শনিবার, ২২ জুলাই, ২০১৭

অনুভবে তুমি

আজ দুবছর পর দেশে ফিরলাম।আকাশের মৃত্যুর পর কিছুটা
এবনরমাল হয়ে গিয়েছিলাম।
সারাদিন বিরবির করতাম আর আকাশের স্মৃতিগুলো মনে
করে কখনো কাঁদতাম আবার কখনো হাসতাম।মাঝে মাঝে
ওর নাম ধরে চিৎকার করে ওঠতাম।বাবা এসব দেখে
আমায় একজন সাইকাইট্রিসের কাছে নিয়ে যায়,উনি সব
দেখে আমাকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করানোর
কথা বলেন।তার কথামত বাবা আমাকে বিদেশ নিয়ে যান
চিকিৎসার জন্য।
.
বিদেশ গিয়েও আকাশকে ভুলতে পারি নি।কিভাবে
ভুলবো?ওরসাথে আমার কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে,যাকে
মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছি তাকে কি ভোলা যায়।
চিকিৎসা নেয়ার পর সুস্থ তো হয়েছি কিন্তু আকাশের
স্মৃতিগুলো মুছে যায় নি।
দেশে এসে আকাশের বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করলাম।
সব খোঁজখবর নিয়ে রওনা হলাম "আপন নিবাস"নামের
একটা এতিমখানার উদ্দেশ্য।
.
আমি দাড়িয়ে আছি এতিমখানার ভিতরে।একটু পর একটা
লোক একটা আট দশ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে এলো।আমি
ছেলেটার চোখদুটির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে
রইলাম।কতদিন পর দেখলাম চোখদুটি।ছেলেটাক
ে জিজ্ঞেস করলাম....
---বাবু তোমার নাম কি?
বাবু বলায় ছেলেটা মনেহয় রাগ করলো।আট দশ বছরের
একটা ছেলেকে বাবু বললে তো রাগ করবে ই।গাল ফুলিয়ে
জবাব দিলো....
----আমি বাবু নই,আমার নাম তূর্য।
আমি তখনও অবাক হয়ে তুর্যের মায়াবী চোখদুটির দিকে
তাকিয়ে রয়েছি।এই চোখের মায়ায় পড়েছিলাম আমি,এই
চোখের দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দিতে চেয়েছিলাম
বাকিটা জীবন।কিন্তু আমরা যা চাই তা সবসময় পূরণ হয়
না।কিছু কিছু চাওয়া অপূর্ণ ই থেকে যায়।
.
আকাশের সাথে পরিচয় হয় একটা ব্লাড ডোনেট ক্লাবে।
ওই গ্রুপের সদস্য ছিলো ও।আমি নতুন জয়েন করেছিলাম।
সবাই সবসময় ওর প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকতো সবসময়।সবার
বিপদে ও সবসময় এগিয়ে আসতো,কারো রক্তের প্রয়োজন
হলে ও সাহায্য করতো।তাছাড়া ও সন্ধানীর একজন কর্মী
ছিলো।ওর এই ভালো দিকগুলো আমায় ওর প্রতি দুর্বল
করে তোলে যা একসময় ভালোবাসায় রূপ নেয়।ওকে
ভালোবাসার কথা জানানোর পর ও কিছুটা গাইগুই
করলেও একসময় মেনে নেয়।আকাশ সবসময় বলতো....
-----অর্পা আমি মারা গেলে আমার চোখদুটো দান করে
যাবো।আমার চোখ দিয়ে কেউ পৃথিবীর সৌন্দর্য দেখতে
পাবে এটা আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া হবে।
ওর এই কথা শুনে ওকে খুব বকতাম।বলতাম তোমাকে
কোথাও যেতে দিবো না।ও হাসতো,আর আমি ওর সেই
চোখ দুটির দিকে অপলক তাকিয়ে থাকতাম। ছেলেদের
চোখও মায়াবী হয় এটা আকাশকে না দেখলে বুঝতে ই
পারতাম না।
.
এভাবে দুবছর কেটে যায়।বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ
দেয়া শুরু করে।আকাশ মাত্র মাস্টার্স শেষ করে জব
খুজছেঁ।ওকে সবকিছু বলার পর ও বললো....
----এখন দুটো রাস্তা খোলা আছে, হয় তোমার মা বাবার
পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করা, নাইলে পালিয়ে
যাওয়া।
আমি এখনো বেকার।তোমায় সুখে রাখতে পারবো না।
----তুমি মাস্টার্স পাশ করেছো,কিছু না কিছু করতে
পারবে ই।আর তোমার বন্ধুরা তো আছে ই।কোন সমস্যা
হবে না।
তারপরও আকাশ রাজি হতে চায় নি।শেষে ওর বন্ধুরা
জোর করে ওকে রাজি করায়।
.
আমরা পালিয়ে ওর ফুপুর বাসা শ্রীমঙ্গল চলে যাই।
সেখানে ওর বন্ধুরা সবাই মিলে ওর ফুপুকে সবকিছু খুলে
বলে ও রাজি করায়।
আমি বধূ সাজে খাটে বসে আছি নীল শাড়ি পড়ে।আকাশ
প্রায় ই বলতো...
----জানো অর্পা আমার একটা ইচ্ছে আছে, বাসর রাতে
আমার বউ নীল শাড়ি পরবে আর আমি নীল পাঞ্জাবী।
সারারাত দুজনে গল্প করতে করতে কাটিয়ে দিবো,একে
অপরের সম্পর্কে আরো ভালোভাবে জানবো।নতুন এক
পথচলা শুরু করবো দুজনে।
.
আমায় অপেক্ষায় রেখে আকাশ আমার প্রিয় বেলীফুল
আনতে গিয়েছিল।ওর বন্ধুরা বারবার মানা করলেও ও
শোনে নি।বলেছিল...
----প্রিয় মানুষটার পছন্দের জিনিসটা আমি নিজে ই
আনতে চাই।ওকে এটা দিয়েই আমাদের পথচলা শুরু করবো।
অনেকক্ষণ পার হওয়ার পরও যখন আকাশ আসলো না তখন
ওর বন্ধুরা খোজঁ নিতে গেলো।
ওর খোজঁ পাওয়া গেলো হাসপাতালে,সাদা কাপড়ে
ঢেকে রাখা হয়েছে আমার প্রিয় মানুষটাকে।আমার
প্রিয় ফুল নিয়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় ঘাতক বাস ওর
জীবন কেড়ে নেয়।ওর পকেটে তখনো বেলীফুলের
মালাটা রাখা ছিল।ওর মুখটা দেখে মনে হয়েছিল ও
ঘুমিয়ে আছে।আমি একটুও কাদিঁ নি,পাথর হয়ে
গিয়েছিলাম শোকে।ওর বন্ধুরা আমায় বাসায় রেখে এসে
ওর কাফন-দাফন সম্পন্ন করে।
.
দাফন করার আগে ওর কথামত ওর চোখদুটো দান করা হয়
সন্ধানীতে।আকাশ তারা হয়ে যায়,আর তূর্য নামের
ছেলেটা ফিরে পায় দৃষ্টিশক্তি।
আকাশ হারিয়ে যায় নি,তুর্যের মাঝে ও বেচেঁ আছে।
আকাশ মিশে আছে আমার সমস্ত অস্তিত্বে,আজো মনেহয়
আকাশ যেন আমায় বলছে....
----আমি তোমার মাঝে বেচেঁ আছি অর্পা,নিজেকে
কখনো একা ভেবো না।আমি সবসময় তোমার পাশে আছি
ছায়া হয়ে।
তূর্যের দিকে তাকিয়ে আমার চোখগুলো ঝাপসা হয়ে
আসে।ছেলেটা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার
দিকে।
.
প্রত্যেকটা মানুষের ই একটা স্বপ্ন থাকে । কাউকে
ভালোবাসার স্বপ্ন,,,ভালোবাসার মানুষটাকে নিয়ে
স্বপ্ন । কিন্তু সবার জীবনে সেই স্বপ্ন পূরন হয় না।সেই
স্বপ্নগুলো বাতাসে ভেসে বেড়ায় পালকের মতো।একসময়
তা পতিত হয় মাটিতে।
আমি আর বিয়ে করি নি, ওর স্মৃতি বুকে নিয়ে ই বেচেঁ
আছি।বাবা অনেকবার বলেছিল কিন্তু আমি রাজি হই নি।
যাকে ভালোবেসে তার নীল আকাশে ভালোবাসার
সূর্যোদয় দেখতে চেয়েছিলাম কিন্তু সেই সূর্য তো
হারিয়ে গেছে কোন এক দুর দিগন্তে।বাকি জীবনটা ওর
স্মৃতি নিয়ে ই কাটিয়ে দিবো।

অলস প্রেমের অদৃশ্য ভালবাসা

‘কলেজ ছুটি হয়েছে, আমি হোস্টেলের কক্ষে ফিরতেছি। কিন্তু হঠাৎ একটা মেয়ে পিছুডাক দিল। তাকিয়ে দেখি নীলিমা আপু।’’
.
‘‘সে আমার থেকে কিছুটা সিনিয়র হবে হয়ত। আমি অনার্স ২য় বর্ষের ইংলিশ বিভাগের ছাত্র। আর নীলিমা আপু বি.এস.সি ৩য় বর্ষের ফিজিক্সের ছাত্রী। তাই সিনিয়র সম্মানার্থে তাকে আপু বলেই ডাকি।’’
.
জ্বি আপু কিছু বলবেন?
.
●নীলিমা আপু আমাকে বললো...
-- I loved you?
-- What? You love, that good things. তবে এটা আমাকে বলছেন কেন?
-- কেননা আমি তোমাকে ভালবাসি।
-- ও তাই নাকি? So listen to me, My heart only for Allah. So, I love Allah and you are my sister. (হুজুর ফ্যাক্ট)
-- She said the feeling of cray & tell me Sorry Brother...
.
‘‘আমি কোন কথা না বলে চলে গেলাম। যত্তসব অভাগার দল।’’
.
●দু’দিন পর কলেজের উঠানে...
নীলিমা বললো, এই তাহসিন তুমি কই যাও?
‘‘অধ্যক্ষ রুমে যাচ্ছি। ৬দিনের ছুটি নিতে হবে, আম্মু বাসায় ডেকেছে।’’
.
নীলিমা বললো, ‘‘আচ্ছা কাউকে ভালবাসা কি পাপ? কি অপরাধ করেছি যে আমাকে কাকতালীয় ভাবে ফিরে দিলে?’’
.
-- আসলে আপনি হচ্ছেন আমার থেকে ১বছরের সিনিয়র। আপনার সাথে আমার প্রেম করা কি শোভা পায়?
-- ধুর মিয়া। আজ বিয়ে হলে কালকেই বাচ্চার বাপ হয়ে যাবি, আবার কি না!
-- তাই নাকি! তো প্রেম না বিয়ে করেন যান।
-- আসলেই তুমি একটা পাগল। বিয়ে করার জন্যেইতো প্রেম করতে এসেছি।
-- ইই, শখ কত? ইনকাম করি না এক পঁয়সা আর আপনারে করমু বিয়ে? যান, যান গো-ভাগারে গিয়ে মরেণ।
-- আমি মরলে তুমি ঠিক থাকতে পারবে তো?
-- ধৃৎ, আপনি এখান থেকে যাবেন! বলছি না সোজা পথ দেখেন। গায়ে কথা লাগে না বুঝি? যত্তসব!
-- ও আচ্ছা; ইহ, রাগ কত?
.
[আসলে তাহসিনকে রাগালে নীলিমা একটু বেশিই আনন্দ পায়। কিন্তু আজকের রাগটা সিরিয়াসলি অন্য ব্যাপারে।]
.
●তাহসিন বাসায় ফিরেছে...
‘‘কিন্তু বাড়িতে এসে তার মায়ের মুখে হঠাৎ বিয়ের কথা শুনে সে অবাক!’’
.
-- আম্মু, আমি লেখাপড়া শেষ করে চাকরির পর বিয়ে করমু। এখন কিসের বিয়ে? বউরে খাওয়ামু কি? স্নো, পাইডার, ময়দা, ভূষি কেডা কিইন্যা দিবে?
-- চুপ কর হারামজাদা! বিয়ে করে বাড়িতে রাক্ষুসী নয় বউমা আসবে।
-- কিন্তু আম্মু, আমার কি এখন বিয়ের বয়স হয়েছে?
-- এ বেটা কয় কি রে? আর এক বছর পর অনার্স পাস করবে। এখনো নাকি বিয়েরই বয়স হয়নি! দেখ বাবা; আমাকে বাড়িতে একাকীত্ব ভাল লাগে না। এবার যদি একটু অনুগ্রহ করতিস।
-- তাইলে আর কি করার তুমি যেইটা ভাল মনে কর। তবে একাকীত্ব দূর করতে যেয়ে বাংলা সিনেমার শাশুরী বউয়ের ঝগড়ার মতো যেন হয়।
-- তুই বেটা আসলেই একটা উজবুক। তোর মা ঐরকম একটা ঝগড়াটে মেয়ে বাড়িতে আনবে; তুই কিভাবে ভাবতে পারিস? ও কত সুন্দর একটা শান্ত/নম্র মেয়ে।
-- কত সুন্দর শান্ত মেয়ে মানে? কি সব বলতেছ আম্মু?
-- আরে যা, গোসল করে তৈরি হয়ে নে তারাতারি; মেয়ে দেখতে যাবি না?
-- কী আমি কেন যাব? তোমাদের পছন্দ হলেই যথেষ্ট। ফোনে বলে দাও যে, কালকেই বিয়ে হতে যাচ্ছে।
.
●অতঃপর বিয়ে ও বিয়ের ১ম রাত্রি...
‘‘আজ সত্যি আমি নিজ রুমে ঢুকতেও বেশ ভয় পাচ্ছি। একটা অপরিচিত অচেনা মেয়েকে কিভাবে আপন করিয়ে নিব? তার সাথে কিভাবে কথা বলব? এই রকম চিন্তা করতে করতে রুমে প্রবেশ করলাম।
.
‘‘মেয়েটা একটা বড় মাপের পট্টি দিয়ে মাথা থেকে মুখ্যদ্বয় পর্যন্ত সমস্ত শরীর আবদ্ধ করে খাটে বসে আছে। দেখেইতো মনে হচ্ছে অপূর্ব স্বর্গের ললিতার মত।’’
.
‘‘আমি সালাম দিয়ে কক্ষে প্রবেশ করলাম। সে সালামের উত্তর দেওয়াতে কণ্ঠটা বেশ পরিচিত লাগছে।
.
আমি আস্তে করে তার কাছে গিয়ে কাপড়টি মুখ থেকে সরিয়েই অবাক! এই নীলিমা এখানে কেন? মুখ ফিরিয়ে ঘর থেকে বের হতে যাব, ঠিক ঐ সময়ে নীলিমা আমার হাতটা শক্ত করে ধরল।’’
.
-- কি কোথায় যাবে? এই ছুরিটা দেখেছ নিশ্চয়ই? এক্কেবারে খুন করে ফেলবো।
-- আপনার সামনেইতো আছি খুন করুন আমাকে।
-- তোমাকে খুন করব কেন?
‘‘এই বলে ছুরিটা সে নিজের গলায় ধরেছে। আমি তার হাত থেকে ছুরিটা কেরে নিয়ে বললাম, বিয়ে যখন করেই ফেলছি তাইলে আর কি করার।’’
.
-- এখন আমি ঘুমাইলাম। পারলে ঘুমান কিংবা ওখানেই বসে থাকুন।
-- আজকে কিসের ঘুম? কোন প্রকার ঘুম চলবে না, সারা রাত শুধু গল্পই চলবে।
-- ঠিক আছে আপনি গল্প করুন আমি ঘুমাই, কেমন?
-- এই তুমি এই রকম কর কেন? আমি কি দেখতে অসুন্দর, খারাপ?
-- আচ্ছা বলুনতো এই নাটকটা কে সাজিয়েছে?
-- কোন নাটক?
-- ঐ যে ভার্সিটিতে আপনি আমার সাথে প্রেম করার জন্য উঠেপরে লেগেছিলেন। এখন আবার বধু সেজেছেন।
-- আমি কি করব বল? সবইতো তোমার আম্মুই করেছে। আমাকে যা বলেছে আমি তাই করেছি। বিশ্বাস কর তোমার ভালবাসা পাওয়ার জন্যই এসব করেছি।
.
‘‘রাগ কারে বলে, যাহ শালা সবই ধান্দাবাজ। নিশ্চুপ হয়ে ঘুমানোর ভান করে শুয়ে থাকলাম। কিন্তু কখন যে ঘুম ধরেছে নিজেও জানি না।’’
‘‘হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গলো কান্নার আওয়াজ শুনে। জেগে দেখি নীলিমা অঝর নয়নে অবিরাম কাঁদছে। ঘড়িতে তাকিয় দেখি 3:40AM বেজেছে।’’
-- বিধি তুমি কাঁদছো কেন? ঘুমাওনি কেন? ‘নিশ্চুপ, তবে অশ্রু ঝরছেই’। প্লিজ কান্না বন্ধ করো।
‘আমার মুখে তুমি ডাকটি শুনে তার স্বস্তি ফিরেছে’।
‘‘এবার আমি তার কপালে মিষ্টি একটা চুমু একেঁ দিয়ে বল্লাম, চলো অযু করে তাহাজ্জুতের নামাজ পড়ি....
.
‘‘নীলিমা মিষ্টি মৃদ্যু হাসি দিয়ে তাহসিনকে জড়িয়ে ধরে বলছে, হে বিধাতা তুমি আমার স্বপ্নকে পূরণ করেছ, ধন্যবাদ তোমাক প্রভূ।’’
.
‘‘অলস প্রেমের অদৃশ্য ভালবাসার ইন্দ্রজালে তাহসিনের নেত্রপল্লব থেকে মনের অজান্তেই নীলিমার কাধে অপ্লাবিত অশ্রু ঝরছে।’’

শুক্রবার, ১৪ জুলাই, ২০১৭

বিশ্বাস ও স্বপ্নে আবরীত ভালোবাসা

অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে তাসনিয়া। প্রায় ৫ ঘন্টা হতে চললো পার্কে বসে আছে। অথচ ফয়সালের কোনো দেখা নাই। ফয়সাল ওর প্রেমিক। এখন ৫ টা বাজে। ১২ টা থেকে অপেক্ষা করছে সে। তাদের দেখা করার কথা ছিলো ১২ টার সময়। অথচ এখনো এলো না। তার তো রীতিমতো কান্না পাচ্ছে। কিন্তু পাব্লিক প্লেসে কান্না করতে পারছে না।
.
সে ভাবছে এমন কেনো করলো ফয়সাল। আজ তাদের সম্পর্কের ১ বছর হলো। আজ তাদের দেখা করার কথা ছিলো। ফয়সাল কথা দিয়েছিলো ওকে অবস্যই আসবে। কিন্তু আসলোই তো না। ফোন টাও অফ। খুব রাগ উঠছে। কান্নাও পাচ্ছে। ফয়সাল কি তাহলে তাকে ভালোবাসে না। ফয়সাল এতো বড় বেঈমানি করতে পারলো তার সাথে। কতো ভালোবাসে ভালোবাসে করতো ছেলেটা অথচ আজকে তার ভালোবাসার নমুনা দেখালো। আসলেই ফেসবুকের প্রেম গুলো ফেক হয়। এবার আর চোখের জল বাঁধ মানলো না। কেঁদেই ফেললো এবার। সে ভাবতে লাগলো প্রথম পরিচয়ের সেই অতীত।
.
কি ভাবছেন ফেসবুক প্রেম। হ্যা সত্যিই ফেসবুক প্রেম। কি সেই অতীত জানতে হলে ২ বছর আগে ফ্ল্যাশব্যাক দেখুন।
ফ্ল্যাশব্যাক
.
ফয়সাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ১ম বর্ষে পড়ে। এছাড়াও সে ফেসবুকের লেখক। নিজের ইচ্ছা মিটাতেই এই লেখা। তার লেখা বিভিন্ন গ্রুপ পেজে যায়। মোট কথা তার জনপ্রিয়তা কিছু আছে বলাই চলে। সারা দিন পড়াশোনা আর রাতে স্টোরি পড়া ও লেখার কাজ করে। সে দিনে একদম লিখতে পারে না। খুব ভালো স্টুডেন্ট না হলেও ভালোমতো চলে যায় তার।
.
তাসনিয়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ১ম বর্ষে পড়ে। সে গল্পের খুব বড় পাঠক। গল্প পড়তে খুব ভালোবাসে। একদিন ফয়সাল আহমেদ নামের এক রাইটারের গল্প পড়ে তার খুব ভালো লাগে। অনেক কষ্টে আইডি জোগাড় করে রিকুয়েস্ট করে। আর ইনবক্সে ছোট্ট করে লিখে দেয় আপনি বাস্তবে ঘুম কুমারী নিয়েন না। সব কাজ ভালোবাসা শুধু আপনাকে একাই করতে হবে।
.
ফয়সাল পরেরদিন রাতে ম্যাসেজ দেখতে পায় ম্যাসেজ রিকুয়েস্ট এ। আইডিটা এক্সেপট করে নেয়। তারপর রিপ্লে দেয়,
.
-- সেটা আমার ব্যাপার। আপনাকে মাথা ঘামাতে হবে না।
.
তাসনিয়া সে সময় সে উত্তর দিলো। দুজনের মধ্যে কথা হলো এই টাইপ।
.
-- রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করার জন্য থ্যাংক্স। আর সেটা আপনার ব্যাপার। কিসে পড়েন?
-- অনার্স ১ম বর্ষ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। আপনি?
-- আমিও অনার্স ১ম বর্ষে পড়ি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
-- অও তারমানে এই মাথা ওচমাথা। বেশ ইন্টারেস্টিং।
-- হুম। ওকে বায়। গুড নাইট।
-- হুম গুড নাইট।
.
এভাবেই তাদের চলতে থাকে সাধারণ কথা বার্তা। হাই হ্যালো। কেমন আছেন? কি করেণ? এগুলোই। দুই দিন পরে তাসনিয়া ফয়সালের ফ্রেন্ড হবার অফার করে। ফয়সাল রাজি হয়ে যায়। ভালোই কাটে তাদের। আসতে আসতে বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে যায় তারা। সব কিছু শেয়ারিং কেয়ারিং করে তারা একে অপরের। যদি কেউ এক বেলা না খেতো তো অপরজন ব্ল্যাকমেইল করতো। খাবো না কিংবা ব্লক দিবো এই বলে। তাদের মোবাইল নম্বর শেয়ার হয়। আসতে আসতে তাদের কথা বাড়তে থাকে। তাসনিয়া ফয়সালের ছবি দেখলেও নিজের ছবি দেয় নি।
.
হুমায়ুন আহমেদ স্যার বলে গেছেন,"ছেলে আর মেয়ে কখনো বন্ধু হয়ে থাকতে পারে না। তারা এক অপরের প্রেম পড়ে"। তাদের বেলায় ঠিক তাই হলো। তারা এক অপরের প্রেমে পড়লো। তাদের ফ্রেন্ডশীপের ১ বছর পুর্তিতে ফয়সাল তাকে প্রোপজ করে। সেটাই ছিলো তাসনিয়ার কাছে ফয়সালের থেকে পাওয়া সবচেয়ে ভালো উপহার। সে রাজি হয়ে যায়। তাদের প্রেম ভালো ভাবেই চলতে থাকে। তারা ঠিক করে রেখেছিলো তাদের সম্পর্কের ১ বছর পূর্তিতে দেখা করবে। তারা এখন ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী।
.
সেই ঘটনাই বর্তমান। কালকে রাতেও ভালো ভাবেই কথা বললো। তারপর থেকে আর ফোন ধরে নি। তার আগে বলেছিলো সে আসছে। আবার সকাল থেকে ফোন অফ। ভাবলো হয়তো গাড়িতে আছে। ফোনে চার্জ নেই। তাই নিজে রেডি হয়ে বাড়ির কাছের পার্কে এসে বসেছে। এখানেই দেখা করার কথা। অথচ ফয়সালের খোজ নাই।
.
সারা বিকেল বসে থাকলো তাসনিয়া। সন্ধ্যার আগে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো বাড়িতে। গিয়ে দরজা বন্ধ করে কাঁদতে লাগলো। সে মনে মনে ঠিক করলো সব যোগাযোগ নষ্ট করবে। ফেবু আইডি ডিএক্টিভেট করে দিলো। নম্বরটা আপাতত কিছুদিন চালু থাকবে। নতুন সীম কিনলে অফ করে দিবে। ঘুনিয়ে পড়লো সে। সকালে তার বাবা মায়ের খোজ নিতে গিয়ে দেখে তারা খবরের কাগজের খবর পড়ছেন। সেও পত্রিকা পড়তে বসলো। তবে হেডলাইনের খবরটা দেখে তার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।
.
এদিকে ফয়সাল রাত ১০ টায় ব্যাক গুছিয়ে নিলো। আগামীকাল তাসনিয়ার সাথে দেখা করতে যাবে। কতো আনন্দ লাগছে তার। অতঃপর দুই বছর পর নিজের ভালোবাসার মানুষকে দেখবে। কথা হলো ফোনে তাদের। ফয়সাল বলল,
-- আমি কালকে আসছি।
-- আচ্ছা। আমি রেডি হয়ে বাড়ির পাশের পার্কে পুকুরের কোনার ব্রেঞ্চে বসবো।
-- আচ্ছা।
-- ঠিক ১২ টায় যেন তোমাকে পাই।
-- আচ্ছা বাবা।
-- ওকে সাবধানে রওনা দিয়ো। বাস কয়টায়? বাসের নাম কি?
-- এইতো ১২.৩০ টায়। ন্যাশনাল ট্রাভেলস।
-- আচ্ছা বাসে উঠে ফোন দিয়ো। তোমার ফোনের অপেক্ষায় থাকবো।
-- আচ্ছা তানি। পরে কথা হবে।
.
ফয়সাল তাসনিয়াকে তানি বলেই ডাকে। মেয়েটা বড্ড ভালোবাসে তাকে। খুব রাগীও। ১২ টার সময় বাড়ি থেকে বের হলো। ওহ বলা হয়নি ফয়সাল বাড়ি থেকেই পড়াশোনা করে। মা বাবা কে বলে দিয়েছে ২-৩ দিনের জন্য চট্টগ্রাম যাচ্ছে। তারাও কিছু বলল না। টিকেট কাউন্টারে পৌছাতে পোইছাতে ১২.২৫ বেজে গেলো। তাসনিয়াকে ফোন করলো। কলল দেয়ার সাথে সাথে কল ধরলো। যেন তার কলেরই অপেক্ষায় ছিলো। তাসনিয়াই বলল,
-- হ্যা বলো বাসে উঠেছো।
-- হ্যা। উঠেছি। একটু পরে ছাড়বে।
-- ওকে সাবধানে আসিও। খোদা হাফেজ।
-- খোদা হাফেজ।
ফয়সাল ফোন কেটে দিলো। মুচকি হাসি দিলো একটা। তার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি উদয় হয়েছে। সে জানে আজ তাসনিয়া ঘুমাবে না। কারণ ফয়সাল বাস জার্নিতে আবার ঘুমাতে পারে না। তাই একটু পর পর ফোন করবে। সে ঠিক করলো তাসনিয়ার কোনো কল ধরবে না। ফেসবুকে ঢুকবেই না। সে ফুলের ব্যাক চেক করলো ভিতরে ২০ টা গোলাপ ফুল আছে। নিচের ফুলের দোকানের মালিককে ডেকে কিনেছে। ব্যাগে পানি ছিটিয়ে দিলো। এটা দিয়ে কালকে তাসনিয়ার রাগ ভাংগাতে হবে।
.
ঠিক এক ঘন্টা পর ফোন আসলো। কিন্তু ফয়সাল ধরলো না। যদিও ধরতে ইচ্ছা হচ্ছিলো। ফয়সালের আসল উদ্দেশ্য ছিলো তাসনিয়ার রাগী লুক দেখার। কিন্তু ভাগ্য ছাড়া কেউ জানতো না যেতার ওই দিন রাগী মুখ দেখা হবে না। দেখা হবে না ওই তার তানির সাথে।
.
ভোর ৬ টার মধ্যে ১০০ কল + ৩০ টা ম্যাসেজ জমা হয়ে যায়। সেই সময় ফয়সালের আর তাসনিয়াকে রাগাতে। ফোন দেয়ার উদ্দেশ্য ফোন হাতে নিলো ফয়সাল। হঠাৎ কেনো যেন গাড়ি নিয়ন্ত্রন হাড়াতে শুরু করলো। হঠাৎ সারা গাড়ি দুলে উঠে ফয়সালের মাথা কিসে যেন বারি খায়। মাথায় তিক্ষ যন্ত্রণা আর ভাংগা চোরার আওয়াজ নিয়ে জ্ঞান হাড়ায় সে।
.
৬ টার সময় এক্সিডেন্ট হয়। ব্রেক ফেল করেছিলো বাস। সামনের দিক থেকে আসা এক ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় বাসের। ফয়সালের মাথায় গুরুতর চোট লাগে। তাতেই জ্ঞান হাড়িয়ে ফেলে। মোবাইল টা ছিটকে জানালা দিয়ে বাহিরে চলে যায়।
.
ফয়সালকে সহ আহত সবাইকে দ্রুত প্রথমে কাছের হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু সেখানে উন্নত চিকিৎসা নাই দেখে দুপুর ১২.০০ টায় জরুরী অবস্থায় চট্টগ্রাম হাসপাতাল এ নিয়ে আসা হয়। সেখানে উন্নত চিকিৎসার কারণে ফয়সাল এ যাত্রায় বেঁচে যায়। তবে জ্ঞান ফিরে নি। ডাক্তারের অনুমান ৪৮ ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান ফিরবে। মাথায় ভালোই চোট লেগেছিলো। পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে না দেখে পরের দিন খবরের কাগজে ছবি সহ অনুসন্ধান কলাম দেয়া হয়।
.
হ্যা সেই মুমূর্ষু রোগীটিই ফয়সাল। মোবাইল না থাকায় পরিচয় জানা যায় নি। মানি ব্যাগে পরিচয়ের মতো কিছু পাওয়া যায় নি। তাই পত্রিকাতে জানিয়ে দেয়া হয়। সেই সংবাদই তাসনিয়ার চোখে পরেছিলো।
.
নিউজঃ- আজ ভোর ৬ টায় রাজশাহী টু চট্টগ্রাম-গামী ন্যাশনাল পরিবহন বাস আর বিপরীতমুখি ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ। নিহত ১৫ আহত ২০। একজন মুমুর্ষ রোগী আছেন। পরিচয় জানা যায় নি। বয়স আনুমানিক ২২-২৫ হবে। সঙ্গে ছবি দেয়া।
.
এই ছবির ছেলেটাকে চিনে তাসনিয়া। এতো তারই ভালোবাসা ফয়সাল। আসলে সে তাকেই ভালোবাসে। অথচ তাকে নিয়ে কতো ভুল ধারণা করেছিলো। প্রচন্ড অপরাধ বোধ হচ্ছে তার। যে কিনা তার জন্য আসতে গিয়ে এক্সিডেন্ট করলো আর তাকে নিয়ে কি না কি ভেবেছিলো। সে তখনি ছুটে টাকা নিয়ে বেড়িয়ে যায়। সরাসরি একটা টেক্সি ধরে চট্টগ্রাম হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
.
গিয়ে ফয়সালের কেবিনের বাইরে থেকে দেখে চিনতে পারে। হ্যা এই ফয়সাল। বিভিন্ন আইনি ঝামেলা+বায়োডাটা পুর্ন করে সে। ফয়সালে মা বাবাকে ফোন দিয়ে সব খুলে বলল আর টেনশন করতে মানা করে দিলো।
.
তারা আগামীকাল নাগাদ পৌছে যাবে। ফয়সালের জ্ঞান ফিরলো ১ ঘন্টা পর। চোখ খুলে দেখে তার পাশে সুন্দরি ও মায়বী মেয়ে বসে আছে। এমই কল্পনা করেছিলো তার তানিকে। সে মেয়েটির উদ্দেশ্যে বলল,
.
-- আপনি কে? আর আমি কোথায়। এখানে এলাম কিভাবে?
-- আমি তানি তোমার তানি। তুমি হাসপাতালে। বাস এক্সিডেন্ট করেছিলো। গুরুতর অবস্থায় তোমাকে এখানে ভর্তি করা হয়েছিলো।
-- সত্যি তুমি তানি।
.
ফয়সাল অবাক নয়নে তাসনিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। কারণ ঠিক এই মুখটাই যে সে কল্পণা করেছিলো। এতোটা মিল কিভাবে হতে পারে। সে কষ্ট করে তাসনিয়াকে বলল,
.
-- ২০ টা গোলাপ দিয়ে তোমার রাগ ভাংগাতে পারলাম না।
-- বাকি জীবন তো পরেই আছে তখন না হয় রাগ ভাংগিও। এখন চুপ করে লক্ষি ছেলের মতো সুয়ে থাকো।
.
তাসনিয়া ডাক্তার ডাক দিলো। ডাক্তার চেক করে আশংকা মুক্ত ঘোষনা করে। আর ৪৮ ঘন্টা পর ছুটি নিতে পারবে। তার মাথায় ব্যান্ডিস। অথচ সারা শরীরে ক্ষত ছাড়া বেশি কিছু হয় নি।
.
পরেরদিন ফয়সালের বাবা মা পৌছে গেলো। তাসনিয়ার বাবা মা কেউ আনা হলো। তারা তাদের বাবা মাকে সম্পর্কের কথা জানিয়ে দিলো। তারা সম্পর্কে রাজি হলেন। ঠিক হলো ২ বছর পর ফয়সাল চাকরী পেলে তাদের বিয়ে দেওয়া হবে। ফয়সালকে রিলিজ দিয়ে দিয়েছে। সুস্থ হয়ে আবার ভালো ভাবে পড়াশোনা শুরু করলো। চিন্তা একটায় চাকরী পেতে যাতে কষ্ট না হয়।
.
২ বছর পর,
আজ ফয়সালের বিয়ে। হ্যা তাদের অপেক্ষা শেষ হয়েছে। ফয়সাল এক মাস আগে প্রাইভেট ফার্মে জব পেয়েছিলো। সে তানিকে বিয়ে করবে। তার ভবিষ্যৎ। অবশেষ বিয়ে করে যাবতীয় কাজ শেষে তানিকে নিয়ে বাড়ি আসলো সন্ধ্যার পরে।
.
অতঃপর তাদের বহুল প্রতিক্ষিত বাসর রাতের ব্যাবস্থা করা হলো। তাদের পুর্ব পরিকল্পিত ছিলো যে বাসর রাতে চাঁদ দেখতে দেখতে বিয়ের পরের পরিকল্পনা করবে। তাই তারা ছাদে গেলো। এক জায়গায় বসে তাসনিয়া ফয়সালের কাধে মাথা দিয়ে চাঁদ দেখছে। সেই সঙ্গে চলছে তাদের স্বপ্ন এবং পরিকল্পনা।
.
চলতে থাকুক তাদের সুখের স্বপ্ন ও পরিকল্পনা আজীবন...........
...................................সমাপ্ত............................

বুধবার, ১২ জুলাই, ২০১৭

কলঙ্কিত ভালোবাসা

রান্তার পাশের দোকানটায় বসে আছে রিহান। সুন্দর, হ্যান্ডসাম ছেলে। যেকোনো মেয়েরই পছন্দ হওয়ার মতো পাত্র। বাপের একমাত্র ছেলে। লেখাপড়া ছেড়ে দিছে। বাপের অনেক টাকা। এগুলো উরাচ্ছে।
.
→রাস্তা দিয়ে খুব সুন্দর একটি মেয়ে যাচ্ছে। অপূর্ব সুন্দরী। কাধে কলেজ ব্যাগ। ইন্টার ১ম বর্ষের ছাত্রী। থ্রি পিজের উপর কলেজ ড্রেস পরে আছে।
.
→মেয়েটিকে রিহানের চোখে পরতেই ভালো লেগে গেলো। পিছু পিছু ছুটলো মেয়েটির। তার সাথে তার এক বন্ধুও ছিলো। পিছু যেতে যেতে কলেজ পর্যন্ত চলে গেছে। অবশেষে মেয়েটি কলেজের ভিতর ঢুকে গেছে। আর রিহান ব্যার্থ মনে ফিরে এসেছে।
.
→পরেরদিন একই ঘটনা। মেয়েটির পিছু নিয়েছে। মেয়েটিও কিছুটা বুঝতে পারে। কিন্তু কিছু বলেনা। এভাবে ৪-৫ দিন যাওয়ার পর রিহান মেয়েটিকে দাড় করিয়ে প্রপোজ করে ফেলে। মেয়েটির নাম অর্নি। অর্নি প্রথমে দ্বিধা করলেও পরে রাজি হয়ে যায়। রাজি হবেই না ববা কেনো? এরকম হ্যান্ডসাম একটা ছেলে পাওয়া অনেক কষ্টের ব্যাপার। অতঃপর ফোন নাম্বার আদান প্রদান।
.
→তারপর ফোনে চলতে থাকে তাদের আবেগেভরা ভালোবাসার আলাপ। প্রথমে কয়েক মিনিট হলেও পরবর্তীতে তাদের ফোনে কথা বলা কয়েক ঘন্টায় রূপান্তরিত হয়। এভাবে বেশ কয়েকদিন কেটে যায়।
.
→এরই মধ্যে ১২ জুলাই রিহানের জন্মদিন চলে এলো। জন্মদিনের আগে রিহান অর্নিকে বলে "জন্মদিনের রাতে তুমি আমাদের বাসায় থাকবে"। কিন্তু এতে অর্নি কোনোভাবেই রাজি হচ্ছেনা। পরে রিহান রাগ করে। রিহানের রাগ করাতে অর্নির একদম ভালো লাগছেনা। অবশেষে অর্নি রাজি হয়ে যায়। প্লেন করে বান্ধবীর বাসায় থাকবে বলে বাসা থেকে বেরোবে। অর্নির ফ্যামিলি তাকে অনেক বিশ্বাস করে, তাই তেমন আপত্তি করেনি।
.
→১২ জুলাই। রাত ১২ টা। রিহানের এক বন্ধুর বাসায় অর্নি। এখানে রিহানসহ আরো কিছু ফ্রেন্ড আছে। বার্থডে সেলেব্রেশন করবে। বাসায় তারা ছাড়া আর কেউ নেই।
.
→অর্নি একটি কালো শাড়ি পরে আছে। খুব সুন্দর লাগছে ওকে। অবশেষে কেক কাটা হলো একে অপরকে খাইয়ে দিলো,তারপর অর্নি রিহানকে বললো "গিফট হিসেবে কি চাও তুমি,? " রিহান অর্নিকে ডেট করার প্রস্তাব দিলো। কিন্তু অর্নি কোনোভাবেই রাজি হচ্ছেনা। অনেক বুঝাচ্ছে রিহান,কিন্তু অর্নি একদম রাজি নয়। অবশেষে অনেক জোড়াজোড়ির পর রাজি হলো অর্নি। অতঃপর তাদের মিলন।
.
→এখানেই শেষ নয়। যেই রুমে রিহান অর্নি মিলন কর ছিলো, সেই রুমে রিহান আগে থেকেই ক্যামেরা লাগিয়ে রেখেছিলো। অর্নিং সতীত্ব এখন একটি ছোট্ট মেমুরীতে আবদ্ব। যেটা যেকোনো সময় লাখো মানুষের কাছে পৌছে যেতে পারে।
.
→রিহান এখন অর্নিকে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করছে। শুধু টাকা নয়,যেকোনো সময় অর্নিকে নিয়ে খেলছে। অর্নি বাধ্য মেয়ের মতো সবকিছু সয়ে যাচ্ছে। এছাড়া যে আর কিছু করার নেই। অর্নিযে এখন একটি খেলনা পুতুল। কয়েকবছর পর যখন অর্নির বিবাহ ঠিক হবে,তখন হয়তো রিহান ওকে মুক্তি দেবে নয়তো নিজেকে মুক্ত করতে বিষের বোতল বেছে নেবে।
.
.
→গল্প হলেও সত্যি। এরকমটাই হচ্ছে এখন আমাদের দেশে। শত মেয়ে তাদের সতীত্ব হারাচ্ছে বিয়ের আগে। কেউ বয়ফ্রেন্ডকে খুশি করাতে, আবার কেউ নিজের উত্তেজনার প্রভাবে।
.
→মেয়েদের উদ্দেশ্যেঃ সাবধান হন এই গল্প থেকে। নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারবেননা। ফুলের মতো জীবনটাকে অন্ধকারে ঠেলে দেবেননা। পরিত্যাগ করুন এসব বয়ফ্রেন্ড।