রাত ২ টা বাজে।হঠাৎ করে আসা ঝড়টা এখন কিছুটা শান্ত।ঝড়ের সাথে যুদ্ধ করতে
করতে প্রকৃতিও অনেকটা ক্লান্ত।অনেকটা গুলিবিদ্ধ পরাজিত সৈনিকের মত।এই
ক্লান্ত প্রকৃতি মোটেও আকৃষ্ট করছে না আবিরকে।তাই কফির কাপটা রেখে বারান্দা
থেকে চলে আসে আবির।এখন ঘুমোতে হবে।বিছানায় শোয়ামাত্র মোবাইলটা
বিরক্তিকরভাবে বেজে উঠে।রিসিভ করে কানে তুলে নিতেই ওপাশ থেকে তরাঙ্গারে
ভেসে আছে এক সুললিল কন্ঠের বালিকার কন্ঠস্বর।তবে কন্ঠস্বরটা একটু কঠিনই মনে
হল।
--হ্যালো(আবির)
--আবির বলছেন?(বালিকা)
--জ্বি বলছি।
--সমস্যা কি আপনার?
--আপাতত কোন সমস্যা নেই।বি.পি, সুগার সবই নরমাল।শুধু মাঝে মাঝে একটু মাইগ্রেনের ব্যাথা করে।
--মজা করছেন?
--একটু।
--আপনি এই কাজটা কেন করলেন?
--কি এমন করলাম?
--মনে করে দেখুন তো।
--একটু আগে মশারির ভিতর দুইটা মশা মারলাম।এর বেশি কিছু না। কিন্তু এর জন্য আমাকে জবাবদিহি করতে হবে সেটা ভাবি নি।
--আপনি মশা মারছেন না হাতি, সেটা আমার জানার বিষয় না।
--তো আপনি কি জানতে চাচ্ছেন সেটা একটু ক্লিয়ার করবেন প্লিজ?
--আমি আপনার নাম্বারটা " দ্য ডে অব দ্য জ্যাকেল" বই থেকে পেয়েছি।কি করেছেন এবার সেটা নিজেই ভেবে দেখুন।
আবির গম্ভীরভাবে ভাবতে চেষ্টা করে।কিন্তু ততক্ষনে বালিকা মোবাইলটা কেটে দেয়।
.
বালিকার এমন রাগের কারন এখন আবিরের কাছে পরিষ্কার।আবির মূলত বইয়ের পোকা।বই পড়তে প্রচন্ড ভালবাসে। কিছুদিন আগে সে পাবলিক লাইব্রেরী থেকে ফ্রেডরিখ ফরসাইথ এর " দ্য ডে অব দ্য জ্যাকেল" নামের বইটি নিয়ে আসে। এটি মূলত একটি থ্রিলার। ইন্টারন্যাশানাল বেষ্ট সেলিং থ্রিলার। ফ্রান্সের সিক্রেট সার্ভিস ও একজন কুখ্যাত খুনীর কাহিনী নিয়ে এই গল্পটা।এই গল্পের শেষের দিকে অর্থাৎ যেখান থেকে কাহিনীর ঝট খুলতে শুরু করেছে ঠিক সেখানে আবির একটা কাগজ রেখে দেয়।ঐ কাগজে গল্পের বাকি অংশের মূল সারাংশ লিখে দেয়া।আর নিচে ওর মোবাইল নাম্বার। এই কাজটা আবির মজা করেই করেছে।এত এক্সাইটমেন্ট নিয়ে পড়া একটা থ্রিলারের মূল টার্নিং পয়েন্ট টা যদি কেউ গল্পের মাঝখানেই বলে দেয় তাহলে মেজাজ গরম হওয়ারই কথা।তখন বইটা পুরো পড়ার আর কোন কোন মানেই থাকে না। কিন্তু বইটা যে এমন রাগী একজন মেয়ের হাতে যাবে সেটা মোটেও ভাবেনি আবির।আর সাত-পাঁচ না ভেবে সেদিনের মত ঘুমুতে চলে যায় ও।
.
ঘুম থেকে উঠেই মোবাইলটা চেক করে দেখে সেই নাম্বারটা থেকে একটা টেক্সট।সেখানে লিখা- 'কাজটা ঠিক করেন নি আপনি।এত এক্সাইটমেন্ট নিয়ে পড়ছিলাম আর আপনি সব নষ্ট করে দিলেন।আপনাকে আমার খুন করতে ইচ্ছে করছে এখন।'
সাথে সাথে কল ব্যাক করে আবির।
--হ্যালো (বালিকা)
--I'm sorry. (আবির)
--কিসের সরি?কোন সরি টরি কাজ হবে না।
--হবে না?
--না।আপনাকে শাস্তি পেতে হবে।
--শাস্তি? বলুন কি শাস্তি।
--যা বলব তা করবেন?
--চেষ্টা করব।
--আকাশের চাঁদ আমার খুব পছন্দ।ঐ চাঁদটা আমাকে এনে দিতে হবে।তাহলেই আপনাকে ক্ষমা করব।
--মানে কি?
--হুম।এটাই আপনার শাস্তি। তা না হলে ক্ষমা নেই।
--এটা বাড়াবাড়ি রকমের শাস্তি হয়ে যাচ্ছে না?
--আপনার কাজটাও বাড়াবাড়ি রকমের ছিল।
--ও।তো আপনার নামটা জানা যাবে?
--অত্রি।
আবিরকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোনটা রেখে দেয় বালিকা।
.
এভাবে চলতে থাকে কিছুদিন।নানা বাহানায় দুজন নিয়মিতই কথা বলতে থাকে মোবাইলে।একসময় তারা ভাল বন্ধুর মত হয়ে যায়।
তবে ওদের সম্পর্কটা ঠিক বন্ধুত্বের নয়।তার থেকে একটু বেশি।দুজন দুজনকেই পছন্দ করত। জানি না এই সম্পর্কের নাম কি।হয়ত ভালবাসা।কিন্তু অনিশ্চয়তার পিছুটানে কেউ কাউকে বলেনি কখনও।
.
আজ প্রায় সাত দিন অত্রির সাথে আবিরের যোগাযোগ নেই।কারন আবিরের মোবাইলটা চুরি হয়ে গেছে।অত্রির নাম্বারটাও মুখস্ত নেই।বাসার ঠিকানাটাও জানা নেই।আবির নিজেই জানতে চায় নি।বলেছিল যেদিন দেখা হবে সেদিন সবকিছু একসাথে জেনে নিবে।
ভালবাসার মানুষটার সাথে কথা বলতে না পেরে আবির পাগলপ্রায়।আর অন্যদিকে অত্রিও টেনশনে মরে যাচ্ছে।আবিরের সাথে কথা বলতে না পারায় স্থির হতে পারছে না কিছুতেই।রাত জেগে কান্না করতে করতে চোখের নিচের কষ্টের কালো দাগটাও স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।অত্রির কাছে আবিরের নাম্বার থাকলেও সেটা বন্ধ দেখাচ্ছে।কারন চুরি করা মোবাইলের সীম খোলা রাখার মত বোকামী সাধারনত চোরেরা করে না।
.
সন্ধাবেলায় ছাদের রেলিং ধরে দাড়িয়ে সিগেরেটের ধোয়ায় ভিতরের শূণ্যতাটুকু দূর করার চেষ্টা করছে।খুশখুশে কাশিটাই বলে দিচ্ছে সিগরেট খাওয়ায় মোটেও অভ্যস্ত নয় সে।কিন্তু মেয়েটাকে তার ভুলে থাকা দরকার।কারন তার সাথে যোগাযোগের কোন উপায়ই এখন আর নেই।আনমনে আকাশের দিকে তাকাতেই তার চোখ বেয়ে অশ্রুর ফোয়াড়া বইতে শুরু করে।কষ্টটা দ্বিগুন বেড়ে যায়। কারন আকাশে তাকাতেই তার চোখে পরে সপ্তর্ষীমন্ডল।আর সপ্তর্ষীমন্ডলের চতুর্থ তারাটারই নাম 'অত্রি'।
সে মেয়েটাকে ভুলতে চাইলেও এই প্রকৃতি তাকে ভুলতে দিচ্ছে না।এতটা নির্মম কেন প্রকৃতি??
.
জীবনটাকে জ্বালাতে জ্বালাতে সিগরেট টা ফিল্টারের গোড়ায় এসে থামল।উচ্ছিদ্যাংশ এ্যাশট্রে তে ফেলে মেঘে ঢাকা ওই ঘোলাটে চাঁদটার দিকে তাকাতেই সে একটু চমকে উঠল।এক মূহূর্তের জন্য মনে হল যেন প্রকৃতি তাকে সব সমস্যার সমাধান দিয়ে দিল।সে উঠে দৌড় দিল সেই পাবলিক লাইব্রেরীর দিকে।অত্রির সাথে যোগাযোগের তার একটা পথ এখনও খোলা আছে।সেটা সম্ভব 'দ্য ডে অব দ্য জ্যাকেল' বইয়ের মাধ্যমে।অত্রি নিশ্চয়ই সেই বইয়ের মাধ্যমে আবিরের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে।তাদের প্রথম পরিচয় তো ঐ বইয়ের মাধ্যমেই।
.
লাইব্রেরীতে গিয়ে আবির বইটা খুঁজে বের করে।বইটা সেখানেই ছিল যেখানে আবির শেষবার রেখে যায়। পাতা উল্টাতে উল্টাতে সেখানে এক টুকরো কাগজ দেখতে পায়।সে কাগজটা নিতে পড়তে শুরু করে।- " আমি জানি না তুমি কোথায় আছ, কেমন আছ।কিন্তু আমি এটা জানি তোমার একটা অস্তিত্ব আমার বুকের ভিতর আছে।খুব গভীরভাবেই আছে।জানি না তুমি আমার জীবনে এলে কেন আর হারিয়েই বা গেলে কেন।তবে এটা জানি অনেক অনেক ভালবাসি তোমাকে।আমি জানি না নিয়তি তোমাকে আর আমাকে নিয়ে কি লিখে রেখেছে।তবে এটা জানি নিয়তিকে একদিন আমার ভালবাসা আর বিশ্বাসের কাছে হারতে হবে। আমি জানি না তুমি আমার লিখাটা পড়বে কিনা।তবে এটা জানি একদিন তোমাকে আমি ফিরে পাব।ঠিক সেদিনের অপেক্ষায় আছি......'
.
চিঠিটা পড়ে আবির স্বস্থির নি:শ্বাস ফেলে।সে ঐ পৃষ্ঠায় অন্য একটা কাগজে করে একটা ঠিকানা লিখে দেয়।এরপর বইটা ঠিক একই জায়গায় রেখে চলে আসে।
.
পরের দিন সন্ধাবেলায় একগুচ্ছ গোলাপ হাতে আবির অত্রির অপেক্ষায় বসে আছে।আজকেই ওদের প্রথম দেখা হচ্ছে। কেউ কাউকে চিনেও না।
এদিক ওদিক তাকাতেই হঠাৎ আবিরের নজর আটকে গেল এক অপ্সরীর উপর।হালকা নীল শাড়ি পড়া একটা মেয়ে।খুবই সাধারন সাজগোজ।কিন্তু তারপরও তাকে দেখতে অসাধারন লাগছে।মুহূর্তেই যেন আবিরের পৃথিবী থমকে গেল।যেন মহাকালের সেই বিন্দুতে পৌছে গেল যেখানে স্থান, কাল কিংবা সময়ের কোন অস্তিত্ব ছিল না।মেয়েটার হাতের দিকে তাকিয়ে আবির আরো চমকে গেল।কারন তার হাতে ছিল 'দ্য ডে অব দ্য জ্যাকেল' নামের সেই বইটা।তারমানে এই অপ্সরীই তার অত্রি।
.
আবির অত্রিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তাকে নিয়ে চলে আসল এক নদীর ধারে।জ্যোৎস্না ভরা ওই মায়াবী চাঁদের কোমল আলোয় চিকচিক করছে নদীর পানি।নদীর সুক্ষ স্রোত উপচে পড়ছে কিনারায়।যেন বাধ ভেঙে ছুয়ে দিতে চাচ্ছে দুজনকে।অত্রির হাত ধরে তাকে নিয়ে আবির নদীর পানিকে আলতো করে ছুঁয়ে দেয়।নদীর কিনারায় পানিতে নেমে দাঁড়ায়।এরপর নীরবতা ভেঙে আবির বলতে শুরু করে
--মনে আছে, তুমি আমাকে একটা শাস্তি দিয়েছিলে?
--হুম।চাঁদটাকে আমার কাছে এনে দিতে বলেছিলাম।
--হুম।তাই আজ চাঁদটা আমি তোমার চরণে এনে দিলাম।(নিচে তাকিয়ে)।
অত্রি নিচে তাকিয়ে দেখে আকাশের ঐ চাঁদের স্পষ্ট প্রতিবিম্ব অত্রির সামনে পানিতে চিকচিক করছে।এটা দেখে অত্রি আর নিজেকে সামলে রাখতে পারে না।তার ভালবাসাগুলো অশ্রু হয়ে গাল বেয়ে নিচে গড়িয়ে পড়ে।তার এই ভালবাসার অশ্রুর প্রত্যেকটা অনু,পরমানু নদীর বুক গড়িয়ে সাগরে আছড়ে পড়ে।এভাবেই নদী, সাগর কিংবা এই সমগ্র প্রকৃতি তাদের এই পবিত্র ভালবাসার সাক্ষী হয়ে থাকবে চিরকাল।
--হ্যালো(আবির)
--আবির বলছেন?(বালিকা)
--জ্বি বলছি।
--সমস্যা কি আপনার?
--আপাতত কোন সমস্যা নেই।বি.পি, সুগার সবই নরমাল।শুধু মাঝে মাঝে একটু মাইগ্রেনের ব্যাথা করে।
--মজা করছেন?
--একটু।
--আপনি এই কাজটা কেন করলেন?
--কি এমন করলাম?
--মনে করে দেখুন তো।
--একটু আগে মশারির ভিতর দুইটা মশা মারলাম।এর বেশি কিছু না। কিন্তু এর জন্য আমাকে জবাবদিহি করতে হবে সেটা ভাবি নি।
--আপনি মশা মারছেন না হাতি, সেটা আমার জানার বিষয় না।
--তো আপনি কি জানতে চাচ্ছেন সেটা একটু ক্লিয়ার করবেন প্লিজ?
--আমি আপনার নাম্বারটা " দ্য ডে অব দ্য জ্যাকেল" বই থেকে পেয়েছি।কি করেছেন এবার সেটা নিজেই ভেবে দেখুন।
আবির গম্ভীরভাবে ভাবতে চেষ্টা করে।কিন্তু ততক্ষনে বালিকা মোবাইলটা কেটে দেয়।
.
বালিকার এমন রাগের কারন এখন আবিরের কাছে পরিষ্কার।আবির মূলত বইয়ের পোকা।বই পড়তে প্রচন্ড ভালবাসে। কিছুদিন আগে সে পাবলিক লাইব্রেরী থেকে ফ্রেডরিখ ফরসাইথ এর " দ্য ডে অব দ্য জ্যাকেল" নামের বইটি নিয়ে আসে। এটি মূলত একটি থ্রিলার। ইন্টারন্যাশানাল বেষ্ট সেলিং থ্রিলার। ফ্রান্সের সিক্রেট সার্ভিস ও একজন কুখ্যাত খুনীর কাহিনী নিয়ে এই গল্পটা।এই গল্পের শেষের দিকে অর্থাৎ যেখান থেকে কাহিনীর ঝট খুলতে শুরু করেছে ঠিক সেখানে আবির একটা কাগজ রেখে দেয়।ঐ কাগজে গল্পের বাকি অংশের মূল সারাংশ লিখে দেয়া।আর নিচে ওর মোবাইল নাম্বার। এই কাজটা আবির মজা করেই করেছে।এত এক্সাইটমেন্ট নিয়ে পড়া একটা থ্রিলারের মূল টার্নিং পয়েন্ট টা যদি কেউ গল্পের মাঝখানেই বলে দেয় তাহলে মেজাজ গরম হওয়ারই কথা।তখন বইটা পুরো পড়ার আর কোন কোন মানেই থাকে না। কিন্তু বইটা যে এমন রাগী একজন মেয়ের হাতে যাবে সেটা মোটেও ভাবেনি আবির।আর সাত-পাঁচ না ভেবে সেদিনের মত ঘুমুতে চলে যায় ও।
.
ঘুম থেকে উঠেই মোবাইলটা চেক করে দেখে সেই নাম্বারটা থেকে একটা টেক্সট।সেখানে লিখা- 'কাজটা ঠিক করেন নি আপনি।এত এক্সাইটমেন্ট নিয়ে পড়ছিলাম আর আপনি সব নষ্ট করে দিলেন।আপনাকে আমার খুন করতে ইচ্ছে করছে এখন।'
সাথে সাথে কল ব্যাক করে আবির।
--হ্যালো (বালিকা)
--I'm sorry. (আবির)
--কিসের সরি?কোন সরি টরি কাজ হবে না।
--হবে না?
--না।আপনাকে শাস্তি পেতে হবে।
--শাস্তি? বলুন কি শাস্তি।
--যা বলব তা করবেন?
