বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০১৮

অপেক্ষা

প্রায় ছয় বছর ধরে তোমার সাথে কথা বলতেছি কিন্তু কি পোড়া কপাল আমার এই ছয় বছরে তোমার হাতের আঙ্গুলটা পর্যন্ত দেখতে পেলাম না। আচ্ছা জেরিন আমরা কি আজীবন এভাবে অদৃশ্য থেকেই কথা বলবো নাকি সামনাসামনি এসে,পাশাপাশি বসে হাতেহাত রেখে কথা বলবো। তোমার কি একটি বারের জন্য আমার কাছে আসতে মন চায়না। মন চায়না আমার ভালোবাসার আলতো ছোঁয়া পেতে। আমার ঘামে ভেজা শার্টটার গন্ধ শুকে দেখতে।
রোহান এভাবে বলছো কেন?আমারো ইচ্ছে করে তোমার কাছে আসতে। ইচ্ছে করে সব কিছু ছেড়ে,সব বাধা পেরিয়ে ছুটে চলে আসি কিন্তু কি করবো বলো বাস্তবতা যে অনেক কঠিন।
জেরিন আর কতদিন তোমাকে ছাড়া আমার কাটাতে হবে? আমি যে আর পারছি না,আর কত সময় পর তুমি আমার হবে।আমি আর কত অপেক্ষা করবো বলো?আমি যে আর পারছি না
রোহান আমিও তোমাকে ছেড়ে থাকতে চাই না,থাকতে পারিনা। কিন্তু জোর করে তোমাকে ছেড়ে থাকতে হয়,আমাদের ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবে একটু অপেক্ষা করো। জানো রোহান আমার খুব ইচ্ছে করে তোমার সাথে গোধুলী বিকেলে হাত ধরে হাটতে, তোমার কোলে মাথা রাখতে। আরো ইচ্ছে করে তোমার সাথে রাস্তা দাঁড়িয়ে বেশি করে টক দিয়ে ফুসকা চটপটি খেতে।
জেরিন আমারো তো ইচ্ছে করে। জানো জেরিন যখন দেখি রাস্তায় একজোড়া কাপল হাত ধরে হাটতেছে কিংবা হুড তোলা রিক্সায় পাশাপাশি বসে কোথাও যাচ্ছে তখন তোমাকে ভেবে অঝোর ধারায় অশ্রু চলে আসে। নিজেকে আর সামলে রাখতে পারিনা। তাইতো অফিস থেকে ফিরেই ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে চুপটি মেরে বসে থাকি আর আনমনা হয়ে তোমাকে ভাবি।
রোহান একটু অপেক্ষা করো,আর খুব বেশিদিন নয়। আমি আসবো তোমার কাছে আসবো।
জেরিন তুমি এত নিষ্ঠুর কেন,কেমন করে আমাকে ছাড়া থাকো। আমার ছবিও তুমি দেখতে চাওনা।এমন প্রতিজ্ঞা করার কি দরকার ছিলো বলো। আমরাতো দুজন দুজনার ছবি দেখতে পারতাম ইচ্ছে হলেই। কিন্তু তুমি সামনাসামনি ছাড়া আর কিছু করতে চাওনা। দাওনা তোমার একটা ছবি,খুব দেখতে ইচ্ছে করতেছে।
রোহান একটু অপেক্ষা করো,আমার ছবি নয় তুমি আমাকে সামনে বসে খুব কাছ থেকে দেখতে পাবে। নববধূ সাঁজে লাল বেনারসি পড়ে ঘোমটা মাথায় দিয়ে, মেহেদি পরে দুহাত লাল করে তোমার সামনে আসবো।সেদিন মন ভরে আমায় দেখো। তার আগে নয়।
জেরিন তুমি অনেক নিষ্ঠুর, অনেক পাষাণী তুই। আমি তো তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারিনা। তুমি কেমনে পারো?
রোহান দয়া করে এভাবে বলো না। আমি আসবো, কথা দিচ্ছি তোমার ঘরেই আগে আসবো। তারপর সুখের সংসার গোছাবো দুজন মিলে। রোহান আজকে রাখি, পরে কথা বলবো। বলেই কলটা কেটে দেয় জেরিন।
পনেরো দিন পার হয়ে যায়,জেরিনের কোন খোঁজ নেই। রোহান বার বার চেষ্টা করতে থাকে কিন্তু মোবাইলের সুইস বন্ধ। রোহান পাগলের মতো হয়ে যায়। কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। দিনরাত না ঘুমিয়ে পার হয় রোহানের।
ষোলতম দিনে হঠাৎ করেই বাংলাদেশি এক নাম্বার থেকে কল আসে রোহানের মোবাইলে।কলটা রিসিভ করা মাত্রই সেই পরিচিতি কণ্ঠ, সেই চেনা সুর কানে ভেসে আসে। মোবাইলের ওপাশ থেকে বলতে থাকে আমি সেই পুরোনো যায়গাটায় দাঁড়িয়ে আছি যে যায়গাটা তোমার খুব পছন্দের। তাড়াতাড়ি করে আসো, আমি অপেক্ষায় রইলাম।
কোন কিছু না ভেবে, যে পোশাক পরা ছিলো সে অবস্থাতে রোহান বাসা থেকে বের হয়। বাসা থেকে বের হয়ে রিক্সা করে সেই প্রিয় যায়গায় হাজির হয়। যাওয়ার পথে একটা গোলাপের তোড়া কিনে নেয়।
গোলাপের তোড়া হাতে চারদিকে খুঁজতে থাকে রোহান কিন্তু কোথাও কেউ নেই। প্রায় পনেরো মিনিট পার হয়ে যায়,বিরক্তি চলে আসে রোহানের। রাগ করে ফুলের তোড়াটা মাটিতে ফেলবে ঠিক তখনি একটা ছেলে সহ জেরিন সামনে এসে হাজির হয়। রোহান অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে জেরিনের দিকে। কিছুসময় পর রোহান ফুলের তোড়াটা জেরিনের হাতে দিতে চাইলে সাথে আসা ছেলেটাকে দেখিয়ে জেরিন বলে উঠে আমার স্বামী। আমরা দুজন তোমার সাথে দেখা করতে আসছি। রোহান কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না। রোহানের মুখের ভাষা যেন হারিয়ে যায়। রোহানের শরীর কাঁপতে শুরু করে, কোনরকম নিজেকে সামলিয়ে রোহান বলে উঠে তোমাদের দুজনের জন্য আমার ছোট্ট উপহার। উপহারটা হাতে দিয়ে রোহান চলতে শুরু করে। জেরিন পিছন দিক থেকে ডাকলে রোহান না ফিরে সামনে চলে যায়। জেরিন দৌড়ে গিয়ে রোহানের সামনে দাঁড়ায়। তারপর হাতে থাকা গোলাপ দিয়ে বলে উঠে ভালোবাসি তোমাকে। রোহানের চোখ কপালে উঠে যায়। জেরিনের সাথে আসা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকে রোহান।তারপর ছেলেটা মাথা নাড়িয়ে বলে উঠে জেরিন আপনাকে ভালোবাসে। আমি শুধু এমনি এসেছিলাম তার সাথে বলে ছেলেটা চলে যায়। প্রায় ছয় বছর পর তাদের দ্বিতীয় দেখা হয়। এরপর তারা আজীবন দেখা করার সিদ্ধান্ত নেয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন