সোমবার, ২২ আগস্ট, ২০১৬

অদ্ভুত জীবন

বেশ ভালোই আছে এখন আবির। দেখে মনেই হয় না সেই কিছু দিন আগে হারিয়েছে তার জিবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ, টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুকে বুকে জড়িয়ে নিতে বাধ্য হতে হয়েছিল তার প্রাণপ্রিয় জননী মাকে।
অথচ আজ বেশ ফুরফুরে ভাবেই ঘুরতে দেখা যায় তাকে। লোকে বলে, অল্প শোকে কাতর, আর অধিক শোকে পাথর, ঠিক একই অবস্থা হয়েছে আবিরের।সেই দিন ছিল আবিরের এসএসসি রসায়ন পরিক্ষা।
রাত থেকে কেন যেন তার মায়ের শরীরটা বেশি খারাপ হয়ে পড়ে, চার ভাই বোন এর মধ্যে আবির ২ নম্বর। তার বড় একটা বোন আছে।পরিবারের উপাজনকরী শুধু তার বাবা, গ্রামের ছোট একটা চায়ের দোকান আছে তাদের। আবির পড়ালেখার সাথে সাথে তার বাবাকে সাহায্য করে মাঝেমধ্যে । আবিরের বড় বোনের বিয়ে হয়েছিল।তার স্বামি ঢাকার কোন এক গামেন্টসে কাজ করতেন। সেই বার ওনাদের কর্ম স্থানে অপ্রত্যাসিত ভাবে আগ্নিকান্ডে দগ্ধ হতে হয় তাকে। পুড়ে কয়লা হয়ে গিয়েছিল।কেউ তাকে চিনতে না পরলেও তার মা ঠিক চিনেছিল। আবিরের বোনের শাশুড়ি পাগল হয়ে গেছে কান্না করতে করতে। কারন তিন কন্যা পর পাওয়া একটা ছেলে, সেইও তাকে ছেড়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে।তারপর আবিরের বোনকে রেখে যায় তাদের বাড়িতে,যেহেতু এখনো তার কোন সন্তান হয় নি।তখন থেকে সেই আবিরদের বাড়িতে থাকে। যদিও তার বাবা তাকে দ্বিতীয় বিয়ে দিতে চেষ্টা করছে।
এমনিতে টানপোড়া সংসার তাদের,।"ঠিক মতো খেতে পারাটাই যাদের জন্য দুষ্কর,দুরারোগ্য রোগে চিকিৎসা করাটা তাদের জন্য দুঃস্বপ্নই"। আর তাই একটু একটু করে ধুকে ধুকে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েই সকালের দিকে মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছিল তার মা।আবির তখন তার মায়ের সামনেই,কিন্তু করতে পারেনি কিছুই।শুধু তাকিয়ে দেখেছে তার মায়ের শুকনো মুখটার দিকে।মায়ের মৃত্যুর পর তার বাবাও যেন একটু বেশি ভেঙ্গে পড়েছে। তাই আবিরের আর এসএসসি পরিক্ষা দেওয়া হলো না। বাবার যা অবস্থা,আবিরকে ধরতে হয়েছিল সংসারের হাল। যখন তার খেলার বয়স তখন তাকে ব্যস্ত হতে হয়েছিল বাস্তব জীবনকে নিয়ে।মা হারানো কষ্ট টা বুকের এক পাশে রেখে প্রতিদিন তাকে করতে হয় ভালো থাকার অভিনয়। আর গভীর রাতে মায়ের কথা ভেবে ভেবে মুছতে হয় চোখের পানি।আর বুকের পাশদিয়ে এক পসলা দীর্ঘশ্বাস। দিনের আলোয় এই আবিরদের দেখলে, তাদের রাতের ঐ। চেহারা কল্পনা ও করা যায় না। কারন এরাই বাস্তবিক জীবন যুদ্ধের নিয়মিত যুদ্ধা। আবিরদের ভেতরের হাহাকার শব্দ টা তারা ছাড়া অন্য কেউ কে শুনতে দেয় না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন