বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

``অপেক্ষার ধ্রুমজাল``

 ১.
খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে ছেলেটাকে মানায় খুব।ক্লাসের
কোনের টেবিলটাতে সব সময় বসে থাকে কেন ছেলেটা!
কারো সাথেই কথা বলতে চায় না।এমন কেন সে! মনকে
প্রশ্ন করে অর্পা।মন কোন উত্তর দেয় না।ছেলেটা প্রায়ই অর্পার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে থাকে।তবে কথা বলতে চায়না কেন সে! অর্পা তা ভেবে পায়না।প্রতিদিন
নিয়ম মাফিক করে ক্লাসের ফাকে ফাকে আড় চোখে
অর্পাও ছেলেটাকে দেখে আর বারবার মুগ্ধ হয়।বারবার
মুগ্ধ হতে অর্পার ভালোই লাগে। এই মুগ্ধতাই আস্তে
আস্তে ভালোবাসায় রূপান্তর হয়ে গেছে।মুখ ফুটে অর্পা
কিছু বলতে পারে না।বলবেই-বা কিভাবে! এখনো তো
ছেলেটার সাথে খুব একটা কথাই হয়নি।অর্পা অপেক্ষার ধ্রুমজাল বুনে।যেকোন একদিন কথা বলবেই।অর্পা অনেকবার
চেয়েছে কথা বলতে।কিন্তু ছেলেটা
প্রয়োজন ছাড়া যেন কথাই বলতে চায় না।এমন একটা
ছেলেকে অর্পা পছন্দ করেছে! অর্পার বান্ধবীরা এটা
নিয়ে অনেক ঠাট্টা করে।তবে সেদিকে অর্পার কোন
ভ্রুিক্ষুপ নেই।এমন একটা ছেলেকেই অর্পা তার জীবনে
চেয়েছিল।তার মত ছেলেরাই খুব গভীর আবেগ নিয়ে আপন করে
ভালোবাসতে যানে।আবেগ ছাড়া ভালোবাসা কল্পনার বাহিরে।
.
ছেলেটার নাম ইমরান।অর্পার সাথে একই ক্লাসে পড়ে।
ইমরানের সাথে অর্পার প্রথম দেখা হয় ছাদের কোনে।
পাশাপাশি বাসা দুজনের।দুই ছাদের নিচে দুজনের
আবাসস্থল।ভেজা চুলগুলো শুকানোর জন্য ছাদের উপর
উঠেছিল অর্পা।ছাদে উঠেই চোখ গেলো পাশের বাসার
ছাদের উপর।চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা পড়ে ছাদের
রেলিং ধরে অন্যমনস্ক হয়ে দাড়িয়ে ছিল ইমরান।গায়ে
ছিল ধূসর সাদা পাঞ্জাবি।
.
অর্পা দুষ্টুমি করে ইমরানকে ডেকে উঠল,
"এই যে?......."
কোন প্রতি উত্তর নেই ইমরানের কাছ থেকে।আবারো
অর্পা ডাকল,
"এই যে শুনছেন?...."
"এই,আপনি কি কানে শুনতে পান না নাকি?"
অন্যমনষ্কতা ভেদ করে শেষের বাক্যটা ইমরানের কান
অব্দি পৌঁছিয়েছে।ফিরে তাকালো ইমরান।অচেনা
একটি মেয়ে।ঠোঁটের বেলকুনিতে হাসি এঁকেছে।
মেয়েটি কি ইমরানকেই ডেকেছিল?!! নাহ অপরিচিত
মেয়ে কেন ইমরানকে ডাকবে! ভেবেই তাৎক্ষনিক
মাথাটা ঘুড়িয়ে নিল ইমরান।অর্পা ভিমচিৎ খেয়ে
গেলো।আবারো ডাকল,
"এই শুনছেন? ফিরে দাড়ালেন কেন? এদিকে ঘুড়োন।
আপনাকেই ডেকেছি"
চশমাটা ঠিক করতে করতে ঘুড়ে দাড়ালো ইমরান।থমকে
থমকে মুখগহব্বর থেকে চুপসানো ধ্বনি বের হল।অর্পা
শুনতে পায়নি অস্পষ্ট কথাটুকু।অর্পা বলল,
"কি বললেন শুনতে পাইনি"
"না মানে কি জন্য ডেকেছিলেন?"
"কেন! আপনাকে ডাকা কারো নিষেধ আছে নাকি!!"
"তেমন কিছু নয়।আমি তো আপনাকে চিনিনা"
"কিন্তু আমি আপনাকে চিনি।(একটু মজা করে মিথ্যা
বলল অর্পা)"
অর্পা ইমরানকে চিনে কথাটা শুনেও ইমরান একটুও
চমকালো না।ইমরানের কাছে পরিচিতির ব্যাপারটা
কমন মনে হয়।খানিকক্ষন চুপ থেকে ইমরান বলল,
"ভালো"
"ভালো মানে! আপনি আমাকে চিনেন না অথচ আমি
আপনাকে চিনি সেটা আপনার কাছে আশ্চর্য্যের মনে
হলো না!!"
"আশ্চর্য্যের কি আছে? আচ্ছা আমি যাই"
"আচ্ছা। ওহ আপনার নামটা কি?"
"ইমরান"
"আমি অর্পা"
ফিকে একটু হেসে সিঁড়ির দিকে ইমরান পা বাড়ালো।
ইমরানের চলে যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে অর্পা
তাকিয়ে রইল।মনে মনে ভাবছে ছেলেটা কতটা সরল
সোজা।তবে মোটা ফ্রেমের চশমায় ছেলেটাকে দারুন
মানায়।একফালি হেসে অর্পা তার নিজের রুমে চলে
গেলো।
.
(২)
ক্লাস শেষে বাড়িতে ফিরল অর্পা।অর্পা বরাবর প্রতিদিনের মতই অপেক্ষা করে কখন বিকেল হবে।বেশ কিছুদিন হলো ইমরান আর ছাদে আসে নি।তবে ক্লাসে যদিও প্রতি দিনই দুজনের দেখা হয় কিন্তু কথা হয়না বললেই চলে।অর্পা প্রতিনিয়ত ছাদে আসত।ছাদের কোনে একটি হুইল চেয়ার স্থাপন
করেছে সে।পরন্ত গৌধুলি বিকেলে ছাদের কোনে বসে
থাকে অর্পা।একদিন বিকেলে নীল আকাশের সাদা মেঘ
ধীরে ধীরে ঘন কালো হয়ে মেঘাচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে।তীব্র
বাতাসের সাথে দলা বেঁধে নিকশ কালো মেঘেরা
ছুটাছুটি করছে।এই বুঝি ধুপ করে ছাপিয়ে বৃষ্টি নামবে।
নিকশ কালো মেঘলা আকাশ ইমরানের খুব পছন্দের।
জানালার পর্দার ফাক দিয়ে দলা বাঁধানো মেঘের
ছুটাছুটি দেখে রুম থেকে বেড়িয়ে ছাদে এসেছে ইমরান।
.
ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে।বৃষ্টির একেকটি ফোটা একেক
জনের মনে একেক রকম ভালো লাগার জন্ম দিলেও
কারো কারো মনে এক অদ্ভূত ভালোলাগার অনুভূতির
জন্ম দেয়।তাদের মধ্যে ইমরান একজন।
ছাদে এসে ইমরান মুর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে।অর্পাও
বৃষ্টিতে ভিজে কাক ভেজা হয়ে গেছে।চুলগুলো লেপ্টে
আছে সারা মাথা জুড়ে।চুলের ঝরা বৃষ্টির জলগুলো গাল
দুটো বেয়ে থুতনি দিয়ে বুকের উপর ফোটায় ফোটায়
পড়ছে।
.
অপলক দৃষ্টিতে ইমরান তাকিয়ে রইল অর্পার দিকে।বৃষ্টি
ভেজা ললনাদের এতটা সুন্দর লাগে কাছ থেকে না
দেখলে সেটা বুঝার উপায় নেই।ইমরানের কাছে আজ
অর্পাকে মেঘকন্যা মনে হচ্ছে।ঠান্ডা হিমেল বাতাসে
শরীরে কাুপঁনি চলে এসেছে অর্পার।ছাদ থেকে নেমে
নিচে যাওয়ার ছলে ঘুরতেই দেখে ইমরানও ছাদের উপর
ভিজছে।চোখের দৃষ্টি রয়েছে অর্পার উপর।থমকে গেল
অর্পা।স্থির দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষন।প্রবল বেগে বৃষ্টির
বড় বড় ফোটা পরছে।টিপ টিপ পায়ে ইমরানের
কাছাকাছি যাচ্ছে অর্পা।ইমরানও ধীরে ধীরে অর্পার
দিকে ছাদের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত এগুচ্ছে।রেলিং এর
সাথে আচমকা ধাক্কা লেগে চোখের পলক পরল।এতক্ষন
কি তাহলে ইমরানের চোখের পলক পরেনি!! মনে পরছে
না ইমরানের।অর্পাকে যত দেখে ততই কেন ভালো
লাগছে ইমরানের!! ব্যাখ্যাটা ইমরানের জানা নেই।
ভাবনায় শুধুই অর্পা।
.
ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে দুজন।হঠাৎ করেই
ধমকা বাতাসে শরীরটা কাঁপুনি দিয়ে উঠল দুজনের।
ইমরান বলল,
"বৃষ্টিতে ভিজছেন যে জ্বর আসবে না?"
"আপনিও তো ভিজছেন! আপনারও তো জ্বর আসতে পারে!"
সাবলীল উত্তর অর্পার।মেয়েটা গুছানো কথা বলে,ভাবছে ইমরান।ফুরফুরে বাতাস যেন অর্পার ভেজা চুলগুলো নিয়ে শূন্যে খেলা করতে চাচ্ছে।শরীরের কাঁপুনিতে চিকন গোলাপি ঠোঁট জোড়াও কাঁপছে অর্পার।
"বৃষ্টিতে ভিজতে পছন্দ করেন?" প্রশ্ন ছুড়ল অর্পা।
"হুম,অনেক বেশি পছন্দ।তবে মেঘলা আকাশ তার চাইতেও আরো বেশি পছন্দের"
ফিকে একটু হেসে অর্পা ছোট্ট করে বলল,
"আমারো খুব পছন্দ বৃষ্টিতে ভিজতে"
অতঃপর ঝুম বৃষ্টির ছায়ার নিচে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে
দুজনের খানিকক্ষন কথোপকথন হল।সেই কথার সুত্র ধরেই কিছুদিনের মধ্যেই দুজনের বন্ধুত্বের সূচনা হয়।
.
(৩)
যে ছেলেটা ক্লাসে কারো সাথেই কথা বলতে চাইত না সেই ছেলেটাই আজ ক্লাস মাতিয়ে রাখে।ইমরানের এতটা পরিবর্তের একমাত্র কারন অর্পা।বন্ধুত্বের অটুট বন্ধনে বাঁধা দুজনে।
দুজনার মনের ছোট্ট কৌঁঠিরে ভালোবাসা নামক এক অদৃশ্য অনুভূতির জন্ম নিয়েছে।কিন্তু হারিয়ে ফেলার অজানা এক ভয়ের হাত না বলা কথাগুলোকে চেপে ধরে রাখে।
ইমরান অনেকবার ভাবে আজ বলেই দিবে অপ্রকাশিত ভালোবাসার কথা।কিন্তু আবার খটকা লাগে যদি হাতটা অর্পার হাতের মুঠোয় মুষ্টিবদ্ধ না হয়! যদি অর্পা মুখের উপর না করে দেয়! পরক্ষনে আবারও ইমরান ভাবে ৩বছরের বন্ধুত্বের মধ্যে এক চিমটি ভালোবাসা হলেও তো অর্পার মনের কোনে জন্মিয়েছে।
অর্পার মনের ভাবনা ও চিন্তাধারা ইমরানের মতই।অপ্রকাশিত ভালোবাসার অনুতপ্ততা মনের ভেতরের জায়গাটুকু জুড়িয়ে নিচ্ছে।
.
ছাদের উপর দাড়িয়ে রয়েছে ইমরান।অর্পাকে ফোন করে ছাদে আসতে বলেছে।অনেক্ষন হলো অপেক্ষা করছে,তবুও অর্পার ছায়াও দেখা যাচ্ছে না।আজ ভালোবাসার কথা বলবেই ইমরান।যা হবার হোক।মনের কোনে অপ্রকাশিত ভালোবাসার স্ফরতা আর বইতে পারবে না সে।ঝিঁ ঝিঁ পোকার গুঞ্জন শুনা যাচ্ছে চারদিকে।আকাশের চাঁদটা ঠোঁট বাকানো হাসিতে ঝুলে রয়েছে।
ইমরান আকাশের চাঁদটাকে কল্পনায় ঠোঁটের আকৃতিতে আঁকছে।মনে হচ্ছে সুদূর আকাশের তেপান্তর থেকে অর্পা হাসছে।হঠাৎ করেই নুপুরের ঝনঝন শব্দ এসে কানে মিছিল করছে।জ্যোৎস্নায় টুইটুম্বুর চারদিক।স্নিগ্ধ হাওয়ায় মাতাল করা এক গন্ধ ভেসে আসছে।বেলি ফুলের গন্ধ মনে হচ্ছে।কিন্তু আশেপাশে তো কোন বেলি ফুলের গাছ নেই! তাহলে কোথায় থেকে এই গন্ধ আসছে! বেশ খানিকক্ষন ভাবনার ঘোরের পর বেলি ফুলের গন্ধের অবসান ঘটল।জ্যোৎস্নাময়ী রাতে ধীরে ধীরে সামনের দিক থেকে অর্পা যেন জ্যোৎস্নার সাথে ভেসে আসছে।কড়া পারফিউম মেখেছে সে।তার উপস্থিতিতে বেলি ফুলের গন্ধে চারদিকটা মাতাল উন্মাদনাময় হয়ে উঠেছে।
.
(৪)
সামনা সামনি দাঁড়িয়ে দুজনে।মাত্র কয়েক কদমের ব্যবধান রয়েছে মাঝে।ব্যবধান বলতে দুই ছাদের উপর দুজন।মাঝে শুধু ছাদের শেষাংশের ফাঁকাটুকুই।রূপালি জ্যোৎস্নায় আজ অর্পাকে রূপালিকন্যা মনে হচ্ছে।একেক সময় অর্পাকে একেক রকম লাগে।অদ্ভূদ ধরনের সুন্দর লাগে তাকে।মেঘের জলে ভিজলে মনে হয় যেন মেঘকন্যা,রূপালি জ্যোৎস্না গায়ে মাখালে মনে হয় যেন রূপালিকন্যা।আর কিসে তাকে অন্য কোন রূপ এসে আকঁড়ে ধরে?!
"কি হয়েছে রে তোর! দিক ভুলা হয়ে তাকিয়ে আছিস কেন?"
ভাবনার ঘোর কাটল ইমরানের।এখন অপ্রকাশিত ভালোবাসার কথা বলতেই হবে।বুকের বাম পাশটা ধিকিধিকি স্বজোরে কাপঁছে।নিঃশ্বাসটা তাৎক্ষনিক ভারি হয়ে গেছে তার।খোলা আকাশের নিচে ছাদের উপর বাতাসের পথে দাঁড়িয়ে থেকেও ঘেমে যাচ্ছে ইমরান।অনুভূতিরা ঘিরে ধরেছে তাকে।ইমরান বুক ধুকধুকানি নিয়েই বলল
"তোকে একটা কথা বলার ছিল"
"বল"
"এমনি না।চোখ বন্ধ কর।চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলে তোকে বলতে পারব না"
"মেয়ে নাকি তুই যে, চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারবি না"
"বন্ধ কর না" কন্ঠে ভীষন আকুলতা।
"পারব না,চোখের দিকেই তাকিয়ে বল"
"আগে কথা দে,যেটাই বলি- না রাখতে পারলেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করবি না"
"আচ্ছা কথা দিলাম"
"উহু,এভাবে না।হাতটা এদিকে দে।"
"এত দূর থেকে ধরতে পারবি?"
"এদিকে হাতটা বাড়িয়ে দেখনা"
"এই নে,,,,,,,,,,,,,,,"
বলেই হাত দুটোই বাড়িয়ে দিল অর্পা।হাতের আঙ্গুলগুলো ধরে নিল ইমরান।মূহুর্তেই লজ্জায় মাথাটা নুইয়ে নিলো অর্পা।ইমরান বলল,
"এবার কথা দে।তবে হাত ছাড়বি না কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত"
"আচ্ছা ছাড়ব না।আর কথা দিলাম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করব না"
"নিচের দিকে তাকিয়ে আছিস কেন! তুই না বললি চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে! চোখের দিকে তাকা"
পাপড়ি দুটো সরু করে ইমরানের চোখের দিকে তাকাল অর্পা।ইমরান বলতে চাচ্ছে কিন্তু কোন কথা যেন বের হচ্ছে না।মনে হচ্ছে স্বজোড়ে বলছে ইমরান তবুও সে যেন শুনছে না।এমন লাগছে কেন ইমরানের ভেবে পায় না।অস্বস্তি লাগছে নাকি অনুভূতিরা এসে গ্রাস করল!গলাটা হালকা ভাবে ঝাঁকিয়ে ইমরান বলল,
"কিভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করতে হয় জানিনা।আমি কোন কবি নই যে কাব্যিক ভাষায় ভালোবাসার ব্যাখ্যা করব।কেন জানি তোর পাশে থাকলে নিজেকে হারিয়ে ফেলি তোর মাঝে।তোর আলিঙ্গনের সর্বস্র উঠোন জুড়ে আনমনে খোঁজে বেড়াই নিজেকে।কোথাও পাইনা এই আমাকে।কোনখানে নিয়ে রেখেছিস তুই তা জানিনা।তোর আলতো স্পর্শে শরীরটা তুমুলভাবে নেচে উঠে।তোর একটু অভিমানে পাপড়ি কেঁপে কেঁপে চোখের এক কোনা দিয়ে জল ঝরে।আচ্ছা এটাকে কি ভালোবাসা বলে? যদি তাই হয়,তবে তোকে আমি ভালোবাসি।অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি।তোর হাতের আঙ্গুলগুলো যেভাবে আমার হাতের মুঠোয় মুষ্টিবদ্ধ আছে সেভাবে সারাটা প্রনয় তোকে ধরে রাখতে চাই।তোর হাত ধরে রাখার অধিকারটুকু কি আমায় তুই দিবি? তুই থেকে তুমি করে বলতে চাই তোকে।"
.
কথা শেষ করতেই রূপালি জ্যোৎস্নায় ইমরান দেখল অর্পার চোখে জল ছলছল করছে।চোখের নোনা জল বাঁধ ভেঙ্গে বেড়িয়ে আসতে চাচ্ছে।আচমকা হু হু করে কেঁদেই দিল অর্পা।
"এই কথাটা বলতে এতদিন লাগল!! তুমি কি বুঝো না কতটা ভালোবাসি তোমাকে! চোখের দিকে তাকিয়েও কি বুঝতে পারো নি অজস্র ভালোবাসার অনুভূতির ভীড় সেখানে! খুব ভালোবাসি তোমায়"
কাঁদো কাঁদো ধরা কন্ঠে বলল অর্পা।
.
(৫)
ফ্লাইওভারের উপর নিয়ন বাতির লালচে আলোয় হাটছে ইমরান। বন্ধুত্বের পর ভালোবাসার সম্পর্কের ২বছর পেরিয়েছে।কখনো অর্পা তার সাথে এমন ব্যবহার করেনি।তবে আজ কেন এমনটা করল! অর্পার আব্বু দেশের বাহিরে থাকে।অর্পা আর তার আম্মু দেশে থাকত।আগামি মাসে দুজনেই তার আব্বুর কাছে যাবে বেড়াতে।প্রায় অনেকদিন ইমরানের সাথে দেখা হবে না এটা ভেবে রাগে হয়ত এমন ব্যবহার করেছিল।এটা ভেবে ইমরান সান্তনা দিল মনকে।
.
কিছুদিন ধরে অর্পা মাঝে মাঝে মাথা ঘুরে লুটিয়ে পরে যায়।এমনটা অর্পার আগে কখনো হত না।কি কারনে এমনটা হয় অর্পার আম্মু ভেবে পায় না।শহরের ভালো ডাক্তারের সাথে অর্পার আম্মু এটা নিয়ে কথা বলেছে।ডাক্তার বলেছে অর্পাকে নিয়ে যেতে কিছু চেকআপ করতে হবে।বিশেষ করে মাথাটা স্ক্যান করতে হবে।নির্দিষ্ট সময়ে চেকআপ শেষে রিপোর্টের দিন অর্পার আম্মুর মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পরল।মস্তিষ্কের ভেতরে টিউমার বেঁধেছে।অপারেশনের মাধ্যমেও সেটা বের করা সম্ভব নয়।খুব শীঘ্রই অর্পা পৃথিবী পারি দিতে পারে।ডাক্তারের কাছ থেকে কথাগুলো শুনে অর্পার আম্মুর কাছে তা স্বপ্ন মনে হচ্ছে।চিমটি দিলে হয়ত স্বপ্নটা ভেঙ্গে যাবে।নিজেই চিমটি কাটল।নাহ! কান ভুল শুনেনি।সবই সত্যি।হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল সে।কিভাবে তা সম্ভব! বাড়িতে ধুমকালো মুখ নিয়ে ফিরে দেখে অর্পা বাসায় নেই।অর্পার আব্বুকে সব জানালো।অর্পার আব্বু বলেছে বিদেশে নিয়ে যেতে।ঐখানে যেভাবেই হোক অপারেশনের ব্যবস্থা করবেই।কিন্তু অর্পাকে কোন ভাবে জানানো যাবে না।এসব কিছুই অর্পা জানেনা।ইমরান তো জানেই না।অর্পা যানে কিছু দিনের জন্য সে তার আম্মুর সাথে আব্বুর কাছে বেড়াতে যাবে।
.
সূর্যাস্তের বিকেলে পুকুরের পানিতে যেন স্বর্নদানা চিকচিক করছে।প্রতিটি ছোট ছোট ঢেউয়ের সাথে স্বর্নদানা উপচে পড়তে চাইছে।অর্পা আসবে বলে দেশের বাহিরে গিয়েছে আজ আট মাস পেরিয়ে নয় মাসের পদার্পন হলো।কিন্তু অর্পা বলেছিল তিন মাস পরই চলে আসবে।প্রথম দুইমাস ফোনে যোগাযোগ হত।কিন্তু শেষের ছয়মাস আর কোন প্রকার যোগাযোগ হয়নি অর্পার সাথে।অর্পার ফোনের লাইনটাও গত ছয়মাস ধরে অফ পাচ্ছে।কি হলো হঠাৎ অর্পার! একটা মানুষ কিছু দিনের ব্যবধানে কি এতটা পরিবর্তন হতে পারে! মানুষটি আসলে পরিবর্তন হয়নি।অপারেশনের সময় অর্পা পৃথিবী পারি দিয়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে।কিন্তু তা ইমরানের কল্পনার বাহিরে।ইমরান এসবের কিছুই যানে না।জানবেই বা কিভাবে! কারো সাথেই তো ইমরানের যোগাযোগ নেই।
ইমরান ভাবছে,অর্পা তো ইমরানকে ছেড়ে যেতে চায়নি।এক প্রকার জোর করেই অর্পাকে দেশের বাহিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।যাওয়ার আগের দিন ইমরানকে জড়িয়ে ধরে ঠুঁকরে ঠুঁকরে কেঁদেছিল অনেকক্ষন ধরে।তবে কেন এভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিল! কি কারনেই বা অর্পা আর ফিরল না।তবুও একরাশ কষ্টের কুন্ডুলি বুকে বেঁধে নির্বিক পথিকের মত অপেক্ষার ধ্রুমজাল বুনছে ইমরান।আশার অতীত অর্পা ফিরবেই।
`
`
`

বুধবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

"বসন্তে বাসন্তী, রাজকন্যাই রাজরানী"

-কিরে তুই কলেজে যাবিনা??
--নারে. আমারা ভাল লাগছেনা। তুই যা...
--মানে? তুই আমাকে রেডি হয়ে আসতে বললি, আর এখন বলিছিস যাবিনা, তাহলে আমাকে আসতে বললি ক্যান?
--এসেছিস তুই যা, আমার ভাল লাগছেনা তাই যাবো না।
.
খাতাটা পাশে নামিয়েই নওশিনের পাশে স্নিগ্ধা বসে পরলো। স্নিগ্ধা জিজ্ঞাস করলো---
--কি হয়েছে তোর? মুখটা শুকনো লাগছে কেন? ইমুর সাথে নিশ্চয় আবার ঝগড়া হয়েছে?
--নারে.. ঠিক তা না!
--তাহলে?
--ওর কথা খুব মনে পরছে,
--বুঝলাম, তা হঠাৎ করে এতোটা মনে পরার কারন কি শুনি?
.
নওশিন একটু চরা গলায় বলে উঠলো---
--হঠাৎ করে মানে!! ওর কথাতো আমার সব সময়ই মনে পরে। তুই হঠাৎ করে বললি ক্যান?
--ওহ্! তাইতো তাইতো, ভুল হয়ে গেছে রে..... ও তো তোর স্বপ্নচারী, কল্পনাচারী,ভাবিনু। আমাদের কথা না হয় হঠাৎ হঠাৎ ভাবিস, ওকে তো তোর সব ভাবনার মাঝেই রাখিস।
--আবারও ওকে নিয়ে পরলি????
--না, চল কলেজে যাবি।
--ধূর, আমার ভাল লাগছেনা তুই যা.....
--না তোকে যেতেই হবে, আমি সাগর-কে আসতে বলেছি। ও এসে হয়তো এতোক্ষন অপেক্ষা করছে।
--ওওওও, সেইটা বল! আজ কেন এতো তাড়া, তা তুই কলেজের নামে পার্কে গিয়ে আড্ডা মারবি। আর আমি তোদের দু'জনকে বসে বসে পাহারা দেবো, তাইনা?
--চলনা একটু, তোর জন্যেও একটা কিছু আছে।
--কি?
--সেটা না গেলে দেখতে পারবিনা, চল........
.
স্নিগ্ধা, নওশিনের বান্ধবি। সেই ছোট থেকে একইসাথে বেড়ে উঠেছে দু'জনে। রাতে ঘুমানোর সময় টুকু বাদে সারাবেলাই হাতে হাত রেখে তাদের ছুটে চলা। দুজনেই এখন কলেজে পড়ে। সময়টা বুঝি দুজনের মাঝে একসময় ঠিকি দূরত্ব এনে দিবে। মেয়েদের জীবনটা খেয়াল করলে দেখা যায় ছেলেদের চাইতে একটু বেশিই কঠিন হয়।
.
মেয়েটির বয়স যখনঃ পাঁচ (০৫)
.
মায়ের হাত ধরে হাটা শিখেছে।
বাবার কাধে চড়ে সারা মহল্লা ঘুরিয়ে বেড়িয়েছে।
বড় ভাইয়া টি চকলেট এনেছে ভেবে দৌড়ে গিয়ে কলে উঠেছে।
ভুল করে কোনদিন চকলেট নিয়ে না ফিরলে।
মায়ের কোলে গিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করেছে।
মা ভাত মাখিয়ে মুখে তুলে খায়িয়েছে।
আরও কত কি......
.
মেয়েটির বয়স যখনঃ দশ (১০)
.
মা সারাদিন বকার উপরে রেখেছে_______
--কিসের এতো খেলা? সারাদিন খাওয়া নেই, নাওয়া নেই, শুধু পুতুল আর পুতুল, সব পুতুল চুলায় দিবো কিন্তু.....
.
ভাইয়া_______
--কি রে.... তোর স্কুলের স্যাররা কি সারাদিন ঘুমায় নাকি? একই পড়া প্রতিদিন পড়তে দেখি,পড়া কি নেয় না?
.
বাবা মায়ের সাথে চেঁচিয়ে বলবে________
আমার মেয়েটা কোথায়? সারাদিন কি করে, কোথায় যায়? খেলো কি খেলো না, কারো কোন খেয়াল নেই। সবার মাথার উপরে কি বোঝা দিয়ে রাখা হয় নাকি?
.
বড় আপি_______
এই তোকে না বলছি, তুই আমার কানের দুল ধরবিনা। নিয়েছিস কেন? খুল, খুল বলছি! নিজেরটা হারিয়ে, এখন আবার আমারটা হারাতে বসেছে। আর কিন্তু এই দুল ধরবিনা।
.
মেয়েটির বয়স যখনঃ পনেরো (১৫)
.
বাবা প্রত্যেকদিন স্কুলে রিকশা/বাইকে করে অফিসে ফেরার পথে পৌছে দিয়ে যাবে। আর যখন মেয়েটি স্কুলের গেইটের সামনে নেমে হাটতে শুরু করবে, তখনই বাবা ডেকে বলবে---
--মামণি, এই নাও টাকা, টিফিনের সময় কিছু খেতে মন চাইলে খেয়ে নিও।
(সাথে টিফিন থাকা সত্ত্বেও)
.
ভাইয়া_______
আড্ডায় থেকেও বার বার ঘড়ির দিকে তাকাবে। কখন বোন'টাকে স্কুল থেকে নিয়ে আসতে হবে এইভাবে।
.
মা_______
সারাদিন মনে মনে ভাববে। পাগলীটি না থাকলে বাড়িটা একদম ফাকা ফাকা লাগে।
.
আপিটা_______
ঝগড়াটা না করতে পেরে। বিষন্নতায় ভুগবে। আসার সাথে সাথে বলবে। সারাদিন স্কুলে কি করিস? চেহারা এভাবে মলিন করে নিয়ে ফিরিস, কিভাবে?
.
মেয়েটির বয়স যখনঃ বিশ (২০)
.
খুব ভোরেই উঠে নামাজ পড়ে, মাকে কাজের জন্য সাহায্য করতে যাবে।
(কিছু না বলা সত্ত্বেও)
আবার কখনো শত বলিয়েও কোন একটা কাজ না করাতে পেরে মা বলবে---
--বাবার বাড়িতে আয়েস করাই যায়, শ্বশুর বাড়ি গিয়ে বুঝিস কেমন মজা!!!
.
বড় আপিটার যেদিন থেকে বিয়ে ঠিক হবে। সেদিন থেকেই ভেতরে শূন্যতা কাজ করবে। ক্ষনে ক্ষনে মনে হবে। "আপি না থাকলে কার সাথে মজা করবো? কার সাথে ঝগড়া করবো" বার বার বলতে মন চাইবে, 'তুই আমায় ছেড়ে যাস না রে.. আপি। আমি ভিষন একা হয়ে যাবো। আপিও হয়তো জড়িয়ে ধরে দু'নয়ন ভাসিয়ে ফেলবে। আর বলবে 'তোকে ছেড়ে আমি কোথাও যাবোনা, পাগলী বোন আমার' বলতে বলতেই চোখের মাঝে থেকে জল মুছে দিতে থাকবে।
.
ভাইয়াটা_______
খুবই খেয়াল রাখবে রাস্তাঘাটে কোন ছেলে বিরক্ত করে কিনা! একটু এদিক সেদিক দেখলেই হাতে হকিস্টিক ধরতে একটু দ্বিধাবোধ করবেনা। মাঝে মাঝে এসে সরাসরি বলবে---
--রাস্তাঘাটে কোন ছেলে বিরক্ত করলে বলবি। আর প্রয়োজন ছাড়া কখনো কলেজের বাইরে বের হবিনা।
.
বাবা এখন_______
মেয়েটাকে তো হাত করেই নিয়েছে। এখন আর তাকে কিছু বলতে হয়না। উল্টো মেয়েটায় বাবার খাওয়া-দাওয়া, যত্নের দিকে খেয়াল রাখে।
.
ছোট মামাটা/চাচুটা এসে বলে_______
--মেয়েতো আমার ছোটটাই বিয়ে তো মনে হচ্ছে একসাথেই নিতে হয়।
বলেই একটু তাকিয়ে মুচকি হাঁসি হাঁসবে।
.
এইসব ভালবাসার মানুষ গুলোর সাথে পৃথিবীর আর কারো ভালবাসাই তুলনা করা যায় না। প্রতিটি পরিবারের প্রতিটি মেয়েই রাজকন্যার মতো থাকে। আর ছোট মেয়ে হলেতো কোন কথাই নেই। এইসব শত আদরের রাজকন্যার ভার এক সময় আমার আপনার মতো ইমুর উপরেই পরে। মা-বাবা, ভাইয়া-ভাবি, আপি, ছোট চাচুর সমস্ত ভালবাসা ছেড়ে কোন এক নতুন পরিবেশে গিয়ে তাকে বাঁচতে শিখতে হয়। মেনে নিতে হয় পরিবেশের নিয়ম। বিবাহ বন্ধনটা তাদের আলাদা করে দেয়। কিন্তু কি আর করার, হাজার হলেও মেয়ে বলে কথা,স্বামীর বাড়িতে তো একদিন ঠিকি যেতেই হবে। যেই মেয়েটি ফেলে আসা ২০ টি বছর যে ধূলিকণার সাথে মিশে বড় হয়েছে। তাকে আজ এসবই বিষর্জন দিতে হচ্ছে। এ বিষর্জন সিতা বিষর্জনের চাইতে অনেক বড়। নিজের কাছের মানুষ গুলো ছেড়ে যে মেয়েটি আপনার সাথে সংসার যাত্রায় জাল বুনতে শুরু করেছে। তাকে যদি কোন ভাবে কষ্ট দেন খোদাও হইতো নারাজ হয়ে যাবে আপনার উপর।
.
নওশিন আজ সত্যিই রাজকন্যা। তবে ইমু নওশিন-কে তার রাজ্যের মধ্যে এনে পদ মর্যাদা রাজকন্যা থেকে রাজরানী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আপন জনদের চাওয়া কে না পূরণ করতে চায়। হয়তো সব চাওয়াই পূরণ হয়না। তবে ভালবাসার মানুষটির চাওয়া পূরণ করার জন্য চেষ্টার ত্রুটি কোন ব্যক্তিই করেনা। এসব কথা লিখতে থাকলে হয়তো ছোট কোন উপন্যাস রচিত হয়ে যাবে। এক উপন্যাস আজ দুই বছর ধরে লিখছি সেটাই শেষ করতে পারলাম না। তাই আর নতুন কোন লিখায় হাত দিতে চাইনা।
ফিরে যাচ্ছি সেই রাজকন্যার গল্পে।

নওশিন রেডি হয়ে স্নিগ্ধার সাথে বের হলো। কলেজে একটা ক্লাস করেই সাগর-স্নিগ্ধা, নওশিন বেরিয়ে পরলো। কোন এক পার্কে তিনজন মিলে আইসক্রিম খেতে খেতে খুব আনন্দ করছে। কিন্তু নওশিনের আনন্দটা থমকে থমকে ইমুর কথা ভেবে স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে। মনে মনে ভাবাছে, 'ইমু এখানে থাকলে কতই না মজা হতো' ইমু বেশ কয়েক দিন যাবৎ তার ফুপির বাসায় বেড়াতে গেছে। আজ প্রায় ০৮ দিন হবে। নওশিন এর মাঝে তাকে একটি বারও দেখতে পায়নি। ফোনেও খুব কম কথা বলা হয়েছে। আসলে ইমু স্নিগ্ধা-কে ফোন করে আজ ঠিক এখানেই নওশিন-কে নিয়ে আসতে বলেছে। কারণ আজ ইমু ফুপির বাসায় থেকে এসে সরাসরি নওশিনের সাথে দেখা করবে। কিন্তু সেটা নওশিন-কে একদম জানানো হয়নি। সাগর-স্নিগ্ধা, নওশিন যখন গল্প জুরে বসেছিলো তখনই ইমুর ফোন---
--হ্যাললললো,
নওশিন রেগে বলল---
--গুষ্টি কিলাই তোর হ্যাললললোর, ফুপাতো বোন নিয়ে তো ভালই দিন কাটাচ্ছিস। সারা দিন বাদে বিকেল ৩ টায় তোর ফোন দিবার সময় হলো, তাইনা? তুই আর আমার সাথে কোন যোগাযোগ করবিনা বলে দিলাম।
.
রাগের পরিমানটা কিছুটা আন্দাজ করা যাচ্ছে। ইমু বলল---
--কোথায় তুমি?
--আমি জমের বাড়ি আছি, আমি কোথায় থাকি, না থাকি, সেটা তোর না শুনলেও চলবে।
--বলনা?
--বললাম, জমের বাড়ি আছি।
--আচ্ছা জমের বাড়ির ঠিকানা দাও, আমিও আসছি।
--কোথাও আসতে হবেনা তোকে, তুই তোর ফুপির কোলে গিয়ে আরো কিছুদিন ঘুম পেয়ে আয়, যা......
.
স্নিগ্ধা নওশিনের কথা শুনে সব বুঝতে পারছে। ইমু দূরত্ব এখন নওশিনের চাইতে সর্বচ্চ ১০০ গজ দূরে হবে। পাশেই এক গাছের আড়ালে দাড়িয়ে কথা বলছে ইমু। নওশিন, সাগর-স্নিগ্ধা- কে বাসায় যাওয়ার জন্য তাড়া দিতে লাগলো। ইমু আস্তে করে পিছন দিক থেকে এসে দু'হাত দিয়ে নওশিনের চোখ ধরলো। শরীরের স্মেইল'টা খুব পরিচিত। স্পর্শ করাতেই চোখ থেকে ইমুর হাত সরিয়ে নিয়ে নওশিন ইমুর হাত ধরে উঠে দাঁড়ালো। কোন কথা না বলেই সাগর-স্নিগ্ধা-কে রেখে ইমুর হাত ধরে দূরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে নওশিন। ইমু বলছে---
--কি ব্যাপার? এভাবে টেনে কোথায় নিয়ে যাচ্চ?
--কোন কথা বলবিনা! চুপ!
.
ইমুর হাত ধরে নওশিন টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আর ইমু ব্যাগ কাধে নিয়ে নওশিনের পিছ পিছ হেটে যাচ্ছে। স্নিগ্ধা-সাগর দুজনেই দেখে খুব হাঁসছে। নওশিন ইমুকে নিয়ে দূরের একটা বেঞ্চে গিয়ে বসলো। বসেই নওশিন ইমুর কলার চেপে ধরলো। নওশিন---
--তুই এখানে এসেছিস কেন, বল?
--কলারটা ছাড়ো, আশে পাশের মানুষ তাকিয়ে আছে তারা কি ভাববে!!
.
কলার ঝাকাতে ঝাকাতে নওশিন বলল---
--তাদের যা মন চায় তাই ভাবুক, তোকে কি আমার কাছে আসতে বলেছি? তুই এসেছিস ক্যান? এসেছিস ক্যান?
--পাখি শোন, শোন পাখি......
--তোর কোন কথাই শুনবো না আমি!!
.
ইমু এরমধ্যেই ব্যাগটার চেইন খুলে, লাল কৃষ্ণচুড়া ফুল গুলো নওশিনের চুলে পরিয়ে দিলো। নওশিনের প্রিয় ফুল, যা দেখলে নিজেই বসন্ত'তে পরিণত হয়। সব রাগ ভুলে গিয়ে ইমুর গলা চেপে জড়িয়ে ধরলো নওশিন। আর বলতে লাগলো---
--তোকে না দেখে থাকতে আমার কষ্ট হয়'না বুঝি?
ইমুও জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো---
--পাগলী আমার, আর কোত্থাও তোকে ছেড়ে গিয়ে থাকবোনা।
--সত্যিতো?
--সত্যি, সত্যি, সত্যি,
.
প্রায় বিকেল গড়িয়ে যাচ্ছে। বাসার ফিরার টেনশন'টাও কাজ করছে নওশিনের। আবার যেতেও মন চাচ্ছেনা। তবুও যে রবী ঠাকুরের লাইনটি মনে পরেই যায়....
"যেতে নাহি দেব হায়,
তবু যেতে দিতে হয়,
তবুও চলে যায়"
সব ভাবনা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো নওশিন। ইমু-কে নিয়ে স্নিগ্ধা-সাগরের কাছে গিয়ে বলল---
--বাড়ি ঘর কি সব ভুলে গিয়েছিস নাকি, বাসার কথা একবারও বলছিস না?
.
স্নিগ্ধা নওশিনের মাথায় কৃষ্ণচূড়া ফুল দেখে কিছুটা বিচলিতই হলো। সাগর দেখে একবার স্নিগ্ধার দিকে তাকালো। সাগর বলল---
--ইমু এইটা কিন্তু ঠিক হলোনা,
--কোনটা?
--তোমরা বসন্তে বাসন্তী হয়ে ঘুরছো, আমাদের মাথা খালি। এইটা কি ঠিক বলো?
--কি করবো বলো, ইমু মানে তো একটু বেশীই ইমোশনাল। তাই আর কি!
হা হা হা....
.
বাইরে গিয়ে দুটি রিকশা ঠিক করা হলো। আগের রিকশায় স্নিগ্ধা-সাগর। পিছনের রিকশায় ইমু-নওশিন। সবুজ ছায়াঢাকা রাস্তার মাঝখান দিয়ে আস্তে আস্তে চলছে রিকশা দুটো। আশে পাশ থেকে বসন্তের কোকিলের ডাক ভাসে আসছে। নওশিন ইমুর বাহু আঁকড়ে ধরে আছে। হঠাৎ নওশিন বলল---
--আমায় একটা গান শুনাও.....
--এই সময় গান? কোকিলের ডাক বাদ দিয়ে এই কাকের গান শুনবা? বাহ্! অবাক করে দিলে!!!
--ঐ আমি শুনাতে বলছি তুই শুনাবি কি না?
.
ইমু কিছুক্ষন চুপ করে রইলো। খেয়াল করলো নওশিন অপলক দৃষ্টিতে চোখের চাওয়ায় সেতু বানাচ্ছে, ওমনি ইমু অর্থহীনের গানটা ধরলো---
" ভ্যান গগের ছবি
ভিভালদির সুর,
অলিভার স্টোনের মুভি
আর আমার পাকা চুল।
.
রান্নাঘরের নিভানো চুলা,
তোমার চুলে কৃষ্ণচূড়া।
.
লা লা লা লা
.
সাদা রং এর নতুন গাড়ি,
একটি পোড়া বাড়ি।
.
এশারের ছবি
মোৎসার্টের সুর।
ত্যারেন্তিনোর মুভি
আর আমার পাকা চুল।
.
আমার কাঁধে হালকা ঝোলা,
তোমার চুলে কৃষ্ণচূড়া ফুল
.
লা লা লা লা
.
কৈশোরের দিন গুলা এভাবেই পার হয়। মা-বাবা, ভাইয়া-আপি, মামা-চাচু সবার ভালবাসার মধ্যে কোন এক রাজপুত্রের ভালবাসা প্রয়োজন হয়। কোন এক রাজকন্যার ভালবাসা প্রয়োজন হয়। একটি ভালবাসার মানুষের প্রয়োজন হয়। যে মানুষটি ছাতার মতো মাথার উপরে থাকবে। দারুণ চৈত্রীর খড়ায় একটু ছায়া হয়ে দাঁড়াবে। আষাঢ়ের বর্ষণের মাঝে একটুও বৃষ্টিজল মাথার উপর ঝড়তে দেবেনা। প্রত্যাশায় থাকুন সেই মানুষটির, যে আপনাকে জীবন নামের এই সারাটি পথে আগলে রাখবে হৃদয় দিয়ে।

" কি দরকার ছিল ? "

গভীর রাতে ছাদে বসে আছি একা একা.ঘড়ি সঙ্গে
নেই .সময় ও আন্দাজ করতে পারছি না ! তবে সময়
দিয়ে এখন আর কাজ নেই ' আমি এখন সময়হীন
জগতের বাসিন্দার মত ।ঘড়ির সময়ে এখন আর কিছু
যায়,আসেনা …কোন কিছুতেই যায় ,আসে না
আমি আকাশের দিকে তাকালাম ! আকাশ
অন্ধকারাচ্ছান্ন ।মনে হচ্ছে কালো মেঘে ঢাকা ।
শেষবার যখন ভালো করে আকাশ দেখেছিলাম
,মনে পরে সেবার আকাশ বেশ স্বচ্ছ ছিল আর
অনেক তারা ছিল ! আজ শুধুই অন্ধকার ! কিছু দেখা
যাচ্ছে না ! তবে মনে হচ্ছে আজকের সাথে
অন্যদিনের কোথো যেনো একটা স্থূল অমিল।
পার্থক্যটা অনুভব করার মত।আমি ভেবেছিলাম এই
মুহুর্তটা আমাকে গাঢ় বিষাদ কিংবা তীব্র
ভীতি নয়ত প্রচন্ড ব্যাথাবোধ আচ্ছন্ন করে রাখবে
।আশ্চর্য ।তা না হয়ে কেনো যেন উল্টোটা হচ্ছে
।গভীর এক আনন্দ আমাকে ঘিরে ধরেছে…কেমন
যেন এক মুগ্ধতা নিয়ে কালো আঁধারে দৃষ্টি ছুড়ে
দিয়ে তাকিয়ে আছি…
হঠাৎ আকাশে আলোর ঝলকানিতে বিদ্যুত রেখা
দেখা গেল …...
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে মেঘ
ডাকল ,বিজলী চমকাল ,আকাশ ভাঙতে শুরু করেছে
.…এবারের অপেক্ষা অবশ্যই দীর্ঘ ছিল.সবাই
তীব্র গরমে যেভাবে হাঁসফাস করছিল
এতদিন,অনেকদিন পরে মানুষজন কিছুটা স্বস্তি
পাবে অবশ্য একই স্বস্তির কারণ আবার কয়দিন
পরে তাদের বিরক্তির কারণ হবে ,যখন কাজকর্মে
ব্যাঘাত ঘটবে ,এরকমই বৃষ্টির কারণে।এই এখন
মানুষের চলমান জীবনধারা ।
আর আমার মত গতি থমকে থাকা দের জন্য মনে হয়
কিছু ভিন্ন … মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছি জগতের
সবচেয়ে সুন্দর গানে .বৃষ্টির ছন্দ্বময় শব্দ,ক্ষনিকের
জন্য হারিয়ে যাওয়া ,অন্তঃজগতের গভীরে
পরিভ্রমন ,নিরবচ্ছিন্ন শান্তি -পুলক - স্বচ্ছ
মুগ্ধতা …আমার জন্য এসব সব ই পুরনো …তবে যতই
এই আবেদনে সাড়া দেই ,ততই যেন আগের থেকে
বহুগূনে বৃদ্ধি পেয়ে আমার কাছে ফিরে আসে… .
… .… ..…….
গভীর রাতে ,নিকষ অন্ধকারে , ঠান্ডা হাওয়া
গায়ে মেখে ! পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর আওয়াজ :
ঝুম বৃষ্টির শব্দ কানে নিয়ে ,অপার্থিব কোনও
জানা/ অজানা আকুলতাময় হাতছানি অনুভব
করতে করতে ভাবতেই পারি ঠিক এই মুহুর্তে আমি
ধরনীর সবচেয়ে সুখী মানব ।ভাবতে তো আর
ক্ষতি কিছু নেই ! তবে তা ভাবতে গেলে এসব
ভাবনাও কাবাবের হাড্ডির মত আপনাআপনি এসে
যায় যে : "নিরবিচ্ছিন্ন/অবিমিশ্র সুখ বলতে কিছু
নেই" ,"সময়/মুহূর্ত কখনো চিরস্থায়ী
হয়না" ,"জীবনের কোন moment কে movie এর মত
pause বা resume অথবা forward বা bacward
করা যায়না ইত্যাদি ,ইত্যাদি .
সে যাই হোক ,এসব ভাবনার এখন আর কোন গুরুত্ব
নেই ! এই মুহুর্তে আমি আসলেই খুব সুখী …আমি
আনন্দিত ।এই আনন্দ মুক্তির,চিরমুক্তির।শান্তি
আমায় প্রবলভাবে গ্রাস করেছে।ঠিক এই মুহুর্তের
মত প্রশান্তি আগে কখনো অনুভূত হয়নি …এ বুঝি
বড্ড অচেনা -অজানা প্রফুলতা …যেন এর অস্তিত্ব
এ জগতে নয়।অন্য কোন চিরপ্রসন্নময়ী ভূবনে ।
অসম্ভব সুন্দর কোন মাদকতা আমাকে তন্দ্রাচ্ছন্ন
করছে দ্রুত !!
একটু আগে আমি অতীতের বহুবারের মত কাজটা
করতে গিয়েও শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে আসিনি..…।
অবশেষে তাহলে সত্যি এ কাজটা সম্পন্ন হল ।তবে
এখন কোন পিছুটান অনুভব করছি না ।এই মুহূর্তে
আমার সাথে যা ঘটছে ,মোটামুটি এরকম এ একটি
দৃশ্যপটের বর্ণনা পড়েছিলাম কোন এক উপন্যাসের
শেষাংশে !
সেখানে মূল চরিত্র সুইসাইড করে শেষ পর্যন্ত।
আসলে মাঝে মধ্যেই এরকম হয় ! গল্প,উপন্যাস বা
নাটক,সিনেমার কাহিনীর দৃশ্য মিলেমিশে
একাকার হয়ে যায় ..........
যেনো গল্পের বাস্তবতা আর মানুষের জীবনের
বাস্তবতা জায়গা অদল বদল করে ! অনেকেই
ব্যপারটা লক্ষ্য করে অবাক হয়।কিন্তু আশ্চর্যের
কিছুই নেই …গল্প,কাহিনী,সিনেমার স্ক্রিপ্ট
মানুষেরই লেখা। তা যতই কল্পনাপ্রসূত আর
ফিকশনপ্রবণ ই হোক ,সেই কল্পনা বাস্তব দর্শন ও
জীবনবোধ এর মাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে না ।
এর আলোকেই হয়।
আমার ইচ্ছে করছে আমার বর্তমান অবস্থা হুবহু
লিখে ফেলতে ।রিয়েলিটিকে কনভার্ট করে
গল্পাকারে বন্দী করতে ।যেন এসব বাস্তবে কিছু
হচ্ছে না ।গল্পে ঘটছে ।কিন্তু এখন আর তা সম্ভব
নয়..……একটু আগে সত্যি সত্যি অনেকগুলো ঘুমের
ট্যাবলেট পানি দিয়ে গিলে ফেলেছি !
