বুধবার, ৪ মে, ২০১৬

নিঃস্বার্থ ভালবাসা


রাত ১২:৩০ মিনিট.........
____ হ্যালো, তুমি কোথায়? (মেয়ে)
____ কেন, এতো রাতে মানুষ কোথায় থাকে? (ঘুম,ঘুম কন্ঠে- ছেলে)
____ তুমি যেখানেই থাক,, ১০ মিনিটের মধ্যো আমার বাসার নিচে আসো!...........
____ আমি পারব না......
____ কেন?
____ আমি অনেক ক্লান্ত, এখন একটু ঘুমাচ্ছি........
____ তাহলে আমি আসি, তোমার বাসার নিচে?
____ না,, কেন এরকম করছ?
____ প্লিজ আসো, অল্প কিছুক্ষণের জন্য..... ( কাদো, কাদো, কন্ঠে)
____ দেখ, এতো রাতে তুমি পাগলামো কর। আমি করতে পারব না.....
____ প্লিজ, প্লিজ একটা দুঃস্বপ্ন দেখিছি তোমায় নিয়ে। একবার আসো..........
____ আরে আমি ঠিক আছি........
____ ওই তুই আসবি কি,না বল ( রাগ জোরানো কন্ঠে)
____ না........
____ তাইলে আমি আসছি, যদি না পাই। চিৎকার চেঁচামেচি করব.......
____ ওকে, তুমি দাড়াও,, আমি আসছি। তুমি না............
____ এইত, লক্ষী ছেলে। আমি ওয়েট করছি...........
>>
নীলয় ও নীলিমা। দুজন দুজনাকে অনেক ভালবাসে। দুজনার দুবছরের বন্ধুত্বের পর, একবছর হল প্রেম চলছে। নীলয় অনার্স ৪র্থ বর্ষের ছাত্র। আর নীলিমা ৩য় বর্ষের ছাত্রি। পরিচয়টা হয়েছিল, নীলিমার ১ম বর্ষে ভর্তি হওয়ার পরে। 
ঠিক এভাবে.........
>>
নীলিমাঃ এই ছেলে শুনতো.....
নীলয়ঃ জ্বি, আমাকে বলছেন?
নীলিমাঃ হ্যা, বড়আপুদের সম্মান করতে জান না? 
নীলয়ঃ কেন, আমি তো কিছু করি নাই....
নীলিমাঃ যাও, একটা রিক্শা ডেকে দাও.....
তমাঃ এই নীলিমা, কি করিস? উনি ১ বছরের সিনিয়র ভাইয়া! ( নীলিমার বান্ধবি)
নীলিমাঃ কি? ( চোখ বড় করে নীলয়ের দিকে তাকিয়ে যেন বিশ্বাষই হয় না)
তমাঃ সরি, ভাইয়া। মিসটেক হয়ে গেছে! আর ওর হয়ে ক্ষমা চাইছি......
নীলয়ঃ............. ( হা, করে তাকিয়ে আছে!)
.
নীলিমা ও তমা দ্রুতপদে যাইগা ত্যাগ করে চলে গেল.......
.
পরেরদিন নীলিমা, নীলয়ের কাছে ক্ষমা চাই। তারপরে কিছু কথা-বার্তার মাধ্যোমে পরিচয়। তারপর সেখান থেকেই শুরু...........
>>
""নাহ্ ছেলেটার কোন সময়জ্ঞান নাই! রাস্তা অনুযায়ি, হেটে আসলেও ১৫-২০ মিনিটের বেশি লাগার কথা না। আর ওর নিজের গাড়িতেই, ৩০-৩৫ মিনিটেও আসতে পারল না!""
ভাবছে নীলিমা..........
আচ্ছা আর কিছুক্ষণ দেখা যাক্। 
দেখতে, দেখতে প্রায় ১ ঘন্টা হয়ে গেল! তবুও আসার খবর নেই, নীলয়ের।
"এখন নিজের উপরই রাগ হচ্ছে, নীলিমার। কেন যে মিথ্যা বলতে গেল!!"
অবশেষে নীলয়ের ফোনে, ফোন দিল নীলিমা। একি, ফোন বন্ধ! 
তাহলে কি হল? ভেবে কূল পাচ্ছে না নীলিমা। নিজের ওপর তো বটেই, নীলয়ের উপরেও প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। মনে হচ্ছে কাছে পেলে চিবিয়ে খেত!
আসুক না কাল দেখা করতে, তখন বোঝাব কত ধানে কত চাল!!
>>
পরেরদিন রাগে, অভিমানে ফোন দেয়নি নীলিমা। কিন্তু, পুরোটা দিন গেলেও নীলয় ১ বারের জন্যেও ফোন দেয়নি! তাই, রাত ৮ টার দিকে, নীলিমা ফেন দেই। কিন্তু ফোন বন্ধ! 
তাই নীলিমা, ওর বন্ধুদের ফোন দেই। নীলয়ের বন্ধুদের থেকে জানতে পারে, নীলয় গতকাল রাতে, একটা ট্রাকের সাথে "একসিডেন্ট" করেছে। এবং নীলয়ের অবস্থা ভয়ানক। 
মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেয়েছে। একটা পায়ের, হাটু পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়েছে। বর্তমানে ক'মাই আছে।
>>
১৪-১৫ দিন পরে.........
>>
নীলয় চারদিকে দেখছে। ও ইতিমধ্যো জানে, ওর একটা পায়ের একাংশ কেটে ফেলা হয়েছে। খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে না। ওর হঠাৎ মনে পড়ল, নীলিমা ওকে যেতে বলেছিল! যেতে পারেনি! ও এটাও জানে না, কতদিন হল, নীলিমার সাথে দেখা করা হয় না! কতদিন হল, ফোন দেয়া হয় না! 
নিশ্চয় মেয়েটা অনেক রাগ করে বসে আছে!!......
.
নীলিমাঃ এখন কি অবস্থা?
.
"নীলয় সামনে চেয়ে দেখল, নীলিমা ওর সামনে দাড়িয়ে। অনেক পরিবর্তন হয়েছে। শুকিয়ে গেছে, হাত-মুখের অবস্থা খারাপ। চোখের নিচে কালো কালি জমেছে"
.
নীলয়ঃ হুম ভালো, আমি দুঃখিত সেদিন দেখা করতে পারি নাই!!
নীলিমাঃ আসলে আমার জন্যেই আজ তোমার............ ( কেদে ফেলল)
নীলয়ঃ আরে কাদছ কেন? যা হওয়ার ছিল? তাই হয়েছে! এতে কারো হাত নেই। তো, "তোমার ভালো হল, নতুন কাউকে বিয়ে করে সুখি হও"....
নীলিমাঃ মানে? আমি তোমাকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করব না.....
নীলয়ঃ পাগলামো করার সময় না এটা। জীবনের সাথে খেলা চলে না.....
নীলিমাঃ আমি পারব না.... ( কেদে কেদে)
নীলয়ঃ কেন একটা পঙ্গুর সাথে...........
নীলিমাঃ তুমি যদি পঙ্গু হও, তো আমার জন্য, এর জন্য আমি দায়ি,, তাহলে আমারো একটা পা কেটে ফেলি?
নীলয়ঃ আরে না, তুমি আসলেই একটা পাগলি! ঠিক আছে.......
নীলিমাঃ না, কিছু ঠিক নেই.... (নীলয়ের বুকে মাথা গুজে মুখ লুকিয়ে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন