বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৫

অবেলায় তুমি....

মাত্র থার্ড ইয়ারের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হল। পড়ালেখার তেমন কোন চাপ নেই মোটামুটি ফ্রি আছি। ঘরে শুয়ে বসে HAY DAY গেমস খেলে সময় পার করছি।এমন সময় লিজার ফোন। ওর ফোন আসলেই আমার বুকের ভিতর কাঁপন ধরে। ফোন ধরতে ইচ্ছা করছে না, না ধরে উপায় নেই আমি ফোন না ধরলে আম্মার মোবাইলে কল করবে। তখন আম্মা তার মোবাইল নিয়ে আসবে।সেটা আরও বেশি লজ্জার হবে তাই ধরলাম কল টা।
.
-- এই তুমি কি কর?
-- কিছু না গেমস খেলি।
-- এক কাজ কর।
-- কি?
-- সুন্দর দেখে একটা পাঞ্জাবী পরে শ্যামলী চলে আস।
-- শ্যামলী কেন?
-- কারণ আমি আমাদের উত্তরার ফ্ল্যাটের চাবি নিয়ে এসেছি।তোমাকে নিয়ে ফ্ল্যাটে যাব।
-- সেখানে গিয়ে কি করব?
-- সেটা সেখানে গিয়েই দেখবে। দেরি করবে না তারাতারি চলে আসবে আমি গাড়ি নিয়ে ওয়েট করছি।
-- আচ্ছা দেখি।
-- দেখি-টেখি নাই তারাতারি চলে আস। আর শোন আসার সময় কয়েকটা বেলুন কিনে নিয়ে আসবে ফার্মেসী থেকে।
-- বেলুন দিয়ে কি করবে? কার জন্ম দিন নাকি?
-- গাধা!! আমি এসএমএস করছি এসএমএস পরে দেখ।
.
লিজা এই ধরণের আহব্বান আগেও করেছে তবে সেটা ফ্ল্যাটে না বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় বা পার্কে আজকের ব্যাপারটা ভিন্ন। এর মাঝে মোবাইল খুলে দেখি লিজার এসএমএস তাতে পষ্ট করে লেখা আছে কনডম নিয়ে আসবা ২ প্যাকেট। ও যখন ফার্মেসী থেকে বেলুন নিতে বলছে তখনি আমি বুঝেছি ও কিসের কথা বলেছে তার পরেও না বুঝার ভান করে ছিলাম। এর কারণ হল ও ভাববে আমি খুব সরল সোজা তেমন কিছু বুঝি না। আর মেয়েরা বোকা স্বামী খুব পছন্দ করে কিন্তু ছেলেরা বোকা স্ত্রী পছন্দ করে না। তাই কিছুটা বোকা সেজে থাকার অভিনয় আর কি।
.
এই যেমন আমার ও , ওর সাথে একটা নির্জন ফ্ল্যাটে যাচ্ছি ভাবতেই অন্যরকম লাগছে কিন্তু তার পরেও ওর সামনে গিয়ে এমন ভাব করব যে আমি খুব বিরক্ত যেতে চাচ্ছি না। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আম্মা জিজ্ঞেস করল তুই পাঞ্জাবী পরে এই সময় কোথায় যাস ? আমি কিছু বললাম না অন্যদিকে তাকিয়ে কিছুটা লজ্জার হাসি হাসলাম। মা দের অনেক কিছু বলা লাগে না তারা এমনি বুঝে যায় বিষয়টা। বাসা থেকে বের হয়ে একটু দূরের ফার্মেসিতে যেতে হবে যেখানে আমাকে চিনে না কারণ পরিচিত যায়গা থেকে এই সব জিনিষ নেওয়া খুব লজ্জার। আর দোকানদার যদি বয়সে একটু বড় বা ছোট হয় তাহলে কনডমের প্যাকেট দেওয়ার সময় এমন একটা হাসি দেয়। সে হাসিতে সে বুঝিয়ে দেয় এইটা দিয়ে কি করবা সেটা কিন্তু আমি জানি এই টাইপ হাসি ।
.
শ্যামলী গিয়ে দেখি লিজা এখন ও আসে নাই। ৫ মিনিট পরে ওদের গাড়ি আমার পাশে থামল। আমি ড্রাইভারের পাশে বশতে গেলে লিজা খুব বিরক্ত হয়ে বলল ঐ খানে বসছ কেন আমার পাশে বস।আমি খুব অনিচ্ছার ভাব নিয়ে ওর পাশে বসলাম যদিও আমিও চাচ্চিলাম এইটাই কিন্তু ওকে বুঝতে দিতে চাই না। গাড়ি উত্তরার দিকে যাচ্ছে আমি অন্য দিকে তাকিয়ে আছি। লিজা খুব বিরক্ত নিয়ে বলল তোমার সমস্যা কি? তুমি সব সময় আমাকে এমন পাশ কাটিয়ে চল কেন? আমি দুর্বল ভাবে হেসে বললাম কই পাশ কাটালাম? লিজা চশমা ঠিক করতে করতে বলল, তুমি আজ পর্যন্ত ইচ্ছা করে আমার সাথে একবার ও দেখা করেছ? আমি তোমাকে বার বার নিজে দেখা কারার কথা বলি তার পরেও তুমি আস্তে চাও না। আমাকে বলবে আমার অপরাধ কি ?
.
আমি তেমন কিছুই বলি না চুপ করে বসে থাকি মনে মনে ভাবি আমার ও তোমার সাথে দেখা করতে খুব ইচ্ছা করে কিন্তু সেই ইচ্ছাকে আমি গুরুত্ব দেই না। লিজা আবার বলল আচ্ছা তুমি আমাকে কচ্ছপ বলতে কেন? আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যাই ছোট বেলা লিজাকে শুধু আমি না ওর পরিচিত মোটামুটি সবাই কচ্ছপ বলত। ও আবার বলল কি হল জবাব দেও না কেন? আমি বললাম তোমার বয়স যখন ২ বছর তখন তুমি কার উপরে রাগ হলে এমন কামড় দিতে যে কোন ভাবেই সেটা ছুটান যেত না পরে দাতের ফাকে চামিচ দিয়ে ছুটাতে হত এই কারণে কচ্ছপ বলা।
.
লিজা হাসছে বেশ শব্দ করেই হাসছে। ড্রাইভার ভিউ মিরার দিয়ে আর চোখে কয়েকবার লিজা কে দেখল। আমিও হাসছি। লিজা সম্পর্কে আমার আপন খালাত বোন হয় যদিও এখন আর সম্পর্কটা খালাতো বোনের মাঝে নেই।
.
লিজাদের উত্তরার ফ্ল্যাটটা বেশ বড়।এই ফ্ল্যাট নাকি লিজার নামেই কেনা। ও ফ্ল্যাটে ঢুকে বোরখা খুলে ফেলল। বোরখার নিচে নিল রঙের একটা শাড়ি পড়েছে। মনে হচ্ছে পাখা লাগিয়ে দিলে এখনি উড়ে চলে যাবে। অস্বাভাবিক সুন্দর লাগছে ওকে। ইচ্ছা করছে ওকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরি তবে ইচ্ছাটা দমন করলাম। জিজ্ঞেস করলাম এত সুন্দর করে শাড়ি কে পড়িয়ে দিয়েছে। ও বলল আম্মা। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম তোমার আম্মা জানে তুমি আমার সাথে দেখে করতে আসবে? ও বলল হা জানবে না কেন? তাহলে তো অ্যান্টি এতক্ষণে আমার মা কে বলে দিছে তুমি আমার সাথে দেখা করতে আসছে। ও বেশ অবাক হয়ে বলল , বললে সমস্যা কোথায় তুমি এমন লুকচুরি করছ কেন?
.
নিজের কাছেই কি রকম কি রকম জানি লাগছে। এই মেয়ে যেদিন আমার লাইফে এসেছে সেদিন থেকেই আমি কেমন জানি চোরাচোরা টাইপের হয়ে গেছি।পরিচিত কাউকে দেখলে আস্তে করে মাথা নিচে দিয়ে চলে যাই বিশেষ করে আমার থেকে বছর কয়েকের বড় কাজিন দের দেখলে।
.
আমার খালা দের অবস্থা আমাদের থেকে অনেক ভাল।খালা অসম্ভব রাগি টাইপ মহিলা কিন্তু আমাদের জন্য মানে তার বোনের ছেলে মেয়েদের জন্য তার দিল সব সময় খোশ থাকে। তার পরেও আমি তেমন একটা যেতাম না ওনাদের বাসায়। খুবি কম যেতাম এমন না যে তিনি আমাদের যত্ন করে না কি কারণে জানি ভাল লাগত না। গেলেও মাথা নিচের দিকে দিয়ে আমি ডিসকভারি চ্যানেল ছেড়ে বসে থাকতাম।ওনার মেয়ে লিজা আমার থেকে ৪ বছরের ছোট ও সব সময় আমাকে রোবট মানব ডাকত। আসলে আপনারা আমাকে জটা ভাল মনে করছেন আমি অতটা ভাল না ভাল সেজে থাকার অভিনয় করি।
.
অনার্স ১ম বর্ষে ভর্তি হওয়ার পরে খালা বলল লিজা তো SSC দিবে তুই ওকে একটু কয়টা দিন পরা দেখিয়ে দিস। আমার সমস্যা হল আমি কাউকে মুখের উপরে না করতে পারি না। আমি বললাম আচ্ছা । কেউ যদি আমাকে বলে যা ৫ তলা বিল্ডিং থেকে লাফ দিয়ে নিচে পর আমি বলব আচ্চা। তাই বলে ভাব্বেন না আমি ৫ তালা থেকে লাফ দিব। আমি কথা মত গেট খুলে বের হব ভান করব লাফ দিতে যাচ্ছি কিন্তু আস্তে করে নিচে চলে যাব আগামি এক মাস তার সামনেই পরব না। কোন কারণে দেখা হলে এমন ভান করব ঐ বিষয় আমাদের যে কথা হয়েছে সেটা আমার মনেই নেই।
.
তেমনি খালা কে আচ্চা বলে আমি যথা রিতি বাসায় এসে আগের মতই চলতে লাগলাম ।তবে পারলাম না আম্মার কারণে ওকে পরাতে যেতে হল। এক মাস পরে লিজা আমাকে একটা চিঠি দিল সোজা বাংলায় প্রেম প্রস্তাব। চিঠি পেয়ে আমার ভীতরে কাঁপন উঠলেও চেহারা স্বাভাবিক করে চিঠি পকেটে রেখে দিলাম। এর পরে আর তেমন একটা যাইনি ওদের বাড়িতে। এমন না যে লিজা কে আমার পছন্দ না আসলে আমার খালা আমাদের উপর যতই দিল খোশ হোক না কেন সে কক্ষন ও তার মেয়ের হাত আমার হাতে দিবে না কারন আমাদের সামাজিক অবস্থা তাদের থেকে দুর্বল আর প্রতিটা মা-ই চায় তার মেয়ে তাদের থেকে একটা উচ্চ ঘরে বউ হয়ে যাক। আর এইটা দোষের কিছু না এটাই স্বাভাবিক।
.
এর পরেও লিজার সাথে আমার কয়েকবার দেখা হয়েছে কিন্তু ও খুব স্বাভাবিক আচরণ করেছে এমন ভাব করেছে যেন কিছু হয়নি।আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম যদিও প্রকাশ করিনি।এর মাঝে অনেক কিছু পরিবর্তন হল লিজা ইন্টার পাশ করল। অনার্সের ভর্তি হবে। এমন সময় লিজার মা ভাল এক ছেলে দেখে লিজার বিয়ে ঠিক করল ছেলে পাইলট। অনেকটা হুট হাট করে করেই বিয়ে ঠিক হয়ে গেল। সবাই কে দেওয়াত দেওয়া হল।মূল সমস্যা হল বিয়ে আসরে যার জন্য আমরা কেউ প্রস্তুত ছিলাম না।
.
লিজার হবু বরকে আমাদের এক আত্মীয় দেখে চিনে ফেলল। এই ছেলে পাইলট ঠিকি কিন্তু আগেও একটা বিয়ে করেছে। পরে সেটা নিয়ে অনেক বড় ক্যাচাল হল ছেলের বাবা সবার কাছে ক্ষমা চাইল একই সাথে তার ছেলেকে ত্যাজ্য পুত্র ঘোষণা করল আরও অনেক কিছু।এদিকে আমার খালা এই খবর শুনে ফিট হয়ে গেছে। বিয়ের আসর থেকে মেয়ের বিয়ে না ভেঙ্গে গেলে সেই মেয়ে নাকি অলক্ষ্মী হয়। এখন কি কারা? আমার বড় মামা তখন এগিয়ে আসল বলল চাইলে বিয়ে এখন ও হতে পারে। খালা চোখ পিটপিট করে কি ব্যবস্থা? মামা বল পাত্র যদিও প্রতিষ্ঠিত না তার পরেও ছেলে খুব ভাল সে হল হাসান। খালা বুঝতে পারছিল না কি করবে এমন পরিস্থিতিতে সবাই কিছুটা হতবাক।
.
