সময় ২০০৭.....
শহরের নামকরা ভার্সিটির অ্যাডমমিশন টেস্ট আজ।দূরদুরান্ত থেকে একেকটা স্টুডেন্ট এখানে অ্যাডমিশন নিতে এসেছে।রুচি এবং স্ট্যান্ডার্ডের দিক থেকে এই ভার্সিটিটা সবার পছন্দের একেবারে শীর্ষে। যেহেতু অ্যাডমিশন টেস্ট .... যেদিকেই চোখ ফেলি সেদিকেই ছেলে'মেয়েদের চিল্লাচিল্লি-চেচামেচির আওয়াজ শুনতে পাই... গার্জিয়ানদের কথা না হয় বাদই দিলাম।
.
অ্যাডমিশন টেস্টে সিলেক্ট হবার মতো মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ঠিক এই মুহূর্তে আমি ভার্সিটির মেইন গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। মাথার উপরে টাঙানো বিলবোর্ডে লাল-সাদা কালিতে লিখা এই সুবিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের নাম পড়ছি।গেটের একেবারে মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে যাওয়া আসাকারী মানুষদের কাছে রিতীমতো ধাক্কাধাক্কির সম্মুখীন হচ্ছি আমি।একটা সময় আর দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব না টের পেরে সেখান থেকে আস্তে আস্তে পা-বাড়াই ভার্সিটির ভীতরের দিকে।বিশাল বড় ক্যাম্পাস। সবাই সেখানে বসে গ্রুপ বেধে নিজেদের মধ্যে পড়ার ব্যাপারে ডিসকাশন করতে ব্যস্ত । আমার ওরকম টাইপের কোনো গ্রুপ না থাকায় বসে পড়ি কাছেই পাশের কোনো এক কোণাতে ।এদিক ওদিক চোখ ঘুরিয়ে দেখতে থাকি পুরো ক্যাম্পাসটা।
.
হঠাৎ করেই চার চাকার একটা গাড়ি আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। একটা সাদা ইউনিফর্ম পড়া লোক গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে পিছনের দরজা খুলে দিলো। তার একটু পর কেউ একজন পেছনের দরজা থেকে নামলো ।সরি..কেউ একজন না....সাদা স্কার্ট পড়া একটি মেয়ে পেছনের দরজা থেকে ধীরে ধীরে নামতে লাগলো,সাথে কোর্ট -প্যান্ট পড়া মধ্যবয়সী একজন ভদ্রলোক। ভাবলাম... কোনো বড়লোক ফ্যামিলির আদুরে মেয়ে হয়তো এখানে অ্যাডমিশন নিতে এসেছে।
.
আমার বসার জায়গাটি থেকে মেয়েটির মাঝখানের দুরত্ব ছিলো মাত্র বিশ'হাত।বিনা কারণে আমি মেয়েটির মুখের দিকে কিছুক্ষণ যাবত অনরবরত তাকিয়ে ছিলাম।উহু....ভুল ভাবছেন...ক্রাশ-ট্রাশ খাইনি,চেহারাও খুব একটা ভালো লাগেনি.. ..তবুও কেন যেন মেয়েটার মুখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম।মেয়েটার চেহারার ভীতরে কেমন যেন একটা মায়া মায়া ভাব জুড়িয়ে আছে...কি নিষ্পাপ মেয়েটার চোখ দুটো!! পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সেই ভদ্রলোকটার সাথে দিব্যি হেসে হেসে কথা বলছে..হয়তো মেয়েটার বাবা হবে। আমার তখন মনে হচ্ছিলো এক দৌড়ে মেয়েটির কাছে যাই.... গিয়ে জিজ্ঞেস করি...এই মেয়ে কে তুমি হ্নম? নাম কি তোমার? এমন কি আছে তোমার চেহারার মাঝে যে আমি বার বার হারিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছি?আমাকে একটু দয়া করে বলবে ?
.
কিন্তু পরক্ষণই মনে হলো.."ধুর কি যাহ-তাহ ভাবছি, এখানে অ্যাডমিশন নিতে এসেছি, ভালো করে পড়াশোনা করতে এসেছি! !ভালো করে লিখাপড়াটা শেষ করলে এরকম মেয়ে এমনিই আমার পিছু পিছু ছুটবে,পথ আটকে আমার নাম জানতে চাইবে।আমাকে তখন আর কস্ট করে গিয়ে কারো নাম জিজ্ঞেস করতে যেতে হবেনা।তাছাড়া এরকম রিচ ফ্যামিলির মেয়েগুলো রীতিমতো খুব অহংকারী হয়,এদের ধারে কাছে থাকা,মেশা বা কথা বলাটা মোটেও উচিত নয়।এদের নাগাল থেকে যতটা দূরে থাকা যায় ততই আমার ভালো ।"(মেয়েটির চোখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে কথাগুলো ভাবছিলাম)
.
কিন্তু একটা সময়ে হঠাৎ করে মেয়েটির চোখ আমার চোখে পড়ে, আমি বিন্দুমাত্র দেরি না করে অন্যদিকে চোখ সরিয়ে নেই।হয়তো মেয়েটা ইতিমধ্যে বুঝতে পেরে গেছে আমি ও'র মুখের দিকে এতো সময় ধরে তাকিয়ে ছিলাম।এটা ভাবতেই ইতিমধ্যে মনের ভীতরে কেমন যেন একপ্রকার ভয় কাজ করা শুরু করে দিয়েছে।আজ বোধহয় আমার আর কোনো রক্ষা নেই।নিশ্চিত রুপে, প্রথম দিনেই ক্যাম্পাসের সবার সামনে অপমানিত হবো তাও আবার একটা মেয়ের দ্বারা.. ইশশ....কি লজ্জার ব্যাপার....! আমি আমার মনকে অপমানিত হবার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করি।কিন্তু না...!যা ভাবলাম তার কিছুই হলোনা!! আমার ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে মেয়েটা গটগট করে ওর বাবার সাথে আমাকে পাশ কাটিয়ে দিয়ে চলে গেল।যাওয়ার আগে আমাকে রাগী দৃষ্টিতে দেখে গেল।আমি কিছু মনে করলাম না।মেয়েটার জায়গায় অন্যকেউ হলে ঠিক এরকমটাই করতো।মনে মনে হাফ ছেড়ে বাচলাম।আল্লাহ আমাকে আজকে বাচিয়ে দিলো।
.
অবশেষে অ্যাডমিশন টেস্ট আরম্ভ হলো,
আমি আমার হলে গিয়ে বসে পড়লাম বাট আশ্চর্য হলাম মেয়েটিকে আমাদের হলে প্রবেশ করতে দেখে। তার চেয়ে আরো বেশি আশ্চর্য হলাম মেয়েটির সিট আমার সিট পাশাপাশি হওয়াতে ।নিজে কি খুশি হবো? নাকি লজ্জিত হবো? কিছুই বুঝতে পারছিলাম না..!এসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে.. নিজে যা পারি সেগুলো ভালো করে পরিক্ষার খাতাতে লিখে দিয়ে চলে আসলাম, আল্লাহ রহমতে টিকেও গেলাম।সেদিন আমার খুশির কোনো ঠিক ঠিকানা ছিলোনা।মনে মনে অনেক খুশি ছিলাম।কিন্তু পরক্ষণই মনে খেয়াল আসলো.."সাদা স্কার্ট পরা মেয়েটি টিকেছে তো?"পরে খোজ নিয়ে জানতে পারি সে'ও টিকেছে। আরো ডাবল-ট্রিপল খুশি হলাম।
.
.
প্রথম দিন,দ্বিতীয় দিন করতে করতে ভার্সিটিতে কয়েকটামাস কেটে গেলো....এরই মাঝে ক্লাসের সবার সাথেই মোটামোটিভাবে পরিচিত হলাম এমনকি সেই মেয়েটার সাথেও।নাম জিজ্ঞেস করাতে মেয়েটি বলেছিলো ওর নাম নীলা।ক্লাসের সবার মতো আমিও যেন ওকে এ নামেই ডাকি
.
.
আমি নীলার কাছে আর পাঁচটা নরমাল ফ্রেন্ডের মতো ছিলাম।বাহিরে ঘুরতে গেলে নীলা আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যেত.... এটার মানে আবার এই না যে আমার প্রতি নীলার কোনো ইন্টারেস্ট ছিলো।শুধু ঘোরার সময় টুকুতে কথা বলার সঙ্গী হিসেবে কেউ একজনের দরকার ছিলো।আর আমিই হয়তো ওর কাছে সেই সঙ্গীটা ছিলাম।কিন্তু আমার সাথে তো ওর হাই-হ্যালো টাইপের কোনো কথাই হতোনা।যতবারই নীলা আমার সাথে কথা বলতো... আমার মনে হতো মেয়েটা ওর সব পারসোনাল কথাগুলো আমার সাথে শেয়ার করছে।তাহলে আমি এই সম্পর্কটাকে "যাস্ট-ফ্রেন্ড "টাইপের রিলেশন কিভাবে মেনে নেই?কিন্ত ও তো আমাকে শুধু "যাস্টফ্রেন্ড -যাস্টফ্রেন্ড"বলেই চুপ করে দিতো।
.
আমিও কম না....রোজ আমি আমার মনকে একটা কথাই বোঝাতাম যে ও'কে ফ্রেন্ডের নজরে দেখ।কিন্তু ওর হাসিটা আমার মনকে এতোটা ঘায়েল করতো যে ....আমার মন থেকে শুধু একটা রিপ্লায়ই আসত...."Bro-Its impossible "সে যখন আসত তখন তার চেহারার সৌন্দর্য আমার চেহারাকে সুন্দর করে দিতো।সে না জানি পুরো দিন কিভাবে এতো "ফ্রেশ-ফ্রেশ"থাকতো, ওর সাথে থাকতে থাকতে আমাকেও তাজা-তাজা দেখাতো।
.
নীলা বসত তো ওর যাস্ট-ফ্রেন্ডের সাথেই কিন্তু আমি বসতাম আমার ক্রাশের সাথে।আমার মন ভীতরে ভীতরেই এক্সাইটমেন্টে লাফ দিয়ে উঠত কিন্তু ওর কাছে সেটার কোনো ইফেক্টই পড়তোনা।আমার বয়সের ছেলেদের তো সে ভাইয়া বলেই ডাকতো...আমিও তো ওদের মতো নীলার থেকে ১বছরের বড় ছিলাম!! তাহলে আমাকে কেন সে ভাইয়া না বলে আমার নাম ধরে ডাকতো?
.
যাইহোক না কেন..এই ফ্রেন্ড -ফ্রেন্ড এর ট্যাগের মধ্যে আমি খুশি ছিলামনা।প্রথমবার কোনো মেয়ে এতোটা ক্লোজ এসেছিলো।আমার মনে হয়েছিল 'এটাই সুযোগ'।
এরপর থেকে বুকে একটু সাহস করে আমি ওর সাথে হেলদি টাইপের ফ্লার্ট করতে থাকি।
অ্যান্ড গেস হোয়াট হ্যাপেন্ড?
সে রাগও করলোনা,তার কাছে অদ্ভুতও মনে হলোনা অ্যান্ড আমি ভাবলাম.."ফ্লার্ট টাতো কাজ করে গেলো!!"
সে এখন আমার কথায় অনেক বেশি হাসতো এমনকি আমাকে পাগলও বলতো যেটা 'যাস্ট-ফ্রেন্ড'এর লেভেলে আমার জন্য অনেক বড় সাকসেস ছিলো।
.
আমি চাইতাম সে'ও আমার মতো একইরকম ফিল করুক যেরকমটা আমি তার জন্য করি।ঈশ্বরের কাছে আমার যাস্ট এতটুকুই ইচ্ছে ছিলো।এখন আমি যখন ওর হাত ধরতাম তখন ওর কাছে ব্যাপারটা একটুও অদ্ভুত মনে হতোনা। আমার মনে এইটা খেয়াল আসতে লাগল যে... এখন আমি ওর কাছে যাস্ট-ফ্রেন্ড এর মতো তো একদমইনা।ভাবা শুরু করলাম..ওর মনের ভীতরেও আমার জন্য, আমাকে কিছু বলার জন্য কিছু একটাতো ফিল হচ্ছিল।এই একটা সাসপেন্সই আমার এক্সাইটমেন্ট সবসময় বাড়িয়ে রাখতো যে....কোনদিন আমার ক্রাশ আমার গার্লফ্রেন্ডে পরিণত হবে।
.
নীলা একদিন হুট করে আমাকে বলে উঠলো.."হৃদয় একটা নন-ভেজ 'জোক শুনাও তো।কথাটা শুনে বাহিরে বাহিরে আমি যতটা'না শরম পাচ্ছিলাম ভীতরে ভীতরে ঠিক ততটাই এক্সাইটেড হচ্ছিলাম এটা ভেবে যে কোন ভালো জোকসটা আমার ঠিক সেই মুহূর্তে মনে ছিলো।আমরা তখন সেই লেভেলে পৌছে গিয়েছিলাম যেখানে আমাদের কথাগুলো আর আগের মতো নরমাল ছিলোনা।এখন যদি আমি নীলার থেকে দূরে চলে যেতাম নীলা নিজেই আমার কাছে চলে আসতো।আর এখন কেউ কিভাবে এটা অস্বীকার করবে যে নীলার আমার উপর কোনো ইন্টারেস্ট ছিলো'না?
.
.
খুব তাড়াতাড়ি আমার আর নীলার ব্যাপারটা ভার্সিটির সবজায়গায় ছড়িয়ে পড়লো।অন্যদের চোখে তো আমরা দুজন "ইন-এ-রিলেশনশিপ"এই ছিলাম কিন্তু মেয়েটা ওর ঐ কথাতেই অটল....আমরা দুজন যাস্ট-ফ্রেন্ড।
না!!!এরকম'টাতো হতে পারেনা!!একসময় আমি নিজেই ব্যাপারটা নিয়ে অনেক ভাবলাম এবং উত্তর পেলাম..হয়তো সে রিলেশনশিপ টা অন্যদের জানাতে চাচ্ছেনা কিন্তু ভীতরে ভীতরে আমাকে চায়।
মেয়েদের ব্যাপারগুলো এমনিতেই আমার মাথার উপর দিক দিয়ে যায় তাই আমি ভাবলাম কেননা এই সম্পর্কটাকে "সিক্রেট -রিলেশনশিপ "নাম দেই!!কিন্তু আমি তো এখন অবধি আমার মনের কথাটাই ওকে বলিনি।
.
কি করবো বলুন?কোনো পারফেক্ট সময়ই খুজে পাইনি!!বাট এখন আমাদের ফ্রেন্ডশিপ টা এমন একটা পর্যায়ে এসে ঠেকেছিলো যেখানে আমার বিশ্বাস ছিলো যে আমি নীলাকে প্রপোজ করলে সে আমার প্রপোজাল মুহূর্তেই এক্সেপ্ট করবে।আমি সেই দিনগুলোতে অনেক খুশি খুশি থাকতাম,বিনা কারণে স্মাইল করতাম,সিরিয়াসলি এখন ওকে মন থেকে চাইতাম। নীলা আমাকে হিন্টস দিতো আর আমার কনফিডেন্স বেড়ে যেত।পুরো রাত আমি এটাই ভাবতে থাকতাম যে কালতো ওকে প্রপোজ করবোই করবো।
অবশেষে আমি নীলাকে প্রপোজ করার জন্য একটা ডেট ফিক্সড করলাম...যা হবে এই দিনেই হবে।এবং ফাইলানি খুব তাড়াতাড়ি সেই দিনটা এসে গেল!! কারণ আমার তো আর তরই সইছিলনা।
.
.
দুটো চকোলেট কিনে নিজের কাছে রেখে দিলাম ওকে দেয়ার জন্য।যদিও এই দুটো চকোলেট কিনতেই আমার পকেট প্রায় খালিই হয়ে গিয়েছিলো তবুও ইম্প্রেশন জমানোর জন্য এই দুটো চকোলেটই যথেষ্ট ছিল।
.
.
সারাদিন-রাত অনেক প্রাকটিস, অনেক রিহার্সেল করে,নিজের চুল গুলো ঠিকঠাক করে যাচ্ছিলামই নীলার কাছে কিন্তু নজর পড়লো অন্য কেউ ছিলো ওর সাথে।দেয়ালের কোনো এক কোনায় তারা দুজন দাঁড়িয়েছিল যেখানে দুটো মানুষের ঠিক করে দাড়ানোর জায়গাটুকুও ছিলোনা।।আমার বুকের ভীতরটা কেমন যেন ধুক করে উঠলো কিন্তু তবুও আমি আমার মনকে বুঝিয়ে বললাম.... নীলার কোনো ফ্রেন্ডও তো হতে পারে? এতোটাও কিসের জলদি এভাবে নিজের মনকে ভেঙ্গে ফেলার??আমি একটু কাছে গেলাম....একটা সাইডে লুকিয়ে ওদের দুজনের মাঝেকার কথা শোনার চেষ্টা করলাম,.... যে ছেলেটা নীলার পাশে ছিলো সে হয়তো নীলাকে ওর জন্মদিন উপলক্ষে কিছু একটা গিফট দিচ্ছিলো.. না... কিছু একটা না.. একটা বড় এক্সপেনসিভ গাড়ি।
.
আমার পকেটে রাখা চকলেট গুলো ইতিমধ্যে গলা শুরু করে দিয়েছিলো।কিন্তু চকোলেট গুলো যার কারণে গলছিলো সে তো অন্য কোথাও অন্য কারো সাথে দাঁড়িয়ে ছিলো।দুজনের কথা শুনে মনে হচ্ছিলো ওরা শুধু বন্ধু তো হতেই পারেনা কারণ ওদের সব কথাই রোমান্টিক টাইপের ছিলো!!আর কথায় কথায় 'বেবি-বেবি'বলছিলো।চোখে পানি নিয়ে আমি সেখান থেকে চলে আসলাম কারণ যার জন্য এসেছিলাম সে তো অন্য কারো সাথে গলা-মিলানোতে বিজি ছিলো। পকেটে রাখা চকলেট কখন গলে পানি হয়ে গেলো টেরই পেলামনা।শুধু এটাই টের পেলাম যে... এখন নীলার উপর আমার শুধুই আকর্ষন ছিলোনা,ভালোবেসে ফেলেছিলাম ওকে।
.
তখন আমার মনে এই লাইনগুলোই বার বার ঘুরপাক খাচ্ছিলো,
সেট লাইফ আপসেট হয়ে গেলো
চোখ টা পানিতে ভিজে গেলো
মেয়েটা আমার এতোটা ক্লোজ এসেও..
অন্য কারো জীবনে সেট হয়ে গেলো?
প্রথমবার লাইফে এতোটা খুশি আসতে নিচ্ছিলো কিন্তু আমার লাকটা হয়তো খারাপ ছিলো। মেয়েটা যেভাবে আমার সাথে চলতো, কথা বলতো আমার মনেই হতো সে আমার উপর ইন্টারেস্টেড।কিন্তু ভুল তো নীলার ছিলো...সে কখনো বলেইনি এগুলো তার কমিটিমেন্ট ছিলো।
.
মৃদ্যূ বাতাসে দাঁড়িয়ে আছি....মনে মনে ভাবছি.... আমি মেয়েটির কাছে হয়তো আর পাচটা যাস্ট ফেন্ডের মতোই ছিলাম!!ব্যাপার না বাকিদিনগুলোও না হয় যাস্ট-ফ্রেন্ড ই থেকে গেলাম।
শহরের নামকরা ভার্সিটির অ্যাডমমিশন টেস্ট আজ।দূরদুরান্ত থেকে একেকটা স্টুডেন্ট এখানে অ্যাডমিশন নিতে এসেছে।রুচি এবং স্ট্যান্ডার্ডের দিক থেকে এই ভার্সিটিটা সবার পছন্দের একেবারে শীর্ষে। যেহেতু অ্যাডমিশন টেস্ট .... যেদিকেই চোখ ফেলি সেদিকেই ছেলে'মেয়েদের চিল্লাচিল্লি-চেচামেচির আওয়াজ শুনতে পাই... গার্জিয়ানদের কথা না হয় বাদই দিলাম।
.
অ্যাডমিশন টেস্টে সিলেক্ট হবার মতো মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ঠিক এই মুহূর্তে আমি ভার্সিটির মেইন গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। মাথার উপরে টাঙানো বিলবোর্ডে লাল-সাদা কালিতে লিখা এই সুবিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের নাম পড়ছি।গেটের একেবারে মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে যাওয়া আসাকারী মানুষদের কাছে রিতীমতো ধাক্কাধাক্কির সম্মুখীন হচ্ছি আমি।একটা সময় আর দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব না টের পেরে সেখান থেকে আস্তে আস্তে পা-বাড়াই ভার্সিটির ভীতরের দিকে।বিশাল বড় ক্যাম্পাস। সবাই সেখানে বসে গ্রুপ বেধে নিজেদের মধ্যে পড়ার ব্যাপারে ডিসকাশন করতে ব্যস্ত । আমার ওরকম টাইপের কোনো গ্রুপ না থাকায় বসে পড়ি কাছেই পাশের কোনো এক কোণাতে ।এদিক ওদিক চোখ ঘুরিয়ে দেখতে থাকি পুরো ক্যাম্পাসটা।
.
হঠাৎ করেই চার চাকার একটা গাড়ি আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। একটা সাদা ইউনিফর্ম পড়া লোক গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে পিছনের দরজা খুলে দিলো। তার একটু পর কেউ একজন পেছনের দরজা থেকে নামলো ।সরি..কেউ একজন না....সাদা স্কার্ট পড়া একটি মেয়ে পেছনের দরজা থেকে ধীরে ধীরে নামতে লাগলো,সাথে কোর্ট -প্যান্ট পড়া মধ্যবয়সী একজন ভদ্রলোক। ভাবলাম... কোনো বড়লোক ফ্যামিলির আদুরে মেয়ে হয়তো এখানে অ্যাডমিশন নিতে এসেছে।
.
আমার বসার জায়গাটি থেকে মেয়েটির মাঝখানের দুরত্ব ছিলো মাত্র বিশ'হাত।বিনা কারণে আমি মেয়েটির মুখের দিকে কিছুক্ষণ যাবত অনরবরত তাকিয়ে ছিলাম।উহু....ভুল ভাবছেন...ক্রাশ-ট্রাশ খাইনি,চেহারাও খুব একটা ভালো লাগেনি.. ..তবুও কেন যেন মেয়েটার মুখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম।মেয়েটার চেহারার ভীতরে কেমন যেন একটা মায়া মায়া ভাব জুড়িয়ে আছে...কি নিষ্পাপ মেয়েটার চোখ দুটো!! পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সেই ভদ্রলোকটার সাথে দিব্যি হেসে হেসে কথা বলছে..হয়তো মেয়েটার বাবা হবে। আমার তখন মনে হচ্ছিলো এক দৌড়ে মেয়েটির কাছে যাই.... গিয়ে জিজ্ঞেস করি...এই মেয়ে কে তুমি হ্নম? নাম কি তোমার? এমন কি আছে তোমার চেহারার মাঝে যে আমি বার বার হারিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছি?আমাকে একটু দয়া করে বলবে ?
.
কিন্তু পরক্ষণই মনে হলো.."ধুর কি যাহ-তাহ ভাবছি, এখানে অ্যাডমিশন নিতে এসেছি, ভালো করে পড়াশোনা করতে এসেছি! !ভালো করে লিখাপড়াটা শেষ করলে এরকম মেয়ে এমনিই আমার পিছু পিছু ছুটবে,পথ আটকে আমার নাম জানতে চাইবে।আমাকে তখন আর কস্ট করে গিয়ে কারো নাম জিজ্ঞেস করতে যেতে হবেনা।তাছাড়া এরকম রিচ ফ্যামিলির মেয়েগুলো রীতিমতো খুব অহংকারী হয়,এদের ধারে কাছে থাকা,মেশা বা কথা বলাটা মোটেও উচিত নয়।এদের নাগাল থেকে যতটা দূরে থাকা যায় ততই আমার ভালো ।"(মেয়েটির চোখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে কথাগুলো ভাবছিলাম)
.
কিন্তু একটা সময়ে হঠাৎ করে মেয়েটির চোখ আমার চোখে পড়ে, আমি বিন্দুমাত্র দেরি না করে অন্যদিকে চোখ সরিয়ে নেই।হয়তো মেয়েটা ইতিমধ্যে বুঝতে পেরে গেছে আমি ও'র মুখের দিকে এতো সময় ধরে তাকিয়ে ছিলাম।এটা ভাবতেই ইতিমধ্যে মনের ভীতরে কেমন যেন একপ্রকার ভয় কাজ করা শুরু করে দিয়েছে।আজ বোধহয় আমার আর কোনো রক্ষা নেই।নিশ্চিত রুপে, প্রথম দিনেই ক্যাম্পাসের সবার সামনে অপমানিত হবো তাও আবার একটা মেয়ের দ্বারা.. ইশশ....কি লজ্জার ব্যাপার....! আমি আমার মনকে অপমানিত হবার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করি।কিন্তু না...!যা ভাবলাম তার কিছুই হলোনা!! আমার ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে মেয়েটা গটগট করে ওর বাবার সাথে আমাকে পাশ কাটিয়ে দিয়ে চলে গেল।যাওয়ার আগে আমাকে রাগী দৃষ্টিতে দেখে গেল।আমি কিছু মনে করলাম না।মেয়েটার জায়গায় অন্যকেউ হলে ঠিক এরকমটাই করতো।মনে মনে হাফ ছেড়ে বাচলাম।আল্লাহ আমাকে আজকে বাচিয়ে দিলো।
.
অবশেষে অ্যাডমিশন টেস্ট আরম্ভ হলো,
আমি আমার হলে গিয়ে বসে পড়লাম বাট আশ্চর্য হলাম মেয়েটিকে আমাদের হলে প্রবেশ করতে দেখে। তার চেয়ে আরো বেশি আশ্চর্য হলাম মেয়েটির সিট আমার সিট পাশাপাশি হওয়াতে ।নিজে কি খুশি হবো? নাকি লজ্জিত হবো? কিছুই বুঝতে পারছিলাম না..!এসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে.. নিজে যা পারি সেগুলো ভালো করে পরিক্ষার খাতাতে লিখে দিয়ে চলে আসলাম, আল্লাহ রহমতে টিকেও গেলাম।সেদিন আমার খুশির কোনো ঠিক ঠিকানা ছিলোনা।মনে মনে অনেক খুশি ছিলাম।কিন্তু পরক্ষণই মনে খেয়াল আসলো.."সাদা স্কার্ট পরা মেয়েটি টিকেছে তো?"পরে খোজ নিয়ে জানতে পারি সে'ও টিকেছে। আরো ডাবল-ট্রিপল খুশি হলাম।
.
.
প্রথম দিন,দ্বিতীয় দিন করতে করতে ভার্সিটিতে কয়েকটামাস কেটে গেলো....এরই মাঝে ক্লাসের সবার সাথেই মোটামোটিভাবে পরিচিত হলাম এমনকি সেই মেয়েটার সাথেও।নাম জিজ্ঞেস করাতে মেয়েটি বলেছিলো ওর নাম নীলা।ক্লাসের সবার মতো আমিও যেন ওকে এ নামেই ডাকি
.
.
আমি নীলার কাছে আর পাঁচটা নরমাল ফ্রেন্ডের মতো ছিলাম।বাহিরে ঘুরতে গেলে নীলা আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যেত.... এটার মানে আবার এই না যে আমার প্রতি নীলার কোনো ইন্টারেস্ট ছিলো।শুধু ঘোরার সময় টুকুতে কথা বলার সঙ্গী হিসেবে কেউ একজনের দরকার ছিলো।আর আমিই হয়তো ওর কাছে সেই সঙ্গীটা ছিলাম।কিন্তু আমার সাথে তো ওর হাই-হ্যালো টাইপের কোনো কথাই হতোনা।যতবারই নীলা আমার সাথে কথা বলতো... আমার মনে হতো মেয়েটা ওর সব পারসোনাল কথাগুলো আমার সাথে শেয়ার করছে।তাহলে আমি এই সম্পর্কটাকে "যাস্ট-ফ্রেন্ড "টাইপের রিলেশন কিভাবে মেনে নেই?কিন্ত ও তো আমাকে শুধু "যাস্টফ্রেন্ড -যাস্টফ্রেন্ড"বলেই চুপ করে দিতো।
.
আমিও কম না....রোজ আমি আমার মনকে একটা কথাই বোঝাতাম যে ও'কে ফ্রেন্ডের নজরে দেখ।কিন্তু ওর হাসিটা আমার মনকে এতোটা ঘায়েল করতো যে ....আমার মন থেকে শুধু একটা রিপ্লায়ই আসত...."Bro-Its impossible "সে যখন আসত তখন তার চেহারার সৌন্দর্য আমার চেহারাকে সুন্দর করে দিতো।সে না জানি পুরো দিন কিভাবে এতো "ফ্রেশ-ফ্রেশ"থাকতো, ওর সাথে থাকতে থাকতে আমাকেও তাজা-তাজা দেখাতো।
.
নীলা বসত তো ওর যাস্ট-ফ্রেন্ডের সাথেই কিন্তু আমি বসতাম আমার ক্রাশের সাথে।আমার মন ভীতরে ভীতরেই এক্সাইটমেন্টে লাফ দিয়ে উঠত কিন্তু ওর কাছে সেটার কোনো ইফেক্টই পড়তোনা।আমার বয়সের ছেলেদের তো সে ভাইয়া বলেই ডাকতো...আমিও তো ওদের মতো নীলার থেকে ১বছরের বড় ছিলাম!! তাহলে আমাকে কেন সে ভাইয়া না বলে আমার নাম ধরে ডাকতো?
.
যাইহোক না কেন..এই ফ্রেন্ড -ফ্রেন্ড এর ট্যাগের মধ্যে আমি খুশি ছিলামনা।প্রথমবার কোনো মেয়ে এতোটা ক্লোজ এসেছিলো।আমার মনে হয়েছিল 'এটাই সুযোগ'।
এরপর থেকে বুকে একটু সাহস করে আমি ওর সাথে হেলদি টাইপের ফ্লার্ট করতে থাকি।
অ্যান্ড গেস হোয়াট হ্যাপেন্ড?
সে রাগও করলোনা,তার কাছে অদ্ভুতও মনে হলোনা অ্যান্ড আমি ভাবলাম.."ফ্লার্ট টাতো কাজ করে গেলো!!"
সে এখন আমার কথায় অনেক বেশি হাসতো এমনকি আমাকে পাগলও বলতো যেটা 'যাস্ট-ফ্রেন্ড'এর লেভেলে আমার জন্য অনেক বড় সাকসেস ছিলো।
.
আমি চাইতাম সে'ও আমার মতো একইরকম ফিল করুক যেরকমটা আমি তার জন্য করি।ঈশ্বরের কাছে আমার যাস্ট এতটুকুই ইচ্ছে ছিলো।এখন আমি যখন ওর হাত ধরতাম তখন ওর কাছে ব্যাপারটা একটুও অদ্ভুত মনে হতোনা। আমার মনে এইটা খেয়াল আসতে লাগল যে... এখন আমি ওর কাছে যাস্ট-ফ্রেন্ড এর মতো তো একদমইনা।ভাবা শুরু করলাম..ওর মনের ভীতরেও আমার জন্য, আমাকে কিছু বলার জন্য কিছু একটাতো ফিল হচ্ছিল।এই একটা সাসপেন্সই আমার এক্সাইটমেন্ট সবসময় বাড়িয়ে রাখতো যে....কোনদিন আমার ক্রাশ আমার গার্লফ্রেন্ডে পরিণত হবে।
.
নীলা একদিন হুট করে আমাকে বলে উঠলো.."হৃদয় একটা নন-ভেজ 'জোক শুনাও তো।কথাটা শুনে বাহিরে বাহিরে আমি যতটা'না শরম পাচ্ছিলাম ভীতরে ভীতরে ঠিক ততটাই এক্সাইটেড হচ্ছিলাম এটা ভেবে যে কোন ভালো জোকসটা আমার ঠিক সেই মুহূর্তে মনে ছিলো।আমরা তখন সেই লেভেলে পৌছে গিয়েছিলাম যেখানে আমাদের কথাগুলো আর আগের মতো নরমাল ছিলোনা।এখন যদি আমি নীলার থেকে দূরে চলে যেতাম নীলা নিজেই আমার কাছে চলে আসতো।আর এখন কেউ কিভাবে এটা অস্বীকার করবে যে নীলার আমার উপর কোনো ইন্টারেস্ট ছিলো'না?
.
.
খুব তাড়াতাড়ি আমার আর নীলার ব্যাপারটা ভার্সিটির সবজায়গায় ছড়িয়ে পড়লো।অন্যদের চোখে তো আমরা দুজন "ইন-এ-রিলেশনশিপ"এই ছিলাম কিন্তু মেয়েটা ওর ঐ কথাতেই অটল....আমরা দুজন যাস্ট-ফ্রেন্ড।
না!!!এরকম'টাতো হতে পারেনা!!একসময় আমি নিজেই ব্যাপারটা নিয়ে অনেক ভাবলাম এবং উত্তর পেলাম..হয়তো সে রিলেশনশিপ টা অন্যদের জানাতে চাচ্ছেনা কিন্তু ভীতরে ভীতরে আমাকে চায়।
মেয়েদের ব্যাপারগুলো এমনিতেই আমার মাথার উপর দিক দিয়ে যায় তাই আমি ভাবলাম কেননা এই সম্পর্কটাকে "সিক্রেট -রিলেশনশিপ "নাম দেই!!কিন্তু আমি তো এখন অবধি আমার মনের কথাটাই ওকে বলিনি।
.
কি করবো বলুন?কোনো পারফেক্ট সময়ই খুজে পাইনি!!বাট এখন আমাদের ফ্রেন্ডশিপ টা এমন একটা পর্যায়ে এসে ঠেকেছিলো যেখানে আমার বিশ্বাস ছিলো যে আমি নীলাকে প্রপোজ করলে সে আমার প্রপোজাল মুহূর্তেই এক্সেপ্ট করবে।আমি সেই দিনগুলোতে অনেক খুশি খুশি থাকতাম,বিনা কারণে স্মাইল করতাম,সিরিয়াসলি এখন ওকে মন থেকে চাইতাম। নীলা আমাকে হিন্টস দিতো আর আমার কনফিডেন্স বেড়ে যেত।পুরো রাত আমি এটাই ভাবতে থাকতাম যে কালতো ওকে প্রপোজ করবোই করবো।
অবশেষে আমি নীলাকে প্রপোজ করার জন্য একটা ডেট ফিক্সড করলাম...যা হবে এই দিনেই হবে।এবং ফাইলানি খুব তাড়াতাড়ি সেই দিনটা এসে গেল!! কারণ আমার তো আর তরই সইছিলনা।
.
.
দুটো চকোলেট কিনে নিজের কাছে রেখে দিলাম ওকে দেয়ার জন্য।যদিও এই দুটো চকোলেট কিনতেই আমার পকেট প্রায় খালিই হয়ে গিয়েছিলো তবুও ইম্প্রেশন জমানোর জন্য এই দুটো চকোলেটই যথেষ্ট ছিল।
.
.
সারাদিন-রাত অনেক প্রাকটিস, অনেক রিহার্সেল করে,নিজের চুল গুলো ঠিকঠাক করে যাচ্ছিলামই নীলার কাছে কিন্তু নজর পড়লো অন্য কেউ ছিলো ওর সাথে।দেয়ালের কোনো এক কোনায় তারা দুজন দাঁড়িয়েছিল যেখানে দুটো মানুষের ঠিক করে দাড়ানোর জায়গাটুকুও ছিলোনা।।আমার বুকের ভীতরটা কেমন যেন ধুক করে উঠলো কিন্তু তবুও আমি আমার মনকে বুঝিয়ে বললাম.... নীলার কোনো ফ্রেন্ডও তো হতে পারে? এতোটাও কিসের জলদি এভাবে নিজের মনকে ভেঙ্গে ফেলার??আমি একটু কাছে গেলাম....একটা সাইডে লুকিয়ে ওদের দুজনের মাঝেকার কথা শোনার চেষ্টা করলাম,.... যে ছেলেটা নীলার পাশে ছিলো সে হয়তো নীলাকে ওর জন্মদিন উপলক্ষে কিছু একটা গিফট দিচ্ছিলো.. না... কিছু একটা না.. একটা বড় এক্সপেনসিভ গাড়ি।
.
আমার পকেটে রাখা চকলেট গুলো ইতিমধ্যে গলা শুরু করে দিয়েছিলো।কিন্তু চকোলেট গুলো যার কারণে গলছিলো সে তো অন্য কোথাও অন্য কারো সাথে দাঁড়িয়ে ছিলো।দুজনের কথা শুনে মনে হচ্ছিলো ওরা শুধু বন্ধু তো হতেই পারেনা কারণ ওদের সব কথাই রোমান্টিক টাইপের ছিলো!!আর কথায় কথায় 'বেবি-বেবি'বলছিলো।চোখে পানি নিয়ে আমি সেখান থেকে চলে আসলাম কারণ যার জন্য এসেছিলাম সে তো অন্য কারো সাথে গলা-মিলানোতে বিজি ছিলো। পকেটে রাখা চকলেট কখন গলে পানি হয়ে গেলো টেরই পেলামনা।শুধু এটাই টের পেলাম যে... এখন নীলার উপর আমার শুধুই আকর্ষন ছিলোনা,ভালোবেসে ফেলেছিলাম ওকে।
.
তখন আমার মনে এই লাইনগুলোই বার বার ঘুরপাক খাচ্ছিলো,
সেট লাইফ আপসেট হয়ে গেলো
চোখ টা পানিতে ভিজে গেলো
মেয়েটা আমার এতোটা ক্লোজ এসেও..
অন্য কারো জীবনে সেট হয়ে গেলো?
প্রথমবার লাইফে এতোটা খুশি আসতে নিচ্ছিলো কিন্তু আমার লাকটা হয়তো খারাপ ছিলো। মেয়েটা যেভাবে আমার সাথে চলতো, কথা বলতো আমার মনেই হতো সে আমার উপর ইন্টারেস্টেড।কিন্তু ভুল তো নীলার ছিলো...সে কখনো বলেইনি এগুলো তার কমিটিমেন্ট ছিলো।
.
মৃদ্যূ বাতাসে দাঁড়িয়ে আছি....মনে মনে ভাবছি.... আমি মেয়েটির কাছে হয়তো আর পাচটা যাস্ট ফেন্ডের মতোই ছিলাম!!ব্যাপার না বাকিদিনগুলোও না হয় যাস্ট-ফ্রেন্ড ই থেকে গেলাম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন