বৃহস্পতিবার, ২৪ মে, ২০১৮

"একটি মধ্যরাতের চিৎকার"

একটি নদী যখন মরা নদী হয়, 
তখন সেই নদী জেগে ওঠে মাঝরাতে।
একটি বাড়ি যখন পোড়া বাড়ি হয়,
তখন সেই বাড়িটি জেগে ওঠে মাঝরাতে।
অতৃপ্ত কোন কিছুর জেগে ওঠার সময় হলো মধ্যরাত।
সময়টা ছিলো শীতের শুরুর দিকে।
আমাদের বন্ধুমহলে সবাই ঘুরতে পছন্দ করে।
এমনি এক সময় আমাদের এক বন্ধু রনিদের বাড়িতে ঘুরতে যাওয়ার দাওয়াত পড়ে।
অথ্যাৎ আমি সহ আরো ২ বন্ধু মিলে বন্ধু রনিদের বাড়িতে বেড়াতে যাই।
রনি আমাদের স্টেশনে আনতে যায়।
আসার পথেই চায়ের দোকানে বসে এক পাক আড্ডা দিচ্ছিলাম।
ওই আড্ডায় রনি বলে, আমাদের সাথে নাকি তার একটা কথা শেয়ার করার আছে।
সে বলে,
প্রায় রাতে তার কোন একটা শব্দে ঘুম ভেঙে যায়।
কিন্তু সে এটা বুঝতে পারে না যে কিসের শব্দে তার ঘুম ভাঙে।
প্রায় সময় সে কিছু অদ্ভুত আওয়াজ শুনতে পায়।
তার নাম ধরে কেউ একজনের ডাকার শব্দ শুনতে পায়।
দরজায় তার নাম ধরে টোকা দেওয়ার আওয়াজ শুনতে পায়,
কিন্তু দরজা খুলে কাউকে পায় না।
সে প্রায় রাতে একটা স্বপ্ন দেখে,
গভির রাতে সে তাদের বাড়ির উঠানে দাড়িয়ে থাকে,
চারদিকে ভয়ংঙ্কর আওয়াজ শুনতে পায়, চারদিকে বাচার আত্মচিৎকার শুনতে পায়,
খুবই করুন গলায় সাহায্যের চিৎকার শুনতে পায়,
কান্নার আওয়াজ শুনতে পায়।
যখন তার ঘুম ভাঙে তখন তার চোখে পানি আর মনে ভয় দুটোই থাকে।
এই স্বপ্নের কোন উৎসই সে আজ পর্যন্ত পায় নি।
.
আমরা সব বন্ধুরা একটু অবাকই হই।
কেন না আমাদের বন্ধুর সাথে এমন জিনিস ঘটে, অথচ আমরা কিছুই জানতাম না।
আড্ডা শেষে সবাই বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই।
সাধারনত শীতকালে খুব দ্রুত সন্ধ্যা নামে।
আমরা একত্রেই হাটছিলাম।
সবারই রনির ঘটনা শুনে মনে ভয় ঢুকে যায়।
পথমধ্যেই মাগরিবের আযান শুনতে পাই।
ভয়ে ভয়ে সবাই কোন মতে রনিদের বাসা পর্যন্ত যাই।
আন্টি আমাদের দেখে খুব খুশি হন।
রনিরা ছিলো বংশগত ভাবেই সম্পদশালী।
আর রনিই ছিলো তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান।
আমাদের ঘরে নিয়ে আন্টি নাস্তার ব্যবস্থা করলেন।
আন্টির কাছে জানতে পারলাম আর দুইদিন পর রনির ২১তম জন্মদিন।
তখনই বন্ধুরা সবাই মিলে পরিকল্পনা করলাম বড় করে একটা অনুষ্ঠান করবো।
বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিতে দিতে কখন যে ১১ টা বেজে যায় বুঝতেই পারি নি।
সবাই খাওয়া দাওয়া করে রুমে চলে আসলাম।
চিন্তা করলাম আজ সারা রাত গল্প করে কাটাবো।
কেউ ঘুমাবো না।
.
যেই ভাবা সেই কাজ।
কিছুক্ষন গল্প করার পর রনি বললো ওর খুব ঘুম পাচ্ছে।
বালিশের সাথে মাথা লাগানোর সাথে রনি ঘুমিয়ে যায়।
আমরা বাকিরা আড্ডা দিতে থাকি।
আমাদের আড্ডার মাঝখানে এক বন্ধু খেয়াল করলো রনির চোখ দিয়ে রক্ত পড়ছে। 
৩ জনই খুব ভয় পেয়ে গেলাম।
বুঝতে পারলাম রনি আমাদের যেই স্বপ্নের কথা বলছিলো এখন ওই স্বপ্নই দেখতেছে।
এক বন্ধু দ্রুত রনিকে ডেকে ঘুম থেকে তুলে ফেলে।
রনির ঘুম ভাঙার পর ও খুব জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে।
হঠ্যাৎই কারেন্ট চলে যায়।
রুমের মধ্যে প্রচন্ড গরম বাতাস বইতে শুরু করে।
চারদিক শুধু অন্ধকার ছিলো।
এক বন্ধু মোবাইলে বাতি দিলো।
আমরা ৩ জনই ঠিক আছি, কিন্তু রনি রুমে নেই।
পুরো রুম ভালো করে খুজলাম, কিন্তু কোথাও পেলাম না।
তখনই ওর সেই স্বপ্নের কথা আমার মনে পড়ে গেলো।
ঘর থেকে একটা চার্জার লাইট নিয়ে ৩ জনই উঠানে বেরিয়ে পড়ি।
কেননা ও বলেছিলো স্বপ্নে ও ওদের উঠানের মাঝখানে দাড়িয়ে থাকে, 
চারদিকে নানান ধরনের আওয়াজ শুনতে পায়।
তাই দেরি না করে দ্রুতই উঠানে বেরিয়ে পড়ি।
সময় তখন রাত ৩ টার কাছাকাছি।
পুরো উঠান ভালো করে খুজে দেখলাম,
কোথাও রনিকে পেলাম না।
হঠ্যাং এক বন্ধু দেখতে পেলো উঠানের মাঝখানে বেলগাছ টার মাঝামাঝি জায়গায় রনি হাওয়ায় ভাসছে।
এই দৃশ্য দেখে ৩ জনই খুব ভয় পেয়ে যাই।
হঠ্যাৎ করেই ধপাস করে মাটিতে আছড়ে পড়লো।
পড়ার শব্দ শুনে ভয়ে ৩ জনই ভিতরের দিকে দৌড় দেই।
খেয়াল করে দেখি ওটা রনি।
ওকে ধরাধরি করে রুমে নিয়ে যাই।
আমাদের আওয়াজ শুনে আন্টির ঘুম ভেঙে যায়।
উনি দৌড়ে রুমে এসে রনির এই অবস্থা দেখে কাঁদতে শুরু করেন।
কোন রকমে আন্টিকে শান্ত করে রাতটা পার করলাম।
.
সকালে রনির জ্ঞান ফেরে।
ওকে সব জিজ্ঞেস করার পর ও সেই স্বপ্নের কথাই বলে।
বলে ও ঘুমিয়ে যাওয়ার পর সেই স্বপ্নটা দেখে,
এবং স্বাভাবিক ভাবেই নাকি সকালে ওর ঘুম ভাঙে।
বুঝতে পারলাম গত রাতের ব্যাপারে ও কিছুই জানে না।
তাই ওকে আর কিছুই বললাম না।
এই ব্যাপারে আন্টি আমাদের জিজ্ঞেস করলে ওনাকে সব খুলে বলি।
এরপর আন্টি মুখে কাপড় গুজে কাঁদতে শুরু করেন।
আন্টি বলেন, ওনিও এরকম প্রায় দিন ফজরের ওযু করতে বাহিরে গিয়ে দেখে রনি উঠানে পড়ে আছে।
রনিকে জিজ্ঞেস করলে সেই স্বপ্নের কথাই আন্টিকে বলে।
অথ্যাৎ রাতের ব্যাপারে ও কিচ্ছু জানে না।
তাই আন্টিও আগ বাড়িয়ে রাতের ব্যাপারটা ওকে বলে না।
বুঝতে পারলাম না রনির সাথে এসব কি হচ্ছে।
আন্টি নিজেও এখনো এর ব্যাখ্যা খুজে পান নি।
রনির সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা আমাদের কারো কাছেই সুবিধার মনে হয়নি।
সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম এর একটা বিহিত করবো।
সময় নষ্ট না করে ওকে সাথে নিয়ে এক পরিচিত কবিরাজের কাছে যাই।
রনিকে নিয়ে কবিরাজের সামনে বসা মাত্র ওনার চোখ মুখ কেমন যেনো অন্ধকার হয়ে যায়।
রনির সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনাই উনি বলে দেন।
রনিও এই প্রথম জানলো ওর সাথে রাতে কি কি ঘটে।
কবিরাজ আমাদের বলেন,
--তোমরা খুব দ্রুত এখান থেকে চলে যাও।(কবিরাজ)
--আমরা আপনার কাছে এর সমাধান খুজতে এসেছি। আমাদের খালি হাতে ফিরিয়ে দিবেন না প্লিজ।
--কোন সমাধানে কোন লাভ হবে না। ওর সামনে খুব বিপদ।
--একটা উপায় তো বলুন।
--একটা উপায় আছে। কিন্তু তোমাদের পক্ষে তা সম্ভব নয়।
সবাই মিলে অনেক অনুরোধ করার পর উনি একটা সমাধানের পথ দেখিয়ে দেন।
উনি একটা কাগজে কিছু লিখে সেটা রনির হাতে দেন।
.
রনিকে একটা কঠিন পরিক্ষা দিতে বলেন।
--আজ ঠিক মধ্যরাতে তুমি সেই পূর্বের স্বপ্নটা দেখবে।
কিন্তু আজ তুমি কোন মতেই ভয় পেতে পারবে না।
যে তোমায় এই স্বপ্ন দেখায় সে একটি প্রসিদ্ধ খারাপ জ্বীণ, সে আড়ালে লুকিয়ে থাকে।
কোন মতেই তার হাত থেকে তুমি বাচতে পারবে না, যদি না তুমি তাকে আড়াল থেকে বের করে আনতে না পারো।
--কিভাবে তাকে আড়াল থেকে বের করা যাবে?(রনি)
--তুমি যখন স্বপ্ন দেখো, তখন সে তোমাকে নানান ধরনের শব্দ করে ভয় দেখায়।
ওই স্বপ্নেই তোমাকে তার সাথে মোকাবেলা করতে হবে।
সে যখন আড়াল থেকে তোমাকে ভয় দেখাবে, তখন তোমাকেও কথা বলতে হবে।
তবে তা সাধারন কথা নয়।
তাকে উদ্দেশ্য করে কিছু উসকানি মুলক কথা বলতে হবে।
যাতে করে সে রেগে গিয়ে আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে।
তবে হ্যা, ও আড়াল থেকে বের হয়েই তোমার সামনে আসবে, এবং তোমাকে হত্যা করতে চাইবে।
তোমার আসল পরিক্ষাটা হবে এই জায়গায়, যখন সে আড়াল থেকে সরাসরি তোমার সামনে আসবে তখন তোমার ঘুম ভাঙতে হবে।
অথ্যাৎ তোমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলতে হবে।
দেরি হলে তুমি আর কোন দিন ঘুৃম থেকে উঠতে পারবে না।
ঘুমের মধ্যেই তুমি মারা যাবে।
আর যদি তাড়াতাড়ি জাগানো হয়, তাহলে তার পরের দিনই মধ্যরাতে তোমার নিশ্চিত মৃত্যু হবে।
--আমরা কিভাবে বুঝবো এটা?
--এটাও একটা পরিক্ষা, তোমাদের বুঝে নিতে হবে এবং সময় মতো ওকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলতে হবে।
--যদি সব ঠিকঠাক মতো হয় তাহলে কি হবে?(আমি)
--যদি সব ঠিকঠাক মতো হয় তাহলে আরো একটা পরিক্ষা দিতে হবে ওকে। তোমরা কেউ ওকে সাহায্য করতে পারবে না।
--কি পরিক্ষা?
--ওকে ঘুম থেকে জাগানোর পর এই কাগজটা ওর হাতে দিবা।
--তারপর?
--তুমি এই কাগজ নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়বে। এবং এই এলাকার যেই চার রাস্তার মোড় আছে সেখানে যেতে হবে।
মোড়ে দাড়িয়ে তুমি যেই রাস্তা দিয়ে গিয়েছো সেই রাস্তা ব্যতীত বাকি ৩ রাস্তার মধ্যে যেকোন একটা রাস্তা বেছে নিতে হবে।
এই জন্য তুমি একবারই সুযোগ পাবে।
.
এরপর ওই রাস্তার দিকে দশ কদম হাটবে।
যদি তোমার বেছে নেওয়া রাস্তা সঠিক হয় তাহলে দশ কদম শেষ হওয়ার আগেই সে চলে আসবে।
--কে আসবে?
--চারটা নেকড়ে একটা পালকির মতো গাড়ি টেনে এনে তোমার সামনে দাড়াবে।
তারপর তোমাকে এই কাগজটা ওই গাড়ির ভিতরে ছুড়ে মারতে হবে। তবে গাড়িটি ভুলেও স্পর্শ করা যাবে না এবং কাগজটাও খুলে পড়তে পারবে না।
তোমার কাজ শেষ করে সোজা বাড়ি চলে আসবে।
যদি কিছু ভুল হয় তাহলে কিছুই করার নাই।
আর যদি সব কাজ ভালোয় ভালোয় শেষ করতে পারো তাহলে ফজরের ঠিক একটু আগে তোমার দরজায় টোকা পড়বে। দরজা খুলে তুমি একটা মরা সাপ পাবে।
ফজরের আাযানের পর পরই তোমাকে ওই সাপটা নিয়ে একটা গোরস্থানে কবর দিয়ে আসতে হবে।
--তারপর?
--আপাতত এতো টুকুই করো। এখন তোমরা যাও।
--আচ্ছা, এই জ্বীণ টা কেনই বা রনির ক্ষতি করছে?
--এখন এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
সবাই খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম।
রনিকে খুবই কঠিন এবং অদ্ভুত পরিক্ষার সম্মুখীন হতে হবে।
সেই সাথে আমাদের ও।
রনিকে নিয়ে সোজা বাসায় চলে আসি।
এটা শুধু রনির জন্য নয়, আমাদের জন্যও খুব বড় পরিক্ষা।
সময় মতো রনিকে তুলতে না পারলে আরো বড় বিপদ।
.
বাড়িতে আসতেই আন্টি জিজ্ঞেস করেন,
--কোথায় গিয়েছিলে তোমরা?
--ওকে নিয়ে এক কবিরাজের কাছে গিয়েছিলাম।
--কি বললো?
--কিছু না আন্টি, ছোট্ট একটা সমস্যা, আল্লাহ ভরসা, সব ঠিক হয়ে যাবে।
--তাই যেনো হয় বাবা, তোমরা ঘরে গিয়ে বিশ্রাম নাও, আমি খাবারের ব্যবস্থা করছি।
রনিকে নিয়ে ঘরে এসে বসি।
কবিরাজের কথা গুলো শুনার পর থেকেই ও কেমন যেনো হয়ে গেছে।
কারো সাথে কথা বলছে না।
মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে অনেক ভয়ে আছে।
ওকে সান্তনা দেওয়া ছাড়া আর কিছুই যে করা সম্ভব না।
হঠ্যাৎই আমাকে জড়িয়ে ধরে ও কেঁদে দেয়।
আমিও আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না।
সব বন্ধুরা একে অন্যকে ধরে কাঁদতে থাকি।
আল্লাহ সহায় থাকলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
এখন শুধু রাতের অপেক্ষায়।
রাত তখন প্রায় ১১,৩০ হবে, কিছুতেই রনির ঘুম আসছিলো না।
উপায় না পেয়ে ওকে ঘুমের ঔষধ খাওয়ানো হয়।
সবশেষে ১২:২০ মিনিটে ওর ঘুম আসে।
আর আমরা বাকিরা ওর পাশে বসে থাকি।
অনেকক্ষণ বসে থাকার পরও কিছু বুঝতে পারছিলাম না।
প্রায় রাত ২:১০ মিনিটে দেখি রনির চোখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিলো।
এটা বুঝতে পারলাম যে ও এখন স্বপ্ন দেখছে।
কোন কিছু করার আগেই কারেন্ট চলে যায়।
আবার ও আগের মতো অবস্থা।
কোথাও ওকে খুজে পাচ্ছিলাম না।
অনেকক্ষণ পর ওকে ওদের পুকুরের ঘাটে পাওয়া যায়।
কিন্তু কিছুতেই ওকে জাগাতে পারছিলাম না।
চোখে পানির ছিটা দিলাম, অনেক ধাক্কা দিলাম, তবু কাজ হচ্ছিলো না।
কোন উপায় না পেয়ে ওকে পানিতে ফেলে দেই।
২-৩ সেকেন্ড পরই ও লাফ দিয়ে উঠে যায়।
উঠেই আমাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার দিতে থাকে,
--দোস্ত আমাকে বাঁচা, আমাকে বাঁচা।
--চিন্তা করিস না, সব ঠিক আছে, ওটা কি আড়াল থেকে বের হইছে?
--হ্যা, আর একটু হলেই আমাকে মেরে ফেলছিলো।
--তাহলে আর দেরি করিস না, এই নে কাগজ, চার রাস্তার মাথায় চলে যা।
--এতো রাতে কিভাবে ওখানে যাবো? আমার ভয় করছে। তোরাও আমার সাথে চল।
--না না, আমরা কিভাবে যাবো? আমাদের যাওয়া বারন আছে। তোকে একাই যেতে হবে। মনে সাহস রাখ।
--আমি পারবো তো?
--ইনশাআল্লাহ, তুই পারবি, তোকে পারতেই হবে। যলদি যা।
--আচ্ছা।
.
রনিকে পাঠিয়ে দিয়ে ওর আসার অপেক্ষায় আমরা বাসায় বসে রইলাম।
সবার মনে একটাই ভয়, ও পারবে তো?
অনেকক্ষণ পর রনি বাসায় এলো।
ওর ও পুরো মুখে চিন্তার ছাপ।
--কিরে? কি হলো?
--(চুপ)
--সব ঠিক আছেতো?
--হুম।
--যেই রাস্তা বেছে নিছিস, ওটা কি সঠিক ছিলো?
--হুম।
সবাই একটু সস্তিতে নিশ্বাস নিলাম।
--তোকে এতো চিন্তিত দেখাচ্ছে কেনো?
--সব ভালোয় ভালোয় হবে তো?
--তুই কিচ্ছু চিন্তা করিস না, সব ঠিক হয়ে যাবে।
--তাই যেনো হয়।
--স্বপ্নে কি হয়েছিলোরে?
--আর একটু হলেই আমায় মেরে ফেলছিলো,
--কেনো? কি হয়েছে?
--ও যখন আমাকে ভয় দেখাচ্ছিলো, তখন আমি বলেছিলাম, 'তোমার মতো কাপুরুষই আড়ালে থেকে অন্যের ক্ষতি করে, সাহস থাকে তো সামনে এসো' তবু কাজ হলো না।
আবার বলি 'আমাকে যখন এতোই ভয় পাও, তখন ক্ষতি করছো কেনো?' এরপর চারদিক নিস্তব্ধ হয়ে যায়। 'তোমাকে এখন সামনে পেলে কঠিন সাজা দিতাম, লুকিয়েই থাকো, এতে তোমারই মঙ্গল, ভীতু কোথাকার। সামনে পেলে তোমাকে মেরেই ফেলবো' তখনি কে যেনো আমার মাথায় সজোরে আঘাত করে। মাথা তুলে দেখি মানুষ আকৃতি কিন্তু অনেক বড় শরীর, অনেক লম্বা। 
হঠ্যাৎ আমার গলা চেপে ধরে, আমি নিশ্বাস নিতে পারছিলাম না, ঠিক তখনি ঘুম ভেঙে যায়।
--আল্লাহর রহমতে তাহলে ঠিক মতোই জাগাতে পেরেছিলাম। তবে বোধয় নাক চেপে ধরলেও হতো, পানিতে ফেলা ঠিক হয় নি।
--যাই হোক, এখন এসব কথা থাক।
--চার রাস্তার মাথায় কি হয়েছিলো রে?
--বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর কিছুদুর গেলে শুনতে পাই তোরা আমায় ডাকছিস, বলছিস না যেতে, কিন্তু তোদের দেখতে পাচ্ছিলাম না।
তখনি মাথায় এলো, তোরাই আমাকে জোর করে পাঠাইছিস, এবং তোরা কেউ আসতে চাচ্ছিলি না। এখন আবার সব উল্টা করছিস, বুঝলাম এটা স্বাভাবিক কিছু নয়। দ্রুত চার রাস্তার মোড়ে চলে যাই।
চারদিকে শুনশান নিরবতা। আল্লাহর নাম নিয়ে কোন কিছু না ভেবে ডান দিকের রাস্তায় পা বাড়াই।
৬ কদম যাওয়ার পরই একটা ভয়ংকর শব্দ শুনতে পাই।
সামনে তাকিয়ে দেখি একটা আলোর রেখা এসে আমার সামনে দাড়ালো।
হঠ্যাৎ সেই রেখাটা অন্য রুপ ধারণ করলো।
রেখাটা আমার সামনে ৪ টা নেকড়ে ও একটা পালকিতে রুপান্তরিত হলো।
প্রথম বার ভয় পেলেও পরে কবিরাজের কথা মনে পড়ে।
তাই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে রাখি।
কবিরাজের কথা মতো চিঠিটা পালকির দরজা দিয়ে ভিতরে রেখে দেই।
সাথে সাথে সব আবার ওই আলোর রেখায় পরিনত হয়।
এবং শুন্যে মিলিয়ে যায়।
--দোস্ত, চিন্তা করিস না, সব ঠিক হয়ে যাবে।
--দোয়া কর দোস্ত।
.
সবাই একসাথে দরজা লাগিয়ে বসে রইলাম।
আস্তে আস্তে সময় চলে যাচ্ছে কিন্তু দরজায় নক হচ্ছে না।
সবাই খুবই চিন্তায় পড়ে গেলাম।
যদি দরজায় নক না হয় তাহলে সব শেষ।
একটু পর দুরের কোন এক মসজিদের আযানের ধ্বনি কানে বাজলো।
কবিরাজ বলেছিলো যদি সব ঠিক মতো হয় তাহলে আযানের আগেই দরজায় টোকা পড়বে।
তাহলে কি আমরা কোথাও ভুল করে ফেললাম?
রনি কেমন যেনো হয়ে গেলো, ওর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
আস্তে আস্তে চারপাশের মসজিদ গুলোতে আযান দিতে শুরু করে।
কিন্তু কোন ধরনের আওয়াজ দরজায় শোনা গেলো না।
রনি আমাদের জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলো।
ওই মুহুর্তে শান্তনা দেওয়া ছাড়া আর কিছুই যে করতে পারছিলাম না।
চারদিকে আযান শেষ হয়ে নিস্তব্ধ হয়ে যায়।
সবাই মসজিদে যাওয়ার জন্য তৈরী হলাম।
হঠ্যাৎই দরজায় ধুম ধাম শব্দ শুরু হলো।
সবাই খুবই ভয় পেয়ে যাই।
ভয়ে ভয়ে ৪ জনই একসাথে থেকে দরজাটা খুলি।
.
একটা কালো কুচকুচে রংয়ের সাপ দরজার কাছে পড়ে রইলো।
এক পলক তাকিয়ে দেখি রনির মুখে হাসি ফুটে এলো।
বাহিরে আস্তে আস্তে আলো ফুটতে শুরু করলো, 
আর দেরি না করে সবাই একসাথে গিয়ে একটা গোরস্থানে কবর দিয়ে এলাম।
নামাজ পড়ে সবাই মন ভরে আল্লাহর নিকট শুকরিয়া আদায় করলাম।
রনি যেনো সস্থির নিশ্বাস ফিরে পেলো।
একটু বেলা হওয়ার পর সবাই মিলে ওই কবিরাজের কাছে যাই।
কবিরাজ সব শুনে পুরো অবাক হয়ে গেলো।
তার শুধু একটাই কথা, "কিভাবে পারলে তোমরা"
তিনি আরো বলেন,
.
--তোমাদের উপর আল্লাহর রহমত ছিলো, নাহলে এটা প্রায় অসম্ভবই।
--আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, আমাদের সাহায্য করার জন্য। আমাদের একটা কথা বলবেন?
--কি কথা?
--কি লেখা ছিলো ওই চিরকুট টা তে? আর কাকেই বা আমি চিঠিটা দিলাম?(রনি)
--চিরকুটে কি লেখা ছিলো তা জেনে তোমার লাভ নেই। 
--আচ্ছা এটা করে কি হলো তা কি জানতে পারি? (আমি)
--অবশ্যই, ওটা একটা প্রসিদ্ধ খারাপ জ্বীণ ছিলো। এই জ্বীণ টা অধিক ক্ষমতার অধিকারি ছিলো। ওটাকে প্রথমে আড়াল থেকে বের করার কারন হলো, ওটা আড়ালে থাকলে ওটাকে মারা কোন ভাবেই সম্ভব ছিলো না।
--মানে? জ্বীণটা কি মারা গেছে?(রনি)
--হুম।
--কিভাবে?(রনি)
--তুমি যেই পালকিতে চিরকুট টা রেখেছিলে সেটা কোন সাধারন পালকি নয়। ওই পালকিতে ছিলো জ্বীণের বাদশাহ। আর তোমরা যেই মরা সাপটি কবর দিয়েছিলে সেটাই ছিলো সেই খারাপ জ্বীণটা।
--সত্যি? কিন্তু এতো দেরি করে দরজায় নক হলো যে।?(আমি)
--ওই যে বললাম, এটা একটা ক্ষমতাশীল জ্বীণ, সময়তো একটু লাগবেই।
--আচ্ছা, জ্বীণটা কবে থেকে ওর পিছু নিয়েছে?(আমি)
--জন্ম থেকে।
--মানে?(রনি)
--তুমি জন্ম থেকেই কালো যাদুতে আক্রান্ত, তোমার উপর কেউ কালো যাদু করেছিলো, অথ্যাৎ এই জ্বীণটাকে তোমার পাহারায় রেখেছিলো। যখনি তোমার বয়স ২১ পূর্ণ হবে, তখনই তোমাকে মেরে ফেলা হবে। যদি তুমি আজ ব্যর্থ হতে তাহলে কাল তোমায় মরতে হতো।
--কি বলছেন এসব? কে আমার এমন ক্ষতি করতে চাইবে?(রনি) 
--এটা তোমার কোন এক কাছের মানুষ করেছে। বলতে পারো সম্পত্তির জন্যই এটা করা হয়েছে।
--কে সে?
--সেটা আমি বলতে পারবো না।
.
উনি আর কিছুই বলেননি।
ওখান থেকে সোজা বাসায় চলে আসি।
আগামী কালই রনির ২১ তম জন্মদিন।
জন্মদিনটাতে গরিব মিসকিনদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।
এই দিনটা অন্যরকমই হতে পারতো।
কিন্তু আল্লাহর রহমতে সব ঠিকই আছে।
ভালো ভাবেই সবাই ওর জন্মদিনটা পালন করলাম।
কিন্তু রনির মনে একটাই ভাবনা, কে এই কাছের মানুষ? যে এই সম্পত্তির জন্য এতো বড় খারাপ কাজটা করতেও পিছ পা হয়নি।
কে সে??
প্রশ্নটা রয়েই গেলো।

বুধবার, ২৩ মে, ২০১৮

√বৃষ্টি ভেজা ভালবাসা√

ঝির ঝির করে বৃষ্টি পড়ছে।এ বৃষ্টি
কখন
থামবে কে জানে।সন্ধ্যা ঘনিয়ে
আসছে।
একটু পর পাশে এলো একটা মেয়েটা।
আমার পাশে দাঁড়াতেই একধরনের
কেমন যেনো লাগল আমার।
.
কারন কখনও কোনো মেয়ে আমার
পাশে দাড়ায় নি।।আর জীবনে
প্রেম ও করতে পারলাম না।
মেয়েটার কে আমি চিনি। নাম
বৃষ্টি। আর আমার সাথে ই পড়ে।
দেখতে একদম স্বর্গের অপ্সরির
মতো।
.
এটা সত্যি নাকি মিথ্যা
ভাবতেছি কখনও তো পাশে কেউ
দড়ালো না।
.
হঠাৎই মেয়েটির কথা শুনে অবাক
হলাম কারন মেয়েটি কে আগেও
অনেক বার দেখেছি কিন্তু কথা
বলে নি।
কিন্তু একটু পরে যা হলো আমি
নিজেই বিশ্সাস করতে পারলাম
না।
.
বৃষ্টি : আজকের ওয়েদারটা খুব সুন্দর
না?
আমি : জী, আমাকে বলছেন ?
বৃষ্টি : আপনি ছাড়া কেউ আছে
নাকি এখানে?
আমি : হঠাৎ করেই হৃদস্পন্দনটা
বেড়ে গেছে।তবু নিজেকে যথেষ্ট
স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে
বললাম "তা
অবশ্য ঠিক।হ্যাঁ খুব সুন্দর লাগছে
আমি : অতটা খারাপ ও লাগে না।
বৃষ্টি : বৃষ্টিতে ভিজেছেন কখনো?
আমি : না।
বৃষ্টি : ওমা!সেকি! বৃষ্টিতে
ভিজেননি কখনো আর ফুটবল
খেলেননি কখনো বৃষ্টিতে?
আমি : না।খেলিনি।
বৃষ্টি : আচ্ছা আপনি এরকম কেন?
আমিই
বক বক করছি।
আমি : আসলে কি বলব বুঝতে
পারছিনা।
বৃষ্টি : আমাকে কোথাও দেখলে
থমকে দাঁড়ান? তখন বলতে ইচ্ছা করে
কিছু ????
আমি : না মানে...
বৃষ্টি : শুনুন আমি আপনার মত গাধা
না।একটা মেয়ে ঠিক বুঝতে পারি
কি বলতে চান।
আমি : তুমি খুব সুন্দর কথা বল তো।
বৃষ্টি : তুমি? আপনি থেকে তুমি হয়ে
গেলো?
আমি : ও সরি।কিছু মনে করবেন না।
বৃষ্টি : বলতে হবে না সরি।একটা
রিক্সা ঠিক করে দিনতো।
আমি : এতো বৃষ্টি তে রিক্সা
খালি নেই তো।
বৃষ্টি : রিক্সা খালি নেই তা
আমিও দেখতে পাচ্ছি।সে জন্যই
আপনাকে বলছি।
আমি : আমি ছাতা আনিনি।
বৃষ্টি : বৃষ্টিতে ভিজেই গিয়েই
খুজেন।
আমি : আচ্ছা যাচ্ছি।
.
অনেক ঘুরে একটা রিক্সা পেলাম।
তারপর রিক্সাটা নিয়ে আসলাম।
তারপর সে উঠে গেলো। আর আমি
বৃষ্টিতে ভিজতেছিলাম।
.
কিছু দুর যাওয়ার পর আবার আমাকে
ডাক দিয়ে বললো।
বৃষ্টি : একা একা আর ভিজতে হবে
না।
আমি : তাহলে নেমে আসুন। এক
সাথে ভিজব।
বৃষ্টি : আজ আর দরকার নেই।
.
হটাৎ আমার হাতটা টান দিয়ে
রিক্সায় উঠালো । দুজন এক সাথে
রিক্সায় আছি। তখন সে(বৃষ্টি)
রিক্সার ক্যাপটা লাগিয়ে
দিচ্ছিলো। আমি বললাম থাকনা এক
সাথে ভিজব রিক্সাতেই।
.
তখন সে(বৃষ্টি) আমার হাতটা চেপে
ধরে বললো,,,,
বৃষ্টি : আজকে এই মুহুর্তে কিছু বলতে
ইচ্ছা হয় আমাকে যা প্রতিদিন
বলতে চাও ???
আমি : হুম হয়তো।
বৃষ্টি : তাহলে বলো প্লিজ।
অপেক্ষার প্রহর শেষ করো।
আমি : আমি তোমাকে খুব
ভালবাসি।
বৃষ্টি : আমি তোমাকে খুব খুব
ভালবাসি বোকাটা।(কান্নার
স্বরে)
.
আজকের বৃষ্টিটা সত্তি আমার জন্য
খুব লাকি। তাই তো রিম ঝিম বৃষ্টির
মাঝে আমার বৃষ্টি কে পেয়ে
গেলাম।
.
তাই। মনে মনে ইস্বর কে
ধন্যবাদ জানাতে থাকলাম। সে
পারে না এমন কোনো কাজ নেই।
.
আমি আমার বৃষ্টি কে পেয়ে সত্তি
খুব খুশী। সে আমাকে খুব শাসন করে।
অাবার ভাল বাসে। সে আমাকে
খুব চেন্জ করে ফেলেছে আমার
মায়ের মতো শাসন করে।
.
একদিন ছাদে দাড়িয়ে একা বৃষ্টি
তে ভিজতে ছিলাম। আমার
জানটাকে ফোন দিয়ে বললাম "আই
লাভ ইউ বৃষ্টি।আই রিয়েলি লাভ ইউ।
আই লাভ ইউ ফরইভার। আমি
তোমাকে সারা জীবন চাই।
তোমাকে খুব খুব ভাল বাসতে চাই ।
তোমার এই পাগলটা তোমাকে খুব
ভালবাসে।"
কিন্তু লক্ষী জানটা আমাকে
ভালবেসে বললো,,,,,,,,,,, ,,,,,
বৃষ্টি : আর ভিজতে হবে না ঠান্ডা
লাগবে তো। জান আর ভিজতে হবে
না তোমার বৃষ্টি তোমার কাছে
আছে তো।যাও ফ্রেস হয়ে আমাকে
ফোন দিবা। এই বৃষ্টির প্রতিটি
মুহুর্তে তোমার সাথে কথা বলবো।
আমি : আই লাভ ইউ জান।
বৃষ্টি : ওকে যাও। আই লাভ ইউ টু।
এখন
যাও।
=========
তোমার চলে যাওয়ার কথা ছিলো "
" তুমি চলে গেছো "
আমার হারানোর কথা ছিলো "
" আমি হারিয়েছি "
কিন্তু পার্থক্য শুধু এইটুকু...
আমাকে ভালোবেসে তুমি
অল্প একটু সময় হারিয়েছো "
" আর এই অল্প সময়ে আমি "
" আমার পুরা জীবনটাকে হারিয়ে ফেলেছি......!!

বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০১৮

অপেক্ষা

প্রায় ছয় বছর ধরে তোমার সাথে কথা বলতেছি কিন্তু কি পোড়া কপাল আমার এই ছয় বছরে তোমার হাতের আঙ্গুলটা পর্যন্ত দেখতে পেলাম না। আচ্ছা জেরিন আমরা কি আজীবন এভাবে অদৃশ্য থেকেই কথা বলবো নাকি সামনাসামনি এসে,পাশাপাশি বসে হাতেহাত রেখে কথা বলবো। তোমার কি একটি বারের জন্য আমার কাছে আসতে মন চায়না। মন চায়না আমার ভালোবাসার আলতো ছোঁয়া পেতে। আমার ঘামে ভেজা শার্টটার গন্ধ শুকে দেখতে।
রোহান এভাবে বলছো কেন?আমারো ইচ্ছে করে তোমার কাছে আসতে। ইচ্ছে করে সব কিছু ছেড়ে,সব বাধা পেরিয়ে ছুটে চলে আসি কিন্তু কি করবো বলো বাস্তবতা যে অনেক কঠিন।
জেরিন আর কতদিন তোমাকে ছাড়া আমার কাটাতে হবে? আমি যে আর পারছি না,আর কত সময় পর তুমি আমার হবে।আমি আর কত অপেক্ষা করবো বলো?আমি যে আর পারছি না
রোহান আমিও তোমাকে ছেড়ে থাকতে চাই না,থাকতে পারিনা। কিন্তু জোর করে তোমাকে ছেড়ে থাকতে হয়,আমাদের ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবে একটু অপেক্ষা করো। জানো রোহান আমার খুব ইচ্ছে করে তোমার সাথে গোধুলী বিকেলে হাত ধরে হাটতে, তোমার কোলে মাথা রাখতে। আরো ইচ্ছে করে তোমার সাথে রাস্তা দাঁড়িয়ে বেশি করে টক দিয়ে ফুসকা চটপটি খেতে।
জেরিন আমারো তো ইচ্ছে করে। জানো জেরিন যখন দেখি রাস্তায় একজোড়া কাপল হাত ধরে হাটতেছে কিংবা হুড তোলা রিক্সায় পাশাপাশি বসে কোথাও যাচ্ছে তখন তোমাকে ভেবে অঝোর ধারায় অশ্রু চলে আসে। নিজেকে আর সামলে রাখতে পারিনা। তাইতো অফিস থেকে ফিরেই ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে চুপটি মেরে বসে থাকি আর আনমনা হয়ে তোমাকে ভাবি।
রোহান একটু অপেক্ষা করো,আর খুব বেশিদিন নয়। আমি আসবো তোমার কাছে আসবো।
জেরিন তুমি এত নিষ্ঠুর কেন,কেমন করে আমাকে ছাড়া থাকো। আমার ছবিও তুমি দেখতে চাওনা।এমন প্রতিজ্ঞা করার কি দরকার ছিলো বলো। আমরাতো দুজন দুজনার ছবি দেখতে পারতাম ইচ্ছে হলেই। কিন্তু তুমি সামনাসামনি ছাড়া আর কিছু করতে চাওনা। দাওনা তোমার একটা ছবি,খুব দেখতে ইচ্ছে করতেছে।
রোহান একটু অপেক্ষা করো,আমার ছবি নয় তুমি আমাকে সামনে বসে খুব কাছ থেকে দেখতে পাবে। নববধূ সাঁজে লাল বেনারসি পড়ে ঘোমটা মাথায় দিয়ে, মেহেদি পরে দুহাত লাল করে তোমার সামনে আসবো।সেদিন মন ভরে আমায় দেখো। তার আগে নয়।
জেরিন তুমি অনেক নিষ্ঠুর, অনেক পাষাণী তুই। আমি তো তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারিনা। তুমি কেমনে পারো?
রোহান দয়া করে এভাবে বলো না। আমি আসবো, কথা দিচ্ছি তোমার ঘরেই আগে আসবো। তারপর সুখের সংসার গোছাবো দুজন মিলে। রোহান আজকে রাখি, পরে কথা বলবো। বলেই কলটা কেটে দেয় জেরিন।
পনেরো দিন পার হয়ে যায়,জেরিনের কোন খোঁজ নেই। রোহান বার বার চেষ্টা করতে থাকে কিন্তু মোবাইলের সুইস বন্ধ। রোহান পাগলের মতো হয়ে যায়। কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। দিনরাত না ঘুমিয়ে পার হয় রোহানের।
ষোলতম দিনে হঠাৎ করেই বাংলাদেশি এক নাম্বার থেকে কল আসে রোহানের মোবাইলে।কলটা রিসিভ করা মাত্রই সেই পরিচিতি কণ্ঠ, সেই চেনা সুর কানে ভেসে আসে। মোবাইলের ওপাশ থেকে বলতে থাকে আমি সেই পুরোনো যায়গাটায় দাঁড়িয়ে আছি যে যায়গাটা তোমার খুব পছন্দের। তাড়াতাড়ি করে আসো, আমি অপেক্ষায় রইলাম।
কোন কিছু না ভেবে, যে পোশাক পরা ছিলো সে অবস্থাতে রোহান বাসা থেকে বের হয়। বাসা থেকে বের হয়ে রিক্সা করে সেই প্রিয় যায়গায় হাজির হয়। যাওয়ার পথে একটা গোলাপের তোড়া কিনে নেয়।
গোলাপের তোড়া হাতে চারদিকে খুঁজতে থাকে রোহান কিন্তু কোথাও কেউ নেই। প্রায় পনেরো মিনিট পার হয়ে যায়,বিরক্তি চলে আসে রোহানের। রাগ করে ফুলের তোড়াটা মাটিতে ফেলবে ঠিক তখনি একটা ছেলে সহ জেরিন সামনে এসে হাজির হয়। রোহান অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে জেরিনের দিকে। কিছুসময় পর রোহান ফুলের তোড়াটা জেরিনের হাতে দিতে চাইলে সাথে আসা ছেলেটাকে দেখিয়ে জেরিন বলে উঠে আমার স্বামী। আমরা দুজন তোমার সাথে দেখা করতে আসছি। রোহান কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না। রোহানের মুখের ভাষা যেন হারিয়ে যায়। রোহানের শরীর কাঁপতে শুরু করে, কোনরকম নিজেকে সামলিয়ে রোহান বলে উঠে তোমাদের দুজনের জন্য আমার ছোট্ট উপহার। উপহারটা হাতে দিয়ে রোহান চলতে শুরু করে। জেরিন পিছন দিক থেকে ডাকলে রোহান না ফিরে সামনে চলে যায়। জেরিন দৌড়ে গিয়ে রোহানের সামনে দাঁড়ায়। তারপর হাতে থাকা গোলাপ দিয়ে বলে উঠে ভালোবাসি তোমাকে। রোহানের চোখ কপালে উঠে যায়। জেরিনের সাথে আসা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকে রোহান।তারপর ছেলেটা মাথা নাড়িয়ে বলে উঠে জেরিন আপনাকে ভালোবাসে। আমি শুধু এমনি এসেছিলাম তার সাথে বলে ছেলেটা চলে যায়। প্রায় ছয় বছর পর তাদের দ্বিতীয় দেখা হয়। এরপর তারা আজীবন দেখা করার সিদ্ধান্ত নেয়।