রবিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৬

সেই তুমি কেন এত অচেনা

আমি নিশো।ইন্টার পরীক্ষা দিচ্ছি।মাগার আমি আবার হু হা মার্কা স্টুডেন্ট।মানে সারা বছর বই আমারে খোজে না তাই আমিও আর বইকে খুজিনা।কিন্তু পরীক্ষার সময় আবার খুব সিরিয়াস।সারা রাত জেগে পরাশুনা করি।কাল পরীক্ষা শুরু তাই আজকে সারা রাত জেগে পড়েছি।ঘুমানোর সময় পাইনি।......
পরদিন পরীক্ষা ভালোই হলো।ফেরার সময় অটোতে করে আসতে আসতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি খেয়াল নেই।ঘুমের মধ্যে শুধু শুনলাম কে যেন বলল "এডমিট কার্ড পড়ে গেছে"।
এটুকু শুনেই আমার ঘুম উধাও হয়ে গেল।সত্যিই তো এডমিট কার্ড পড়ে গেছে।কিন্তু ততক্ষণে কাউকেই দেখতে পেলাম না।
-মামা আমাকে এডমিট কার্ড পড়ে গেছে এটা কে বলল?(আমি)
-একটা মেয়ে।সাদা কালারের ড্রেস পরে ছিল এটুকু দেখেছি।মেয়েটা ওই যে দূরের সাদা রং এর গাড়িটা দেখছো ওটার ভিতর আছে।
-জোরে চালান।এটাকে ধরতে হবে।
-সম্ভব না।অনেক দূরে চলে গেছে।
-ইশ হারায়া গেল।
-কি হারাল?
-মেয়েটা আর সাথে আমার মন টা।
কোন কিছুতেই মন বসাতে পারছি না।কানে শুধু একটা কথার প্রতিধ্বনি হচ্ছে "এডমিট কার্ড পড়ে গেছে"।অপরিচিতার এই কণ্ঠের মায়াজালে যে আমার আমিকে হারিয়ে ফেলেছি।এমন সময় রানার ফোন।
-কি রে মনু কতদূর পড়লি।(রানা)
-দোস্ত আমি শেষ। (আমি)
-তোর আবার কি হলো।
-শুধু এটুকু বলতে পারি আমার ভেতরে আমি আর নেই রে।
-মাম্মা মাইয়া টা ক্যাডা?
-তা জানিনা রে।শুধু তার কণ্ঠ শুনেছি।
-কস কি শামসু।ক্ণ্ঠ শুনেই প্রেমে পড়ে গেলি।পরে যদি দেখিস কানা বা বোবা বা ল্যাংড়া বা দুই বাচ্চার মা তখন কি করবি।
-তোর মত বন্ধু যেন কোন শত্রুর ও না হয়।কোথায় আমাকে ওকে খুজতে সাহায্য করবি।তা না উল্টে নিরাশ করছিস।
-যাই হোক কিন্তু পাবি কি করে ও কে?
-সাদা কালারের ড্রেস পরে ছিল আর ফিরছিল আমরা যখন ফিরছিলাম তখন।মানে আমাদের সাথেই পরীক্ষা দিচ্ছে।মানে আমাদের কলেজের কেউ।সো খুজে পাবোই।
-ওকে।দেখা যাবে।..........
পরদিন পরীক্ষা শেষে
-চল মেয়েটাকে খুজতে হবে।(আমি)
-কিন্তু কিভাবে।(রানা)
-মেয়েদের ওই পাশের গেটের সামনে দাড়াবো।কন্ঠ শুনলেই আমি চিনতে পারবো।
-বাব্বা কি প্রেম।
-তুই আর কি বুঝবি।ওর ক্ণ্ঠ শুনলে বুঝতি কেন আমি ওর প্রেমে পড়েছি।এখন ভাট বকা বন্ধ করে চল।
-ওকে চল........
-হাই হাই এত মেয়ের ভিতরে তুই ওর ক্ণ্ঠ শুনবি কিভাবে?
-থাম তুই আমাকে শুনতে দে মন দিয়ে।
-ওকে শোন।
এভাবে প্রতি পরীক্ষা শেষে গেটের সামনে অপেক্ষা করতাম। কিন্তু সেই অপরিচিতার কন্ঠ আর শুনতে পাইনি
.......
আর মাত্র একটা পরীক্ষা।আজকে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে। তাহলে কি আর আমি অপরিচিতার দেখা পাব না।মাথায় কিচ্ছু ডুকছে না। বাইরে আসলাম।ভিজতে ভিজতে রাস্তায় হাটতেছি।রাস্তা একেবারে ফাকাই বলা যাই।আনমনে পথ হাটছি।হটাত কেউ যেন বলে উঠল "এডমিট কার্ড ভিজে যাবে তো।"
-গেলে যাবে।(আমি)
অতটা খেয়াল করিনি।কিন্তু হটাত মনে হল আরে এটাই তো আমার অপরিচিতার কন্ঠ।ওই তো সাদা গাড়ি।ইশ একটুর জন্য মিস হয়ে গেল।
-ওই মোমিন্না তুই এভাবে পাগলা কুত্তার মত দৌড়াচ্ছিস কেন?
-দোস্ত অপরিচিতা।
-মানে?
-মানে যাকে খুজছি এতদিন।
-কিন্তু কোথাই।
-হটাত আসলো। একটা কথা বললো।তারপর আবার হারিয়ে গেল।
-কিসে করে আসছিল।
-গাড়িতে।
-তুই দেখেছিস ওকে।
-নারে পাইনি।
-তাহলে গাড়ির নাম্বার দেখেছিস?
-সব দেখতে পাইনি।ঢাকা জ ২৩ এটুকু দেখেছি।
-কি কালারের ছিল?
-সাদা।
বাদ দে দোস্ত মনে হয় আর পাবো না ও কে।
-আরে পাবো ক্লু তো পেয়ে গেছি।সো এবার আর মিস হবে না।
-কিন্তু কিভাবে?
-আমাদের কলেজে খুব বেশি স্টুডেন্ট গাড়ি নিয়ে আসে না।আর তার মধ্যে সাদা কালারের গাড়ি আরও কম।আর প্রথম দুই টা নাম্বার তো জানি।
-ওহ দোস্ত সত্যিই তুই জিনিয়াস।।...........
আজকে পরীক্ষা একটু তাড়াতাড়ি শেষ করে বের হলাম সাথে রানাও।
-চল তাড়াতাড়ি খুজতে হবে সময় কম (আমি)
-ওকে তুই ওই দিকটা দেখ আমি এই দিকটা।
-ওকে গো ফাস্ট।........
-ইয়াহু।।। পেয়ে গেছি দোস্ত।এই যে এটা।।।(আমি)
-অবশেষে পেলাম তাহলে।নাম্বার লেখ তাড়াতাড়ি।চল লুকিয়ে পড়ি।মেয়েটা কে আজ দেখতে হবে।
-ওকে।চল......
-ওইতো আসছে দেখ (রানা)
-কিন্তু হাই কপাল মুখ ঢাকা তো।।চিনবো কি করে।
-আরে চিন্তা করিস না।গাড়ির নাম্বার আছে তো সো খোজ নিয়ে নেব গাড়ির মালিক কে।তুই চিন্তা করিস না।চল বাসায় এখন।.........
রাতে শুয়ে আছি এমন সময় রানার ফোন।
-দোস্ত সুখবর আছে
-কি?
-তোর অপরিচিতার খোজ পেয়ে গেছি
-তাড়াতাড়ি বল।
-নাম রাফা।রোল ৩৪৫।আর বাসার ঠিকানা.......
-দোস্ত তোরে যে কি বলবো
-কিছু বলা লাগবে না।শুধু একটা পার্টি দিলেই চলবে।
-ওকে দিব।.........
ঠিকানা যখন আছে তখন কাল থেকেই ওর বাড়ির সামনে পাহারা দিতে হবে।যে করেই হোক খুজে বের করতে হবে....
আজ প্রায় দু মাস ধরে পাহারা দিচ্ছি কিন্তু বাড়ি থেকে ওর মত তেমন কাউকে বের হতে দেখি না।কি ঘরকুনো মেয়ে রে বাবা।আজ এক সপ্তাহ ধরে রাতে ও আসি নাহ আজও মনে হয় বের হবে না।কাল আবার আসতে হবে।রাত তো ভালোই হলো এখন বাসাই যাই।।
-এই যে শুনছেন
আপনাকে বলছি।
-আমাকে?
-হ্যা।আপনাকেই।এখানে আসুন।
-(এতো রাফার গলা।তাহলে এটাই রাফা।)
জ্বী বলুন
-আমি আজ দু মাস ধরে দেখছি আপনি আমাদের বাড়ির আশেপাশে ঘুরঘুর করছেন।কি মতলব আপনার।
-মতলব তো তুমি।
-মানে?
-মানে তোমার ওই কণ্ঠ শোনার পর থেকে আমি পাগল হয়ে গেছি।আমার সারা হৃদয় জুড়ে শুধু তোমার ওই দুটি কথা এখনও বাজে"এডমিট কার্ড পড়ে গেছে আর এডমিট কার্ড ভিজে যাবে তো"।তারপর প্রতি পরীক্ষা শেষে মেয়েদের গেটের সামনে দাড়িয়ে থাকতাম।কিন্তু তার পরও তোমাকে খুজে পাইনি।তারপর ওই বৃষ্টির দিনে তুমি যে গাড়িতে আসা যাওয়া করো তার প্রথম দুইটা নম্বার ভাগ্যক্রমে দেখতে।তারপর তোমাদের গাড়িটা খুজে বের করলাম।ওটার নাম্বারের সাহায্যে তোমার পরিচয় আর বাসার ঠিকানা বের করলাম।তারপর থেকে তোমাদের বাড়ির আশেপাশে ঘোরাঘুরি করি।কিন্তু তারপর ও তোমার দেখা পাইনি।তারপর আজ পেলাম।আর এতদিনে তোমার প্রতি আমার ভালবাসাটাও আরো বহুগুন বেড়ে গেছে।আমি তোমাকে ভালবাসি।
-না দেখে না জেনেই শুধুমাত্র কন্ঠ শুনেই ভালবেসে ফেললে।
-দেখে শুনে জেনে ভালবাসতে হবে এমন তো কোন কথা নেই।
-ওকে বুঝলাম।তুমি জানো আমি এক চোখে দেখতে পাইনা।আর এক চোখ দিয়ে খুব বেশিদিন দেখতে ও পাবো না।এক সময় অন্ধ হয় যাবো।
(কিছুক্ষণ নিরাবতা)
-আমি তো তোমার কন্ঠ শুনে তোমাকে ভালবেসেছি।তো সেখানে চোখ আসবে কেন।
-এতকিছু শোনার পরও ভালবাসবে আমায়?
-হ্যা ভালবাসি আর ভালবাসবো।
তো এখন আমার উত্তরটা?
-ভাবছি যে আমাকে একটা ভালবাসে তার ভালবাসা ফিরিয়ে দেওয়াটা কি ঠিক হবে? ।আর তার সাথে তুমি পরীক্ষায় ও সফল হয়েছো।
-কিসের পরীক্ষা।
-আমার চোখে কোন সমস্যা নেই।শুধু তোমাকে পরীক্ষা করার জন্য বলেছিলাম।
-তো এখন কি মুখ থেকে পর্দাটা সরাবে? অপরিচিতার মুখটা কি দেখার সোভাগ্য আমার হবে?
-ওকে। এই সরালাম।
-ওয়াও।।।বিউটিফুল।।।এ কি দেখছি আমি!!!!!
তুমি অনেক সুন্দর।না না তুমি ভয়ংকর সুন্দর।
না না তুমি অনেক বেশি সুন্দর।।।।
এই তুমি এত সুন্দর কেন?

মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৬

সত্যিকারের প্রেম

কামালের তার সাজান গোছান অফিস রুমে বসে আছে।রুমের এক সাইডে বিশাল একটা LED টিভি । আর রুমের মাজখানে বিশাল একটা টেবিল তার উপড়ে শোভা পাচ্ছে একটা ল্যাপটপ আর কিছু ফাইল এসি ও টিভি এর রিমোট।কেউ দেখা করতে আসলে বসার জন্য ৩টা চেয়ার আর রুমের এক সাইডে বাথরুমের দরজা।
.
কামালের অফিসটা একটা আবাসিক এলাকায় নিরিবিলি পরিবেশে।যার প্রতিটা রুমে সিসি ক্যামেরা ফিট করা আছে।কামাল চাইলেই তার রুম থেকে যে কোন রুমের অবস্থা দেখতে পারে সেই ব্যাবস্থা আছে।কিন্তু কামাল এই কাজটা সাধারণত করে না।
.
ঘড়িতে দুপুর ১২ টা ।। পিওন এসে খবর দিল একটা মেয়ে ও ছেলে তার সাথে দেখা করতে চায় ।। কামাল একটু অবাক হল সে সাধারণত কারও সাথে দেখা করে না বিশেষ কারণ ছাড়া যারাই দেখা করতে আসে তাদের কে তার পিএ সামলে নেয় একান্ত জরুরি না হলে তার কাছে খবর আসে না যে কেউ দেখা করতে চায়।
.
কামাল তার ল্যাপটপে ওয়েটিং রুমের ভিডিও ফুটেজ ফুটিয়ে তুলল বেশ অবাক হল যেই মেয়েটা বসে আছে সে আর কেউ না সেই মেয়েটা হল তার হবু বউ ।। এই মেয়েটার ফ্যামিলির সাথেই তার বিয়ের কথা চলছে ।। সব ঠিক থাকলে আগামী শুক্র বার বিয়ের তারিখ ফিক্সড হবে। মেয়েটা দেখতে বেশ সুন্দর ঢাকা ভার্সিটিতে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্রী, নাম মিনা , বোরখা না পড়লেও সব সময় ওড়না দিয়ে হিজাবের মত করে কি ভাবে যেন ওড়না পড়ে।
.
কামাল ইন্টারকমে তাদের কে তার রুমে পাঠিয়ে দিতে বলল।
.
--আসতে পারি ?
--হাঁ এসো না মানে আসেন।
--আপনি আমাকে তুমি করেই বলবেন ।
--আচ্ছা ঠিক আছে । বস।
--ধন্যবাদ ।। ( কিছুক্ষণ নিরবতা)
--হটাত এখানে আসার কারণ কি জানতে পারি ?
--(কিছুক্ষণ নিরবতা) আসলে আপনাকে কিছু কথা বলতে চাই জানি না কিভাবে নিবেন আমার কথা গুলো তার পর আপনাকে বলতেই হবে কথা গুলো।
--বল কোন সমস্যা নেই।
-- আসলে আমি ওর সাথে (পাশে বসা ছেলেটিকে দেখিয়ে) আমার ৩ বছরের রিলেশন চলছে। ও এখন অনার্স ফাইইনাল ইয়ারে আছে ঢাকা ভার্সিটিতে।
--তো আমি কি করতে পারি । মূলত তুমি কি চাও ?
--দেখেন আমি জানি আপনার যোগ্যতা ওর থেকে অনেক বেশি। কিন্তু তারপর আমার পক্ষে আপনাকে বিয়ে করা সম্ভব না ।
-- তা সেই কথা তুমি আমাকে বলছ কেন সেটা তুমি তোমার পরিবারকে বল যে হেতু আমাদের বিয়েটা পারিবারিক ভাবে হচ্ছে ।।
.
-- দেখেন সমস্যা এই জায়গায় না সমস্যা অন্য জায়গায় আমার পরিবার কিছুতেই ওকে মেনে নিবে না কারণ তারা কোন দিনই চাইবে না আমি একটা প্রতিষ্ঠিত ছেলেকে রেখে একটা অপ্রতিষ্ঠিত ছেলের জন্য ওয়েট করি।
.
--তাহেল কি আর করা প্রতিষ্ঠিত ছেলেকেই বিয়ে কর ।। আর বিয়ের আগে একটু দুয়েকটু রিলেশন থাকেই ।। ওইটা কোন ব্যাপার না বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে ।।
--না কিছুই ঠিক হবে না আমি জানি আপনাকে বিয়ে করলে টাকা পয়সা বাড়ি গাড়ি পাব কিন্তু মনে শান্তি পাব না মনে হবে কি জানি একটা নেই নেই।
--তো এখন আমাকে কি করতে হবে।
--আপনি এমন ভাবে বিয়েটা বাতিল করবেন যাতে আমার পরিবার মনে করে এতে আমার পরিবারের কোন দোষ নেই ।। আপনাদেরই মেয়ে বা অন্য কিছু পছন্দ হয়নি।। এতে করে আমার উপর পারিবারিক কোন চাপ পড়বে না।
-- তোমার কি কারণে মনে হল আমি এই কাজ করব ?
-- আমি জানি আপনি এই কাজটা করবেন কারণ প্রথম দিনেই আপনি যখন দেখতে আসেছিলেন আমাকে আমার দিকে একবার ভাল করে তাকান নাই । কোথায় যেন আপনার ভিতর একটা শূন্যতা শূন্যতা কাজ করছিল।
.
--শোন তোমাদের একটা কাহিনী বলি।এইযে মিস্টার আপনার নামটা কি এখন জানলাম না।
--স্যার আমার নাম আজাদ। আজাদ রহমান।
-- আমাকে স্যার বলার দরকার নেই । আপনি আমার আণ্ডারে কাজও করেন না আর আমি আপনাকে পড়াইও না ।।
--সরি স্যার । অহ ভাইয়া ।
.
-- শোন আজ থেকে চার বছর আগে আমিও ছাত্র ছিলাম ।। আমার কিছুই ছিল না । আমিও একটা মেয়েকে ৪ বছর ধরে ভালবাসতাম ।একদিন মেয়েটা আমাকে জানাল তার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব আসছে । ছেলে দেখতে ভাল সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ভাল বেতন পায় ।। তার বাবা মার ইচ্ছা সে ঐ ছেলেকে বিয়ে করে।আমি আমাদের সম্পর্কের কথা বললাম সে বলল তার কিছু করার নাই যেহেতু পরিবারের সবার এই ছেলে পছন্দ তাই সে এই বিয়ে ভাঙ্গতে পারবে না। আর আমি এখন ছাত্র তাই আমাকে বিয়ে করা সম্ভব না । আর তার একটা ছোট বোন আছে তাই আমার জন্য অপেক্ষা করাও সম্ভব না ।। পারলে তাকে যেন ভুলে যাই আবার নতুন করে জীবন শুরু করি।আমিও ওর কথা মত নতুন জীবন শুরু করি মাত্র চার বছরে আমি আজকে এই অবস্থায় আছি । আমার এখানে এখন ওর হাসবেন্ডের মত কত জন লোক কাজ করে সেই হিসেবও আমার কাছে নাই।কিন্তু তার পড়েও আমার মনে হয় কি যেন নেই কি যেন নেই।
.
সেই থেকেই আমার মনে হত মেয়েরা লোভী স্বার্থপর কিন্তু আজকে তোমাকে দেখে ধারণটা ভুল মনে হল হয়ত আসলে কিছু মেয়ে লোভী সবাই না।
.
আর এইযে মিস্টার আপনাকে দেখে আমার হিংসে হচ্ছে এই রকম করে যদি কোন মেয়ে আমাকে ভালবাসত তাহলে জীবনটা সার্থক হত।ভাল থাকবে তোমরা কোন চিন্তা করবে না আমি সব ব্যাবস্থা করে দিব আর কোন সমস্যা হলে আমি আছি।বিয়েতে দাওয়াত দিতে ভুলবে না কিন্তু ।। আর যাওয়ার আগে আমার পিএ এর সাথে দেখা করে যেও।
.
মিনা কামালের রুম থেকে বের হতে হতে আজাদ কে বলল
--এত সহজে উনি রাজি হয়ে যাবে আমি ভাবতেই পারি না।
--আসলেই উনি একজন অনেক বড় মনের মানুষ । তার থেকে আরও বড় মনের মানুষ হলে তুমি ।।
--মানে ??
--মানে হল তুমি এইরকম একজন লোক কে ছেরে আমার মত একজনের জন্য রাজি হয়েছ এতেই আমি ধন্য ।।
হ্যালো আচ্ছা আপনি কি মিস্টার
--কামাল সাহেবের পিএ ?
--হ্যাঁ ।
আপনার সাথে আমাদের দেখা করতে বলেছে তিনি ।
-- ও আচ্ছা আচ্ছা এইমাত্র স্যার বলেছে আপনাদের কথা।এই খামটা রাখুন এতে কিছু টাকা আছে আর নিচে স্যার এর গাড়িটা রাখা আছে। ড্রাইভার কে বলে দেওয়া হয়েছে আজকে সারাদিন আপনার যে খানে যেতে চান নিয়ে যাবে।
.
-- মানে কিছুই বুঝলাম না।
-- মানে স্যার বেলেছে আপাদের কে যেন কিছু টাকা আর তার গাড়িটা দেওয়া হয় আজকে দিনের জন্য যাতে আপনারা আজে ঘুরতে পারেন এর কিছু কিনতে পারেন । স্যার এর তরফ থেকে আপনাদের জন্য সামান্য সারপ্রাইজ।
.
অফিস থেকে বের হতে হতে মিনার চোখটা ভিজে উঠল আর মনে মনে বলল এত দুর্ভাগা মেয়েটা কে যে কামাল সাহেবের মত মানুষকে হারিয়েছি।

পুস্তকময় ভালবাসা

রাত ২ টা বাজে।হঠাৎ করে আসা ঝড়টা এখন কিছুটা শান্ত।ঝড়ের সাথে যুদ্ধ করতে করতে প্রকৃতিও অনেকটা ক্লান্ত।অনেকটা গুলিবিদ্ধ পরাজিত সৈনিকের মত।এই ক্লান্ত প্রকৃতি মোটেও আকৃষ্ট করছে না আবিরকে।তাই কফির কাপটা রেখে বারান্দা থেকে চলে আসে আবির।এখন ঘুমোতে হবে।বিছানায় শোয়ামাত্র মোবাইলটা বিরক্তিকরভাবে বেজে উঠে।রিসিভ করে কানে তুলে নিতেই ওপাশ থেকে তরাঙ্গারে ভেসে আছে এক সুললিল কন্ঠের বালিকার কন্ঠস্বর।তবে কন্ঠস্বরটা একটু কঠিনই মনে হল।
--হ্যালো(আবির)
--আবির বলছেন?(বালিকা)
--জ্বি বলছি।
--সমস্যা কি আপনার?
--আপাতত কোন সমস্যা নেই।বি.পি, সুগার সবই নরমাল।শুধু মাঝে মাঝে একটু মাইগ্রেনের ব্যাথা করে।
--মজা করছেন?
--একটু।
--আপনি এই কাজটা কেন করলেন?
--কি এমন করলাম?
--মনে করে দেখুন তো।
--একটু আগে মশারির ভিতর দুইটা মশা মারলাম।এর বেশি কিছু না। কিন্তু এর জন্য আমাকে জবাবদিহি করতে হবে সেটা ভাবি নি।
--আপনি মশা মারছেন না হাতি, সেটা আমার জানার বিষয় না।
--তো আপনি কি জানতে চাচ্ছেন সেটা একটু ক্লিয়ার করবেন প্লিজ?
--আমি আপনার নাম্বারটা " দ্য ডে অব দ্য জ্যাকেল" বই থেকে পেয়েছি।কি করেছেন এবার সেটা নিজেই ভেবে দেখুন।
আবির গম্ভীরভাবে ভাবতে চেষ্টা করে।কিন্তু ততক্ষনে বালিকা মোবাইলটা কেটে দেয়।
.
বালিকার এমন রাগের কারন এখন আবিরের কাছে পরিষ্কার।আবির মূলত বইয়ের পোকা।বই পড়তে প্রচন্ড ভালবাসে। কিছুদিন আগে সে পাবলিক লাইব্রেরী থেকে ফ্রেডরিখ ফরসাইথ এর " দ্য ডে অব দ্য জ্যাকেল" নামের বইটি নিয়ে আসে। এটি মূলত একটি থ্রিলার। ইন্টারন্যাশানাল বেষ্ট সেলিং থ্রিলার। ফ্রান্সের সিক্রেট সার্ভিস ও একজন কুখ্যাত খুনীর কাহিনী নিয়ে এই গল্পটা।এই গল্পের শেষের দিকে অর্থাৎ যেখান থেকে কাহিনীর ঝট খুলতে শুরু করেছে ঠিক সেখানে আবির একটা কাগজ রেখে দেয়।ঐ কাগজে গল্পের বাকি অংশের মূল সারাংশ লিখে দেয়া।আর নিচে ওর মোবাইল নাম্বার। এই কাজটা আবির মজা করেই করেছে।এত এক্সাইটমেন্ট নিয়ে পড়া একটা থ্রিলারের মূল টার্নিং পয়েন্ট টা যদি কেউ গল্পের মাঝখানেই বলে দেয় তাহলে মেজাজ গরম হওয়ারই কথা।তখন বইটা পুরো পড়ার আর কোন কোন মানেই থাকে না। কিন্তু বইটা যে এমন রাগী একজন মেয়ের হাতে যাবে সেটা মোটেও ভাবেনি আবির।আর সাত-পাঁচ না ভেবে সেদিনের মত ঘুমুতে চলে যায় ও।
.
ঘুম থেকে উঠেই মোবাইলটা চেক করে দেখে সেই নাম্বারটা থেকে একটা টেক্সট।সেখানে লিখা- 'কাজটা ঠিক করেন নি আপনি।এত এক্সাইটমেন্ট নিয়ে পড়ছিলাম আর আপনি সব নষ্ট করে দিলেন।আপনাকে আমার খুন করতে ইচ্ছে করছে এখন।'
সাথে সাথে কল ব্যাক করে আবির।
--হ্যালো (বালিকা)
--I'm sorry. (আবির)
--কিসের সরি?কোন সরি টরি কাজ হবে না।
--হবে না?
--না।আপনাকে শাস্তি পেতে হবে।
--শাস্তি? বলুন কি শাস্তি।
--যা বলব তা করবেন?
--চেষ্টা করব।
--আকাশের চাঁদ আমার খুব পছন্দ।ঐ চাঁদটা আমাকে এনে দিতে হবে।তাহলেই আপনাকে ক্ষমা করব।
--মানে কি?
--হুম।এটাই আপনার শাস্তি। তা না হলে ক্ষমা নেই।
--এটা বাড়াবাড়ি রকমের শাস্তি হয়ে যাচ্ছে না?
--আপনার কাজটাও বাড়াবাড়ি রকমের ছিল।
--ও।তো আপনার নামটা জানা যাবে?
--অত্রি।
আবিরকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোনটা রেখে দেয় বালিকা।
.
এভাবে চলতে থাকে কিছুদিন।নানা বাহানায় দুজন নিয়মিতই কথা বলতে থাকে মোবাইলে।একসময় তারা ভাল বন্ধুর মত হয়ে যায়।
তবে ওদের সম্পর্কটা ঠিক বন্ধুত্বের নয়।তার থেকে একটু বেশি।দুজন দুজনকেই পছন্দ করত। জানি না এই সম্পর্কের নাম কি।হয়ত ভালবাসা।কিন্তু অনিশ্চয়তার পিছুটানে কেউ কাউকে বলেনি কখনও।
.
আজ প্রায় সাত দিন অত্রির সাথে আবিরের যোগাযোগ নেই।কারন আবিরের মোবাইলটা চুরি হয়ে গেছে।অত্রির নাম্বারটাও মুখস্ত নেই।বাসার ঠিকানাটাও জানা নেই।আবির নিজেই জানতে চায় নি।বলেছিল যেদিন দেখা হবে সেদিন সবকিছু একসাথে জেনে নিবে।
ভালবাসার মানুষটার সাথে কথা বলতে না পেরে আবির পাগলপ্রায়।আর অন্যদিকে অত্রিও টেনশনে মরে যাচ্ছে।আবিরের সাথে কথা বলতে না পারায় স্থির হতে পারছে না কিছুতেই।রাত জেগে কান্না করতে করতে চোখের নিচের কষ্টের কালো দাগটাও স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।অত্রির কাছে আবিরের নাম্বার থাকলেও সেটা বন্ধ দেখাচ্ছে।কারন চুরি করা মোবাইলের সীম খোলা রাখার মত বোকামী সাধারনত চোরেরা করে না।
.
সন্ধাবেলায় ছাদের রেলিং ধরে দাড়িয়ে সিগেরেটের ধোয়ায় ভিতরের শূণ্যতাটুকু দূর করার চেষ্টা করছে।খুশখুশে কাশিটাই বলে দিচ্ছে সিগরেট খাওয়ায় মোটেও অভ্যস্ত নয় সে।কিন্তু মেয়েটাকে তার ভুলে থাকা দরকার।কারন তার সাথে যোগাযোগের কোন উপায়ই এখন আর নেই।আনমনে আকাশের দিকে তাকাতেই তার চোখ বেয়ে অশ্রুর ফোয়াড়া বইতে শুরু করে।কষ্টটা দ্বিগুন বেড়ে যায়। কারন আকাশে তাকাতেই তার চোখে পরে সপ্তর্ষীমন্ডল।আর সপ্তর্ষীমন্ডলের চতুর্থ তারাটারই নাম 'অত্রি'।
সে মেয়েটাকে ভুলতে চাইলেও এই প্রকৃতি তাকে ভুলতে দিচ্ছে না।এতটা নির্মম কেন প্রকৃতি??
.
জীবনটাকে জ্বালাতে জ্বালাতে সিগরেট টা ফিল্টারের গোড়ায় এসে থামল।উচ্ছিদ্যাংশ এ্যাশট্রে তে ফেলে মেঘে ঢাকা ওই ঘোলাটে চাঁদটার দিকে তাকাতেই সে একটু চমকে উঠল।এক মূহূর্তের জন্য মনে হল যেন প্রকৃতি তাকে সব সমস্যার সমাধান দিয়ে দিল।সে উঠে দৌড় দিল সেই পাবলিক লাইব্রেরীর দিকে।অত্রির সাথে যোগাযোগের তার একটা পথ এখনও খোলা আছে।সেটা সম্ভব 'দ্য ডে অব দ্য জ্যাকেল' বইয়ের মাধ্যমে।অত্রি নিশ্চয়ই সেই বইয়ের মাধ্যমে আবিরের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে।তাদের প্রথম পরিচয় তো ঐ বইয়ের মাধ্যমেই।
.
লাইব্রেরীতে গিয়ে আবির বইটা খুঁজে বের করে।বইটা সেখানেই ছিল যেখানে আবির শেষবার রেখে যায়। পাতা উল্টাতে উল্টাতে সেখানে এক টুকরো কাগজ দেখতে পায়।সে কাগজটা নিতে পড়তে শুরু করে।- " আমি জানি না তুমি কোথায় আছ, কেমন আছ।কিন্তু আমি এটা জানি তোমার একটা অস্তিত্ব আমার বুকের ভিতর আছে।খুব গভীরভাবেই আছে।জানি না তুমি আমার জীবনে এলে কেন আর হারিয়েই বা গেলে কেন।তবে এটা জানি অনেক অনেক ভালবাসি তোমাকে।আমি জানি না নিয়তি তোমাকে আর আমাকে নিয়ে কি লিখে রেখেছে।তবে এটা জানি নিয়তিকে একদিন আমার ভালবাসা আর বিশ্বাসের কাছে হারতে হবে। আমি জানি না তুমি আমার লিখাটা পড়বে কিনা।তবে এটা জানি একদিন তোমাকে আমি ফিরে পাব।ঠিক সেদিনের অপেক্ষায় আছি......'
.
চিঠিটা পড়ে আবির স্বস্থির নি:শ্বাস ফেলে।সে ঐ পৃষ্ঠায় অন্য একটা কাগজে করে একটা ঠিকানা লিখে দেয়।এরপর বইটা ঠিক একই জায়গায় রেখে চলে আসে।
.
পরের দিন সন্ধাবেলায় একগুচ্ছ গোলাপ হাতে আবির অত্রির অপেক্ষায় বসে আছে।আজকেই ওদের প্রথম দেখা হচ্ছে। কেউ কাউকে চিনেও না।
এদিক ওদিক তাকাতেই হঠাৎ আবিরের নজর আটকে গেল এক অপ্সরীর উপর।হালকা নীল শাড়ি পড়া একটা মেয়ে।খুবই সাধারন সাজগোজ।কিন্তু তারপরও তাকে দেখতে অসাধারন লাগছে।মুহূর্তেই যেন আবিরের পৃথিবী থমকে গেল।যেন মহাকালের সেই বিন্দুতে পৌছে গেল যেখানে স্থান, কাল কিংবা সময়ের কোন অস্তিত্ব ছিল না।মেয়েটার হাতের দিকে তাকিয়ে আবির আরো চমকে গেল।কারন তার হাতে ছিল 'দ্য ডে অব দ্য জ্যাকেল' নামের সেই বইটা।তারমানে এই অপ্সরীই তার অত্রি।
.
আবির অত্রিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তাকে নিয়ে চলে আসল এক নদীর ধারে।জ্যোৎস্না ভরা ওই মায়াবী চাঁদের কোমল আলোয় চিকচিক করছে নদীর পানি।নদীর সুক্ষ স্রোত উপচে পড়ছে কিনারায়।যেন বাধ ভেঙে ছুয়ে দিতে চাচ্ছে দুজনকে।অত্রির হাত ধরে তাকে নিয়ে আবির নদীর পানিকে আলতো করে ছুঁয়ে দেয়।নদীর কিনারায় পানিতে নেমে দাঁড়ায়।এরপর নীরবতা ভেঙে আবির বলতে শুরু করে
--মনে আছে, তুমি আমাকে একটা শাস্তি দিয়েছিলে?
--হুম।চাঁদটাকে আমার কাছে এনে দিতে বলেছিলাম।
--হুম।তাই আজ চাঁদটা আমি তোমার চরণে এনে দিলাম।(নিচে তাকিয়ে)।
অত্রি নিচে তাকিয়ে দেখে আকাশের ঐ চাঁদের স্পষ্ট প্রতিবিম্ব অত্রির সামনে পানিতে চিকচিক করছে।এটা দেখে অত্রি আর নিজেকে সামলে রাখতে পারে না।তার ভালবাসাগুলো অশ্রু হয়ে গাল বেয়ে নিচে গড়িয়ে পড়ে।তার এই ভালবাসার অশ্রুর প্রত্যেকটা অনু,পরমানু নদীর বুক গড়িয়ে সাগরে আছড়ে পড়ে।এভাবেই নদী, সাগর কিংবা এই সমগ্র প্রকৃতি তাদের এই পবিত্র ভালবাসার সাক্ষী হয়ে থাকবে চিরকাল।

শুক্রবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৬

এক ফোঁটা অশ্রু

আজকে সক্কাল সক্কাল বাসায় কুরুক্ষেত্র বাঁধিয়ে দিলাম আমি।।
কত দিন হয়ে গেল আব্বু তুমি তো আমায় এখনও ফোন কিনে দিলা না।।আমার ফোন চায়।।
-এই মাসে ফোন কিনে দিতে পারবো না বাড়ির কাজ শেষ হলে দেখা যাবে।।(আব্বু)
-প্রতি মাসে তো একই কথা বলো।।(আমি)
-টাকা না থাকলে আমি কি করবো টাকা হলে দেখবো।।
-আমি জানি এই টাকা তোমার কখনই হবে না।।
-জানিস তো চিল্লাচ্ছিস কেনো??সর এখান থেকে পড়াশোনা বাদ দিয়ে শুধু ফোন ফোন।।
এই কথা শোনার পর হুট করে বাসা থেকে বেরিয়ে আসলাম।।আসার পথে আম্মু পিছু ডেকে নাস্তা করার কথা বলেছিলো কিন্তু আমি রেগে থাকায় কর্ণপাত করি নাই।।এমন বাবা-মায়ের কথা শুনে কি হবে,যারা আমার কোন ইচ্ছা পুরন করে নাহ।।
মনে মনে কি যেন ভাবছিলাম আর রাস্তা দিয়ে হাটছিলাম।।হটাত দেখি একজন বৃদ্ধ রাস্তার এক কোনে দাঁড়িয়ে আছেন।।চোখে কালো ফ্রেমের মোটা চশমা,হাতে লাঠি,কাঁধে ব্যাগ নিয়ে শীতের কন কনে ঠান্ডায় কাপছে আর কাশির শব্দ শোনা যাচ্ছে।।মনে হয় অসুস্থ।।ভাবলাম এখানে হয়তো কারোর বাসায় বেরাতে এসে পথ ভুলে গেছে।।আমি তাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে গেলাম।।বললাম_
আমিঃদাদু এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো,কোথাও যাবেন নাকি??
দাদুঃএই বয়সে মগো ঠিকানা একটাই দাদু ভাই।।(কাপুনি কন্ঠে)
আমি-দাদুর উত্তরে একটু অবাক হয়ে বললাম-বুঝতে পারলাম না দাদু।।
দাদুঃমুই যেইহানে যামু ওইহানে মোর মত তোমার আরও মেলা দাদুরা থাহে।।
আমিঃদাদু আপনি কি বৃদ্ধাশ্রমের কথা বলছেন??
দাদুঃহিম্ম এইতো বুইঝা ফেলাইছো।।লইয়া যাবা মোরে??মুই তো নেয়া আইছি এই শহর চিনি না।।
আমিঃকিন্তু কেনো??আপনার বাড়ি নাই দাদু,চলেন বাড়ি নিয়ে যায় আপনাকে।।
দাদুঃবাড়ি তো ছিলো,কিন্তু কুড়েঘর ছাইড়া বড় ঘরে আইসা ভুল কইরা ফেলাইছি।।এখন মোর কিছুই নাই।।তাই বৃদ্ধাশ্রম ঈ মোর বাড়ি হইবে অহন।।
আমিঃকেন বৃদ্ধাশ্রমে যাবেন কেনো?এইখানে আপনার কেউ থাকে না দাদু?
দাদুঃসে মেলা কথা এহন কইতে পারুম না।।
আমিঃবলো না দাদু আমার গল্প শুনতে খুব ভালো লাগে ।।প্লিজ বলো না।।
আমার অনেক রিকুয়েস্ট এর পর দাদু রাজি হলো।।দুই জনেরই অনেক ক্ষুধা লেগেছিলো তাই পাশের একটা হটেলে খেতে বসলাম।।খেতে খেতে দাদু শুরু করলেন তার পিছনে ফিরে আসা অতীতের কাহিনী।।
মোরা ছোট্ট একটা গ্রামে থাকতাম।।লেহাপড়া শিহি নাই।। চাষা মানুষ।। আমার পোলা আবির গ্রামের ইস্কুলের সবচেয়ে ভালা ছাত্র ছিলো।।স্কুল থেইকা পাশ করার পড় ভালা কলেজে পড়ালেহা করার জন্য আবির বাইনা ধরলে মুই ওরে শহরে পাঠায়।।খরচা বাড়তে থাকে।।তারপর কলেজের পরিক্কার সময় টেহার লাইগা আবিরের মাইয়ের কথাই তার হাতের বালা দুইডা বেইচা পোলারে টেহা পাঠাইলাম।।সেই সময় আবিরের মা কইছিলো পোলা আমার বড় হইলে খাটি সোনা দিয়া দুইহান চকচকে বালা বানাইয়া নিমুনে।।এরপর কলেজ পাশ কইরা বেটা আমার গ্রামে চইলা আহে।।আইসা কই বাবা আমি আবারও গোল্ডেন এ+ পাইছি।।এই লও মিষ্টি।।সেদিন মোরা মেলা খুশি হইছিলাম।।তারপর সেই দিন রাইতের বেলা আবির আইসা কইলো_
আবিরঃআব্বাজান আমি ঢাকা যাইতে চাই।।ওখানে গিয়ে আমি ভারসিটিতে
পড়বো।।
আমিঃকিন্তু বাপজান এত মেলা টেহার বেপার কই পামু এত টেহা।।জমি জাইগা তো সব বন্ধক থুইয়া তরে এতদুর পড়ালাম, আর টেহা কই পামু!!
আবিরঃবাপজান এই বাড়ি ডা বন্ধক রাখো।।আমি বড় চাকরি পেলে তোমাগো ঢাকায় নিয়ে যাবো।।
এরপর আবিরের মার কথাই রাজি হইয়া শেষ সম্বল ভিটা বাড়িডারে বন্ধক থুইয়া পোলারে টেহা পাঠায়লাম।।ঈদে মুই ছেড়া পাঞ্জাবি পড়লেও পোলারে আমি নতুন লাল পাঞ্জাবি কেইনা দিছিলাম।।দুই তরকারি দিয়া মোরা কোনদিন ভাত খাই নাই।।মাঝে মাঝে কয়েক বেলা উপস থাকতেও হতো।।এরপর আস্তে আস্তে পোলার পড়ালিকা শেষ হয়।।বড় চাকরিও পাই।।এরপর হটাত কইরা আবিরের মার বড় অসুখ হয়।।পোলার কাছে টেহা চাইলে, হ্যা কই নতুন চাকরি, টাকা পামু কই।।কই দিন যাক আমি টেহা দিমুনে।।কিন্তু টেহা ছিলো না বলে বিনা চিকিৎসায় বউডা আমার মইরা গেলো।।পরে জানতে পারলুম ঐ টাকা দিয়া মোর বেটা নাকি বড় বাড়ি লইয়াছে থাহার জন্যি।।আবিরের মা মইরা যাওয়াই মুই গ্রামে একলা হইয়া যাওয়াতে পোলা মোরে তার নতুন বাড়িতে লইয়া আনে।।যায়ে দেখলুম পোলার ভালো বাড়ি,দামি একখান গাড়ি আছে।।আর যেইডা দেহে মোর চক্ষু দারা গেলো সিডা হলো পোলা দেহি বিয়াও কইরা ফেলছে, ছোট্ট দাদু ভাই ও আছে।।কিছু মনে করলুম না।।আজাকাল কার পোলাপান তো একাই বিয়া করে।।
আবির রে রাতে ঘরে ডাকলুম বাপজান তোর এত বাড়ি-গাড়ি তাইলে তোর মায়ের লাইগা টেহা পাঠাইছিলি না ক্যা?
আবির চুপ করে থেকে কইলো বাপজান তহন এইসব ছিলো না।।কিন্তু পরে জানতে পারলুম বউ মার জেদাজেদিতে ঐ টেহা দিয়া নাকি এই বাড়ি লইয়াছে।।মুই রাগ করলুম না, ভাবলুম পোলাপান তো ভুল করতেই পারে।।ওহন আর রাগ কইরা কি হবে।।
সবাই একলগে খাইলেও মোর খাওন ওরা আলাদা করে দিত।।
মুই একদিন কাজের পিচ্চি রে কইলাম।।
-মোর খাবার এইহানে লইয়াছো কেন?
পিচ্চিঃমেডামের বাবার বাড়ির মেহমান আইছে তো তাই মেডাম আপনারে এইখানে খাবার দিতে কইছে।।
মোর আর কিছু বুঝতে বাকি রইলো না।মুই অশিক্ষিত,ওদের মত ভালা কইরা কতা কইতে পারি না।। তাই মোর বেটার বউ তার শশুর বাড়ির লোকজনের সাথে মোর পরিচয় কইরা দিতে সরম পাই।।দাদু ভাইটা মোর কাছে আসতে চাইলে বউ মা লইয়া যাইতো।।তারপরও জুজু বুরির গল্প শুনতে সে বারবার আসতো।।
তারপর একদিন শুনতে পায় বউমা কেন যেন আবিরের সাথে ঝগড়া করছে।।আমি কান পেতে শুনলাম।।
বউ মা-তোমার বাবার খক খক কাশিতে আমার ঘুম আসে না।।মেহমানের সামনে তোমার মূর্খ বাবারে আমি আনতে পারি না।।তাছাড়া তোমার বাবার জন্য যে আলাদা ঘর লাগে তার জন্যও তো অনেক টাকা লাগছে।।এত খরচ করলে আমাদের ভবিষ্যতের কি হবে বলো।।
আবিরঃতাহলে কি করবো আমি!!বাবাকে তো আর আমি ফেলে দিতে পারি না।।একবার তোমার কথায় মায়ের জন্য আমি টাকা পাঠাতে পারি নাই।।
বউ মাঃআরে আমি কি তোমার বাবারে ফেলে দিতে বলছি।ঐ বুড়োটাকে রেখে লাভ কি শুধু খরচ।।বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দাও।।নইলে কিন্তু আমি বাবার বাসায় চলে যাবো।।
বউমার ওমন কতা শুনার পর মুই রুমে এসে কাপড় আর বাকি সবতা গুছিয়ে ব্যাগ ভরলুম।।ঐ সময় আবির আইসা কইলো_
-বাবা সব গুছিয়ে কোথাই যাচ্ছো??
আমিঃকোথাও না তর এই বড় বাড়িতে মোর ভালা লাগে নারে,পুকুর নাই,খোলা মাঠের বাতাস নাই,গল্প করার লাইগা কেউ আহে না,দামি খাবার এসব ভালা লাগে না রে বাপ।।
আবিরঃতাইলে তুমি কই যাবা এখন বাপজান??
আমিঃকোথাও না,এই শহরে নাকি এক জায়গা আছে।।অইহানে নাকি মেলা বুড়োরা থাহে।।মুই অইহানে যামু।।গপ্ল করার মত অনেকে আছে অইহানে।।মুই যাই, ভালো থাকিস।।মরে গেলে এক মুঠো মাটি দিতে আছিস বাপ।।আসার পথে পিছু ফিরে দেখি জামা ধইরা দাদু ভাই ডাকছে-
দাদু তুমি কোথাই যাচ্ছো,আমায় জুজু বুড়ির গল্প শোনাবে কে, প্লিজ দাদু যেও না।। এই বলে মোরে জরা ধরে কাঁদতে লাগলো।।আমি কিছু না বলে চলে আসলাম।।
গল্প শেষে আমি বললাম_ দাদু তুমি আল্লহর কাছে দোয়া কইরো যেন তোমার ছেলে আর বউমা যেন কখনই সুখি না হতে পারে।। দাদু বললো না দাদু ভাই ওরা তো ছোট ভুল করছে।।এইডা মোর কোপাল।।মুই ওদের কখনও অভিশাপ দিতে পারুম না।।বরং দোয়া করবো মোর মত আবিরের জায়গায়ও যেন এমন না হয়।।
দাদুর কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম।।চোখে পানি টলমল করতে লাগলো।।এমন সময় দাদু বললো_দাদু ভাই কখনও বাবা-মা কে কষ্ট দিয়ো না।।দাদুকে গাড়িতে তুলে ভাড়া দিয়ে দিলাম।।আসি ভালো থেকো।।এই বলে দাদু চলে গেলো।।
দাদুর পথ চেয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম।।সেলুট দাদু।।তুমি শ্রেষ্ঠ বাবা ।।তুমি সকল বাবাদের আদর্শ।।দোয়া করি আল্লাহ যেন তোমায় বেহেশত নসিব করে।।
তারপর ভাবলাম আমিও আবিরের মত হয়ে যাচ্ছি না তো।।আমি কাঁদতে কাঁদতে রাস্তার উপর হাটু গেরে বসে পরলাম।।এরপর এক ঝলক আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখ মুছে দিলাম দোড়।।দোড় দিয়ে বাসায় এসে আব্বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম।।ছড়ি আব্বু।।আমি আর কখনও তোমার সাথে উচ্চস্বরে কথা বলবো না।।আমার ফোন লাগবে না,তুমি থাকলেই হবে।।আম্মু আমাদের দেখে হেঁসে বললো পাগল ছেলে, খেতে আয় খাবার বেরেছি।।আব্বু আমার কপালে একটা উষ্ণ ছোয়া দিয়ে বললো আম্মু ডাকছে খেতে যা।।
কোন মায়ের সন্তান যেন আবিরের মত না হয়।।

হাঁদারামের ভালোবাসা

বন্ধুত্বের বন্ধন হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বন্ধন। আমরা সবাই বলি বন্ধুত্বের বন্ধন কখনো ছিঁড়ে যায়না যতই ঘটনা রটুক না কেনো। সব ভুল, আসলে আমরা ডুবে আছি আধুনিকতায়। আধুনিকতা নামক মোহ আমাদের এমনভাবে গ্রাস করে রেখেছে যার জন্যে যেকোনো বড় বন্ধন ছিন্নভিন্ন করে দিতেও দ্বিধাবোধ করিনা। রিয়েল লাভ নেই কিন্তু জান প্রাণ দিতেও প্রস্তুত মুখে মুখে। মেয়ে বা ছেলেদের ৪-৫ টা লাভার না হলে চলেইনা এই আধুনিকতা নামক মোহের মাঝে। এই ছেলেটার হাইট আরেকটু হলে বেটার হতো, চুলের স্টাইল অন্যভাবে হলে বেটার হতো। আর ছেলেদের কথা কি বলব! এই মেয়েটার ফিগার ঠিক নাই, আরেকটু ফর্সা হলে ভালো হতো এইসব করতে করতে কখনো একজনের মধ্যে আর থাকা হয়না। খুঁজাখুঁজি চলে আরেকজনকে। তার জন্যে রিলেশনের ১২ টা। আধুনিকতা রক্ষার্থে মেয়েরা যেই পোশাক পড়ে রাস্তায় বের হয় ওরা কি প্রতিটা মূহুর্তে ধর্ষিত হচ্ছেনা? রাস্তায় বা ঘরে থাকলে উরনা থাকে কই আর নিজে থাকে কই তার কোন ঠিক নাই। বাইরের কথা বাদ দিলাম, অন্তত ঘরের লোকের কথা ভাবুন। বাবা, ভাই, দাদু ও অন্যরা যে দেখছে এইসব, কে বলতে পারে কার মনে কি চলছে! শুধু শরীরের উপর আছড়ে পরে ধর্ষণ করাই ধর্ষণ নয়। আপনি ছোট কাপড় পড়ে থাকেন আর মনে মনে বলেন নিশ্চই আপনাকে সুন্দর দেখাচ্ছে। হ্যাঁ সুন্দর দেখায়, তাই তা দেখে কেউই ভালো নজরে তাকায় না। বৃদ্ধ মানুষ পর্যন্ত খারাপ নজর দেয় অথচ ওই বয়সি আপনার বাবা, দাদু আছেন। আরো অন্য কেউ না কেউতো বাজে নজরে তাকিয়ে আপনাকে নিয়ে অন্য কিছু ভাবতে পারে। তাইলে এটাও কি ধর্ষণ নয়? সব ছেলে আপনার অনুভূতি বুঝবেনা। এমনভাবে চলাফেরা করলে ছেলেরা দেহ ভোগ করতে ছলনার আশ্রয় নিবেই। আপনাদের জন্যে বন্ধুত্বেও ফাটল তৈরি হয়। বন্ধুত্বের বন্ধন ছিন্ন হবার জন্য মেয়েলী ব্যাপারটা খুব বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে এই বর্তমান যুগে। টাকা বা সম্পদের জন্যে নয় শুধু মেয়ের জন্য।
..
ওয়ালিউল আর রাব্বি দুই বন্ধু। একই কলেজে পড়াশুনা করে। ওয়ালিউল গরিব বাবার একমাত্র সন্তান, খুব মেধাবী ছাত্রও আর রাব্বি বড়লোক বাবার সন্তান। যা ইচ্ছে করে বেড়ায়। কিন্তু বন্ধুত্ব রক্ষার্থে দুজনে যেকোনো কিছু ত্যাগ করতে পারে। একজন আরেকজনের পাশে থাকে সব বিপদের মাঝে। একদিন কলেজে একটি মেয়ের সাথে পরিচয় হয় ওয়ালিউলের। মেয়েটির নাম শ্রাবণী। মেয়েটি অসম্ভব সুন্দরের অধিকারী। বড়লোক বাবার মেয়ে আর পোশাকের হাল দেখে ওয়ালিউল হাঁ করে তাকিয়ে ছিলো কিন্তু শ্রাবণী বলল ,,,
..
--- শ্রাবণীঃ এই যে মিঃ কি দেখছেন এভাবে?
--- ওয়ালিউলঃ না ইয়ে মানে কিছুনা।
--- শ্রাবণীঃ কিছুই যেনো না হয়। চোখ উপড়ে ফেলবো। মাইন্ড ইট...
--- ওয়ালিউলঃ জ্বী ম্যাডাম অবশ্যই অবশ্যই।
..
শ্রাবণী চলে গেলো খুব বকে দিয়ে ওয়ালিউলকে। ওয়ালিউল গ্রামের ছেলে তাই শহুরে মেয়ের খপ্পরে পড়তে চায়না। বাবার খুব স্বপ্ন ওয়ালিউল পড়াশুনা করে মস্ত বড় ডাক্তার হবে। খুব কষ্ট করে পড়াচ্ছেন ছেলেকে। তাই ওয়ালিউল বাবার কষ্টের কড়া মূল্য দিবে বলে কোন মেয়ের খপ্পরে জড়াতে চায়নি কখনো। কলেজের সেরা স্টুডেন্ট ছিলো এটা একদিন শ্রাবণী জানতে পারে আর ওয়ালিউলকে প্রপোজ করে। কিন্তু ওয়ালিউল তার ভালোবাসা এড়িয়ে গেছে। শ্রাবণী ভালোবেসেছিলো ও ফার্স্টবয় বলে কিন্তু ওয়ালিউল এড়িয়ে যাওয়াতে শ্রাবণী রেগে গেছে শিক্ষা দিবে বলে। এক পর্যায় শ্রাবণীর আকুতি দেখে ওয়ালিউল ভালোবাসতে বাধ্য হলো কিন্তু মন থেকে কতটা ভালোবাসতে পেরেছে জানেনা। রাব্বির সাথে ব্যাপারটা শেয়ার করলো ,,,
..
--- ওয়ালিউলঃ দোস্ত আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসিরে।
--- রাব্বিঃ কি বলিস মামা! তর গার্ল ফ্রেন্ড আছে?
--- ওয়ালিউলঃ হ্যাঁ দোস্ত। মেয়েটা দেখতে অপূর্ব।
--- রাব্বিঃ আমরা এতো মাঞ্জা দিয়াও মাইয়্যা পটাতে পারিনা আর তর প্রেমে মেয়ে!! বিশ্বাস করিনা মামা।
--- ওয়ালিউলঃ আচ্ছা কাল পরিচয় করিয়ে দেবো যা।
..
এই বলে ওয়ালিউল চলে আসলো আর শ্রাবণীকে বললো কাল একটা বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে তাই লেকসিটিতে আসতে। রাব্বির বাসার কাছেই। রাব্বি আর ওয়ালিউল উপস্থিত লেকসিটিতে ,,,
..
--- রাব্বিঃ কিরে মামা আর কতো দাঁড়িয়ে থাকবো।
--- ওয়ালিউলঃ অস্থির হচ্ছিস কেন। দেখলে ফিদা হয়ে যাবি। ওইতো চলে এসেছে।
--- রাব্বিঃ উফ মামা জোশ। কি ফিগার মামা!
--- ওয়ালিউলঃ চুপ থাক। শ্রাবণী ও আমার বন্ধু রাব্বি। আর রাব্বি এই আমার জিএফ।
--- শ্রাবণীঃ হ্যালো।
--- রাব্বিঃ হাই।
..
মনে মনে বিড়বিড় করে বললো রাব্বি, "এমন হাবা মার্কা ছেলের ঘারে এত্ত সুন্দর পরী। একে হাতিয়ে নিতে হবেই।"
..
--- রাব্বিঃ আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি, যদি আপনার আপত্তি না থাকে!!!
--- শ্রাবণীঃ অবশ্যই।
--- রাব্বিঃ ফোন নাম্বার প্লীজ...
--- শ্রাবণীঃ ০1৮5৬....1৬
--- রাব্বিঃ থ্যাংক ইউ।
..
যে যার মতো চলে আসলো। রাতে রাব্বি ফোন দিলো শ্রাবণীকে। অনেক কথা হলো তাদের মধ্যে। ওয়ালিউল কল দেয়ায় শ্রাবণী ইগনোর করছে। ওয়ালিউল জানতে চাওয়ায় ,,,
..
--- ওয়ালিউলঃ তোমার কি হইছে বলবা?
--- শ্রাবণীঃ আমার আবার কি হবে আজিব! জলজ্যান্ত মানুষ দাঁড়িয়ে আছে দেখতে পারছোনা?
--- ওয়ালিউলঃ এভাবে রেগে কথা বলছো কেন? তুমি কল দাওনা ভালো কথা কিন্তু আমি কল দিলে ওয়েটিংয়ে পাই কেন আর ফোন কেটে দাও কেন?
--- শ্রাবণীঃ ওহ আচ্ছা এই ব্যাপার? আসলে হয়েছে কি বাবু, আমার না পড়ার খুব চাপ। সামনে এক্সাম তাই। সবার সাথে যোগাযোগ রাখতে যেয়ে তোমাকে সময় দেয়া হয়না।
--- ওয়ালিউলঃ পরীক্ষা মানে! আমরাতো একই কলেজে পড়ি কই শুনলাম যে? কি লুকাচ্ছো তুমি?
--- শ্রাবণীঃ কত কথা বলেরে বাবা উফ ঘ্যানঘ্যান আর ভালো লাগেনা। এতো সন্দেহ হলে আর ফোন দিবানা।
--- ওয়ালিউলঃ বড়লোক বাবার মেয়ে তাইতো এমন করছো।
--- শ্রাবণীঃ ধ্যাত ভালো লাগেনা গাঁইয়া ভূত কথাকার। ডিস্টার্ব করবানা আর। করলে খবর আছে।
..
শ্রাবণী চলে আসার পর আর ফোন দেয়নি ওয়ালিউলকে। এদিকে প্রতিদিন দেখা, কথা হচ্ছে রাব্বির সাথে। রাব্বিও ওয়ালিউলের সাথে কোন যোগাযোগ করেনি আর কিন্তু অনেক ট্রাই করেছে ওয়ালিউল যোগাযোগ করার। রাব্বি দেখতে স্মার্ট আর বড়লোক বাবার ছেলে তাই ওয়ালিউলকে রেখে রাব্বিকে বেছে নিয়েছিলো। রাব্বি বিয়ের কথা বলাতে শ্রাবণী বলে দেখা করো আর ওয়ালিউলকেও দেখা করতে বললো নিজে কল করে। সবাই একসাথে জড়ো হলো ,,,
..
--- ওয়ালিউলঃ কিরে রাব্বি কই ছিলি এতোদিন? কত খুঁজেছি জানিস?
--- রাব্বিঃ তুই খুঁজলে আমার কিরে?
--- ওয়ালিউলঃ তুই না আমার বেস্ট ফ্রেন্ড!!!
--- শ্রাবণীঃ উফ ওয়ালিউল! সবসময় এতো ঘ্যানঘ্যান করো কেন? বাদ দাও এখন এইসব। এখন বল কে কি করতে পারবা আমার জন্যে?
--- ওয়ালিউলঃ আমি তোমার কোন চাহিদা পূরণ করতে পারবোনা কিন্তু তোমার জন্য মরতে পারবো।
--- শ্রাবণীঃ রাব্বি এবার তুমি বলো।
--- ওয়ালিউলঃ রাব্বি মানে? রাব্বি কেন বলবে? কি সম্পর্ক ওর সাথে তোমার?
--- শ্রাবণীঃ চু.... ওওওপ, একদম চুপ। কত ঘ্যানঘ্যান কররে বাবা তুমি!!! দেখতে থাকো।
--- রাব্বিঃ আমি তোমার সকল চাহিদা পূরণ করতে পারবো কিন্তু মরতে পারবোনা।
--- শ্রাবণীঃ কেন, কেন মরতে পারবানা?
--- রাব্বিঃ মরে গেলে তোমাকে ভালোবাসবে কে?
--- শ্রাবণীঃ সিনেমার হিরো হলা কবে? বাহ্ কি ডায়লগ!!! চুপ দুজনে। মন দিয়ে শুনো।
--- ওয়ালিউলঃ বলো...
--- রাব্বিঃ হুম বলো...
--- শ্রাবণীঃ ওয়ালিউল আমার জন্যে মরে যেতে চায় তাই সে আমাকে কখনো ভালোবাসেনি।
--- ওয়ালিউলঃ কি বলতাছো এসব!
--- শ্রাবণীঃ কথার মাঝখানে একদম কোন কথা নয়। রাব্বি হলো বেইমান বন্ধু। আমার রূপ দেখে প্রাণপ্রিয় বন্ধুর সাথে বেইমানি করতেও দ্বিধাবোধ করেনি। যখন আমাদের বিয়ে হবে তখন আমার এই রূপ থাকবেনা। রাব্বির টাকা অনেক তাই বাহিরে বের হলে আরো অনেক সুন্দরি মেয়ে দেখে আমায় অবহেলা করবে। তখন আমার ভালোবাসার কোন অস্তিত্ব থাকবেনা। তাই ডিসিশন নিয়েছি, আমি ওয়ালিউলকে বিয়ে করবো। ও হাবা তাই বলেছে মরে যেতে চায়। হ্যাঁ ঠিকিতো, ওকেতো কম কষ্ট দেইনি। আমার সাথেও এমন করলে আমি মরে যেতাম। ওয়ালিউল আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও প্লীজ।
--- রাব্বিঃ বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছেনা?
--- শ্রাবণীঃ চুপ লুচ্চা, বেয়াদব। এখন আসতে পারো।
..
ওয়ালিউল কাঁদছে আর রাব্বি রেগে চলে যাওয়ার সময় বললো ,,,
..
--- রাব্বিঃ তরে আমি দেইখালমু মামা। বেইমানি করলি।
--- শ্রাবণীঃ এই হাঁদারাম এদিকে আসো।
--- ওয়ালিউলঃ স্বপ্ন দেখছিনাতো?
..
শ্রাবণী তার নরম ঠোটের স্পর্শে ওয়ালিউলকে রাঙ্গিয়ে দিলো।
..
--- শ্রাবণীঃ না হাঁদা। এতো বোকা কেনো তুমি?
--- ওয়ালিউলঃ আমি এমনি। একটু জড়িয়ে ধরবা?
--- শ্রাবণীঃ জ্বী জনাব smile emoticon
..
সুখে থাকুক ওরা আর এমন সম্পর্কগুলা যেনো না ভাঙ্গে দোয়া করুন সবাই। আর বেইমান বন্ধু আর বাজে মেয়ের থেকে দূরে থাকুন।

মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৬

অধিকারের বিসর্জন

টক টক কড়া নাড়ার শব্দে হঠাৎ জেগে উঠে গনি মিয়া। ইদানীং এরকম হচ্ছে প্রায়ই। ঘড়ির কাটার ঠিক ৩.২৫ মিনিটে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। একেকদিন এক এক কারনে ঘুম ভাঙ্গে। আজ ভেঙ্গেছে কড়া নাড়ার শব্দে। কখনও কখনও ঘড়ির কাটার ঠিক ঠিক শব্দেও জেগে উঠেন। আবার কখনও কখনও পানি পড়ার শব্দে। বাথরুমে গিয়ে কল নেড়েছেড়ে দেখেন, এবং আবিষ্কার করেন কল ঠিকই আছে, কোন শব্দ হয়নি।
৫৬ বছর বয়সী গনি মিয়ার এক রুমের ভাড়া ঘরে কেউ থাকে না। স্ত্রী গত হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। ছুলে পুলেও হয়নি। হিসাবরক্ষকের কাজ করে তার পেটে ভাতে চলে যায়।
.
কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের পৃথিবী একদিকে আর ঘড়ির কাটা অন্যদিকে। নিজের স্ত্রী কিংবা ছেলে পুলে মারা গেলেও মানুষগুলো বলবে, "অফিসের টাইম শেষ করেই যাওয়া যাবে।"
মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর তাদেরই একজন। গোলগাল চেহেরা, সিথিকাটা চুল আর মোটা ফ্রেমের চশমা পরা। ভদ্র বলতে যা বোঝায় সবই তার আছে। বাবা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়। যুদ্ধের সময়ই তার জন্ম। বাবা হোসাইন শরীফ তখন মুক্তিবাহিনীতে প্রানপনে দেশের জন্য লড়ছিলেন। পত্রমারফত খবর পেয়ে লুকিয়ে দেখতে আসে, আর তখন তাদের সেক্টর কমান্ডারের নামে নাম রাখে মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর। কথাগুলো শুনেছিল জাহাঙ্গীরের কাছেই। গনি মিয়াকে সে খুব ভালবাসে। নিজের কাজের ফাঁকে গনি মিয়ার হিসেবেও সাহায্য করে। তার হিসেবের হাত পাকা, তবুও তাকে কেরানি হয়ে থাকতে হচ্ছে। তার বাবা নাকি মুক্তিযুদ্ধের সনদ সরকারপক্ষ বাতিল করে দিয়েছে। আহা! একটা মানুষ নিজের জীবনের সবটি ত্যাগ করে, এই সবুজ দেশটাকে রক্ষা করেছে, আর তার ফল তার রক্তমাংসে গড়া ছেলেটা ভোগও করতে পারছে না।
গনি মিয়ার ভাবনার ছেদ পড়ে জাহাঙ্গীরের ডাকে,
__কি ভাবেন চাচা?
__কিছু ভাবছি না। কেমন আছ তুমি?
__জ্বি চাচা ভাল। দুপুরের খাবার সময় হয়ে গেছে। আপনি খাবেন না?
__খাব একটু পর। তুমি খাবে না?
জিজ্ঞেস করেই গনি মিয়া হঠাৎ জাহাঙ্গীরের চেহারার দিকে তাকালেন। সেই সিথিকাটা চুল, গোলগাল চেহারার মাঝে যেন কিছু একটার শূন্যতা রয়েছে। তিনি ভাবনার অতল গহ্বরে সেই শূন্যতাটা খুঁজছেন। চোখ দুটো কেমন বসে গেছে। এই ছেলেকে ম্যানেজার চোরের দায়ে সেদিন প্রহার করেছিল। ছোটলোকের বাচ্ছা বলে গালি দিয়েছিল। আর ছেলেটা কাঁদতে বলছিল "স্যার আমি চুরি করিনি, স্যার আমি চুরি করিনি"।
ম্যানেজার তার হাতের পাঁচ আঙ্গুল দ্বিগুণ প্রসারিত করতে করতে বলছিল, তুই ছাড়া আর কে করবে? এখানে সবার রুমে তুই ডুকিস, ফাইল আনা নেয়া করিস। তুই চুরি করেছিস,আর বিলটাও তুই সরিয়েছিস, শালা ছোটলোকের বাচ্ছা।" তারপর তাকে আর চাকরিতে রাখা হবে না বলে দিয়েছে। আর মাত্র কটা দিন, কেউ জিজ্ঞেস করবে না "চাচা দুপুরের খাওয়া খেয়েছেন?"
.
গনি মিয়া বসা থেকে উঠে দাড়ালেন। আর ভাবতে লাগলেন সেদিন কার চেহারায় যেন অস্পষ্ট হাসি দেখেছিলেন। কে সে? হ্যা মনে পড়েছে। ওসমান সাহেব সেদিন.....
আর দেরি না করে গনি মিয়া ওসমান সাহেবের ডেক্সে চলে গেলেন। এখন রাত দশটা অফিসে কেউ নেই। গনি মিয়া কাজের অতিরিক্ত চাপ দেখিয়ে দেরী করেছিলেন।
কিছু ফাইল হাতড়ালেন, টেবিলের ড্রয়ার খুললেন। না কিছু নেই। এখন কি করবেন তিনি? কিভাবে প্রমান করবেন?
হঠাৎই তার চোখ গেল টেবিলের পাশে রাখা ময়লা ফেলার জারটাতে। কিছু ধুমড়ানো মুছড়ানো কাগজ, সিগারেটের শেষ অংশ, আর ম্যাচের কাটি। তার ভিতর আরও একটা ধুমড়ানো মুছড়ানো রঙ্গিন কাগজ। হ্যা এটাই সেই বিল, যে বিলের কারনে জাহাঙ্গীরের চোর বনতে হয়েছে। বিলটাতে ওসমান সাহেবের স্বাক্ষরের বিষাক্ত বর্ণগুলো জ্বলছে।
.....
পরের দিন
____
আজ গনি মিয়ার অন্যরকম একটা দিন। নিষ্পাপ ছেলেটার জন্য সে কিছু করতে পেরেছে। তাকে আর কেউ চাকরি থেকে বিদায় করতে পারবে না। একটু আগে ওসমান মিয়ার ডিসচার্জ লেটার দিয়া হয়েছিল। মানুষটা বের হতে হতে গনি মিয়াকে চোখ লাল লাল করে দেখছিল আর বলছিল "কাজটা ভাল করলেন না"।
গনি মিয়া একটা চিকন হাসি হেসে নিজের কাজে আবার মন দিলেন। কিন্তু মন বসছে না। যে ছেলেটা সকাল সকাল চলে আসে, সে দুপুর হয়ে গেল এল না কেন? আজ তো তার খুশির দিন। তাছাড়া তাকে প্রমোশন দেয়া হয়েছে। ওসমার মিয়ার চেয়ারটা এখন তার।
না, আর অপেক্ষা করা যাবে না। গনি মিয়া ছুটি নিয়ে নিলেন অফিস থেকে। রিক্সা নিয়ে চলে এলেন জাহাঙ্গীরের বাসার সামনে।
হ্যা, এটাইতো জাহাঙ্গীরের মেস। ভুল হওয়ার কোন উপক্রম নেই। বয়স হইত ভুল করে বেড়ে যাচ্ছে কিন্তু মন এখন পাকাপুক্ত আছে।
__এই যে ভাই শুনন
__জ্বি বলুন
__এখানে জাহাঙ্গীর থাকতো না?
__জ্বি, এইত এই জায়গায়, কিন্তু সে তো চলে গেছে আজ ভোরেই। বলছিল চাকরিতে নাকি বাদ দিয়ে দিয়েছে। তাই চলে যাচ্ছে। কোথায় যাবে বলে যাইনি।
গনি মিয়া সেই জরাজীর্ণ জায়গাটার দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। কিছু ভাঙ্গা আর টুকরো জিনিস, আর আষ্টেপৃষ্ঠে। কি আশ্চর্য জাহাঙ্গীরের রেখে যাওয়া ভাঙ্গা টুকরো জিনিস গুলোকে তিনি ছুঁয়ে যেন জাহাঙ্গীরের স্পর্শতা অনুভব করছেন। জিনিস গুলো বলছে, এই দেশ আমাদের নয়, এই দেশ তাদের যারা রক্ত না দিয়েও এইদেশ চুষে খাচ্ছে তাদের। তোমরা আমাদের রক্ত খেয়ে সুখে থাক।
অভিমানী মানুষগুলো দেশের জন্য এত কিছু করেও কিছু পায় না। দেশের প্রতি অভিমান তাদের, সবুজ দেশটার প্রতি আক্ষেপ। মানুষগুলো বহুরুপি হয়ে গোগ্রাসে গিলে খাচ্ছে অন্যের অধিকার। তবু সে মানুষগুলো অভিমান করেই থাকে। দূরে চলে যায়, আপন মনে দেশটাকে ভালবাসে।।