হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে জিসান,হাতে ক্যানুলা লাগানো রয়েছে,যা দিয়ে শরীরের ভিতরে স্যালাইন যাচ্ছে।জিসান ওঠার চেষ্টা করলো কিন্তু সেই শক্তি টাও তার নেই।
চোখ দিয়ে অঝর ধারায় পানি পড়ছে,জিসান ভাবে আমাকে মরতেই হবে,জেসমিনকে ছাড়া আমি বাঁচবোনা।
জেসমিন কেন এটা করলো,এই কি সেই জেসমিন,যে আগে এসে আমাকে ভালো বেসেছিলো?
এই কি সেই যে আমার প্রতিটি মূহুর্তে খেয়াল রাখতো,এই কি সেই জেসমিন,যার জন্য আমি ঢাকা শিল্পকলা একাডেমির মেঝেতে রাতে শুয়ে ছিলাম সকালে তার অডিশন আছে বলে?
এই কি সেই জেসমিন যাকে জাতীয় পুরষ্কার পাওয়ানোর জন্য আমি দিন রাত পরিশ্রম করেছি?
এসব ভাবতে ভাবতেই অতিতে হারিয়ে যায় জিসান।
এই তো দুই বছর আগেকার কথা........
" বাবা আমার মেয়েটা তোমাকে অনেক ভালোবাসে বাবা,জেসমিন তোমাকে ছাড়া বাঁচবে না"
কথাগুলো শুনে রিতীমতো " থ" হয়ে যায় জিসান।
তার মতে পৃথিবীতে এই প্রথম কোন মা তার মেয়ের জন্য,ভালোবাসার প্রস্তাব একটা ছেলেকে দিচ্ছে।
জিসান শুধু বললো-
"আচ্ছা আন্টি ভেবে দেখবো"
এই বলে সে চলে গেল।
জিসানের মা ও তাকে বললো,
--জেসমিন মেয়েটা তো ভালই রে।তুই রাজি থাকলে একটা ব্যাবস্থা করে রাখি
জিসান বলে,
--বাদ দাও তো মা,আমি আমার ডান্স ছাড়া বর্তমানে কিছুই ভাবতে পারবো না।তুমি তো জানো ডান্স আমার জিবন।
--তুই যাই বলিস না কেন,আমার কিন্তু ওকে ভারি পছন্দ
--হুম হয়েছে এখন খেতে দাও।
.
এরপর থেকে জিসান আর আর জেসমিনের পরিবারের মাঝে সম্পর্ক অনেক বেশি ঘনিষ্ট হয়ে যায়।
জেসমিনের মা বাবা জিসান কে নিজের ছেলের মতই দেখতে থাকে।জেসমিন জিসানদের বাসায় আসা যাওয়া করে,জিসান ও মাঝে মাঝে জেসমিন দের বাসায় যায়,এভাবে একসময় অনিচ্ছা সত্বেও জিসান জেসমিন কে ভালোবেসে ফেলে।
ওহ্যাঁ!
জিসান সমন্ধে তো কিছু বলাই হয়নি,
[জিসান সুদর্শন একজন যুবক,বয়স খুব সম্ভবত একুশ বাইশ এর মাঝামাঝি।
নাচ কে কেন্দ্র করে যার জীবন।
এই নাচের জন্যই ঠিকমতো পড়াশুনা টাও করতে পারেনি।
জিসানের জিবনে নাচ হলো নেশার মতো,এই কারনেই হয়তো এতো অল্প বয়সেই জিসান অনেক সাফল্য ও সুনাম অর্জন করেছে।
রংপুর শহরের সব থেকে বড়ো ডান্স গ্রুপ "ডান্স জোন" এর প্রতিষ্ঠাতা এবং কোরিওগ্রাফার হলো জিসান।
পুরো রংপুর শহর তাকে এক নামেই চিনে]
.
এরপর জেসমিন আর জিসানের ভলোবাসা আরো গভীর হলো।
.
এক বছর পর
.
কিছুদিন থেকেই জিসান লক্ষ্য করছে, জেসমিন তার প্রতি কেমন একটা উদাসিন,তার প্রতি আর কোন নজর রাখেনা,কথা বললে কিংবা বাসায় গেলে কেমন জানি অস্বস্তি বোধ করে।
জিসান কারোণটা বুঝতে পারে।
কারোনটা হলো এই যে,
কিছুদিন থেকে রংপুরের প্রধান পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা তাদের বাসায় আসা যাওয়া করে।
জেসমিন কে এটা ওটা কিনে দেয়,কফি খেতে নিয়ে যায়,পার্লারের খরচ দেয়।
আজকাল সবসময় জেসমিনের কাছে টাকা থাকে জিঙ্গাসা করলেই বলে আঙ্কেল কে সালাম করেছি তিনি দিয়েছে।
এই বিষয় গুলো জিসানের মোটেও সুবিধার মনে হয়না,এই ব্যাপারে জিসানের সাথে জেসমিনের কয়েক বার কথা কাটাকাটি ও হয়েছে।
হঠাৎ একদিন রংপুর পৌরসভার কর্মকর্তার থেকে জিসানের ডাক আসে।
জিসান সেখানে গেলে আনিস সাহেব,অর্থাৎ জেসমিনদের বাসায় যিনি আসা যাওয়া করেন তিনি জিসান কে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয়,বলে-
"আমি বয়স,ক্ষমতা,অর্থ প্রায় সব দিক থেকেই তোমার থেকে বড়ো।তুমি আমার সাথে পেরে উঠতে পারবে না।"
জিসান ও অনেক রাগি স্বভাবের তাই সেও আনিস সাহেবের সাথে রাগারাগি করে চলে আসে।
এর কয়েক দিন পর একটা কফি শপে জেসমিন আর জেসমিনের মা জিসান কে ডেকে বলে,
"এতোদিন যেটা হয়েছে সেটা ভুলে যেতে,জিসান যেন জেসমিন কে ভুলে যায়।"
জিসান জেসমিনের মুখ থেকে কথা গুলো শুনতে চাইলে।
জেসমিন সরাসরি জানিয়ে দেয়,
"তার মায়ের কথাই তার শেষ কথা"
জিসান কিছু না বলে সোজা সেখান থেকে চলে যায়,সেখান থেকে যাওয়ার সময় কফি শপের নীচে জিসান আনিস সাহেব কে দেখতে পায়,মুখে তার বিজয়ের হাসি।
.
কফি শপ থেকে ফিরে জিসান সোজা তার ঘরে ঢুকে যায়,এরপর পকেট থেকে একটা বিষের কৌটা বের করে এক বাড়েই পুরোটা খেয়ে নেয়।
যার পরিপেক্ষিতে সে আজ হসপিটালে।
.
এখনো জিসানের মনে একটাই কথা তাকে মরতে হবে,জেসমিন কে ছাড়া সে কিছুতেই বাচবেনা।
সাতদিন পর তাকে হসপিটাল থেকে রিক্সায় করে বাসা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
হঠাৎ সে রিক্সা থেকে একটা গাড়ির নিচে লাফিয়ে পরে।
ভাগ্যক্রমে গাড়িটা পাশ কাটায়ে চলে যায়।
এরপর জিসান নিজেকে মানসিক হসপিটালে আবিষ্কার করলো।
সেখানে পনেরো দিন থাকার পর জিসানের মনের কিছুটা উন্নতি ঘটলো।জিসান বাসায় আসলো জিসানের মা জিসান কে একটা কথা বললো,
"জেসমিন কে তুই ভালোবাসিস এক বছর ধরে,আর আমি তোকে ভালোবাসি বিষ বছর ধরে আমার ভালোবাসার কি তোর কাছে কোন দাম নেই?যদি তাই হয় তা হলে আজ থেকে আমাকে মা বলে ডাকিসনা।
তোর কিছু হলে ঐ মেয়ের কিছু হবেনা,হবে আমার।তুই আমাকে কথা দে বাবা তুই আর এমনটা করবিনা"
জিসান মাকে কথা দেয়,
সে আর এমন করবেনা।
কিছুদিন পর শোনা যায় জেসমিনের মায়ের সেই আনিস সাহেবের সাথে বিয়ে হয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন