনকে কলেজ এ নিয়ে যাওয়া। যেতে যেতেই প্রায়ই দেখা হয় অথৈইয়ের সাথে নীলের। ফর্সা মুখ, হালকা গড়নের অথৈইকে দেখেই ভাল লেগে যায় নীলের। ও বাসায় এসে বলে অথৈইয়ের কথা। ওর মা-বাবা রাজি হয় না। তাদের কথা হচ্ছে একটা মা/ বাবা মরা মেয়েকে কেন বিয়ে করতে যাবে ও!! নীল সাফ জানিয়ে দেয় বিয়ে করলে ও অথৈইকেই করবে। ছেলের জ্বিদের কাছে মা-বাবা হার মানে। অনেক বড় অনুষ্ঠান করে অথৈইয়ের সাথে নীলের বিয়ে হয়। বিয়ের পরদিন থেকেই শুরু হয় অথৈইয়ের কষ্টকর জীবন। ওর
শাশুড়ি ওকে উঠতে বসতে কথা শুনায়। অথৈই কিছুই বলে না। সব
সহ্য করে যায়। একদিন ও সব বলে নীলকে। নীল ওর মায়ের সাথে এসব নিয়ে ঝগড়া করে ঘর থেকে বের হয়ে যায় অথৈইকে নিয়ে। সেই থেকে ওরা এই বাসায় আছে। এক রুমের বাসা। মেঝেতে বিছানা পাতা। নীল শত চেষ্টা করেও কোন কাজ জোগাড় করতে পারছেনা। এসব ভাবতে ভাবতেই পিছনে হাতের স্পর্শ পায় অথৈই,,,
..
--- তুমি এখনও ঘুমাওনি? (নীল)
--- ঘুম আসছেনা। কেমন যেন ভয়
লাগছে। (অথৈই)
--- ভয় কিসের!! আমি আছিতো। (নীল)
--- আচ্ছা ডাক্তার বলছিলো কাল পরশু একবার তার কাছে যেতে। তুমি কি আমার সাথে যেতে পারবে? (অথৈই)
--- অথৈই তুমিতো জানই আমি কতো
বিজি থাকি। সারাদিন কাজের জন্য ঘুরে বেড়াই। আমি পরিচিত সব জায়গায় গিয়েছি। মা সবাইকে বলে দিয়েছে আমাকে যেন কেউ কোন কাজ না দেয়। (নীল)
--- আচ্ছা আমি একাই যাবো। (অথৈই)
--- রাগ করেনা অথৈই সোনা। আমিতো সব তুমি আর আমাদের বাবুর জন্য করছি তাই না..!!! (নীল)
--- আমি রাগ করিনিতো। চল ঘুমাবে। (অথৈই)
..
দুজন বিছানায় এসে শুয়ে পরে। নীল
অথৈয়ের কপালে চুমু এঁকে দেয়। দুজন
ঘুমিয়ে পরে। ঘরে শোনা যাচ্ছে নিঃশ্বাসের শব্দ আর তার সাথে ভেসে বেড়াচ্ছে দুজনের স্বপ্নগুলো.....
..
আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে দেখতে আমি পাইনি তোমায়,
দেখতে আমি পাইনি অথৈই বসে আছে আয়নার সামনে আর গুনগুন করে গান গাইছে... ওর মনটা আজ বেশ ভালো। ও ওর চুলগুলো দেখছে। বেশ বড়। ও মনে মনে বলে "নাহ, আমি
দেখতে খারাপ না"। বলে আনমনে
হেঁসে উঠে... ও তাকায় নীলের দিকে নীল ঘুমিয়ে আছে। দেখতে বেশ আদর আদর লাগছে।
,,,,,,হঠাৎ,,,,,,
নীল চোখ মেলে তাকায়। অথৈই লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নেয়।
..
--- এই কি দেখছো? (অথৈই)
--- দেখছি আমার লক্ষি বউকে। (নীল)
--- ওঠো ওঠো। ৯ টা বাজে। আমি এখুনি বের হবো। (অথৈই)
--- কই যাবা..!!! (নীল)
--- কেন তোমার মনে নেই? আজ
ডাক্তার যেতে বলেছে। তুমিও চল... (অথৈই)
--- নাহ্ আমি যেতে পারবো না। আমার তো একটা কাজে যেতে হবে। (নীল)
..
অথৈই মন খারাপ করে ফেলে। নীল
সেটা দেখে বিছানা ছেড়ে ওঠে আসে এবং বলে,,,
..
--- বউ রাগ করেছ? (নীল)
--- আমার রাগে কার কি আসে যায়!! (অথৈই)
--- এই যে ময়নাপাখি রাগ করেনা।
আমি কাজ না পেলে তোমাকে খাওয়াবো কি আর আমাদের বাবুর
কি হবে!! ওকে আমি ডাক্তার বানাবো। এখন একটু হাঁসো। (নীল)
..
অথৈই হেঁসে নীলের বুকে মাথা রাখে। নীলল শক্ত করে অথৈইকে জড়িয়ে ধরে......
অথৈই বসে আছে ডাক্তারের চেম্বারে। ওর শরীর অনেক খারাপ লাগছে। মনে হচ্ছে ও মাথা ঘুরিয়ে পরে যাবে। ও অনুভব করছে ওর শরীরের ভিতর ছোট্ট একটা মাংসপিণ্ড ক্ষণে ক্ষণে দিক পাল্টিয়ে এদিক-সেদিক যাচ্ছে। বেশিদূর যেতে পারছে না। একটি নির্দিষ্ট গন্ডির ভেতর তাকে খাবি খেতে হচ্ছে। অথৈই ওর পেটে হাত রাখে। কেমন যেন শান্তি শান্তি ভাব আসে ওর মনে।
..
--- কেমন আছেন আপুমনি? (মহিন)
..
কথাটা শুনে অথৈই তাকিয়ে দেখে ওর সামনে নীলের বাসার কাজের লোক দাঁড়িয়ে আছে।
..
--- এইতো ভালো। আপনি কেমন আছেন মহিন চাঁচা? (অথৈই)
--- আছি কোনরকম। (মহিন)
--- আপনি এখানে কেন, কিছু হইছে? (অথৈই)
--- নারে আপুমনি। আমার এক আত্মীয়র বাচ্চা হবে তাই এইখানে। আপুমনি বাসায় যান না কেন? আপনি চলে আসার পড় থেকে আর ভালো লাগেনা। (মহিন)
--- চাঁচা আম্মাতো আমাকে আর নীলকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। জানেন নীল সারাদিন কাজের জন্য ঘুরে রাস্তায় রাস্তায় কি খায় না খায় কে জানে। আমার অনেক কষ্ট লাগে ওর জন্য। মাঝে মাঝে আম্মাকে অনেক দেখতে ইচ্ছা করে আমার। (অথৈই)
--- নীল ভাইয়াতো যায় প্রতিদিন। (মহিন)
--- কখন যায়? (অথৈই)
--- এইতো সকালে যায়। দুপুরেতো
ওখানেই খায়। আবার রাতে খেয়ে
বাসা থেকে বের হয়। বলে আপনি
নাকি মামার বাসায় থাকেন। আপনার কাছে যাচ্ছে..... (মহিন)
--- প্রতিদিন যায়? (অথৈই)
--- হ্যাঁ প্রতিদিনই যায়। মা তো বলছে ওনাকে সামনের মাস থেকে অফিস
এ বসাবে। (মহিন)
..
মহিন চাঁচার কথা শুনে অথৈই অবাক
হয়ে যায়। ওর চোখ থেকে পানি বের হয়ে আসে। ও চোখ মুছে বলে,,,
..
--- চাঁচা আমাকে ডাক্তার ডাকছে। আমি গেলাম। (অথৈই)
--- আচ্ছা মা যাও। বাসায় আইসো।
আবার কবে দেখা হবে কে জানে!!
ভাল থাইকো। (মহিন)
..
অথৈই হাঁটছে রাস্তা দিয়ে। বিকেল হয়ে এসেছে। সূর্য ডুবতে বসেছে। পশ্চিমের কোলে সূর্য ঢলে পড়েছে বিষন্নতায়। রেখে গেছে মিষ্টি আলোর আভা। দিন বিদায়ের কমলা আভা ছড়িয়ে পড়েছে অথৈয়ের হৃদয়ের আকাশে। অথৈইয়ের চোখে পানি। ওর গালে পড়া পানি সূর্যের আলোতে সোনালি রঙ ধারণ
করেছে। ও ভাবছে নীলের কথা।
নীল এতো বড় মিথ্যা কথা ওর সাথে
কিভাবে বলল!! ও বাসা থেকে বের
হয় কাজ খুঁজার নাম করে আর মায়ের
বাসায় যেয়ে সারাদিন থাকে। রাতে আসে ক্লান্ত একটা ভাব নিয়ে হাতে রুটি আর ভাজি নিয়ে যেন ও সারাদিন কতো কাজ খুঁজেছে। প্রতিদিন রাতে ও
নীলের জন্য বসে থাকে অপেক্ষা করে। অথৈই ভাবে নীল ওকে বললেইতো ও বাসা থেকে বের হয়ে যেত। তবুও নীল কেন এমন করল!! অথৈইয়ের অনেক কান্না পায়, চোখ ঝাপসা হয়ে আসে তার কিন্তু অজস্র কান্নার অশ্রুও তাকে এ মুহূর্তে শান্তি এনে দিতে পারে না। তার পা সামনে একধাপও এগুতে চায় না যেন পঞ্চাশ কেজি ওজনের কিছু বেঁধে দেওয়া হয়েছে তার পায়ের সাথে। অথৈই হাঁটতে হাঁটতে বাসার গেটের
সামনে এসে দাড়ায়। ওর ভিতরে ঢুকতে ইচ্ছে করছে না মোটেও... অথৈই পা বাড়ায়.....
,,,ঠক,,,ঠক,,,ঠক,,,
দরজা খুলে দেয় নীল। নীল আজ এতো তারাতারি বাসায়, এই দেখে অথৈই ভ্যাবাচ্যাকা খায়। অথৈইয়ের দিকে তাকিয়েই নীল বুঝতে পারে অথৈইয়ের মন খারাপ।
..
--- আমার লক্ষি বউয়ের কি হইছে? (নীল)
--- কই কিছু হয়নাই তো!! (অথৈই)
--- বউ কি আমার উপর রাগ করছো যাইনি বলে তোমার সাথে? পরে আবার সুজনের কাছে গেছিলাম কাজের জন্য। ও বলেছে কাল আবার যেতে। বউ দেখো আজ তোমার জন্য কি এনেছি... অনেকদিন হল তোমাকে ভালো খাওয়াতে পারি না। আজ খিচুরি এনেছি। আমি আজ তোমাকে
খাইয়ে দিব। (নীল)
--- আর কতো মিথ্যা কথা বলবে নীল
আমার সাথে? (অথৈই)
--- মানে? (নীল)
--- নীল বুঝতেছনা আমি কি বলছি? (অথৈই)
--- বুঝছি আমার বউয়ের রাগ এখনও
ভাঙ্গেনি। আচ্ছা তুমি হাত মুখ ধুয়ে
আসো আমি তোমাকে খাইয়ে দিব আজ নিজের হাতে। (নীল)
--- নীল তোমার সাথে আমার কথা আছে। (অথৈই)
--- আচ্ছা হাত মুখ ধুয়ে আসো খেতে
খেতে তোমার কথা শুনবো। (নীল)
--- কেন আজ তুমি খেয়ে আসনি? (অথৈই)
--- নাহ্, তুমিতো জানই আমি আমার
লক্ষি বউকে ছাড়া খেতে পারিনা। (নীল)
--- তাই নাকি নীল!! তবে সত্যি হলে আরো খুশি হতাম। (অথৈই)
--- বউ সত্যি হলে মানে? (নীল)
--- নীল আর কতটা বোকা বানাবে
আমায় তুমি? তুমি অস্বীকার করতে
পারো তুমি বাসা থেকে খেয়ে আসনি, অস্বীকার করতে পারো তুমি গত ২ মাস কাজ খুঁজার নাম করে মায়ের
কাছে গিয়ে থাকনি? (অথৈই)
--- এসব কি বলছো অথৈই, আর কে তোমাকে এসব বলেছে ? (নীল)
--- নীল কে বলেছে সেটা বড় কথা না, তুমি বল এসব সত্যি কিনা ? (অথৈই)
--- নাহ্ সত্যি না !! (নীল)
--- তুমি আবারো মিথ্যা বলছো? তুমি
তোমার মায়ের কসম কেটে বল এসব
মিথ্যা..... (অথৈই)
..
নীল কথাটা শুনে অথৈইয়ের গালে
একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয় আর চিৎকার করে বলে,,,
..
--- হ্যাঁ তুই যা শুনেছিস তা সব সত্যি। (নীল)
..
অথৈই থাপ্পড় খেয়ে আর ভাষা পরিবর্তন দেখে অবাক হয়ে নীলের দিকে তাকিয়ে থাকে... আজ এ কোন নীলকে দেখছে ও যে নীলকে ও এত ভালবাসে সেই আজ ওর গায়ে হাত তুলল!!!!
..
--- নীল তুমি আমার গায়ে হাত তুললে? (অথৈই)
--- হ্যাঁ তুললাম আর শুন আমি আর
তকে ভালোবাসি না। তকে বিয়ে করা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। আসলে আমি বুঝিনি আবেগ দিয়ে জীবন চলেনা। জীবনে চলতে হলে টাকা লাগে। যেটা তর সাথে
থাকলে আমার কোনদিনও হবেনা। (নীল)
--- তবে কেন এতদিন আমার সাথে এরকম করলে ? তুমি আমাকে আগে বলে দিলেই পারতে!! (অথৈই)
--- বলতে চেয়েছিলাম তকে বারবার, তবে পারিনি কেমন যেন করুণা আর তর ওই দেহের নেশায় বলতে পারিনি। (নীল)
--- করুণা, দেহের নেশা? (অথৈই)
--- হ্যাঁ সেটাই। ভালোবাসা নাই আর তর জন্য। (নীল)
--- নীল ছোট বেলায় বাবা মাকে হারিয়েছি, বড় হয়েছি মামার কাছে, ছোট বেলা থেকে কষ্ট নিয়েই আমার জীবন। যেদিকে তাকাতাম সেদিকেই আর্তনাদ, হাহাকার। তোমাকে পেয়ে
ভেবেছিলাম হয়তো তোমার কাছে
ভালোবাসা পাবো, আমার দুঃখের
দিনগুলি শেষ হলো, সেই তুমিও আমার সাথে এমন করতে পারলে!!! নীল আমি চলে যাচ্ছি... ভয় নেই কোনদিন বউয়ের অধিকার নিয়ে তোমার সামনে আসবো না। (অথৈই)
--- তর ইচ্ছে হলে থাকতে পারিস তবে আর ভালবাসতে বলিসনা, আর বউয়ের অধিকার ফলাতে আসিস না। তর করুণ কান্নার স্বর আর আমায় তর কাছে টানবে না। মাসে মাসে টাকা দিয়ে যাবো। (নীল)
--- কি তোমার রক্ষিতা হয়ে থাকবো!! (অথৈই)
--- ,,,হাঁ,,,হাঁ,,,হাঁ,,, সেরকমই ভালতো।
খেতে দিবো, যা লাগবে তাই দিবো। থেকে যেতে পারিস। (নীল)
--- ছিঃ নীল ছিঃ আমি কোনদিন ভাবিনি , তুমি এতো নিচ , এতো ছোট
মনের মানুষ। (অথৈই)
..
বলেই অথৈই এক দৌড়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসে... পিছন থেকে শুনতে
পায় নীলের অট্টহাঁসি ,,,হাঁ,,,হাঁ,,,হাঁ,,,
..
নদীতে একটা লাশ ভাসছে। অথৈইয়ের
লাশ। দিঘল মাথার চুল ভাসছে,পড়নে
স্যালোয়ার কামিজ। অনেকেই পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। কিন্তু কেউ চিনতে পারছে না কার লাশ হতে পারে..!! পাড়ের লোকগুলো দাঁড়িয়ে নানারকম কথা বলছে ... কেউ বলছে কি আকাম করে এসে আত্মহত্যা করেছে কে জানে , কেউ বা বলছে আল্লাহ জানে কোন
মায়ের বুক খালি হল , কেউ বা আবার
ওর জন্য সহানুভতি দেখাল এই বলে যে না জানি কতো কষ্ট ছিলো মেয়েটির
মনে। তবে কেউ কি কোনদিন জানতে পারবে অথৈই কেন আত্মহত্যা করল , কি দোষ ছিল ওর পেটের বাচ্চাটির যে কিনা পৃথিবীতে আসার আগেই চলে গেল ওর মায়ের সাথে, দেখতে পারল না এই সুন্দর পৃথিবীর আলো ... কেউ জানবে না , কেউ না...

অবুঝ ভালবাসা

সকাল সকাল ফোনের শব্দে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল।
মোবাইলের স্কীনে তাকিয়ে দেখি ঝাড়িওয়ালির
ফোন,রিসিভ না করে আবার ঘুম যাওয়ার চেষ্টা করলাম কিন্তু না
মোবাইল আবার বে বে শুরু করল।
কী যে করি ফোন যতক্ষন রিসিভ করবনা ততক্ষন ফোন
দিতে থাকবে এক প্রকার বাধ্য হয়ে ফোনটা রিসিভ করলাম।
রিসিভ করার সাথে সাথে ঝাড়ি শুরু
.
-ঔ কুত্তা প্রথমবার ফোন কেটে দিলি কেন
-আরে না ঘুমের ঘোরে টের পাইনি(মিথ্যা)
-মানে তুই এখনো ঘুমাচ্ছিস।
-না না আকাশে ডানা মেলে উড়ছি।
-একদম ফাজলামি করবি না।
-এত সকাল সকাল ফোন করার কোন মানে আছে কি বলবি বল
আমার কিন্তু প্রচুর ঘুম পাচ্ছে।
-এত সকাল সকাল না ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখ
কয়টা বাঝে।
-আরে মাএ ত সাড়ে আটটা।
-এখন তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নয়টার মধ্যে ক্যাম্পাসে
আসবি।
-আরে আমি পারবনা
-তুই পারবি কিনা না পারবি আমি জানি না তুই নয়টার মধ্যে আসবি এটাই
ব্যাস আমি অপেক্ষা করছি।
.
এই বলে ফোনটা কেটে দিল।আরে ঝাড়িওয়ালি মেয়েটা হল নদী।আমার গার্লফ্রেন্ড থুক্কু বেষ্ট
ফ্রেন্ড।
খালি সারাক্ষন ঝাড়ি আর ঝাড়ি।এইটা করবি না
ঔইটা করবি না ওদের সাথে মিশবি না ব্লা ব্লা ব্লা।
কোন দু:খে এই মাইয়াটারে ফ্রেন্ড বানাইয়ছি।
যেন হেতি রাজা আমি প্রজা খালি হুকুম আর হুকুম।আরে ভাই
প্রজাদের ত স্বাধীনতা বলে কিছু আছে কিন্তু হেটা আমার
নাই।
এহন আমি কিতা করাম।ভাবছিলাম আজ ক্লাস
নেই তাই আরামে একটা লং টাইম ঘুম দিমু কিন্তু
তা স্বয়ং ঝাড়িত্তয়ালি তা হতে দে নাই।
আবার না গেলে আরেক দশা।সোজা আমাদের
বাসায় চলে আসবে।মাকে উল্টা পাল্টা বোঝাবে।
আমি নাকি খারাপ ছেলেদের সাথে মিশি,ক্লাস না
করে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয় ব্লা ব্লা ব্লা।
মা ও তখন স্বয়ং ঝাড়িওয়ালির সাথে ঝাড়ি শুরু
করবে যা আমার পক্ষে হজম করা বড়ই দুষ্কর।
তাই তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্য রত্তনা
দিলাম।দেরি হলে আবার কপালে খারাপ কিছু
আছে।নয়টা দশে পোছলাম দেখি নদী থুক্কু
ঝাড়িওয়ালি বসে আছে।
.
-এই তুই এত লেট করলি কেন।
.
আরে এত তাড়াহুড়ো করে আসলাম কোথায় বসতে
বলবে তা না যাওয়ার সাথে সাথে ঝাড়ি শুরু।
.
-এইত দশমিনিট লেট হল।
-দশ মিনিট না কান ধর
-আরে আমার মানসম্মানের একটা ব্যাপার আছে না।
-ধরবি কিনা বল।
-সরি ত
-ওকে আচ্ছা চল আজ কোথাও ঘুরতে যাই
ওমা ঝাড়িওয়ালি এত রোমান্টিক হলি কবে(মনে মনে)
-আমি যাব না।
.
কথাটা বলার কারণ ঘুরতে যাওয়া মানে এটা কিনবে
সেটা কিনবে সেটা খাবে যার ফলস্বরুপ আমার
পকেট ব্লা ব্লা।
.
-কি (রেগে)
-আচ্ছা চল চল।
.
দাড়া যাব কিন্তু ঠীক আছে আজ তুর পকেট ব্লা ব্লা
করুম।নিজের পকেট থেকে টাকা বের করা কত যে কষ্টকর
আজ বুঝবি।
হেটেই যাচ্ছি মাঝপথে ফুচকা ফুচকা বলে লাফাতে শুরু করল।
.
-আরে কী হয়ছে ফুচকা ফুচকা বলে লাফাচ্ছিস ক্যারে তুরে
ফুচকা জিনে পাইছে নি না ফুচকা পানিতে পরছে।
-ফাজলামি বাদ দে চল ফুচকা খামু
-ফুচকা খাবি এটা বললেত হয় এত বানরের লাফালাফি করতে হয়
নাকি।
.
দুজন মিলে ফুচকা খাচ্ছি।খাত্তয়াত এক পর্যায়ে নদী
বলল।
.
-বিলটা দিয়ে দেয়।
-আমি কেন দিব তুই দিবি তুর জন্যত খেলাম যে বাদরামি শুরু
করলি।
-আচ্ছা আমি যদি তুর গার্লফ্রেন্ড হতাম তাহলে দিতি না।
.
কথাটা শুনার পর আমার মনে এক ধরনের ঝড় বয়ে গেল।আর
কথা না বাড়িয়ে বিল টা দিয়ে দিলাম।
সেদিনের মত নদীকে নিয়ে অনেক জায়গায় ঘুরলাম।রিক্সা
করে তাকে বাড়িতে পৌছে দিয়ে বাড়িতে চলে এলাম।
ফইন্নী আজ আমার পকেট পুরাই ফাকা
করে দিল।এর শোধ আমি নিয়ে ছাড়ব।
.
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মাকে নাস্তা দিতে বললাম মা
নাস্তা নিয়ে এসে বলল নীলাকে ফোন করতে কেন
জ্ঞিজেস করায় মা কিছু না বলে
চলে গেল।তাড়াতাড়ি নীলাকে ফোন করলাম
.
-হ্যালো নীল তুই কোথায়।
-বাসায়
-তুই আমার সাথে দেখা করতে পারবি।
.
নদী কন্ঠটা এরকম শুনাচ্ছে কেন।কাপা কাপা
মনে হচ্ছে মেয়েটা অনেক কেঁদেছে।নদীর
থেকে
কোথায় দেখা করতে হবে কয়টায় সব জেনে নিলাম।
সময়মত পৌছে গেলাম নিদিষ্ট জায়গায়।গিয়ে দেখি
নদী দাঁড়িয়ে আছে।নদীর মুখটা আজ নিষন্ন দেখাচ্ছে যা
আমি আগে কখনো দেখিনি।আমি নদীর সামনে যেতে ও
আমাকে দেখে কেঁদে দিল।
.
-কি হয়েছে নদী কাঁদছ কেন।
.
কিছু বলছেন এখনো কেঁদে যাচ্ছে।আমি আর
ওর কান্না সহ্য করতে পারছি নানা আমি ওর হাত ধরে হালকা ঝাড়ি
দিয়ে বললাম।
.
-আরে কি হয়েছে বলনা তুই এইভাবে কান্না করলে
আমার যে আর....
-আব্বা আমার বিয়ে ঠীক করে ফেলেছে। আমি একজন
কে ভালবাসি তাকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করতে পারবনা।
.
কথাটা শুনে আমি থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।এ অবস্থায় কি বলা উচিত
আমি ভেবে পাচ্ছি না।
.
-নীল তুই কি এখনো চুপ হয়ে থাকবি।
আমি যে বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।
-তুই কি সারাজীবন এভাবে চুপ হয়ে থাকবি।তুই
কি বুজস না।আচ্ছা তুই বাসায় চলে যা তোকে
এখানে ডাকাটা আমার ভুল হয়েছে(কেঁদে কেঁদে)
.
আমি ভাবলাম যা হবার হোক আজ এই সুযোগ টা হাত ছাড়া করা
যাবে না।আমি জানি নদী আমাকে ভালবাসে
যা ও আমার প্রতি কেয়ারিং এর মধ্যে ফুটে
ওঠে।কোনদিন মেয়েত দূরের কথা মেয়ের
সাথেও মিশতে দেয়নি।সারাক্ষন দৌড়ের
উপর রাখে।হয়ত এটাই ভালবাসা।
আমি বাসিনা তা নয়।এতদিন সাহস
হয়ে উঠেনি।কিন্তু আজ যা হবার হোক
বলব বলবই।আজ না বললে আর
কোনদিন বলার সুযোগ পাব না।
তাই অতিরিক্ত সাহস নিয়ে হাটু গেড়ে
বসে পড়লাম।
.
-সত্যি নীলা আমি তোকে অনেক অনেক ভালবাসি।
কথাটা বলার পর নীলা আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করল।
আমার কাতুকুতু লাগে ক্যারে।আসলেই মেয়েটা আমাকে
অনেক বেশি ভালবাসে।তাকে ছাড়া আমার লাইফটা অর্থহীন।
অত:পর দুজনের গন্তব্য স্থল কাজী অফিস।বাকিটা আর কমু না।

নিঝুমের ভালবাসা

আজ এইচ.এস.সি রেজাল্ট দিল।
সবাই এ+ আশা করলেও পাওয়াটা আমার কাছে এতটা সহজ ছিল না। এ মাইনাস পেলাম।
বাসায় যাব কিনা ভাবতে ভাবতেই দুপুর।
মোবাইল বাসা থেকে বের হওয়ার সময়ই বন্ধ করে দিয়েছিলাম।
কেউ ফোন না দিলেও রিমি ঠিকই ফোন দিচ্ছে।
অনেক মেধাবী মেয়ে রিমি -এস.এস.সি তে এ+ পায় আর
এবারও একই রেজাল্ট।
আমাকে অনেক ভালবাসে রিমি।
১ বছরের রিলেশন আমাদের। আমার প্রথম ভালবাসা ও, হয়ত এজন্যই অনেক ভালবেসে ফেলেছি ওকে।
কিন্তু গত ছয় মাস অনেক কষ্ট দিয়েছে আমাকে।
ফোন করাতো বাদই দিলাম সারাদিনে মাত্র ২ টা মেসেজের রিপ্লাই দিত।
ওর একটাই শর্ত: আমাকে এ+ পেতেই হবে। আর তাই পরীক্ষাসহ রেজাল্ট পাওয়ার আগ পর্যন্ত যোগাযোগ বন্ধ।
বিকেলে মোবাইল অন করলাম সাথেসাথেই বাবার ফোন,
বলল: "তাড়াতাড়ি বাসায় আয় তোর মা খুব টেনশন করছে।"
তারপর ১ ঘন্টা হয়ে গেল- কই রিমিতো কোন ফোন দিলনা !
আমিই ফোন দিলাম।__
-> হ্যলো
-ছিঃ জাহিদ তুমি এত খারাপ রেজাল্ট করবে আমি ভাবতেও পারিনি।
আমাকে ফোন দিতে লজ্জা করল না তোমার ?
-> তুমি এভাবে কথা বলছ কেন, আমিতো অনেক চেষ্টা করেছি। আর রেজাল্ট দিয়ে কি হবে। তুমিতো আমাকে ভালবাস। আর আমি তোমাকে। প্লিজ রিমি আমাকে বোঝার চেষ্টা কর।
- না, ভালবাসি না তোমাকে।
তোমাকে আমার বয়ফ্রেন্ড পরিচয় দিতে লজ্জা লাগে। তুমি আমাকে আর ফোন দিবা না, তোমার সাথে আজথেকে আমার কোন সম্পর্ক নেই।
......( ফোন কেটে দিল )
_কি করব বুঝতে পারছিলামনা।
আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু কামরুলের ম্যাচে গেলাম।
আমার মতই কামরুল তবে নেশা করার বাজে বদঅভ্যাস আছে ওর।
ব্রেকআপের কথা বলতেই আমার হাতে একটা সিগারেট ধরিয়ে দিল,
এত কষ্টের মাঝে সিগারেট ভালই লাগল কেমন যেনো একটা যাদু আছে এতে, তারপর কোনরকম সান্তনা দিয়ে বাসায় যেতে বলল আর পকেটে এক প্যাকেট সিগারেট দিয়ে দিল।
রিমিকে অনেকবার ফোন করেছি( কিন্তু মোবাইল বন্ধ)।
সেদিন রাতে অনেক কান্না করেছিলাম আর সিগারেটের প্যাকেটও শেষ করেছি পুরোটা।
নিজেকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল যেই আমি একদিন অন্যদের স্মোক করতে মানা করতাম সেই আমি কি করছি আজ!!
এরপর থেকে প্রতিদিন কামরুলের ম্যাচে যাই, আস্তে আস্তে বাজে সবকিছুর নেশায় আসক্ত হয়ে পরি।
প্রায় একমাস পরের একদিনের ঘটনা:::
কামরুলের বাসায় যাচ্ছিলাম_পিছনথেকে জাহিদ ভাই বলে ডাকল কেউ।
পেছনে তাকাতেই রিমির বান্ধবী নিঝুমকে দেখলাম।
-> কিছু বলবে?
-আপনাকে কিছু বলার ছিল রিমি সম্পর্কে।
->কি বলবে বল?
-এখানে বলা যাবে না, ঐদিকে যে পার্কটা আছে ওখানে গিয়ে বসে বলি।
...( হাটা শুরু করল )
অবুঝ শিশুর মতো ওর পিছনে হাটা শুরু করলাম আমি_পার্কটা একটু দূরে প্রায় বিশ মিনিট হাটার পর পৌছলাম।
একটা টুলে বসলাম।
তারপর নিঝুম যা বলল::::
"আমি জানি কথা গুলো শুনে আপনার খুব কষ্ট হবে, রিমিও আমাকে বারন করেছিল কিন্তু চোখের সামনে একটা মানুষকে এভাবে ধংস হওয়ার দৃশ্য দেখতে পারছি না। আপনাদের সম্পর্কের পাঁচ মাসের মাথায় রিমির সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পরে আপনার বন্ধু কামরুল। তারপর থেকে আপনার সাথে কি হচ্ছে তাতো আপনি জানেন-ই "
মুহূর্তের মধ্যে আমার চোখ দিয়ে পানি গরিয়ে পরে।
নিজেকে কোনরকম কন্ট্রোল করে কামরুলের ম্যাচে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম_ "তুই রিমিকে ভালবাসিস? " কামরুল কোন উত্তর দেয়নি, শুধু মাথা নিচু করে বসে ছিল।
বুঝতে বাকি রইলনা যে নিঝুম সত্য কথাই বলেছে।
তারপর থেকে আমার সময় কাটে ঐ পার্কে।
শুধু ভালবাসা, বন্ধুত্ব আর বিশ্বাস নিয়ে হিসেবনিকেশ করতে থাকি, কিন্তু ফলাফল কান্না ছাড়া কিছুই পেলাম না। নেশার মাত্রা আরো বেড়ে গেল।
এভাবেই চলতে লাগল।
কিছুদিনপর বাসায় ফিরতেই মা বলল:: "নিঝুম এসেছিল, তোর কিছু কাগজ নিয়ে গেল পরে দিয়ে যাবে বলল।
রুমে ঢুকে দেখতে পাই টেবিলের উপর আমার মার্কশিট আর এডমিড কর্ড মিসিং।
রাত দশটার দিকে ফোন আসে_নিঝুম লিখা,
অবাক হয়ে যাই এই নামে সেভ করা নাম্বার থেকে ফোন আসায়, পরে মনে পরে ঐদিন পার্কে আমার মোবাইলটা একবার নিঝুম নিয়েছিল।
ঘুম আর নেশার ঘোরে ফোনটা রিসিভ করতে পারিনি। পরদিন বাসায় এসে একটা ভর্তির রিসিট আমার হাতে দিল আর বলল দুজনই ভর্তি হয়ে গেলাম।
নিঝুম ভাল ছাত্রী ছিল, চাইলেই পাবলিক ভার্সিটিতে পড়তে পারত।
কিন্তু পরে বুঝতে পারি আমার জন্যই এই প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি হয়।
মায়ের মন জয় করে নিয়েছে একয়দিনে।
এরমধ্যেই আমাকে তুমি করে বলা শুরু করে দিয়েছে।
ক্লাস শুরু হওয়ার পরথেকে আমাকে ফোন করে একসাথে আমাকে নিয়ে যেত ভার্সিটিতে।
আমাকে অনেক বুঝাতে থাকে নেশা ছেড়ে দিয়ে নতুন করে বাঁচতে। কিন্তু আমি পারি না।
এভাবে চলতে থাকে_আমার জন্মদিন চলে আসে।
নিঝুম আমাকে একটা ডায়রি উপহার দেয়।
প্রথম পৃষ্ঠায় বড়করে লাল রঙে লেখা ছিল I Love You ।
রাতে ফোন করে বলে """তুমি কি চাওনা আমি যাকে ভালবাসি সে একজন সুস্খ মানুষ এবং ভালো মানুষ হোক ?"""
ফোনটা কেটে দিলাম আমি।
বারবার ফোন করছে নিঝুম, প্রায় এক ঘন্টা পর ফোন রিসিভ করে বলি "আমি চাই"
এরপর থেকে প্রতি রাতে কথা হয় ওর সাথে। আস্তে আস্তে নেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হই ওর ভালবাসার কারনে। আমাদের রিলেশনের আজ তিনবছর।
সবাই বলে প্রথম ভালবাসা নাকি ভূলা যায় না। কিন্তু আমার এখন মনেই হয়না যে আমার ১ম ভালবাসা অন্য কেউ ছিল।
সত্যি-ই একদম বদলে দিয়েছে আমায়
এই শেষ ভালবাসা
____নিঝুমের ভালবাসা।

অভিন্ন ভালোবাসা

সাধারণ একজন মানুষ হিসেবে
পরিচিত পরিচয় বলতে কিছু নেই হ্যাঁ
পরিচয়হীনও বলা যায়, তখন ঠিক
ক্লাস সেভেনে পড়ি মা মারা
যায় বাবাও মা মারা যাওয়ার পর
বিয়ে করেন, সৎ মাকে যেদিন ঘরে
তুলেন বাবা রুমের ভিতরে দরজা
বন্ধ করে কাঁদতে থাকি, দ্বিতীয়
বিয়ে করবে বাবা গ্রামের
মানুষের মাথা ব্যথা আমাকে
নিয়ে, কিরে তোর তো ভাগ্য খুব
ভালো বাপের বিয়ে খাবি
শান্তনা পাইনি কারো থেকে যে
মা মরা ছেলেটির কি হবে, সে
চিন্তাটা কারো আসেনি আসবেই
বা কেন সমাজের চোখে উচিৎ
কথা বলা মানুষ গুলো শত্রু হয়ে যায়
আমার মায়ের বেলায়ও ঠিক তাই
হয়েছে, সব সময় উচিৎ কথা বলতো
তাই বলে সমাজের মানুষ গুলো
মায়ের পিছনে নিন্দা করতো আর
আমি দেখতাম মা নামাজের
মসলায় বসে বসে কাঁন্না করতো, যা
হউক সেভেনের বছরের প্রথম দিকে
মা মারা যায় রোলনং ০৩ ছিলো
সেভেনে, সেভেনের বার্ষিক
পরিক্ষায় ২সাব্জেক্ট খারাপ করি,
হেডস্যার (প্রধান শিক্ষক) বাবাকে
ডাকিয়ে পরিক্ষার খাতা
দেখালেন অংকে ২২ আর
ইংরেজীতে ১৫ পাই, স্যার
বাবাকে অনেক কিছু বলছেন যা
বাবা সহ্য করেনি স্যারের সামনে
লাথি যেটা মেরেছেন বাড়ি
পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারিনি, পরে
রিক্সা নিয়েছেন রিক্সায় করে
বাড়িতে আসছি ওঠানের পাশে
একটি আম গাছ ছিলো ও হ্যাঁ সৎ মা
বসে বসে খাওয়াতেন না গরু
পালতাম তিনটা গাভী ছিলো গরুর
জন্য দিনে তিন জুরি ঘাস কাঁটতে
হতো তাই তিনবেলা খাওয়ার
জুটতো আবার যদি দুই জুরি ঘাস
কাঁটতাম তাহলে দুইবেলা খাওয়ার
আর সাথে জারি এবং দশবারি বেত
আঘাত কপালে জুটতো, তো গরুর রশি
দিয়ে আম গাছের সাথে পিছন
থেকে বাঁধানো হইছে চোখ বাঁধ
ছিলো গায়ের শার্ট খুলে বাবা
যে ৫টি বেত কিনে এনেছিলো
ওইগুলাকে মা সরিষার তৈল দিয়ে
আগেই রোদে শুকিয়ে রাখছিলেন,
একটা আগে মেরে ভেঙ্গে
ফেলছিলো আর চারটাকে একসাথ
করে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত মেরে
চলছেন কান্না করিনি কিন্তু চোখ
দিয়ে পানি পড়তেছে চারটি বেত
ভেঙ্গে বাবা ক্লান্ত পরে মা
এসে আমার মৃত মাকে নিয়ে খুব
বাজে একটি গালি দিছেন শরীর
থেকে রক্ত ঝরছিলো কোন আঘাত
লাগেনি কিন্তু আমার মৃত মাকে
নিয়ে কিছু বলছে সেটা সহ্য হয়নি
মনের চাপ এবং দেহের ব্যথা নিয়ে
আস্তে আস্তে মাথাটা মাটির
দিকে লুটে পড়তেছে ঠিক ওতটুকু
মনে ছিলো ।
-
রাত দশটা শরীরের জ্বর আর ব্যথা
অনুভব করছি এর আগে হয়তো মৃত
ছিলাম সবাই ঘুমিয়ে গেছে আর
আমার সেই লুকানো মাটির ব্যাংক
আর মায়ের হাতে একজোড়া চুড়ি
নিয়ে বাহির হয়ে পড়ি এই শরীর
নিয়ে স্টেশনের উদ্দেশ্যে হেঁটে
চলছি আর এমনিতেই চোখ দিয়ে
পানি ঝরছে।
-
স্টেশনে এই টাইমের কোন লোকাল
ট্রেন নাই যা আছে ঢাকা থেকে
চট্টগ্রাম, আশার সময় অবশ্যই মায়ের
কবরে মাকে নালিশ আর জেয়ারত
করছি তাই ভাগ্যটা ভালো ছিলো,
৬০-৬৫ বছরের একলোক আমার চোখের
পানি আর স্টেশনে বসে থাকা
নিয়ে জিগ্যাসা করছেন সব কিছু
খুলে বলতে বলতে রাত প্রায় বারটা
ওনি হলেন মাল গাড়ির ড্রাইভার
স্টেশনে দাড় করানো মাল
গাড়িটা চট্টগ্রামের উদ্দেশ্য রওনা
দিবেন ভদ্রলোকটির নাম হলো
সাধন আলী লোকে তাকে সাধু
বলেই ডাকেন ওনার সাথে উঠলাম
মাল গাড়ীতে কিছুক্ষণ পর ওনার
সাথে কথা বলতে বলতে আবার
ঘুমিয়ে পড়লাম ওনি জেগে আছে
মাঝেমধ্যে কারও হাতের স্পর্শ
মাথায় অনুভব করলাম ভোর পাঁচটা
চট্টগ্রাম পৌঁছে গেছি ওনি দুইজন
আনসার দিয়ে আমাকে ধরে ধরে
ওনার বিশ্রামাগারে নিয়ে
ঘুমিয়ে দিছেন সকাল ৯টা বাজে
ডাক্তার এসে আমাকে ঘুম থেকে
জাগালেন এবং সাধু আঙ্কেল
ডাক্তার নিয়ে আসার সময় হোটেল
থেকে রুটি আর বাজি নিয়ে
এসেছেন মুখ দুইয়ে দিয়ে সাধু
আঙ্কেল বল্লেন বাবা এইগুলা
খেয়েনে তখন সবাইকে অবাক করে
দিয়ে চিৎকার করে বলে ওঠলাম
খবরদার আঙ্কেল আমার সামনে
বাবা নামটি উচ্চারণ করববেনা!!
তখন আঙ্কেল মায়ার সরে বল্লেন
ওকে আঙ্কেল আর করবো না,
ডাক্তার এসে হাতে স্যালাইন
দিয়েছে আর কিছু ওষুধ লিখে
দিয়েছেন।
-
হাতে স্যালাইন চলছে সাধু আঙ্কেল
ডাক্তারের সাথে ওষুধ আনতে
যাওয়ার সময় আন্সারকে বলে
গেছেন ওনি আশা পর্যন্ত এক পা
এদিক সেদিক না নড়ে, আন্সার
আমার পাশে বসে আছেন এর কিছুক্ষণ
পর আন্সারের স্ত্রী ফোন করছে
বউয়ের সাথে কথা শেষ করে বলছেন
আমার বাবাকে ফোন দাও..
হ্যাঁলো বাবা কি করো, কিছু
খেয়েছো, বাবা তোমার জন্য
মেলা থেকে পুতুল কিনেছি আর
হ্যাঁ দুষ্টামি করোনা তোমার জন্য
বাবা আসার সময় চিপস নিবো
চকলেট নিবো দুষ্টামি করলে কিন্তু
দিবোনা আর তোমার মা যদি
তোমাকে বকা দেয় বাবা আসলে
বলিও তোমার মাকে বাবা এত্তো
গুলা বকা দিবো.. এসব কথা শুনতে
শুনতে কেন জানি বাবাকে খুব মনে
পড়ছে আর চোখ দিয়ে পানি ঝরছে
ছোটবেলার কথা খুব মনে পরছে
বাবা তো আগে এমন ছিলো না
হঠাৎ সৎ মা ঘরে আসার পর এতটাই
বদলে গেল কেন, আর বাবারই বা কি
দোষ সারাদিন যদি মা নালিশ
দেয় দশটা কথা থেকে একটা হলেও
তো কানে নিবে এটাই
স্বাভাবিক। এসব ভাবতে ভাবতে
সাধু আঙ্কেল ওষুধ নিয়ে আসছেন
এসে বলছেন আঙ্কেল ডাক্তার বলছে
খুব তাড়াতাড়ি সব ঠিক হয়ে যাবে
চিন্তার কিছু নেই এসব বলতে বলতে
সাধু আঙ্কেল ওষুধ খাইয়ে দিচ্ছেন
ওষুধ খাইয়ে দিয়ে বলছেন তোমার
আন্টি আসবে একটু পর ও পাহাড়তলী
থাকে আমার কোয়ার্টার বাসা
আছে তবে দুঃখের বিষয় বাবা
হতে পারলাম না তোমার আন্টির
সমস্যা এই নিয়ে কত ডাক্তারের
কাছে গিয়েছি তার হিসাব নেই,
তুমি থাকার চিন্তা করতে হবেনা
আজ থেকে আমিই তোমার
গার্জিয়ান আর দেখোনা তোমার
আন্টি আসলে তোমাকে দেখে
কতটা খুশী হন আমি ফোন করে শুধু একটু
করে বলছি এরপর আরকি ফোন রেখে
দেওয়ার সময় বলছে আমি যেন
তোমার সেবা করতে একটুওও
বরখেলাপি না করি..আমি নিশ্চুপ
হয়ে গেছি হয়তো অনেক দিন পর এমন
ভালোবাসা পেয়ে দিশেহারা
হয়ে গেছি আর মনে মনে বলছি
এতোদিন এর একশত ভাগের একঅংশ
করে ভালোবাসা ফেলে কি এমন
ক্ষতি হতো হ্যাঁ আন্টি এসেছে
রুমটা আন্টির আগেরই চেনা এসে
আমার পাশে বসলো মনে হচ্ছে
আন্টির পেটের সন্তান আমি
কিংবা আমার হারিয়ে যাওয়া
মা কপালে চুমু দিলেন পাতলা
মালশিটাকে আরেকটু মুখের সামনে
এগিয়ে দিতে দিতে কাঁন্না করে
দিলেন আমার মুখের অবস্থা দেখে
ওইযে মারার সময় হয়তো কয়েক
বারি কপালে কিংবা মুখে পরছেন
আর হয়তো আমার মুখটা একটা মোটা
হয়ে গেছে, আশার সময় আন্টি কমলা
নিয়ে আসছে কমলা খাইয়ে দিতে
দিতে আমার সকল কাহিনী সাধু
আঙ্কেল থেকে শুনিতেছে আমি
নিশ্চিত শুধু আঙ্কেল ক্লাসের
সবচেয়ে ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট
ছিলেন না হয় কি এতোগুলো কথা
আমার মুখ থেকে একবার শুনে কপি
করতে পারতেন?..
-
খুব সুন্দর করে আন্টিকে সব কথা পেষ্ট
করলেন আর শেষে দিয়ে বলে
দিলেন আমাকে যেন বাবা বলে
না ডাকে আমি এটা সহ্য করতে
পারিনি তখন আমি সাধু আঙ্কেলের
মুখের দিকে তাকিয়ে আছি হয়তো
মন থেকে সকল ক্ষোভ মুচে গেছে
এখন আর ওনাদের মুখ থেকে বাবা
ডাকটি শুনলে আর রাগ হবেনা
আরো শুনতে ইচ্ছে হবে।
-
হাতের স্যালাইন শেষ সাধু
আঙ্কেলর ফোন আসছে গাড়ি নিয়ে
আবার ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা
দিতে হবে তখন আঙ্কেল তার
সহকর্মী ড্রাইভারকে বলছে খুব জরুরী
কাজে আটকা পরছেন তাই ওনি
দুইদিনের জন্য ছুটি কাঁটাতে
চাচ্ছেন সহকর্মীও তাতে আপত্তি
করেননি..
-
এখন উদ্দেশ্যে হলো সাধু
আঙ্কেলের বাসায় যাবো, যাবো
না ওনাদের বাসায় নিয়ে যাবেন
আন্টি কপালে আরকি চুমু খেয়ে
জিগ্যাসা করলেন এখন কেমন
লাগছে বাবা? এই কথা শুনা মাত্র
সাধু আঙ্কেল জিহ্বায় কামড় বসিয়ে
দিলেন, আমি বলে ওঠছি আগের
চেয়ে অনেক ভালো মা, তখন আন্টি
খুশিতে কান্না করিয়ে দিলেন
হয়তো জীবনে প্রথম মা ডাক শুনে
আর বুকে জড়িয়ে নিলেন সাধু
আঙ্কেলেরও চোখ দিয়ে পানি
ঝরছে হয়তো বউয়ের খুশি দেখে,
আমি তখন সাধু আঙ্কেলকে
উদ্দেশ্যে করে বলছি বাবা.. সাধু
আঙ্কেল তখন দাড়ানো থেকে এসে
বুকে জড়িয়ে একবার কপালে একবার
মুখে পাগলের মতো চুমু দিতে
লাগলেন,আর ওনাদের ভালোবাসা
পেয়ে আমারও খুশিতে দুই ফোঁটা
চোখের পানি গড়িয়ে পড়লো।

একটি সকাল এক টুকরো হাসি

বাসর রাতে মেয়েটি স্পষ্ট স্বরে জানিয়ে
দেয়,
– এইযে শুনুন, আমি কিন্তু আপনাকে বিয়ে
করতে চাইনি,
,
রাহাত বেশ ভদ্র, মার্জিত ছেলে।
হাসিমুখে জবাব দেয়
-– হ্যা, জানতাম।
– তো বিয়ে করলেন কেন?
– -এমনি
– শুনুন, রাগাবেন না! এমনি কোন কিছু হয় না,
.
রাহাত কি বলবে ভেবে পায় না।
বিয়েটা ওর মায়ের ইচ্ছেতেই হয়েছে।
মায়ের ইচ্ছের ওপর না বলতে পারেনি।
রাহাত চুপ করে থাকে।
ইতোমধ্যে মেয়েটি রেগে নাকের
ডগা আর মুখ টকটকে লাল করে বসে আছে।
.
– কি ব্যাপার! চুপ করে আছেন কেন?
সোজাসুজি বলে দিচ্ছি, আমি আপনাকে
ভালোবাসতে পারবো না! আর আপনি
আমাকে মোটেও স্পর্শ করবেন না!
.
রাহাত হেসে মাথা নাড়ায়। সুন্দরীদের
রাগলে বেশ লাগে। কিন্তু রাহাত আর
রাগাতে সাহস পায় না। এমনিতেই যা
তিরিক্ষি মেজাজ করে বসে আছে! রাহাত
আস্তে করে গিয়ে নিজের বালিশে মাথা
রেখে শোয়। দুজনেই ছাদের দিকে চেয়ে
শুয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর মেয়েটি রাহাতের
উল্টোপাশে মুখ ফিরিয়ে শোয়। একসময়
মেয়েটি নিজ থেকেই কথা বলা শুরু করে,
এবার কন্ঠে আর কোন রাগ নেই, কেমন যেন
কান্নাভেজা কন্ঠস্বর,
.
– আমি একজনকে ভালোবাসতাম!
.
রাহাত অবাক হয়। ও জানত না এসব।
খানিকটা অবাক সুরে বলে,
.
–-উনি কোথায় এখন?
– ও বেঁচে নেই আর!
.
বলে মেয়েটা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
রাহাতেরও বেশ মন খারাপ হয়। মেয়েটাকে
কি বলে যে স্বান্ত্বনা দিবে তা ভেবে
পায় না ও। রাহাত চুপ করে থাকে। আর
ওদিকে মেয়েটি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে
চলেছে।
.
রাহাত নিজের হাতটা মেয়েটির মাথার
দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় একটু, কিন্তু আবার
হাতটা সরিয়ে নেয় কি মনে করে ।
চুপ করে শুয়ে থাকে সে।
.
পরদিন খুব ভোরে আজানের শব্দে ঘুম থেকে
উঠে পড়ে রাহাত। উঠে দেখে মেয়েটি
তখনো ঘুমিয়ে। অযু করে ফজরের নামাজ
আদায় করে নেয় সে। তারপর কিছুক্ষণ কুরআন
তিলাওয়াত করে। ততক্ষনে আকাশ বেশ
ফর্সা হয়ে উঠেছে। কিন্তু মেয়েটি তখনও
ঘুমিয়ে। মেয়েটির নাম দিপান্ন্বিতা।
.
সকাল প্রায় নয়টা বেজে গিয়েছে তখন।
রাহাত ইজি চেয়ারে বসে একটা উপন্যাস
পড়ছিল। হঠাৎ বিছানা থেকে দিপান্ন্বিতার
গলার অস্ফুট আওয়াজ পেয়ে বিছানার দিকে
তাকায়। দেখে, মেয়েটি ঘুম থেকে উঠেছে
আর ঘোরের মাঝে কি যেন বলছে অস্ফুট
স্বরে। রাহাত তাড়াতাড়ি দিপান্ন্বিতার
পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। দিপান্ন্বিতার লম্বা চুল
মুখের উপর ছড়িয়ে আছে এলোমেলোভাবে।
রাহাত হাত দিয়ে চুলগুলো ঠিক করে দেয়ার
সময় টের পায়, কপালটা ভীষণ গরম
দিপান্ন্বিতার!
রাহাত আঁতকে উঠে! ভীষণ জ্বর মেয়েটার!
.
তড়িঘড়ি করে এক বালতি পানি আর মগ এনে
দিপান্ন্বিতার মাথায় আস্তে করে পানি ঢালে
রাহাত। কিছুক্ষণ পর শরীরের তাপমাত্রা
কমে যায়। দিপান্ন্বিতা উঠে বসতে চাইলে ওর
হাত ধরে উঠে বসতে সাহায্য করে রাহাত।
তারপর , রাহাত গিয়ে নিজ হাতে বানানো
ব্রেকফাস্ট এনে দিপান্ন্বিতাকে খাইয়ে দিতে
যায়। মেয়েটা বলে ওঠে,
,
– ব্রেকফাস্ট কে বানিয়েছে?
--আমি ( অবনত মুখে )
– খাইয়ে দেয়া লাগবেনা, এদিকে দিন,
আমি খেয়ে নিচ্ছি
.
রাহাত কিছু মনে করে না। চুপ করে
দিপান্ন্বিতার কাঁপা কাঁপা হাতে খাওয়া
দেখে অবাক চোখে। মুখ দেখে বুঝা যায়,
মেয়েটি সারারাত ঘুমায় নি। তবে বুকে
সূক্ষ্ণ অনুভূতি জাগানো মায়াবী মুখ
মেয়েটার। রাহাত অপলক চোখে চেয়ে
থাকে।
.
রাহাত ভেবেছিল জ্বর বুঝি সেরে
গিয়েছে। কিন্তু সেদিন রাত্রে শরীর
কাঁপিয়ে আবার জ্বর এলো দিপান্ন্বিতার।
জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকছে ও । তাড়াতাড়ি
করে দিপান্ন্বিতাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়
রাহাত। মেয়েটির কষ্ট দেখে বুকটা ভারী
হয়ে আসছে ওর। হাসপাতালে নেয়ার পর ,
ডাক্তারের দেয়া ওষুধ খাওয়ানোর পর জ্বর
কিছুটা কমে দিপান্ন্বিতার। কিন্তু চোখ দুটো
খুলতেও যেন ভীষণ কষ্ট হচ্ছে ওর।
.
রাহাত নিজ হাতে রাতের খাবার রান্না
করে আনে দিপান্ন্বিতার জন্য। মেয়েটি তখনো
নিজ থেকে উঠে বসতে পারেনি। রাহাত
ওকে উঠে বসায়। দিপান্ন্বিতার মুখ দেখে ভীষণ
মায়া হছে ওর। চেহারাটা কেমন রোগা
রোগা হয়ে গিয়েছে। রাহাত নিজ থেকেই
দিপান্ন্বিতার দিকে খাবার এগিয়ে দেয় নিজ
হাতে। নিশাত দুর্বল স্বরে বলে,
.
– আমাকে দিন, আমি খেয়ে নিচ্ছি
এবার রাহাতের মন খারাপ হয় ভীষণ। অবনত
চোখে দিপান্ন্বিতার দিকে খাবারের প্লেট
এগিয়ে দেয়। অল্প করে খেয়ে দিপান্ন্বিতা
আবার
শুয়ে পড়ে। ঘুমানোর আগে রাহাতকে বলে,
.
– আপনিও শুয়ে পড়ুন
.
রাহাত হেসে মাথা নাড়ায়। দিপান্ন্বিতা পাশ
ফিরে শোয়। রুমের লাইট বন্ধ করে রাহাত
দিপান্ন্বিতার পাশে বসে থাকে। জানালার
ফাঁকে রাতের শহরের ঢাকা দেখা যায় ওই।
আকাশভরা তারা ,নিচের রাস্তায় গাড়ির
হেডলাইটগুলোর ছুটোছুটি আর অন্ধকারের
মাঝে বিস্ময়ভরা চোখে তাকিয়ে থাকে
রাহাত। এই যান্ত্রিক শহরে কেমন একা
বোধ করছে আজ ও!
.
সারারাত ঘুমায়নি রাহাত। শেষরাতের
দিকে আবার প্রচন্ড জ্বর উঠে দিপান্ন্বিতার।
রাহাত তড়িঘড়ি করে এক বালতি পানি
এনে দিপান্ন্বিতার মাথায় ঢালে অল্প করে আর
ভীষণ গরম কপালে হাত বুলিয়ে দেয়। যেন
দিপান্ন্বিতা শরীরের উত্তাপগুলো শুষে নিতে
চাইছে। তখন প্রায় ভোর হয়ে গিয়েছে।
সূর্যের আলো একটু করে ছড়াচ্ছে
চারিদিকে। রাহাত দিপান্ন্বিতার কপালে
পানি ঢেলে চলেছে। একসময় দিপান্ন্বিতার জ্বর
কমে যায় একটু করে।
.
দিপান্ন্বিতা চোখ মেলে অবাক চোখে
তাকিয়ে
দেখে একটি অনিদ্রারত রুগ্ন মুখ ওর দিকে
তাকিয়ে প্রশান্তির হাসি হাসছে।
দিপান্ন্বিতা জিজ্ঞেস করে,
.
– আপনি ঘুমাননি?
-– ইয়ে মানে, ঘুম আসছিলো না , তাই জেগে
ছিলাম
– ও!!
– -খুব ক্ষুধা লেগেছে আপনার, হু?
– হ্যা!!
-– একটু অপেক্ষা করুন।
.
রাহাতের দিকে চেয়ে দিপান্ন্বিতা অবাক হয়
ভীষণ ।
.
রাহাত তাড়াতাড়ি করে আনাড়ি হাতে
বানানো ব্রেকফাস্ট নিয়ে এগিয়ে যায়
দিপান্ন্বিতার দিকে। হাতে খাবার তুলে
নিয়েও কি মনে করে আবার রেখে দেয়
প্লেটে। তারপর, প্লেটটা এগিয়ে দেয়
দিপান্ন্বিতার দিকে অবনত চোখে।
দিপান্ন্বিতা
প্লেটটা হাতে নিয়ে অভিমানের সুরে বলে,
.
– খাইয়ে দিবেন না?
.
অবাক চোখে দিপান্ন্বিতার দিকে তাকায়
রাহাত! দেখে, মিটিমিটি হাসছে মেয়েটা।
দিপান্ন্বিতা আবার জিজ্ঞেস করে,
.
– কি, খাইয়ে দিবেন না আমাকে?
.
রাহাতের মুখে তখন বিশ্বজয়ের হাসি।
.
সকালের সোনালী রোদ জানালার ফাঁক
গলে তখন আছড়ে পড়ছে দুজনের গায়ে।
হাসিতে উদ্ভাসিত চারিদিক। ভোরের
আলো সাক্ষী হয়ে রইলো একটি নতুন
সূর্যোদয়ের আর একজোড়া প্রাণের
ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ইতিহাসে ।
ভালো থাকুক ভালোবাসাগুলো।

ভালবাসার পাগল

সকাল ৯ টায় অনিমার ফোন,
পাহাড় পরিমান ঘুম নিয়ে ফোন টা ধরল রুদ্র।আর ধরই একটা ঝাঝালো কন্ঠ ভেষে আসল।
~হ্যালো। কোথায় তুমি?
বুঝতে পারল রেগে গিয়ে মেয়েটার মিষ্টি কন্ঠটা ঝাঝালো হয়ে গেছে।
ওকে আরেকটু রাগানোর জন্য,
=এই তো ফুটবল খেলছিলাম।খেলবে তুমি?
~একদম মশকরা করবে না।
ণবাব জাদার মতো পড়ে পড়ে ঘুমিয়ে এখন আবার ঠাট্রা করছে!
লজ্জা করে না?
= আহা জান,তুমি রাগ করছ কেনো?
আমি তো স্বপ্নে ফুটবল খেলছিলাম!
~ আজ কত তারিখ?
=কত তারিখ যেনো? ..... !
~আজ পহেলা জানুয়ারি! সেই খেয়াল আছে তোমার?
কি কথা ছিল আজ?
= ওহ! ভুলে গেছিলাম গো!
স্যরি!
~ রাখো তোমার স্যরি। আধা ঘন্টার ভিতর ভার্সিটির ক্যাম্পাসে উপস্থিত হবে।
= আরে বল কি! প্রতিপক্ষের কাছে তো এক গোল খেয়ে বসে আছি! আগে শোধ দি ওটা!
শোধ দেবার আগেই তো ঘুম টা ভাঙ্গিয়ে দিলে!
=দেওয়াচ্ছি তোমায় গোল শোধ!
যা বলেছি তাই যদি না করো না,তাহলে স্বপ্নের ভিতর তোমাকে আস্ত গিলে ফেলব!
=আচ্ছা বাবা আচ্ছা উঠছি!
~হূম। তারাতারি।
হটাৎ ঘুম টা ভেঙ্গে গেলো রুদ্রের।ওহ! সে স্বপ্ন দেখছিল এতোক্ষন।কিন্তু,একদিন এসব স্বপ্ন ছিল না।সব ই বাস্তব ছিল।আজ পহেলা জানুয়ারি, অনিমা প্রতি বছরের এই দিনে এভাবেই রুদ্রের ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিতো।খুব ভালবাসত তারা একে অপরকে।কিন্তু,নিয়তির পরিহাসে আর বাস্তবতার কঠোর আঘাতে সব ই ভেঙ্গে চুড়ে ছারখার হয়ে গেছে।
গত ২ বছরে অনিমার মারা যায় এক মর্মান্তিক এক্সিডেন্টে।
আজ অনিমা নেই কিন্তু তার স্মৃতি গুলো ঠিক ই রয়ে গেছে।অনিমা থাকলে হয়ত আজ এভাবেই তার ঘুম ভাঙ্গাত।
নেই?? . . ! কে বলেছে নেই??
আছে তো! এইতো অনিমা! সারাক্ষন রুদ্রের মনের মাঝেই তো আছে।স্বপ্নে হলেও তো অনিমা আজ ঠিক ই এই সময় তার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিয়েছে!
নাহ! আর দেরি করা যাবে না।অনিমা তো ভার্সিটিতে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। তারাতারি যেতে হবে তো আমায়।হ্যা! যেতেই হবে!
.
রুদ্র জানে অনিমা আর কখনো ফিরে আসবে না। তবুও সে প্রতি বছর এই দিনে ঠিক তাই তাই ই করে,আগে যা যা করত।
আর এটায় হলো প্রকৃত ভালবাসা। যার শুরু আছে শেষ নেই।
আর এভাবেই চলবে এক ভালবাসার পাগলের পাগলামি।
আমাদেরও,ভালবাসলে, এভাবেই কাউকে ভালবাসা উচিৎ.

শিক্ষনীয় ঘটনা

এক যুবক নতুন বিয়ে করল। ভালোই
কাটতেছিল তাদের দিনগুলো । একদিন
স্ত্রী খুব ভালো খাবার রান্না করল।
স্বামী স্ত্রী যখন খেতে বসল, এমন সময়
এক ভিক্ষুক হাজির হল। ভিক্ষুক টি খুব
ক্ষুধার্ত ছিল এবং সে কিছু খাবার
চাইল ।
স্বামী খুব রাগ হইলেন এবং
ভিক্ষুকটিকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ ও
অপমান করে তাড়িয়ে দিল। অসহায়
ভিক্ষুক চলে গেল!!! কিছুদিন পর স্বামী
স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া হল। এক পর্যায়ে
তাদের সংসার ভেঙ্গে গেল । স্বামী
স্ত্রী কে তালাক দিয়ে দিল। স্ত্রী
বাপের বাড়ি চলে গেল। কয়েক বছর পর
মেয়ের বাবা অন্য এক জায়গায় মেয়ের
বিয়ে দিল । নতুন স্বামীর সাথে শুরু হল
তার জীবন! দ্বিতীয় স্বামী প্রথম
স্বামীর চেয়ে অনেক ধনী ছিল। একদিন
স্বামী স্ত্রী খেতে বসল। ইতিমধ্যে
একজন ভিক্ষুক আসল। স্ত্রী স্বামী কে
বলল"আমি ভিক্ষা দিয়ে আসি"। কারণ
এমন
এক মুহুর্তে আমার প্রথম স্বামী এক
ভিক্ষুকের সাথে খারাপ আচরন করেছিল,
যা আমি এখনও ভুলতে পারিনা। যখন
স্ত্রী ভিক্ষা দিতে গেল তখন সে
অবাক হয়ে গেল!!! কারণ,তার সেই
প্রথম স্বামীই আজ তার সামনে ভিক্ষার
পাত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে!!! স্ত্রী চোখের
পানি রাখতে পারল না। মেয়েটি তার
দ্বিতীয় স্বামী কে বলল, আমি
আপনাকে এক আশ্চর্য ঘটনা শুনাব।
তারপর
মেয়েটি তার প্রথম স্বামীর সাথে
ঘটে যাওয়া ঘটনাটি বলে দিল!! তখন
দ্বিতীয় স্বামী চোখের পানি ছেড়ে
দিয়ে বলল,আমি তোমাকে এর চাইতেও
আশ্চর্য ঘটনা শুনাব । তুমি হয়ত শুনে
অবাক
হবে যে ,ঐ দিনের অসহায় সেই ভিক্ষুক
টি আমি, যিনি আজ তোমার সম্পদশালী
স্বামী!!!
..... # শিক্ষাঃ আল্লাহ মুহূর্তের মধ্যেই গরীব
কে ধনী আর ধনী কে ফকির বানিয়ে
দিতে পারেন । সূতরাং আমরা কখনও
কোন অসহায় কিংবা গরীব লোকের
সাথে খারাপ ব্যবহার না করি । যদি
পারি নিজের সাধ্য মত সাহায্য করব।
কোন ভাবেই তাদের সাথে ধমকের
সুরে কটু কথা বলব না !!