একেবারে কয়েকপাতা।এখন যেন পুরো শরীর জুড়ে
হাজার বছরের ক্লান্তি ভর করেছে ! আমি বুকভরে
নিঃশাস নিলাম …দূরে কোথা থেকে যেনো
অপূর্ব সঙ্গীত ভেসে আসছে ! হ্যালুসিনেশান হবে
হয়ত।কিন্ত কি অদ্ভূত সুন্দর সুর।যেনো অপার্থিব
মায়ায় মেশানো।আমার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে
পড়ছে ।বৃষ্টির পানির সাথে মিশে অশ্রুও যেন
প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে চাইছে ! যেমন
আমি হারিয়ে যাচ্ছি বিস্তৃতির অতলে।প্রকৃতি
আমার জনম জনম ধরে জমানো ক্লান্তিমাখা -
বেদনাবিধুর- হাহাকার মিশ্রিত - কষ্টক্লেশ
গ্ঁাথা - ব্যাথাভরা -জ্বালাময় কলুষ একবারে ধুয়ে
ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে যেন অঝোড় বারিধারায়।
শত কলঙ্কময় ,গ্লানি ঘেরা এ পৃথিবীতে লুকানো
এত মায়া মায়া সৌন্দর্যের কি দরকার ছিল ? আর
গভীর বিস্বাদ ঠাসা ,যাতনার এই মানব জীবনে
এত ছায়া ছায়া শান্তিরও বা কি দরকার ছিল ?!?!

★কান্নাজড়িত ভালবাসা★

এই যাহ মরেছি আজকেও লেট তাও আবার ২০
মিনিট। আল্লাহ জানে কি আছে কপালে?
দূর থেকেই ডোরা সাপের ফস ফস আওয়াজ আর
ফনা টের পাচ্ছি ঠিক ঝরের আগ মুহূর্ত টা যেমন
হয় আর কি?
নীলিমার সামনে যেতেই......
:- কিরে তোর এত দেরী হল কেন?
:-কেন আবার জ্যাম ছিল
:-(ঠাস)....মিথ্যে বলবি না একদম।
:-সরি মনে ছিল না (গালে হাত দিয়ে)
:-(ঠাস)....
:-আবার কেন মারলি?
:-এই যে আমার কথা ভুলে গিয়ে অন্য কোন
মেয়েকে যেন মনে না করো।
:-হুম দাঁড়িয়ে থাকবো আমি?
:-না এইবার বসতে পারো(হাসি দিয়ে)....
হাসলে নীলিমাকে খুব সুন্দর লাগে একদম একটা
নিষ্পাপ মুখ এই হাসির জন্য সব কিছু করতে পারে
শাওন। তাইতো এত অত্যাচার সহ্য করেও
ভালবাসে নীলিমাকে)
:-কিরে বাচ্চাদের মত দুই গালে হাত দিয়ে
তাকিয়ে আছিস কেন?
:-না অলরেডি দুইটায় দুইটা পরে গেছেতো তাই
ভাবছি আমার তিন নাম্বার গালটা কোথায়?
:-কি?
:-না কিছু না।
:-Good Boy....
:-হুম বল কি বলবি?
:-আজকাল তোকে লামিয়ার সাথে দেখা যায়
ঘটনা কি?
:-ও সেটা? আমি লামিয়াকে ভালবাসি আর
লামিয়া আমাকে।
:-কি বললি?(চোখ বড় করে মনে হয় আরেকটা
পোড়বে)
:-না কিছু না আমি তোকেই ভালবাসি রে।
:-আচ্ছা?
:-হুম।(গালে দুই হাত দিয়েই যদি আরেকটা পরে)
:কিন্তু তুই কি করে ভাবলি তোর মত ছ্যাচ্রাকে
আমি ভালবাসবো?
:-কি তার মানে তুই আমাকে ভালবাসিস না?
:-আ.. হ্যা... না...
:-মানে?
:-না।
:-আচ্ছা তুই তাইলে থাক লামিয়া আমার জন্য
ওয়েট করতাছে।
:-কি?
:-হ্যা যাই।
:-যাই মানে?
:-যাই মানে চলে যাচ্ছি আর কিছুই না।
:-আচ্ছা আচ্ছা যা।
:-হুম চললাম।
★এতক্ষন শাওন ও নীলিমার মধ্যে কথা হচ্ছিল
শাওন নীলিমাকে প্রচন্ড পরিমানে ভালবাসে।
আর নীলিমাও শাওনকে ভালবাসে কিন্তু শাওন
কে একটু বেশী শাসন করে নীলিমা।কিন্তু অন্য
কোন মেয়ের সাথে শাওনকে একডম সহ্য করতে
পারে না আর শাওনের সাথে লামিয়াকে দেখেই
মাথায় খুন চেপে যায় নীলিমার তাই চর গুলো
বোনাস হিসেবে দিল নীলিমা শাওনকে।
পরেরদিন ক্যাম্পাসে......
:-শাওন তুই তো বলতে পারিস নীলিমাকে যে তুই
ওকে ভালবাসিস..(লামিয়া)
:-আরে বলছি তো।(শাওন)
:-তবে?
:-আরে যতবার বলেছি ততবারই চর খেয়েছি প্লিজ
দোস্ত একটু হেল্প কর।(বলেই হাত ধরে লামিয়ার
এর মাঝেই নীলিমার আবির্ভাব)
:-শাওন।
:-কি?
:-বিপদ সংকেত ১০।
:-মানে?
:-নীলিমা দেখ।
:-কই?
:-এইযে আমি এই মহাশয় কি হচ্ছে এসব?
:-কি আবার? সবই তো দেখছিস।
:-হ্যা তাইতো বলছি কি হচ্ছে?
:-কি আবার আমি আমার লাভারের হাত ধরেছি
তাতে তোর সমস্যা কি?
:-আছে...
:-আমার কিচ্ছু করার নাই।
:-নাই মানে?
:-তুই কি মনে করেছিস তুই ছাড়া আমার লাইফ
অচল? এই দেখ একদিনেই লাভার হয়েছে।
:-ওই শালা তোর এত বড় সাহস তোর?(কলার ধরে
বলতাছে তার মানে কাজ হয়েছে)
:-ছাড় বলছি প্লিজ।
:-কোন ছাড়াছাড়ি নাই তুই শুধু আমাকে
ভালবাসবি অন্য কোন মেয়ের সাথে দেখলে খুন
করে ফেলবো।
:-সরি আমার লাভার আছে।
:-দেখ শাওন আমি তোকে ভালবাসি খুব খুব
(কান্নাজড়িত কন্ঠে না আর ঠিক হবে না কিছু
করা তাইলে খবর আছে)
:-হ্যা আমিও তোকে ভালবাসি।
:-তাইলে লামিয়া?
:-আরে এটা তো একটা খেলা ছিল।
:-কি?
:-হুম
:-ঠাস...
:-আবার কেন?
:-আমাকে কাঁদানোরর জন্য।
:-আজ যত পারিস কেঁদে নে।এরপর আর কাঁদতে
দিবো না(বুকে জড়িয়ে)
:-হুম ভালবাসি।
:-ভালবাসি।
এভাবেই তাদের ভালবাসার পথ চলা শুরু হয়।