মঙ্গলবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

আমার না বলা ভালোবাসা


"আবির,বাবা আমার বিয়ে ঠিক
করেছেন ।।।"
খানিকটা কষ্টের সুরে বলল বৃষ্টি
।।
বৃষ্টি আর আমার বন্ধুত্ব প্রায় দুই
বছরের ।।
আজ সকালে বৃষ্টি আমাকে ফোন
দিয়ে বলল
বিকেলে পার্কে দেখা করতে
।।। সে আবার
বলতে শুরু করল
-বাবার এক দূর সম্পর্কের
আত্মীয়ের ছেলের
সাথে বিয়ে ঠিক করেছেন ।।
ছেলে সফটওয়্যার
ইঞ্জিনিয়ার ।।
আমি চুপ করে ওর কথা শুনছিলাম ।।
আমার
চুপ করে থাকা দেখে সে
রাগান্বিত হয়ে বলল
-তুমি কিছু বলছনা কেন ??
সারাজীবন কি
এভাবে চুপচাপ থাকবে ??
আমি চুপ করে রইলাম আর ভাবতে
লাগলাম
দুই বছর আগের কথা ।।তখন আমি
জাতীয়
বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী ২য়
বর্ষে পড়ি ।।
কলেজের অফিসে একটা কাজে
গিয়েছিলাম ।।
বের হওয়ার সময় একটা মেয়েকে
দেখলাম ।।
মেয়েটাকে দেখে আমি অবাক
হয়ে যায় ।।
মেয়েটার গায়ের রং ছিল
শ্যামলা কিন্তু
চেহারায় অসাধারণ মায়া ছিল
।। মেয়েটাই
ছিল বৃষ্টি ।। অনেক কষ্টে
নিজেকে সামলে
নিয়েছিলাম কারণ আমি
ছিলাম মধ্যবিত্ত
পরিবারের সন্তান ।। বাবা
অনেক কষ্টে
সংসার চালাতেন ।। তাই আমি
কোনদিন
এসব প্রেম নিয়ে ভাবিনি ।।
আমি অনেকটাই
চুপচাপ রকমের ছেলে ছিলাম ।।
তাই বন্ধুর
পরিমাণও ছিল কম ।। কয়েকদিন পর
কলেজে
পরীক্ষার টাকা দিতে গেলাম
।। সেদিন খুব
বৃষ্টি হচ্ছিল ।। টাকা দিয়ে
অফিস থেকে বের
হয়ে দেখলাম একটা মেয়ে
বৃষ্টিতে ভিজছে ।।
লক্ষ্য করে দেখলাম মেয়েটা আর
কেউ নই
বৃষ্টি ।। ওকে দেখে মনে হচ্ছে এক
মায়াবী
পরী ।। আমি মুগ্ধ নয়নে ওর দিকে
তাকিয়ে
ছিলাম ।।ও আমার এভাবে
তাকিয়ে থাকা
দেখে লজ্জা পেয়ে চলে গেল ।।
পরদিন
ক্যান্টিনে বসে চা পান
করছিলাম তখন বৃষ্টি
আমার সামনে এসে বসল আর বলল
-আপনি কাল আমার দিকে
এভাবে তাকিয়ে
ছিলেন কেন ??
আমি ওর কথার উত্তর না দিয়ে চা
পান
করতে লাগলাম ।। সে কিছুটা
রেগে গিয়ে বলল
-আপনি মেয়ে দেখতে পারেন
কিন্তু কথা
বলতে পারেন না?? আপনি কি
বোবা ??
আমি কিছু না বলে সেখান
থেকে চলে
আসলাম ।। পরদিন আবার বৃষ্টির
সাথে দেখা
।। সে আমার সামনে এসে দাঁড়াল
।। আমি
চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি দেখে
বলল
-আচ্ছা আমি কি ভূত নাকি যে
আমার সাথে
কথা বলছেন না ??
-আপনি ভূত কেন হবেন আপনি তো
মায়াবি
পরী ।।
সে আমার কথা শুনে হাসতে
লাগলো ।। ওর
হাসিটাও খুব সুন্দর ।।সে হাসি
থামিয়ে বলল
-আপনি তাহলে কথা বলতে
পারেন ।। আচ্ছা
আপনার পরিচয়টা জানা হলো
না ।। আমি
বৃষ্টি আর আপনি ???
-আমি আবির ।।
-আচ্ছা আপনি কি কম কথা বলেন ??
-আসলে প্রয়োজন ছাড়া কথা
বলতে আমার
ভালো লাগে না ।।
-ওওও ।। আচ্ছা আমরা কি বন্ধু হতে
পারি ??
-যদি আপনি চান ।। (কিছুক্ষণ
ভেবে )
-তাহলে আজ থেকে আমরা বন্ধু ।।
সেই থেকে বৃষ্টির সাথে আমার
বন্ধুত্ব শুরু
।।ধীরে ধীরে বৃষ্টি আমার
জায়গা করতে
লাগলো ।। আমি ধীরে ধীরে
বুঝতে পারি
বৃষ্টিও আমাকে ভালোবাসে ।।
কিন্তু আমি যে মধ্যবিত্ত
পরিবারের ছেলে ।। এসব
ভালোবাসার জন্য
আমার কোনো সামর্থ্য ছিল না ।।
তাই আমি
শুধু বন্ধুত্ব করে গেছি ।।
বৃষ্টির ডাকে আমার ভাবনার
ছেদ পড়ল ।।
-কি হল ?? আচ্ছা তুমি কি আমাকে
কখনও
ভালোবাসোনি ??
আমরা মধ্যবিত্তরা সবকিছু পাই
না ।।ওকে বিয়ে
করে আমি কিছুই দিতে পারবো
না আর আমি
এখন ওকে বিয়ে করতে পারবো
না ।। নিজের
পায়ে দাঁড়িয়ে পরিবারের
দূরাবস্তা দূর করতে হবে
।। তাই আমাকে আজ আমার
ভালোবাসার
বিসর্জন দিতে হবে ।। আমি ওকে
বললাম
-আমি তোমাকে কখনো
ভালোবাসিনি ।। আমি
শুধু তোমাকে ভালো বন্ধু
ভেবেছি ।।
আমার কথা শুনে সে আমার
দিকে তাকালো ।।
ওর চোখ দুটো টলমল করছে ।। সে
আমাকে
বলল
- তুমি সত্যিই আমাকে কখনও
ভালোবাসোনি ??
আমি মুচকি হেসে বললাম
-আমি কি কখনো তোমাকে
মিথ্যা বলেছি ।।
সে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ভালো
থেকো বলে চলে
গেল ।। ওর চলে যাওয়ার সাথে
সাথে আমার
ভালোবাসাও শেষ হয়ে গেল ।।
হয়তো আমার
চোখ থেকেও কয়েক ফোঁটা
পানি গড়িয়ে পড়ল ।।
না,আমার দুর্বল হওয়া চলবে না ।।
আমাকে যে
কঠোর হতে হবে ।। পরিবারের
হাল ধরতে হবে
।।
আমি এখন হাঁটছি ।। আশেপাশের
মসজিদ থেকে
আযানের ধ্বনি শুনা যাচ্ছে ।।
আচ্ছা বৃষ্টি কি
কখনো জানতে পারবে তার
প্রতি আমার
ভালোবাসার কথা ?? থাক না
কিছু কথা অজানা
।। আমি এখনও হাঁটছি ।। যে হাঁটার
নেই
কোনো গন্তব্য ।। যে হাঁটা চলবে
আজ
সারারাত পর্যন্ত ।।।।।

★★★জীবন দিয়ে ভালোবাসি★★★


বিকেল প্রায় শেষের দিকে। সূর্য মামা লাল হতে শুরু করছে। এমন সময় নদীর পাের একা আনমনে বসে আছে শুভ। সূর্যের সোঁনালী আলোয় নদীর পানি জ্বলজ্বল করছে। পানির দিকে তাকালে চোখ ধরে যায়।
সেই নদীটা যেখানে জীবনের অন্তিম মুহূর্তগুলোর অনেকটাই কাটিয়েছে শুভ। যে কথাগুলো মনে হলে আজও হৃদয়টা হু হু করে কেঁদে ওঠে।
আজ তিন বছর পর সেখানে বসে কারও জন্য অপেক্ষা করছে শুভ।
মনে পরে যায় তিন বছর আগের কথা......
অষ্টম শ্রেনীর বার্ষিক পরিক্ষা শেষ করে নিজের বাড়ি থেকে অনেক দূরে মামার বাড়িতে লেখাপড়ার জন্য আসে শুভ। বড় মামাতো ভাই সেখানকার একটি স্কুলে নবম শ্রেনীতে ভর্তি করে দেয় শুভকে। দুয়েক দিন আনন্দে কাটলেও কয়েক দিন পর যেন আনন্দ মাটি হয়ে গেল। নতুন জায়গা নতুন পরিবেশ কেমন জানি একা একা লাগছে। ফেলে আসা দিনগুলে, বন্ধু বান্ধব, বাড়ির কথা খুব মনে পরছে। শুভর বাড়ি ছিল অনেক দূরে। চাইলেই বাড়িতে যাওয়া সম্ভব ছিল না।
এর মধ্যে স্কুলে ক্লাস শুরু হয়ে যায়। নতুন স্কুল নতুন ক্লাস সবকিছু নতুন। এই পরিবেশে কেমন জানি লাগছে। পড়ায় মন বসছে না।
এমনি করে প্রথম সাময়িক পরিক্ষা শেষ হল। পরিক্ষার ফলাফল প্রকাশ হল কিন্তু রেজাল্ট ভাল হল না।
কিন্তু এভাবে তো চলবে না। তাই শুভর মামাতো ভাই শুভর স্কুলের তার পরিচিত এক স্যারকে শুভকে পড়ানোর জন্য বলে। স্যার ছিল ব্যস্ত মানুষ। তাছাড়া এই সময় স্যার নবম শ্রেনীর কাউকে পড়াচ্ছে না। কিন্তু স্যারের সাথে শুভর মামাতো ভাইয়ের ভাল সম্পর্ক থাকায় স্যারের বাসায় অষ্টম শ্রেনীর একটা ব্যাচে শুভকে আসতে বলে। নিচের ক্লাসের ছেলেমেয়েদের সাথে পড়তে প্রথমে একটু বিব্রতবোধ হলেও দুদিন পরে ঠিক হয়ে যায়। সেখানে ছিল সোহেল, আরিফ, রবি, আল-আমিন, সাইফুল, সাথী, শিমু, হাফিজা। এর মধ্যে সোহেল আর রবির সাথে ভাল বন্ধুত্ব হয় শুভর।
পাঁচ দিন কেটে যায়। পরের দিন শুভ একটু আগেই পড়তে চলে যায়। স্যারেরর বাসায় গিয়ে দরজায় নক করতেই একটি মেয়ে দরজা খুলে। চোখে চোখ পরতেই অবাক ভাবে তাকিয়ে আছে শুভ। বয়স আনুমানিক ১৪ বছর হবে। উঠতি বয়সের মেয়ে। চেহারায় অস্বাভাবিক উজ্জলতা। চোখ দুটো টানা টানা যেন মায়ার ইন্দ্রজাল সৃস্টি করে দিয়েছেন বিধাতা। যে ওই চোখের দিকে একবার তাকাবে ওই চোখের মায়ায় পরে যাবে। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শুভ। যেন চোখ সরাতে পারছে না। মনে হচ্ছে কোন স্বর্গীয় পরী ওর সামনে দাড়িয়ে আছে। মনে হয় অচেতন হয়ে গেছে।
হঠাৎ মেয়েটি বলল "কি দেখছেন?
শুভ মনে হয় জ্ঞান ফিরে পেল, আমতা আমতা করে বলল "কিছু না"।
মেয়েটি আর কিছু না বলে ভিতরে চলে গেল।
শুভ টেবিলের উপরে বইগুলো রেখে ঝিম খেয়ে বসে অাছে এ কি দেখল। কে এই মেয়েটি আগে তো কখনও দেিখনি ভাবছে শুভ।
ইতিমধ্যে সবাই চলে এসেছে পড়া শুরু হতেই বোঝার বাকি রইল না মেয়েটি কে। ও হচ্ছে স্যারের একমাএ মেয়ে নাম "কণা" ওদের সাথেই পড়ে। নানা বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল তাই এত দিন শুভ দেখে নি। আর আগে জানতোও না। পড়া শেষে শুভ, রবি, আর আরিফ নদীর পাড়ে চলে যায়। আজকের বিকালটা কেমন জানি লাগছে শুভর।
রাতে বিছানায় শুতেই ওর কথা মনে পরে। চোখ বুজলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ওই মায়াবী চোখের চাহনি। সেিদনের রাতটা ওর ভাবনায় নির্ঘুম কাটে শুভর।
প্রতিিদন পড়ার ফাঁকে ফাঁকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকত শুভ। রবি ছিল কণার চাচাতো ভাই একই বাড়িতে থাকত।
তাই যখনই ইচ্ছা কণাকে দেখতে নানা ছলে রবির কাছে যেত শুভ। সারাক্ষণ ওকে নিয়ে ভাবে কেমন জানি ওকেই মনে পরে। সারাক্ষণ দুচোখ ভরে ওকে দেখতে পারলে অনেক ভাল লাগে। ইতিমধ্যে বিষয়টা চোখে পরে রবির। শুভ সব খুলে রবি ও সোহেলকে। এই বার শুভ নিশ্চিত যে ও কণার প্রেমে পরে গেছে। লুকিয়ে লুকিয়ে কণাকে দেখে যাচ্ছে শুভ। পড়া ফাঁকি দিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত ওর দিকে ।
এ দিকে কণাও প্রায়ই ওর দিকে তাকাত ওর চোখে চোখ পরলে সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিত। কণাও মনে হয় শুভর প্রেমে পরে গেছে ওকে দেখলেই অন্তরটা অজানা সুখে নেচে ওঠে। এভােবই মনের অজান্তে চোখের আড়ালে প্রেম করছে দুজন। কিন্তু কেউ কাউকে কিছু বলছে না।
এর মধ্যে সবার বার্ষিক পরিক্ষা শেষ। কণা নবম শ্রেনীতে পরে আর শুভ দশম শ্রেনীতে। সবাই একটু বড় হয়েছে। তাই এবার শুভ সিদ্ধান্ত নিল কণাকে ওর মনের কথা খুলে বলবে। একদিন পড়া শেষে সবাই নদীর পাড়ে ঘুরতে যায়। সুযোগ বুঝে শুভ ওর মনের কথা বলে দেয় কণাকে। কাছে ছিল সোহেল আর রবি লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেল মেয়েটির। কিছু না বলেই চলে গেল সেখান থেকে। কণাও ভালবাসে শুভকে কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না। মেয়ে মানুষ বুঁক ফাঁটে তবুও মুখ ফোটে না।
পরের দিন শুভকে নদীর পাঁড়ে একা ডাঁকে কণা। একটু আগেই গিয়ে বসে অপেক্ষা করছে কণা। শুভ যেতেই দাঁড়িয়ে ওঠে দুজন সামনা-সামনি দাড়িয়ে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই শুভকে জরিয়ে ধরে কণা। মনের ভাষা মুখে না বলতে পারলেও মন দিয়েই বুঝিয়ে দিয়েছে। দুজন দুজনকে জরিয়ে ধরে আছে। যেন ভালবাসার এক গভীর সমুদ্রে ভাসছে। প্রিয় মানুষটিকে এভাবে কাছে পাওয়ার মুহুর্তটা যে কত গভীর আর কত সুখের, তা একমাত্র তারাই অনুভব করতে পারে যারা তার ভালবাসার মানুষটিকে এভাবে কাছে পেয়ছেন।
এভাবেই সবার চোখের আঁড়ালে চলছে দুজনার প্রেম। দুজনেই গভীর প্রেমে আছন্ন। কেউ কাউকে ছাড়া একটি মূহুর্তও কাটাতে পাের না। যেন দুটি দেহে একটি প্রাণ। প্রায়ই এই নদীর পাড়ে দেখা করত দুজন। কণার কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকত শুভ। যেন এক অজানা সুখে পরিপূর্ণ দুজনে।
কিন্তু এই সুখ ওদের কপাঁলে যেন বেশী দিন সইল না। হঠাৎ একটা কালবৈশাখী ঝড় কেড়ে নেয় সুখ। আর তার কারণ ছিল "সাথী"।
সাথী শুভকে পছন্দ করত। অনেক ভালও বাসত। কিন্ত শুভ ওকে পছন্দ করত না। শুভ ভালবাসে কণাকে আর কণা শুভকে। কিন্তু ওদের এই ভালবাসা সাথীর সহ্য হল না। তাই শুভ আর কণার ভালবাসার কথা বলে দেয় ওদের পরিবারের কাছে। ঝড় নেমে আসে ওদের জীবনে। কণার বাবার কাছে পড়া বন্ধ হয়ে যায় শুভর। বাসা থেকে মামা, মামী ভাই সবার ধিক্কার। ওদিকে কণার অবস্থাও খারাপ বাসা থেকে বের হওয়া বন্ধ। খাচায় বন্দি পাখির মত ডানা ঝাপটে মরছে।
এদিকে কণার রাড়ির ত্রিসীমানায়ও যেতে পারছে না শুভ। আর সে সময়টায় সবার হাতে মোবাইল ছিল না।তো এই নবম দশম শ্রেনীতে পড়ুয়া ছেলে মেয়ের হাতে মোবাইল ছিল সাধ্যের বাইরে। দুজনার সাথে যোগাযোগ বন্ধ। এদিকে চেখের আড়ালে বুক ফাটা কষ্টে মরে যাচ্ছে দুজনে। খাওয়া নেই, ঘুম নেই দিন রাত বিছানায় শুয়ে নিরবে কেঁদে যাচ্ছে দুজনেই। ওদের দুজনকে আঁলাদা করতে কণাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় নানাবাড়ি আর শুভকে ওদের বড়ি।
প্রাঁয় মাসখানেক কেটে যায় পরিবেশটা শান্ত হলে শুভ ফিরে আসে মামাবাড়ি। কিন্তু ফিরে এসে দেখছে কণাদের বাড়ি খালি।রবির মাধ্যমে জনাতে পারে ওর বাবা অন্য জায়গায় বদলি হয়েছে। ওরা সপরিবারে সেখানে চলে গেছে। শুভ কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না।
.
.
.
.
তারপর অনেক কিছু ঘটে যায়। শুভ এস.এস.সি পরিক্ষা দিয়ে নিজের বাড়ি চলে যায়। কণাও সেখানের স্কুলে ভর্তি হয়।
কেটে যায় তিনটি বছর। কিন্তু তিন বছরে কেউ কাউকে মূহুর্তের জন্যও ভুলতে পারে নি।
কণা আর ওর পরিবার বাড়িতে আসে। রবির মাধ্যমে শুভকে খবর দেয় কণা।
আজ বিকালে শুভর সাথে দেখা করতে সেই নদীর পাড়ে আসবে কণা।
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে চোঁখে জল চলে আসে শুভর। আজ তিন বছর পর দেখবে কণাকে ও কি আগের মতই আছে নাকি বদলে গেছে। সময়ের পরিবর্তনে ভুলে গেছে আমাকে??ওর সামনে দারিয়ে কি বলবে?? নিজেই নিজের কাছে প্রশ্ন করছে। আর ছোট ছোট ঢিল ছুরছে নদীতে।
হঠাৎ শুকনো পাতার মরমর শব্দে কারও আসার শব্দ পাচ্ছে। পিছন ফিরে তাকাতেই দেখে একটি মেয়ে। অনেক পরিবর্তন হয়েছে, অনেক বড়ও হয়েছে। তবুও চিনতে মোটেই কষ্ট হল না শুভর।সেই টানা টানা মায়াবী চোখ। কখনও কি ভোলা যায়। দুজনেই সামনা সামনি দাঁড়িয়ে। কোন কিছু বলার আগেই কণা জরিয়ে ধরে শুভকে। দুজনের চোখে আনন্দের অশ্রুধারা বয়ে যাচ্ছে। কারও মুখে কথা নেই শুধু সুখের কান্না। পৃথিবীর সব ভাষা যেন হারিয়ে গেছে। কিছুক্ষণ নীরবতা।
.
.
.
.
কণা শুভকে ছেড়ে দেয়।
: কেমন আছ শুভ?
: আগে কেমন ছিলাম জানি না তবে এখন ভাল আছি। তুমি?
: যাকে হৃদয় কোঁঠরে যায়গা দিয়েছিলাম তাকে ছাড়া ভাল থাকি কিভাবে বল?
: এখন থেকে আমরা ভাল থাকব। তোমায় নিয়ে চলে যাব দুর অজানায়। সেখানে শুধু তুমি আর আমি থাকব। আর কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে না।
: না শুভ তা আর হবে না। সে সময় আর নেই। আমি আর তোমার নেই। আমি এখন অন্য কারও।
: এ তুমি কি বলছ কণা !
কণা আংটিপরা অনামিকা শুভর চোখের সামনে ধরল।
শুভ তাকিয়ে দেখল। তারপর শুভ প্রচন্ড কষ্ট নিয়ে তাকাল কণার মুখের দিকে।
কণা খুব আস্তে করে বলল-
গত পরশু আমার বিয়ে হয়ে গেছে। আমি এখন অন্যর বউ। আগামী শুক্রবার আমাকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে। তাই সবাই বাড়িতে এসেছি। শুধু তোমায় শেষবারের মত দেখতে এসেছি।
- না! এ হতে পারে না। তাহলে এ পৃথিবী মিথ্যে হয়ে যাবে। এ তুমি মিথ্যে বলছ।
আমি বিশ্বাস করি না। মিথ্যে সব মিথ্যে।
-যা বলছি সবই ঠিক। আমি তোমাকে শুধু অনুরোধ করব, তুমি সারা জীবন ভালো থাকবে। তুমি মনে কর তোমার কণা মরে গেছে। সে তোমাকে কোনদিন চিনতো না। কখনো ভালবাসেনি তোমাকে। সব তোমার ভুল স্বপ্ন ছিল। ভুল জীবনে ছিলে।
শুভ বসে পরে মাটিতে। দুহাতে মুখ ঢেকে অবুঝ শিশুর মত কেঁদে ফেলে।
কণা বুঝতে উঠতে পারছে না কি করবে। আস্তে আস্তে শুভর মাথাটা বুকের কাছে টেনে নেয়। ওরনার আঁচল দিয়ে মুছে দেয় চোখের জল। তারপর আহত পাখির মত বেদনার্ত কন্ঠে বলল-
শুভ এছাড়া আমার আর কোন উপায় ছিল না। আমার এ হাত-পা যে শিকলে বাধা। বন্দি খাচার পাখি হয়ে ছিলাম আমি।
-আগে বলনি কেন?
-বললে কি করতে? নিয়ে আসতে আমাকে? বিয়ে করতে? পারতে না। ওরা আমাদের মেরে ফেলতো। তবুও তোমার জীবনের সাথে আমার জীবন বাধতে দিত না।
কণার গলা ধরে আসে। আর বলতে পারে না।আনমনে শুভর মাথার চুলগুলো টানতে থাকে। কাঁদতে থাকে পাগলের মত।
-আমি পারতাম কি পারতাম না সেটা পরের কথা। মেরে ফেললে ফেলত। তবুও বললে না কেন। এত বড় সর্বনাশ তুমি কেন করলে?
-এছাড়া আমার কি উপায় ছিল বলো? আমি এক পরাধীন নারী।
-এসব ভুলে যাও কণা। মনে কর তোমার কিছুই হয়নি। এখনও তুমি সেই আগের মত। আমি তোমাকে এখনি এখান থেকে নিয়ে যাবো।
-না তা হয় না। যা বাস্তব তা অস্বীকার করার মত শক্তি আমাদের কারোরই নেই।
-কিন্তু তুমিও তো আমার ছাড়া অন্য কারও হতে পার না।
-শুভ আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করো।
-ক্ষমাতে কি সব শেষ হয়! হয় না।আমার নিজের বুকের ভেতর যে আমি নিজেই তোমার জন্যে ভিন্ন এক চিতার আগুনে জ্বলছি,পুড়ছি। নিজেই নিজেকে পোড়ানো গন্ধ পাচ্ছি। দোহাই তোমার, তুমি আমাকে এত বড় কঠিন শাস্তি দিয়ো না। তুমি কি জান তুমি আমাকে কি জীবন দিতে যাচ্ছো?
সে জীবন যে কি যন্ত্রণাদায়ক তা তুমি বুঝবে না। কোনদিন বোঝার চেষ্টাও করোনি। আমাকে পোড়াও। যত খুশি তোমার। এই নাও আমি বুক পেতে দিলাম, যত খুশি আগুন ঢেলে দাও। পোড়াও। পুড়িয়ে শেষ করে দাও আমাকে।
সন্ধা প্রায় ঘনিয়ে। এমন সময় পাখিদের ঘরে ফেরার গান। শুভকে ছেড়ে চলে যেতে কণা কেঁদে ফেলে। কণার চোখের পানি মুছে দেয় শুভ। তারপর তার কপাঁলে ছোট একটা চুমু দিতে যেয়ে আবার কি যেন ভেবে ঠোঁট ফিরিয়ে নেয় শুভ। তারপর এক বুক অভিমান নিয়ে বললো,
-তুমি ভাল থেকো। সুখী থেকো।
কণা কিছুই বলতে পারল না। একবার ভাবল সব ছিন্ন করে শুভর সাথে চলে যাই। দূরে কোথাও যেয়ে সংসার গড়ি দুজনে। আবার ভাবল না, যাব না। গেলে সবাই কি বলবে। কি ভাববে সমাজ,জাতী?? কি করে মুখ দেখাবে সমাজে??
কণা ঝড়ের বেগে চলে যাচ্ছে।
শুভ তাকিয়ে দেখছে। কণা ক্রমেই দূরে মিলিয়ে যাচ্ছে। ছায়ার মত মনে হচ্ছে ওকে। মনে হচ্ছে দূরে অস্পষ্ট কোন এক ছায়া হেঁটে যাচ্ছে। সে ছায়া যেন বারবার মুখ ফিরে পিছন তাকিয়ে দেখছে।
চোখের জলে ঝাপসা হয়ে আসছে সবকিছু।
ফুটে উঠেছে সন্ধা আলো। সূর্যের চারদিক গভীর লাল। মনে হয় তাজা এক মুঠো রক্ত। যেন রক্তের ছাপ। ব্যস্ততা শেষে নিড়ে ফিরছে পাখিরা। দূর আকাশে পাখা মেলে উড়ে যাচ্ছে আপন ঠিকানায়।
কিন্ত এসবের কিছুই ভাল লাগছে না শুভর। নদীর পাড়ে একা দাঁড়িয়ে আছে। কণা চলে যওয়ার পর থেকেই দাঁড়িয়ে আছে।
স্মৃতির পশরা বুকের ভেতর নড়ে ওঠে। নদীর পাড় ভাঙার মত যেন দুমড়ে মুচড়ে ভাঙতে থাকে তার বুকের ভেতরটায়। আর ভাবতে থাকে এ কি অন্ধকার জীবন হল আমার। নিজেই নিজেকে ধিক্কার দেয়। ঘৃণা করে।
কেন এ অাঘাত করলে? কেন এ কষ্ট দিলে? কেন আমাকে এমন করে প্রতারিত করলে? তোমাকে অন্ধের মত ভালবেসেছিলাম। আমার ভালবাসার এই মূল্য দিলে?
পাষণ্ডের মত নিক্ষেপ করলে এক কষ্টের জ্বলন্ত চিতায়। এই কি তোমার প্রেম? এই কি তোমার আদর্শ?
এরই নাম কি জীবন দিয়ে ভালোবাসা!
শুভ আর ভাবতে পারে না। নিজের সঙ্গে নিজেই যুদ্ধ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠছে। সে নিজেও জানে না এ যুদ্ধের শেষ কোথায়।
( সমাপ্ত )