তখন আমাদের সব আত্মীয় বুঝানোর পরে খালা রাজি হল। আমি ভীতরে ভীতরে খুব উত্তেজিত হয়ে পরলেও গলা খুব স্বাভাবিক ভাবে বলি পাগল নাকি আমি এখন বিয়ে করব? এখন ও অনার্স শেষ হয় নাই।আসলে সত্যি বলতে কি আমার এক মনে বলছে বিয়েটা করে ফেলি আবার আরেক মনে বলছে না। পরে সবার চাপা-চাপিতে আমি কিছুটা নরম হলাম । বললাম আগে দেখি লিজা কি বলে আমি ওর সাথে কথা বলে। তখন আমাকে আর লিজাকে আলাদা কথা বলার সুযোগ দেওয়া হল। এত একটা বড় ঘটনা অথচ লিজা খুব স্বাভাবিক আছে। আমি বললাম তোমার কি মতামত। ও খুব স্বাভাবিক গলায় বলল....
.
-- সেটা তোমার উপর নির্ভর করে।
-- মানে?
-- কোন মানে টানে নাই। যা সিদ্ধান্ত নেওয়া নিয়ে ফেলেছি তাই আর টেনশন হেচ্ছে না।
-- gasp emoticon কি সিদ্ধান্ত?
-- তুমি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হলে সব স্বাভাবিক চলবে।
-- আর রাজি না হলে?
-- আত্মহত্যা করব। কারণ অলক্ষ্মী অপবাদ নিয়ে বেচে থাকতে পারব না।
এই বলে ও আমার সামনে থেকে উঠে চলে গেল। আমি কিছুক্ষণ ঝিম ধরে বসে রইলাম। পরে সবার অনুরধে বিয়েটা হয়ে গেল। তবে কিছু শর্ত থাকল। এখন শুধু বিয়ে আর কিছু না বউ আরও ৩ বছর পরে উঠিয়ে নেওয়া হবে।
.
এর পরেই শুরু হল লাইফের লুকুচুরি। আমার বয়সে বড় কাজনরা দেখলেই হাসে যদিও তারা স্বাভাবিক ভাবেই হাসে কিন্তু আমার মনে হয় তাদের আগে বিয়ে কড়াতে তারা টিটকারি দিয়ে হাসে। আর বন্ধুদের কথা কি বলব হারামি গুলো দেখলেই বলে দোস্ত ভাবির হাতের রান্না খাওয়াবি না? আমি বরাবরই ভদ্র ছেলে হয়ে থাকার চেষ্টা করি তাই কিছু বলি না শুধু হাসি আর বলি হা খাওয়াব সময় হোক। অথচ মনে মনে বলি তোর ভাবি একটা জিনিষ পারে খুন্তি গরম করতে খাবি নাকি শালা তার একটা সেঁকা একবার খেলে সারাজীবন মনে রাখবি। আগে কলেজের মেয়ে গুলো দেখলেই সুন্দর করে জিজ্ঞেস করত ভাইয়া ক্যামন আছেন আর এখন দেখলেই জিজ্ঞেস করে ভাইয়া ভাবি ক্যামন আছে।
.
তবে সব যে লস হয়েছে তানা কিছু লাভ ও হয়েছে যেমন খালু সাহেব আমাকে ব্যাংকে একটা একাউন্ট খুলে দিয়েছে সেই একাউন্টে আবার ৮০ হাজার টাকা দিয়েছে।বলছে শেষ হলে আবার চাইতে।
.
লিজার ডাকে আমার হুশ ফিরল বলল কি এত চিন্তা করছ? আমাকে ক্যামন লাগছে বল? আমি কিছু বললাম না হাসলাম বললাম তুমি ঐ দিকে ঘুর ও অবাক হয়ে বলল কেন? বললাম আহা ঘুর না । ও ঘুরল আমি ওকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলাম আমাদের সামনে আয়না। আমি আয়নায় পষ্ট দেখতে পাচ্ছি লিজার চোখে পানি..............

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন