কোথাও থেকে টুপটাপ পানি পড়ার শব্দ আসছে। ক্রমেই যেন বাড়ছে পানির শব্দটা,
ক্রমেই অসহ্য হয়ে উঠছে নিলয়। ইনসমনিয়াক কারো কাছে এক টুকরো ঘুমের চাইতে
কাঙ্ক্ষিত আর কিছুই নেই। পানি পড়ার শব্দটা নিলয়ের ধরে আসা ঘুমের বারোটা
বাজিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট। পাতলা কাঁথাটা সরিয়ে বিছানা ছাড়ে নিলয়। শব্দটা
বন্ধ করতেই হবে, যেভাবেই হোক। না হলে আজ রাতেও এক ফোটা ঘুম আসবে না তার।
কালি গোলা আঁধার ঘরটাতে। গভীর রাতেও লোড শেডিং। ছোট কাঠের টেবিলের উপর তিন
ব্যাটারির টর্চ লাইটটা থাকার কথা, আজ সেটাও নেই। আন্দাজে উঠে গিয়ে দরজাটা
খুঁজতে লাগলো নিলয়। পাঁচটা বছর হয়ে গেছে এই ছোট্ট ঘরটাতে, দরজা খুঁজে পেতে
বেগ পেতে হলো না তাই। খুট করে ছিটকিনি খুলে বাইরে বের সে। সামনের খোলা
প্রান্তর ঝিকমিক করছে সোনালী জোছনায়। আজ কি পূর্ণিমা?
জোছনার একটা দুর্নিবার টান আছে। প্রবল ঘুমে কাতর মানুষও জোছনা রাতে কিছু সময় পরিচিত পরিবেশের হটাত বদলে যাওয়া রূপটা দেখতে তাকিয়ে থাকে। নিলয় বুঝে গেছে, তার আর ঘুমানো হলো না আজকে। জোছনার আলোতে ঘরের ভেতর থেকে একটা চেয়ার টেনে বাইরে এসে বসে সে। মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে জোছনার দিকে। মনের মাঝে একটাই গান তখন - "আজ জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে, বসন্তের এই মাতাল সমীরণে ..."। একেই মনে হয় চাঁদনী পসর রাত বলে। হুমায়ুন আহমেদের সেই বিখ্যাত লাইন গুলো - "চাঁদনী পসর রাইতে যেন আমার মরণ হয়….."। এমন মায়াময় রাত্রিতেই তো মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা যায়। জোছনার মায়ায় ভুলে যাওয়া যায় অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ।
আচ্ছা, এত সুন্দর একটা রাতে সে মৃত্যুর কথা ভাবছে কেন? হুমায়ুন আহমেদই বা কেন ভেবেছিলেন? এই সময়ে তো আনন্দময় কিছু ভাববার কথা। পূর্ণ চাঁদের আলোয় তো বিষণ্ণতা মাখানো থাকবার কথা নয়। একটা যুক্তি অবশ্য আছে। বানভাসি জোছনার সৌন্দর্যের মাঝে মানুষ জীবনের পূর্ণতা খুঁজে পায়। সে মনে করে তার জীবনের সব চাওয়া পূরণ হয়েছে। এখন আর চাইবার কিছুই নেই। চাহিদা বিহীন জীবন অবশ্যই অস্বস্তিকর হবার কথা, নিরানন্দ হবার কথা। সে জন্য মানুষ মরে যেতে চায়।
ট্রাউজারের পকেট থেকে সেল ফোনটা বের করে নিলয়। অনেক দিন অনেক বছর অযত্নে ফোন বুকের এক কোণায় পরে থাকা নীলার নাম্বারটা খুঁজে বের করে। গত পাঁচ বছরে এই নাম্বারে আর কল দেবার প্রয়োজন অনুভব করেনি সে। কি হবে কল দিয়ে? যে নিতান্ত অবহেলায় তাকে মাঝ রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রেখে চলে গেছে, তাকে পিছু ডেকে বিরক্ত করবার কোন মানে নেই। অথচ কি জীবন্ত ছিল সেই দিন গুলো। রাত বিরাতে হুট করে সেল ফোনে মেসেজ “একটা কল দে তো”।
- ঘুম ভাঙ্গালি কেন? কি হয়েছে?
- স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়েছি, আমাকে শক্ত করে একটু জড়িয়ে ধরবি? ভয় পাওয়া কাঁপা কাঁপা গলা নীলার। সচকিত নিলয় তখন।
- আয়, আমার কাছে আয়, আমি আছি তো, তোর পাশেই আছি, তোর কাছে আছি, কোন ভয় নেই। স্বপ্ন দেখে কেউ ভয় পায় রে পাগলী। কি দেখেছিলি স্বপ্নে?
- রাসেদ ...
গলা আবারও কাঁপে নীলার।
- আরে, ও তোর কি করবে? তুই তো আমার বুকের মধ্যে আছিস। তোকে কেউ স্পর্শ করতে পারবে না এখন।
- হু, আমাকে শক্ত করে ধরে রাখ তুই, আমার ভয় কাটছে না।
শত মাইলের ব্যবধানে থেকেও সে সময় নীলাকে জড়িয়ে রাখতো নিলয়। এ কথা সে কথা বলে ওর ভয়টা কাটিয়ে দিতো। এক সময় কথা বলতে বলতেই ঘুমিয়ে পড়তো নীলা। নিলয় চুপ করে থাকতো তখন, ওর ভারী নিশ্বাসের শব্দটা শোনা পর্যন্ত অপেক্ষা করতো, এরপর লাইনটা কেটে দিতো।
রাসেদ, সেই ইতরটাকে হাতের কাছে পেলে এখনও গলা টিপে মারবে নিলয়। তের চোদ্দ বছরের নীলার সাথে ভালবাসার অভিনয় করে যে এক সময় আঁস্তাকুড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে গিয়েছিল নীলাকে। অবশ্যই তার যে টুকু পাবার ছিল, সেটুকু নিয়েই। নীলা নিজেই বলতো –
- রাসেদ কখনই ভালবাসেনি আমাকে। আমি ছোট ছিলাম, আমি অবুঝ ছিলাম। বাসায় কেউ না থাকলেই ও আসতো। কিছুক্ষণ অহেতুক বকবক করে আমার শরীরটা নিয়ে খেলতো। আমার কষ্ট হতো, আমি বলতাম ওকে, কিন্তু ওকে কিছুতেই বাঁধা দিতে পারতাম না। আমার ঠোট কেটে যেত, গালে গলায় লাল লাল চাকা চাকা দাগ হয়ে থাকতো। অনেক কষ্টে আমি সেই দাগ লুকাতাম, ব্যথার জন্য পেইজ কিলার খেতাম। ও চলে গেলে প্রতিবার খুব কাঁদতাম, সারা রাত জেগে কাঁদতাম। আমি অনেক সময় ওর সাথে আনমনে আমার স্বপ্নের কথা, আমার ভালবাসার কথা, আমার পৃথিবীটার কথা বলে গেছি, এরপর কিছু জিজ্ঞেস করলে ও অবাক হয়ে তাকাতো, বলতো আমার কথা শুনছিল সে, আমার ভয়েজ শুনছিল সে, কিন্তু কোন কথাই তার মাথায় ঢুকছিল না। অবুঝ আমি ভাবতাম – কতই না ভালবাসে আমাকে, আমার গলার স্বরকে। আসলে সবই ছিল প্রতারণা। এরপর যখন ও চলে গেল, আমি ভয়ে কাউকে কিছু বলতে পারিনি। রাসেদের কথা ভাবলে এখনও আমার গায়ে কাঁটা দেয়। ও আমার জন্য খুব ভয়ঙ্কর একটা কিছু। এই শহরে চলে আসবার পরেও সেই ভয়টা আমার কাটেনি। এখনও যদি ঢাকার লক্ষ মানুষের ভীরে আমি রাসেদের মুখটা একটিবার দেখি, আমি নিশ্চিত অজ্ঞান হয়ে যাব।
নিলয়ের হাতের মুঠি শক্ত হয়ে ওঠে। প্রচণ্ড জোরে চেপে ধরে সেল ফোনটা। ওর নীলার সাথে কেউ এমন বাজে আচরণ করতে পারে, ও ভাবতেই পারে না। কিন্তু কি করবার আছে এত দূর থেকে। ওদের রিলেশন হবার আগেই নীলা ওকে এই কথাগুলো জানিয়ে দিয়েছিল। তারপর খুব অবাক হয়ে দেখেছিল কি করে নিলয় ওকে ওর নিজের হাতে গড়া অবিশ্বাস আর ঘৃণার সেই শুঁয়োপোকার গুটিটা থেকে বের করে আনলো। ভালবাসার উষ্ণতায় কি করে আরেকবার ওকে প্রজাপতির মত উড়তে শেখালো। নিলয় তার সমস্ত হৃদয়টা দিয়েই ভালবেসেছিল নীলাকে।
তারপর একটা সময় নীলার সাথে যোগাযোগটা কমে এলো। ওর অভিযোগ বা অভিমানী কথায় শুধু হাসতো নীলা। বলতো সে খুব ব্যস্ত, সময় পায়নি টেক্সট করার। অথবা, ফোন ব্যাগে ছিল তাই কল ধরতে পারেনি। নিলয় ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি যে নীলা আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে ওর কাছ থেকে। ওর ভালবাসার আকাশের সীমানা ছাড়িয়ে চলে যাচ্ছে অন্য কারও আকাশে। একদিন ওকে অবাক করে দিয়ে নীলা টেক্সট করে জানালো, ও কোন একটা ক্যাফেতে বসে আছে আরেকজনের সাথে। সেই ছেলেটা ওকে ক্লাস করতে দেয় নি, টেনে বের করে নিয়ে এসেছে। আজ সারাদিন ওদের বৃষ্টির মধ্যে রিক্সায় ঘোরার প্ল্যান। নিলয় এতটাই অবাক হয়ে গিয়েছিল, যেন বিশ্বাস করতে পারেনি টেক্সটের প্রতিটা অক্ষরকে। নীলার অনেক ছেলে বন্ধু, নিলয় জানতো। কিন্তু ও কখনও এই বিষয়ে প্রশ্ন তোলেনি, ওর প্রেমিকার ছেলে বন্ধু থাকতেই পারে, এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলার মত এতটা ছোট মনের মানুষ বলে নিজেকে ভাবতে পারেনি নিলয়। ওদের সাথে নীলা মাঝে মাঝে ঘুরতে যেত, খেতে যেত, গল্প করতো। নিলয়ের ভাল লাগতো যে মেয়েটা আনন্দ করছে, মজা করছে, ভাল আছে। কিন্তু নীলার আজকের কথাটা একদমই অন্য রকম। সন্দেহের দোলায় দোলে নিলয়ের মন।
এর কিছুদিন পর এক রাতে নীলার সাথে কথার শুরুতেই নীলা বলে –
- জানিস, কি যে ঝামেলা হয়ে গেছে। হুট করেই আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আগামী সপ্তাহেই বিয়ে। আমার আব্বু অবশ্য রাজি ছিল না। এদিকে ও এসে ধরেছে ভাইয়ার বন্ধু রনী ভাইয়াকে। রনী ভাইয়া তো আমাদের ফ্যামিলি মেম্বারের মতই। উনি কি করে যেন আব্বাকে রাজী করিয়ে ফেললেন। আমাকে একটিবার জিজ্ঞেস পর্যন্ত করেন নি।
নীলার গলায় এক ফোটা কষ্ট ছিল না। বরং একটা চাপা উত্তেজনা আর আনন্দ ছিল। নিলয় যেন পাথর হয়ে গিয়েছিল ওর কথা গুলো শুনে। স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, এই সেই ছেলে, যে ওকে ক্লাস করতে না দিয়ে টেনে আনে বাইরে, বৃষ্টির মধ্যে সারা দিন রিক্সা নিয়ে ঘোরে। আর নীলার সম্মতি ছাড়া এ বিয়ে হচ্ছে না। ও শুধু বলেছিল –
- নীলা, আমার কি হবে?
- দেখ, আসলে জন্ম মৃত্যু আর বিয়ে – এই তিনটা জিনিস মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কখন কার কি হয়ে যাবে কেউ জানে না। তুই অবশ্যই একটা লক্ষ্ণী টাইপের ফুটফুটে বউ খুঁজে পাবি। অবশ্যই ভার্জিন হবে সেই মেয়েটা। আমার মত এঁটো, সাত ঘাটের জল খাওয়া, কালো, অসুন্দর মেয়ে না।
- নীলা, আমি তো ফুটফুটে সুন্দর কোন মেয়েকে চাইনি। কোন ধরনের শর্ত ছাড়াই ভালবেসেছি তোকে। আমি তোর জায়গায় অন্য কোন মেয়েকে কল্পনাও করতে পারিনা।
- আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে সব। এক সময় কষ্ট পাবি না আর। তুই তো সব সময় চাইতি যেন আমি ভাল থাকি। এটাই মনে কর আমার ভাল থাকা। আমি তোকে মুক্তি দিয়ে গেলাম, তোর স্বপ্নটাও পূরণ করে গেলাম।
- আমার স্বপ্ন তো ছিলি কেবল মাত্র তুই ... গলা ধরে আসে নিলয়ের।
- স্বপ্ন তো স্বপ্নই রে বোকা। এটা তো সত্যি নয়। আর তোর স্বপ্নেই না হয় আমি তোর হয়ে থাকলাম। ... আশ্চর্য রকম শান্ত নীলার কণ্ঠস্বর।
- নীলা ... কেঁদে ফেলে নিলয়।
- দেখ, তুই যে কাঁদছিস, তোর কান্নার শব্দ আমার ভেতর কোন অনুভূতি সৃষ্টি করছে না। আমি ফোন রাখি।
ফোনটা কেটে দিয়েছিল নীলা। নিলয় আর ফোন করেনি ওকে। জানে কোন লাভ নেই। যে সুতোটা ছিঁড়ে গেছে, তাকে আর জোড়া লাগানো যাবে না। নীলাকে আর ফেরানো যাবে না। প্রচণ্ড কষ্টে পাগল হয়ে গিয়েছিল নিলয়। সারা দিন সারা রাত মন খারাপ করে থাকতো। মাঝে মাঝে শাওয়ার ছেড়ে শিশুর মত চিৎকার করে কাঁদতো। কাজের ফাকে একলা হয়ে গেলেও ওর চোখ চোখ দিয়ে নিজের অজান্তেই শ্রাবণের ধারা নামতো। ভালবাসায় এত কষ্ট নিলয় জানতো না নীলা ওভাবে চলে না গেলে। অনেক ভেবেও নিলয় তার ভালবাসায় কোন খুঁত ধরতে পারেনি। কি কারণে নীলে ওকে একা রেখে, ওর স্বপ্নটা ভেঙ্গে দিয়ে চলে গেল, নিলয় আজও জানে না। ওদের মাঝে কখনও তেমন কোন ঝগড়া হয়নি, কখনও নিলয় এক ফোটা অবহেলা করেনি নীলাকে। কখনও নীলার জীবনটাকে বিধি নিষেধের জালে জড়াতে চায়নি। তবে কেন এভাবে অন্যের হয়ে গেল নীলা? কি কমতি ছিল ওর ভালবাসায়?
সময়ের সাথে সাথে মানুষ শোক সামলে ওঠে, কষ্ট ভুলে যায়। অনেক সময় লেগেছে নিলয়ের সামলে উঠতে। বেশ কয়েক মাস পর এক বিকেলে নিলয় ছোট্ট একটা টেক্সট করে নীলার নাম্বারে – “কেমন আছিস?”। জবাব পায় প্রায় সাথে সাথেই – “ভাল নেই। একটা কল দিবি? কথা বলতে ইচ্ছে করছে তোর সাথে”। অনেক কথা হয় সেদিন। বিয়ের পরেই সেই ছেলেটার বদলে যাওয়া, নীলার দিকে আগের মত নজর না দেয়া, মা বোনের কথা শুনে কোন কিছু যাচাই না করে নীলার সাথে খারাপ ব্যবহার করা – এই সব কারণে নীলা আপসেট ছিল খুব। সেদিন নীলয় ছিল খুব শান্ত। বার বার নীলাকে বোঝাচ্ছিল সব ঠিক হয়ে যাবে। বিয়ের প্রথম কিছু দিন এমন হতে পারে। ওদের পরিবারের মাঝে নীলা এখনও একজন নতুন মানুষ। এই পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে ওদের সাথে সাথে নীলারও সময় লাগবে। কিন্তু সব ঠিক হয়ে যাবে এক সময়। অনেকক্ষণ কথা বলে নীলার মন ভাল করে দিয়ে নিজেও বেশ একটা আনন্দ পেয়েছিল নিলয়। যা হবার ছিল, তা হয়েছে, এখন নীলার ভাল থাকাই ওর প্রতি মুহূর্তের কামনা। কিন্তু একটা সময় নিলয় বুঝতে পারে, ওর আর নীলার কাছাকাছি থাকবার প্রয়োজন নেই। নীলার সাথে কথা বলে ওর যেমন কষ্ট হয়, নীলারও হয়তো তেমন কষ্ট হয়। ভাল তো সেও বেসেছিল। কিছুদিন পর নিলয় তার পুরনো নম্বরটা চেঞ্জ করে ফেলে, আগের চাকরীটা ছেড়ে নতুন একটা চাকরীতে জয়েন করে অনেক দূরে অন্য একটা জায়গায় চলে আসে, যেখানে নীলার কোন স্মৃতি ওর পিছু নেবে না। কিন্তু ওর চিন্তাধারা ভুল প্রমাণ করে নীলা ওর হৃদয়ের মাঝে থেকেই যায়, কোন ভাবেই ভুলতে পারেনা ওকে নিলয়। এই পাঁচ বছরে বহুবার নিলয় নীলাকে ফোন বা টেক্সট করতে গিয়েও করেনি, সামলে নিয়েছে নিজেকে। কিন্তু আজ, এই জোছনার মায়াবী আলো ভরা রাতে নিজেকে সামলাতে পারে না নিলয়। কাঁপা হাতে কল বাটন চাপে নিলয়। কয়েকটা রিং হবার পর ওপাশ থেকে নীলার কণ্ঠ শোনা যায় –
- হ্যালো ... হ্যালো ... হ্যালো
কোন কথা বলতে পারে না নিলয়। চুপচাপ শুনে যায় নীলার কণ্ঠ। ছোট্ট একটা বাচ্চার কেঁদে ওঠার শব্দ শোনা যায়, ভারী একটা কণ্ঠস্বর দূর থেকে বলে ওঠে – “কে এত রাতে ফোন দিয়েছে? তুমি এই সময় বারান্দায় বসে কি করছো? বাচ্চাটা কাঁদছে, থামাও ওকে, আমার সকালে অফিস আছে, ঘুমাতে পারছি না”। ফোন কেটে যায় এরপর।
বুকের মাঝে ধ্বক করে ওঠে নিলয়ের। নীলা জেগে ছিল, নীলা একাকী বসে ছিল বারান্দায়। ওর কি মন ভাল নেই? ও কি নিলয়ের কথা ভাবছিল? কেমন আছে নীলা? ভাল আছে তো? ভাল থাকলে এত রাতে একা বারান্দায় বসে থাকবার কথা নয়। ওকে কি একটা টেক্সট করবে নিলয়?
কিছুই করেনা নিলয়। বরং ফোন বুক থেকে নীলার নম্বরটা ডিলিট করে দেবার বাটন চেপে জোছনা দেখায় নিমগ্ন হয়।
জোছনার একটা দুর্নিবার টান আছে। প্রবল ঘুমে কাতর মানুষও জোছনা রাতে কিছু সময় পরিচিত পরিবেশের হটাত বদলে যাওয়া রূপটা দেখতে তাকিয়ে থাকে। নিলয় বুঝে গেছে, তার আর ঘুমানো হলো না আজকে। জোছনার আলোতে ঘরের ভেতর থেকে একটা চেয়ার টেনে বাইরে এসে বসে সে। মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে জোছনার দিকে। মনের মাঝে একটাই গান তখন - "আজ জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে, বসন্তের এই মাতাল সমীরণে ..."। একেই মনে হয় চাঁদনী পসর রাত বলে। হুমায়ুন আহমেদের সেই বিখ্যাত লাইন গুলো - "চাঁদনী পসর রাইতে যেন আমার মরণ হয়….."। এমন মায়াময় রাত্রিতেই তো মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা যায়। জোছনার মায়ায় ভুলে যাওয়া যায় অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ।
আচ্ছা, এত সুন্দর একটা রাতে সে মৃত্যুর কথা ভাবছে কেন? হুমায়ুন আহমেদই বা কেন ভেবেছিলেন? এই সময়ে তো আনন্দময় কিছু ভাববার কথা। পূর্ণ চাঁদের আলোয় তো বিষণ্ণতা মাখানো থাকবার কথা নয়। একটা যুক্তি অবশ্য আছে। বানভাসি জোছনার সৌন্দর্যের মাঝে মানুষ জীবনের পূর্ণতা খুঁজে পায়। সে মনে করে তার জীবনের সব চাওয়া পূরণ হয়েছে। এখন আর চাইবার কিছুই নেই। চাহিদা বিহীন জীবন অবশ্যই অস্বস্তিকর হবার কথা, নিরানন্দ হবার কথা। সে জন্য মানুষ মরে যেতে চায়।
ট্রাউজারের পকেট থেকে সেল ফোনটা বের করে নিলয়। অনেক দিন অনেক বছর অযত্নে ফোন বুকের এক কোণায় পরে থাকা নীলার নাম্বারটা খুঁজে বের করে। গত পাঁচ বছরে এই নাম্বারে আর কল দেবার প্রয়োজন অনুভব করেনি সে। কি হবে কল দিয়ে? যে নিতান্ত অবহেলায় তাকে মাঝ রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রেখে চলে গেছে, তাকে পিছু ডেকে বিরক্ত করবার কোন মানে নেই। অথচ কি জীবন্ত ছিল সেই দিন গুলো। রাত বিরাতে হুট করে সেল ফোনে মেসেজ “একটা কল দে তো”।
- ঘুম ভাঙ্গালি কেন? কি হয়েছে?
- স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়েছি, আমাকে শক্ত করে একটু জড়িয়ে ধরবি? ভয় পাওয়া কাঁপা কাঁপা গলা নীলার। সচকিত নিলয় তখন।
- আয়, আমার কাছে আয়, আমি আছি তো, তোর পাশেই আছি, তোর কাছে আছি, কোন ভয় নেই। স্বপ্ন দেখে কেউ ভয় পায় রে পাগলী। কি দেখেছিলি স্বপ্নে?
- রাসেদ ...
গলা আবারও কাঁপে নীলার।
- আরে, ও তোর কি করবে? তুই তো আমার বুকের মধ্যে আছিস। তোকে কেউ স্পর্শ করতে পারবে না এখন।
- হু, আমাকে শক্ত করে ধরে রাখ তুই, আমার ভয় কাটছে না।
শত মাইলের ব্যবধানে থেকেও সে সময় নীলাকে জড়িয়ে রাখতো নিলয়। এ কথা সে কথা বলে ওর ভয়টা কাটিয়ে দিতো। এক সময় কথা বলতে বলতেই ঘুমিয়ে পড়তো নীলা। নিলয় চুপ করে থাকতো তখন, ওর ভারী নিশ্বাসের শব্দটা শোনা পর্যন্ত অপেক্ষা করতো, এরপর লাইনটা কেটে দিতো।
রাসেদ, সেই ইতরটাকে হাতের কাছে পেলে এখনও গলা টিপে মারবে নিলয়। তের চোদ্দ বছরের নীলার সাথে ভালবাসার অভিনয় করে যে এক সময় আঁস্তাকুড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে গিয়েছিল নীলাকে। অবশ্যই তার যে টুকু পাবার ছিল, সেটুকু নিয়েই। নীলা নিজেই বলতো –
- রাসেদ কখনই ভালবাসেনি আমাকে। আমি ছোট ছিলাম, আমি অবুঝ ছিলাম। বাসায় কেউ না থাকলেই ও আসতো। কিছুক্ষণ অহেতুক বকবক করে আমার শরীরটা নিয়ে খেলতো। আমার কষ্ট হতো, আমি বলতাম ওকে, কিন্তু ওকে কিছুতেই বাঁধা দিতে পারতাম না। আমার ঠোট কেটে যেত, গালে গলায় লাল লাল চাকা চাকা দাগ হয়ে থাকতো। অনেক কষ্টে আমি সেই দাগ লুকাতাম, ব্যথার জন্য পেইজ কিলার খেতাম। ও চলে গেলে প্রতিবার খুব কাঁদতাম, সারা রাত জেগে কাঁদতাম। আমি অনেক সময় ওর সাথে আনমনে আমার স্বপ্নের কথা, আমার ভালবাসার কথা, আমার পৃথিবীটার কথা বলে গেছি, এরপর কিছু জিজ্ঞেস করলে ও অবাক হয়ে তাকাতো, বলতো আমার কথা শুনছিল সে, আমার ভয়েজ শুনছিল সে, কিন্তু কোন কথাই তার মাথায় ঢুকছিল না। অবুঝ আমি ভাবতাম – কতই না ভালবাসে আমাকে, আমার গলার স্বরকে। আসলে সবই ছিল প্রতারণা। এরপর যখন ও চলে গেল, আমি ভয়ে কাউকে কিছু বলতে পারিনি। রাসেদের কথা ভাবলে এখনও আমার গায়ে কাঁটা দেয়। ও আমার জন্য খুব ভয়ঙ্কর একটা কিছু। এই শহরে চলে আসবার পরেও সেই ভয়টা আমার কাটেনি। এখনও যদি ঢাকার লক্ষ মানুষের ভীরে আমি রাসেদের মুখটা একটিবার দেখি, আমি নিশ্চিত অজ্ঞান হয়ে যাব।
নিলয়ের হাতের মুঠি শক্ত হয়ে ওঠে। প্রচণ্ড জোরে চেপে ধরে সেল ফোনটা। ওর নীলার সাথে কেউ এমন বাজে আচরণ করতে পারে, ও ভাবতেই পারে না। কিন্তু কি করবার আছে এত দূর থেকে। ওদের রিলেশন হবার আগেই নীলা ওকে এই কথাগুলো জানিয়ে দিয়েছিল। তারপর খুব অবাক হয়ে দেখেছিল কি করে নিলয় ওকে ওর নিজের হাতে গড়া অবিশ্বাস আর ঘৃণার সেই শুঁয়োপোকার গুটিটা থেকে বের করে আনলো। ভালবাসার উষ্ণতায় কি করে আরেকবার ওকে প্রজাপতির মত উড়তে শেখালো। নিলয় তার সমস্ত হৃদয়টা দিয়েই ভালবেসেছিল নীলাকে।
তারপর একটা সময় নীলার সাথে যোগাযোগটা কমে এলো। ওর অভিযোগ বা অভিমানী কথায় শুধু হাসতো নীলা। বলতো সে খুব ব্যস্ত, সময় পায়নি টেক্সট করার। অথবা, ফোন ব্যাগে ছিল তাই কল ধরতে পারেনি। নিলয় ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি যে নীলা আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে ওর কাছ থেকে। ওর ভালবাসার আকাশের সীমানা ছাড়িয়ে চলে যাচ্ছে অন্য কারও আকাশে। একদিন ওকে অবাক করে দিয়ে নীলা টেক্সট করে জানালো, ও কোন একটা ক্যাফেতে বসে আছে আরেকজনের সাথে। সেই ছেলেটা ওকে ক্লাস করতে দেয় নি, টেনে বের করে নিয়ে এসেছে। আজ সারাদিন ওদের বৃষ্টির মধ্যে রিক্সায় ঘোরার প্ল্যান। নিলয় এতটাই অবাক হয়ে গিয়েছিল, যেন বিশ্বাস করতে পারেনি টেক্সটের প্রতিটা অক্ষরকে। নীলার অনেক ছেলে বন্ধু, নিলয় জানতো। কিন্তু ও কখনও এই বিষয়ে প্রশ্ন তোলেনি, ওর প্রেমিকার ছেলে বন্ধু থাকতেই পারে, এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলার মত এতটা ছোট মনের মানুষ বলে নিজেকে ভাবতে পারেনি নিলয়। ওদের সাথে নীলা মাঝে মাঝে ঘুরতে যেত, খেতে যেত, গল্প করতো। নিলয়ের ভাল লাগতো যে মেয়েটা আনন্দ করছে, মজা করছে, ভাল আছে। কিন্তু নীলার আজকের কথাটা একদমই অন্য রকম। সন্দেহের দোলায় দোলে নিলয়ের মন।
এর কিছুদিন পর এক রাতে নীলার সাথে কথার শুরুতেই নীলা বলে –
- জানিস, কি যে ঝামেলা হয়ে গেছে। হুট করেই আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আগামী সপ্তাহেই বিয়ে। আমার আব্বু অবশ্য রাজি ছিল না। এদিকে ও এসে ধরেছে ভাইয়ার বন্ধু রনী ভাইয়াকে। রনী ভাইয়া তো আমাদের ফ্যামিলি মেম্বারের মতই। উনি কি করে যেন আব্বাকে রাজী করিয়ে ফেললেন। আমাকে একটিবার জিজ্ঞেস পর্যন্ত করেন নি।
নীলার গলায় এক ফোটা কষ্ট ছিল না। বরং একটা চাপা উত্তেজনা আর আনন্দ ছিল। নিলয় যেন পাথর হয়ে গিয়েছিল ওর কথা গুলো শুনে। স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, এই সেই ছেলে, যে ওকে ক্লাস করতে না দিয়ে টেনে আনে বাইরে, বৃষ্টির মধ্যে সারা দিন রিক্সা নিয়ে ঘোরে। আর নীলার সম্মতি ছাড়া এ বিয়ে হচ্ছে না। ও শুধু বলেছিল –
- নীলা, আমার কি হবে?
- দেখ, আসলে জন্ম মৃত্যু আর বিয়ে – এই তিনটা জিনিস মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কখন কার কি হয়ে যাবে কেউ জানে না। তুই অবশ্যই একটা লক্ষ্ণী টাইপের ফুটফুটে বউ খুঁজে পাবি। অবশ্যই ভার্জিন হবে সেই মেয়েটা। আমার মত এঁটো, সাত ঘাটের জল খাওয়া, কালো, অসুন্দর মেয়ে না।
- নীলা, আমি তো ফুটফুটে সুন্দর কোন মেয়েকে চাইনি। কোন ধরনের শর্ত ছাড়াই ভালবেসেছি তোকে। আমি তোর জায়গায় অন্য কোন মেয়েকে কল্পনাও করতে পারিনা।
- আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে সব। এক সময় কষ্ট পাবি না আর। তুই তো সব সময় চাইতি যেন আমি ভাল থাকি। এটাই মনে কর আমার ভাল থাকা। আমি তোকে মুক্তি দিয়ে গেলাম, তোর স্বপ্নটাও পূরণ করে গেলাম।
- আমার স্বপ্ন তো ছিলি কেবল মাত্র তুই ... গলা ধরে আসে নিলয়ের।
- স্বপ্ন তো স্বপ্নই রে বোকা। এটা তো সত্যি নয়। আর তোর স্বপ্নেই না হয় আমি তোর হয়ে থাকলাম। ... আশ্চর্য রকম শান্ত নীলার কণ্ঠস্বর।
- নীলা ... কেঁদে ফেলে নিলয়।
- দেখ, তুই যে কাঁদছিস, তোর কান্নার শব্দ আমার ভেতর কোন অনুভূতি সৃষ্টি করছে না। আমি ফোন রাখি।
ফোনটা কেটে দিয়েছিল নীলা। নিলয় আর ফোন করেনি ওকে। জানে কোন লাভ নেই। যে সুতোটা ছিঁড়ে গেছে, তাকে আর জোড়া লাগানো যাবে না। নীলাকে আর ফেরানো যাবে না। প্রচণ্ড কষ্টে পাগল হয়ে গিয়েছিল নিলয়। সারা দিন সারা রাত মন খারাপ করে থাকতো। মাঝে মাঝে শাওয়ার ছেড়ে শিশুর মত চিৎকার করে কাঁদতো। কাজের ফাকে একলা হয়ে গেলেও ওর চোখ চোখ দিয়ে নিজের অজান্তেই শ্রাবণের ধারা নামতো। ভালবাসায় এত কষ্ট নিলয় জানতো না নীলা ওভাবে চলে না গেলে। অনেক ভেবেও নিলয় তার ভালবাসায় কোন খুঁত ধরতে পারেনি। কি কারণে নীলে ওকে একা রেখে, ওর স্বপ্নটা ভেঙ্গে দিয়ে চলে গেল, নিলয় আজও জানে না। ওদের মাঝে কখনও তেমন কোন ঝগড়া হয়নি, কখনও নিলয় এক ফোটা অবহেলা করেনি নীলাকে। কখনও নীলার জীবনটাকে বিধি নিষেধের জালে জড়াতে চায়নি। তবে কেন এভাবে অন্যের হয়ে গেল নীলা? কি কমতি ছিল ওর ভালবাসায়?
সময়ের সাথে সাথে মানুষ শোক সামলে ওঠে, কষ্ট ভুলে যায়। অনেক সময় লেগেছে নিলয়ের সামলে উঠতে। বেশ কয়েক মাস পর এক বিকেলে নিলয় ছোট্ট একটা টেক্সট করে নীলার নাম্বারে – “কেমন আছিস?”। জবাব পায় প্রায় সাথে সাথেই – “ভাল নেই। একটা কল দিবি? কথা বলতে ইচ্ছে করছে তোর সাথে”। অনেক কথা হয় সেদিন। বিয়ের পরেই সেই ছেলেটার বদলে যাওয়া, নীলার দিকে আগের মত নজর না দেয়া, মা বোনের কথা শুনে কোন কিছু যাচাই না করে নীলার সাথে খারাপ ব্যবহার করা – এই সব কারণে নীলা আপসেট ছিল খুব। সেদিন নীলয় ছিল খুব শান্ত। বার বার নীলাকে বোঝাচ্ছিল সব ঠিক হয়ে যাবে। বিয়ের প্রথম কিছু দিন এমন হতে পারে। ওদের পরিবারের মাঝে নীলা এখনও একজন নতুন মানুষ। এই পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে ওদের সাথে সাথে নীলারও সময় লাগবে। কিন্তু সব ঠিক হয়ে যাবে এক সময়। অনেকক্ষণ কথা বলে নীলার মন ভাল করে দিয়ে নিজেও বেশ একটা আনন্দ পেয়েছিল নিলয়। যা হবার ছিল, তা হয়েছে, এখন নীলার ভাল থাকাই ওর প্রতি মুহূর্তের কামনা। কিন্তু একটা সময় নিলয় বুঝতে পারে, ওর আর নীলার কাছাকাছি থাকবার প্রয়োজন নেই। নীলার সাথে কথা বলে ওর যেমন কষ্ট হয়, নীলারও হয়তো তেমন কষ্ট হয়। ভাল তো সেও বেসেছিল। কিছুদিন পর নিলয় তার পুরনো নম্বরটা চেঞ্জ করে ফেলে, আগের চাকরীটা ছেড়ে নতুন একটা চাকরীতে জয়েন করে অনেক দূরে অন্য একটা জায়গায় চলে আসে, যেখানে নীলার কোন স্মৃতি ওর পিছু নেবে না। কিন্তু ওর চিন্তাধারা ভুল প্রমাণ করে নীলা ওর হৃদয়ের মাঝে থেকেই যায়, কোন ভাবেই ভুলতে পারেনা ওকে নিলয়। এই পাঁচ বছরে বহুবার নিলয় নীলাকে ফোন বা টেক্সট করতে গিয়েও করেনি, সামলে নিয়েছে নিজেকে। কিন্তু আজ, এই জোছনার মায়াবী আলো ভরা রাতে নিজেকে সামলাতে পারে না নিলয়। কাঁপা হাতে কল বাটন চাপে নিলয়। কয়েকটা রিং হবার পর ওপাশ থেকে নীলার কণ্ঠ শোনা যায় –
- হ্যালো ... হ্যালো ... হ্যালো
কোন কথা বলতে পারে না নিলয়। চুপচাপ শুনে যায় নীলার কণ্ঠ। ছোট্ট একটা বাচ্চার কেঁদে ওঠার শব্দ শোনা যায়, ভারী একটা কণ্ঠস্বর দূর থেকে বলে ওঠে – “কে এত রাতে ফোন দিয়েছে? তুমি এই সময় বারান্দায় বসে কি করছো? বাচ্চাটা কাঁদছে, থামাও ওকে, আমার সকালে অফিস আছে, ঘুমাতে পারছি না”। ফোন কেটে যায় এরপর।
বুকের মাঝে ধ্বক করে ওঠে নিলয়ের। নীলা জেগে ছিল, নীলা একাকী বসে ছিল বারান্দায়। ওর কি মন ভাল নেই? ও কি নিলয়ের কথা ভাবছিল? কেমন আছে নীলা? ভাল আছে তো? ভাল থাকলে এত রাতে একা বারান্দায় বসে থাকবার কথা নয়। ওকে কি একটা টেক্সট করবে নিলয়?
কিছুই করেনা নিলয়। বরং ফোন বুক থেকে নীলার নম্বরটা ডিলিট করে দেবার বাটন চেপে জোছনা দেখায় নিমগ্ন হয়।