বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫

বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৫

অবেলায় তুমি....

মাত্র থার্ড ইয়ারের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হল। পড়ালেখার তেমন কোন চাপ নেই মোটামুটি ফ্রি আছি। ঘরে শুয়ে বসে HAY DAY গেমস খেলে সময় পার করছি।এমন সময় লিজার ফোন। ওর ফোন আসলেই আমার বুকের ভিতর কাঁপন ধরে। ফোন ধরতে ইচ্ছা করছে না, না ধরে উপায় নেই আমি ফোন না ধরলে আম্মার মোবাইলে কল করবে। তখন আম্মা তার মোবাইল নিয়ে আসবে।সেটা আরও বেশি লজ্জার হবে তাই ধরলাম কল টা।
.
-- এই তুমি কি কর?
-- কিছু না গেমস খেলি।
-- এক কাজ কর।
-- কি?
-- সুন্দর দেখে একটা পাঞ্জাবী পরে শ্যামলী চলে আস।
-- শ্যামলী কেন?
-- কারণ আমি আমাদের উত্তরার ফ্ল্যাটের চাবি নিয়ে এসেছি।তোমাকে নিয়ে ফ্ল্যাটে যাব।
-- সেখানে গিয়ে কি করব?
-- সেটা সেখানে গিয়েই দেখবে। দেরি করবে না তারাতারি চলে আসবে আমি গাড়ি নিয়ে ওয়েট করছি।
-- আচ্ছা দেখি।
-- দেখি-টেখি নাই তারাতারি চলে আস। আর শোন আসার সময় কয়েকটা বেলুন কিনে নিয়ে আসবে ফার্মেসী থেকে।
-- বেলুন দিয়ে কি করবে? কার জন্ম দিন নাকি?
-- গাধা!! আমি এসএমএস করছি এসএমএস পরে দেখ।
.
লিজা এই ধরণের আহব্বান আগেও করেছে তবে সেটা ফ্ল্যাটে না বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় বা পার্কে আজকের ব্যাপারটা ভিন্ন। এর মাঝে মোবাইল খুলে দেখি লিজার এসএমএস তাতে পষ্ট করে লেখা আছে কনডম নিয়ে আসবা ২ প্যাকেট। ও যখন ফার্মেসী থেকে বেলুন নিতে বলছে তখনি আমি বুঝেছি ও কিসের কথা বলেছে তার পরেও না বুঝার ভান করে ছিলাম। এর কারণ হল ও ভাববে আমি খুব সরল সোজা তেমন কিছু বুঝি না। আর মেয়েরা বোকা স্বামী খুব পছন্দ করে কিন্তু ছেলেরা বোকা স্ত্রী পছন্দ করে না। তাই কিছুটা বোকা সেজে থাকার অভিনয় আর কি।
.
এই যেমন আমার ও , ওর সাথে একটা নির্জন ফ্ল্যাটে যাচ্ছি ভাবতেই অন্যরকম লাগছে কিন্তু তার পরেও ওর সামনে গিয়ে এমন ভাব করব যে আমি খুব বিরক্ত যেতে চাচ্ছি না। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আম্মা জিজ্ঞেস করল তুই পাঞ্জাবী পরে এই সময় কোথায় যাস ? আমি কিছু বললাম না অন্যদিকে তাকিয়ে কিছুটা লজ্জার হাসি হাসলাম। মা দের অনেক কিছু বলা লাগে না তারা এমনি বুঝে যায় বিষয়টা। বাসা থেকে বের হয়ে একটু দূরের ফার্মেসিতে যেতে হবে যেখানে আমাকে চিনে না কারণ পরিচিত যায়গা থেকে এই সব জিনিষ নেওয়া খুব লজ্জার। আর দোকানদার যদি বয়সে একটু বড় বা ছোট হয় তাহলে কনডমের প্যাকেট দেওয়ার সময় এমন একটা হাসি দেয়। সে হাসিতে সে বুঝিয়ে দেয় এইটা দিয়ে কি করবা সেটা কিন্তু আমি জানি এই টাইপ হাসি ।
.
শ্যামলী গিয়ে দেখি লিজা এখন ও আসে নাই। ৫ মিনিট পরে ওদের গাড়ি আমার পাশে থামল। আমি ড্রাইভারের পাশে বশতে গেলে লিজা খুব বিরক্ত হয়ে বলল ঐ খানে বসছ কেন আমার পাশে বস।আমি খুব অনিচ্ছার ভাব নিয়ে ওর পাশে বসলাম যদিও আমিও চাচ্চিলাম এইটাই কিন্তু ওকে বুঝতে দিতে চাই না। গাড়ি উত্তরার দিকে যাচ্ছে আমি অন্য দিকে তাকিয়ে আছি। লিজা খুব বিরক্ত নিয়ে বলল তোমার সমস্যা কি? তুমি সব সময় আমাকে এমন পাশ কাটিয়ে চল কেন? আমি দুর্বল ভাবে হেসে বললাম কই পাশ কাটালাম? লিজা চশমা ঠিক করতে করতে বলল, তুমি আজ পর্যন্ত ইচ্ছা করে আমার সাথে একবার ও দেখা করেছ? আমি তোমাকে বার বার নিজে দেখা কারার কথা বলি তার পরেও তুমি আস্তে চাও না। আমাকে বলবে আমার অপরাধ কি ?
.
আমি তেমন কিছুই বলি না চুপ করে বসে থাকি মনে মনে ভাবি আমার ও তোমার সাথে দেখা করতে খুব ইচ্ছা করে কিন্তু সেই ইচ্ছাকে আমি গুরুত্ব দেই না। লিজা আবার বলল আচ্ছা তুমি আমাকে কচ্ছপ বলতে কেন? আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যাই ছোট বেলা লিজাকে শুধু আমি না ওর পরিচিত মোটামুটি সবাই কচ্ছপ বলত। ও আবার বলল কি হল জবাব দেও না কেন? আমি বললাম তোমার বয়স যখন ২ বছর তখন তুমি কার উপরে রাগ হলে এমন কামড় দিতে যে কোন ভাবেই সেটা ছুটান যেত না পরে দাতের ফাকে চামিচ দিয়ে ছুটাতে হত এই কারণে কচ্ছপ বলা।
.
লিজা হাসছে বেশ শব্দ করেই হাসছে। ড্রাইভার ভিউ মিরার দিয়ে আর চোখে কয়েকবার লিজা কে দেখল। আমিও হাসছি। লিজা সম্পর্কে আমার আপন খালাত বোন হয় যদিও এখন আর সম্পর্কটা খালাতো বোনের মাঝে নেই।
.
লিজাদের উত্তরার ফ্ল্যাটটা বেশ বড়।এই ফ্ল্যাট নাকি লিজার নামেই কেনা। ও ফ্ল্যাটে ঢুকে বোরখা খুলে ফেলল। বোরখার নিচে নিল রঙের একটা শাড়ি পড়েছে। মনে হচ্ছে পাখা লাগিয়ে দিলে এখনি উড়ে চলে যাবে। অস্বাভাবিক সুন্দর লাগছে ওকে। ইচ্ছা করছে ওকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরি তবে ইচ্ছাটা দমন করলাম। জিজ্ঞেস করলাম এত সুন্দর করে শাড়ি কে পড়িয়ে দিয়েছে। ও বলল আম্মা। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম তোমার আম্মা জানে তুমি আমার সাথে দেখে করতে আসবে? ও বলল হা জানবে না কেন? তাহলে তো অ্যান্টি এতক্ষণে আমার মা কে বলে দিছে তুমি আমার সাথে দেখা করতে আসছে। ও বেশ অবাক হয়ে বলল , বললে সমস্যা কোথায় তুমি এমন লুকচুরি করছ কেন?
.
নিজের কাছেই কি রকম কি রকম জানি লাগছে। এই মেয়ে যেদিন আমার লাইফে এসেছে সেদিন থেকেই আমি কেমন জানি চোরাচোরা টাইপের হয়ে গেছি।পরিচিত কাউকে দেখলে আস্তে করে মাথা নিচে দিয়ে চলে যাই বিশেষ করে আমার থেকে বছর কয়েকের বড় কাজিন দের দেখলে।
.
আমার খালা দের অবস্থা আমাদের থেকে অনেক ভাল।খালা অসম্ভব রাগি টাইপ মহিলা কিন্তু আমাদের জন্য মানে তার বোনের ছেলে মেয়েদের জন্য তার দিল সব সময় খোশ থাকে। তার পরেও আমি তেমন একটা যেতাম না ওনাদের বাসায়। খুবি কম যেতাম এমন না যে তিনি আমাদের যত্ন করে না কি কারণে জানি ভাল লাগত না। গেলেও মাথা নিচের দিকে দিয়ে আমি ডিসকভারি চ্যানেল ছেড়ে বসে থাকতাম।ওনার মেয়ে লিজা আমার থেকে ৪ বছরের ছোট ও সব সময় আমাকে রোবট মানব ডাকত। আসলে আপনারা আমাকে জটা ভাল মনে করছেন আমি অতটা ভাল না ভাল সেজে থাকার অভিনয় করি।
.
অনার্স ১ম বর্ষে ভর্তি হওয়ার পরে খালা বলল লিজা তো SSC দিবে তুই ওকে একটু কয়টা দিন পরা দেখিয়ে দিস। আমার সমস্যা হল আমি কাউকে মুখের উপরে না করতে পারি না। আমি বললাম আচ্ছা । কেউ যদি আমাকে বলে যা ৫ তলা বিল্ডিং থেকে লাফ দিয়ে নিচে পর আমি বলব আচ্চা। তাই বলে ভাব্বেন না আমি ৫ তালা থেকে লাফ দিব। আমি কথা মত গেট খুলে বের হব ভান করব লাফ দিতে যাচ্ছি কিন্তু আস্তে করে নিচে চলে যাব আগামি এক মাস তার সামনেই পরব না। কোন কারণে দেখা হলে এমন ভান করব ঐ বিষয় আমাদের যে কথা হয়েছে সেটা আমার মনেই নেই।
.
তেমনি খালা কে আচ্চা বলে আমি যথা রিতি বাসায় এসে আগের মতই চলতে লাগলাম ।তবে পারলাম না আম্মার কারণে ওকে পরাতে যেতে হল। এক মাস পরে লিজা আমাকে একটা চিঠি দিল সোজা বাংলায় প্রেম প্রস্তাব। চিঠি পেয়ে আমার ভীতরে কাঁপন উঠলেও চেহারা স্বাভাবিক করে চিঠি পকেটে রেখে দিলাম। এর পরে আর তেমন একটা যাইনি ওদের বাড়িতে। এমন না যে লিজা কে আমার পছন্দ না আসলে আমার খালা আমাদের উপর যতই দিল খোশ হোক না কেন সে কক্ষন ও তার মেয়ের হাত আমার হাতে দিবে না কারন আমাদের সামাজিক অবস্থা তাদের থেকে দুর্বল আর প্রতিটা মা-ই চায় তার মেয়ে তাদের থেকে একটা উচ্চ ঘরে বউ হয়ে যাক। আর এইটা দোষের কিছু না এটাই স্বাভাবিক।
.
এর পরেও লিজার সাথে আমার কয়েকবার দেখা হয়েছে কিন্তু ও খুব স্বাভাবিক আচরণ করেছে এমন ভাব করেছে যেন কিছু হয়নি।আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম যদিও প্রকাশ করিনি।এর মাঝে অনেক কিছু পরিবর্তন হল লিজা ইন্টার পাশ করল। অনার্সের ভর্তি হবে। এমন সময় লিজার মা ভাল এক ছেলে দেখে লিজার বিয়ে ঠিক করল ছেলে পাইলট। অনেকটা হুট হাট করে করেই বিয়ে ঠিক হয়ে গেল। সবাই কে দেওয়াত দেওয়া হল।মূল সমস্যা হল বিয়ে আসরে যার জন্য আমরা কেউ প্রস্তুত ছিলাম না।
.
লিজার হবু বরকে আমাদের এক আত্মীয় দেখে চিনে ফেলল। এই ছেলে পাইলট ঠিকি কিন্তু আগেও একটা বিয়ে করেছে। পরে সেটা নিয়ে অনেক বড় ক্যাচাল হল ছেলের বাবা সবার কাছে ক্ষমা চাইল একই সাথে তার ছেলেকে ত্যাজ্য পুত্র ঘোষণা করল আরও অনেক কিছু।এদিকে আমার খালা এই খবর শুনে ফিট হয়ে গেছে। বিয়ের আসর থেকে মেয়ের বিয়ে না ভেঙ্গে গেলে সেই মেয়ে নাকি অলক্ষ্মী হয়। এখন কি কারা? আমার বড় মামা তখন এগিয়ে আসল বলল চাইলে বিয়ে এখন ও হতে পারে। খালা চোখ পিটপিট করে কি ব্যবস্থা? মামা বল পাত্র যদিও প্রতিষ্ঠিত না তার পরেও ছেলে খুব ভাল সে হল হাসান। খালা বুঝতে পারছিল না কি করবে এমন পরিস্থিতিতে সবাই কিছুটা হতবাক।
.
তখন আমাদের সব আত্মীয় বুঝানোর পরে খালা রাজি হল। আমি ভীতরে ভীতরে খুব উত্তেজিত হয়ে পরলেও গলা খুব স্বাভাবিক ভাবে বলি পাগল নাকি আমি এখন বিয়ে করব? এখন ও অনার্স শেষ হয় নাই।আসলে সত্যি বলতে কি আমার এক মনে বলছে বিয়েটা করে ফেলি আবার আরেক মনে বলছে না। পরে সবার চাপা-চাপিতে আমি কিছুটা নরম হলাম । বললাম আগে দেখি লিজা কি বলে আমি ওর সাথে কথা বলে। তখন আমাকে আর লিজাকে আলাদা কথা বলার সুযোগ দেওয়া হল। এত একটা বড় ঘটনা অথচ লিজা খুব স্বাভাবিক আছে। আমি বললাম তোমার কি মতামত। ও খুব স্বাভাবিক গলায় বলল....
.
-- সেটা তোমার উপর নির্ভর করে।
-- মানে?
-- কোন মানে টানে নাই। যা সিদ্ধান্ত নেওয়া নিয়ে ফেলেছি তাই আর টেনশন হেচ্ছে না।
-- gasp emoticon কি সিদ্ধান্ত?
-- তুমি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হলে সব স্বাভাবিক চলবে।
-- আর রাজি না হলে?
-- আত্মহত্যা করব। কারণ অলক্ষ্মী অপবাদ নিয়ে বেচে থাকতে পারব না।
এই বলে ও আমার সামনে থেকে উঠে চলে গেল। আমি কিছুক্ষণ ঝিম ধরে বসে রইলাম। পরে সবার অনুরধে বিয়েটা হয়ে গেল। তবে কিছু শর্ত থাকল। এখন শুধু বিয়ে আর কিছু না বউ আরও ৩ বছর পরে উঠিয়ে নেওয়া হবে।
.
এর পরেই শুরু হল লাইফের লুকুচুরি। আমার বয়সে বড় কাজনরা দেখলেই হাসে যদিও তারা স্বাভাবিক ভাবেই হাসে কিন্তু আমার মনে হয় তাদের আগে বিয়ে কড়াতে তারা টিটকারি দিয়ে হাসে। আর বন্ধুদের কথা কি বলব হারামি গুলো দেখলেই বলে দোস্ত ভাবির হাতের রান্না খাওয়াবি না? আমি বরাবরই ভদ্র ছেলে হয়ে থাকার চেষ্টা করি তাই কিছু বলি না শুধু হাসি আর বলি হা খাওয়াব সময় হোক। অথচ মনে মনে বলি তোর ভাবি একটা জিনিষ পারে খুন্তি গরম করতে খাবি নাকি শালা তার একটা সেঁকা একবার খেলে সারাজীবন মনে রাখবি। আগে কলেজের মেয়ে গুলো দেখলেই সুন্দর করে জিজ্ঞেস করত ভাইয়া ক্যামন আছেন আর এখন দেখলেই জিজ্ঞেস করে ভাইয়া ভাবি ক্যামন আছে।
.
তবে সব যে লস হয়েছে তানা কিছু লাভ ও হয়েছে যেমন খালু সাহেব আমাকে ব্যাংকে একটা একাউন্ট খুলে দিয়েছে সেই একাউন্টে আবার ৮০ হাজার টাকা দিয়েছে।বলছে শেষ হলে আবার চাইতে।
.
লিজার ডাকে আমার হুশ ফিরল বলল কি এত চিন্তা করছ? আমাকে ক্যামন লাগছে বল? আমি কিছু বললাম না হাসলাম বললাম তুমি ঐ দিকে ঘুর ও অবাক হয়ে বলল কেন? বললাম আহা ঘুর না । ও ঘুরল আমি ওকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলাম আমাদের সামনে আয়না। আমি আয়নায় পষ্ট দেখতে পাচ্ছি লিজার চোখে পানি..............
এমন আশা দিওনা যেই আশায় যেন
সে সপ্ন দেখা শুরু করে
অথচ পরে তাকে নিরাশ করে দিলে...
.
এমন কথা বলো না যেই কথায় বিশ্বাস করেছে
অথচ কথা দিয়ে কথা না রেখে তাকে বিপদে ফেলেছো...
.
এমন সন্দেহ এর মনোভাব নিওনা
অথচ দেখা গেলো সে তোমার সন্দেহ এর অংশীদারি নয়..
.
এমন কিছু করোনা যা করলে
অন্যের মনের উপর আঘাত বলে,
একটা অংশ তার হৃদয়ে জায়গা করে নেয়
.
উল্লেখিত এর বিপরীত হলে মন্দ নয়,
তা না হলে তুমি তোমার জীবন সংগ্রামে
তুমি নিজেই পরাজিত হওয়ার জন্য দায়ী থাকবে..

ভালবাসা

কেউ যদি কথা দেয় আসবে, তার
জন্য অনেক ক্ষন ধরে অপেক্ষা
করার নাম হচ্ছে বিশ্বাস। কিন্তু সে আর
কখনো
আসবেনা জেনেও তার জন্য সারা জীবন
অপেক্ষা করার নামি হচ্ছে ভালবাসা।

"জীবন একটাই" তাই কোন ভুল সিদ্ধান্ত নয়

একটা সময় একটা মেয়ের জন্য খুব পাগল ছিলাম। মেয়েটাও আমাকে ভালোবাসতো আর আমিও মেয়েটাকে। আমাদের ভালোবাসাটা তখন আমার কাছে পৃথিবীর সেরা সম্পদ মনে হয়েছিলো।ভালোবাস
া বহিঃপ্রকাশ এর জন্য হাতকাটা পা কাটা না খেয়ে থাকা কোনকিছুরই কমতি ছিলোনা আমাদের মধ্যে।প্রচুর অভিমান রাগ আর মধুর কিছু মূহুর্তের সংমিশ্রনে চলতে থাকে আমাদের রিলেশন। প্রথম দিকে একটা দিন কথা না হলে আমার মনে হতো আমি আর বাচতে পারবোনা।সেও আমাকে ছাড়া কিছু ভাবতেই পারতোনা। প্রতিদিন ফেসবুকে আনলিমিটেড চ্যাটিং হতো,ফোনে কথা হতো ঘন্টার পর ঘন্টা। সপ্তাহে অন্তত একবার দেখা হতো। সবমিলিয়ে সুখের এক বিশাল সমুদ্রে ভাসছিলাম আমরা। আমরা বিয়ে কবে করবো? আমরা কয়টা বাচ্চা নিবো? বাচ্চাদের নাম কি হবে? এতদূর পর্য্ন্ত ভেবেছিলাম আমরা।
একদিন যদি একজনের শরির খারাপ থাকতো তাকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করা শুরু করে দিতাম। ""প্লিজ আমার বাবুটার জন্য দোয়া করবেন ও খুব অসুস্থ"।
জান তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে তাইনা??
ও কষ্ট পেত ভেবে আমার কষ্টের আর কোন সীমা ছিলোনা। ভাবতাম ও একা একা কষ্ট পাবে তা হতে পারেনা। তাই নিজে নিজে ব্লেড দিয়ে হাত কাটতাম। কাটার পর একটু স্বস্তি মিলতো মনে।
মোটকথা একটা ছেলে একটা মেয়ের প্রতি আর একটা মেয়ের একটা ছেলের প্রতি যতটা কেয়ারিং আর দুর্বল হওয়া সম্ভব তার থেকে আমাদের মাঝে কোন অংশেই কমতি ছিলোনা।
আমি আমার ফ্রেন্ডদের কাছে বলে বেড়াতাম ওকে নিয়ে কতশত স্বপ্ন আমার। ও ছাড়া আমার পৃথিবীতে আর কেউ নাই। ওকে ছাড়া আমি আমার একটা মুহুর্ত কল্পনাও করতে পারিনা।
এভাবেই চলে আমাদের এই মনোমুগ্ধকর প্রণয়।
কিছুদিন পরে ওর সাথে আমার কিছু অমিল সৃষ্টি হয়। নিজেদের মধ্যে প্রতিদিন ঝগড়া হতে থাকে।
ছোটখাটো ব্যপারেই অনেক বড় ঝগড়া হতো।
হঠাত করেই একদিন ওর সাথে আমার রিলেশন টা শেষ হয়ে যায়। শেষ হয়ে যায় বলতে ওই আমাকে ছেড়ে চলে যায়।কারন বলতে তেমন কিছু ছিলোনা। যা ছিলো,সেটা হলো আমার ক্যারিয়ার নেই,আমি চলি বাপের টাকায় আমাকে স্টান্ড করতে এখনো বহু দেরী।এর আগেই আমার থেকে বহু ভালো ক্যারিয়ারওয়ালা ছেলে হয়ত তার পানি পাওয়ার জন্য ব্যাগ্রচিত্তে অপেক্ষা করছিলো। যাই হোক সে আমার সাথে ব্রেকাপ করে দেয়।
ও নিজের ক্যারিয়ার বন্ধুবান্ধব নিয়া বিজি হয়ে পড়ে। কিন্তু আমি অই মুহুরতে সেই পরিস্থিতি ঠিক সামলে নিতে পারিনি।
প্রতিদিন কান্না করে করে বালিশ কয়টা ভিজাইছি তার ইয়ত্তা ছিলোনা। 

শনিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৫

শিশির ভেজা ভোরে তুমি নেই বলে

কোয়াশা ঢাকা ভোরবেলা ঘুম ভাঙ্গে পাখি কিচির মিচির ডাকে তারপর বিছানা ছেড়ে চোখ কচলাতে কচলাতে শিশির ভেজা ঘাসের উপর দিয়ে হেটে চললাম,
-
কিন্তু যখন গাছের পাতা থেকে এক ফোটা জল মুখের উপর পড়ে তখন সারা শরীর শির শির করে কেপে উঠে, আর মনে পড়ে প্রিয়া তোমার কথা।
-
প্রিয়া তুমি আজ পাশে নেই, পাশে থাকলে হয়ত তোমার ওড়না দিয়ে আলতো করে মুছে দিতে, অামার মুখে পড়া শিশির কণা জল গুলো।
-
ঘুমের আলসে ভাবের সাথে হেটে চলার ক্লান্ততা নিয়ে গাছের নিচে ঘাসের উপর বসি, তখন যে শিশির কণাগুলো তোমার কথা মনে করিয়ে দেয়,আর তখনই তোমার স্বপ্নগুলো হাতচানি দেয়,
আমার মনের গহিন ঘরে।
-
তোমার পিঠে পিঠ লাগিয়ে ঘাসের উপর বসে গল্প করতাম তখন কতই না স্বপ্ন দেখাতে আগামীর পথ চলার,কিন্তু আজ তুমি নেই।তুমি নেই বলে কি হয়েছে আমিতো আছি আজও তোমার স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে।
-
যতো দিন বেঁচে থাকবো, তোমার স্বপ্ন অার তোমার রেখে যাওয়া স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকবো, তুমি অাজ অামার সঙ্গে নেই,, তবে তোমার স্বপ্ন অার তোমার রেখে যাওয়া স্মৃতি গুলো এখন অামার সঙ্গী,

"হবু বউয়ের ইচ্ছে"

অটোবাইক স্টান্ডের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। একটা অটোতে দেখি একটা মেয়ে বসে আছে, কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়তো অটোটা ছাড়বে। ব্যাপারটাকে তেমন একটা আমলে না নিয়ে হেটেই চলেছি। কিন্তু কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে থমকে গেলাম। মনে হচ্ছিলো মূল্যবান কিছু একটা পিছনে ফেলে যাচ্ছি। উলটো হাটা দিয়ে মেয়েটার সামনাসামনি আবার আসলাম।
.
সামনাসামনি আসতেই চোখে চোখ পড়ে গেলো। অদ্ভুত সুন্দর মেয়েটা। গাঢ় কালো রঙের অক্ষিগোলক দুটো অন্যরকম এক উন্মাদনায় আমায় মাতিয়ে তুললো। কালো রঙ্গের শীতের কোর্টটাতে একটু বেশিই সুন্দর লাগছিলো মেয়েটাকে।
.
মেয়েটা জিজ্ঞাসু আর বিরক্তি চোখে কিছুক্ষন তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো। আমি আর দেরি না করে অটোওয়ালাকে 'মামা চলেন' বলে মেয়েটার পাশে বসে পড়লাম। অটোওয়ালা বলে উঠলো- 'কই যাবেন'? 'আপনি যতদূর যাবেন ততদূর যাবো,চলেন' এই বলে একটা হিরো হিরো ভাব নিয়ে মেয়েটার পাশের আসনটা খুব ভালভাবে দখল করলাম।
.
আমার মিশন শুধু মেয়েটার সাথে একটু কথা বলা, পরিচয় হওয়া এই আরকি। অটোবাইক চলতে শুরু করলো এমন সময় নাম না জানা মেয়েটার জবান খুললো। গোলাপ পাপড়ি ঠোটে বলে উঠলো - 'মামা থামেন আমি যাবোনা।'
.
অটোবাইক থামলো আর ছোটখাটো একটা বাজ পড়লো আমার মাথায়। স্বল্পদৈর্ঘ্য স্বপ্ন আমার নিমিষেই ভেঙ্গে গেলো।
.
মেয়েটা আবার বলে উঠলো- 'মামা আমি একাই যাবো, অন্য কোনও প্যাসেঞ্জারের সাথে আমি যেতে পারবনা, আর এই ছেলেটার তো হাব ভাবও ভাল না।'
.
আমি উপস্থিত ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা হয়ে গেলাম। পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দিবো বুঝতেই পারছিনা। অটো থেকে আমি নেমে গেলে তো আমি হেরে যাবো আর আমিতো হারার পাত্র নই। সাহস করে বলেই ফেললাম- 'পৃথিবীর কোনো শক্তি আমায় অটো থেকে নামাতে পারবেনা, আর মামা আপনি চলেন তো আমি ম্যানেজ করছি ব্যাপারটা।'
.
মেয়েটা বিরক্তি নিয়ে কি যেনো ভাবলো তারপর বললো,
-'তবে আপনি ওইদিকে মুখ ঘুরিয়ে থাকবেন, আমার দিকে তাকাতে পারবেন না, বিষয়টা আমার খুব অস্বস্তিকর লাগছে।'
- 'সমস্যা নেই মিস অথৈ, আমি এদিকে ঘুরে যেতেও রাজি আছি।'
.
আসল ঘটনাটা ঘটবে এখন তা আমি ভাল করেই জানি। তাই সুন্দরী বালিকার দিকে না তাকিয়ে সুন্দর প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে রইলাম।
.
- 'আপনি আমার নাম জানলেন কি করে?'
.
আমি জবাব না দিয়ে চুপ করেই রইলাম।
.
- 'আপনি কি আমাকে চেনেন?'
.
আমি আবার কোনও জবাব না দিয়ে চুপ করে রইলাম।
.
- 'আচ্ছা আপনি এদিকে ঘুরতে পারেন কোনো সমস্যা নেই কিন্তু আপনি আমার নাম কিভাবে জানেন সেটা বলুন।'
.
ঘুরে বসলাম। অথৈ এর উৎসুক চোখে তাকিয়ে বলা শুরু করলাম- 'তোমার বিয়ের কথা বার্তা চলছে 'আমু' নামের এক ছেলের সাথে, কথাটা কি আমি ভুল বলেছি?'
- 'নাহ! ভুল বলেননি, কিন্তু আপনি কিভাবে জানলেন এসব?'
- 'ছেলেটির ছবি তুমি দেখোনি?'
- 'নাহ দেখিনি, রাগ করেই দেখিনি।'
- 'কেনো দেখোনি জানতে পারি?'
- 'কেননা এখন আমার বিয়ে করতে কোনরকম ইচ্ছে নেই।'
- 'বিয়েতো একদিন করতেই হবে তো এখন করলে সমস্যা কি শুনি?'
- 'সেই কৈফিয়ত কি আপনাকে দিতে হবে মিঃ আমু?'
- 'আজব তো! তুমি আমায় চিনলে কিভাবে!'
- 'অনুমান করে।'
- 'অনুমান তো ভুলও হতে পারতো? '
- 'আমার অনুমান কখনও যে ভুল হয়না!'
.
পরিস্থিতি এখন পুরোটাই নিয়ন্ত্রণে। হবু বউয়ের সাথে কথা বলতে খুব ভালই লাগছিলো। কিন্তু আমি হবু বউ বললে কি হবে সে তো বিয়ে করতেই রাজি না। কারণ জিজ্ঞাসা করাতে সে বললো যে সে কিনা এরেঞ্জ ম্যারেজ কোনোদিনও করবেনা তার অনেক ইচ্ছে যে প্রেম করে বিয়ে করবে।
.
খুব হাসি পাচ্ছিলো অথৈ এর কথা শুনে। তবে সে আমায় একটা অফার দিয়ে বসলো যে, যদি আমি বিয়ের আগে তিনমাস প্রেম করতে রাজি হই তাহলে সেও আমাকে বিয়ে করতে রাজি।
.
প্রেম করে বিয়ে করার আমারও কম ইচ্ছে ছিলোনা। অথৈ আমার ইচ্ছে পূরন করে দিলো। দুজনের ইচ্ছে না হয় একসাথেই পুরন হবে। খুশি মনে বিয়ের ডেট তিনমাস পিছিয়ে নিলাম, হবু বউয়ের ইচ্ছে বলে কথা

শুক্রবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৫

অভিমানী ভালোবাসা

<<<অভিমানী ভালোবাসা
বিয়ের অনুষ্ঠানে এক একা বসে আছে লিমা। প্রচন্ড বিরক্ত
হচ্ছে সে। বিরক্ত লাগছে তার অনেক বেশি। আগেই
জানতো এখানে এসে একা থাকতে হবে, তাই আসতেই
চায়নি সে। কিন্তু মায়ের পিড়াপীড়িতে আসতে বাধ্য হয়েছে।
কোন কাজ না পেয়ে ফেসবুকে লগইন করলো। করেই
দেখে অনলাইনে রাকিব, লিমার বয়ফ্রেন্ড !
- কি করো, জান ? ( লিমাকে অনলাইনে দেখামাত্রই রাকিবের
মেসেজ )
- কিছু না। মেজাজ খারাপ এখন।
- হইছে টা কি ?
- কথা বলবা না।
- ওকে।
- ওকে মানে কি ?
- তুমিই তো বললা কথা বলতে না।
- তাই বলে আমার সাথে কথা বলবা না ?
- আরেহ আশ্চর্য তুমিই তো বললা !
- ও বুঝছি তুমি তো এখন মেয়েদের সাথে চ্যাটিং-এ ব্যস্ত।
করো করো যত ইচ্ছা চ্যাট করো।
- আজব তো। হু করতেছি আমি চ্যাট। তোমার কি তাতে ?
- কি ??????????
- জানো আমি এখন ১০ জন মেয়ের সাথে চ্যাট করতেছি !
প্রচন্ড রাগে ফেসবুক থেকে বের হয়ে যায় লিমা !
ইচ্ছা করেই রাকিব কাজটা করে। লিমাকে রাগিয়ে দেয় সে। আর লিমাও একটু আহ্লাদী মেয়ে, মন মত কিছু না হলেও হয়েছে, প্রচন্ড রেগে যায় সে। বরাবরের মতই এখন
রাগে ফুঁসছে সে। ফর্সা, গোলগাল চেহারাটা রক্ত বর্ণ ধারণ
করেছে। একটু পরেই আবার ফেসবুকে গেলো।
গিয়ে নিজের আইডি থেকে লগআউট করে রাকিবের
আইডিতে গেলো।
গিয়ে দেখে কিসের কি ! সে বাদে সর্বশেষ
মেসেজিং করেছে তার বন্ধুদের সাথে। কোন মেয়ের
সাথেই তার চ্যাটিং হয়নি। তারমানে মিথ্যা বলেছে সে !
আরেকদফা রেগে গেলো লিমা।
আবার নিজের আইডিতে গিয়ে রাকিবকে মেসেজ দিলো, "
আমার সাথে মিথ্যা কথা বললা কেন ? "
- তারমানে তুমি আমার আইডিতে লগইন করেছিলে ? ছি ছি !
না বলে অন্যের আইডিতে যাও, লজ্জা নাই তোমার ?
- কি ????????????
- এত কি কি করো কেন ?
- তোমার সাথে কথা নাই।
- আরেহ আজব !
রিপ্লাই দেয় না লিমা। রেগে মেগে ফেসবুক থেকে বের
হয়ে গেছে সে। একটু পরে আবার লগইন
করে দেখে একটা লাভ স্টোরি দিয়েছে রাকিব, নায়ক
যথারীতি আর্মি অফিসার !
- আচ্ছা তুমি এত আর্মি আর্মি করো কেন গল্পে ?
- এনি প্রব্লেম ?
- মানে কি ?
- মানে হচ্ছে আমার গল্পের প্লটের
সাথে আর্মি অফিসারেরা বেশি খাপ খায়, তাই ওভাবে দেই।
আমি ওভাবে কল্পনা করে লিখতে পছন্দ করি।
- না তুমি এভাবে বলো নাই !
- মানে ?
- তুমি প্রথমে অন্যভাবে বলেছ।
- আরেহ আজব।
- কি আজব ?
- তুমি ! নারায়ণগঞ্জের মেয়ে তো, একটু
বেশি সন্দেহপ্রবণ ! সবসময় একটু বেশি বুঝে !
- তোমার সাথে কথা নাই।
- উফফ !! কিছু হইলেই খালি কথা নাই, কথা নাই বলে গান শুরু
করে দিবে মেয়েটা !
- তুমি মুড়ি খাও।
- তুমি বিয়েতে গেছো না ?
- হুম।
- তাইলে তুমি ভালো করে মোরগ-পোলাও খাও !
তাইলে যদি মাথায় একটু বুদ্ধি হয় !
মেসেজ দেখে আবার রেগে গেলো লিমা। এবার আর
কথাই নাই। সোজা আইডি ডি-অ্যাক্টিভ করে বের
হয়ে গেলো।
পরদিন বিকালে পার্কে বসে আছে রাকিব।
গতরাতে লিমাকে প্রচন্ড রাগিয়ে দিয়েছে সে !
যে কারণে মেয়েটা প্রথম প্রথম তার ফোনও ধরনি।
মোবাইলের মেসেজে অনবরত সরি বলার বলার পরে একবার
ফোন ধরেছিল। ফোনেও অনেকবার সরি বলেছে,
লিমা কোন কথা বলেনি। তাই
তাকে বিকালে এখানে আসতে বলেছে। যতই কথা না বলুক রাকিব
জানে লিমা না এসে পারবে না।
যথা সময়েই লিমা এসে হাজির। রাকিবকে দেখেই, " তোমার
সাথে কোন কথা নাই। "
মুচকি হাসে রাকিব। রাগলে লিমাকে দেখতে বেশি সুন্দর লাগে।
তাই ইচ্ছা করেই সে তাকে রাগায়। আর সে ভালো করেই
জানে লিমার রাগ কি করে ভাঙ্গাতে হয় !
পকেট থেকে কিটক্যাটের একটা বড় প্যাকেট বের
করে বললো, " ভেবেছিলাম তোমাকে দিবো কিন্তু এখন
এটা দেওয়ার জন্য মনে হয় অন্য একজন
মেয়ে খুঁজতে হবে ! "
" কি ? " চোখে পাকিয়ে বলে লিমা। " এটা আমার জন্য আনোনি ?
"
- এনেছিলাম তোমার জন্যই। কিন্তু তুমি তো নিতে চাও না ...
- ফাজিল।
আর রাগ ধরে রাখতে পারলো না লিমা।
হেসে ফেললো সে। তার মধ্যে এখনো বাচ্চাদের মত
চকলেটপ্রীতি কাজ করে। আর সেটা জানে রাকিব। লিমার রাগ
ভাঙ্গাতে সে তাই চকলেটের ব্যবহারই করে ! এভাবেই
তাদের খুনসুটির সমাপ্তি ঘটে যেটা গত দুই বছর ধরে প্রতিনিয়ত
চলে আসছে !
পার্কে বসে রাকিবের কাঁধে মাথা রেখে চকলেট খাচ্ছে লিমা !
আর দুজনে নীরবে উপভোগ করছে পড়ন্ত বিকেলের
আশ্চর্য সুন্দর, মায়াবী পরিবেশটা !
দুজন প্রেমিক-প্রেমিকার এ দৃশ্যটা আশ্চর্য সুন্দর, সমস্ত
সৌন্দর্যকে যেন হার মানিয়ে যায় ! অসাধারণ সুন্দর আর
মায়াবী পড়ন্ত বিকেলও এ দৃশ্য দেখে যেন হিংসায় মরে যায় !

রবিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৫

তুমি দেখতে সুন্দর বলে,
অন্যকে ঘৃনা করোনা।
কারন, তুমি যার হাতে সৃষ্টি,
সে তার হাতে সৃষ্টি ।
কখনো নিজের সৌন্দর্য নিয়ে
অহংকার করোনা.....

শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৫

*** কিশোর প্রেম ***


.

আমাদের স্কুলের দশম শ্রেণিতে পড়া এক ছেলে কিশোর প্রেমের ডাকে সারা দিয়ে এক মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। ঘটনাবশত মেয়েটি ছিল পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার ভাতিজি। ছেলে এবং মেয়ে পালিয়ে গিয়ে আবেগের তাড়ানায় বিয়েও করে ফেলে। একসময় তাদের খোঁজাখুঁজি শুরু হয় এবং তারা ধরাও পড়ে যায়। পুলিশের ভাতিজি বলে কথা। ছেলেটাকে ধরে এনে দেয়া হলো উদুম মাইর। পুলিশের হাতে ধরা খাওয়া মানে.....।
ছেলেটাকে ৭ দিনের রিমান্ড দেয়া হলো অস্ত্রের কথা বলে। ছেলের বাবা কেউ পিটানো হলো। .
.
.
এইগুলা আমার চোখের সামনে ঘটে যাওয়া কাহিনী। কাহিনী বললে ভুল হবে, এই গুলা বাস্তব ঘটনা। আমার কথা হল এইখানে কি ছেলেটার একার দোষ ছিল নাকি মেয়ে টাও সমান ভাবে দোষী?? একটা কথা মনে রাখবেন এক হাতে কখনো তালি বআমার কথা হলো একটা দশ্ম শ্রেনিতে পড়া ছেলে - মেয়ের একজন আরেক জনকে ভালো লাগতেই পারে। তাই বলে পালিয়ে যেতে হবে কেন?? পালিয়ে গেল ছেলে - মেয়ে কিন্তু ছেলের সাথে তার বাবা কেউ কেন মার খেতে হল,, কেনই বা এত অপদস্থ হতে হলো।
কিশোর প্রেম যার কোনো ভবিষ্যৎ নেই। সেটাতে কেন এত বেশি বর্তমান ছেলেরা - মেয়েরা ঝুকে পড়ছে। এর প্রধান কারন হলো আমাদের মিডিয়া এবং চ্যানেল গুলা। তারা প্রতিনিয়ত প্রচার করে যাচ্ছে নানা রোমান্টিক কাহিনী। যেগুলা দেখে কিশোরদের মনে হয়,, ইসস যদি আমারও একটা গার্লফ্রেন্ড থাকত। টিভিতে কোনো প্রকার শিক্ষামুল্ক জিনিস নাই বললেই চলে,, যা আছে তা অতি অল্প।.......
.
.
" কিশোর প্রেম যে কোনো প্রকার বোমা অপেক্ষা মারাত্মক। এটি নিমিষে একটি প্রজন্ম কে ধংসস করে দিয়ে পারে । প্রেম করো কিন্তু কমপক্ষে স্কুল টা পাশ করো।....
.
.
নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলো,,তোমাকে মেয়েদের পিছনে ছুটে যেতে হবে না।। তোমাকে পাত্রী ও দেখতে হবে না।। বস্তা বস্তা প্রস্তাব আসবে তোমার। তুমি দেখিয়ে দাও তোমার ভিতরেও শক্তি আছে। তোমার ও মনোবল আছে। এসব না দেখে মরতে চাইলে,,, কর কিশোর প্রেম। পালিয়ে যাও কোনো মেয়েকে নিয়ে। লাঞ্চিত কর তোমার পিতা মাতা কে। তাদের বুঝিয়ে দাও তোমার মত ছেলে / মেয়ে কে জন্ম দিয়ে তারা ভুল করেছেন।
.
.
তোমার জীবন তোমার সিদ্ধান্ত। কিন্তু একবার হলেও ভেবে দেখো তোমার পিতা মাতার কথা,,যাদের ইচ্ছা ছিল তাদের সন্তানেরা বিশ্বজোড়া নাম তৈরি করবে। তাদের মনে কস্ট দিয়ে কিভাবে তুমি জিবনে উন্নতি করতে চাও।
.
.
লজ্জা তুমি আজ জাতির থেকে হারিয়ে গেছো।
মমতা তুমি আজ বড় একা হয়ে গেছো।
সার্থ আজ তুমি আমার বড় আপন।
প্রেম আজ তুমি অনেক ক্ষুদ্র হয়ে গেছো।
ক্রোধ আজ তোমার পরিধি অনেক বিশাল।
.
শিক্ষামুলক গল্প আজ তা যোগ্যতা হারিয়েছে ।
*এ কেমন কথা??
চারিদিকে আজ শুধু রোমান্টিকতা আর রোমান্টিকতা

স্বপ্নের ক্যানভাস

কাব্যঃ কিরে দোস্ত কেমন আছিস?
--- নীলঃ আরে আর বলিসনা, স্বপ্ন আমার যা হাল করেছে উফ...
--- কাব্যঃ কেন কি করেছে?
--- নীলঃ কি আর করেছে আমায় দেখেও বুঝতে পারছিসনা?
--- কাব্যঃ হুম একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়েছি তকে দেখে। আচ্ছা তুই আর হিমুর মতন I mean হিমুকে অনুকরণ করিসনা!!!
--- নীলঃ না বেটা ম্যাডামের নির্দেশ খালি পায়ে হলুদ পাঞ্জাবী পড়ে আর মুখে পাণ গুঁজে উদ্ভট পাগলাদের মতন ঘুরাঘুরি করা যাবেনা।
--- কাব্যঃ বাহ বেশ ভালই পরিবর্তন করেছিস নিজের। এবারে তাহলে রোমাঞ্চিত নীল তাও আবার নীল স্বপ্ন। বাহ বাহ চালিয়ে যা চালিয়ে যা। সালার আমি একটা পাইলে সারাজীবন বসে বসে খেতাম।
--- নীলঃ হুম এবারে তাইলে কাউকে বেছে নে। ভালোবাসাযুক্ত জীবনভর কাটা। দোআ করিস। আর বসে বসে খাবি মানে?
--- কাব্যঃ ওইতো আমার ভালোবাসার চাঁদমুখখানা দেখে বসেই পার করে দিতাম জীবনটা।
--- নীলঃ সালা ঝাটার বারি খাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসছেরে দোস্ত সময় হলে জানাস কেমন খেতে। আসি...
--- কাব্যঃ তুই সালা সবসময় এমন করিস। আমি যখনি কিছু করে উঠবো ভাবি ঠিক তখনি তুই আমার মণ ভেঙ্গে দিস। তর নামে মণ ভাঙ্গনের মামলা করবো।
--- নীলঃ ধ্যাত তর ভাষণ থামা। গেলাম।
--- কাব্যঃ যা তর লগে আর কথাই কমুনা।
--- নীলঃ হিঁ,,,,,,হিঁ,,,,,,হিঁ,,,,,,
--- কাব্যঃ আবার বলদের মতো হাঁসে। যা ভাগ।
--- নীলঃ ওওওওকেএএএ গেলামরে দোস্ত...
..
নীল আর কাব্য দুইজন খুব ভালো বন্ধু একেবারে ছেলেবেলা থেকেই। তারা দুজনে হিমুর বই পড়তে পড়তে হিমুকে অনুকরণ করা শুরু করে। আর স্বপ্ন হলো নীলের বেস্ট ফ্রেন্ড। নীল অনেক ভালোবাসে স্বপ্নকে।
..
--- স্বপ্নঃ হ্যালো ভাইয়া আমাকে আপনার সাইকেলে একটু লিফট দিবেন?
--- নীলঃ আরে না না। গ্রামের মানুষ দেখলে কি বলবে!!
--- স্বপ্নঃ প্লীজ আমার পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে। আর কেউ কিছু বলবেনা।
--- নীলঃ এ হয়না। একজন মেয়ে আরেকজন ছেলে তাও আবার সাইকেলে লিফট!! আমি কারোর হাঁসির পাত্র হতে চাইনা।
--- স্বপ্নঃ দেখুন এমন কথা বলছেননা যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে পারেননা।
--- নীলঃ আচ্ছা আচ্ছা উঠুন। মেপে দুই হাত দূরে বসবেন।
--- স্বপ্নঃ আপনার সাইকেলে আছে কতটুকু জায়গা?? গর্দভ একটা।
--- নীলঃ ওই হলো আরকি। যা বললাম তা মেনে বসবেন।
--- স্বপ্নঃ ওকে চলুন।
..
তারপর স্বপ্ন নীলের সাইকেল থেকে নেমে তড়িঘড়ি করে কলেজে চলে গেলো। কেননা স্বপ্নের পরীক্ষা শুরু হয়ে যাওয়ার আর ৫ মিনিট বাকি ছিলো। নীলও কিছু বলেনি। নীল বুঝেছিল মেয়েটার সত্যি আর সময় নেই। তবে স্বপ্ন চলে যাওয়ার পর নীল উপলব্ধি করতে পারলো মেয়েটাকে সে প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলেছে। বিভিন্ন ছাইপাঁশ মনের মাঝে অংকন করতে করতে কলেজ ছাড়লো।
নীল বাসায় গিয়ে ভাবছে আচ্ছা ওর সাথে কি আবার দেখা হবে, দেখা হলেই বা কি বলবো!! না না আমিতো হিমু প্রায়। হিমুদের এমন আশা নেই। আমি আর ওকে নিয়ে ভাববো না। যেই ভাবা সেই কাজ হতচ্ছাড়া নীল এক নিমিষেই ভুলে গেলো।
এদিকে স্বপ্ন বাসায় ফিরে এসে ছেলেটার কথা মনে করলো আর মনে মনে বিড়বিড় করতে লাগলো। ইস আমি অনেকটা স্বার্থপর... কালকেই ছেলেটার সাথে দেখা করে ধন্যবাদ জানাতে হবে। এইসব বলে স্বপ্ন রাতে ঘুমিয়ে পড়লো। সকাল হলো আর তৎক্ষণাত কিছু খেয়ে বেড়িয়ে পরলো গতদিনের রাস্তা ধরে। নীল বসে আছে তার প্রিয় হলুদ পাঞ্জাবী পড়ে আর মুখে পাণ গুঁজে হিজল গাছটির নিচে। স্বপ্ন দেখতে পেয়ে, ডাকলো...
..
--- স্বপ্নঃ এইযে মিঃ কাল আমাকে ধন্যবাদ না দিয়ে চলে এলেন কেন?
..
নীল নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলো আর বেমালুম ভুলে গেলো গতকাল রাতের কথা যে নীল আর ওই মেয়ের কথা স্মরণ করবেনা কিন্তু এবার আর কথা না বলে থাকতে পারলনা। কেননা মেয়েটা দোষ করে তার উপড়ে চাপাচ্ছে।
..
--- নীলঃ ওই কি বলছেন!! আপনার মতো এমন মেয়ে আর একটাও দেখিনি।
--- স্বপ্নঃ ওমা আপনি কি খালি মেয়ে দেখে বেড়ান নাকি? অবশ্য যা দেখতে দেখাচ্ছে আপনাকে।
--- নীলঃ আপনি এমন কেন? আল্লাহ কি ঘারের তার টেরা করে দিছে? ঠিকঠাক মতো কথা বলতে পারেননা।
--- স্বপ্নঃ না পারিনা। একটা কথা বলি?
--- নীলঃ আলাদা করে আরো কিছু বলার ফন্দি আছে নাকি?
--- স্বপ্নঃ যা সত্যি তাই বলছি। আপনাকে দেখতে না আমার মরহুম চাচার মতো লাগছে।
--- নীলঃ মানে?
--- স্বপ্নঃ এইযে খালি পায়ে, গায়ে হলুদ পাঞ্জাবী পড়ে তাও আবার পাণ মুখে। ছিঃ ছিঃ... জানেন কতটা বাজে দেখাচ্ছে আপনাকে?
--- নীলঃ তাআআ,,,তেএএ আপনার কি!! আমার এভাবে ভালো লাগে। আর আপনি বেশিয়ে করছেন কিন্তু।
--- স্বপ্নঃ আরে আরে এভাবে তু তু তুতলাচ্ছেন কেন? মুখ দেখো হিঁ,,,হিঁ,,,হিঁ একেবারে জুকার।
--- নীলঃ আপনার সঙ্গে আর কোন কথা নাই। ফালতু বজ্জাত মেয়ে।
--- স্বপ্নঃ যান যান,,,, আর শুনুন কালকে আমায় আপনার সাইকেলে লিফট দেয়ার জন্যে ধন্যবাদ।
--- নীলঃ ধুর....
--- স্বপ্নঃ হিঁ,,,হিঁ,,,হিঁ,,,
..
সেদিনের পর থেকে নীল সেই যে মেয়েটার সাথে রাগ করেছে দীর্ঘ দেড় মাস তার রাগ একটুও কমানোর চেষ্টা করেনি। আমাকে কিনা তার মরহুম চাচার মতো