বুধবার, ২৩ মার্চ, ২০১৬

অকল্পনীয় ভালোবাসা

আমি দাঁড়িয়ে আছি ঢাকা গাবতলী বাস স্টান্ড । একটু
আগে বাস আসলো, আমি বাসে উঠেই তিন নাম্বার
সিটের দিকে তাকিয়ে দেখি সেখানে কেউ নাই।
দুইটা সিটই খালি, সাথে সাথে আমি গিয়ে তিন নাম্বার
সিটের জানালার পাশের বসে পরলাম । কিছু সময়ের
মধ্যেই বাসের সবাই উঠে গেল, আমার সিটে আমি
একাই, আমার পাশে কেউই নাই বসার জন্য, আমার
জন্য খুব ভালোই হয়েছে, আমার একা থাকতে খুব
ভাল। কিছু সময়ের মধ্যেই বাস ছেড়ে দিল তার
গন্তব্যে রংপুরের উদ্দেশ্যে । আমি জানালাটা
খুলে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছি।
.
বাহিরে তাকিয়ে দেখছি কত মানুষকে ছাড়িয়ে
আমাদের বাস চলছে, রাস্তার পাশে নানা রকমের
মানুষ, যে যার কাজে ব্যস্ত। বাহিরে তাকিয়ে থাকতে
থাকতে মনে পরে গেল এক বছর আগের কথা
সেই দিনটা ছিল ১৪.০২.২০১৫ ইং। এই দিনেই আমার
"বর্ষা কন্যা" নমের একটা আইডির সাথে চ্যাটিং
হয়েছিল প্রথম। আমিই প্রথমে ম্যাসেজ দিয়েছিলাম
যেমন ---
.
---কেমন আছেন?
---ঠান্ডা।
---ওওও, কোথায় থাকেন?
---বাসায়।
---কি ব্যাপার আমিই শুধু আপনাকে জিজ্ঞেস করবো,
আপনি করবেন না?
---না, আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করার ইচ্ছা আমার নাই।
---হুম ভাল, নাম কি আপনার?
---তাসমীম।
---খুবই খারাপ নাম আপনার?
---খুব ভাল,
(আমি মনে মনে বললাম আমার সাথে কথা বলবেন না
ব্যবস্থা করছি একটু পর)
---আচ্ছা! আপনার মনে খুব কষ্ট তাই আপনি এমন
করছেন তাই না?
---আপনি জানেন কিভাবে?
---আপনার কথা শুনে বুঝলাম, আচ্ছা বলেন তো
আপনার মনে এত কিসের কষ্ট?
.
তারপর শুরু হল তার কথা বলা, কিসের জন্য এত কষ্ট?
কি কারণে, কেন এখনো কষ্ট পাচ্ছে? সব
আমাকে বলল। কথা গুলো শুনে আমারো কিছুটা
কষ্ট হয়েছিল, তার সব কষ্টের মূল একটি ছেলে।
মানুষ কতটা খারাপ হতে পারে তাও বুঝলাম আবার নতুন
করে তার কাছ থেকে। তারপর থেকে কথা বলা শুরু
প্রতিদিন ফেইসবুকে আসলেই তার ম্যাসেজ
আগে পেতাম। যেই মেয়ে কোন প্রকার প্রশ্ন
করতো না, সেই তার এখন প্রশ্নের শেষ
কোথায় সে নিজেও জানে না।
.
সে এখন কথার ঝুরি নিয়ে বসছে আমার সাথে কথা
বলার জন্য । এভাবে কথা বলতে বলতে ৬ মাস পার
হয়ে গেল। এখন সে ফেইসবুকে ঢুকলে
আমাকে ছাড়া কিছুই বোঝেনা। আমারো ভাল
লাগতো তার সাথে কথা বলতে। আমি আসতে
আসতে তার প্রতি কিছুটা দূর্বল ছিলাম কিন্তু বুঝতে
দিতাম না। কারণ,সে যদি বুঝতে পারে আমি তার প্রতি
দূর্বল, তাহলে হয়তো আমার সাথে কথাই বলবে না।
তাই আমি তাকে বুঝতে দিতাম না। একদিন কথা বলে
বুঝলাম সে আমার প্রতি প্রায় অনেকটা দূর্বল।
.
তাই একদিন তাকে আমার মনে তার জন্য জমানো যত
কথা ছিল, তার জন্য সাঁজানো যত কথা ছিল, সব কথা
গুলো এক এক করে সব বলেই দিলাম আমি, আমি
আপনাকে পছন্দ করি অনেক আগে থেকে,
কিন্তু বলতে পারিনি। আপনার জীবনে দুঃখের কারণ
একটা ছেলে, তাই হয়তো আর একটা ছেলেকে
আপনার বিশ্বাস না হওয়াটাই সাভাবিক,কিন্তু সবাই এক না।
আজ থেকে আপনাকে সুখ না দিতে পারি, তবে দুঃখ
দিব না, আপনাকে হাজার বার "আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ
নাও বলতে পারি, তবে একটা বার মনের গভীরে
থেকে অনেক ভালবাসা জমা হয়ে আসা হাজারো
ভালবাসার সমান একটি বার মন খুলে বলবো আমি
আপনাকে অনেক ভালবাসি। আপনি কি ভালবাসবেন এই
আমাকে?
.
সেও রাজি হয়ে গেল, রাজি না হয়ে তো উপায়
নেই কারণ সেও তো আমার প্রতি দূর্বল। তবে
আমাকে কিছু শর্ত দিয়েছিল, আমি যেন ঐ
ছেলেদের মত না হই যারা তার ভালবাসার মানুষের
সাথে খারাপ ব্যবহার করে, বকাবকি যেন না করি, তার
কথা যেন কিছুটা হলেও শুনি। আমি তো এক পায় রাজি,
যদি অন্য পা না থাকে তাও রাজি, কারণ আমিও চাই কারো
সাথে আমার জীবনের কিছু কষ্ট, কিছু সুখের কথা
শেয়ার করতে। কারো ভালবাসার মধ্যে থাকতে,
কারো রাগ মাখা চেহারার বকা খেতে, ঝারি খেতে,
না খেলে রাগ করবে, আবার বকা দিবে। আমি তো
সব শর্তে রাজি।
.
এভাবে হয়ে গেল আমাদের ভালবাসা। এরপর
থেকে আমার দিন গুলো খুব খারাপ যাচ্ছে ওর জারি
খেতে খেতে। সকালে উঠতে লেট হলে
ঝারি, লেট করে খাওয়ার জন্য ঝারি, বেশি সময়
ফেইসবুকে থাকলে ঝারি, বেশি রাত জাগলেই ঝারি,
আর অন্য মেয়েদের দিকে তাকানোর কথা কি
বলবো। অন্য মেয়েদের দিকে এমনিতেই আমি
খুব কম তাকাই। এখন তাসমীম আমার জীবনের
আশার পর থেকে মেয়েদের দিকে তাকানোর
আগেই ওর ঝারি কথা চোখে ভাসে। এই বুঝি
আমাকে মাইর দেওয়া শুরু করলো, তাই ভুলেও অন্য
মেয়েদের দিকে তাকাই না যদি আবার ঝারি দেয়?
.
এসব ভাবতে ভাবতে কিভাবে যে অনেক সময় পার
হয়ে গেল নিজেও বুঝতে পারিনি। পেরায় ৬ ঘন্টা
পর, দুপুর ০২: ১১ মিনিটে বাস থেকে নামলাম রংপুর
বাস স্টান্ড । বাস থেকে নেমে দীর্ঘ একটা
নিশ্বাঃস ছেড়ে দিলাম। এরপর একটু সামনে যেতেই
কোথা থেকে বাতাস এসে আমাকে একদম ঠান্ডা
করে দিল। সামনে গিয়ে তাসমীমকে কল দিলাম।
আমাকে বলল পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করতে। আমি মিনিট
দুই অপেক্ষা করার পর সামনের দিকে তাকিয়ে আছি,
তিন মিনিটের মধ্যেই দেখলাম তিনজন মেয়ে
হেঁটে আসছে। তবে একজন হিজাব পরা আর অন্য
দুইজন সাধারণ পোশাক পরা।
.
হিজাব পরা মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আর অন্য দুই মেয়ে আমাকে দেখে আসচ্ছে।
সাথে সাথে আমার শরীরের পোশাকের দিকে
তাকালাম, আমার শরীরের খুজঁতেছি কোথাও আবার
কাকে পায়খানা করলো নাকি যে মেয়ে দুইটা
এইভাবে আসচ্ছে। না কোথাও পায়খানার তেমন
কিছুই পেলাম না, তার মানে কি এরা তিনজন আমার
কাছেই এসেছে।
.
আমি আবার হিজাব পরা মেয়েটার দিকে তাকালাম,
তাকিয়ে বুঝতে পারলাম এরা আমাকে নিতেই
এসেছে। হিজাব পরার জন্য শুধু তার চোখ দু'টোই
দেখা যাচ্ছে। তার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম
কি মায়া সেই চোখে, শুধু তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছা
করে, চোখ ফেরানো দায়। আমি আবার তার
ভালবাসায় হারিয়ে গেলাম। এর মধ্যেই তিনজন আমার
সামনে এসেই বলছে :
---কোন সমস্যা হয়নি তো আসতে?
---না না কোন সমস্যা হয়নি, আপনারা সবাই কেমন
আছেন?
---হুম ভাল আছি, আচ্ছা চলুন কোথাও বসি?
---না বসবো না।
---কেন বসবেন না, এত পথ জার্নি করে
এসেছেন এখন কোথাও বসে কিছু খেয়ে
নেন?
---না বসবো না, এই ছয় ঘন্টা বাসে ভিতর বসেই ছিলাম
এখন আপনাদের সাথে ঘুরবো চলুন?
---ওকে, আপনি যা ভাল মনে করেন?
---হুম চলেন তাহলে?
.
ওদের মধ্যে একজন বলল এই যে হিজাব পরা এই
হল আপনার তাসমীম। যান মহারানী আপনার মহারাজার
সাথে কথা বলেন?এই কথা বলেই তারা দুই জন হিহিহি
করে হেসে দিল। তাসমীমের চোখ-মুখ লজ্জায়
লাল হয়ে গেছে হয়তো। এরপর আমি আর
তাসমীম একটু সামনে একটা বেঞ্চে বসে আমি
জিজ্ঞেস করলাম ::
---কেমন আছো?
---ভাল, আপনি?
---ভাল, তোমার পরিবারের সবাই কেমন আছেন?
---ভাল, আচ্ছা আপনি বাসে উঠার পর কিছু
খেয়েছিলেন?
---না কিছুই খাইনি।
---ভাল করেছেন?
এটা বলেই তাসমীম ওর ব্যাগে হাত ডুকালো, হাত
ডুকানোর সময় খালি হাত ডুকিয়েছিল কিন্তু বের করার
সময় ওর হাতে একটা বক্স দেখতে পেলাম। বক্সটা
নামিয়ে আমার কাছে দিল। আমি খুলে দেখি বক্সে
লুডুস, তাসমীম আমাকে বলল তোমার জন্য বানিয়ে
এনেছি খেয়ে নেও। আমি চামিস হাতে নিয়ে
বললাম আগে তুমি খাবে তারপর আমি। ও না বলল, তখন
আমিও বললাম ঠিক আছে আমিও খাবো না? তখন সে
রাজি হল খাওয়ার জন্য।
.
এরপর ওর হিজাব থেকে মুখের কাপড়টা খুলল আমি
তো ওর চেহারা দেখে আবার হারিয়ে গেলাম? কি
সুন্দর চেহারা একদম পরিই হবে দুই কানে দুইটা
ছোটো ছোটো দুল, চোখের ভুরুতে
কাজল, ঠোটে হালকা গোলাপি লিপিস্টিক, অসাধারণ
দেখাইছে তাকে, আমি আবার তার ভালবাসার প্রেম
পরে গেলাম।
---এই কি হল এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? কি
দেখছো এইভাবে?
---না না কিছুই না। আসলে তোমাকে দেখে আমি
আবার তোমার প্রেমে পরে গেলাম?
---
কিছু বলল না লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলছে!
---যা দুষ্ট! আচ্ছা এখন খেয়ে নেও?
---তুমি খাবে না?
---না।
---আচ্ছা হা কর আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি? এরপর
ও হা করলো আমি ওকে খাইয়ে দিলাম তারপর আমিও
খেলাম। খাওয়া শেষে আমরা ঘুরতে যাওয়ার জন্য
এরপর আমরা সবাই গেলাম এক বিরাট বাড়ির সামনে
সেখানে
.
সেই বাড়িটার নাম "তাজহাট জমিদার বাড়ি"। সেখানে
আমরা অনেক সময় ঘুরে কাটালাম। তারপর আমরা ঝাল
মুরি খেলাম। এরপর আমি আর তাসমীমা একটা
বেঞ্চে বসে কথা বলছিলাম তখন তাসমীমা
জিজ্ঞেস করলো আচ্ছা কাল ১৪ ই ফ্রেব্রুয়ারি
"বিশ্ব ভালবাসা দিবস " গেল কাল না এসে তুমি আজ
আসলে কেন?
.
আমার জন্য তোমাকে ভালবাসার কোন দিবস নাই,
আমার জন্য সব দিনেই তোমাকে ভালবাসার দিবস,
আর আমার কাছে প্রতিদিনেই তোমাকে ভালবাসার
দিন?
.
এই কথা শুনে তাসমীমা কান্না করে দিল। আমি ওকে
আমার বুকের মাঝে নিয়ে ওর কপালে একটা পাপ্পি
এঁকে দিলাম। তাসমীমা আরো কান্না করছে আর
বলছে তুমি আমাকে এত ভালবাস রাকিব,, ( ছেলেটির
নাম)
.
হ্যাঁ আমি তোমাকে অনেক অনেক অনেক
ভালবাসি সোনা।
.
এরপর আমাকে বিদায় দিতে সবাই বাস স্টান্ড
আসলো। আমি সবাইকে বায় বলে তাসমীমকে
বললাম তোমাকে অনেক ভালবাসি, তোমাকে
ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না। এই কথা শুনেই
তাসমীম কান্না কন্ঠে বলছে আমি তোমাকে
ছাড়তে পারবো না রাকিব? কথা গুলো বলতেই কান্না
শুরু করে দিল। বাস চলে এসেছে, আমি বাসে
উঠে বসলাম কিন্তু আমার মনটা এখনো ওর কাছে
পরে আছে, সিটে বসে বায় বলতেই বাস ছেড়ে
দিল। হয়তো যত সময় বাস দেখতে পারবে তত
সময় সেখানেই দাড়িয়ে কান্না করতে থাকবে এই
কথা ভাবতেই আমার চোখের কোণে এক
ফোঁটা জল এসে গেল,,,,,,

শুক্রবার, ১১ মার্চ, ২০১৬

অবহেলা অতঃপর উপসংহার

একে একে ৫ টা মেসেজ সেন্ড হওয়ার পর একটু খটকা লাগল সাথীর। প্রায় ৭মিনিট অতিক্রম হতে চলছে। কিছু না বলে হঠাৎ অফলাইনে চলে গেছে রিশান।
ভাবতে ভাবতে ফোন দিল সাথী......
তিন বার কল করার পর ফোন রিসিভ হলো ওপাশে..
সাথী: কই তুমি? হঠাৎ না বলে অফলাইনে গেলে কেন?
.
রিশান: একটু ব্যাস্ত।
.
সাথী: ব্যাস্ত বুঝলাম,কিন্তু একটু বলে যেতে পারতে। বোঝোই তো তুমি ছাড়া অামার ফেসবুক শূন্য মনে হয়।
.
রিশান: এত ঢং করো কেন? কখন কি করবো,কেন করবো সব তোমাকে বলে করতে হবে নাকি?
.
সাথী: বাবু তুমি এভাবে কথা বলছ কেন? অামি কি ভুল কিছু বলেছি? শুধু তো....
.
রিশান: চুপ থাকো তো। ফোন রাখো। অাজাইরা প্যাঁচাল পারতে পারবনা।
ওপাশে ঠাস করে ফোন রাখার শব্দ হলো...
ভেতরের সমস্ত প্রান্তরটা যেনো দুমড়ে-মুচড়ে অালোড়ন শুরু করল চাপা কষ্টের। অবাধ্য অশ্রুর বাঁধা না মানা উচ্ছাসে ফুঁপিয়ে উঠল সাথী।
.
প্রায় ছয় মাস অাগে ভার্চুয়াল নামের বর্তমান বাস্তব প্রতিবিম্বের অাধার ফেসবুকে পরিচয় উপরোক্ত দুঃখিনীর সাথে রিশান নামের ছেলেটার!

কাব্যজগৎ পেইজের কোন একটা কবিতার কমেন্টস দেখে রিশান এড দিয়েছিল সাথীকে। একসেপ্টের পর সৌজন্যতামূলক ধন্যবাদ। অতঃপর টুকিটাকি অালাপ! তারপর সাথীর পক্ষ থেকে কিঞ্চিৎ ভাব নেওয়ার প্রবণতা। মেয়ে বলে কথা।
কিন্তু শেষ পর্যন্তু ফ্রী হয়ে যায় দুজন। রিশানের সচ্ছল,মজাদার,কাব্যিক কথা-বার্তা ভাল লাগে সাথীর।

অতঃপর কিভাবে দুজন রিলেশনশিপে পৌছাঁল এটা নিশ্চয় অাপনাদের মত ভার্চুয়াল জগতের অভিঙ্গগতা সম্পন্ন বুদ্ধিমান/বুদ্ধিমতি ব্যাক্তিদের রোমান্টিতকা দিয়ে বোঝাতে হবে না।

অাস্তে অাস্তে রিশানের প্রতি দুর্বলতা,এবং নির্ভরশীল হয়ে পড়ল সাথী। কুমারী চিত্তের প্রথম ভাল লাগায় পরিনত হওয়া ভালবাসার সাথে সাথীর সমস্ত অাস্তীত্ব জুড়ে শুধুই রিশান!!!
প্রতিটা মুহূর্তে মনে হয় এখন কি করছে ছেলেটা? খেয়েছে? নাকি খেতে ভুলেই গেছে পাগলাটা? এসব ভাবনা তার প্রতিটি মুহূর্তের সঙ্গি হয়ে যায়। রিশান যেন তার সমস্ত বাগান জুড়ে ফোটা একটাই ফুল,পৃথিবীর কিছুই যেন সাথীর সামনে ধোঁয়াটে রিশান ছাড়া।

মেয়েটা এখনও ফুঁপিয়ে উঠছে মাঝে মাঝে। নিজেকে বার বার প্রশ্ন করেও উত্তর পায়না বোকা মেয়েটা কেন রিশান এমন করছে তার সাথে? বেশ কিছু দিন থেকেই সাথী ব্যাপারটা অনুভব করছে কিন্তু রিশানের দুই একটা মিষ্টি কথায় পানি হয়ে যায়।

ফোন দিলে রিসিভ করে না। নিজে থেকে ফোন খুব কম দেয়,সাথী দিলেও একটু কথা বলে সুকৌশলে ব্যাস্ততার দোহায় দিয়ে পরে কথা বলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফোট কেটে দেয়।

অনলাইনে(ফেসবুক) অাসলেও সাথী টেক্সট না দিলে অাগে রিপ্লে দেয় না রিশান! অথচ কিছু দিন অাগেও সাথী ফোন রিসিভ না করলে এই রিশান ফোনের পর ফোন দিত কোন ক্লান্তি ছিল না,মেসেজের পর মেসেজে সাথীর ইনবক্সটা মাতিয়ে রাখত সারাদিন।
,,
নিস্তব্দ রজনীর নিঃস্বজ্ঞ ঝিঝি পোকা গুলোও যেন উপহাস করছে সাথীর দীর্ঘনিঃশ্বাস থেকে নির্গত কার্বন-ডাই-অক্সাইডের! ক্ষত-বিক্ষত ভেতরটার প্রবাহমান বেদনার চাপা অার্তনাদ চাপাই রেখে ঘুমিয়ে পড়ল সাথী। জেগে থাকল শুধু কিছু ছিন্ন হতাশা।

সকাল ৭ টা। ফোনের ভাইব্রেশনে চমকে উঠল সাথী! নিশ্চয় রিশান ফোন করছে ভেবে। তড়িঘড়ি করে ফোনটা হাতে নিয়ে হতাশ হলো অন্য একটা কল দেখে।
রাগে ফোনটা সুইসড অফ করে ভাবল রিশান ফোন না দেওয়া পর্যন্তুু অামিও ফোন দিব না। দেখি কতক্ষন ফোন না দিয়ে থাকতে পারে।
.
সময় ১১.২৫। ইতি মধ্যে ছোট ভাইকে মামুলি কারনে দুই-চারটা কিলঘুসি মারা সম্পন্ন করেছে সাথী। এখন অাম্মুর অাদালতে বাদি হয়ে সাথীর ছোট ভাই সাথীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ করতে ব্যাস্ত। অাম্মুর সাথে উচ্চবাচ্চ্য হয়েছে বেশ কয়েকবার সাথীর। সো-কেসে রাখা রোমান্টিক ভজ্ঞিমায় দুটি লাভ বার্ডের মাঝে একটা মাথা অার একটার পা ভাঙ্গার পিছনেও তার অবদান!

সবকিছু অাছে,সবকিছুই স্বাভাবিক তবুও অস্থির মনে হচ্ছে সাথীর,মনে হচ্ছে সবকিছু অসম্পূর্ন! কারন একটায় রিশানের সাথে কথা বলা হয়নি তার অাজ। সকাল থেকে বার বার ফোনটার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে অপেক্ষা,এই হয়ত ফোন দিবে রিশান কিন্তু.....! শেষ হয়না কোন এক নির্বোধের প্রতি জমানো অভিমানের পরশে মাখা অপেক্ষা। অাবার একবার হেরে যায় নিজের কাছে সাথী। সব অভিমানের প্রতিজ্ঞা ভুলে ফোন দেয় রিশানকে...
.
প্রায় ৫ বার কল করার পরে রিশান ফোন রিসিভ করল..
সাথী: হ্যালো? কেমন অাছো?
.
রিশান: ভাল। তুমি?
.
সাথী: কাল থেকে একটাবার ফোন দাওনি,অামার কত কষ্ট হয় বোঝনা রিশান?
.
রিশান: অাসলে একটু ব্যাস্ত ছিলাম। এখনও ব্যাস্ত।
.
সাথী: কি এমন ব্যাস্ততা একটু বলবে প্লিজ? খুব কথা বলতে ইচ্ছে করছে তোমার সাথে প্লিজ একটু কথা বলো।
.
রিশান: পরে বলব।এখন রাখলাম ।বাই।
.
সাথী: প্লিজ অার দুই মিনিট কথা ব.....!! হ্যালো? হ্যালো রিশান?
ফোনটা কেটে দিয়েছে ওপাশে।
ওপাশে রিশান নামের ছেলেটা সাথীর অাকুতির অপেক্ষায় নেই। ব্যাস্ততার অযুহাতে মুক্ত করেছে সে নিজেকে অাবার একবার!!!!

কানের সাথে চেপে রাখা ফোন,অভীমানি কম্পিত দুটি ঠোটে অব্যক্ত কাতরানি,গন্ডদেশ বয়ে গড়িয়ে পরা নোনতা জ্বলের ধারায় এখন সাথী নামের বোকা মেয়েটার শেষ উপহার!

উপরোক্ত দৃশ্যপটে ফুটে উঠেছে স্পষ্ট অবহেলিত ভালবাসার প্রতিচ্ছবি ! ভালবাসা শব্দটা ব্যাবহার করা হয়ত উচিত হলো না। রিশান নামের ছেলেটা কেন সাথী নামের মেয়েটাকে অবহেলা করছে বলতে পারেন? কেন বার বার ব্যাস্ততার অজুহাতে রিশান নিজেকে অাড়াল করে নিচ্ছে বলতে পারবেন?

কারন একটাই। অামরা মানুষ। হ্যাঁ অপরাধ নয় অামরা মানুষ বলে। অপরাধ অামাদের বৈশিষ্ট্যে। যখন রিশান বুঝতে পারল সাথী তার প্রতি যথেষ্ট দুর্বল,যথেষ্ট নির্ভরশীল হয়ে পরছে,যখন রিশান বুঝতে পারল সাথীকে রিক্ত,তিক্ত,চোখের জলে সিক্ত করলেও সাথী চলে যেতে পারবে না ঠিক তখনই অবহেলা করতে শুরু করল।

এটাকে অহংকার বললেও ভুল হবে না। অার মানুষ হিসাবে একটা অভ্যাস/বদঅভ্যাস অামাদের অাছে,যার কাছে যত বেশি অবহেলা,অনাদর পাওয়া যায়,তার প্রতি অাকর্ষন,মনোযোগ তত বেশি বৃদ্ধি পায়। অাজব হলেও সত্য। শুধু রিশান নয় পৃথিবীর প্রতিটা মানুষের ক্ষেত্রে এটা স্বাভাবিক।
.
রিশানের স্থানে সাথী থাকলেও ব্যাপারটার প্রতিক্রিয়া একই হতো।
এক কথায় যতটা সহজলভ্য করবেন নিজেকে যার কাছে তার কাছে ততটা অবহেলিত হবেন,হোক সেটা ছেলে কিংবা মেয়ে।

তবে অবহেলা করা যেমন ভাল চোখে দেখা যায় না,ঠিক তেমনি নিজেকে যে সহজলভ্য করবে তাকেও সাধুর অাসনে বসা যায় না। "প্রেমে সর্গ প্রেমেই নরক,প্রেমেই বাঁচা মরা" একটা গানের কলি এইটা। বাস্তবে পুরোটা না হলেও অধিক ক্ষেত্রে কথাটা কার্যকরী। অাপনি ভালবাসবেন কিন্তু ভালবাসার মাঝে উঁচু-নিচু ভাবে নিজেদের অাসনটা ঠিক করবেন তবে তাকে ভালবাসা বলবেন না। ভুল করেছেন অাপনি অথবা অাপনার ভালবাসার মানুষটি,এমন তো কথা নেই দুজনের মাঝে যে ভুল করেছে সে অাগে সরি বলবে অথবা অাগে কথা বলবে। অাপনি অাগে বলুন সরি,নিজে খুজে গিয়ে কথা বলুন এতে সম্মান কমবে না বরং অাপনার মাহানুভবতায় মুগ্ধ হয়ে নিজের ভুলটা বুঝতে পারবে অাপনার প্রিয়জন।

এমন তো কোন চুক্তি নেই ভালবাসার মাঝে যে ভালবাসার প্রতিদান অবহেলা হতে হবে।
অাপনার ভাল লাগছেনা বীপরিত পাশের মানুষটাকে,তার উপস্থিতি এড়িয়ে চলতে চান ভালো কথা,সরাসরি তাকে বলে দিন অাপনার সিদ্ধান্তটা,তিলে তিলে অবহেলা করে সর্গীয় ভালবাসাটাকে ঘৃনায় পরিনত হওয়ার সুযোগ দিবেন না দয়া করে।
তবে মানুষ চিনতে ভুল করবেন না। সৌভাগ্য দড়জায় কড়া নাড়লে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া বোকামি ছাড়া অার কিছু নয়।

কিন্তু তবুও যদি রিশানের মতো অবহেলা করতে থাকেন তাহলে শেষ পরিনতি কি হতে পারে?
অবহেলা নামের অাগুনটা যে কতটা পোড়াতে পারে তার সারমর্মটা বুঝা যায় ঠিক তখনই যখন এমন কিছু নিজেকে পোহাতে হয়। শত শত অবহেলার তিক্ত পুথি দিয়ে গাঁথা মালাটা বড় হতে থাকবে।

এক দিন... এক সপ্তাহ... এক মাস.. কয়েক মাস... একদিন ঠিকই উল্টে যাবে ধারাবাহিকতা! সাথীর মত অসংখ্য অবহেলা প্রাপ্ত মেয়ে/ছেলে দের বিন্দু বিন্দু করে হৃদয়ে জমানো অসীম ভালবাসাগুলো অবহেলার প্রহারে পরিণত হবে ঘৃনার অগ্নিকুন্ডে!! যতটা ভালবাসত বীপরিত পাশে মানুষটা অাপনাকে ঠিক ততটায় ঘৃনার উদ্ভব হবে তার অাপনার সান্নিধ্যে।

তখন নীয়তির দোষ দিয়ে কপাল ঘসবেন না পাথরে, সমস্ত মেয়ে অথবা ছেলে জাতির পবিত্র পৃষ্টায় অাপনার কুলষিত মানসিকতা দিয়ে যেন লিখবেন না স্বার্থপর শব্দটা!
কারন পরিবর্তন,পরিবর্ধন,পরিনতি সবকিছুর জন্য দ্বায়ী থাকবেন তখন অাপনি।
হ্যাঁ শুধুই অাপনি।