মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৬

সত্যিকারের প্রেম

কামালের তার সাজান গোছান অফিস রুমে বসে আছে।রুমের এক সাইডে বিশাল একটা LED টিভি । আর রুমের মাজখানে বিশাল একটা টেবিল তার উপড়ে শোভা পাচ্ছে একটা ল্যাপটপ আর কিছু ফাইল এসি ও টিভি এর রিমোট।কেউ দেখা করতে আসলে বসার জন্য ৩টা চেয়ার আর রুমের এক সাইডে বাথরুমের দরজা।
.
কামালের অফিসটা একটা আবাসিক এলাকায় নিরিবিলি পরিবেশে।যার প্রতিটা রুমে সিসি ক্যামেরা ফিট করা আছে।কামাল চাইলেই তার রুম থেকে যে কোন রুমের অবস্থা দেখতে পারে সেই ব্যাবস্থা আছে।কিন্তু কামাল এই কাজটা সাধারণত করে না।
.
ঘড়িতে দুপুর ১২ টা ।। পিওন এসে খবর দিল একটা মেয়ে ও ছেলে তার সাথে দেখা করতে চায় ।। কামাল একটু অবাক হল সে সাধারণত কারও সাথে দেখা করে না বিশেষ কারণ ছাড়া যারাই দেখা করতে আসে তাদের কে তার পিএ সামলে নেয় একান্ত জরুরি না হলে তার কাছে খবর আসে না যে কেউ দেখা করতে চায়।
.
কামাল তার ল্যাপটপে ওয়েটিং রুমের ভিডিও ফুটেজ ফুটিয়ে তুলল বেশ অবাক হল যেই মেয়েটা বসে আছে সে আর কেউ না সেই মেয়েটা হল তার হবু বউ ।। এই মেয়েটার ফ্যামিলির সাথেই তার বিয়ের কথা চলছে ।। সব ঠিক থাকলে আগামী শুক্র বার বিয়ের তারিখ ফিক্সড হবে। মেয়েটা দেখতে বেশ সুন্দর ঢাকা ভার্সিটিতে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্রী, নাম মিনা , বোরখা না পড়লেও সব সময় ওড়না দিয়ে হিজাবের মত করে কি ভাবে যেন ওড়না পড়ে।
.
কামাল ইন্টারকমে তাদের কে তার রুমে পাঠিয়ে দিতে বলল।
.
--আসতে পারি ?
--হাঁ এসো না মানে আসেন।
--আপনি আমাকে তুমি করেই বলবেন ।
--আচ্ছা ঠিক আছে । বস।
--ধন্যবাদ ।। ( কিছুক্ষণ নিরবতা)
--হটাত এখানে আসার কারণ কি জানতে পারি ?
--(কিছুক্ষণ নিরবতা) আসলে আপনাকে কিছু কথা বলতে চাই জানি না কিভাবে নিবেন আমার কথা গুলো তার পর আপনাকে বলতেই হবে কথা গুলো।
--বল কোন সমস্যা নেই।
-- আসলে আমি ওর সাথে (পাশে বসা ছেলেটিকে দেখিয়ে) আমার ৩ বছরের রিলেশন চলছে। ও এখন অনার্স ফাইইনাল ইয়ারে আছে ঢাকা ভার্সিটিতে।
--তো আমি কি করতে পারি । মূলত তুমি কি চাও ?
--দেখেন আমি জানি আপনার যোগ্যতা ওর থেকে অনেক বেশি। কিন্তু তারপর আমার পক্ষে আপনাকে বিয়ে করা সম্ভব না ।
-- তা সেই কথা তুমি আমাকে বলছ কেন সেটা তুমি তোমার পরিবারকে বল যে হেতু আমাদের বিয়েটা পারিবারিক ভাবে হচ্ছে ।।
.
-- দেখেন সমস্যা এই জায়গায় না সমস্যা অন্য জায়গায় আমার পরিবার কিছুতেই ওকে মেনে নিবে না কারণ তারা কোন দিনই চাইবে না আমি একটা প্রতিষ্ঠিত ছেলেকে রেখে একটা অপ্রতিষ্ঠিত ছেলের জন্য ওয়েট করি।
.
--তাহেল কি আর করা প্রতিষ্ঠিত ছেলেকেই বিয়ে কর ।। আর বিয়ের আগে একটু দুয়েকটু রিলেশন থাকেই ।। ওইটা কোন ব্যাপার না বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে ।।
--না কিছুই ঠিক হবে না আমি জানি আপনাকে বিয়ে করলে টাকা পয়সা বাড়ি গাড়ি পাব কিন্তু মনে শান্তি পাব না মনে হবে কি জানি একটা নেই নেই।
--তো এখন আমাকে কি করতে হবে।
--আপনি এমন ভাবে বিয়েটা বাতিল করবেন যাতে আমার পরিবার মনে করে এতে আমার পরিবারের কোন দোষ নেই ।। আপনাদেরই মেয়ে বা অন্য কিছু পছন্দ হয়নি।। এতে করে আমার উপর পারিবারিক কোন চাপ পড়বে না।
-- তোমার কি কারণে মনে হল আমি এই কাজ করব ?
-- আমি জানি আপনি এই কাজটা করবেন কারণ প্রথম দিনেই আপনি যখন দেখতে আসেছিলেন আমাকে আমার দিকে একবার ভাল করে তাকান নাই । কোথায় যেন আপনার ভিতর একটা শূন্যতা শূন্যতা কাজ করছিল।
.
--শোন তোমাদের একটা কাহিনী বলি।এইযে মিস্টার আপনার নামটা কি এখন জানলাম না।
--স্যার আমার নাম আজাদ। আজাদ রহমান।
-- আমাকে স্যার বলার দরকার নেই । আপনি আমার আণ্ডারে কাজও করেন না আর আমি আপনাকে পড়াইও না ।।
--সরি স্যার । অহ ভাইয়া ।
.
-- শোন আজ থেকে চার বছর আগে আমিও ছাত্র ছিলাম ।। আমার কিছুই ছিল না । আমিও একটা মেয়েকে ৪ বছর ধরে ভালবাসতাম ।একদিন মেয়েটা আমাকে জানাল তার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব আসছে । ছেলে দেখতে ভাল সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ভাল বেতন পায় ।। তার বাবা মার ইচ্ছা সে ঐ ছেলেকে বিয়ে করে।আমি আমাদের সম্পর্কের কথা বললাম সে বলল তার কিছু করার নাই যেহেতু পরিবারের সবার এই ছেলে পছন্দ তাই সে এই বিয়ে ভাঙ্গতে পারবে না। আর আমি এখন ছাত্র তাই আমাকে বিয়ে করা সম্ভব না । আর তার একটা ছোট বোন আছে তাই আমার জন্য অপেক্ষা করাও সম্ভব না ।। পারলে তাকে যেন ভুলে যাই আবার নতুন করে জীবন শুরু করি।আমিও ওর কথা মত নতুন জীবন শুরু করি মাত্র চার বছরে আমি আজকে এই অবস্থায় আছি । আমার এখানে এখন ওর হাসবেন্ডের মত কত জন লোক কাজ করে সেই হিসেবও আমার কাছে নাই।কিন্তু তার পড়েও আমার মনে হয় কি যেন নেই কি যেন নেই।
.
সেই থেকেই আমার মনে হত মেয়েরা লোভী স্বার্থপর কিন্তু আজকে তোমাকে দেখে ধারণটা ভুল মনে হল হয়ত আসলে কিছু মেয়ে লোভী সবাই না।
.
আর এইযে মিস্টার আপনাকে দেখে আমার হিংসে হচ্ছে এই রকম করে যদি কোন মেয়ে আমাকে ভালবাসত তাহলে জীবনটা সার্থক হত।ভাল থাকবে তোমরা কোন চিন্তা করবে না আমি সব ব্যাবস্থা করে দিব আর কোন সমস্যা হলে আমি আছি।বিয়েতে দাওয়াত দিতে ভুলবে না কিন্তু ।। আর যাওয়ার আগে আমার পিএ এর সাথে দেখা করে যেও।
.
মিনা কামালের রুম থেকে বের হতে হতে আজাদ কে বলল
--এত সহজে উনি রাজি হয়ে যাবে আমি ভাবতেই পারি না।
--আসলেই উনি একজন অনেক বড় মনের মানুষ । তার থেকে আরও বড় মনের মানুষ হলে তুমি ।।
--মানে ??
--মানে হল তুমি এইরকম একজন লোক কে ছেরে আমার মত একজনের জন্য রাজি হয়েছ এতেই আমি ধন্য ।।
হ্যালো আচ্ছা আপনি কি মিস্টার
--কামাল সাহেবের পিএ ?
--হ্যাঁ ।
আপনার সাথে আমাদের দেখা করতে বলেছে তিনি ।
-- ও আচ্ছা আচ্ছা এইমাত্র স্যার বলেছে আপনাদের কথা।এই খামটা রাখুন এতে কিছু টাকা আছে আর নিচে স্যার এর গাড়িটা রাখা আছে। ড্রাইভার কে বলে দেওয়া হয়েছে আজকে সারাদিন আপনার যে খানে যেতে চান নিয়ে যাবে।
.
-- মানে কিছুই বুঝলাম না।
-- মানে স্যার বেলেছে আপাদের কে যেন কিছু টাকা আর তার গাড়িটা দেওয়া হয় আজকে দিনের জন্য যাতে আপনারা আজে ঘুরতে পারেন এর কিছু কিনতে পারেন । স্যার এর তরফ থেকে আপনাদের জন্য সামান্য সারপ্রাইজ।
.
অফিস থেকে বের হতে হতে মিনার চোখটা ভিজে উঠল আর মনে মনে বলল এত দুর্ভাগা মেয়েটা কে যে কামাল সাহেবের মত মানুষকে হারিয়েছি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন