মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৬

অনেক ভালোবেসেছিলাম

হ্যালো, আদিবা?(আমি)
কে বলছেন আপনি?(আদিবা)
এখন চিনবেনা কারন আমি অপরিচিত।
(আমি)
এত কথা বলার সময় নেই আমার, কে বলছেন
আপনি সেটা বলেন।(আদিবা)
আফসান নামের কোনো ছেলেকে চিনতে?
(আমি)
আরে আফসান তুই,কতদিন হয়েছে দেশে
আসার?(আদিবা)
হা আমি, আজ আসছি দেশে,কিন্তু নিজের
আত্বীয় কারো বাসায় উটছি না তোদের
বাসায় উটবো।(আমি)
আচ্ছা চলে আয় আমাদের বাসায়,আমি
এড্রেস দিচ্ছি।(আদিবা)
আচ্ছা আসতেছি।(আমি)
আমি আফিসান, পাঁচ বছর পর বিদেশ থেকে
ফিরছি। আদিবা হচ্ছে আমার কলেজ
জীবনের সবচেয়ে ভালো বন্ধু।
ঠিকানা মত চলে গেলাম। কলিং বেল
চাপতেই আদিবা দরজা খুললো। আমাকে
দেখে অনেক আনন্দ করছে আদিবাদের
বাসায় তার বাবা ও আদিবা থাকে।
আদিবার মা অনেক বছর আগে মারা
গেছেন। সেদিন অনেক আনন্দ ফুর্তি হয়।
আদিবার বাবা আমাকে খুব ভালো ছেলে
হিসাবে কোনো সন্দেহ করেননা। বিদেশ
যাওয়ার আগেও অনেক তাদের বাসায় গিয়ে
রাত কাটিয়েছি।
পরেরদিন রাতে একা একা রুমে ডুকে
আদিবার কথা ভাবছি। মেয়েটা কত দুস্টু
ছিল। কত রাগ অভিমান করে, আবার দুজন
ঠিক হয়ে যেতাম। অনেক দিনের বন্ধুত্ব
আমাদের। হটাৎ একদিন আদিবা আমাকে
প্রপোজ করে বসে।
আফসান আমি তোকে ভালোবাসি।(আদিবা
)
কি বলিস এসব,তোর মাথা ঠিক আছে তো।
(আমি)
হা আমার মাথা ঠিক আছে।(আদিবা)
মাথা ঠিক থাকলে তো ঠিক আছে, কিন্তু
আমি তোকে বন্ধু ছাড়া আর কিছুই
ভাবিনা।(আমি)
থাক,লাগবেনা তোর ভালোবাসা।(আদিবা)
সেদিন অনেক কান্না করে মেয়েটি চলে
যায়।
কয়েকদিন ধরে কোনো যোগাযোগ নেই।
আমিও যোগাযোগ করার চেস্টা করেনি।
একদিন কলেজ ক্যাম্পাসে বসে আছি। হটাৎ
দেখি আদিবা একটা ছেলের সাথে কথা
বলছে। একজন আরেকজনের হাত ধরছে। আমি
তো হতভাগা হয়ে গেলাম। এই কলেজে আমি
ছাড়া কোনো ছেলের সাথে কথা বলতো
না। এখন দেখি অন্য ছেলের সাথে কথা
বলছে। আমার মাথা নস্ট হয়ে গেছে।
আদিবার কাছে এগিয়ে গেলাম।
আরে আফসান তুই।(আদিবা)
হা। (আমি)
সে হলো আবির, আমার বয়ফ্রেন্ড।(আদিবা)
অহ আচ্ছা,কয়দিন থেকে তুই প্রেম করেছিস?
(আমি)
এই তো কয়েকদিন।(আদিবা)
সেদিন চলে গেলাম। বাসায় গিয়ে বারবার
আদিবার কথা মনে পড়ে। এক মুহৃত্ব ভালো
কাটেনা। কয়েকদিনের ভিতরে আমি
বিদেশ চলে যাই। বিদেশ পাঁচটি বছর
কাটিয়েছি আদিবার কথা ভেবে। মনে
পড়লে অনেক বুকের ভিতর কস্ট চলে আসে।
মেয়েটা আমাকে সত্যি ভালোবাসতো।
আমি না বুঝে হারিয়েছি থাকে। প্রতি
মুহৃত্ব আদিবা মিছ করেছি।
একদিন আদিবাকে বললাম,
আদিবা বিয়ের জন্য কেমন আনন্দে আছো।
(আমি)
তুই জানলি কি করে।(আদিবা)
আমার খবর রাখিছনা তুই,ভাবছিস আমি
তোর খবর রাখিনা।(আমি)
হুম ভালোই আনন্দে আছি।(আদিবা)
আদিবার সাথে কথা বলার সময় বুকের
ভিতরের কস্ট আরো ভেড়ে যায়।মেয়েটির
মায়াবী চেহারা,মায়াবী চোখ আমায়
পাগল করে দেয়। অনেক কস্ট বুকে জমা।
নিজের ভুলে হারিয়েছি,এখন নিজেই
কপালে মারছি। মনে মনে ভাবলাম আদিবাকে
বলবো আমার সব কথা।
দশদিন পর আদিবাকে বললাম।
আদিবা তোমার সাথে আমার একটু কথা
আছে।(আমি)
হা বলো।(আদিবা)
জানি আমি নিজের ভুলে তোমাকে
হারিয়েছি, কিন্তু পাঁচটি বছর তোমাকে
প্রতি মুহৃত্ব মিছ করেছি, আমি সেদিন
বুঝতে পারিনি। (আমি)
এখন এইসব বলে লাভ নেই।(আদিবা)
প্লিজ একটু বুঝার চেস্টা করোনা,আমি
তোমাকে অনেক সুখে রাখবো।(আমি)
প্লিজ এসব বলে, হুদাই লাভ নেই।(আদিবা)
প্লিজ একটু বুঝার চেস্টা করো।(আমি)
লাভ নেই, এতে যেভাবে আছো, সেভাবে
থাক, বিয়েতে আনন্দ ফুর্তি করে যাবে।
(আদিবা)
সেদিন অনেক কান্না করে চলে আসি।
বুকের ভিতর অনেক কস্ট জমা নিয়ে চলে
আসলাম তাদের বাড়ি থেকে। কয়েকদিন পর
আদিবার বিয়ে হয়ে যায়। আদিবা সুখেই
আছে। কিন্তু আমি সুখে নেই। প্রতি মুহৃত্ব
আদিবাকে মিছ করি। এখনো আদিবাকে
অনেক ভালোবাসি। আদিবাকে অনেক
ভালোবেসেছিলাম।
(সমাপ্ত)

"ভালবাসা"

অনু এবং আদি।তারা দুই জন দুই জন কে পাগলের মত ভালবাসে।তারা কখনই কেও কাও কে হারাতে চাই না। আদি অনু কে ক্লাস 6 থেকে পছন্দ করত।কিন্তু কখনই মুখ ফুটে বলতে পারে নি যে সে অনু কে ভালবাসে কারন যদি অনু এই কথা টা জানার পর আদির সাথে কথা না বলে,যদি তাদের বন্ধুত্ব টা শেষ হয়ে যাই এই ভয়ে। তারপর,প্রায় 2 বছর এই ভাবে যাওয়ার পর তারা 2 জন ক্লাস 8 এ উঠলো।তারা তখন একই স্যার এর কাছে পরতো।জে এস সি পরিক্ষা দেয়ার পর আদি জানতে পারল যে অনু এক টা ফেসবুক আইডি খুলেছে।আদি সাথে সাথে অনুর আইডি তে রিকুয়েস্ট পাঠাই। সন্ধার দিকে আদি তার ফেসবুক এ লগ ইন করে দেখে যে এক টা নোটিফিকেশন এসে রয়েছে।নোটিফিকেশন. টা চেক করে দেখে যে অনু তার রিকুয়েস্ট টা এক্সেপ্ট করেছে। তারপর তাদের কথা চলতে থাকে। এই ভাবে 2-3 দিন গভীর রাত পযন্ত তাদের অনেক কথা হতে থাকে।একদিন অনু আদি কে জিজ্ঞাসা করল যে আদি কি কোনো মেয়ে কে পছন্দ করে করে কিনা,আদি তো অনুর কথা গুলা দেখেও না দেখার ভান করে রয়েছে।আদি উত্তর দিচ্ছে না দেখে অনু আদি কে জোর করে।আদি অন্য কোনো দিক না ভেবে অনু কে বলে দেয় যে সে অনু কে ভালবাসে,খুব ভালবাসে।এই মেসেজ টা আদি অনু কে সেন্ড করে অনু মেসেজ টা সিন করে রেখে দেয়।আদি দেখল যে অনু তার মেসেজ টা দেখেছে।তারপর হটাৎ দেখে যে অনু ফেসবুক থেকে চলে গেসে।আদি প্রচন্ড ভয় পেয়ে গিয়ে ছিল।আদি মনে করে ছিল যে অনু তার অপর রাগ করেছে।এই ভাবে কিছু আজগুবি চিন্তা মাথাই আসলো আদির।তারপর দেখল যে অনু রিপ্লাই দিছে যে,দেখ আদি আমি তোকে কখনই ভালবাস তে পারব না।কারন আমি আর তুই সেম ক্লাস এ পড়ি আর আমাদের বয়স ও একই।আমরা যদি রিলেশন শুরু করি তাহলে আমাদের এই রিলেশন. টা আমাদের ফ‍্যামিলির কেউই মানবে না।উল্টে আর ও অনেক প্রব্লেম ক্রিয়েট হবে।এই ভাবে অনেক কিছু বলতে লাগল অনু আদিকে।কিন্তু আদি শুধু এক টা রিপ্লাই দিচ্ছিলো যে "আমি তোমাকে ভালবাসি,খুব ভালবাসি" এই ভাবে চলতে থাকল অনেক কথা।তারপর অনু বলল যে আমি তোর সাথে দেখা করতে চাই।আদি বললো ঠিক আছে কবে দেখা করবি বল?অনু বললো 23 ডিসেম্বর সন্ধার সময় নদীর ধারে।আদি বললো আচ্ছা।তারা 2 জন দেখা করল আদি অনু কে অনেক কিছু বলেছে।অনেক ভাবে বুঝিয়েছে তার ভালবাসার কথা । অবশেষে অনু আদির ভালবাসার কথা টা বুঝতে পারে।এবং সেদিন আদিকে অনু মুখ ফুটে বলে যে আই লাভ ইউ।এই ভাবে তাদের সম্পর্ক শুরু হই।তারপর ক্লাস 9 পার হয় অনেক মজার সাথে।কিন্তু ক্লাস 10 এ উঠার পর থেকেয় অনু কেমন যেন পাল্টে যাই। সে নাকি আদি কে ভালবাস্ তে পারবে না আর।আদি খুব কষ্ট পাই এই কথা টা শোনার পর।কিন্তু আদির কষ্ট টা অনু না বুঝে একদিন বলে দিল যে আমাদের রিলেশন ব্রেক আপ।আদি খুব কষ্ট পাই।খুব কান্না করে এটা শুনার পর।কুরবানি ঈদ ছিল তার ঠিক 2 দিন পর।আদি এই ঈদ টা খুব কষ্ট করে কাটিয়েছে।সারাদিন এক টি বারের জন্য ও হাসে নি।ঈদ এর দিন সন্ধার দিকে আদি অনু কে ফোন দিল অনু কথা বলবে না বলছিল কিন্তু আদি জোর করাতে অনু ফোন ধরে আদিকে যা নয় তাই বলে অপমান করল।আদি মন খারাপ করে বসে ছিল সেটা দেখে আদির বন্ধু গুলা আদি কে জিজ্ঞাসা করল যে কি হয়েছে?কিন্তু আদি কোনো উত্তর না দিয়ে কান্না সুরু করল।তার বন্ধু রা তাকে সান্তনা দিয়ে কান্না থামিয়ে বাসাই পউছে দিয়ে গেল।আদি বাসাই এসে রাতে অনু কে ফেসবুক এ মেসেজ দিল অনু তখন ও বললো যে সে নাকি আর আদিকে ভালবাসে নাহ।আদি অনুর অপর অভিমান করে বলেছিল যে ঠিক আছে ব্রেক আপ।কিন্তু আদি জানতো যে অনু এটা মন থেকে করছে না।তাই সে অনু কে দেখিয়ে দেখিয়ে অন্য এক টা মেয়ের সাথে প্রেম এর অভিনই করে এবং অনু আদির এই প্রেম এর কথা টা জানার পর খুব কান্না করে ছিল।অনু তার বেস্ট ফ্রেন্ড সেনভা কে এই সব কিছু বলে।সেনভা আদি কে বলে।এবং আদি সেনভা কে সব কিছু খুলে বলে,যে সে কি কারনে এই অভিনই টা করে অনুকে কষ্ট দিতে চেয়েছিল।সেনভাকে দেয়া এই মেসেজ টা অনু দেখে ফেলে সেনভার আইডি থেকে।অনু শিকার করে তার ভুলের কথা এবং আদির কাছে ক্ষমা চাই,অতঃপর আদিও ক্ষমা চাই অনুর কাছে তা কে কষ্ট দেয়ার জন্য। তারপর থেকেই আবার শুরু হয় আদি আর অনুর পুরানো ভালবাসার নতুন অধ্যায়।নতুন সুচনা হয় তাদের ভালবাসার মধুর সম্পর্কের।
সত্যি কারের ভালবাসা গুলা এমনই হয়,শত বাধা বিপত্তি পেরিয়েও আবার এক হয়ে মিলে যাই।

রংহীন বেদনার কাব্য

রাতের আকাশটা দেখতে খুব
ভালোই লাগছে লিখনের।ছাদে
বসে পায়ের উপর পা তুলে
একের পর এক সিগারেট বের
করে ফুকছে আর আকাশের দিকে
তাকিয়ে ধোয়া ছুড়ছে।একটা
কষ্টের পাহাড় লিখনের মন
উঠোনে দাড়িয়ে আছে।
ফোনস্ক্রীনে বার বার আলো
জলছে আর নিভছে।কোনো দিকে
খেয়াল নেই লিখনের।
**
রাত গভীর হয়েছে।প্যাকেট
থেকে সিগারেট বের করতে
গিয়ে ফোনের দিকে নজর পড়ল।
আলো জলছে আর নিভছে।ফোনটা
হাতে তুলে নিলো লিখন।
মেঘলার ফোন আসছে।লিখন
ফোনটা আবার টেবিলে রেখে
দিয়ে এক মনে সিগারেট
ফুকছে।
**
কি হয়ে গেলো একটু সময়ের
ব্যাবধানে!আর কখনো যাযাবর
জার্সিতে মাঠে নামতে পারবে
না লিখন।বল হাতে নিয়ে
কখনোই উইকেট তোলার
দায়িত্বটা আর থাকবে না
তার।ভাবতে ভাবতেই কেঁদে
ফেলল লিখন।কিছুক্ষন পরে
আবার মেঘলার ফোন।লিখন
ফোনটা রিসিভ করলো...
**
-লিখন,তুমি একটু দেখা করতে
পারবা?(মেঘলা)
-কখন,কোথায়?(লিখন)
-এখনি।তোমার বাসার নিচে।
-না।তুমি আমার সাথে আর
যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে
না।
-লিখন,শুধু একবার দেখা করো।
কাল থেকে চিরদিনের জন্য
তোমার জীবন থেকে চলে যাব।
প্লিজ লিখন।
**
লিখন ফোনটা কেটে নিচে
নামলো।মেঘলা মেয়েটা অনেক
ভালো।লিখনকে নিজের
চাইতেও বেশি ভালোবাসে
মেয়েটি।কিন্তু লিখন কেন
জানি ওকে ভালোবাসতেই
পারেনা।আর বাসবেই বা কি
করে!
লিখনের ভালোবাসার
মানুষটিতো লিখনকে ছেড়ে
কবেই
চলে গেছে।সেই থেকে লিখন
আর কাউকে আপণ করতে
পারেনা।
**
-কি হয়েছে?কিছু বলবা?
(লিখন)
-হ্যাপি বার্থডে লিখন।
(মেঘলা)
-থ্যাংস।আর কিছু বলবা?
-হুম।অনেক কিছু বলতে চাই।
-তারাতারি বলো।
-আমি তোমাকে ভালোবাসি
লিখন।
-আমি কাউকে ভালোবাসিনা
মেঘলা।তাছাড়া এখন আমার
জীবনটা শূন্য।আমি আর ক্রিকেট
খেলতে পারবোনা কখনো।আমার
সব আশাগুলো আস্তে আস্তে শেষ
হয়ে যাবে আমার চোখের
সামনে অথচ আমি কিছুই করতে
পারবোনা।তুমি চলে যাও এখান
থেকে।আমাকে ভেবে কষ্ট
পেওনা।
**
লিখন চলে গেলো নিজের ঘরে।
মেঘলাও কাঁদতে কাঁদতে চলে
গেলো।লিখন কেন ওকে মেনে
নিতে পারেনা?কি কম আছে
ওর?আর কিছুই ভাবতে পারছেনা
মেঘলা।কাল মেঘলা চলে যাবে
গ্রামের বাড়িতে।লিখনের
থেকে প্রায় সাত'শ
কিলোমিটার
দুরে।কিন্তু লিখনকে ভুলে যেতে
পারবে কি?ওর খেলা,ওর রাগ
এগুলো কিভাবে ভুলবে মেঘলা?
**
লিখন বালিশে মুখ গুজে
কাঁদছে।অনেক স্বপ্ন ছিলো
ক্রিকেট নিয়ে।স্বপ্নগুলো যে
স্বপ্নই থেকে যাবে।কেন তখন
স্যারের সাথে যে ঐ রকম
ব্যবহার করলো?কেন স্যারকে
খারাপ কথা বলতে গেলো এটা
ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লো
লিখন।
**
আজ মেঘলা চলে যাবে লিখনকে
ছেড়ে,লিখনের শহর ছেড়ে।
শেষবারের মতো লিখনকে
দেখতে মেঘলা লিখনের বাসায়
আসলো।লিখন এখনো ঘুমাচ্ছে।
কয়েক বার ডাকতে গিয়েও
ডাকতে পারলোনা।লিখনের
বিছানায় বসে আছে মেঘলা।
লিখনের দিকে অপলকে তাকিয়ে
আছে।কাঁদতে কাঁদতে লিখনের
চোখজোরা ফুলে উঠেছে।
**
মেঘলা ভাবছে ছেলেটা কত
শান্ত দেখতে।অথচ এতোটা
কান্না করতে পারে তা জানার
বাইরে ছিলো।সাহস করে ডাক
দিলো লিখনকে।
**
-লিখন,এই লিখন!উঠো না।
দেখো আমি চলে যাচ্ছি।আর
আসবোনা তোমাকে বিরক্ত
করতে।(মেঘলা)
-কি হয়েছে মেঘলা?এতো
সকালে তুমি?আর আমার রুমে
কেন?(লিখন)
-আমি চলে যাচ্ছি লিখন।আর
কখনো দেখা হবে কিনা
জানিনা!তোমাকে এই বেইসলেট
টা দিয়ে গেলাম।এটা হাতে
পড়ো।হয়ত আমাকে মনে পড়বে।
**
কথাটি বলেই লিখনের ঘর
থেকে বেড়িয়ে গেলো মেঘলা।
লিখন মেঘলার যাওয়ার দিকে
কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে
প্যাকেট দিয়ে সিগারেট বের
করে ফুকতে শুরু করলো আর মনে
মনে ভাবলো,,ছেলেদের
জীবনটা বড়ই বেমানান।তাই
বেদনার আচর লাগতে দিতে
নেই।
**
সেই থেকেই লিখন আর মেঘলার
জীবন দুদিকে প্রবাহিত হতে
থাকলো আর লেখা হলো আরেকটা
"রং হীন বেদনার"কাব্য।
**

Love - Fantasy - Relation

জেনি নামের মেয়েটা সবেমাত্র ক্লাস ১০ এ পড়ে, ভালোই স্মার্ট।
ফেসবুকে ৩০০-৪০০ লাইক এমনেই পড়ে। দিনের পর দিন কত ছেলে প্রোপজ করে, কতজন কেঁদে ফেলে এইসব দেখে ভিষন হাসি পায় মাঝে মাঝে তার, আর মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে উল্টা পালটা কথা শুনিয়ে দেয়।
যাই হোক তার এইসবের ভিতর ইন্ট্রেস্ট নাই। রিলেশন টিলেশনের জন্য টাইম নাই, বান্ধবীদের নিয়ে ঘুরতে যাওয়া টাওয়া ইত্যাদি এইসবেই অনেক আনন্দ আর ভালই দিন কাটছে।
`
অন্যান্য গল্পের মত তার জীবনেও আগমন রাফির, টুকটাক কথা, কি জানে এত্ত সুন্দর করে কথা বলে সাপোর্ট দিয়ে কয়েকদিনেই মন জয় করে নিয়ে গেল। তারপর মেসেঞ্জারে কল দিয়ে কথায় কথায় আকৃষ্ট হয়ে পড়ে, একদিন ভিডিও কলেও কথা হয়ে গেল, জানতে পারল তারা দু'জন একি এলাকার বাসিন্দা, আরো ভালো দেখাও হয়ে গেল এরি মধ্যে কয়েকবার ।
`
হঠাং ঝড়ের বেগে আসা ভালোবাসা, মেয়ের প্রফাইলে এখন আর সেলফি আর ভাবওয়ালা ইংলিশ পোষ্ট গুলা দেখা যায়না, বাংলায় স্টাস্টাস দেওয়া শুরু করছে তাও আবার রোমান্টিক টাইপ, বলতে গেলে সবাই অবাক হয়ে গেছে। এই আর কি জেনি আশায় বসে আছে কবে রাফি প্রপোজ করবে, কারণ মেয়েরা তো আগে প্রপোজ করতে পারেনা। যাই হোক গল্প সবে মাত্র শুরু।
রাফির ম্যাসেজ...
- আজকে একটু দেখা করতে পারবা? (রাফি)
- কখন?
- বিকালে, ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার?
- আচ্ছা আসব।
`
জেনি তো খুশি, সে ভাবছে আজ হয়ত বলেই দিবে, তাই একটু সাজুগুজু করেই বেড়িয়ে গেল বিকাল বেলা। রিক্সা নিয়ে পৌছে গেল ৩২ নাম্বার।
কিছুক্ষণ পর রাফির দেখা, মিষ্টি হাসি দিয়ে চলে হাটতে লাগল রাফি নিয়ে গেল সুনসান এক জায়গায়, মাটিতে হাটু গেড়ে প্রপোজ করে দিল জেনিকে, জেনি দু'হাত মুখে দিয়ে পারছেনা খুশিতে পরে যেতে, এক্সপেক্ট করে ফেলল একজন আরেকজনককে জড়িয়ে ধরল। এটা হয়ে যায় ইচ্ছা থাকুক আর না থাকুক।
`
তারপর কি ঘুরাঘুরি ফেসবুকে সো অফ, বন্ধুদের কাছে সো অফ করতে লাগল রাফি, আর জেনি তার বান্ধবীদের শুনায় তাদের রিলেশনের খুনশুটি কাহিনী।
`
বেশকিছু দিন যাওয়ার পর ফ্যান্টাসির তারনায় লিপ কিস হয়ে গেল, অবশ্য রোমান্স না হলে রিলেশন জমে না। এতে কারোই আপত্তি ছিলনা মানে জেনির ও না আর রাফির তো আরো না।
`
দিনের পর দিন চলতে লাগল ৩ মাস হয়ে গেছে তাদের রিলেশনের।
কথায় আছেনা মানুষ যত পায় আরো বেশী চায়, রাফির চাহিদাটাও বেড়ে গেল, বুঝতেই পারছেন কি রকম চাহিদা।
জেনিও ফেসে গেছে মানা করতে পারছেনা কিন্তু আবার এতদূর যাওয়াও ঠিকনা। অনেক বুঝা তুঝার পর রাফি শেষমেশ আপত্তিকর জায়গায় ছুঁয়েই ফেলল, এর বেশী জেনি পারবেনা।
`
যাই হোক রিলেশনশিপ শব্দ থাকলে, ব্রেকাপ শব্দটাও আছে কথা কাটাকাটি ব্রেকাপ ঝড় কান্না সব গেল জেনির উপর দিয়ে। এখন তার কাছে সব ছেলেই খারাপ, ফেসবুকে পোষ্ট করছে এইসব আর অনেকে ইনবক্স এ ঝড় তুলছে যা ইচ্ছা বলছে।
সবার ওই একটাই কথা 'সব ছেলে কি আর এক'
যাক এইসব থেকে বের হতেও সময় লাগেনি ১ মাসের সময় লাগে সব ঠান্ডা হতে। সে আর কোনো রিলেশনে জড়াবেনা।
`
এরই মাঝে প্রায়ই ম্যাসেজ আসত 'Md Irfan Robo' নাম করে ছেলের কাছ থেকে, জেনির ফেসবুক ফ্রেন্ড অনেকভাবে বুঝায় , কিন্তু জেনি পাত্তা দেয়না। ভাবার সময় নেই যত্তসব বলে দেয় ছেলেটাকে।
`
জেনি অনিচ্ছা সত্যে আবার রিলেশনে ঢুকে অন্য আরেক ছেলের সাথে, ওই ছেলের সাথে সাবধানে থাকে, টাচ ই করতে দেয়না। দুর্ভাগ্য এই ছেলেটাও আকৃষ্ট করে ফেলে তাকে, কোনো এক বিল্ডিয়ের নিচ তলায় হঠাং কিস হয়ে যায় আবার। চলতে থাকল এমন আবার।
এই রিলেশনও যায় ১মাস কারণ রাফির আগমন আবার ঘটে তাই সে ওই ছেলের সাথে ব্রেকাপ করে। কারণ মেয়েরা যত্তই হোক প্রথম ভালোবাসার কাছে ফিরে যেতে মন চায়, আর রেডি থাকে সর্বকক্ষন।
`
এইদিকে ওই ছেলেটা রাগে ক্ষুদ্ধ আর সহ্য করতে পারছেনা, ছেলেটা ভালোই তো বাসছিল, সহ্য না করতে পেরে, মেয়ের ইনবক্স এ তাকে বুঝায় কিন্তু মেয়ে পালটা ব্লক মারে।
`
ছেলে এবার অন্যভাবে যোগাযোগ করে জেনিকে Prostitute বলে দেয়, জেনির চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝড়তে থাকে, ছেলেটির এমন বলা ঠিক হয়নি, আবার অনেক কান্নাকাটির পর জেনি বুঝতে পারে তারই দোষ।
কি করবে এভাবে চলতে থাকলে তার ইজ্জত থাকবেনা, এখন এসব কথা চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে, এক বন্ধুর থেকে অন্য বন্ধু তারপর আর কি চলছে.....
___________________________
কিছু কথা এত্তক্ষন কি পড়লেন? সব জলদি জলদি হয়ে গেল? কিন্তু বড় করে লেখার কিছু নেই পুরোটা ঘটনা বাস্তব একজন না দু'জন না বহু মানুষের জীবন এর সাথে মিলিয়ে লেখা। আপনার জীবনে ভালোবাসা আসে, আপনি জানেন এটা ঠিক না উপযুক্ত বয়স না তারপরেও কেন জানি বুঝলেও বুঝা হয়না ঢুকে পড়েন রিলেশনে ৮৫% মেয়ের কাহিনী হয় জেনির মত। কোনো মেয়ের অধিকার নাই কোনো ছেলে থেকে ধোকা খাওয়ার পর পুরো ছেলে জাতিকে খারাপ বলা।
পুরো ছেলে জাতি এসে আপনাকে বলে নাই রিলেশন করতে, আপনার চয়েজ ভুল ছিল, সিন্ধান্ত ভুল, বলতে পারেন নিজেই ফেসে গেছেন।
`
জীবনেও রাফির মত খেয়ে ছেড়ে দেওয়া পাবলিক থাকলেও ইরফানের মত ছেলেও থাকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য আর বুঝানোর মত। হ্যা সবার জীবনেই থাকে, ৯০% কেয়ার করেনা সেইসব ছেলেদের কারণ কি? ভুল চয়েজের কারণে আপনি ধোকা খান, সঠিক সিন্ধান্ত নেন, সঠিক মানুষ চয়েজ করেন, যে আপনাকে সাপোর্ট করে এর মানে তা নয় যে সে আপনাকে সঠিকভাবে সাপোর্ট করছে, আপননি ভাবেন ছেলেটা আমাকে বুঝে ঠিক কতটা বুঝে? শেষে গিয়ে ছেলেটা বের হয় রাফির
মত।
`':::::::::
এইটা খেয়াল রাখবেন কিছু মানুষ আপনাকে সঠিক কথা বললে আপনি বিরক্ত হন, ভাবেন সে আপনাকে অপমান করছে একটু পজেটিভলি ভাবেন দেখতে পাবেন অপমান না কথা সঠিক ছিল আর আপনার উপকারো হত।
`
রাফির মত মানুষরা ভালোবাসা বেশী পায় আর ভবিষংতেও পাবে কারণ তারা হ্যা এর সাথে হ্যা মিলিয়ে কথা বলে আর আপনার তাকে ভালো মনে হয় তারপর অবস্থা হয় জেনির মত।
`
মানুষ চিনতে সামান্য ভুল আপনার জীবনের বড় ভুল গুলোর মধ্যে অন্যতম, সর্তক হউন এটাই আমার কামনা।
মানুষ চিনতে ভুল করবেন না, নাহয় ভয়ানক কিছুর সম্মুখীন হতে সময় লাগবে না
`
`

আবেগী ভালোবাসা

দূর ছাতা! আজকেও মনে হয় ক্লাসটা মিস হলো! ক্লাসটা আর ইকটু দেরি করে শুরু হলে কি এমন ক্ষতি হতো..... এসব কথা ভাবতে ভাবতেই রিক্সাওয়ালাকে তাগাদা দিতে থাকে ইরা। "মামা ইকটু তাড়াতাড়ি চালান না, দেরি হয়ে যাচ্ছে"। রিক্সাওয়ালা মামা পেছন ফিরে ইরার দিকে তাকিয়ে একটা শুকনো হাসি দিয়ে বলল, "যাইতাছিই তো.... আমার রিস্কা তো আর প্লেন না যে উড়াইয়া লইয়া যামু"। উত্তরটা পছন্দ হলোনা ইরার। মেজাজটা চড়ে গেলো। ইরার ইচ্ছা করছে যে এই মুহুরতে রিক্সা থেকে নেমে পারলে পায়ে হেটে যায়। কিন্তু ইরা তা করলো না। চুপচাপ বসে রইলো। ইরা গ্রামের মেয়ে। অত্যন্ত সহজ-সরল ও খুবই মেধাবী ছাত্রী। এইচ.এস.সি পরীক্কা শেষে ঢাকায় ভরতি কোচিং করতে আসে। প্রাইমেটস নামে একটি নামকরা মেডিকেল ভরতি কোচিং এ ভরতি হয়। তার লক্ষ একটাই আর তা হচ্ছে ডাক্তার হউয়া। ইরার মা এস.এস.সি পরীক্ষার সময় মারা যান। মার ইচ্ছা ছিলো তার মেয়ে ভাক্তার হবে। মার ইচ্ছা পূরণের জন্যই ইরার শহরে আসা। . কোচিং এ ইরা বরাবরই প্রথম হয়। সেজন্য নিশ্চিত চান্স পাবার সম্ভাবনাময় ছাত্রী হিসেবেই সে বিবেচিত ছিলো। কোচিং এর স্যাররা তার প্রতি এক্সট্রা কেয়ার নিতো। এনাদের মদ্ধে এনামুল স্যার ইরার ইকটু বেশিই কেয়ার নিতো। তবে তার অতিরিক্ত কেয়ার নেউয়াটা ইরার তেমন একটা পছন্দ ছিলো না। . মেডিকেলের পরীক্ষার আর ২ দিন বাকি। কোচিং এ লাস্ট ক্লাস। অন্যান্য সবার মতন ইরাও আজ সেজে এসেছে। সবুজ পাড়িওয়ালা নীল রং এর শাড়ীতে ওকে অপূর্ব লাগছিল। এনামুল স্যারও উপস্থিত ছিলেন। শেষে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এনামুল স্যারের কাছ থেকে ইরা বিদায় নিতে গেলে স্যার তাকে অনেক আশা দিয়ে তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করে বিদায় দিলেন। . মেডিকেলের পরীক্ষা শেষে রেজাল্ট বের হলো। ইরা ১৫ তম স্থান অধিকার করে। এনামুল স্যারকে সে তার রেজাল্ট এর খবর জানাতে স্যার তাকে অনেক অভিনন্দন জানান। এরপর স্যারের সাথে প্রায়ই ইরার কথা হতে থাকে। নানান সময়ে নানাভাবে এনামুল স্যার ইরাকে সাহায্য করে যান। . ওদের সম্পর্কটা ধিরে ধিরে ভাললাগা আর এর পর ভালবাসায় রুপ নেয়। ইরার সারাটা পৃথিবী জুড়ে তখন শুধু এনামুল। এনামুলও পাগলের মতন ভালবাসতো ইরাকে। . একদিন ইরা এনামুলকে ফোন করে দ্যাখা করতে বলে। বলে যে খুবই জরুরি কথা আছে। এনামুল ও তাই কাজ ফেলে দ্রুত চলে আসে। ওরা কাঁটাবনের একটা কফিসপে বসে আছে। এমন সময় ইরা এনামুলের হাতে হাত রেখে বলে যে, আমি আজ তোমাকে সত্য একটা কথা বলবো। আজ থেকে তিন বছর আগে আমি আমার এক দূর সম্পর্ক এর মামীরর বাড়িতে যাই বেড়াতে। মামীর বড় ছেলে আমার সমবয়সী ছিলো। নাম রায়হান। ওর সাথে আমার অল্প কদিনের মধ্যেই ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়। একদিন রায়হানের সাথে মামীর বাড়ীর পিছনে ধানের ক্ষেতে বেড়াতে যাই। আমরা হাঁটতে হাঁটতে ধানক্ষেতের গভীরে চলে যাই। হঠাত রায়হান আমার হাত চেপে ধরে। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই ও আমার ওড়না দিয়ে আমার মুখ বেঁধে ফেলে। জোর করে আমাকে অপদস্থ করে। আমার সম্ভ্রম কেড়ে নেয়। লোকলজ্জার কারনে আমি কাউকেই কিছু না বলে চলে আসি। বিশ্বাস করো এনামুল, এতে আমার কোন দোষ ছিলোনা। আমি তোমাকে হারানোর ভয়ে এতদিন কিছু বলিনি। কিন্তু তোমাকে আমি ঠকাতে পারবোনা। তাই সত্যটা বললাম। এখন তুমিই সিদ্ধান্ত নাও যে তুমি কি করবে। কথাগুলো বলে ইরা ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। . এনামুল আস্তে করে ইরার হাতটা ওর হাতের উপর থেকে সরিয়ে নিলো। বললো যে, ইরা আমি তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু তোমার ভাগ্যের জন্য হোক আরর যে কারনেই হোক তুমি আমার চোখে এখন একজন চরিত্রহীনা নারী। তোমার মত একজন চরিত্রহীনা মেয়েকে আমি কখনোই বিয়ে করতে পারবো না। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। কথাগুলি বলে এনামুল চলে যায়। ইরা পিছন থেকে নিশপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। তার চোখ থেকে অবিরত ধারায় অস্রু ঝরতে থাকে। . কিছুদিন পরে এনামুলের ফনে একটা মেসেজ আসে। ইরা লিখেছে... তোমাকে সেদিন আমি যে ঘটনাটা বলেছিলাম সেটা তোমাকে পরীক্ষা করার জন্য বলেছিলাম। আমার জীবনে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমি দেখতে চেয়েছিলাম যে তোমার ভালবাসার গাড়ত্ব কতটুকু। তোমার কাছ থেকে আমি বাস্তবতার শিক্ষা নিলাম। তুমি ভাল থেকো। ভালো কোনো মেয়ে দেখে বিয়ে করো। খুদা হাফিয। এনামুল মেসেজটা পড়ে নিশপলক শুধু চেয়ে থাকে আর নিজের ভুলের অনুসচনা করতে থাকে। কিন্তু ততক্ষনে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে.....।

শনিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৬

যখন সময় থমকে দাঁড়ায়

কোথাও থেকে টুপটাপ পানি পড়ার শব্দ আসছে। ক্রমেই যেন বাড়ছে পানির শব্দটা, ক্রমেই অসহ্য হয়ে উঠছে নিলয়। ইনসমনিয়াক কারো কাছে এক টুকরো ঘুমের চাইতে কাঙ্ক্ষিত আর কিছুই নেই। পানি পড়ার শব্দটা নিলয়ের ধরে আসা ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট। পাতলা কাঁথাটা সরিয়ে বিছানা ছাড়ে নিলয়। শব্দটা বন্ধ করতেই হবে, যেভাবেই হোক। না হলে আজ রাতেও এক ফোটা ঘুম আসবে না তার। কালি গোলা আঁধার ঘরটাতে। গভীর রাতেও লোড শেডিং। ছোট কাঠের টেবিলের উপর তিন ব্যাটারির টর্চ লাইটটা থাকার কথা, আজ সেটাও নেই। আন্দাজে উঠে গিয়ে দরজাটা খুঁজতে লাগলো নিলয়। পাঁচটা বছর হয়ে গেছে এই ছোট্ট ঘরটাতে, দরজা খুঁজে পেতে বেগ পেতে হলো না তাই। খুট করে ছিটকিনি খুলে বাইরে বের সে। সামনের খোলা প্রান্তর ঝিকমিক করছে সোনালী জোছনায়। আজ কি পূর্ণিমা?
জোছনার একটা দুর্নিবার টান আছে। প্রবল ঘুমে কাতর মানুষও জোছনা রাতে কিছু সময় পরিচিত পরিবেশের হটাত বদলে যাওয়া রূপটা দেখতে তাকিয়ে থাকে। নিলয় বুঝে গেছে, তার আর ঘুমানো হলো না আজকে। জোছনার আলোতে ঘরের ভেতর থেকে একটা চেয়ার টেনে বাইরে এসে বসে সে। মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে জোছনার দিকে। মনের মাঝে একটাই গান তখন - "আজ জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে, বসন্তের এই মাতাল সমীরণে ..."। একেই মনে হয় চাঁদনী পসর রাত বলে। হুমায়ুন আহমেদের সেই বিখ্যাত লাইন গুলো - "চাঁদনী পসর রাইতে যেন আমার মরণ হয়….."। এমন মায়াময় রাত্রিতেই তো মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা যায়। জোছনার মায়ায় ভুলে যাওয়া যায় অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ।
আচ্ছা, এত সুন্দর একটা রাতে সে মৃত্যুর কথা ভাবছে কেন? হুমায়ুন আহমেদই বা কেন ভেবেছিলেন? এই সময়ে তো আনন্দময় কিছু ভাববার কথা। পূর্ণ চাঁদের আলোয় তো বিষণ্ণতা মাখানো থাকবার কথা নয়। একটা যুক্তি অবশ্য আছে। বানভাসি জোছনার সৌন্দর্যের মাঝে মানুষ জীবনের পূর্ণতা খুঁজে পায়। সে মনে করে তার জীবনের সব চাওয়া পূরণ হয়েছে। এখন আর চাইবার কিছুই নেই। চাহিদা বিহীন জীবন অবশ্যই অস্বস্তিকর হবার কথা, নিরানন্দ হবার কথা। সে জন্য মানুষ মরে যেতে চায়।
ট্রাউজারের পকেট থেকে সেল ফোনটা বের করে নিলয়। অনেক দিন অনেক বছর অযত্নে ফোন বুকের এক কোণায় পরে থাকা নীলার নাম্বারটা খুঁজে বের করে। গত পাঁচ বছরে এই নাম্বারে আর কল দেবার প্রয়োজন অনুভব করেনি সে। কি হবে কল দিয়ে? যে নিতান্ত অবহেলায় তাকে মাঝ রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রেখে চলে গেছে, তাকে পিছু ডেকে বিরক্ত করবার কোন মানে নেই। অথচ কি জীবন্ত ছিল সেই দিন গুলো। রাত বিরাতে হুট করে সেল ফোনে মেসেজ “একটা কল দে তো”।
- ঘুম ভাঙ্গালি কেন? কি হয়েছে?
- স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়েছি, আমাকে শক্ত করে একটু জড়িয়ে ধরবি? ভয় পাওয়া কাঁপা কাঁপা গলা নীলার। সচকিত নিলয় তখন।
- আয়, আমার কাছে আয়, আমি আছি তো, তোর পাশেই আছি, তোর কাছে আছি, কোন ভয় নেই। স্বপ্ন দেখে কেউ ভয় পায় রে পাগলী। কি দেখেছিলি স্বপ্নে?
- রাসেদ ...
গলা আবারও কাঁপে নীলার।
- আরে, ও তোর কি করবে? তুই তো আমার বুকের মধ্যে আছিস। তোকে কেউ স্পর্শ করতে পারবে না এখন।
- হু, আমাকে শক্ত করে ধরে রাখ তুই, আমার ভয় কাটছে না।
শত মাইলের ব্যবধানে থেকেও সে সময় নীলাকে জড়িয়ে রাখতো নিলয়। এ কথা সে কথা বলে ওর ভয়টা কাটিয়ে দিতো। এক সময় কথা বলতে বলতেই ঘুমিয়ে পড়তো নীলা। নিলয় চুপ করে থাকতো তখন, ওর ভারী নিশ্বাসের শব্দটা শোনা পর্যন্ত অপেক্ষা করতো, এরপর লাইনটা কেটে দিতো।
রাসেদ, সেই ইতরটাকে হাতের কাছে পেলে এখনও গলা টিপে মারবে নিলয়। তের চোদ্দ বছরের নীলার সাথে ভালবাসার অভিনয় করে যে এক সময় আঁস্তাকুড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে গিয়েছিল নীলাকে। অবশ্যই তার যে টুকু পাবার ছিল, সেটুকু নিয়েই। নীলা নিজেই বলতো –
- রাসেদ কখনই ভালবাসেনি আমাকে। আমি ছোট ছিলাম, আমি অবুঝ ছিলাম। বাসায় কেউ না থাকলেই ও আসতো। কিছুক্ষণ অহেতুক বকবক করে আমার শরীরটা নিয়ে খেলতো। আমার কষ্ট হতো, আমি বলতাম ওকে, কিন্তু ওকে কিছুতেই বাঁধা দিতে পারতাম না। আমার ঠোট কেটে যেত, গালে গলায় লাল লাল চাকা চাকা দাগ হয়ে থাকতো। অনেক কষ্টে আমি সেই দাগ লুকাতাম, ব্যথার জন্য পেইজ কিলার খেতাম। ও চলে গেলে প্রতিবার খুব কাঁদতাম, সারা রাত জেগে কাঁদতাম। আমি অনেক সময় ওর সাথে আনমনে আমার স্বপ্নের কথা, আমার ভালবাসার কথা, আমার পৃথিবীটার কথা বলে গেছি, এরপর কিছু জিজ্ঞেস করলে ও অবাক হয়ে তাকাতো, বলতো আমার কথা শুনছিল সে, আমার ভয়েজ শুনছিল সে, কিন্তু কোন কথাই তার মাথায় ঢুকছিল না। অবুঝ আমি ভাবতাম – কতই না ভালবাসে আমাকে, আমার গলার স্বরকে। আসলে সবই ছিল প্রতারণা। এরপর যখন ও চলে গেল, আমি ভয়ে কাউকে কিছু বলতে পারিনি। রাসেদের কথা ভাবলে এখনও আমার গায়ে কাঁটা দেয়। ও আমার জন্য খুব ভয়ঙ্কর একটা কিছু। এই শহরে চলে আসবার পরেও সেই ভয়টা আমার কাটেনি। এখনও যদি ঢাকার লক্ষ মানুষের ভীরে আমি রাসেদের মুখটা একটিবার দেখি, আমি নিশ্চিত অজ্ঞান হয়ে যাব।
নিলয়ের হাতের মুঠি শক্ত হয়ে ওঠে। প্রচণ্ড জোরে চেপে ধরে সেল ফোনটা। ওর নীলার সাথে কেউ এমন বাজে আচরণ করতে পারে, ও ভাবতেই পারে না। কিন্তু কি করবার আছে এত দূর থেকে। ওদের রিলেশন হবার আগেই নীলা ওকে এই কথাগুলো জানিয়ে দিয়েছিল। তারপর খুব অবাক হয়ে দেখেছিল কি করে নিলয় ওকে ওর নিজের হাতে গড়া অবিশ্বাস আর ঘৃণার সেই শুঁয়োপোকার গুটিটা থেকে বের করে আনলো। ভালবাসার উষ্ণতায় কি করে আরেকবার ওকে প্রজাপতির মত উড়তে শেখালো। নিলয় তার সমস্ত হৃদয়টা দিয়েই ভালবেসেছিল নীলাকে।
তারপর একটা সময় নীলার সাথে যোগাযোগটা কমে এলো। ওর অভিযোগ বা অভিমানী কথায় শুধু হাসতো নীলা। বলতো সে খুব ব্যস্ত, সময় পায়নি টেক্সট করার। অথবা, ফোন ব্যাগে ছিল তাই কল ধরতে পারেনি। নিলয় ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি যে নীলা আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে ওর কাছ থেকে। ওর ভালবাসার আকাশের সীমানা ছাড়িয়ে চলে যাচ্ছে অন্য কারও আকাশে। একদিন ওকে অবাক করে দিয়ে নীলা টেক্সট করে জানালো, ও কোন একটা ক্যাফেতে বসে আছে আরেকজনের সাথে। সেই ছেলেটা ওকে ক্লাস করতে দেয় নি, টেনে বের করে নিয়ে এসেছে। আজ সারাদিন ওদের বৃষ্টির মধ্যে রিক্সায় ঘোরার প্ল্যান। নিলয় এতটাই অবাক হয়ে গিয়েছিল, যেন বিশ্বাস করতে পারেনি টেক্সটের প্রতিটা অক্ষরকে। নীলার অনেক ছেলে বন্ধু, নিলয় জানতো। কিন্তু ও কখনও এই বিষয়ে প্রশ্ন তোলেনি, ওর প্রেমিকার ছেলে বন্ধু থাকতেই পারে, এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলার মত এতটা ছোট মনের মানুষ বলে নিজেকে ভাবতে পারেনি নিলয়। ওদের সাথে নীলা মাঝে মাঝে ঘুরতে যেত, খেতে যেত, গল্প করতো। নিলয়ের ভাল লাগতো যে মেয়েটা আনন্দ করছে, মজা করছে, ভাল আছে। কিন্তু নীলার আজকের কথাটা একদমই অন্য রকম। সন্দেহের দোলায় দোলে নিলয়ের মন।
এর কিছুদিন পর এক রাতে নীলার সাথে কথার শুরুতেই নীলা বলে –
- জানিস, কি যে ঝামেলা হয়ে গেছে। হুট করেই আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আগামী সপ্তাহেই বিয়ে। আমার আব্বু অবশ্য রাজি ছিল না। এদিকে ও এসে ধরেছে ভাইয়ার বন্ধু রনী ভাইয়াকে। রনী ভাইয়া তো আমাদের ফ্যামিলি মেম্বারের মতই। উনি কি করে যেন আব্বাকে রাজী করিয়ে ফেললেন। আমাকে একটিবার জিজ্ঞেস পর্যন্ত করেন নি।
নীলার গলায় এক ফোটা কষ্ট ছিল না। বরং একটা চাপা উত্তেজনা আর আনন্দ ছিল। নিলয় যেন পাথর হয়ে গিয়েছিল ওর কথা গুলো শুনে। স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, এই সেই ছেলে, যে ওকে ক্লাস করতে না দিয়ে টেনে আনে বাইরে, বৃষ্টির মধ্যে সারা দিন রিক্সা নিয়ে ঘোরে। আর নীলার সম্মতি ছাড়া এ বিয়ে হচ্ছে না। ও শুধু বলেছিল –
- নীলা, আমার কি হবে?
- দেখ, আসলে জন্ম মৃত্যু আর বিয়ে – এই তিনটা জিনিস মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কখন কার কি হয়ে যাবে কেউ জানে না। তুই অবশ্যই একটা লক্ষ্ণী টাইপের ফুটফুটে বউ খুঁজে পাবি। অবশ্যই ভার্জিন হবে সেই মেয়েটা। আমার মত এঁটো, সাত ঘাটের জল খাওয়া, কালো, অসুন্দর মেয়ে না।
- নীলা, আমি তো ফুটফুটে সুন্দর কোন মেয়েকে চাইনি। কোন ধরনের শর্ত ছাড়াই ভালবেসেছি তোকে। আমি তোর জায়গায় অন্য কোন মেয়েকে কল্পনাও করতে পারিনা।
- আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে সব। এক সময় কষ্ট পাবি না আর। তুই তো সব সময় চাইতি যেন আমি ভাল থাকি। এটাই মনে কর আমার ভাল থাকা। আমি তোকে মুক্তি দিয়ে গেলাম, তোর স্বপ্নটাও পূরণ করে গেলাম।
- আমার স্বপ্ন তো ছিলি কেবল মাত্র তুই ... গলা ধরে আসে নিলয়ের।
- স্বপ্ন তো স্বপ্নই রে বোকা। এটা তো সত্যি নয়। আর তোর স্বপ্নেই না হয় আমি তোর হয়ে থাকলাম। ... আশ্চর্য রকম শান্ত নীলার কণ্ঠস্বর।
- নীলা ... কেঁদে ফেলে নিলয়।
- দেখ, তুই যে কাঁদছিস, তোর কান্নার শব্দ আমার ভেতর কোন অনুভূতি সৃষ্টি করছে না। আমি ফোন রাখি।
ফোনটা কেটে দিয়েছিল নীলা। নিলয় আর ফোন করেনি ওকে। জানে কোন লাভ নেই। যে সুতোটা ছিঁড়ে গেছে, তাকে আর জোড়া লাগানো যাবে না। নীলাকে আর ফেরানো যাবে না। প্রচণ্ড কষ্টে পাগল হয়ে গিয়েছিল নিলয়। সারা দিন সারা রাত মন খারাপ করে থাকতো। মাঝে মাঝে শাওয়ার ছেড়ে শিশুর মত চিৎকার করে কাঁদতো। কাজের ফাকে একলা হয়ে গেলেও ওর চোখ চোখ দিয়ে নিজের অজান্তেই শ্রাবণের ধারা নামতো। ভালবাসায় এত কষ্ট নিলয় জানতো না নীলা ওভাবে চলে না গেলে। অনেক ভেবেও নিলয় তার ভালবাসায় কোন খুঁত ধরতে পারেনি। কি কারণে নীলে ওকে একা রেখে, ওর স্বপ্নটা ভেঙ্গে দিয়ে চলে গেল, নিলয় আজও জানে না। ওদের মাঝে কখনও তেমন কোন ঝগড়া হয়নি, কখনও নিলয় এক ফোটা অবহেলা করেনি নীলাকে। কখনও নীলার জীবনটাকে বিধি নিষেধের জালে জড়াতে চায়নি। তবে কেন এভাবে অন্যের হয়ে গেল নীলা? কি কমতি ছিল ওর ভালবাসায়?
সময়ের সাথে সাথে মানুষ শোক সামলে ওঠে, কষ্ট ভুলে যায়। অনেক সময় লেগেছে নিলয়ের সামলে উঠতে। বেশ কয়েক মাস পর এক বিকেলে নিলয় ছোট্ট একটা টেক্সট করে নীলার নাম্বারে – “কেমন আছিস?”। জবাব পায় প্রায় সাথে সাথেই – “ভাল নেই। একটা কল দিবি? কথা বলতে ইচ্ছে করছে তোর সাথে”। অনেক কথা হয় সেদিন। বিয়ের পরেই সেই ছেলেটার বদলে যাওয়া, নীলার দিকে আগের মত নজর না দেয়া, মা বোনের কথা শুনে কোন কিছু যাচাই না করে নীলার সাথে খারাপ ব্যবহার করা – এই সব কারণে নীলা আপসেট ছিল খুব। সেদিন নীলয় ছিল খুব শান্ত। বার বার নীলাকে বোঝাচ্ছিল সব ঠিক হয়ে যাবে। বিয়ের প্রথম কিছু দিন এমন হতে পারে। ওদের পরিবারের মাঝে নীলা এখনও একজন নতুন মানুষ। এই পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে ওদের সাথে সাথে নীলারও সময় লাগবে। কিন্তু সব ঠিক হয়ে যাবে এক সময়। অনেকক্ষণ কথা বলে নীলার মন ভাল করে দিয়ে নিজেও বেশ একটা আনন্দ পেয়েছিল নিলয়। যা হবার ছিল, তা হয়েছে, এখন নীলার ভাল থাকাই ওর প্রতি মুহূর্তের কামনা। কিন্তু একটা সময় নিলয় বুঝতে পারে, ওর আর নীলার কাছাকাছি থাকবার প্রয়োজন নেই। নীলার সাথে কথা বলে ওর যেমন কষ্ট হয়, নীলারও হয়তো তেমন কষ্ট হয়। ভাল তো সেও বেসেছিল। কিছুদিন পর নিলয় তার পুরনো নম্বরটা চেঞ্জ করে ফেলে, আগের চাকরীটা ছেড়ে নতুন একটা চাকরীতে জয়েন করে অনেক দূরে অন্য একটা জায়গায় চলে আসে, যেখানে নীলার কোন স্মৃতি ওর পিছু নেবে না। কিন্তু ওর চিন্তাধারা ভুল প্রমাণ করে নীলা ওর হৃদয়ের মাঝে থেকেই যায়, কোন ভাবেই ভুলতে পারেনা ওকে নিলয়। এই পাঁচ বছরে বহুবার নিলয় নীলাকে ফোন বা টেক্সট করতে গিয়েও করেনি, সামলে নিয়েছে নিজেকে। কিন্তু আজ, এই জোছনার মায়াবী আলো ভরা রাতে নিজেকে সামলাতে পারে না নিলয়। কাঁপা হাতে কল বাটন চাপে নিলয়। কয়েকটা রিং হবার পর ওপাশ থেকে নীলার কণ্ঠ শোনা যায় –
- হ্যালো ... হ্যালো ... হ্যালো
কোন কথা বলতে পারে না নিলয়। চুপচাপ শুনে যায় নীলার কণ্ঠ। ছোট্ট একটা বাচ্চার কেঁদে ওঠার শব্দ শোনা যায়, ভারী একটা কণ্ঠস্বর দূর থেকে বলে ওঠে – “কে এত রাতে ফোন দিয়েছে? তুমি এই সময় বারান্দায় বসে কি করছো? বাচ্চাটা কাঁদছে, থামাও ওকে, আমার সকালে অফিস আছে, ঘুমাতে পারছি না”। ফোন কেটে যায় এরপর।
বুকের মাঝে ধ্বক করে ওঠে নিলয়ের। নীলা জেগে ছিল, নীলা একাকী বসে ছিল বারান্দায়। ওর কি মন ভাল নেই? ও কি নিলয়ের কথা ভাবছিল? কেমন আছে নীলা? ভাল আছে তো? ভাল থাকলে এত রাতে একা বারান্দায় বসে থাকবার কথা নয়। ওকে কি একটা টেক্সট করবে নিলয়?
কিছুই করেনা নিলয়। বরং ফোন বুক থেকে নীলার নম্বরটা ডিলিট করে দেবার বাটন চেপে জোছনা দেখায় নিমগ্ন হয়।

*******তোমাকে ভুলব না কখন********

আমি আমাকে ঘৃনা করি কারন- তোমায়
অনেক ভালবাসি তা বুঝাতে পারিনি বলে।
আমি আমাকে ঘৃনা করি কারন- তোমায়
হারিয়ে যাওয়াটা মেনে নিতে পারিনি
বলে।
আমি আমাকে ঘৃনা করি কারন-
তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম বলে।
আমি আমাকে ঘৃনা করি কারন- তোমায়
আজ ও ভুলতে পারিনি বলে।
আমি আমাকে ঘৃনা করি কারন - আমি
জানি আমি তোমাকে কোনদিন ভুলতে
পারব না বলে।
আমি আমাকে ঘৃনা করি কারন- তোমায়
পাবনা জেনে ও তোমার জন্য অপেহ্মা
করি।
আমি আমাকে ঘৃনা করি কারন- তোমায়
হারিয়ে বেঁচে আছি বলে।
আমি আমাকে ঘৃনা করি কারন- তুমি না
থাকলে, আমি কি ভাবে থাকবো সেইটা
ভাবিনি বলে।
আমি আমাকে ঘৃনা করি কারন- প্রতিটি
সময় তোমায় ভেবে কান্না করি বলে।
হ্যাঁ আমি আমাকে ঘৃনা করি কারন-
অতীতকে ভুলে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে
চলতে পারিনি বলে।
জানি পারব না কোনদিন ভুলতে তোমায়,
কারন এত কিছুর পর ও তোমায় ভালবাসি
প্রতিদিন।

সোমবার, ২২ আগস্ট, ২০১৬

সুখ এবং কষ্টের গল্

সাথীকে প্রথম দেখেছিল এক রাস্তায়, সে তখন এক পথ শিশুকে খাবার খাইয়ে দিতেছিল।তাওহীদ তাকে মুগ্ধ নয়নে দেখতেছিল, সাথীর উপর থেকে কোনো ভাবেই তার চোখটা সরাতেই পারছিল না।
সাথী যে কখন তার সামনে এসেছে, সে বুঝতেই পারেনি।যখন সে বলল

- এই যে মিঃ চার চোখ ওয়ালা কানা (চার চোখ বলার কারণ সে চশমা ব্যবহার করে যে তাই) আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন না! আমি যে কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি।
তাওহীদ আবার অনেক রাগী ও অভিমানী ছেলে, কেউ তাকে একটু উল্টা-পাল্টা বললেই সাথে সাথেই তার সাথে রাগ বা অভিমান করে।কিন্তু সাথীর কথাতে সে রাগ বা অভিমান কোনো টাই করতে পারেনি।কেন পারেনি বুঝতে পারেনি।সাথীর কথাটা যেন তার আরও ভালই লেগেছে।
- এই যে মিঃ আবার কোথায় হারিয়ে গেলেন?
দেখে যে রাগে তার মুখটা লাল হয়ে আছে।
- কি বললেন হারিয়ে গেছি? যদি হারিয়েই যেতাম তাহলে আপনার সামনে কি করে থাকতাম!
- উফফ বেসতি কথা বলেন কেন?
- বেসতি কথা কই বললাম আমি তো কথার উত্তর দিলাম।
- আবার (রাগে)
- আচ্ছা (ভয় ভয় ভাব নিয়ে)
- ঠিক আছে, আচ্ছা আমার দিকে ঐ ভাবে তাকিয়ে ছিলেন কেন?
- ঐ ভাবে কিভাবে তাকিয়ে ছিলাম?
- বুঝেন না! (ভ্যাংচি মেরে) এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন কেন?
- কেন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম বলতে পারব না, তবে মেয়েটাকে ভালো লেগেছিল তাই তাকিয়ে ছিলাম।
- কেন ঐ মেয়েটাকে ভালো লাগতে হবে! দুনিয়াতে কি আর মেয়ে নাই?
- আছে কিন্তু তার মত এত ঝগড়াটে মেয়ে নাই।
- কিহ! আমি ঝগড়াটে?
- হুম ঝগড়াটে।
- আপনি ঝগড়াটে
- আচ্ছা যান আমিই ঝগড়াটে।
- এই তো ভাল ছেলের মত কথা।
- ধন্যবাদ।
- আচ্ছা এতক্ষণ তো ঝগড়াই করলেন(দুষ্টু হাসি দিয়ে) নাম তো বললেন না।
- ঝগড়াটে ছেলেদের কোনো নাম হয় না(অভিমানী সুরে)
- ওলে বাবালে ঝগড়াটে ছেলেটা তো অভিমান ও করতে জানে। আচ্ছা যান আর ঝগড়াটে বলব না।এবার তো বলবেন
- আমি তাওহীদ, আপনি?
- আমি সাথী। আজ তাহলে চলি, আল্লাহ যদি বাঁচিয়ে রাখে তাহলে আবার দেখা হবে।
- আচ্ছা।

এই হল তাওহীদ আর সাথী। তাওহীদ পড়াশুনা শেষ করে এখন চাকুরি করে।আর সাথী অনার্সে পড়ে।তাওহীদের আপন বলতে এখন একমাত্র তার দাদী। তার বাবা-মা, বোন এক রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়। আর সাথীর বাবা-মা ও এক ভাই আছে।সে অনেক ভালো মেয়ে, ভালো মেয়ের যত গুলো গুণ থাকার দরকার তার মাঝেও আছে।সে পর্দা মেনে চলে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, সকালে কুরআন তিলাওয়াত করে ও আরও অনেক কাজ করে।তাওহীদ হাসি-খুশিতে থাকত, সবাইকে হাসি-খুশির মাঝে রাখত। কিন্তু ঐ ঘটনার পর থেকে একদম চুপ হয়ে যায়।

তারপর আরও কয়েকটা দিন চলে যায়,তাদের আর দেখা হয়নি। একদিন তাওহীদ পার্কে বসে কাপলদের প্রেম খেলা দেখতে থাকে, আর বাদাম খেতে থাকে। এমন সময়
- এই যে মিষ্টার চার চোখ ওয়ালা(শুনে তাওহীদের মেজাজটা গরম হয়ে যায়)
পাশে ফিরতেই দেখে সাথী। সাথীকে দেখে তার রাগটা সাথে সাথেই মাটি হয়ে যায়।
- কি! কাপলদের প্রেম দেখে কি আপনার ও ইচ্ছা জাগে প্রেম করতে?
সে কি বলবে সে তো তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
- ও হ্যালো
- আমার মত ছেলেকে কি কেউ পছন্দ করবে বলেন!
- তাই না?
- হুম।
- আপনি জানেন আপনি কতটা কিউট?
- তাই না? আমি কি করে বলব বলেন? নিজেরটা কি কেউ বলতে পারে বলেন!
- হুম। তা অবশ্য ঠিক বলছেন। আমাকে এখন পাঁচশ টাকা দেন! পরে দিয়ে দিব।
- টাকা দিয়ে কি করবেন?
- হাওয়া খাব সাথে আপনাকে ও খাওয়াব(রাগে বলে)
- আচ্ছা নেন।
- এখন আমার সাথে আসেন।
- কোথায়?
- আকাশে
তাওহীদ আর কথা বাড়ায় নি। তারপর সাথী বইয়ের দোকানে যায়, বই কিনে তাওহীদের হাতে দেয়, সেই বই গুলো পরে পথ শিশুদেরকে দেয়। তাওহীদ নীরব দর্শকের মত সব দেখে যায়।

সাথী এরকম আরও অনেক ধরনের কাজ করত, যে গুলো তাওহীদের খুব ভাল লাগত।তার সাথে অনেক ঝাড়ি ও খেত, কিন্তু এই ঝাড়ি তার অনেক ভাল লাগত।
তারপর তারা ধীরে ধীরে আরও কাছে আসতে থাকে, সেই কাছে আসা থেকে ভাল লাগা, সেই ভাল লাগা থেকে ভালবাসা।

তারপর শুরু হয় তাদের এক নতুন পথ চলা, যে পথের শেষ নেই। ঝগড়া-ঝাটি, রাগ-অভিমান এসবের মধ্য দিয়ে তাদের দিন গুলি ভালই যাচ্ছিল। আবার তাদের দুই পরিবারকেও তাদের এই সম্পর্কের কথা বলেছিল। তারাও মেনে নেই, কারণ না করার তো কোনো কারণ নেই।
কিন্তু কথায় আছে না! সুখের দিন বেশিদিন যায় না, তাদের ও একই অবস্থা হয়।

একদিন তারা পার্ক থেকে আসতেছে, এমন সময় দেখে; এক শিশু রাস্তায় পরে আছে এবং তার দিকে দ্রুত গতিতে একটা গাড়ি ও আসতেছে। এটা আবার তাওহীদ লক্ষ করেনি।সাথী শিশুটাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবনটা দেয়।
এ দৃশ্য দেখে তাওহীদ স্তব্ধ হয়ে যায়।পা ফেলে মাটিতে পরে যায়। সে কাঁদতে পারছে না, কিছু বলতেও পারছে না।শুধু চোখ দিয়ে পানি ঝরতে থাকে।
সাথীর কাছে গিয়ে সাথীকে ডাকে, কিন্তু সাথী মায়াভরা মুখটা নিয়ে ঘুমাতে থাকে, তার কথার উত্তর দেয়না।
তাওহীদ বলতে থাকে, এই সাথী কথা বল কথা বলবে না! আমার সাথে ঝগড়া করবে না! চার চোখ ওয়ালা বলবে না! এই সাথী কথা বল! কিন্তু সাথী আর কথা বলে না, কি করে কথা বলবে! সে যে সারা জীবনের মত ঘুমিয়ে পরেছে।

বি দ্রঃ আমাদের অনেকের জীবনে ভালবাসার মানুষ আসে, কারও থাকে আবার কারও চলে যায়।যাদের থাকে না যাওয়ার সময় তাদের কে কাঁদিয়ে যায়।

ভূতকন্যা

যে বাড়িতে এখন থাকছি, তার গেটের সাথেই পাশের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থান। সন্ধ্যা থেকে রাতের মধ্যে যদি কখনও বিদ্যুৎ চলে যায় তাহলে প্রায়ই বাড়ি থেকে বের হয়ে গেটের সিঁড়িতে বসি। গেইট থেকে পনেরো ফিট দূরেই পিচঢালা লকাল রাস্তা। নানান ধরনের মানুষ আর গাড়ি ঘোড়ার যাতায়াত দেখতে দেখতে বাতাস খেতে ভালই লাগে।
.
প্রায় দিনের মত আজকেও রাতে বিদ্যুৎ চলে যাওয়াতে গেটের বাইরে গিয়ে এক মনে ফোন চালাতে লাগলাম। বাতাস থম থমে, গরমও পড়েছে অনেক। হাতের ডানপাশে কবরস্থান।
.
হটাৎ করে মনে হলো রাস্তা দিয়ে খুব দ্রুত সাঁ করে কিছু একটা চলে গেলো। এ রাস্তায় অনেক দ্রুত মোটরসাইকেল ছাড়া অন্য কিছু চলার কথা নয়। কিন্তু....
কিন্তু মোটরসাইকেল এর ইঞ্জিনের কোনো শব্দ পেলাম না কেনো!
চোখের ভুল ভেবে আমার ফোনের দিকে মনোনিবেশ করলাম।
.
আসলে ফোনে বন্ধুদের সাথে চ্যাটিং করছিলাম ফেসবুকের মেসেঞ্জারে। এক বন্ধু বললো "আমু তোর জন্য একটা মেয়ে পছন্দ করছি, দেখবি?"
.
আমি বললাম "দেরী না করে তাড়াতাড়ি দে.."
.
তাড়াতাড়িই দিলো ছবি, ওপেন করার সাথে সাথে দেখি....
.
এমন সময় ছোট্ট একটা অন্যরকম গলা খাঁকারির শব্দ আমার সামনে থেকে আসলো বলে মনে হলো। সামনে তাকালাম। হাত পা কাঁপতে লাগলো।
.
ফোনের ছবিটার সাথে আমার সামনে দাঁড়ানো জিনিসটা একদম কপি পেস্ট। একটা মেয়ে......
যার একটা চোখ তুলে নেওয়া যেখান থেকে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পড়ছে। আর পাশের চোখটা পুরোটাই সাদা যেখানে কালো অক্ষিগোলক বলতে কিছুই নেই। সাদা চোখের পাশের গালটা রক্ত মাখা হাতে ধরে আছে মেয়েটা।
.
নিজের হার্টবিট নিজেই শুনতে পাচ্ছিলাম। এমন সময় ফোনটা টুং করে উঠলো, বন্ধুর মেসেজ এসেছে।
অনিচ্ছাসত্ত্বেও মেসেজ দেখলাম, ওই একি ছবি সে আবার পাঠিয়েছে। ছবির দিক থেকে সামনের দিকে দেখতেই দেখি ভূত মেয়েটা নেই।
বন্ধুর দেওয়া ছবি দেখে রাতের অন্ধকারে হিপনোটাইস হয়ে গেছি এই ভেবে সিঁড়িতে বসলাম। বসার সাথে সাথেই বাম পাশ থেকে সেই একি গলা খাঁকারি। মুখ তুলে দেখতে গিয়ে তো আমার আত্মারাম খাঁচাছাড়া। এমনটা কি বাস্তবে আসলেই সম্ভব! আমি কোনো ঘোরের মধ্যে আছিনাতো!
.
নিজেকে আগে অনেক সাহসী মনে করতাম, কিন্তু এই ভূতকন্যাকে দেখে তো আমার সাহস হুস হুস করে কমে যাচ্ছে। সবই বুঝি আমার দেখার ভুল মনের ভুল এই মনে করে শরীর টা একটু ঝাড়া দিলাম সাথে সাথেই আমার বাম কাঁধে কিসের যেনো ছোঁয়া পেলাম। ধীরে ধীরে চোখে বাঁকিয়ে দেখি ওই ডাইনীর রক্ত মাখা হাত।
.
আমার ঘেমে যাওয়া উষ্ণ শরীরে বুঝতে পারলাম তার শীতল হাতের ছোঁয়া। আমার মাথা ঘুরছে, যেকোনো সময় জ্ঞান হারাতে পারি। ভয়ের চোটে আপুকে ডাকতে চাইলাম কিন্তু গলা দিয়ে আওয়াজ বের হলোনা, কেমন যেনো একটা ফ্যাস ফ্যাস শব্দ করে বসলাম।
.
ছোট আপুর আওয়াজ শুনতে পারলাম "আমু তুই কার সাথে বসে ছিলি? তোর পাশে বুঝি কাউকে দেখলাম।"
আপু কাছাকাছি আসতেই দেখি আমার পাশে আর ভয়ানক চেহেরার ডাইনীটা আর নেই।
.
আপুকে কিছু বলতে যাবো, যে, "আপু আমি খুব ভয় পেয়েছি এই এই এই এই কাহিনী।"
কিন্তু একি! ভূতকন্যা দেখি আপুর পিছনে দাঁড়িয়ে আমাকে ইশারা করছে, হাতজোর করছে, আমি যাতে আপুকে কিছু না বলি।
.
আমি কি করবো কি না করবো কিছুই বুঝতে পারলাম না। শুধু আঙুল দিয়ে আপুর পিছনে ইশারা করলাম। ব্যস এতটুকুই হাটু ভাজ হয়ে দড়াম করে মাটিতে পড়ে গেলাম।
.
.
.
বিদ্যুৎ আসলো। শরীরটা প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে। খিদেও লেগেছে প্রচুর, কিন্তু কিছুই খেতে পারলাম না। না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম।
.
মাঝরাতে ঘুম ভাঙলো, দেখি বিদ্যুৎ নেই। বিছানায় ফোন হাতড়াতে লাগলাম, কিন্তু পাচ্ছিনা। এমন সময় আমার হাতটা খুব ঠান্ডা একটা জিনিস এ স্পর্শ করলো বুঝতে পারলাম।
.
সব কিছু বুঝতে আমার কিছুক্ষণ সময় লাগলো। বুকের উপর কেউ বুঝি উঠলো, নরম আর ঠান্ডা শরীর। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে... আ আ আ আপু আপু.... ডাকছি কিন্তু আওয়াজ হচ্ছেনা।
.
.
"আমু, এই আমু, আমু... কথা বল...।"
আপু আর দুলাভাই ডাকছে। চোখ মেলতে আর শরীরটা একটু আলগা করতেই বুঝতে পারলাম আমার শরীরের অবস্থা খুবই কাহিল। বেশ কয়েক জায়গায় খুব ব্যথা করছে। সবচেয়ে বেশি বুকে।
.
আপু আর দুলাভাইকে কিছু বলতে যাবো, তাতেই বিদ্যুৎ চলে গেলো। আমি চিৎকার করে বলতে লাগলাম "লাইট জ্বালাও লাইট জ্বালাও।"
.
.
মোমবাতি জ্বালালো আপু, দুলাভাই ফোনের লাইট অন করে টেবিলে রাখলো। এবং দুজনে বলতে লাগলো - "এভাবে চেঁচাচ্ছিলি ক্যান? কি হয়েছে?"
.
আমি চুপই রয়ে গেলাম, কেননা আপু আর দুলাভাই এর পিছনে ওই বিদঘুটে ভূতকন্যাটা আবারো ইশারা করছে কিছু না বলতে...।
কিন্তু আপনা আপনি আমার আঙুল তার দিকে ইশারা করলো...।
আর আমার পুরো শরীর ধীরে অবশ হয়ে যেতে লাগলো, চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসলো,ঝাপসা দেখতে লাগলাম সবকিছু...।
ভূতকন্যাকে দেখতে দেখতে চোখ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে এলো।
.
.

অদ্ভুত জীবন

বেশ ভালোই আছে এখন আবির। দেখে মনেই হয় না সেই কিছু দিন আগে হারিয়েছে তার জিবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ, টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুকে বুকে জড়িয়ে নিতে বাধ্য হতে হয়েছিল তার প্রাণপ্রিয় জননী মাকে।
অথচ আজ বেশ ফুরফুরে ভাবেই ঘুরতে দেখা যায় তাকে। লোকে বলে, অল্প শোকে কাতর, আর অধিক শোকে পাথর, ঠিক একই অবস্থা হয়েছে আবিরের।সেই দিন ছিল আবিরের এসএসসি রসায়ন পরিক্ষা।
রাত থেকে কেন যেন তার মায়ের শরীরটা বেশি খারাপ হয়ে পড়ে, চার ভাই বোন এর মধ্যে আবির ২ নম্বর। তার বড় একটা বোন আছে।পরিবারের উপাজনকরী শুধু তার বাবা, গ্রামের ছোট একটা চায়ের দোকান আছে তাদের। আবির পড়ালেখার সাথে সাথে তার বাবাকে সাহায্য করে মাঝেমধ্যে । আবিরের বড় বোনের বিয়ে হয়েছিল।তার স্বামি ঢাকার কোন এক গামেন্টসে কাজ করতেন। সেই বার ওনাদের কর্ম স্থানে অপ্রত্যাসিত ভাবে আগ্নিকান্ডে দগ্ধ হতে হয় তাকে। পুড়ে কয়লা হয়ে গিয়েছিল।কেউ তাকে চিনতে না পরলেও তার মা ঠিক চিনেছিল। আবিরের বোনের শাশুড়ি পাগল হয়ে গেছে কান্না করতে করতে। কারন তিন কন্যা পর পাওয়া একটা ছেলে, সেইও তাকে ছেড়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে।তারপর আবিরের বোনকে রেখে যায় তাদের বাড়িতে,যেহেতু এখনো তার কোন সন্তান হয় নি।তখন থেকে সেই আবিরদের বাড়িতে থাকে। যদিও তার বাবা তাকে দ্বিতীয় বিয়ে দিতে চেষ্টা করছে।
এমনিতে টানপোড়া সংসার তাদের,।"ঠিক মতো খেতে পারাটাই যাদের জন্য দুষ্কর,দুরারোগ্য রোগে চিকিৎসা করাটা তাদের জন্য দুঃস্বপ্নই"। আর তাই একটু একটু করে ধুকে ধুকে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েই সকালের দিকে মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছিল তার মা।আবির তখন তার মায়ের সামনেই,কিন্তু করতে পারেনি কিছুই।শুধু তাকিয়ে দেখেছে তার মায়ের শুকনো মুখটার দিকে।মায়ের মৃত্যুর পর তার বাবাও যেন একটু বেশি ভেঙ্গে পড়েছে। তাই আবিরের আর এসএসসি পরিক্ষা দেওয়া হলো না। বাবার যা অবস্থা,আবিরকে ধরতে হয়েছিল সংসারের হাল। যখন তার খেলার বয়স তখন তাকে ব্যস্ত হতে হয়েছিল বাস্তব জীবনকে নিয়ে।মা হারানো কষ্ট টা বুকের এক পাশে রেখে প্রতিদিন তাকে করতে হয় ভালো থাকার অভিনয়। আর গভীর রাতে মায়ের কথা ভেবে ভেবে মুছতে হয় চোখের পানি।আর বুকের পাশদিয়ে এক পসলা দীর্ঘশ্বাস। দিনের আলোয় এই আবিরদের দেখলে, তাদের রাতের ঐ। চেহারা কল্পনা ও করা যায় না। কারন এরাই বাস্তবিক জীবন যুদ্ধের নিয়মিত যুদ্ধা। আবিরদের ভেতরের হাহাকার শব্দ টা তারা ছাড়া অন্য কেউ কে শুনতে দেয় না।

বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০১৬

¤¤ সে যে রূপসী ¤¤

কে বলেছে তোমাকে
রান্না করতে?(ধমকের
সুরে
বললাম)
-নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে
আছে।
-যেটা পার না সেটা
করতে যাও কেন?
-নিশ্চুপ।
-আমি তোমাকে কিছু
বলছি চুপ করে থাকবে
না।
-মাথা নিচু করে
দাড়িয়ে আছে।
-যদি বড় ধরনের কোন
দুর্ঘটনা ঘটত।কে
জবাবদিহিতা করত
তোমার বাবা-মাকে।
-নিশ্চুপ।
-আমার কথাগুলো কি
কানে ঢুকেছে?
-নিশ্চুপ।
-কতবার তোমাকে
বোঝাতে হবে?
-মাথা উচু করে এবার 
করে কিছু বলতে
যাচ্ছিল।
-ঠাশ.....গালে একটা
থাপ্পড় দিলাম।
-উ হু হু করে কেঁদে
দিল।
-আর কোন দিন যেন
তোমাকে রান্নাঘরে
ঢুকতে না
দেখি।তুমি কেন বুঝনা
তুমি এগুলো পার না।
-উ হু হু হু। (নীরব
চোখে অশ্রু গড়িয়ে
পড়ছে,অবাক
হয়ে আমার মুখের
দিকে তাকিয়ে আছে)
-দেখি হাতটা দাও?
কতখানি পুড়ে গেছে?
-হাত দেখা লাগবে না...(কাঁদতে কাঁদতেই বলে)
-কি হল হাত দেখাতে
বলছি না।(বলেই
হাতটা
ধরলাম,অমনি কাঁদতে
কাঁদতে ঘর থেকে বের
হয়ে
গেল)
-এই শোন শোন......
(ডাকে সাড়া দিল
না,ছুটে
বেরিয়ে গেল।
মেয়েটাকে কেন
মারতে গেলাম।
নিজেকে ভীষন
অপরাধী মনে হচ্ছে।
একটু জোরে কথা
বললে যে
কেঁদে দেয় তার গায়ে
হাত তুললাম।ছি ছি
ছি আমি
মোটেও ঠিক করিনি।
কিন্তু এই মেয়েটা
অবুঝের মত
কাজ করবে সারাক্ষন।
এত মানা করি এটা
করনা তুমি
পারবে না তবুও
শোনেনা।
.
ও লতা,আমার
স্ত্রী।তিনমাস হল
আমাদের বিয়ে
হয়েছে।ওর শরীরের বর্ণটা একটু কালো। ভীষন
আবেগী
একটা মেয়ে। প্রথম
যেদিন ওকে দেখেছিলাম 
বুঝেছিলাম
একাকিত্ব ওকে পেয়ে
বসেছে।প্রথম
দেখাতেই ভাল
লেগেছিল।
অন্যমেয়েদের মত
সব আছে।গায়ের রং টাই শুধু ফর্সা নয়
।তাই বলে কিন্তু একেবারে অপছন্দ করার মতো 
মেয়ে না।ও
আমাদের
বাড়িওয়ালার মেয়ে।
প্রথম প্রথম ভাললাগা
তারপর
মনের অজান্তেই
ভালবাসা।এত নম্র ভদ্র
একটা মেয়ে
ফর্সা না হলেও ওর যেন আলাদা একটা সৌন্দর্য আছে।
ওর
চলাফেরা,উদাসীন
হয়ে আকাশ
দেখা,বিকেলের ছাদে
খোলা চুলে বসে থাকা
সবকিছুতে কেমন যেন
মায়াচ্ছন্ন হয়ে
পড়ছিলাম।
কয়েকদিন পর ছাদে
উঠেছি দেখি এককোনে
দাড়িয়ে আছে।কাছে
গিয়ে নাম জিজ্ঞাসা
করলাম।বললঃ'আমার নাম লতা।'
আরও
কিছু প্রশ্ন
জিজ্ঞাসা করব কিন্তু শুধু নামটা বলেই চলে গেল।
সেদিনের মত আমিও চলে
আসলাম ।এর পর আর ওকে ছাদে আগের মত বেশি দেখতাম না।
.
একদিন ছাদে বসে
আছি, লতাও আস্তে আস্তে ছাদে আসল।আমি ওর দিকে এগিয়ে গেলাম।ওর কাছে গিয়ে বললাম,সেদিন তোমাকে কিছু বলব ভেবেছিলাম, তো তুমি নাম বলেই চলে গেলে তাই বলতে পারিনি।আজ একটা কথা তোমাকে বলতে চাই।লতা তেমন কিছু বলল না আমার কথা শুনে। তারপর আর কিছু না ভেবে ওকে
বললাম,'ভালবাসি
তোমাকে'।অবাক
দৃষ্টিতে একনজরে
তাকাল তারপর চলে
গেল।আমি দাড়িয়ে
ছিলাম
চলে যাওয়ার পানে
দৃষ্টি ।
পরেরদিন আমাকে বলল,
আমি অতি
সাধারন একটা
মেয়ে।তারপর দেখতে কালো।
আপনার বউ হওয়ার
কোন
যোগ্যতাই আমার নেই।
তাছাড়া আপনার
ভিতর এখন
হয়ত আবেগ না হয়
করুনা কাজ করছে যা
ক্ষনিকের
জন্য থাকবে।কিন্তু
জীবনটা অনেক
কঠিন আপনি
আমাকে নিয়ে চলতে
পারবেন না।আমি
সত্যিই
নিরুপায় আমি যদি আপনার যোগ্য হতাম
তাহলে
নিশ্চয়ই আপনাকে
ভালবাসতাম।এটুকু বলে চলে
যেতে চাইল।আমি হাত
টেনে
ধরে বললাম এটা
করুনা নয়,আবেগ ও নয়
আমি সত্যিই
তোমাকে ভালবেসে
ফেলেছি,এখন যেমন
আছি
সারাটি জীবন
এমনভাবেই থাকব।এরপর আর কিছু বলেনি মেয়েটি।
কিছুদিন পর বাসায়
জানাই।তারপর বিয়ের প্রস্তাব পাঠাই বাবা মাকে রাজি করিয়ে।ওর পরিবারের
দিক থেকেও কোন
আপত্তি
ছিলনা।কিন্তু ওকে
অনেক কষ্টেই রাজি
করিয়েছিলাম।
তারপর বিয়েটা সুষ্ঠু
ভাবে সম্পন্ন
হয়েছিল।
.
মেয়েটা
ভীষন কেয়ার নেয়।
সবকিছু গুছিয়ে
রাখে।আর নীরব মনের
মেয়েটা যে কতখানি
ভালবাসতে জানে
সেটা তো উপলব্ধি
করতে
পারছি।
.
.
আজ অফিস শেষে
বাসায় এসে শুনি
লতা রান্না
করতে গিয়ে গরম
তেলে হাতে ফোস্কা
উঠেছে।ওর রান্না করে
অভ্যাস নেই।
তাই ওকে
আগুনের কাছে যেতে
দেইনা।ওর আব্বু
আম্মুও নিষেধ
করেছিল।আজকে
আম্মু বিকেলে
ঘুমিয়েছিল তখন
রান্না করতে গেছে।
গরম তেল
হাতে পড়লে হাতটা
সরিয়ে আনতে গিয়ে
একটা
গামলা পড়েছিল
ফ্লোরে তার সাথে
আর্তনাদ শুনে আম্মু
উঠে এসে চুলাটা
নিভিয়ে
আমাকে ফোন করে।
বাসায় ঢুকেই মাথাটা
গরম হয়ে
যায়,কেমন যেন ভুলে
গিয়েছিলাম সব।
তাছাড়া একটা ভুল
করেই ফেলেছে
তাই বলে হাত তুললাম?
রাগ করে আম্মুর
কাছে গিয়ে
শুয়ে আছে।এর আগে
একবার এভাবে
কেঁদেছিল,বিয়ের
পরেরদিন ফুফু হঠাৎ
ওর সামনেই বলে উঠল
অভ্র তুই
শেষ পর্যন্ত একটা
কালো মেয়েকে বিয়ে
করলি।
প্রচন্ড রাগ হয়েছিল
সেদিন আমার ফুপির
উপর।
লতা দৌড়ে গিয়ে
রুমে শুয়ে শুয়ে
কেঁদেছিল
সারাদিন।
-আরে পাগলী
ফুপি কি বলল না বলল
তা
শুনেই তোমাকে কাঁদতে
হবে? আমি তো
তোমাকে
অনেক ভালবাসি।তবুও
কান্না থামেনা।সে
শেষে বলেই দিল,
-তুমি অন্য একটা
মেয়েকে বিয়ে
করে নাও।..
আমি সাথে
সাথে বুকে টেনে
নিয়েছিলাম।এই
পাগলী তুমি ছাড়া
দ্বিতীয় কোন
নারী আমার জীবনে
কখনও আসবেনা।
সেদিনের পর
থেকে বুঝেছিলাম
মেয়েটা কতটা
আবেগী...
আম্মুর রুমে গিয়ে
দেখি আব্বু আম্মু
লতা লুডু
খেলছে।আমাকে
দেখেই মুখটা অন্য
দিকে ঘুরিয়ে নিল।
-কি রে কিছু বলবি?
(আব্বু)
-জ্বি।না মানে ক্ষুধা
লেগেছে।
-ক্ষুধা লেগেছে
টেবিলে খাবার দেওয়া
আছে খেয়ে
ঘুমিয়ে পড়।(আম্মু)
-তোমরা খাবে না?
-একটু দেরি হবে।
-ইশারায় লতাকে
ডাক দিলাম।(ইশারায়
না
বলে দিল সে
)
-কি হয়েছে মা?(আব্বু
জিজ্ঞাসা করল)
-ও মাথা নিচু করে চুপ
করে থাকল।
আব্বু আমার চোখের
দিকে
তাকাতেই আমিও মাথা
নিচু
করে বেরিয়ে এলাম।
ধ্যাত
মেয়েটার এত রাগের
কি আছে? একটু বের
হলেই
পারত।রাগে গজ গজ
করতে করতে রুমে
গিয়ে শুয়ে
পড়লাম।একটু পরে
আম্মু এসে ডাক দিল।
খেতে বসেছি
আম্মু ওকে খাইয়ে
দিচ্ছে আমি ওর দিকে
তাকাতেই
চোখ সরিয়ে নিচ্ছে।
খাওয়া শেষ করে রুমে
এসে
শুয়ে পড়েছি একটু পর
লতা ঢুকল।কিছু
বলতে
যাব,পাত্তা না দিয়ে
আবার বেরিয়ে গেল।
একটু পরে
এসে জানালার কাছে
দাঁড়াল।
-আই এ্যম স্যরি।
(আমি)
-চুপ।(লতা)
-আমি খুব অন্যায়
করেছি আমার মিষ্টি
বউটাকে
বকা দিয়েছি,মেরেছি।
আমার মিষ্টি বউটা
কি তার এই
পঁচা বরটাকে মাফ
করবে না।
-চুপ।
-আমি তো জানি
আমার বউটা অনেক
রেগে আছে।
কিন্তু কি করব
আমার বউটা কেন
এমন ছেলে মানুষি
করে যদি তার কিছু
হয় আমি তো বাঁচব না।
-এবার জানালার কাছ
থেকে সরে এসে বলছে,
-আমি কি
আমার স্বামীর জন্য
কিছু রান্না করতে
পারি না?
-,পারো
তো কিন্তু তুমি তো
রান্না
করতে জান না।(আমি)
-জানি না বলে শিখতে
পারব না?
-পারবে তো তবে
আম্মুকে কাছে রাখবে।
-আমাকে মারলে কেন?
-বুঝতে পারিনি।
সত্যিই আমি দুঃখিত।
-না।
-আমাকে মাফ করে
দাও প্লিজ।
-না।
-আর কখনও এমন ভুল
হবেনা।
-না।
-শেষবারের মত মাফ
করে দাও।
-না
আমি স্যরি বলে হাত
ধরলাম।হাতটি
ছাড়িয়ে নিল।
কান্না চোখে পিছু
ফিরলাম।এবার
পাগলীটা
কাঁদতে কাঁদতে আমার
সামনে এসে আমাকে
জড়িয়ে ধরেছে।ফুপিয়ে
ফুপিয়ে কাঁদছে।আর সে
কান্নার আওয়াজ যেন
আমার বুকের
মাঝখানটাতে গিয়ে
ধাক্কা খায়।
আমিও জড়িয়ে রাখব
সারাজীবন।
আর কখনও দুঃখ দিব
না আমার মিষ্টি
বউটাকে।
অফিসে গেলে মাঝে
মাঝে ফোন করে কেঁদে
ফেলে।ওর নিঃশ্বাসের
শব্দ
শুনলে সত্যিই আমি
ওকে উপলব্ধি করতে
পারি।মনে
হয় খুব কাছাকাছি
বুকের বামপাশে
হৃদয়ের মাঝে
থাকে সে সারাক্ষন।
বুঝতে পারি তখনই ওর
হৃদয়ের
কথা।
পৃথিবীর কাছে ও
কালো একটি মেয়ে
হতে পারে
,কিন্তু
আমার
কাছে সে আমার
অন্ধকার ঘরের
আলো,সবচেয়ে রূপসী।
সারাক্ষন মেয়েটা
চঞ্চল থাকে।
অবাক হয়ে তাকিয়ে
থাকি মেয়েটির
দিকে,এমন
করে কেউ ভালবাসতে
পারে।এত গভীর ভাবে
মেয়েটি ভালবাসতে
পারে আমি সত্যিই
মুগ্ধ হয়ে
যাই।আমি মোটেও ভুল
করিনি এই রূপসীকে
কাছে
টেনে.....