--চেষ্টা করব।
--আকাশের চাঁদ আমার খুব পছন্দ।ঐ চাঁদটা আমাকে এনে দিতে হবে।তাহলেই আপনাকে ক্ষমা করব।
--মানে কি?
--হুম।এটাই আপনার শাস্তি। তা না হলে ক্ষমা নেই।
--এটা বাড়াবাড়ি রকমের শাস্তি হয়ে যাচ্ছে না?
--আপনার কাজটাও বাড়াবাড়ি রকমের ছিল।
--ও।তো আপনার নামটা জানা যাবে?
--অত্রি।
আবিরকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোনটা রেখে দেয় বালিকা।
.
এভাবে চলতে থাকে কিছুদিন।নানা বাহানায় দুজন নিয়মিতই কথা বলতে থাকে মোবাইলে।একসময় তারা ভাল বন্ধুর মত হয়ে যায়।
তবে ওদের সম্পর্কটা ঠিক বন্ধুত্বের নয়।তার থেকে একটু বেশি।দুজন দুজনকেই পছন্দ করত। জানি না এই সম্পর্কের নাম কি।হয়ত ভালবাসা।কিন্তু অনিশ্চয়তার পিছুটানে কেউ কাউকে বলেনি কখনও।
.
আজ প্রায় সাত দিন অত্রির সাথে আবিরের যোগাযোগ নেই।কারন আবিরের মোবাইলটা চুরি হয়ে গেছে।অত্রির নাম্বারটাও মুখস্ত নেই।বাসার ঠিকানাটাও জানা নেই।আবির নিজেই জানতে চায় নি।বলেছিল যেদিন দেখা হবে সেদিন সবকিছু একসাথে জেনে নিবে।
ভালবাসার মানুষটার সাথে কথা বলতে না পেরে আবির পাগলপ্রায়।আর অন্যদিকে অত্রিও টেনশনে মরে যাচ্ছে।আবিরের সাথে কথা বলতে না পারায় স্থির হতে পারছে না কিছুতেই।রাত জেগে কান্না করতে করতে চোখের নিচের কষ্টের কালো দাগটাও স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।অত্রির কাছে আবিরের নাম্বার থাকলেও সেটা বন্ধ দেখাচ্ছে।কারন চুরি করা মোবাইলের সীম খোলা রাখার মত বোকামী সাধারনত চোরেরা করে না।
.
সন্ধাবেলায় ছাদের রেলিং ধরে দাড়িয়ে সিগেরেটের ধোয়ায় ভিতরের শূণ্যতাটুকু দূর করার চেষ্টা করছে।খুশখুশে কাশিটাই বলে দিচ্ছে সিগরেট খাওয়ায় মোটেও অভ্যস্ত নয় সে।কিন্তু মেয়েটাকে তার ভুলে থাকা দরকার।কারন তার সাথে যোগাযোগের কোন উপায়ই এখন আর নেই।আনমনে আকাশের দিকে তাকাতেই তার চোখ বেয়ে অশ্রুর ফোয়াড়া বইতে শুরু করে।কষ্টটা দ্বিগুন বেড়ে যায়। কারন আকাশে তাকাতেই তার চোখে পরে সপ্তর্ষীমন্ডল।আর সপ্তর্ষীমন্ডলের চতুর্থ তারাটারই নাম 'অত্রি'।
সে মেয়েটাকে ভুলতে চাইলেও এই প্রকৃতি তাকে ভুলতে দিচ্ছে না।এতটা নির্মম কেন প্রকৃতি??
.
জীবনটাকে জ্বালাতে জ্বালাতে সিগরেট টা ফিল্টারের গোড়ায় এসে থামল।উচ্ছিদ্যাংশ এ্যাশট্রে তে ফেলে মেঘে ঢাকা ওই ঘোলাটে চাঁদটার দিকে তাকাতেই সে একটু চমকে উঠল।এক মূহূর্তের জন্য মনে হল যেন প্রকৃতি তাকে সব সমস্যার সমাধান দিয়ে দিল।সে উঠে দৌড় দিল সেই পাবলিক লাইব্রেরীর দিকে।অত্রির সাথে যোগাযোগের তার একটা পথ এখনও খোলা আছে।সেটা সম্ভব 'দ্য ডে অব দ্য জ্যাকেল' বইয়ের মাধ্যমে।অত্রি নিশ্চয়ই সেই বইয়ের মাধ্যমে আবিরের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে।তাদের প্রথম পরিচয় তো ঐ বইয়ের মাধ্যমেই।
.
লাইব্রেরীতে গিয়ে আবির বইটা খুঁজে বের করে।বইটা সেখানেই ছিল যেখানে আবির শেষবার রেখে যায়। পাতা উল্টাতে উল্টাতে সেখানে এক টুকরো কাগজ দেখতে পায়।সে কাগজটা নিতে পড়তে শুরু করে।- " আমি জানি না তুমি কোথায় আছ, কেমন আছ।কিন্তু আমি এটা জানি তোমার একটা অস্তিত্ব আমার বুকের ভিতর আছে।খুব গভীরভাবেই আছে।জানি না তুমি আমার জীবনে এলে কেন আর হারিয়েই বা গেলে কেন।তবে এটা জানি অনেক অনেক ভালবাসি তোমাকে।আমি জানি না নিয়তি তোমাকে আর আমাকে নিয়ে কি লিখে রেখেছে।তবে এটা জানি নিয়তিকে একদিন আমার ভালবাসা আর বিশ্বাসের কাছে হারতে হবে। আমি জানি না তুমি আমার লিখাটা পড়বে কিনা।তবে এটা জানি একদিন তোমাকে আমি ফিরে পাব।ঠিক সেদিনের অপেক্ষায় আছি......'
.
চিঠিটা পড়ে আবির স্বস্থির নি:শ্বাস ফেলে।সে ঐ পৃষ্ঠায় অন্য একটা কাগজে করে একটা ঠিকানা লিখে দেয়।এরপর বইটা ঠিক একই জায়গায় রেখে চলে আসে।
.
পরের দিন সন্ধাবেলায় একগুচ্ছ গোলাপ হাতে আবির অত্রির অপেক্ষায় বসে আছে।আজকেই ওদের প্রথম দেখা হচ্ছে। কেউ কাউকে চিনেও না।
এদিক ওদিক তাকাতেই হঠাৎ আবিরের নজর আটকে গেল এক অপ্সরীর উপর।হালকা নীল শাড়ি পড়া একটা মেয়ে।খুবই সাধারন সাজগোজ।কিন্তু তারপরও তাকে দেখতে অসাধারন লাগছে।মুহূর্তেই যেন আবিরের পৃথিবী থমকে গেল।যেন মহাকালের সেই বিন্দুতে পৌছে গেল যেখানে স্থান, কাল কিংবা সময়ের কোন অস্তিত্ব ছিল না।মেয়েটার হাতের দিকে তাকিয়ে আবির আরো চমকে গেল।কারন তার হাতে ছিল 'দ্য ডে অব দ্য জ্যাকেল' নামের সেই বইটা।তারমানে এই অপ্সরীই তার অত্রি।
.
আবির অত্রিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তাকে নিয়ে চলে আসল এক নদীর ধারে।জ্যোৎস্না ভরা ওই মায়াবী চাঁদের কোমল আলোয় চিকচিক করছে নদীর পানি।নদীর সুক্ষ স্রোত উপচে পড়ছে কিনারায়।যেন বাধ ভেঙে ছুয়ে দিতে চাচ্ছে দুজনকে।অত্রির হাত ধরে তাকে নিয়ে আবির নদীর পানিকে আলতো করে ছুঁয়ে দেয়।নদীর কিনারায় পানিতে নেমে দাঁড়ায়।এরপর নীরবতা ভেঙে আবির বলতে শুরু করে
--মনে আছে, তুমি আমাকে একটা শাস্তি দিয়েছিলে?
--হুম।চাঁদটাকে আমার কাছে এনে দিতে বলেছিলাম।
--হুম।তাই আজ চাঁদটা আমি তোমার চরণে এনে দিলাম।(নিচে তাকিয়ে)।
অত্রি নিচে তাকিয়ে দেখে আকাশের ঐ চাঁদের স্পষ্ট প্রতিবিম্ব অত্রির সামনে পানিতে চিকচিক করছে।এটা দেখে অত্রি আর নিজেকে সামলে রাখতে পারে না।তার ভালবাসাগুলো অশ্রু হয়ে গাল বেয়ে নিচে গড়িয়ে পড়ে।তার এই ভালবাসার অশ্রুর প্রত্যেকটা অনু,পরমানু নদীর বুক গড়িয়ে সাগরে আছড়ে পড়ে।এভাবেই নদী, সাগর কিংবা এই সমগ্র প্রকৃতি তাদের এই পবিত্র ভালবাসার সাক্ষী হয়ে থাকবে চিরকাল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন