শুক্রবার, ১১ মার্চ, ২০১৬

অবহেলা অতঃপর উপসংহার

একে একে ৫ টা মেসেজ সেন্ড হওয়ার পর একটু খটকা লাগল সাথীর। প্রায় ৭মিনিট অতিক্রম হতে চলছে। কিছু না বলে হঠাৎ অফলাইনে চলে গেছে রিশান।
ভাবতে ভাবতে ফোন দিল সাথী......
তিন বার কল করার পর ফোন রিসিভ হলো ওপাশে..
সাথী: কই তুমি? হঠাৎ না বলে অফলাইনে গেলে কেন?
.
রিশান: একটু ব্যাস্ত।
.
সাথী: ব্যাস্ত বুঝলাম,কিন্তু একটু বলে যেতে পারতে। বোঝোই তো তুমি ছাড়া অামার ফেসবুক শূন্য মনে হয়।
.
রিশান: এত ঢং করো কেন? কখন কি করবো,কেন করবো সব তোমাকে বলে করতে হবে নাকি?
.
সাথী: বাবু তুমি এভাবে কথা বলছ কেন? অামি কি ভুল কিছু বলেছি? শুধু তো....
.
রিশান: চুপ থাকো তো। ফোন রাখো। অাজাইরা প্যাঁচাল পারতে পারবনা।
ওপাশে ঠাস করে ফোন রাখার শব্দ হলো...
ভেতরের সমস্ত প্রান্তরটা যেনো দুমড়ে-মুচড়ে অালোড়ন শুরু করল চাপা কষ্টের। অবাধ্য অশ্রুর বাঁধা না মানা উচ্ছাসে ফুঁপিয়ে উঠল সাথী।
.
প্রায় ছয় মাস অাগে ভার্চুয়াল নামের বর্তমান বাস্তব প্রতিবিম্বের অাধার ফেসবুকে পরিচয় উপরোক্ত দুঃখিনীর সাথে রিশান নামের ছেলেটার!

কাব্যজগৎ পেইজের কোন একটা কবিতার কমেন্টস দেখে রিশান এড দিয়েছিল সাথীকে। একসেপ্টের পর সৌজন্যতামূলক ধন্যবাদ। অতঃপর টুকিটাকি অালাপ! তারপর সাথীর পক্ষ থেকে কিঞ্চিৎ ভাব নেওয়ার প্রবণতা। মেয়ে বলে কথা।
কিন্তু শেষ পর্যন্তু ফ্রী হয়ে যায় দুজন। রিশানের সচ্ছল,মজাদার,কাব্যিক কথা-বার্তা ভাল লাগে সাথীর।

অতঃপর কিভাবে দুজন রিলেশনশিপে পৌছাঁল এটা নিশ্চয় অাপনাদের মত ভার্চুয়াল জগতের অভিঙ্গগতা সম্পন্ন বুদ্ধিমান/বুদ্ধিমতি ব্যাক্তিদের রোমান্টিতকা দিয়ে বোঝাতে হবে না।

অাস্তে অাস্তে রিশানের প্রতি দুর্বলতা,এবং নির্ভরশীল হয়ে পড়ল সাথী। কুমারী চিত্তের প্রথম ভাল লাগায় পরিনত হওয়া ভালবাসার সাথে সাথীর সমস্ত অাস্তীত্ব জুড়ে শুধুই রিশান!!!
প্রতিটা মুহূর্তে মনে হয় এখন কি করছে ছেলেটা? খেয়েছে? নাকি খেতে ভুলেই গেছে পাগলাটা? এসব ভাবনা তার প্রতিটি মুহূর্তের সঙ্গি হয়ে যায়। রিশান যেন তার সমস্ত বাগান জুড়ে ফোটা একটাই ফুল,পৃথিবীর কিছুই যেন সাথীর সামনে ধোঁয়াটে রিশান ছাড়া।

মেয়েটা এখনও ফুঁপিয়ে উঠছে মাঝে মাঝে। নিজেকে বার বার প্রশ্ন করেও উত্তর পায়না বোকা মেয়েটা কেন রিশান এমন করছে তার সাথে? বেশ কিছু দিন থেকেই সাথী ব্যাপারটা অনুভব করছে কিন্তু রিশানের দুই একটা মিষ্টি কথায় পানি হয়ে যায়।

ফোন দিলে রিসিভ করে না। নিজে থেকে ফোন খুব কম দেয়,সাথী দিলেও একটু কথা বলে সুকৌশলে ব্যাস্ততার দোহায় দিয়ে পরে কথা বলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফোট কেটে দেয়।

অনলাইনে(ফেসবুক) অাসলেও সাথী টেক্সট না দিলে অাগে রিপ্লে দেয় না রিশান! অথচ কিছু দিন অাগেও সাথী ফোন রিসিভ না করলে এই রিশান ফোনের পর ফোন দিত কোন ক্লান্তি ছিল না,মেসেজের পর মেসেজে সাথীর ইনবক্সটা মাতিয়ে রাখত সারাদিন।
,,
নিস্তব্দ রজনীর নিঃস্বজ্ঞ ঝিঝি পোকা গুলোও যেন উপহাস করছে সাথীর দীর্ঘনিঃশ্বাস থেকে নির্গত কার্বন-ডাই-অক্সাইডের! ক্ষত-বিক্ষত ভেতরটার প্রবাহমান বেদনার চাপা অার্তনাদ চাপাই রেখে ঘুমিয়ে পড়ল সাথী। জেগে থাকল শুধু কিছু ছিন্ন হতাশা।

সকাল ৭ টা। ফোনের ভাইব্রেশনে চমকে উঠল সাথী! নিশ্চয় রিশান ফোন করছে ভেবে। তড়িঘড়ি করে ফোনটা হাতে নিয়ে হতাশ হলো অন্য একটা কল দেখে।
রাগে ফোনটা সুইসড অফ করে ভাবল রিশান ফোন না দেওয়া পর্যন্তুু অামিও ফোন দিব না। দেখি কতক্ষন ফোন না দিয়ে থাকতে পারে।
.
সময় ১১.২৫। ইতি মধ্যে ছোট ভাইকে মামুলি কারনে দুই-চারটা কিলঘুসি মারা সম্পন্ন করেছে সাথী। এখন অাম্মুর অাদালতে বাদি হয়ে সাথীর ছোট ভাই সাথীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ করতে ব্যাস্ত। অাম্মুর সাথে উচ্চবাচ্চ্য হয়েছে বেশ কয়েকবার সাথীর। সো-কেসে রাখা রোমান্টিক ভজ্ঞিমায় দুটি লাভ বার্ডের মাঝে একটা মাথা অার একটার পা ভাঙ্গার পিছনেও তার অবদান!

সবকিছু অাছে,সবকিছুই স্বাভাবিক তবুও অস্থির মনে হচ্ছে সাথীর,মনে হচ্ছে সবকিছু অসম্পূর্ন! কারন একটায় রিশানের সাথে কথা বলা হয়নি তার অাজ। সকাল থেকে বার বার ফোনটার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে অপেক্ষা,এই হয়ত ফোন দিবে রিশান কিন্তু.....! শেষ হয়না কোন এক নির্বোধের প্রতি জমানো অভিমানের পরশে মাখা অপেক্ষা। অাবার একবার হেরে যায় নিজের কাছে সাথী। সব অভিমানের প্রতিজ্ঞা ভুলে ফোন দেয় রিশানকে...
.
প্রায় ৫ বার কল করার পরে রিশান ফোন রিসিভ করল..
সাথী: হ্যালো? কেমন অাছো?
.
রিশান: ভাল। তুমি?
.
সাথী: কাল থেকে একটাবার ফোন দাওনি,অামার কত কষ্ট হয় বোঝনা রিশান?
.
রিশান: অাসলে একটু ব্যাস্ত ছিলাম। এখনও ব্যাস্ত।
.
সাথী: কি এমন ব্যাস্ততা একটু বলবে প্লিজ? খুব কথা বলতে ইচ্ছে করছে তোমার সাথে প্লিজ একটু কথা বলো।
.
রিশান: পরে বলব।এখন রাখলাম ।বাই।
.
সাথী: প্লিজ অার দুই মিনিট কথা ব.....!! হ্যালো? হ্যালো রিশান?
ফোনটা কেটে দিয়েছে ওপাশে।
ওপাশে রিশান নামের ছেলেটা সাথীর অাকুতির অপেক্ষায় নেই। ব্যাস্ততার অযুহাতে মুক্ত করেছে সে নিজেকে অাবার একবার!!!!

কানের সাথে চেপে রাখা ফোন,অভীমানি কম্পিত দুটি ঠোটে অব্যক্ত কাতরানি,গন্ডদেশ বয়ে গড়িয়ে পরা নোনতা জ্বলের ধারায় এখন সাথী নামের বোকা মেয়েটার শেষ উপহার!

উপরোক্ত দৃশ্যপটে ফুটে উঠেছে স্পষ্ট অবহেলিত ভালবাসার প্রতিচ্ছবি ! ভালবাসা শব্দটা ব্যাবহার করা হয়ত উচিত হলো না। রিশান নামের ছেলেটা কেন সাথী নামের মেয়েটাকে অবহেলা করছে বলতে পারেন? কেন বার বার ব্যাস্ততার অজুহাতে রিশান নিজেকে অাড়াল করে নিচ্ছে বলতে পারবেন?

কারন একটাই। অামরা মানুষ। হ্যাঁ অপরাধ নয় অামরা মানুষ বলে। অপরাধ অামাদের বৈশিষ্ট্যে। যখন রিশান বুঝতে পারল সাথী তার প্রতি যথেষ্ট দুর্বল,যথেষ্ট নির্ভরশীল হয়ে পরছে,যখন রিশান বুঝতে পারল সাথীকে রিক্ত,তিক্ত,চোখের জলে সিক্ত করলেও সাথী চলে যেতে পারবে না ঠিক তখনই অবহেলা করতে শুরু করল।

এটাকে অহংকার বললেও ভুল হবে না। অার মানুষ হিসাবে একটা অভ্যাস/বদঅভ্যাস অামাদের অাছে,যার কাছে যত বেশি অবহেলা,অনাদর পাওয়া যায়,তার প্রতি অাকর্ষন,মনোযোগ তত বেশি বৃদ্ধি পায়। অাজব হলেও সত্য। শুধু রিশান নয় পৃথিবীর প্রতিটা মানুষের ক্ষেত্রে এটা স্বাভাবিক।
.
রিশানের স্থানে সাথী থাকলেও ব্যাপারটার প্রতিক্রিয়া একই হতো।
এক কথায় যতটা সহজলভ্য করবেন নিজেকে যার কাছে তার কাছে ততটা অবহেলিত হবেন,হোক সেটা ছেলে কিংবা মেয়ে।

তবে অবহেলা করা যেমন ভাল চোখে দেখা যায় না,ঠিক তেমনি নিজেকে যে সহজলভ্য করবে তাকেও সাধুর অাসনে বসা যায় না। "প্রেমে সর্গ প্রেমেই নরক,প্রেমেই বাঁচা মরা" একটা গানের কলি এইটা। বাস্তবে পুরোটা না হলেও অধিক ক্ষেত্রে কথাটা কার্যকরী। অাপনি ভালবাসবেন কিন্তু ভালবাসার মাঝে উঁচু-নিচু ভাবে নিজেদের অাসনটা ঠিক করবেন তবে তাকে ভালবাসা বলবেন না। ভুল করেছেন অাপনি অথবা অাপনার ভালবাসার মানুষটি,এমন তো কথা নেই দুজনের মাঝে যে ভুল করেছে সে অাগে সরি বলবে অথবা অাগে কথা বলবে। অাপনি অাগে বলুন সরি,নিজে খুজে গিয়ে কথা বলুন এতে সম্মান কমবে না বরং অাপনার মাহানুভবতায় মুগ্ধ হয়ে নিজের ভুলটা বুঝতে পারবে অাপনার প্রিয়জন।

এমন তো কোন চুক্তি নেই ভালবাসার মাঝে যে ভালবাসার প্রতিদান অবহেলা হতে হবে।
অাপনার ভাল লাগছেনা বীপরিত পাশের মানুষটাকে,তার উপস্থিতি এড়িয়ে চলতে চান ভালো কথা,সরাসরি তাকে বলে দিন অাপনার সিদ্ধান্তটা,তিলে তিলে অবহেলা করে সর্গীয় ভালবাসাটাকে ঘৃনায় পরিনত হওয়ার সুযোগ দিবেন না দয়া করে।
তবে মানুষ চিনতে ভুল করবেন না। সৌভাগ্য দড়জায় কড়া নাড়লে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া বোকামি ছাড়া অার কিছু নয়।

কিন্তু তবুও যদি রিশানের মতো অবহেলা করতে থাকেন তাহলে শেষ পরিনতি কি হতে পারে?
অবহেলা নামের অাগুনটা যে কতটা পোড়াতে পারে তার সারমর্মটা বুঝা যায় ঠিক তখনই যখন এমন কিছু নিজেকে পোহাতে হয়। শত শত অবহেলার তিক্ত পুথি দিয়ে গাঁথা মালাটা বড় হতে থাকবে।

এক দিন... এক সপ্তাহ... এক মাস.. কয়েক মাস... একদিন ঠিকই উল্টে যাবে ধারাবাহিকতা! সাথীর মত অসংখ্য অবহেলা প্রাপ্ত মেয়ে/ছেলে দের বিন্দু বিন্দু করে হৃদয়ে জমানো অসীম ভালবাসাগুলো অবহেলার প্রহারে পরিণত হবে ঘৃনার অগ্নিকুন্ডে!! যতটা ভালবাসত বীপরিত পাশে মানুষটা অাপনাকে ঠিক ততটায় ঘৃনার উদ্ভব হবে তার অাপনার সান্নিধ্যে।

তখন নীয়তির দোষ দিয়ে কপাল ঘসবেন না পাথরে, সমস্ত মেয়ে অথবা ছেলে জাতির পবিত্র পৃষ্টায় অাপনার কুলষিত মানসিকতা দিয়ে যেন লিখবেন না স্বার্থপর শব্দটা!
কারন পরিবর্তন,পরিবর্ধন,পরিনতি সবকিছুর জন্য দ্বায়ী থাকবেন তখন অাপনি।
হ্যাঁ শুধুই অাপনি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন