আজ দুবছর পর দেশে ফিরলাম।আকাশের মৃত্যুর পর কিছুটা
এবনরমাল হয়ে গিয়েছিলাম।
সারাদিন বিরবির করতাম আর আকাশের স্মৃতিগুলো মনে
করে কখনো কাঁদতাম আবার কখনো হাসতাম।মাঝে মাঝে
ওর নাম ধরে চিৎকার করে ওঠতাম।বাবা এসব দেখে
আমায় একজন সাইকাইট্রিসের কাছে নিয়ে যায়,উনি সব
দেখে আমাকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করানোর
কথা বলেন।তার কথামত বাবা আমাকে বিদেশ নিয়ে যান
চিকিৎসার জন্য।
.
বিদেশ গিয়েও আকাশকে ভুলতে পারি নি।কিভাবে
ভুলবো?ওরসাথে আমার কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে,যাকে
মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছি তাকে কি ভোলা যায়।
চিকিৎসা নেয়ার পর সুস্থ তো হয়েছি কিন্তু আকাশের
স্মৃতিগুলো মুছে যায় নি।
দেশে এসে আকাশের বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করলাম।
সব খোঁজখবর নিয়ে রওনা হলাম "আপন নিবাস"নামের
একটা এতিমখানার উদ্দেশ্য।
.
আমি দাড়িয়ে আছি এতিমখানার ভিতরে।একটু পর একটা
লোক একটা আট দশ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে এলো।আমি
ছেলেটার চোখদুটির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে
রইলাম।কতদিন পর দেখলাম চোখদুটি।ছেলেটাক
ে জিজ্ঞেস করলাম....
---বাবু তোমার নাম কি?
বাবু বলায় ছেলেটা মনেহয় রাগ করলো।আট দশ বছরের
একটা ছেলেকে বাবু বললে তো রাগ করবে ই।গাল ফুলিয়ে
জবাব দিলো....
----আমি বাবু নই,আমার নাম তূর্য।
আমি তখনও অবাক হয়ে তুর্যের মায়াবী চোখদুটির দিকে
তাকিয়ে রয়েছি।এই চোখের মায়ায় পড়েছিলাম আমি,এই
চোখের দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দিতে চেয়েছিলাম
বাকিটা জীবন।কিন্তু আমরা যা চাই তা সবসময় পূরণ হয়
না।কিছু কিছু চাওয়া অপূর্ণ ই থেকে যায়।
.
আকাশের সাথে পরিচয় হয় একটা ব্লাড ডোনেট ক্লাবে।
ওই গ্রুপের সদস্য ছিলো ও।আমি নতুন জয়েন করেছিলাম।
সবাই সবসময় ওর প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকতো সবসময়।সবার
বিপদে ও সবসময় এগিয়ে আসতো,কারো রক্তের প্রয়োজন
হলে ও সাহায্য করতো।তাছাড়া ও সন্ধানীর একজন কর্মী
ছিলো।ওর এই ভালো দিকগুলো আমায় ওর প্রতি দুর্বল
করে তোলে যা একসময় ভালোবাসায় রূপ নেয়।ওকে
ভালোবাসার কথা জানানোর পর ও কিছুটা গাইগুই
করলেও একসময় মেনে নেয়।আকাশ সবসময় বলতো....
-----অর্পা আমি মারা গেলে আমার চোখদুটো দান করে
যাবো।আমার চোখ দিয়ে কেউ পৃথিবীর সৌন্দর্য দেখতে
পাবে এটা আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া হবে।
ওর এই কথা শুনে ওকে খুব বকতাম।বলতাম তোমাকে
কোথাও যেতে দিবো না।ও হাসতো,আর আমি ওর সেই
চোখ দুটির দিকে অপলক তাকিয়ে থাকতাম। ছেলেদের
চোখও মায়াবী হয় এটা আকাশকে না দেখলে বুঝতে ই
পারতাম না।
.
এভাবে দুবছর কেটে যায়।বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ
দেয়া শুরু করে।আকাশ মাত্র মাস্টার্স শেষ করে জব
খুজছেঁ।ওকে সবকিছু বলার পর ও বললো....
----এখন দুটো রাস্তা খোলা আছে, হয় তোমার মা বাবার
পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করা, নাইলে পালিয়ে
যাওয়া।
আমি এখনো বেকার।তোমায় সুখে রাখতে পারবো না।
----তুমি মাস্টার্স পাশ করেছো,কিছু না কিছু করতে
পারবে ই।আর তোমার বন্ধুরা তো আছে ই।কোন সমস্যা
হবে না।
তারপরও আকাশ রাজি হতে চায় নি।শেষে ওর বন্ধুরা
জোর করে ওকে রাজি করায়।
.
আমরা পালিয়ে ওর ফুপুর বাসা শ্রীমঙ্গল চলে যাই।
সেখানে ওর বন্ধুরা সবাই মিলে ওর ফুপুকে সবকিছু খুলে
বলে ও রাজি করায়।
আমি বধূ সাজে খাটে বসে আছি নীল শাড়ি পড়ে।আকাশ
প্রায় ই বলতো...
----জানো অর্পা আমার একটা ইচ্ছে আছে, বাসর রাতে
আমার বউ নীল শাড়ি পরবে আর আমি নীল পাঞ্জাবী।
সারারাত দুজনে গল্প করতে করতে কাটিয়ে দিবো,একে
অপরের সম্পর্কে আরো ভালোভাবে জানবো।নতুন এক
পথচলা শুরু করবো দুজনে।
.
আমায় অপেক্ষায় রেখে আকাশ আমার প্রিয় বেলীফুল
আনতে গিয়েছিল।ওর বন্ধুরা বারবার মানা করলেও ও
শোনে নি।বলেছিল...
----প্রিয় মানুষটার পছন্দের জিনিসটা আমি নিজে ই
আনতে চাই।ওকে এটা দিয়েই আমাদের পথচলা শুরু করবো।
অনেকক্ষণ পার হওয়ার পরও যখন আকাশ আসলো না তখন
ওর বন্ধুরা খোজঁ নিতে গেলো।
ওর খোজঁ পাওয়া গেলো হাসপাতালে,সাদা কাপড়ে
ঢেকে রাখা হয়েছে আমার প্রিয় মানুষটাকে।আমার
প্রিয় ফুল নিয়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় ঘাতক বাস ওর
জীবন কেড়ে নেয়।ওর পকেটে তখনো বেলীফুলের
মালাটা রাখা ছিল।ওর মুখটা দেখে মনে হয়েছিল ও
ঘুমিয়ে আছে।আমি একটুও কাদিঁ নি,পাথর হয়ে
গিয়েছিলাম শোকে।ওর বন্ধুরা আমায় বাসায় রেখে এসে
ওর কাফন-দাফন সম্পন্ন করে।
.
দাফন করার আগে ওর কথামত ওর চোখদুটো দান করা হয়
সন্ধানীতে।আকাশ তারা হয়ে যায়,আর তূর্য নামের
ছেলেটা ফিরে পায় দৃষ্টিশক্তি।
আকাশ হারিয়ে যায় নি,তুর্যের মাঝে ও বেচেঁ আছে।
আকাশ মিশে আছে আমার সমস্ত অস্তিত্বে,আজো মনেহয়
আকাশ যেন আমায় বলছে....
----আমি তোমার মাঝে বেচেঁ আছি অর্পা,নিজেকে
কখনো একা ভেবো না।আমি সবসময় তোমার পাশে আছি
ছায়া হয়ে।
তূর্যের দিকে তাকিয়ে আমার চোখগুলো ঝাপসা হয়ে
আসে।ছেলেটা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার
দিকে।
.
প্রত্যেকটা মানুষের ই একটা স্বপ্ন থাকে । কাউকে
ভালোবাসার স্বপ্ন,,,ভালোবাসার মানুষটাকে নিয়ে
স্বপ্ন । কিন্তু সবার জীবনে সেই স্বপ্ন পূরন হয় না।সেই
স্বপ্নগুলো বাতাসে ভেসে বেড়ায় পালকের মতো।একসময়
তা পতিত হয় মাটিতে।
আমি আর বিয়ে করি নি, ওর স্মৃতি বুকে নিয়ে ই বেচেঁ
আছি।বাবা অনেকবার বলেছিল কিন্তু আমি রাজি হই নি।
যাকে ভালোবেসে তার নীল আকাশে ভালোবাসার
সূর্যোদয় দেখতে চেয়েছিলাম কিন্তু সেই সূর্য তো
হারিয়ে গেছে কোন এক দুর দিগন্তে।বাকি জীবনটা ওর
স্মৃতি নিয়ে ই কাটিয়ে দিবো।
এবনরমাল হয়ে গিয়েছিলাম।
সারাদিন বিরবির করতাম আর আকাশের স্মৃতিগুলো মনে
করে কখনো কাঁদতাম আবার কখনো হাসতাম।মাঝে মাঝে
ওর নাম ধরে চিৎকার করে ওঠতাম।বাবা এসব দেখে
আমায় একজন সাইকাইট্রিসের কাছে নিয়ে যায়,উনি সব
দেখে আমাকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করানোর
কথা বলেন।তার কথামত বাবা আমাকে বিদেশ নিয়ে যান
চিকিৎসার জন্য।
.
বিদেশ গিয়েও আকাশকে ভুলতে পারি নি।কিভাবে
ভুলবো?ওরসাথে আমার কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে,যাকে
মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছি তাকে কি ভোলা যায়।
চিকিৎসা নেয়ার পর সুস্থ তো হয়েছি কিন্তু আকাশের
স্মৃতিগুলো মুছে যায় নি।
দেশে এসে আকাশের বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করলাম।
সব খোঁজখবর নিয়ে রওনা হলাম "আপন নিবাস"নামের
একটা এতিমখানার উদ্দেশ্য।
.
আমি দাড়িয়ে আছি এতিমখানার ভিতরে।একটু পর একটা
লোক একটা আট দশ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে এলো।আমি
ছেলেটার চোখদুটির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে
রইলাম।কতদিন পর দেখলাম চোখদুটি।ছেলেটাক
ে জিজ্ঞেস করলাম....
---বাবু তোমার নাম কি?
বাবু বলায় ছেলেটা মনেহয় রাগ করলো।আট দশ বছরের
একটা ছেলেকে বাবু বললে তো রাগ করবে ই।গাল ফুলিয়ে
জবাব দিলো....
----আমি বাবু নই,আমার নাম তূর্য।
আমি তখনও অবাক হয়ে তুর্যের মায়াবী চোখদুটির দিকে
তাকিয়ে রয়েছি।এই চোখের মায়ায় পড়েছিলাম আমি,এই
চোখের দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দিতে চেয়েছিলাম
বাকিটা জীবন।কিন্তু আমরা যা চাই তা সবসময় পূরণ হয়
না।কিছু কিছু চাওয়া অপূর্ণ ই থেকে যায়।
.
আকাশের সাথে পরিচয় হয় একটা ব্লাড ডোনেট ক্লাবে।
ওই গ্রুপের সদস্য ছিলো ও।আমি নতুন জয়েন করেছিলাম।
সবাই সবসময় ওর প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকতো সবসময়।সবার
বিপদে ও সবসময় এগিয়ে আসতো,কারো রক্তের প্রয়োজন
হলে ও সাহায্য করতো।তাছাড়া ও সন্ধানীর একজন কর্মী
ছিলো।ওর এই ভালো দিকগুলো আমায় ওর প্রতি দুর্বল
করে তোলে যা একসময় ভালোবাসায় রূপ নেয়।ওকে
ভালোবাসার কথা জানানোর পর ও কিছুটা গাইগুই
করলেও একসময় মেনে নেয়।আকাশ সবসময় বলতো....
-----অর্পা আমি মারা গেলে আমার চোখদুটো দান করে
যাবো।আমার চোখ দিয়ে কেউ পৃথিবীর সৌন্দর্য দেখতে
পাবে এটা আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া হবে।
ওর এই কথা শুনে ওকে খুব বকতাম।বলতাম তোমাকে
কোথাও যেতে দিবো না।ও হাসতো,আর আমি ওর সেই
চোখ দুটির দিকে অপলক তাকিয়ে থাকতাম। ছেলেদের
চোখও মায়াবী হয় এটা আকাশকে না দেখলে বুঝতে ই
পারতাম না।
.
এভাবে দুবছর কেটে যায়।বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ
দেয়া শুরু করে।আকাশ মাত্র মাস্টার্স শেষ করে জব
খুজছেঁ।ওকে সবকিছু বলার পর ও বললো....
----এখন দুটো রাস্তা খোলা আছে, হয় তোমার মা বাবার
পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করা, নাইলে পালিয়ে
যাওয়া।
আমি এখনো বেকার।তোমায় সুখে রাখতে পারবো না।
----তুমি মাস্টার্স পাশ করেছো,কিছু না কিছু করতে
পারবে ই।আর তোমার বন্ধুরা তো আছে ই।কোন সমস্যা
হবে না।
তারপরও আকাশ রাজি হতে চায় নি।শেষে ওর বন্ধুরা
জোর করে ওকে রাজি করায়।
.
আমরা পালিয়ে ওর ফুপুর বাসা শ্রীমঙ্গল চলে যাই।
সেখানে ওর বন্ধুরা সবাই মিলে ওর ফুপুকে সবকিছু খুলে
বলে ও রাজি করায়।
আমি বধূ সাজে খাটে বসে আছি নীল শাড়ি পড়ে।আকাশ
প্রায় ই বলতো...
----জানো অর্পা আমার একটা ইচ্ছে আছে, বাসর রাতে
আমার বউ নীল শাড়ি পরবে আর আমি নীল পাঞ্জাবী।
সারারাত দুজনে গল্প করতে করতে কাটিয়ে দিবো,একে
অপরের সম্পর্কে আরো ভালোভাবে জানবো।নতুন এক
পথচলা শুরু করবো দুজনে।
.
আমায় অপেক্ষায় রেখে আকাশ আমার প্রিয় বেলীফুল
আনতে গিয়েছিল।ওর বন্ধুরা বারবার মানা করলেও ও
শোনে নি।বলেছিল...
----প্রিয় মানুষটার পছন্দের জিনিসটা আমি নিজে ই
আনতে চাই।ওকে এটা দিয়েই আমাদের পথচলা শুরু করবো।
অনেকক্ষণ পার হওয়ার পরও যখন আকাশ আসলো না তখন
ওর বন্ধুরা খোজঁ নিতে গেলো।
ওর খোজঁ পাওয়া গেলো হাসপাতালে,সাদা কাপড়ে
ঢেকে রাখা হয়েছে আমার প্রিয় মানুষটাকে।আমার
প্রিয় ফুল নিয়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় ঘাতক বাস ওর
জীবন কেড়ে নেয়।ওর পকেটে তখনো বেলীফুলের
মালাটা রাখা ছিল।ওর মুখটা দেখে মনে হয়েছিল ও
ঘুমিয়ে আছে।আমি একটুও কাদিঁ নি,পাথর হয়ে
গিয়েছিলাম শোকে।ওর বন্ধুরা আমায় বাসায় রেখে এসে
ওর কাফন-দাফন সম্পন্ন করে।
.
দাফন করার আগে ওর কথামত ওর চোখদুটো দান করা হয়
সন্ধানীতে।আকাশ তারা হয়ে যায়,আর তূর্য নামের
ছেলেটা ফিরে পায় দৃষ্টিশক্তি।
আকাশ হারিয়ে যায় নি,তুর্যের মাঝে ও বেচেঁ আছে।
আকাশ মিশে আছে আমার সমস্ত অস্তিত্বে,আজো মনেহয়
আকাশ যেন আমায় বলছে....
----আমি তোমার মাঝে বেচেঁ আছি অর্পা,নিজেকে
কখনো একা ভেবো না।আমি সবসময় তোমার পাশে আছি
ছায়া হয়ে।
তূর্যের দিকে তাকিয়ে আমার চোখগুলো ঝাপসা হয়ে
আসে।ছেলেটা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার
দিকে।
.
প্রত্যেকটা মানুষের ই একটা স্বপ্ন থাকে । কাউকে
ভালোবাসার স্বপ্ন,,,ভালোবাসার মানুষটাকে নিয়ে
স্বপ্ন । কিন্তু সবার জীবনে সেই স্বপ্ন পূরন হয় না।সেই
স্বপ্নগুলো বাতাসে ভেসে বেড়ায় পালকের মতো।একসময়
তা পতিত হয় মাটিতে।
আমি আর বিয়ে করি নি, ওর স্মৃতি বুকে নিয়ে ই বেচেঁ
আছি।বাবা অনেকবার বলেছিল কিন্তু আমি রাজি হই নি।
যাকে ভালোবেসে তার নীল আকাশে ভালোবাসার
সূর্যোদয় দেখতে চেয়েছিলাম কিন্তু সেই সূর্য তো
হারিয়ে গেছে কোন এক দুর দিগন্তে।বাকি জীবনটা ওর
স্মৃতি নিয়ে ই কাটিয়ে দিবো।