বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৭

"শেষ বিকালের মেয়ে"

পার্কে বন্ধুরা মিলে আড্ডা দেয়া আমাদের প্রতিদিনের রুটিন। সাথে চা সিগারেট তো আছেই। যদিও পার্কের প্রবেশের পূর্বে লেখা আছে "সিগারেট খাওয়া নিষেধ"।
শহরে এটি মনে হয় একমাত্র পার্ক যেখানে কোন প্রবেশ ফ্রি দিতে হয়না। আর আমরাও এই পার্কের নাম দিই "গরীবের পার্ক"। আমার মতো বেকার যুবকের ব্যস্ত শহরে একটু নিশ্বাস নেয়ার জন্য এই গরীবের পার্কই যথেষ্ট।
বিকেলে পার্কের প্রতিটি বেঞ্জিতে জোড়া জোড়া শালিক পাখি বসে। এ যেনো ফ্রিতে প্রেম করার সূবর্ন্য সুযোগ। তাদের দেখলে মাঝে মাঝে হিংসে হয়। সবাই জোড়া জোড়া আর আমি আজ পর্যন্ত নিজের জোড়া ঠিক করতে পারলাম না। যদিও এ নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। কারন আমার মতো শিক্ষিত বেকারের কপালে কোন মেয়ে জুটবে এটা স্বপ্নেও কল্পনা করা যায় না।।
প্রতিদিনের মতো আজকেও শেষ বিকেলে বন্ধুরা আড্ডা দিতে আসা।
হঠাৎ আমার চোখ আটকে গেলো পার্কের কোণে বসে থাকা মেয়েটির দিকে। যদিও এখানে জোড়া ছাড়া কোন মেয়ে আসে না। আর সিঙ্গেল কোন মেয়ে আসা মানে "গোবরে পদ্মফুল" মনে করা। তবে মেয়েটিকে ভীষন উদাসী মনে হচ্ছে। বারবার চারদিকে তাকাচ্ছে। মনে হচ্ছে কি যেনো হারিয়ে ফেলেছে মেয়েটি।
আমি বোকার মতো মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছি। প্রথম দেখায় ভালো লাগা যাকে বলে।
বিকেলের সূর্যের লালছে আভা মেয়েটির মুখে এসে পড়ে। শ্যামল বরণ মেয়েটিকে আরো মায়াবতী লাগছে এখন। সে যেনো এক ভিন্নগ্রহ থেকে আসা অপ্সরী। তার চোখের নেশা যে কোন ছেলের ঘুম কেঁড়ে নেবে মনে হয়।
এই ভাবনা গুলো একান্ত আমার। এই মুহূর্তে আমার চোখে মেয়েটি অপ্সরী। আমার চোখে সেরা সুন্দরী সেই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা মেয়েটি। যতই দেখছি ততই অবাক হচ্ছি।
সৃষ্টির সেরা আকর্ষন এই নারী। এই নারীকে নিয়ে কত কবিতা, কতো গল্প আর কতো স্বপ্ন। অবশ্য আমি যদি কবি হতাম তবে এই মেয়েটিকে নিয়েই একটি কবিতা লেখতাম। কবিতার নাম হতো "শ্যামলতা"। কিন্তু আফসোস, কবিতা লেখার মতো ছন্দ আমার জানা নেই।
হঠাৎ সিফাত আমার দিকে তাকিয়ে_কিরে মাম্মা!! মেয়েটির দিকে হা করে তাকিয়ে আসিস। কাহিনি কি?!
সিফাতের কথায় ভাবনার জগত ছেড়ে বাস্তবে আসলাম। শালা কথা বলার আর সময় পেলো না। ফিলিংসটাই নষ্ট করে দিলো।
আমি অনেকটা আবেগ নিয়ে সিফাতকে উদ্দেশ্য করে _মাম্মা, মেয়েটাকে দেখ। অনেকটা ডানা কাটা পরীর মতো, তাই না?! কিন্তু মনে হচ্ছে কোন সমস্যায় পড়ছে।
সিফাত কিছুটা বিরক্তি নিয়ে_আরে দূর, বয়ফ্রেন্ডের জন্য অপেক্ষা করতেছে। পার্কে মেয়েরা কেন আসে তা বুজস না?!
আমি নিজের উপর আস্তা রেখে সিফাতকে_আরে নাহ, অনেকক্ষন ধরে লক্ষ্য করলাম। কি যেনো খুঁজতেছে। গিয়ে জিজ্ঞেস করবো?!
সিফাত_তোর দরকার হলে তুই গিয়ে জিজ্ঞেস কর। আমাদের এতো ইচ্ছে নেই আগ বাড়িয়ে কথা বলার। আগ বাড়িয়ে কথা বলতে গেলে উল্টা অপমানি হতে হবে।
সিফাতের কথায় অনেকটা আশাহত হয়ে বসে রইলাম। মনের তীব্র ইচ্ছে মেয়েটির সাথে কথা বলার। কিন্তু একা গিয়ে কথা বলবো ঐ সাহস এখনো হয়নি।
যদি ঐ সাহস থাকতো তাহলে হয়তো আরো দুই বছর আগেই একটা কিছু হয়ে যেতো। দুই বছর আগের কথা।
"শেষ বিকেলে সাগর পাড়ে দাঁড়িয়ে মুক্ত অক্সিজেন গ্রহন করছি। আর চোখ বন্ধ করে নিজেকে সাগরের বিশালতার মাঝে উজার করে দিচ্ছি। এমন সময় পাশে কেউ একজনের উপস্থিতি টের পেলাম। সেদিন অবশ্য বন্ধুদের কাউকে না জানিয়ে একাই ঘুরতে গেছিলাম।
পাশে ফিরে তাকিয়ে দেখি একটি মেয়ে আমার মতোই দাঁড়িয়ে আছে চোখ বন্ধ করে। মেয়েটির চোখ বন্ধ করে আছে দেখেই মেজাজ গরম হয়ে গেলো। আমাকে ব্যঙ্গ করতেছে সাহস কতো।
অনেকক্ষন মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছি। কিন্তু মেয়েটি তাকিয়ে আছে সাগরের বিশালতার দিকে। কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকার পর আমার রাগটা এমনিতেই কমে গেলো। সত্যি বলতে কি, সুন্দরীদের সাথে রাগ করে থাকতে কম পুরুষই পারে। আর আমি ঐ কম পুরুষের মাঝে পড়িনা।
মেয়েটা সাগরের প্রান থেকে চোখ ফিরিয়ে আমার দিকে তাকালো। আর আমি সাথে সাথে অন্যদিকে তাকানোর ভঙ্গিমা করি। মেয়েটা হয়তো বুজতে পারলো। মেয়েটা আমাকে উদ্দেশ্য করে
_ভাইয়া, একটা কথা জানতে চাচ্ছি। বলবেন প্লিজ?!
আমি অপ্রস্তুত ভাবে_জ্বি বলুন, কি জানতে চাচ্ছেন!!
_আমি দূর থেকে দেখলাম। আপনি অনেকক্ষন চোখ বন্ধ করে সাগরের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে চিলেন!! কেনো জানতে পারি?!
আমি_আপনিও তো একটু আগে এমন করে সাগরের দিলে তাকিয়ে ছিলেন!!
_আসলে আমি এমনিতেই এমনটা করলাম। বুজতে চেষ্টা করলান কেনো আপনি এমন করছেন। কিন্তু কিছুই বুজলাম না!!
আমি মেয়েটার পাগলামু মার্কা কথা শুনে না হেসে পারলাম না। মেয়েটির সামনেই হেসে দিলাম। মেয়েটিও আমার হাসি দেখে হেসে দেয়। এটা কি ফরমালিটি ম্যান্টেইন করলো নাকি বুজলাম না।
জগতের কিছু মানুষ আছে অন্যকে কপি করে চলতে পছন্দ করে। যেমন, আমি হাসলাম পাশের জন হাসির কারন না জেনেও আমার সাথে হাসবে। আসলে মানুষ হাসতে চায় কিন্তু হাসির কারন খুঁজে পায়না অনেকে। তাই অন্যের আনন্দ দেখে নিজের আনন্দটা খুঁজে নেয়ার চেষ্টা করে।
তবে কান্নার ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে। ধরুন, আমি রাস্তার ধারে বসে কাঁদতেছি। অনেকে দেখেও না দেখার ভ্যান করে চলে যাবে। আর কেউ কেউ আছে এসে আগে জানতেই চাইবে কান্নার কারটা কি। কারনটা যদি মারাত্মক কিছু হয় তাহলে হয়তো কেউ শান্তনা দিবে। আর নয়তো মনটা খারাপ করে চলে যাবে।
যাই হোক,
মেয়েটির প্রশ্নের জবাবটা কিভাবে দিবো বুজতে পারছি না। তাই কথা না বাড়িয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়াটাই মনে হয় ভালো হবে।
যেই অন্যদিকে চলে যাবো মেয়েটি আবার আমাকে উদ্দেশ্য করে_ভাইয়া, চলে যাচ্ছেন?! বললেন না তো কেনো?!
আমি কিছুটা বিভ্রান্ত বোধ করে_কিছু না এমনিতেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। মুক্ত অক্সিজেন গ্রহন করার জন্য।
মেয়েটি মনে হয় বুজতে পারলো আমি তার প্রশ্নে বিরক্ত বোধ করছি। সত্যি বলতে কি, বিরক্তবোধ করার প্রধান কারন হলো "ভাইয়া" বলে ডাকা। এতো সুন্দর একজন রমনীর মুখে ভাইয়া ডাকটা শুনতে ইচ্ছে করছে না। অবশ্য প্রথম পরিচয়ে ভাইয়া বলাটা স্বাভাবিক। আংকেল খালু চাচা তো আর ডাকেনি। তবুও কেনো যেনো ভাইয়া শব্দটা সহ্য হচ্ছে না এখন।
মেয়েটি আর কোন কথা না বলেই চলে যাচ্ছে। খুব ইচ্ছে করছিলো মেয়েটিকে ডেকে কথা বলি। কিন্তু সাহস হচ্ছিলোনা বা ইগো প্রবলেমের কারনে আর ডাকা হলো না মেয়েটিকে। এক সময় মেয়েটি হারিয়ে গেলো দৃষ্টি সীমানার বাহিরে।
মানুষ মায়ায় আবব্ধ হতে চায় বার বার। চলার পথে সঙ্গী খুঁজে বেড়ায় প্রতিনিয়ত। কেউ পায়, কেউ পেয়েও হারায়। আমি হয়তো পেয়েও হারালাম। আমার একটা মারাত্মক সমস্যা কারো সাথে আগবাড়িয়ে কথা বলার প্রবনতা কম।
তবে প্রথম দেখায় বা প্রথম কথায় কাউকে নিয়ে এতোটা আর ভাবা হয়নি। ক্ষনিকের মায়ায় আবন্ধ হয়ে গিয়েছি হয়তো। কিন্তু যখন বুজতে পারলাম মায়ায় জড়িয়ে গেছি তখন দৃষ্টির বাহিরে চলে গেলো।
আচ্ছা,
প্রথম দেখায় বা সামান্য কিছু কথায় কি মানুষ প্রেমে পড়তে পারে?! হয়তো পারে!! তা না হলে সামান্য একটু দেখা আর কথায় মেয়েটির প্রতি আলাদা একটা অনুভূতি আসলো কেনো!! মনে হচ্ছে মেয়েটির ছবি মনের ক্যানভাসে বারবার দোলা দিচ্ছে!!
হুমায়ূন আহম্মেদ স্যারের "হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম" উপন্যাসটির কথা মনে পড়ে গেলো।
প্রতিটি ছেলে মেয়ের হাতে নাকি পাঁচটি করে নীলপদ্ম থাকে। যাকে প্রথম ভালোবাসে সেই নীলপদ্ম গুলো নাকি তাকেই দেয়া হয়ে যায়। তাহলে কি আমার নীলপদ্ম গুলো মেয়েটিকে দিয়ে দিলাম?! বা মেয়েটি কি আমাকে তার নীলপদ্ম গুলো দিয়েছে?! নাকি দিতে চেয়েও আর দেয়নি!?
হঠাৎ 'সময় গেলে সাধন হবে না' গানটার কথা মনে পড়ে গেলো। সত্যি তো আমরা সময়ের কাজ সময়ে করিনা বলেই আমাদের এতো অপূর্ণতা আর হতাশা।
সেদিনের পর থেকে মেয়েটিকে অনেক খুঁজেছি। অনেকবার শেষ বিকেলে সাগর পাড়ে গিয়ে সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু আর খুঁজে পাইনি। মেয়েটির নামটাও জানা হয়নি তাই নাম দিয়েছি 'শেষ বিকেলের মেয়ে'!!
শুনেছি প্রকৃতি একটি মানুষের সাথে চারবার দেখা করিয়ে দেয়। যে কোন কাকতালীয় ভাবে। তাহলে কি কোন একদিন আবার দেখা হবে আমার নীলপদ্ম নেয়া মেয়েটির সাথে। হয়তো হবে, হয়তো বা হবে না!!"
আজকের মেয়েটিকে দেখে আমার মনে আবারো তুপান বয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে আমি আবারো ক্ষনিকের মোহে আবদ্ধ হয়ে যাচ্ছি। মেয়েটির সাথে কথা বলার প্রবণতা তীব্র থেকে তীব্র হচ্ছে। আচ্ছা, আমার নীলপদ্ম গুলো তো অনেক আগেই সাগর পাড়ে দেখা মেয়েটিকে দিয়ে দিয়েছি।
তাহলে আজকের এই মেয়েকে দেয়ার জন্য নীলপদ্ম গুলো পেলাম কোথায়?! তাহলে কি ঐ মেয়েটিকে দেয়া হয়নি?! ঐটা কি আবেগ ছিলো?! শুধুই ক্ষনিকের মোহ!?
নাকি এটাও আবেগ আর শুধু ক্ষনিকের ভালোলাগা ছাড়া আর কিছু নই। হয়তো 'হ্যাঁ' হয়তো 'না'। এই 'হ্যাঁ' আর 'না' শব্দ দুটো অনেক ছোট কিন্তু এই শব্দ গুলো একেকটা জীবনের গতিপথ নির্ধারণ করে দেয়া। বলা যায় শব্দ দুটো খুব ডেঞ্জারেস।
মেয়েটি চলে যাচ্ছে তার সাথে আমার কথা বলার তীব্র ইচ্ছে থাকলেও আর সামনে যাওয়ার ইচ্ছে করছে না। কারন আমি এখন মোহ, ভালোলাগা আর ভালোবাসার হিসেব মিলাতে ব্যস্ত।
দ্বিতীয় বারের মতো আবারো পরাজিত হয়েছি হয়তো। হয়তো আরো একটি অপ্রকাশিত ভালোবাসার সূচনা হলো। হয়তো নতুন করে আবার অপেক্ষা করবো মেয়েটির জন্য। হয়তো এই মেয়েটিকে খুঁজে বেড়াবো পাগল প্রায় হয়ে। অজানা এই মেয়েটিরও নাম হবে 'শেষ বিকেলের মেয়ে'!!
এভাবে প্রতিনিয়ত আমি প্রেমে পড়বো। আর একটি একটি করে অপ্রকাশিত ভালোবাসার সূচনা হবে। শেষ বিকেলের রক্তিম সূর্যের আলোয় খুঁজে বেড়াবো "শেষ বিকেলের মেয়ে" গুলোকে।

* পারবোনা আমি ছাড়তে তোমাকে *

হেডিং টা দেখলেই আমাদের মনে প্রেমিকের জন্য প্রেমিকার বা প্রেমিকার জন্য প্রেমিকের এক ডায়লগ এর কথা ভেসে আসে।
নাহ আমি এই কথাটা কে কখনোই প্রেমিক প্রেমিকার ক্ষেত্রে নিচ্ছিনা। আমি তার জন্য প্রযোজ্য মনে করি যিনি এই কথাটার পরিপুর্ণ অধিকারী। তিনি হলেন আমাদের গর্ভধারিণী মা। আমরা কখনোই তাকে ছাড়তে পারবোনা।
গল্প টা মাকে নিয়েই।
-
মুন্নার মোবাইলটা বেজেই যাচ্ছে।
রিসিভ করতে পারছেনা।সে তার মাকে ঔষধ
খাওয়ানোর জন্য মায়ের কাছে
ছিলো। তার পরিবারে সে আর তার মা ছাড়া আর
কেউ নেই। মা বেশ অসুস্থ। চলাফেরা করতে
পারেননা বেশ।
নিজের জীবনে অধিক পরিশ্রম করেছেন।মুন্না কে কষ্ট করে লেখা পড়া করিয়েছেন। মুন্না এই বছর স্টাডি শেষ করে একটা ভালো চাকরি করতেছে।
কলটা দিয়েছিলো ফারিহা।ফারিহা মুন্না কে ভালোবাসে। আর মুন্না ও
ফারিহাকে অনেক ভালোবাসে। সেই কলেজ লাইফ থেকে। ফারিহার আর মাত্র এক বছর বাকি স্টাডি শেষ হওয়ার।
মুন্না ফ্রি হয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে ১২ টা কল। বুজে গেছে ফারিহা
রেগে অলরেডি আগুন হয়ে গেছে।
কিছুটা চিন্তা করে কল ব্যাক করল।
ফারিহাঃহ্যালো........
মুন্নাঃ হ্যালো...সরি।
ফারিহাঃ কে বলতেছেন।
মুন্নাঃ বললামতো সরি।
ফারিহাঃ হুম,কিসের সরি, এতো কল দিলাম একটা ও ধরলেনা।
আর প্রায় ২০ মিনিট পর এখন কল ব্যাক করছো।
মুন্নাঃ এই মাকে নিয়ে বিজি ছিলাম। তাই,,প্লিজ রাগ করেনা রাগকুমারি।
ফারিহাঃ তুমিতো সকল সময়ই বিজি।আমার জন্য কি আর তোমার টাইম আছে। (অভিমানি সুরে)
মুন্নাঃ প্লিজ বোঝার চেষ্টা কর। ওকে কান ধরতেছি নেক্সট টাইম
মোবাইল সাথে রাখবো।
ফারিহাঃ হইছে হইছে।আর ডং করতে হবেনা। এখন শুনো যে জন্য কল
দিলাম।
মুন্নাঃ কি জন্য বল।
ফারিহাঃ কাল তো আমার বার্থডে জানই।
কাল কিন্তু তুমি না আসার আগ পর্যন্ত আমি কেক কাটবোনা।
মুন্নাঃ ওকে না কাটলে তো ভালো।
তোমার বাবার কেকের দাম টা বেচে যাবে। (ফান করে)
ফারিহাঃ কি.........(রাগতো ভাব নিয়ে)
মুন্নাঃ নাহ ঠিক আছে আসবই। আমার একমাত্র দাদার নাতির বউয়ের বার্থডে আর আমি আসবনা!
ফারিহাঃ হেহ...বড় বড় কথা,সময় হলেতো ভুলে যাবে।
মনে থাকে যেনো। নইলে.....
মুন্নাঃ হুম...মনে থাকবে,তা পার্টিটা স্টার্ট কবে।
ফারিহাঃ সন্ধ্যা ৮ টায়।
মুন্নাঃ ওকে আসবো।এখন রাখি,বাই।
ফারিহাঃ ওকে বাই।
...
পরদিন বিকাল বেলা মুন্না শপে গিয়ে লাভ ডোমেন করা একটা তাজমহল
কিনলো।
ফারিহার বার্থডে গিফট দেওয়ার জন্য।
সন্ধ্যা ৭.৩০ হয়ে গেছে। -----------
এদিকে মুন্না আসার কোনো নামই নেই।
সকল অতিথি এসে উপস্থিত।
ফারিহা না আসতে দেখে ফোন দিলো।
কিন্তু ফোন রিসিভ করতেছেনা।
প্রায় ২০ টা কল দিলো। নাহ রিসিভি হচ্ছেনা।
ফারিহা রেগে আগুন হয়েগেছে।
ফারিহার মা তার রুমে এসে বললেন যে কেক কাটার সময় হয়ে গেছে।চলে
আসতে।
কিন্তু ফারিহা মুন্নার জন্য অপেক্ষা করতেছে।
প্রায় ৮ টা ১৫,,, মুন্না আসেই নাই।
শেষমেষ মায়ের কথায় ফারিহা কেক কাটতে গেলো।
কেক কাটা,,পার্টি,,শেষ।
মুন্না আসে নাই।
ফারিহা মনে মনে খুব কষ্ট পায়।
রুমে গিয়ে কাঁদতে থাকে।
...
এদিকে....
সন্ধ্যা ৭ টায় হটাৎ মুন্নার মায়ের হার্টে প্রচণ্ড ব্যাথা শুরু হয়।
মুন্না তড়িঘড়ি করে মাকে হসপিটাল নিয়ে যায়।
আর তাড়াহুড়াতে মোবাইলটা ঘরে ফেলে গেছে।
এবং তার মায়ের ছুট্ট একটা অপারেশন করাতে হয়।
প্রায় ১০ টায় অপারেশন শেষ হয়। পরদিন সকালে মাকে নিয়ে বাসায় ফিরে।
বাসায় এসে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে ফারিহার অনেক ফোন আর
একটা মেসেজ।
মেসেজে লিখা; কাল দেখা করবে।
মুন্না বুজতে পারে ফারিহা খুব রেগে আছে।
তারপর মাকে রেখে ফারিহাকে কল দিয়ে দেখা করতে যায়। গিয়ে দেখে ফারিহা আগে থেকেই এসে বসে আছে।
মুন্না ভয়ে ভয়ে গিয়ে বসে বলে...
- আসলে ফারিহা কাল মায়ের.......এইটুকু
বলার পরই ফারিহা থামিয়ে দেয়।
ফারিহাঃ আমি তোমাকে কারণদর্শাতে বলিনি।
কি আর বলবে তোমার ব্যাস্ততার কথা এইতো।
তোমার মায়ের এই হয়েছিলো সেই হয়েছিলো তাইতো। (খুব রেগে গিয়ে)
মুন্নাঃ আসলে আমার কথা টা শুনো।
ফারিহাঃ স্টপ! কি শুনবো,হুম।
আমার জন্যতো তোমার কোনো ভালোবাসাই নেই।
কি আর এমন হয়ে যেতো একদিন মাকে ছেড়ে আসলে। আর তুমি ছাড়া
কি আর কেউ নেই। কাল আমি আমার ফ্রেন্ডদের কাছি অপমানিত হয়েছি শুধু তোমার
জন্য।
ব্যাস.... আজ থেকে তোমার আমার কোনো সম্পর্ক নেই।আজ
এখানেই খতম। তুমি তোমার মাকে নিয়েই থাকো।
এই বলেই ফারিহা উঠে চলে গেলো।
মুন্না চলে আসে বাসায়। এসে শুধু একটা মেসেজ দেয়। মেসেজি লিখেছিলোঃ
না শুনেইতো চলে
গেলে, ওকে যাও ভালো থেকো।
তবে মনে রেখো আমি সব ছাড়তে পারলে ও আমার মাকে ছাড়তে
পারবনা।
পারবোনা আমি ছাড়তে আমার পৃথিবী কে।
কিছু না জেনেই একা বক বক করে চলে গেলে। কাল আমার মায়ের অপারেশন করানো প্রয়োজন হয়। রাতে মায়ের
বুকে ব্যাথা উঠায় আমি পাগলের মত হয়ে যাই।
তাড়াহুড়ায় মোবাইল টা ও ফেলে চলে আসি।
আমি ছাড়া মায়ের দেখার কেউ নেই।
তুমি তো কাল তোমার পার্টি নিয়ে ছিলে।
আর এদিকে আমার উপড় দিয়ে ঝর গেছে।কিন্তু তুমি সেটা বুজতে চেষ্টা করনি।
আজ আমি যদি তোমায় বলি যে তুমি তোমার মাকে একেবারে ছেড়ে
দিতে,,
তার সাথে কোনো যোগাযোগ রাখতে পারবেনা।
তখন তোমার অবস্থা কেমন হবে?
নাহ তুমি সেটা চিন্তা না করেই চলে গেছো। ওকে ভালো থেকো। আর অন্যের ক্ষেত্রে অন্তত নিজের মায়ের কথা
চিন্তা করো॥
মেসেজ টা পাওয়া মাত্রই ফারিহা বুজতে পারে যে সে কতো বড় ভুল
করেছে।
নিজের ভুল বুজতে পেরে হাওমাউ করে কেঁদে উঠে।
আর পরেই মুন্না কে কল দেয়।
মুন্নাঃ হ্যলো। কি?
ফারিহাঃ প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। (কেঁদে কেঁদে)
মুন্নাঃ তুমি তো কোনো অপরাধ করনি যে ক্ষমা করব।
ফারিহাঃ মুন্না প্লিজ। আমি আমার ভুল বুজতে পেরেছি।
মুন্নাঃ ওকে।
ফারিহাঃ আর তুমি কি নিজেকে কি হিরো মনে কর। যে সব কাজ নিজেই করবে।
মায়ের সেবা কি তুমিই করতে জানো।
কাল আমি আমার বাবা মাকে তোমাদের বাড়িতে পাঠাবো।
তোমার মাকে তুমিই রাজি করাবে কিন্তু।
আর আজ থেকেও আমি ও তোমার মায়ের সঙ্গি হবো। তোমার
মায়ের সব দ্বায়িত্ব আমার। মনে থাকে যেনো। সব যেনো ঠিক ঠাক হয়ে যায়। নইলে..............
(আনন্দ রাগে)
এন্ড আগামি সাপ্তাহে যেনো বিয়েটা হয়ে যায়। মনে থাকে যেনো।
মুন্নাঃ আরে কি বল। আর তোমার পড়া লেখা?
আর আমকেও তো একটু ভাবার সময় দাও।
ফারিহাঃ পড়ালেখা বিয়ের পর ও করা যাবে।নো টাইম। মনে থাকে যেনো।
মুন্নাঃ একটা আনন্দের হাসি দিয়ে যো হুকুম মহারাগি সাহেবা।
ফারিহাঃ কি?????????
মুন্নাঃ নাহ কিছুনা। ওকে।
তারপর পারিবারিক ভাবেই মুন্না আর ফারিহার বিয়ে হয়।
ফারিহা নিজের মায়ের মতই তার শাশুড়ি কে স্নেহো করে। সব সময় কেয়ার করে।
মুন্নার থেকেও বেশি।
--------------------------
শেষ কথাঃ
যদি আমরা সবাই মনে মনে চিন্তা করি যে আমারো তো মা আছেন।
আমারোতো বাবা আছেন। আমার বাবা মা যেভাবে আমাকে কুলেপিঠে মানুষ করেছেন।।স্নেহো
করেছেন।
অন্যের বাবা মা ও ঠিক সেইভাবে নিজের সন্তানকে মানুষ করেছেন।
আজ আমি কিভাবে তাকে বলি যে নিজের বাবা মাকে ফেলে দিতে।
আমরা সকল ছেলেরা এই কথা কেনো ভাবতে পারিনা যখন ছেলে বাড়ি
থেকে রাগ করে না খেয়েই চলে যায় তখন অধিক রাতে মা ই খাবার হাতে নিয়ে ছেলের জন্য অপেক্ষা করে।গার্লফ্রেন্ড বা বউ নয়।
আমরা শাশুড়িরা যদি এই কথা ভাবি যে আমার যেভাবে মেয়ে আছে তেমনি
ভাবে আমার ছেলের বউ ই একজন মায়ের মেয়ে...
বউয়েরা যদি এই কথাটা একবার ভাবি আমার যেমনি মা আছেন আমার
শাশুড়ি ও আমার স্বামীর মা।
আমার মা আমার কাছে যেমন ঠিক তেমনি আমার শাশুরিও তার ছেলের কাছে তেমন।
আমরা যদি এই কথা গুলি একবারে জন্য চিন্তাকরি তাহলে এই দেশে
কখানই বৃদ্বাশ্রমের প্রয়োজন হবেনা।
কখনো সংসার যুদ্ধ হবেনা।
কখনো বউ শাশুড়ির যুদ্ধ দেখা লাগবেনা---।।

" গড়মিল "

--- কথা ছিল তোমার ভালোবাসার উৎসাহে নিজেকে সফলতা করা।যে সফলতায় আমাদের কান্না ভেজা হাসি সাক্ষী থাকবে।সাক্ষী থাকবে আমাদের কথার,পূর্ণতা পাবে বিশ্বাসের।রচিত হবে আরেকটা ইতিহাস।যেখানে শাহজাহান-মমতাজ,শিরিন-ফরহাদ,লায়লা-মজনু প্রমুখদের ঠাই হয়েছে।কিন্তু আমি এত খেতাব চাইনি।চেয়েছিলাম তোমার ভালোবাসার উষ্ণতা।যে উষ্ণতায় মলিনতাও আনন্দের মতো লাগতো।তুমি তা চেয়েও চাওনি!কথা দিয়ে কথা রাখোনি।তুমি এই যুগের ভন্ডামি ভালোবাসার ধারাকে জয়ী করেছো।এটা একদম অন্যায়।আজ ভেজা চোখে কান্না লুকিয়ে বাঁচতে হচ্ছে!যাও মাফ করে দিলাম।বাকিটা খোদার দরবারে না হয় বললাম!
এই বৃষ্টির দিনে জানালার পাশে কিংবা বেলকনিতে দাড়িয়ে তোমাকে ভেবে ভেবে আবসারাফ আনমনা হাসি দিয়ে স্বপ্ন দেখার কথা ছিল।যে স্বপ্ন তুমিও দেখেছ আমাকে দেখিয়ে!আজ সে স্বপ্ন তুমি অন্যজনকে নিয়ে দেখবে আর আমি বেচারা দুঃস্বপ্নে মশগুল!
মাফ চাও? যাও মাফ করে দিলাম!
মনে পড়ে তোমার সে দিনগুলোর কথা!যে দিনগুলো পরস্পর নির্ভর ছিলাম।তুমি আমাকে ভেবে চলতে আর আমি তোমাকে। আমি এখনো চলি!আমি বদলায়নি।তুমি বদলায়ছো।তুমিই বলেছিলে ইংরেজিতে.. মানুষ নাকি " চ্যান্জেবল"! তুমি তোমার কথা রাখছো!ধন্যবাদ তোমাকে এই কারণে যে নিজেকে দেয়া কথাগুলো রাখছো কিন্তু আমাকে দেয়া কথাগুলো রাখোনি।হয়তো তোমার মতে- আমার ভুল ছিল ভালোবেসে তোমাকে।ভুল আমার হলেও মনে রাখবে.."ভুল করে ভুলে যাওয়া ভুল"!
মনে পড়ে..কথা বলার সময়-তোমার কথা শুনতে পারতামনা বলে আমি হতাশ হয়ে রাগারাগি করতাম আর তুমি আমার ভয়ে চুপ করে থাকতা!
মনে পড়ে.. আমার গলায় তোমাকে সামনে রেখে গান শোনানোর কথা ছিল!তোমার হাতে আমাদের নাম আর্ট করে লিখার কথা ছিল!আমি বলেছিলাম তোমার চোখের দিকে থাকিয়ে থাকবো আর তুমি চুপ করে থাকবা!আচ্ছা..তোমার মনে আছে - তোমার জোড়া চোখগুলো আমার একদম বেশি পছন্দ!কি মায়াবী চোখ!আমিতো চোখ দেখে প্রেমে পড়েছিলাম তোমার!আজ সে চোখগুলো নাকি অন্য কেউ দেখবে!সে হাত দু'টো নাকি অন্য কেউ ধরবে!হয়তো সে আমার চেয়ে ভালো গান পারে তাইনা?
তোমার মনে আছে আমার প্রপোজ করার ঘটনাটা।
একটা বছর তোমাকে চোখে চোখে রাখছিলাম।তোমার খবর নিতাম।তোমার সম্পর্কে জানতাম।ভালো লাগতো। অন্যরকম অনুভূতি এগুলোতে।বলে বোঝানো যাবেনা!
চাইলে মোবাইল নাম্বারটাও নিতে পারতাম।কিন্তু বিশ্বাস করো নিজেকে বখাটে করতে চাইনি।সাহসও ছিলনা।এরকম ফোন করলে তুমি রাগ করবা সেটাও আমার মাথায় ছিল।ভালোবাসলে থাকে ভয় লাগে স্বাভাবিক!
তোমাকে অনেক কষ্ট করে পাইছিলাম জীবনে।এতো সময়ের ব্যবধান আমি আমার জীবনের কোন কাজে দিই নাই কখনো।এতো ধর্য্য,এতো সহ্য,এতো অবহেলা ইত্যাদি মেনে নিতাম।একটায় নিয়ত তোমাকে পেতেই হবে!মনে মনে বলতাম ইনশাল্লাহ!
ও আচ্ছা বলা হয়নি..তোমার ফেসবুক প্রোফাইল দেখতে দেখতে অনেক হিংসা আর রাগ লাগতো।কত আবালের প্রোফাইল যে ঘাটতে হয়ছে তার হিসাব নাই;শুধু তোমাকে যাতে কেউ সমস্যা না করে!
যখন দেখতাম কোন ছেলের পোস্টে কমেন্ট আর রিয়্যাক্ট দিতা আমার অসহ্য লাগতো।বলতেও পারতাম না।ব্লকও মারছিলাম তোমাকে! ফেইক আইডি খুলে তোমার আইডি দেখতাম।আবার ব্লক খোলে রিকুয়েস্টও দিছিলাম!
সে তুমি তোমার জীবন থেকে আামকে ব্লক দিয়ে দিলা!
তোমাকে জীবনে পেয়ে গেছিলাম।এতো ভালোবাসা দিছিলা যে ভালোবাসা আমার জন্য শেষ করে অন্যের জন্য বরাদ্দ করতেছো।কেন?সারা জীবন ভালোবাসলে কি এমন হতো?একেবারে সব ভালোবাসা দিয়ে শেষ করে কি লাভ হয়ছে!তোমাকে হারাবো কখনো কল্পনা করিনি!আমি আমাদের হিসাবটা গুছিয়ে নিয়েছিলাম।যাতে আমরা পরিবারের বিপদসীমা হতে রক্ষা পাই!তুমি মাঝখান হতে হাত ছেড়ে হাল ছেড়ে আমাকে মরুভুমিতে রেখে চলে গেলা।তোমার ভাবা উচিত আমি একা কেমনে মরুভুমিতে বাঁচার রাস্তা খুঁজবো হতাশাগ্রস্ত মন নিয়ে!
তোমাকে হারিয়ে আমার কান্নার গর্জন তুমি শোনোনি!একজন পুরুষ জাতের প্রাণী কাঁদে বোধয় এই ভালোবাসার জটিল রেখায়।অনেকটা পাথরে ঘাম ঝরে পড়ার মতো।তুমি নিজেকে ব্যর্থ ভাবিওনা।তুমি সফল।ব্যর্থতো আমি।এতো ভালোবেসেও পারিনি তোমাকে ধরে রাখতে।আগলিয়ে বাঁচার বিন্দুমাত্র কমতি প্রার্থনার অভাব আমার ভিতরে ছিলনা।খুব জোড়ালো ভাবো চাইছিলাম।তোমার কাছে কলিজা পঁচন রোগ নিয়ে বাঁচতে গেছিলাম।সেই তুমি কিনা সব জেনে শুনে...!
জোনায়েদ ইভান বলেছেন :- "হিসাব করে ব্যবসা হয়;ভালোবাসা না"। আর তুমি আমার চোখে আঙ্গুল দেখিয়ে লাইনটা দেখিয়ে দিয়েছিলে ভালোবাসার মানে বোঝাতে!আজ সে লাইনটার মর্মার্থ তুমি কি ভুলে গেছো?যে হিসাবটা আমাকে ছুড়ে দিলা পরিবারের দোহাই দিয়ে;সে হিসাবটা কি অন্য কোন মানুষের ভালোবাসায় কেউ সমাধান করেনি?নাকি সৎ ভালোবাসাগুলো এরকম অজুহাত দিয়ে চলে গেছিলো আদলতের রায় শুনার মত করে!আরে আমি দোষতো করিনি ভালোবেসে।কিংবা ভালোবাসা একার সম্মতিতে-তো হয়নি।আসামীরা অব্দি নিশ্চিত মৃত্যু জেনে বাঁচার বৃথা চেষ্টায় পূনরায় আপিল করে আরেকটা দিন বেশি বাঁচার জন্য।আমি কি তাদের চেয়েও নিঃকৃষ্ট নাকি অভিনয় করছো?
আমিও তোমার কাছে ভালোবেসে অপরাধী আসামী হয়ে গেলাম।আপিল করার সুযোগটুকু দাওনি।আমাকে অচল করে দিয়ে চলে গেলে তোমার সুখের স্বর্গে!তুমি সুখে আছো তাতে আমি খুশি।
মাফ চাইছো তাইনা ভালো না বাসার জন্য? যাও মাফ করে দিলাম।মাফ করতে টাকা-পয়সা খরচ হয় নাকি!
তুমি নিঃশ্বাসে বাঁচো;আমি না হয় দীর্ঘশ্বাসে বাঁচি!

একটি মিথ্যা....

কেটেগেছে ১ বছর ৮ মাস ৩ দিন।..... কি ভাবছেন কারোর সাথে সম্পর্কের??? -- হ্যা। এটা সম্পর্কেরই। তবে ভেঙে যাওয়া সম্পর্ক। গত ২০১৬ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারির দিনে সে আমার সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে দিয়েছিলো একটি মিথ্যা সন্দেহের কারনে। 
.
সম্পর্ক!!!! -- হায় রে মানুষ!!! এটা নাকি একটা সম্পর্ক!!! না কোন সম্পর্ক না। তবে হতে পারতো। কারন তার কথা গুলো দেখে বুঝেছিলাম সে আমায় পছন্দ করতো। আমার মন বলে.....
.
একদিন কলেজের টিফিন টাইমে কলেজ ক্যান্টিনে বসে আছি। প্রভাতি শাখায় ক্লাস হওয়ায় ঘুমের দরুন মুড তেমন ভালো ছিলো না। ক্যান্টিনের একটা সাইডে বসে ফেসবুক গতাচ্ছি। সাজেস্ট ফ্রেন্ড লিস্টে সাবেক প্রেমিকার ID খুজছিলাম। কিন্তু তার ID টা পাচ্ছিলাম না। হটাত চোখে পড়লো "জানভি" নামে একটা ID.... নামটা আমার কাছে uncommon লাগসে। প্রোফাইল পিক দেখলাম শুধু একটা ঠোটের ছবি দেয়া। ঠোট দেখে মনে হচ্ছিলো সে মুচকি হাসছে। ---- জানিনা সেটা তার ঠোট কি না। তবে ঠোটটা ছিলো গোলাপী। হালকা চিকন। কিন্তু মনে পরশ আনার মত সুন্দর। ধরেই নিলাম ছবিটা ফেক। ---- এরপর তার প্রোফাইলে গেলাম। দেখলাম অনেক কিছুতেই প্রাইভেসি দেয়া। দোটানায় পড়ে গেলাম। ID টা কি ফেক না রিয়েল!!! সব কিছু ভাবতে ভাবতে রিকুয়েস্ট দিয়ে ফেসবুক থেকে বেড় হয়ে পড়লাম।
.
.
সারাদিন কলেজ আর ল্যাব দিয়েই কাটলো। বিকালে প্রায়ভেট ছিলো। তাই বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেলো। --- সারাদিনের ব্যাস্ততার জন্য জানভির কথা মনেছিলো না। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় ফেসবুকে ঢুকলাম। নটিফিকেশনে দেখি প্রথমেই দেয়া "Janvi commented on your post... " ---- ওফ!!! তার মানে সে আমার রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করসে। গিয়া তার কমেন্টের রিপ্লাই করলাম।
.
বলে রাখা ভালো, তখনো আমি টুকটাক লেখালেখি করতাম। তবে গল্প না, ছোটখাটো লেখা। জানভি যেটাতে কনেন্ট করেছিলো, সেটা ছিলো হুমায়ুন আহমেদ স্যারের একটা উক্তি। সেটা হলো ------ "ছোটখাটো বিষয় নিয়ে মাতামাতি করাই হলো মেয়েদের স্বভাব।" -- হুমায়ুন আহমেদ।
.
তো, সে এই কথাটার চরম বিরোধিতা করে কমেন্ট করলো। আমিও তার কমেন্টের রিপ্লাই দিলাম। আবার সেও আমার রিপ্লাই দিলো। আমিও আবার দিলাম। এভাবে একটা মিষ্টি ঝগড়া চলছিলো। --- কিন্তু কথার এক পর্যায়ে সে তার কমেন্টটা ডিলেট করে দিলো। যা দেখে এক রকম রাগ মিশ্রিত কষ্ট পেয়েছিলাম।
.
যাইহোক, হটাত দেখি সে একটা মেসেজ দিয়েছে। ---- মনে মনে একটু পুলকিত হলাম!!!! গিয়ে দেখি.... সে লিখেছে --- "আমি বেশি কথা বলা পছন্দ করি না। তাই কমেন্ট টা ডিলেট করে দিলাম।"
আমি: It's ok...
জানভি: Hmm
আমি : (লাইক দিলাম)
জানভি: Good।
আমি: Well... 
জানভি: hmm
আমি: আপনার নামকি জানভি না জাহ্নবি...
জানভি: জা ন ভি..... বুঝছেন???
আমি: হুমম। কোন ক্লাসে পড়েন??
জানভি: এবার পরীক্ষা দিচ্ছি ( 2016 এর SSC examiner)। আপনি???
আমি: ইন্টার ১ম বর্ষের শেষের দিকে। আপনি কোন বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিচ্ছেন??
জানভি: বাণিজ্য।
আমি: ওওও.... কাল তো সম্ভবত পরীক্ষা আছে, না???
জানভি: হুমম। বিজ্ঞান।
আমি: তাহলে পড়া রাইখা ফেসবুকে কি?? কেও আছে নাকি???
জানভি: আরে নাহ। এমনি আসছিলাম। এখন আবার চলে যাব। bye....
.
.
তার সাথে আমার শুরুটা এভাবে হয়েছিলো। এরপর তার সাথে প্রতিদিনই একটু একটু কথা হতো। একসময় দেখা গেলো ঘুমের সময়টা ছাড়া আর সারা দিনই আমরা কথা বলতাম। রাত ৩ টা, ৪ টা এমন অনেক রাত আছে যে আমি তার সাথে কথা বলে পার করে দিয়েছি। সকালে জাস্ট কলেজ ইউনিফর্ম পড়ে কলেজে গিয়েছি। আস্তে আস্তে আমার প্রতি তার কেয়ারিং বাড়তে লাগলো। আমিও তার প্রতি কেয়ার করতে লাগলাম। আমার কনভারসেশন এর এক পর্যায়ে সত্যিই আমি তার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়লাম। হয়ত সে ও হয়েছিলো। নয়ত আমার প্রোফাইলে থাকা অনেক মেয়েকেই সে জোর করে আনফ্রেন্ড করিয়েছিলো কেন??? ---- একটা কথা বলেরাখি, আমাদের কনভারসেশন এর এই মধুমাখা সময়টাতেও আমি তার ছবি দেখিনি।
.
একটা পর্যায়ে দুইজনেই বুঝেছিলাম যে -- "Yah... we are in love..." কিন্তু, কেও কাউকে বলিনি। তার অন্যতম একটা কারন ছিলো দূরত্ব। সে থাকতো মংলা পোর্ট.... এই জায়গাটা খুলনা নাকি যশোর আমি সিউর জানি না। আর আমি থাকতাম ময়মন সিংহে। আমি অনেকবার স্ট্যাটাস দিয়ে বুঝাতে চেষ্টা করেছি যে দূরত্ব কোন ব্যাপারনা। কিন্তু, তাতে খুব একটা কাজ হয় নি। 
.
.
আমার বেপরোয়া মন আর মানছিলো না। তার যে পরীক্ষা, তার যে সমস্যা হতে পারে এই কথাটা আমার মাথায়ই আসছিলো না। --- আমি এক রকম উজবুক এর মতই তাকে প্রপোজ করে দিলাম....
.
দিনটা ছিলো ১৯ ফেব্রুয়ারি.....
.
আমি: পরীক্ষা কেমন হচ্ছে??
জানভি: মোটামুটি.... তুমার জন্য তো ঠিক মত পড়তেই পারিনা।
--- ওমা, আমি আবার কি করলাম???
--- ঐ... রাত ৩/৪টা পর্যন্ত পেচাল পারে কেডা???
--- তুমি কথা কইলা কে???
--- মন চাইসে।
--- এখন কাহিনি কি???? ফেলের সম্ভাবনা আছে নাকি???
--- আজাইরা কথা কও কে??? যত্তসব অলক্ষুণে কথা....
--- হাহাহাহা.... রাগ কইরো না, I was kidding....
--- It's ok...
--- জানভি একটা কথা ছিলো।
--- কি?? বলো।
--- তুমার কি সত্যিই বফ নাই???
--- এই এক কথা আর কয়বার বলবো??? -- সত্যিই নাই....
--- ওওওও....
--- আমার বফ দিয়া তুমি কি কর???
--- না এমনি। 
--- ওওও।
--- তুমাকে একটা কথা বলার ছিলো।
--- কি??
--- না থাক....
--- কি বলতে চাইসিলা বলো। না হলে রাতে আমি ঠিক মত পড়তে পারবো না।
--- ওকে বলতেসি।
--- হুমম।
--- ----
--- কই??? বলো না কেন???
--- হুমম। আসলে বলতে চাইসিলাম Te amo...
--- মানে???
--- মানে Te amo...
--- Te amo তো বুঝলাম। এর মানে কি???
--- I love you....
--- আমাকে তুমি চিনো না, আমিও তুমাকে চিনি না। Then Love কিভাবে সম্ভব???
--- আমি আমার ডিটেইলস তুমাকে দিতেসি। 
.
.
এই বলে আমি আমার কিছু তথ্য, তাকে দিলাম। কিন্তু, তার এক কথা, সে আমাকে পরীক্ষা করবে।
.
প্রথম যেই পরীক্ষা ছিলো, সেটা একটা সাধারণ প্রশ্ন। সঙ্গত কারনে এটা আমি পাঠকদের বলবো না। -- তবে তার করা সেই প্রশ্নের উত্তরটা আমার মনের গভীর থেকে দিয়েছিলাম। যার জন্য পাশ করে গিয়েছি। দ্বিতীয়টাও ছিলো একটা প্রশ্ন। এটাও বলা যাবে না। তবে বহু কষ্টে পাশ করেছি।
.
এরপর সেই দিন। ২১ শে ফেব্রুয়ারি। সে আমাকে হটাত মেসেজ দিয়ে বললো, 
--- তুমি কি আমার বিশেষ মানুষটাকে দেখতে চাও???
--- বিশেষ মানুষ মানে?? তুমার না কেউ নাই???
--- না আছে। আমার স্ট্যাটাস এ গিয়া দেখো।
.
একরকম উদভ্রান্তের মত তার টাইমলাইনে গেলাম।
.
.
তার টাইমলাইনে গিয়া দেখলাম একটা পোষ্ট দেয়া..... Janvi is taking care of (একটা ছেলের নাম) এরপর কিছু লেখা...। লেখাটা পড়িনাই।
.
.
তবে পোষ্টটা দেইখা মাথাটা গরম হয়া গেলো। তারে আবার মেসেজ দিলাম....
--- আমারে মিথ্যা কথা কইলা কে???
--- আমার মন চাইসে।
--- ওওওও.... আসলে একটা ব্যাপার কি জানো???
--- কি???
--- আসলে আমার একজনের সাথে রিলেশন ছিলো। পরে ব্রেকআপ হইসে। এখন আমার সাথে ভাব নিতেসে। তাই তার সাথে জিদ ধইরা তুমারে প্রপোজ করসি। প্রপোজের ব্যাপারটারে সিরিয়াসলি নিয়ো না।
--- আমি কোনদিন ও সিরিয়াসলি নেই নাই। [বিদ্র: এরপরের কথা গুলা প্রকাশ করতে চাচ্ছি না]
.
এরপর সে আমাকে ব্লক দিয়ে দেয়। আমি আমার ফেক আইডি দিয়ে তাকে আরো কিছু বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, তার ID তে দেখলাম তার দেয়া পোষ্টের সেই বিশেষ ছেলেটা আর কেউ না, তার ভাই...... এরপর বহুবার তার সাথে কন্টাক্ট এর চেষ্টা করেছি। অনেক সরি বলেছি। লাভ হয় নি। সবটাই বিফলে গেছে। আমার দুইটা ID তেই সে ব্লক দিয়ে রেখেছে......
.
.
আর বলা হলো না.... ওগো অপরিচিতা... শুনে যাও। যা বলেছি সব মিথ্যা। সত্য হলো আমার বলা সেই কথাটা --- Te amo.....

♥মিষ্টি মেয়ে♥

সকাল সাড়ে আটটা। মিষ্টি মেয়েটার জন্য এই সময়টা হলো আদুরে ঘুমের সময়। কিন্তু সে আজ আদুরে ঘুমকে উপেক্ষা করে গোসল সেরে এখন ড্রেসিং টেবিলের সামনে।
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে গোছগাছ সেরে নিতে হবে। প্রতিদিনের মতো আজও আম্মু বকা দিচ্ছে!
তবে আজ আম্মুর চেয়ে যেনো তারই তাড়া বেশি। এই দিনটার জন্য সে আজীবন অপেক্ষা করে আসছে।
.
আজ যে তার বিয়ে, বোকা ছেলেটার সঙ্গেই। এতটা আনন্দ আগে কখনো হয়েছে বলে মনে পড়ে না। বাড়িতে ধুমধাম বাদ্যবাজনা না বাজলেও মনের মধ্যে ঠিকই বাজছে।
আচ্ছা, এত খুশি লাগার কারণ কী! শুধুই কি পাগলটাকে পাচ্ছি তাই! নাহ, আরও একটা কারণ আছে। সেটা হলো আজকের পরের জীবনটা হবে সম্পূর্ণ নতুন। বৈচিত্র্য আর রহস্যে ভরা এক জীবন!
চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে এগুলোই ভাবছে মিষ্টি মেয়ে। এ ছাড়া আর কীই-বা করবে। হাতে কোনোই কাজ নেই। ১০টার দিকে বরপক্ষ আসবে। পারিবারিকভাবে বিয়ের পর্ব সেরে দুপুর থেকে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। বোকা ছেলেটা নাকি নিজেই পছন্দ করে কিনে পাঠিয়েছে। কী সুন্দর! কদিন ধরে ওর সঙ্গে খুব কথা বলতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু এসব ব্যস্ততার মধ্যে কারোরই সময় হচ্ছে না।
এক কাজ করলে কেমন হয়! এখনই ফোন করি ওকে। কে জানে, ও হয়তো এখনো ঘুমাচ্ছে! এখনো ঘুমানো, না! তোমার ব্যবস্থা করছি দাঁড়াও।
দোতলায় নিজ ঘরে বসেই কাজের মেয়েকে দিয়ে ডাক পাঠাল তার ভাইটাকে।
.
জনাব বোকা ছেলে এখনো ঘুমাচ্ছে। শান্তির ঘুম। বহুদিন পর এই একটা রাত সে দুঃস্বপ্ন ছাড়া পার করল। এটাই তার জন্য যথেষ্ট। যদিও ঘুমের ঘোরে, কিন্তু তার চারপাশে ঘটে যাওয়া সবকিছুই সে আঁচ করতে পারছে। এমন আবছা ঘুমের মজাই আলাদা। নাহ, এইবার ওঠা লাগে। আলসেমির মাঝেও এক চোখ খুলল ছেলেটা। পাশে রাখা মোবাইলে পাঁচটা মিসড কল! তার হবু বউয়ের বাবা ফোন দিয়েছিলেন!
—এত সকালে! কী মনে করে! ওদের কোনো সমস্যা হলো না তো!
তড়িঘড়ি করে উঠে বসল সে। চিন্তায় বুক কাঁপছে তার। সঙ্গে সঙ্গেই বেজে উঠল ওর ফোন। কাঁপা গলায় সে বলল, ‘স্লামালিকুম আব্বা।’
‘বাবাধন, এখনো ঘুমাও নাকি!’
‘নাআআ! ইয়ে মানে, এই তো উঠলাম আর কি...’
‘বলছি কি, বিয়ে তো এখনো হয়নি, তা তুমি আব্বা বলে ডাকলা কেন?’
‘ওহহো সরি আঙ্কেল। আর ভুল হবে না।’
‘হে হে, ঠিক আছে, অবশ্য আর ভুল করার সুযোগও পাবা না।...
‘জ্বী জ্বী, তা ঠিক।’
ফোনের ওপ্রান্ত থেকে মেয়েলি চাপা হাসির শব্দ শুনতে পেল ছেলেটা।
কিছু একটা তো গড়বড় আছেই। মনে মনে ভাবল সে।
‘আচ্ছা আব্বা আপনার পাশে কি আপনার মেয়ে?’
এবার অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল দুজনেই।
‘দে দে ফোনটা আমাকে দে।’
ফোনটা নিল মেয়েটা। ছেলেটা ভাবছে হচ্ছেটা কী!
‘এই তুমি আব্বার গলা চেন না ভালো কথা, কিন্তু আমার ভাইটার গলা ভুলে গেলে কিভাবে!’
আবারও হেসে উঠল মেয়েটা।
‘সব সময় এ রকম ফাজলামি করো ঠিক আছে, তাই বলে আজকেও!’
‘কেন বেবি! আজকের দিনটা কি খুব স্পেশাল?’
‘নাহ। রাখলাম।’
‘রাগ করলা! আরে শুনো...’
আর কিছু বলার আগেই লাইনটা কেটে গেল। মেয়েটা আর ফোন দিতে গেল না। যাই ঘটে যাক, অভিমানী ছেলেটা আগামী এক ঘণ্টা আর ফোন ধরবে না।
.
এখন রাত সাড়ে এগারোটা। সারা দিন ঘোরের মধ্যে থাকার পর, মিষ্টি মেয়েটা আর বোকা ছেলেটা এখন বেশ খানিকটা স্বাভাবিক। এখন তারা পৃথিবীর প্রাচীনতম মানব-মানবী। আজ তাদের স্বর্গীয় আবেগটা পরিণত হবে অতি পার্থিব একটা চাহিদায়! মিষ্টি মেয়েটা আর বোকা ছেলেটা এখন অন্ধকার ঘরে একই বিছানায়! দুজনেই তাকিয়ে আছে জানালার দিকে। বাইরে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। কিন্তু বৃষ্টি হচ্ছে না। আদৌ হবে কি না বোঝা যাচ্ছে না।
‘ওগো শুনছ!’
‘হুম।’
‘বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।’
‘হুম।’
‘বাজ পড়বে নাকি!’
‘হুম।’
‘বাজ পড়লে খুব ভয় পাই আমি।’
‘হুম।’
বোকা ছেলেটা এখনো উদাসীন। মিষ্টি মেয়েটা না পেরে নিজেই ওর হাতটা ধরে নিজের কাঁধের পর এনে ছেড়ে দিল।
‘আমাকে আজ কেমন দেখাচ্ছিল?’
‘এই তো ভালোই।’
‘ভালোই মানে! ঠিক করে বলো।’
‘মোটামুটি।’
‘আমাকে বাজে দেখাচ্ছিল!’
পাগলি মেয়েটা ঠোঁট ফুলিয়ে তাকিয়ে আছে বোকা ছেলেটার দিকে। তার চোখ ছলছল করছে। বোকা ছেলেটা এতক্ষণে টের পেল সে কী ভুল করেছে।
‘আরে আমি তা বলিনি তো বাবু!’
ছেলেটা আবেগে জড়িয়ে ধরে মেয়েটাকে।
‘সত্যি বলতে তোমাকে মেকআপ ছাড়াই বেশি সুন্দর লাগে। যেমনটা এখন লাগছে। প্রতিদিন সকালে উঠে আমি ঠিক এ রকমই দেখতে চাই তোমাকে। কী দেখতে পাব তো?’
ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল বাইরে। আহ্লাদি মেয়েটা এখন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মেয়ে।

বাসরের গল্প

অনেকদিন হল বাড়ি থেকে বিয়ে বিয়ে করে কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে। যেন এই মূহুুর্তে বিয়ে না করলে দেশে আর কোন অবিবাহিত মেয়ে পাওয়া যাবে না! সব ফুরিয়ে যাবে। এখন নিজের উপরই নিজের রাগ হচ্ছে। কেন যে এত তারাতারি লেখাপড়াটা শেষ করলাম! আরো দু-চারবছর ফেল করে হলেও পড়াশোনার উপরে থাকলে ভালো হত। অন্তত বিয়ে করার জন্য বাড়ি থেকে এত চাপ দিত না। মাঝেমধ্যে এমন হয়, একটু শান্তিতে খেতে পারি না। খেতে বসলেই শুরু হয়ে যায় মায়ের বকবক। বউ থাকলে কত সুবিধা হত, তার কত ইচ্ছা মরার আগে তার নাতি-নাতনীর সাথে খেলা-ধূলা করার। অমকের ছেলে বিয়ে করেছে, তমকের ছেলের একটা ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে। এরপর থেকে সে আর খেতে দিতে পারবে না, ইত্যাদি ইত্যাদি। মাঝেমাঝে তো দুঃখ করে কেদেও উঠে!!
তখন আমার অবস্থাটা এমন হয় যে, খাব আর কি, তার কথা শুনেই পেট ভরে গেছে। খাওয়ার জায়গা নেই……
আমি রাজ, রায়হান রাজ। মাষ্টার্স শেষ করে ছোটখাট একটা জব করছি। যদিও বাবার নিজস্ব ছোট একটা প্রতিষ্ঠান আছে, তবে আমার ইচ্ছা নিজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে তারপরে বিয়ে করা। বাড়িতে অভাব বলতে, মা-বাবার ভাষায় সুধু একটা বউ, আশ্চ্যর্য ব্যাপার! সুধুই একটা বউ হলে নাকি বাড়িটা পরিপূর্ণ হবে। কোন কিছুরই অভাব থাকবে না। দু-দিন আগে বাবা তার নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, হই নিজে মেয়ে দেখ, নইত তারাই মেয়ে দেখে বিয়ে করিয়ে দেবে। মা বন্ধুর মত হলেও, বাবাকে তেমন বন্ধু ভাবতে পারিনি। ছোটবেলা থেকেই কেমন মনের মাঝে ভয় গড়ে উঠেছে। কাজেই তার কথায় মাথা নিচের দিকে দিয়ে নিজের রুমে আসলাম। ভাবছি, জীবনটা সিনেমা বা গল্পের মত হলে ভালো হত। নিজের গার্লফ্রেন্ড বা কোন বান্ধবিকে ঘরে তুলে এনে বলতাম, এটাই তোমাদের বউমা! শালার কেন যে জীবনে প্রেম করলাম না, লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত না থেকে প্রেম নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও এখন কাজে দিত…
-
আজকে আমার বিয়ের রাত, বাসর রাত। শেষমেশ বাবা-মায়ের পছন্দ করা মেয়েকেই বিয়ে করতে হল। মেয়েটা মোটামুটি সুন্দরি, মাথায় লস্বা চুল, মুখটা খানিক লম্বাটে, নাক স্বাভাবিকের থেকে একটু বোচা, টানাটানা চোখ উচ্চতায় প্রায় আমার সমান আর শরিরটা সবমিলিয়ে ফিট! মোটাও না, চিকনও না। বাবা-মায়ের পছন্দ হয়েছে, আমার যে হয়নি, তা না। তবে বড় কথা হল বাবা-মায়ের পছন্দ হয়েছে। মায়ের বিশেষ পছন্দ হল বড় চুল আর মেয়ে গুনবতী সব ধরণের রান্না-বান্না আর কাজ-কর্মে এক্সপার্ট। সাথে অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্রী। কিছুদিন পরে হবে ৩য় বর্ষ। বাবার বিশেষ কি পছন্দ, সেটা জানিনা! সম্ভবত ভালো চা বানায়!! কারণ, মা তেমন ভালো চা তৈরি করতে পারে না। এ নিয়ে বাবা মাঝেমাঝেই মা'কে কথা শুনায়। কে জানে, হইত মেয়ে নিজ হাতে চা বানিয়ে বাবাকে খাইয়েছে……
যাই হোক……
মেয়ের বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে করে আমাদের বাড়ি পৌছানোর পরেই নতুন বউকে ঘরে রেখে সেই যে বেরিয়েছে। এখন বাজে রাত ১১:৫৫ পি.এম! 
ঘরে ডুকে দড়জা আটকে দিতেই বউ বলল……
-সিগারেট খেয়ে আসছেন?
ওমা! সে কি কথা, নতুন বউ সালাম-কালাম নেই, মাথায় বড় ঘোমটা নেই। পরিচিতি পরিচয় পর্ব নেই। সে কি না বলে 'সিগারেট খেয়ে আসছেন! বলার ভাব-ভঙ্গীমাটা এমন, যেন সে আমার কত বছরের চেনা! নাজানি কত বছর তার সাথে ঘর করেছি!
আমি অবশ্য সিগারেটই খেয়ে আসছি। একটা না, একসাথে ৪ টা! বিয়ের কারণে বিভিন্ন ব্যস্ততায় আর লোকজনের জন্য গত ৩ দিন হল সিগারেট খাইনা বা খেতে পািরনি। সিগারেটটা নিতান্ত সখের বশে খেলেও, গত দু-দিন নেশাটা চরমে উঠে গিয়েছিল। তাই একেবারে চারটা খেয়ে শান্ত হয়েছি। তার(বউয়ের) কথার উত্তর না দিয়ে বিছানায় বসলাম। জানিনা কেন বাসর ঘরে লোকজন গরম একগ্লাস দুধ রাখে, তবে আমি সেটা ঢকঢক করে খেয়ে ফেল্লাম। বউ আবার বলল……
-এখন থেকে আর সিগারেট খাবেন না। সিগারেট খেলে আমার সাথে থাকতে পারবেন না, বাইরে গিয়ে থাকবেন……
আমি অসহায় ভঙ্গিতে তার দিকে তাকালাম। যেন ভুল করে ফেলেছি। আর তার জন্য লজ্জিত।
সে আবার বলল……
-প্রেম করেছেন কখনো? এযাবত কয়টা প্রেম করেছেন?
-একটা প্রেমও করি নি……
-মিথ্যা বলবেন না, মিথ্যা বলে লাভ নাই। যদিও করে থাকেন, তো এখন থেকে সব বাদ……
-আরে মিথ্যা বলব কেন, একটাও করিনি……
-আমাকে প্রশ্ন করলেন না? আমিই বলি…
দুটো প্রেম করেছিলাম। একটা ক্লাস টেইনে থাকতে। আর আরেকটা অনার্স ১ম বর্ষে। কোনটাই টেকেনি। কারণ তাদের চাহিদাটা অন্য কিছু ছিল, চাওয়া-পাওয়াটা অবৈধ কিছু ছিল তাই……
আমি আর তার কথাই মনযোগী হলাম না। আমি আমার মোবাইলটা নিয়ে মনযোগী হলাম। ভাবছি ফেইসবুক রিলেশনশিপ ষ্টাটাসটা পাল্টাবো, জনৈক ভাবি ফোন করতে বলেছিলেন, বাসর রাতে কি কি করতে হবে, কি করা যাবে আর কি করা যাবে না। কিভাবে কি শুরু করতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি তিনি সব আমাকে জানাবেন।
কাজেই ভাবিকে ফোন দিয়েছি। হ্যালো বলা মাত্রই রিফা (সদ্য বিবাহিত বউ) ফোনটা কেরে নিয়ে কানে দিল। সম্ভবত মেয়ে কণ্ঠ শুনে ফোনটা কেটে দিয়ে বন্ধ করে ফেলল। বলল……
-দেখুন, ফোন আমারও আছে! কিন্তু আজকের জন্য সব বন্ধ। আর বলেছি না, আজকের পর থেকে সব প্রেম বাদ, সব মেয়ের সাথে কথা বলা বাদ…
সে ফোনটা তার ব্যাগের ভিতর রাখল। বলল……
-ওযু করে আসুন, নামাজ পড়ব। তাছাড়া এশার নামাজও পড়া হয়নি। দুজনে একসাথেই পড়ব।
-আমি তো নামাজ পড়িনা!
-আজ থেকে পড়বেন, রেগুলার পড়বেন। না হলে আমার সাথে কোন সম্পর্ক রাখতে পারবেন না!
মনে মনে বললাম, আপনার সাথে সম্পর্ক রাখতে আমার বয়েই গেছে! বাইরে বললাম……
-দাড়ান, আমি অযু করে আসছি……
সে খুশি হয়ে মুছকি হাসি দিল। নামাজ শেষে দুজনা বিছানায় সামনাসামনি বসলাম। সে তার দু-হাত দিয়ে আমার একটা হাত চেপে ধরে তার কোলে নিল।
আমি চট করে হাতটা ছুটিয়ে নিয়ে, নিজেকে গুটিয়ে নিলাম। সে আবার হেসে উঠল, আর হাতটা আবার ধরে টেনে নিয়ে বলল……
-ওমন করছেন কেন? আমাকে কি আপনার পছন্দ হয়নি?
-হয়েছে……
-তো? তো, হাত সরিয়ে নিলেন কেন?
-এমনি, কখনো এভাবে কেউ হাত ধরেনি তো তাই……
-আমি আপনার বউ আর আপনি আমার স্বামী। আমাদের ধর্ম মতে, আমরা একে অপরের পরিহিত বস্ত্র সরূপ, বুঝেছেন……
-হুম…
-কচু বুঝেছেন! আপনি আপনার শরিরে যেভাবে পাঞ্জাবি পড়েছেন আমি আমার শরিরে যেভাবে শাড়ি পড়েছি আর অন্যান্য বস্ত্র পড়েছি, আমাদের সম্পর্কটা হল তেমন। আমাদের মাঝে কোন পর্দা নেই, কোন বাধা নেই। আপনি আমাকে যেমন খুশি ইচ্ছা ব্যবহার করতে পারেন, তেমনি আমারও আপনার উপর অধিকার আছে যেমন খুশি ব্যবহার করার। এবার বুঝলেন?
-হুম বুঝেছি……
-মনে হচ্ছে তাও বুঝেননি! ইচ্ছা করছে আপনাকে জড়িয়ে ধরে একেবারে আপনার বুকের মধ্যো ডুকে, আপনার সাথে মিশে গিয়ে, দুজনা মিলে একজনা হয়ে প্রাক্টিকেলি বুঝিয়ে দেই……
মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি মিষ্টি হাসছে। যাকে বলে শয়তানকি হাসি! হইত আমি লজ্জা পাচ্ছি বলেই, সে আরো বেশি আনন্দিত হচ্ছে। আমাকে লজ্জা দেয়ার চেষ্টা করছে। আমি বললাম……
-দেখুন, আমার ভীষণ ঘুম পেয়েছে। কাল সকালে কথা হবে, গুড নাইট……
বলেই দুটো বালিস একসাথে একই জায়গায় ছিল, সেখান থেকে একটা বালিশ একপাশে টেনে নিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লাম।
সে বলল……
-এই উঠুন, উঠুন বলছি। আজকে রাতে কোন ঘুম নেই! আর বালিশ ভাগ করছেন কেন? দুজনা একবালিশে ঘুমাতে হবে। আমাদের ভিতর কোন ফাকা জায়গা থাকবে না। প্রয়োজন আপনার বুকের উপর ঘুমাবো!!
আমি উঠে বললাম,
-আমার ভীষণ ঘুম পেয়েছে, না ঘুমিয়ে কি করব?
-ঘুমানো চলবে না, কি করবেন, হু....মমম কি করবেন, চলুন গল্প করি!
-এত সুন্দর রাতে না ঘুমিয়ে গল্প করে কাটিয়ে দেয়ার কোন মানেই হয়না!
-রাত আর বেশি বাকি নেই! ঘুমালে ফজরের নামাজ পড়তে পারবেন না। ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমাবেন।
ঠিক তখন কারেন্ট গেল। যদিও ঘরে এতক্ষণ ডিম লাইটের হালকা আলোতে, আধো আলো, আধো অন্ধকারে কথা হচ্ছিল। কিন্তু, এখন ঘরটা ভিষণ অন্ধকারে পরিণিত হল। রিফা……
আও,ও…… বলে চিৎকার করে আমাকে জড়িয়ে ধরল!
-আরে ছাড়ুন……
-ছাড়ব কেন? আর আমি অন্ধকারকে ভীষণ ভয় পাই……
-না ছাড়লে আলো জ্বালাবো কি করে?
-আলো জ্বালানোর দরকার নাই, এভাবেই থাকুন……
পড়লাম মহাবিপদে। এদিকে মোবাইলটা প্রথমেই আটকে রেখেছে। হাতের কাছে তেমন কিছুই নেই আলো জ্বালানোর মত। তারপরেও যেভাবে জড়িয়ে ধরে রেখেছে, যেন ঝড় আসলেই ছুটাতে পারবে না। ঠিক ততক্ষণে আমার লজ্জা শরম অনেকখানি ভেঙ্গে গেছে। সে জড়িয়ে ধরাতে তার লম্বা চুলের একধরণের পাগল করা গন্ধ আমার নাকে আসছে। মনের ভিতর একধরণের জান্নাতি প্রশান্তি পেলাম। আর মনে মনে বিধাতাকে ধন্যবাদ দিলাম, এমন একটা সময়, এমন একটা বউ আর কারেন্ট যাওয়ার জন্য। ততক্ষণে অটোমেটিকভাবেই আমার দু-হাত দিয়েও তাকে জড়িয়ে ধরেছি……