বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০১৬

বাস্তবতা


আজকাল সিক্স সেভেনের পোলাপাইনও প্রেম করে!!
কথাটা প্রথম যখন শুনলাম তখন
বিশ্বাস হলোনা।
কয়েকদিন আগে কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা হলো।
সেভেনের এক পোলায় সিক্সের এক মাইয়ার লগে পিরিত করে। পোলার বাপ আমার বড্ডালোক, পোলারে এ্যান্ডুয়েড মোবাইল কিনে দিয়েছে। আদর্শ বাপের আদর্শ পোলা বলতে হবে! পোলাটা দেখলাম ওই মোবাইল দিয়ে তার সিক্সে পড়ুয়া প্রেমিকারে বলতেছে, "ওগো ময়নার মা তুমি এত চুন্দর কেনগো!"
আরে ভাউরে ভাউ, তাহার কী আবেগ! আরে শালা, তোরতো শ্বাশুড়িরই জন্ম হয় নাই, এখনো জন্মের সময়ের নাভীকাটাও পঁচে নাই, তোর কী আবেগ! বিয়া করারই খবর নাই, বিয়ার আগেই বাচ্চার মা!
তখন হয়ত আবেগী বয়সের মেয়েটার কৌতুহল হয়ে জিজ্ঞেস করে, বাচ্চা কেমনে হয়?
তখন হয়ত ছেলেটা বলে, এটা বলার মত কথা না, প্রাক্টিক্যালি দেখাতে হয়।
তখন কৌতুহলী মেয়েটা হয়ত রাজি হয়।
তারপর প্রাক্টিক্যাল ক্লাসের নামে চলে সম্মতির ধর্ষণ। যদিও আজকাল এটাকেই বালুবাসা বলে, ভালোবাসা বলেনা। বালু দিয়া তৈরি করা খেলার বাসা মানে বালুবাসা। যেটা খুব ভঙ্গুর, সামান্য আঙ্গুলের টোকা দিলেই ভেঙ্গে যায়। আর ভালোবাসা চিরন্তন, যেটা কোন অদৃশ্য শক্তি ছাড়া ভাঙ্গেনা, মচকায় না।
সাধারণ ধর্ষণ আর সম্মতির ধর্ষণের মধ্যে তফাৎ হচ্ছে, সাধারণ ধর্ষণে ধর্ষিতা নারীটি সিনেমার নায়িকার মত বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করে। আর সম্মতির ধর্ষণে নারীটি হয়ত বলে, বাহ! ভালোইতো লাগছে। মাঝে মাঝে এমন প্রাক্টিক্যাল ক্লাস নিবা।
আর সম্মতির ধর্ষণে ধর্ষিতা মেয়েটি সানি লিওন থেকে নিকৃষ্ট!! সানি লিওনতো মজাও নেয়, টাকাও নেয়। যাকে শুদ্ধভাষায় বেশ্যাবৃত্তি বলে। আর সম্মতির ধর্ষণে ওই মেয়েটা শুধু মজাই নেয়, টাকা নেয়না। তাই এরা বেশ্যার থেকেও খারাপ। আমি যুক্তি ছাড়া কথা বলিনা।
তো তারপর কি হয়! কয়েকমাস পর দেখা যায় নীরব সম্মতির ধর্ষিতা মেয়েটির বমি বমি ভাব হয়। পরীক্ষা করে জানা যায় মেয়েটার পেটে বাচ্চা। আর কী করা! ভ্রুণ হত্যা। এভারোশন করে বাচ্চা নষ্ট করা। হায়! বিয়ের আগেই বাচ্চা?! কে করেছে? কে করেছে? চাপটাপ দিয়ে মেয়েটার কাছে বাচ্চার বাপের নাম জানা হয়। ছেলেটাও এলাকা ছাড়া হয় ইতোমধ্যে। কেউ কেউ আইনের আশ্রয় নেয় সমাজে মেয়েটার সম্মান প্রতিষ্ঠা করতে, কেউ কেউ আইনের আশ্রয় নেয়না লোক জানাজানি হবার ভয়ে।
সমাজে যখন কেউ ভালো কোন কাজ করে তখন সেটা ছড়ায় ধীরে ধীরে, মন্থর গতিতে আর কারো একটা ব্যাড রেকর্ড হয়ে গেলে সেটা ছড়া বাতাসেরও আগে।
-কিরে জানিস, ওমুক চাচার মেয়ে ধর্ষিত হইছে।
-ওম্মা তাই! কোন ছেলেটারে মজা নিসে?
-তমুক চাচার ছেলে অমুক।
এই হল আমাদের সমাজ। এসব ধর্ষণের কেইসে ধর্ষণকারী ছেলেদের সম্মানহানি হয় না, যত দোষ ওই ধর্ষিতা মেয়েটার। ছেলেটার বিয়ের সময় মেয়েপক্ষ যখন জানতে পারে অতীতে ছেলেটার ব্যাড রেকর্ড আছে, তখন মেয়েপক্ষের লোকেরা বলে, "আরে সমস্যা নাই, ওই বয়সে ছেলেরা দু'একটা ভুল করেই। আমরাওতো সে বয়সটা পার করে এসেছি।" কারণ, ছেলেটা ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার অথবা চাকুরিজীবী কিংবা সিএনজি এমনকি রিক্সার ড্রাইভার।
আর ধর্ষিতা মেয়েটার জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসলে ছেলেপক্ষ যখন জানতে পারে মেয়েটা আগে ধর্ষিত হয়েছে, তখন তাদের মুখে ছিঃ ছিঃ ছাড়া কোন শব্দই বের হয়না, যে মেয়ে বিয়ের আগেই এসব করতে পারে সে মেয়েটা যে বিয়ের পর এসব করবেনা তার নিশ্চয়তা কী?। তারা মুখ ফিরিয়ে বাড়ির পথে রাস্তা মাপে।
সব দোষ যেন ওই মেয়েটারই। মেয়েটা বাড়ির বাইরে বের হতেই পারেনা। বেরোলেই দু তিনজন মিলে জটলা পাকে।
-ওই দেখ দেখ, বেশ্যা আসছে।
মেয়েটাকে শুনিয়ে কেউ একজন বলেও উঠে, ওই বেশ্যা, তোর রেট কতরে?!! মেয়েটা মুখ লুকায় বুকের ওড়নায়, ফিরে আসে বাড়িতে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে।
কয়েকমাস পর হঠাৎ ওই ধর্ষণকারী ছেলেটা এলাকায় আসলে তার বন্ধুরা তাকে নিয়ে আরো বেশি মাতামাতি করে। বন্ধুদের মধ্যে সে হিরো হয়ে যায়। গরু(গুরু) বলে মানে তারে।
-আরে গরু! কেমনে করলি!! আমাদের কিছু জ্ঞান দে, আমরাও করতে চাই তোর মত।
আর গরুটার রশি ধরতে নতুন নতুন বন্ধু হয় পায়ের ধূলা নিতে। একটা মেয়ের ভার্জিনিটি নষ্ট করছে, কত মহৎকাজ, ভাবা যায়!!! এই গরুর থেকে শিক্ষা নিতে হবেতো! জায়গামতো আবার টোপ ফেলতে হবে, ভার্জিনিটি নষ্ট করে হিরোগিরাটা ধরে রাখতে হবেতো!!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন