শুক্রবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১৭

বাল্যবিবাহ

বিয়েটা এমনিতেই অনেক বড় দ্বায়িত্বের বিষয়। প্রাপ্ত বয়স্করাও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বসে। নতুন একটা পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়। মেয়েদের শ্বশুর বাড়িটাকে নিজের মতো করে সব কিছু করে নিতে হয়। সবকিছুর একটা সঠিক সময় আছে।
.
সবকিছুর জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকার একটা ব্যাপার আছে। আর বিয়ের জন্য পুরোপুরি। যেহেতু বিয়ে সেহেতু মানসিক আর শারীরিক দুজায়গাই প্রস্তুত থাকতে হয়। আর সেখানে প্রাপ্ত বয়স্ক না হলে কিভাবে হয়?
.
ক্লাস সিক্স থেকে সেভেনে উঠতেই দিয়ে দিলেন বিয়ে। শরীর সাস্থ বড়সড় হলেই হয়না। অনেক গার্ডিয়ান'রা এ কাজটা করে। স্বাভাবিকভাবে মেয়েরা বেড়ে উঠে ছেলেদের থেকে একটু আগ করে।
.
সিক্স সেভেন কিংবা এইটে উঠতেই হয়তো শরীর সাস্থ ঠিক হয়ে যায়। আরে বোকা গার্ডিয়ান'রা এটা চিন্তা করেনা মন মানসিকতারও একটা ব্যাপার আছে। যে সময়ে তাঁর দুনিয়া সম্পর্কে আরো জ্ঞান অর্জন করার কথা সে সময়ে সংসার সামলাতে হয়!
.
বাল্যবিবাহ'র কারনেই বেশি মায়েদের সমস্যা হয়। একটা বাচ্চা কি করে আরেকটা বাচ্চা সামলাবে? এ জন্য সিজার বা ইত্যাদি সমস্যার জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত পরলোকগমন করতে হয়। হয় বাচ্চা বাঁচে মা মরে নাহয় মা বাঁচে বাচ্চা মরে। দুটোই কষ্ট দ্বায়ক।
.
খুব স্বাভাবিক প্রাপ্তবয়সে বিয়ে হলে ছেলে মেয়ে উভয়দিক থেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়না। আর বাল্যবিবাহ হলে সমস্যা তো খুব স্বাভাবিক বিষয়।
.
মা হওয়ার যন্ত্রণা বাচ্চামেয়ের সহ্য করতে হয়। অনেক বিয়ে এর জন্য বিচ্ছেদ পর্যন্তও পৌঁছিয়েছে। বিষয়টা হচ্ছে এমন ক্লাস ফাইবের ছাত্রীকে দিচ্ছেন ক্লাস নাইনের বই সামলাতে।
.
যেখানে সে একদমই জ্ঞানহীন। আধুনিক মেয়েরা যতই আধুনিক হোক না কেন বিয়ের চাপড়া সহ্য করতে কষ্ট হয়ই। সময়ের সাথে সাথে মেয়েটা অনেক কিছু আগে শিখতো তাঁর পর নাহয় নিতো সংসারের প্রস্তুতি।
.
আরেকটা ভূল গার্ডিয়ান'রা করে থাকেন সেটা হলো, বিয়ের আগে মেয়েদের জিজ্ঞেস করেনা "তুমি কি বিয়ের জন্য প্রস্তুত আছো? বা বিয়ের জন্য ঠিক আছে কি না?.. বাবারা মনে করে আমার মেয়ে আমি যা বলবো তাই হবে মেয়ে আমার না করবেনা।
.
আমি যা করবো তাই'ই। তাইতো বিয়ের পর দৌড়াদৌড়ি তাঁদেরই করতে হয় ভিবিন্ন সমস্যা নিয়ে। একটার পর আরেকটা সমস্যা লেগেই থাকে। বাবা হীসেবে তাঁদের সীমাহীন কষ্ট হলেও সমস্যাটা মেয়ের উপর দিয়েই যায়।
.
পুরো দখল তারই সহ্য করতে হয়। মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা খুব প্রয়োজন বিয়ের আগে। তা তে কি হয় সংসারটা খুব সহজে সাজিয়ে নিতে পারে, মানিয়ে নিতে পারে। আমি আবারো বলছি "মানিয়ে নিতে পারে" আর মানিয়ে নেওয়াটাই সবচেয়ে জরুরি নতুন বন্ধনের জন্য, খুব বেশি।
.
বাংলাদেশের এর জন্য সীমিত আইন থাকলেও কার্যকর হয় খুব কম। অল্প মালেই (টাকা) কাজ হয়ে যায়। আমি মনে করি বিয়ের পরেই একটা মেয়েকে মায়ের অবধান রাখতে হয়। কারো ভাবী, কারো মামী, কাকী আর ভাবী, মামী, কাকী মানেই তো মায়ের সমান।
.
একটা মায়ের ভুমিকা পালন করতে যথেষ্ট সময়, মন মানসিক আর শারীরিক সবদিক থেকেই প্রস্তুত থাকতে হয়। তাহলে ক্লাস, সিক্স, সেভেন, এইট ,নাইনের মেয়েদের যে বিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা কি করবে?
.
কষ্ট হবেনা মানিয়ে নিতে? আমার মতে, "মেয়েদের তখনই বিয়ের সঠিক সময় হয় যখন সে একজন মায়ের ভুমিকা পালনের জন্য সবদিক থেকে প্রস্তুত হয় " এর জন্য বাংলাদেশে অনেক সংস্থা কাজ করলেও কাজ হচ্ছেনা।
.
বাড়ছে বাল্যবিবাহ'র সংখ্যা। কেন জানিনা আমার বাল্যবিবাহ দেখলে মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে যায়। যখন মেয়েটার বিয়ের পরের কিছু দৃশ্যের কথা ভাবি। আমিই বা কি করবো? আমি না প্রধানমন্ত্রী না রাষ্ট্রপতি।
.
মস্তিষ্কের জোর দিয়ে এটুকু কলমের দ্বারা বলতে পারি " বন্ধ করুন বাল্যবিবাহ, ভাবুন, সোচ্চার হোন, আধুনিকতার অপব্যবহার করছেন , সময় পাল্টাচ্ছে জানি, অর্ধমরা ডিজিটাল হচ্ছে জানি তার মানে তো এইনা যে এস.এস.সি পাশ মেয়েটা ভার্সিটির বই সামলাতে পারবে? "

একটি লাভ লেটার ও ভালবাসার কাহিনী

রাইসা কাঁদছে । যাকে বলে অঝরে কাঁদতে থাকা । কিন্তু তাতে কারো কিছু আসে যায় না । রুমটি বাহির থেকে বন্ধ । ১৬ তে পা দিবে দিবে মেয়েটিরব্যাগে যদি তার মা লাভ লেটার পায় তাহলে এটা করাটাইতো স্বাভাবিক ।
.
কিন্তু টিন এইজের একটা মেয়ের মাথায় এই যুক্তিই বা কেন কাজ করবে ?
.
পরনেএখনো স্কুল ড্রেস । কেঁদে বালিশ ভিজিয়ে ফেলেছে । আর কিছুক্ষণ পর তার জন্মদিন । সে ঠিক করেছিলো কাল স্কুল পালিয়ে সারাদিন রবির সাথে ঘুরবে । প্রথম ভালবাসার হাত ছুঁবে ।
.
আশাটা অপুর্ণ থাকলো ।
.
খট খট খট খট খট
.
রাইসা আধবোজা নয়নে তাকালো জানালায় , রবি ! জানালার ওপাশের খোলা বারান্দার , গ্রীল ধরে দাড়িয়ে আছে । অজানা এক ভয়ে দৌড়ে এলো বারান্দায় ।
.
তিনতলায় উঠলে কেমনে ? এত রাতে কেন এসেছো ? জানো বাসায় চিঠিটা পেয়ে গেছে ?
.
সুসস
.
রাইসা চুপ হয়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো
.
এত প্রশ্ন করছো কেন ? এসেছি এটাই তো বড় কথা । জানতো আজ তোমার জন্মদিন ?
.
বিস্ময় তার চোখে মুখে , এত দুঃখে সে সবই ভুলে গেছে ।
.
আলতো করেহাত ছুঁলো রাইসার । আবেগে আপ্লুত হয়ে চোখ বুজে ফেলল সে । স্রষ্টাকে শত কোটি ধন্যবাদ একটা মানুষ আর একটা মানুষের মনের ভাষা বুঝতে পারে না বলে । না হলে রবির সামনে সে লজ্জায় সে মরেই যেত ।
.
চোখ বুজে আছে সে , অনুভব করলো তার শুকিয়ে আসা অশ্রু গুলো এক হাতে মুছে দিচ্ছে রবি । হাতটা তার ঠোঁটের উপর এসে থামনো । রাইসা চোখ খুলবার সাহস করলো না । বুক থরথর কাঁপছে ।
.
মেয়ে চোখ খুলো , আমাকে দেখো
.
নাভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকালো রাইসা । রবি হাসলো । চোখ বুজেথাকলেও রাইসা বুঝতে পারছে রবির মাথাটি আস্তে আস্তে তার দিকে ঝুকে পড়ছে ।
.
কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো সে । এবার রাইসা চোখ খুলল । এক জোড়া মায়াময় চোখ তারদিকে তাকিয়ে আছে ।
.
তোমার জন্য কবিতা একটালিখেছি , শুনবে ?
.
হাসলো সে , মাথা ঝাকালো ,শুনবে । ছোট একটা পৃষ্টা বেরুলো রবির পকেট হতে ।
তোমার চোখে আছে এক মায়া
যেন কালো কাজলেরাঙিয়েছে এক সুন্দরীতমা
.
চশমা পড়া , সিল্কি চুল
হাসিতে বেলুনছড়া হয়েছে সুমধুর ,
প্রান্ত থেকে প্রান্ত ভরে গেছে ফুলে
তারই এক বিন্দুতে আছো পাপড়ির আড়ালে
.
মেয়ে তুমি শুনছো ?
তুমি বাগানের মধ্যে সদ্য প্রস্ফুটিত তাজা গোলাপদেখার অনুভূতি ,
তুমি আলোকিত চাঁদ
একটি নিটোল স্বপ্নেরনীলভ ভাজ ,
.
কখনো মনে হয়
তুমি সজীব কবিতা ,
চির ঝংকৃত সুরের কিছু ছন্দের দ্যোতনা ,
শিল্পীর আঁকা একটি জীবন্ত ছবি
তোমার চোখে লিখা আছে আমারই নাম
"রবি"
.
এতসব ভাবনার মাঝে ভাবনা সাজাই
কাব্যের পন্ক্তিতে ভেলা ভাসাই
সবই এসেছে এক বিশেষ দিনে,
তুমি জানো ?
এ ছিলো তোমারই জন্মদিনে
.
.
.
.
রবি খেয়াল করেনি , যখনসে কবিতা পড়ছিল রাইসার চোখ বেয়ে আবার শ্রাবণের ধারার মত অশ্রু ঝরছিলো , এবারেরটা উৎস ছিল এক অপ্রকাশিত সুখ ।
.
.
রবি কবিতা পড়া শেষ করে তাকালোতার দিকে । মেয়েটা ছুটে এসে তার ঠোঁটজোড়া চিপসে দিলো তার ঠোঁট দুটো ।
.
রবি তার চোখে মুখে অশ্রুর সিক্ততা অনুভব করছে । মেয়েটাকে ভালবাসে সে , কখনো তাকে ছাড়বে না ।
.
না ছড়বে না ।
.
যেন নিজের কাছেই প্রতিজ্ঞা করছে ।
.
.
.
.
.
২০ বছর পর
.
রাইসা তার মেয়ের ব্যাগ থেকেচিঠিটা পেল । রাফা থর থর কাঁপছে । যা ভাবলো তাই মেয়েটা লাভ লেটার পেয়েছে ।
.
রাফা অবাক হয়ে দেখলো মার মুখটি অস্বাভাবিক শান্ত রূপ ধারণ করেছে ।
.
"রুমে যাও " গলাটা কেঁপে উঠলো ।
.
রাফা ভুল দেখলো কি না বলতে পারছে না । মায়ের চোখে ছলছল করছিলো ।
.
রাইসা অনেকদিন পর তার পুরানো এলবামটা খুলল । ছবির নীচ থেকে কাগজ দুটো বেরুলো ।
.
প্রিয় রাইসা
কাল তোমার জন্মদিন । তোমাকে কতটা ভালোবাসি তা ইনিয়ে বিনিয়ে লিখা আমার দ্বারা সম্ভব না । তাই লিখছি না । তবে একটা কবিতা লিখেছি । কাল তোমার শোনাবো । তুমি শুনবে তো ?
.
তোমার রবি
.
.
.
রবি আজ বেঁচে নেই , সেই রাতে তিনতলা থেকে নামতে গিয়ে পা ফসকে যায় । হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করে । সে মরে গেলেও তার স্মৃতির পৃষ্টাগুলো আজো তার মনে সাড়া ফেলে ।
.
আজ সে তার মেয়ের মাঝে সে ২০ পুরানো রাইসাকেই যেন দেখছে ।
.
রাফার চিঠিটা টেবিলে রেখে এসেছে ।বাহিরে অনেক বৃষ্টি । আজ কেন যেন সেই বূষ্টিতে ভিজতে খুব ইচ্ছা করছে । হয়তো চোখের পানিটা লুকানো যাবে বলে ।
.
বিড়বিড় করছে রাইসা
.
তুমি সজীবকবিতা ,
চির ঝংকৃত সুরের কিছু ছন্দের দ্যোতনা ,
শিল্পীর আঁকা একটি জীবন্ত ছবি
তোমার চোখে লিখা আছে আমারই নাম
"রবি"

অসমাপ্ত ভালবাসা

পরিচয়টা বেশি দিনের না,,
এর মধ্যেই হৃদয়ের উপর দুর্বলতা অনুভব করছে অনু।
এইত কয়েকদিন আগের কথা,,এই ফেসবুক নামক সাদাকালো জগত থেকেই মাসখানেক আগে হৃদয় আর অনুর পরিচয়,তেমন কারো সাথে কথা না হলেও হৃদয়ের সাথে টুকটাক কথা হতে হতে বন্ধুত্যে গড়ায় হৃদয় অনু'র কথাবার্তা।
স্বাভাবিক নিয়মেই কেউ কাউকে দেখা হয়ে ওঠেনি,,,কিন্তু তবু,,,ভালবাসা আর মনের টান,অনেকটা চুম্বকের মত আকর্ষিত করে নেয় বীপরিত দিককে।
তেমন করেই হয়ত অনুর মনেও হৃদয় আর হৃদয়এর মাঝে সেই আকর্ষণ এসে যায়।মাসখানেক সময় অতিক্রম করার পর প্রবল আকর্ষনে ঠিকই তারা খুব কাছাকাছি এসে পড়ে,,হৃদয় অনুর সম্পর্ক চলে যায় ভালবাসায়।
উল্লেখ্য ব্যাপার যে,এই সময়টা পর্যন্ত তাদের ফেস দেখা হয়না।
চলতে থাকে সম্পর্ক মিস্টি মধুর সম্পর্ক।
>>
প্রায় মাস দশেক পর,,,
বাধ আসে অজানা এক কারন এসে।
দিনকে দিন এদের মাঝে দুরত্ব হতে থাকে,,,কিন্তু না,কেউ অন্য কাউকে পেতে নয়,সাধারনত কথা হতে থাকে।
কিন্তু সেই হাসি+দুস্টামি+জোশ নাই সম্পর্কে।ভালবাসার অভাব কি আর কিছুতে পুর্ন হয়?অভাবনীয় যন্ত্রনায় পুড়তে থাকে অনু।
>>>>
দুরত্ব বাড়তে থাকবে? কাছে আসবে?
জানা নাই,
হয়ত গল্প বড় না কাহীনি ছোট,,
একটু ভাবুনতো,প্রিয় জনের থেকে অবহেলায় কেমন অসহায়ের মত ছটফট করতে থাকা মনের উপর কি নিয়ন্ত্রণ করা যায়??
সাদা কাগজে দাগ পড়লে মুছা যায়না,
মুছতে পারলেও জলছাপ চলে যায়না।
তেমনি মনের খাতার একমাত্র পৃষ্টায় যে নাম লিখা হয় তা কি আজিবনে ভোলা যায়??
চোখের জল নাহয় মুছে দেয়া যায় কিন্তু মনের ভেতর হাহাকার শুন্যতা কি মুছে ফেলা যায়?
আপন মানুষটা ধীরে ধীরে চলে যায় দুরে,
এপারে থাকা অনুর মত হাজারও ভালবাসার কস্ট পুষে চলেছে মন।
যে মানুষটার অপেক্ষায় থাকা মেয়েটা তিলে তিলে পুড়ছে,হয়ত সে একদিন বুঝবে অনুর ভালবাসা তার জীবনে কতটা প্রভাব পড়েছিল
একদিন সে হয়ত পাগল হয়ে খুঁজবে কিন্তু ততক্ষনে হয়ত অবহেলা অনাদর ছলনার শিকার মেয়েটা তার
বাম হাতে চোখের বাকি জলটুকু মুছে নিয়ে প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে শুয়ে পরেছে ভালবাসা বিহীন রাজ্যে,,,
ভালবাসা সত্য,ভালবাসা পবিত্র,,
সম্মান দিন,ভাল রাখুন ভালবাসার মানুষকে,
ভালবাসা আপনারে ভাল রাখবে।
ভালবাসুন,ভাল থাকুন,,,

রবিবার, ১ জানুয়ারী, ২০১৭

"রাগ নয় বুদ্ধির জয় হয়"

--আমি তোমাকে যে শাড়িটার পিকচার সেন্ড করেছিলাম, তুমিতো বললেনা কিনে দিবা কিনা..!?
--ঐ শাড়ি কিনতে গেলে আমার বেতনের অর্ধেক নাই হয়ে যাবে..!
--তুমি কেমন স্বামী, বৌয়ের আবদার পুরোন করতে পারোনা..!? তাহলে বিয়ে করেছিলে কেন..? (রাগী কন্ঠে)
--দেখো অফিস থেকে কেবলই এলাম। আসতেনা আসতেই শুরু করে দিছো.! বিয়ে করলেই কি বৌয়ের সব আবদার মানতে হবে..!? মেজাজটা গরম করবানা বলে দিলাম..! (উচ্চস্বরে)
--আমি কিছু চাইলেই তোমার মেজাজ গরম হয়ে যায়..! আর সবার বেলায় তোমার মেজাজ ঠান্ডাই থাকে..!
--তুমিতো আসলেই একটা ফালতু মেয়ে..! সবার বেলায় মানে..! স্টুপিড কোথাকার..!
--মুখ সামলে কথা বলো..!
--এই তোমার সাথে কি মুখ সামলাবো..! (শুরু হয়ে গেল ঝগড়া)
এরপর ইরিনকে একটি বাজে ভাষায় গালি দিয়ে ফেললো রাশেদ। যেটা ইরিনের মাইন্ডে খুব লেগে গেলো! ইরিন আরো রেগে গেলো। তারপর বললো...
--থাকবোনা তোমার সাথে আমি। আজ রাতটা কোনোভাবে পার হোক। কাল সকালেই চলে যাবো।
--যাও যাও.. এছাড়া আর কি পারবে তুমি..!
.
আজ রাতে দুজন দুই বিছানাতে ঘুমালো। কেউ কারো সাথে কোনো কথা বললোনা। সকালে ঘুম থেকে উঠে রাশেদ ইরিনকে খুঁজে পেলোনা। টেবিলের উপর একটা চিরকুট দেখেই রাশেদ বুঝতে পারলো ইরিন সত্যি সত্যি চলে গেছে..! রাশেদ চিরকুটটা হাতে নিয়ে পড়লো। তাতে লেখা ছিলো...
"যে আমার মা বাবা তুলে গালি দেয়, তার সাথে আমি সংসার করবোনা। আমি চলে গেলাম। খবরদার আমাকে খুঁজবেনা..!!"
.
ইরিন যে সত্যি সত্যি চলে যাবে, এটা রাশেদ বুঝতে পারেনি। কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা। সকালে নাস্তা না করেই অফিসে চলে গেলো।
.
ওদিকে ইরিনকে একা দেখে ইরিনের বাবা ইরিনকে বললো...
--কিরে মা, জামাই কই..?
ইরিন কাঁন্না ভেজা কন্ঠে বললো...
--আমি ওর কাছে আর যাবোনা বাবা..!
--কেন কি হয়েছে..? ঝগড়া করেছিস তাইনা..?
--ও আমার সাথে খুব বাজে ব্যাবহার করেছে।
--আচ্ছা ঠিক আছে। তুই ঠান্ডা হ। আমি সবই শুনবো..!
.
এদিকে রাশেদের অফিস করতেও আর ভাল লাগছেনা..! ইরিনকে কয়েকবার ফোন করার পরও রিসিভ করলোনা। বাধ্য হয়ে শ্বশুরকে ফোন দিলো...
--আসসালামু আলাইকুম...
--ওয়া আলাইকুম আসসালাম..
--বাবা, ইরিনের সাথে গতকাল একটু ঝগড়া হয়েছিলো। সকালে রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে গেছে। ও নিশ্চয়ই আপনার ওখানে গিয়েছে..!
--হ্যাঁ বাবা, তুমি কোনো টেনশন করোনা। সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি ইরিনকে বুঝিয়ে বলবো।
--আমার অফিস করতেও ভাললাগছেনা। আমিকি চলে আসবো ইরিনকে নিতে..?
--তুমি অফিস শেষ করেই আসো। আমি ততক্ষণে ওকে বুঝাই..!
--আচ্ছা ঠিক আছে। আসসালামু আলাইকুম..!
--ওয়া আলাইকুম আসসালাম।
.
বিকেলে রাশেদ আসলো শ্বশুরের বাসায় ইরিনকে নিতে। ইরিন এবং রাশেদ দুজন এক রুমে বসে আছে। ইরিন কোনো কথা বলছেনা। রাশেদ সরি বললো..
--সরি! আর তোমাকে রাগারাগি করবোনা। তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবোনা!
ইরিন মাথা নিচু করে বসে আছে। এমন সময় ইরিনের বাবা অর্থাৎ রাশেদের শ্বশুর রুমে ডুকলো।
.
ইরিনের বাবা ওদের দুজনের অভিযোগ শুনে দুজনের উদ্দেশ্যেই বলতে লাগলো...
--দুজনেই মনোযোগ দিয়ে শোনো। সংসারে রাগ, অভিমান, ঝগড়া, এগুলো থাকবেই। এগুলো ছাড়া সংসারে পরিপূর্ণতা আসেনা..! মানুষের মাথায় যখন রাগ জিনিসটা ভর করে, তখন মানুষের মধ্যে হিতাহিত জ্ঞানটা থাকেনা। মানুষ তখন নিজেও জানেনা যে, সে কি বলছে..! এই সময় তোমাদের দুজনের মধ্যে যে কোনো একজন যদি নিরব ভুমিকা পালন করতে, তাহলে দেখতে ঝগড়াটা এতদূর গড়াতো না। এই এখানটাতেই আমাদের সমস্যা, জানো!? আমরা কেউ কাউকে স্যাক্রিফাইজ করতে রাজিনা। রাগ জিনিসটা কিন্তু চিরস্থায়ী নয়। এটা একসময় মাথা থেকে চলে যায়। কিন্তু রাগের মাথায় বলা কথাগুলো পরে দুজনকেই কষ্ট দেয়। রাগের সময় যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সে'ই হচ্ছে আসল মানুষ। আল্লাহ্ তাকে পছন্দ করেন।
আমার স্ত্রীর সাথেও মাঝে মাঝে এমন ঝগড়া হতো। আমি মাস শেষে যে বেতন পেতাম, তাতে সংসারের খরচ চালাতে হিমসিম খেয়ে যেতাম। আমার স্ত্রীও মাঝে মাঝে বিভিন্ন জিনিসের বায়না ধরতো। আমার মাথায় হঠাৎ করে একটা বুদ্ধি এলো। পরের মাসের বেতন পেয়ে পুরোটা আমার স্ত্রীর হাতে তুলে দিয়ে বললাম, এখন থেকে সংসার তুমি চালাবা এবং তোমার যা কেনার দরকার কিনে নিবা, আমার কোনো সমস্যা নাই। তারপর থেকে সে আর আমার কাছে বায়না ধরতোনা। সে আমার চেয়েও হিসেবি হয়ে গেল। তারপর থেকে আমাদের সংসারও সুন্দর ভাবে চলতে লাগলো..। আশাকরি আমাদের এই অভিজ্ঞতা তোমাদের সাংসারিক জীবনে কাজে আসবে।
.
ইরিন এবং রাশেদ দুজনেই কথাগুলো মনদিয়ে শুনলো। দুজনই দুজনের ভুল বুঝতে পারলো। এরপর থেকে রাশেদ তাই'ই করলো৷ পরের মাসের বেতনটা পেয়ে ইরিনের হাতে তুলে দিলো। ইরিন হিসেব করে খরচ করতে লাগলো। ইরিন এখন পুরো সোজা..! সে তার স্বামীর কাছে এখন আর বায়নাও ধরেনা..!!
•••