সোমবার, ২২ আগস্ট, ২০১৬

সুখ এবং কষ্টের গল্

সাথীকে প্রথম দেখেছিল এক রাস্তায়, সে তখন এক পথ শিশুকে খাবার খাইয়ে দিতেছিল।তাওহীদ তাকে মুগ্ধ নয়নে দেখতেছিল, সাথীর উপর থেকে কোনো ভাবেই তার চোখটা সরাতেই পারছিল না।
সাথী যে কখন তার সামনে এসেছে, সে বুঝতেই পারেনি।যখন সে বলল

- এই যে মিঃ চার চোখ ওয়ালা কানা (চার চোখ বলার কারণ সে চশমা ব্যবহার করে যে তাই) আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন না! আমি যে কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি।
তাওহীদ আবার অনেক রাগী ও অভিমানী ছেলে, কেউ তাকে একটু উল্টা-পাল্টা বললেই সাথে সাথেই তার সাথে রাগ বা অভিমান করে।কিন্তু সাথীর কথাতে সে রাগ বা অভিমান কোনো টাই করতে পারেনি।কেন পারেনি বুঝতে পারেনি।সাথীর কথাটা যেন তার আরও ভালই লেগেছে।
- এই যে মিঃ আবার কোথায় হারিয়ে গেলেন?
দেখে যে রাগে তার মুখটা লাল হয়ে আছে।
- কি বললেন হারিয়ে গেছি? যদি হারিয়েই যেতাম তাহলে আপনার সামনে কি করে থাকতাম!
- উফফ বেসতি কথা বলেন কেন?
- বেসতি কথা কই বললাম আমি তো কথার উত্তর দিলাম।
- আবার (রাগে)
- আচ্ছা (ভয় ভয় ভাব নিয়ে)
- ঠিক আছে, আচ্ছা আমার দিকে ঐ ভাবে তাকিয়ে ছিলেন কেন?
- ঐ ভাবে কিভাবে তাকিয়ে ছিলাম?
- বুঝেন না! (ভ্যাংচি মেরে) এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন কেন?
- কেন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম বলতে পারব না, তবে মেয়েটাকে ভালো লেগেছিল তাই তাকিয়ে ছিলাম।
- কেন ঐ মেয়েটাকে ভালো লাগতে হবে! দুনিয়াতে কি আর মেয়ে নাই?
- আছে কিন্তু তার মত এত ঝগড়াটে মেয়ে নাই।
- কিহ! আমি ঝগড়াটে?
- হুম ঝগড়াটে।
- আপনি ঝগড়াটে
- আচ্ছা যান আমিই ঝগড়াটে।
- এই তো ভাল ছেলের মত কথা।
- ধন্যবাদ।
- আচ্ছা এতক্ষণ তো ঝগড়াই করলেন(দুষ্টু হাসি দিয়ে) নাম তো বললেন না।
- ঝগড়াটে ছেলেদের কোনো নাম হয় না(অভিমানী সুরে)
- ওলে বাবালে ঝগড়াটে ছেলেটা তো অভিমান ও করতে জানে। আচ্ছা যান আর ঝগড়াটে বলব না।এবার তো বলবেন
- আমি তাওহীদ, আপনি?
- আমি সাথী। আজ তাহলে চলি, আল্লাহ যদি বাঁচিয়ে রাখে তাহলে আবার দেখা হবে।
- আচ্ছা।

এই হল তাওহীদ আর সাথী। তাওহীদ পড়াশুনা শেষ করে এখন চাকুরি করে।আর সাথী অনার্সে পড়ে।তাওহীদের আপন বলতে এখন একমাত্র তার দাদী। তার বাবা-মা, বোন এক রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়। আর সাথীর বাবা-মা ও এক ভাই আছে।সে অনেক ভালো মেয়ে, ভালো মেয়ের যত গুলো গুণ থাকার দরকার তার মাঝেও আছে।সে পর্দা মেনে চলে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, সকালে কুরআন তিলাওয়াত করে ও আরও অনেক কাজ করে।তাওহীদ হাসি-খুশিতে থাকত, সবাইকে হাসি-খুশির মাঝে রাখত। কিন্তু ঐ ঘটনার পর থেকে একদম চুপ হয়ে যায়।

তারপর আরও কয়েকটা দিন চলে যায়,তাদের আর দেখা হয়নি। একদিন তাওহীদ পার্কে বসে কাপলদের প্রেম খেলা দেখতে থাকে, আর বাদাম খেতে থাকে। এমন সময়
- এই যে মিষ্টার চার চোখ ওয়ালা(শুনে তাওহীদের মেজাজটা গরম হয়ে যায়)
পাশে ফিরতেই দেখে সাথী। সাথীকে দেখে তার রাগটা সাথে সাথেই মাটি হয়ে যায়।
- কি! কাপলদের প্রেম দেখে কি আপনার ও ইচ্ছা জাগে প্রেম করতে?
সে কি বলবে সে তো তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
- ও হ্যালো
- আমার মত ছেলেকে কি কেউ পছন্দ করবে বলেন!
- তাই না?
- হুম।
- আপনি জানেন আপনি কতটা কিউট?
- তাই না? আমি কি করে বলব বলেন? নিজেরটা কি কেউ বলতে পারে বলেন!
- হুম। তা অবশ্য ঠিক বলছেন। আমাকে এখন পাঁচশ টাকা দেন! পরে দিয়ে দিব।
- টাকা দিয়ে কি করবেন?
- হাওয়া খাব সাথে আপনাকে ও খাওয়াব(রাগে বলে)
- আচ্ছা নেন।
- এখন আমার সাথে আসেন।
- কোথায়?
- আকাশে
তাওহীদ আর কথা বাড়ায় নি। তারপর সাথী বইয়ের দোকানে যায়, বই কিনে তাওহীদের হাতে দেয়, সেই বই গুলো পরে পথ শিশুদেরকে দেয়। তাওহীদ নীরব দর্শকের মত সব দেখে যায়।

সাথী এরকম আরও অনেক ধরনের কাজ করত, যে গুলো তাওহীদের খুব ভাল লাগত।তার সাথে অনেক ঝাড়ি ও খেত, কিন্তু এই ঝাড়ি তার অনেক ভাল লাগত।
তারপর তারা ধীরে ধীরে আরও কাছে আসতে থাকে, সেই কাছে আসা থেকে ভাল লাগা, সেই ভাল লাগা থেকে ভালবাসা।

তারপর শুরু হয় তাদের এক নতুন পথ চলা, যে পথের শেষ নেই। ঝগড়া-ঝাটি, রাগ-অভিমান এসবের মধ্য দিয়ে তাদের দিন গুলি ভালই যাচ্ছিল। আবার তাদের দুই পরিবারকেও তাদের এই সম্পর্কের কথা বলেছিল। তারাও মেনে নেই, কারণ না করার তো কোনো কারণ নেই।
কিন্তু কথায় আছে না! সুখের দিন বেশিদিন যায় না, তাদের ও একই অবস্থা হয়।

একদিন তারা পার্ক থেকে আসতেছে, এমন সময় দেখে; এক শিশু রাস্তায় পরে আছে এবং তার দিকে দ্রুত গতিতে একটা গাড়ি ও আসতেছে। এটা আবার তাওহীদ লক্ষ করেনি।সাথী শিশুটাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবনটা দেয়।
এ দৃশ্য দেখে তাওহীদ স্তব্ধ হয়ে যায়।পা ফেলে মাটিতে পরে যায়। সে কাঁদতে পারছে না, কিছু বলতেও পারছে না।শুধু চোখ দিয়ে পানি ঝরতে থাকে।
সাথীর কাছে গিয়ে সাথীকে ডাকে, কিন্তু সাথী মায়াভরা মুখটা নিয়ে ঘুমাতে থাকে, তার কথার উত্তর দেয়না।
তাওহীদ বলতে থাকে, এই সাথী কথা বল কথা বলবে না! আমার সাথে ঝগড়া করবে না! চার চোখ ওয়ালা বলবে না! এই সাথী কথা বল! কিন্তু সাথী আর কথা বলে না, কি করে কথা বলবে! সে যে সারা জীবনের মত ঘুমিয়ে পরেছে।

বি দ্রঃ আমাদের অনেকের জীবনে ভালবাসার মানুষ আসে, কারও থাকে আবার কারও চলে যায়।যাদের থাকে না যাওয়ার সময় তাদের কে কাঁদিয়ে যায়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন